মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৪০

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৪০
মির্জা সূচনা

নতুন গন্তব্যে ছুটে চলেছে রাজ আর মেহরিন।
রাজ গাড়ি চালাচ্ছে, আর মেহরিন পাশে বসে জানালার দিকে মুখ করে রাতের চাঁদ আর জোনাকভরা প্রকৃতি উপভোগ করছে। হালকা বাতাসে তার চুল উড়ছে।
রাজ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মেহরিনের দিকে।
কিন্তু মেহরিন তার দিকে না তাকিয়ে শুধু রাস্তার দিকেই চোখ রাখে।
রাজ একটু বিরক্ত হয়।
তারপর হঠাৎ করে একটা কবিতা বলে ওঠে,

রাতের শহর ঘুমায় ধীরে,
তুমি জানালায় তাকাও নীরে।
তারা ভরা সেই আকাশে—
তোমার চোখ যেনো ভালোবাসে।
চলে গাড়ি, বাজে গান,
তবুও তুমি দাও না কান।
আমি পাশে, তবুও দূরে,
তোমার চোখ কি আমায় একটি বারও খুজে?
তুমি দেখো চাঁদের আলো,
আমি বাসি—তোমায় ভালো!
তুমি দেখো দূর পাহাড়, পথ,
আর আমার বুকের ভেতর ওঠে যত ঝড়।
এই রাত, এই রাস্তাগুলো—
হিংসে হয়, যখন তুমি আমার না হও পুরো।
তুমি শুধু তাকাও আমার দিকে,
তোমার চোখে শুধুই আমি থাকি—
চাঁদ-তারা থাকুক দূরে,
তুমি আছো, আমার হৃদয় জুড়ে…
মেহরিন কবিতাটা শুনে হেসে ফেলে।
তাকিয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—আপনি রাস্তা আর প্রকৃতিকে হিংসে করছেন বকি সাহেব?
রাজ এক হাতে গাড়ি চালিয়ে, অন্য হাতে মেহরিনকে কাছে টেনে আনে।
নরম গলায় বলে,
— প্রসঙ্গ যদি হন ম্যাডাম আপনি। তাহলে আমি রাজ শুধু মানুষ নয়, প্রকৃতি ও রাস্তা কেউ হিংসে করি আমি বুঝলেন ম্যডাম।
মেহরিন হেসে মুখ লুকায় রাজের বুকে। রাজের বুকে আকি বুকি করতে থাকে মেহরিন।
রাজ সামনে তাকিয়ে বলে,
— কি ব্যাপার? গাড়িতেই এমন ইঙ্গিত দিচ্ছ কেন? এখানেই কি শুরু করে দিতে বলছো নাকি?আর একটু ধৈর্য ধরো রাস্তা আর বেশি নেয় তো।
মেহরিন রাজের বুকে কিল দিয়ে বলে,

— ছিঃ!নষ্ট পুরুষ।
রাজ উচ্চস্বরে হেসে ফেলে।
মেহরিন রাজের হাসির দেখে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে,
— হায় মাশাল্লাহ কি হাসি! এই হাসিতেই আমি বারবার ফাঁসি।
রাজ হেসে মেহরিনের কপালে একটা চুমু দেয়।
— জীবনে এত সব দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণার মাঝেও আমার হাসির কারণ শুধু তুমি। আমার বউজন, আমার আমার Moonbeam..
মেহরিন রাজের গলায় জড়িয়ে ধরে বলে,
—আর আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা—সবটাই আপনি, আপনি, আপনি।
তারপর সে রাজের গালে চুমু খায়।
হঠাৎ রাজ ব্রেক কষে।
মেহরিন অবাক হয়ে বলে,

— কি হলো? কোনো সমস্যা?
রাজ মেহরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,
—তুমি আমাকে পুরো বেসামাল করে দিচ্ছো বউ। এমন করলে আমি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। একে তো তুমি আমার পাশে একা,তার উপর তোমার এই চুমু আমি কিন্তু কিছু মিছু একটা করে ফেলব।
মেহরিন চোখ বড় করে রাজকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
— ছিঃ! নষ্ট কোথাকার, চলুন অসভ্য লোক।
রাজ হেসে ওর গালে একটা চুমু খায়, তারপর গাড়ি চালাতে শুরু করে আবার।
অনেকটা পথ জার্নি করার পরে অবশেষে ওরা গিয়ে পৌঁছায় ওদের গন্তব্য স্থলে।
সাজেকের রিসোর্টে রাতের নিস্তব্ধতা চারদিকে।
মেহরিন ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানা করছে, রাজ তখনো বাইরে।
তখনি রাজ রুমে ঢোকে। আর মেহরিন কে বিছানা বোঝাতে দেখে বলে,

— কি ব্যাপার? তুমি বিছানা করছো কেন?
মেহরিন মুখ ভার করে বলে,
— তো কি? আপনার মতো বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াবো? আমার ঘুম পাচ্ছে।আপনার মন চাইলে আপনি শুবেন আর নয়তো ঘোটড়ার মত দাঁড়িয়ে ঘুমান।
রাজ একটু ধমক দিয়ে বলে,
— চুপ! কিসের ঘুম হ্যাঁ? কোন ঘুম নেই। আমরা সাজেকে ঘুমাতে আসিনি। এসেছি প্রসেসিং করতে।
মেহরিন চোখ ছোট ছোট করে বলে,
—আপনি আমাকে ধমকাচ্ছেন।আর প্রসেসিং মানে কি কিসের প্রসেসিং?
রাজ দুষ্টু হেসে এঁকেবেঁকে বলে,
—যা দুষ্টু! আমি বলবো না আমার শরম করে।
মেহরিন মুখ ঝামটা দিয়ে বলে,

—আহ মরন দশা! ডং বাদ দিয়ে আমাকেউ ঘুমাতে দিন আর নিজেও ঘুমান।
রাজ মেহরিনের পাশে গিয়ে বসে, ওকে জড়িয়ে ধরে।
— আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে তুমি ঘুমাতে চাও?অনেক অন্যায়, অবিচার করেছ তুমি আমার উপর বউ!আর নয় চুপচাপ রেডি হও।
—আশ্চর্য!এত রাতে বের হবো কেন? কাল সকালে বের হবো। এখন ভন্ডামি বাদ দিয়ে ঘুমান।
রাজ মুচকি হেসে বলে,
— তুমি যাবে, সঙ্গে তোমার জামাইও যাবে।
—জামাই গেলে যাক,আমি যাব না ছাড়ুন!
রাজ বলে,

—জামাইয়ের কথা না শুনলে কিন্ত আল্লাহ নারাজ হন।
মেহরিন শান্ত চোখে তাকায় রাজের চোখে, চেয়ে বুঝে যায় ওর ভিতরের ব্যাকুলতা। আর কিছু না বলে মাথা নাড়ে মেহরিন।
রাজ হেসে মেহরিনকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে, তারপর বলে,
— তাহলে আমি বাইরে আছি, তুমি রেডি হও।
মেহরিন হেসে বলে,
— “আচ্ছা…”
রাজ রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, মেহরিন পিছন থেকে বলে আমি কিন্তু ঘোড়াই করে যাবো। রাজ হেসে বেরিয়ে যাই।
মেহরিন একটু হাসে।মেহরিন রেডি তো হবে কিন্তু কি পড়বে বুঝতে পারছিল না, তারপর ব্যাগ খুলে চোখে পরে একখানা লাল শাড়ি। মেহরিনের চোখে-মুখে খেলে যায় লাজুক এক উজ্জ্বলতা।
শাড়িটা বিছানায় রেখে, ব্লাউজ-পেটিকোট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় মেহরিন।
তখনই রাজ আবার রুমে ঢোকে।
শাড়িটা চোখে পড়ে তার।
বুকের কাছে তুলে নেয়, যেনো শাড়ির গন্ধে মেহরিনকে খুঁজে পায়।আর কল্পনা করে লাল শাড়িতে মেহরিন কে কেমন লাগবে।

ঠিক তখনই মেহরিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়, শাড়ি না পরা অবস্থায়,পরনে শুধু ব্লাউজ আর পেটিকোট।
রাজের চোখ মেহরিনের দিকে আটকে যায়।ফর্সা শরীরটার অনেক অংশই উন্মুক্ত হয়ে আছে।রাত একটা শুকনো ঢোক গেলে।
মেহরিন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
— আপনি? আমি তো… রেডি হইনি এখনো।
রাজ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।
শাড়িটা হাতে তুলে নেয় আর বলে,
—আমি পরিয়ে দিলে সমস্যা আছে?
মেহরিন বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে, কিছু বলতে যাবে এমন সময়, রাজ ওকে থামিয়ে দেয় মেহরিন এর ঠোটে আঙুল রেখে বলে, আমি পরিয়ে দেই প্লিজ!
মেহরিনের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়!মনে জাগে কিছু নিষিদ্ধ অনুভূতির জোয়ার।যদিও তাদের জন্য সবকিছু হালাল কারণ তারা স্বামী স্ত্রী।

রাজ ধীরে ধীরে শাড়ি পরাতে শুরু করে।
মেহরিন দাঁড়িয়ে, প্রতিটা স্পর্শে যেনো কেঁপে ওঠে।
রাজ নিঃশব্দে শাড়ির কুচি গুঁজে দেয়!
মেহরিন নিঃশ্বাস চেপে রাখে, হাত মুঠো করে ধরে রাখে রাজের শার্ট।যখনই রাজ কুচি গুঁজে দেয় মেহরিন খামচে ধরে রাজের ঘাড়।
রাজ ঠোঁট কামড়ে হেসে আর মেহেরিন এর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
—আমার এই সামান্য ছোঁয়াতে এমন বেসামাল হয়ও না বউজান…যখন গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিবো সামলাতে হবে তো নাকি?তুমি এমন বেসামাল হয়ে গেলে আমাকে কে সামলাবে Moonbem…
মেহরিন চোখ বন্ধ করে মুখ লুকিয়ে ফেলে রাজের বুকে।
রাজ তার মুখ তুলে চুমু দেয় ঠোঁটে, কপালে।
তারপর হাতে তুলে নেয় তাকে, যেনো পৃথিবীর সব ভার ওর কাঁধে নিতে রাজি।
মেহরিন রাজের গলায় মুখ লুকিয়ে রাখে। আর তারা ভেসে চলে ভালোবাসার অবিরাম স্রোতে…

রাজ একটা কালো ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে মেহরিন কে নিয়ে।
পাহাড়ি পথ ধরে এগিয়ে চলে ঘোড়াটা—
মেহরিনকে সামনে বসিয়ে এক হাতে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে,আর অন্য হাতে ঘোড়ার লাগাম ধরে রাজ।
এক হাতে ঘোড়ার লাগাম, অন্য হাতে আঁকড়ে আছে তার প্রিয়তমাকে।
ঘোড়ার টগবগ শব্দ তুলে ওরা এসে পৌঁছায় গন্তব্যস্থলে।
ঝর্ণার ধ্বনি, পাশে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি, ঝিকিমিকি করছে জোনাকি পোকা।
পাহাড়ি বাতাসে পছন্দের জায়গায় এসে মেহরিন-এর মন হয়ে যায় একেবারে হালকা, মুক্ত, ফুরফুরে।
রাজকে জড়িয়ে ধরে একটুখান চুমু দিয়ে বলে

— Thanks, কবি সাহেব। আবার আমাকে এমন জাদুকরি জায়গায় নিয়ে আসার জন্য।
রাজ হেসে ফেলে, আর তার সেই হাসিতে মিশে থাকে এক নির্ভার শান্তি ও স্বার্থহীন ভালোবাসা।
হঠাৎই মেহরিন ঘোড়া থেকে নেমে দৌড়ে চলে যায় ঝর্ণার পাশের উঁচু ঢিলাটার দিকে।
কিছুদিন আগে এই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে সে রাজ-এর মুখ থেকে শুনেছিল প্রথম ভালোবাসার স্বীকারোক্তি।
উঁচু ঢালু জায়গায় দাঁড়িয়ে সে চিৎকার করে বলে—
—এই ঝর্ণা দেখো তোমাকে সাক্কী রেখে ও বলেছিল, আমাকে ভালোবাসে। আর আজ, আজ আমি ও আমরা একসাথে, সারাজীবনের জন্য।
রাজ ধীরে ধীরে পেছন থেকে এসে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে।
মেহরিন হাসে। চোখে একটু পানি জমে যায়।
মেহরিন বলে—

—আপনি আমার জীবনে এমন একজন, যিনি আমার না বলা সব ইচ্ছেও কথা বুঝে ফেলেন। আমার সব স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেন,আমার সব স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেন। আপনার মতো জীবনসঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, আর আমি নিঃসন্দেহে খুব ভাগ্যবতী… কারণ আমি আমার কবি সাহেবকে পেয়েছি।
রাজ একটু ঝুঁকে তার কপালে চুমু খেয়ে বলে—
—আর আমি সেই সৌভাগ্যবান, যে পেয়েছি তোমার মতো বিশ্বস্ত ও সাহসী বউ, যে সবসময় আমার পাশে থেকেছে… সুখে, দুঃখে, প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তিতে।
আমার প্রাপ্তির খাতায় হয়তো সংখ্যা কম, কিন্তু এই একটা মানুষ, তুমিই, সেই পূর্ণতা… যার মাধ্যমে আল্লাহ আমার সব অপূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন।
মেহরিন আকাশের দিকে তাকায়, চোখ মুছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে—

— আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, আল্লাহ… আপনি আমার কবি সাহেবকে আমার করে দিয়েছেন।
ঝর্ণার কলকল শব্দে মিশে যায় তাদের নিঃশব্দ ভালোবাসা।
পাহাড়ের আকাশে তখন চাঁদের আলো, রূপালী ছায়া আর অগণন তারার চোখ।
রাজ ধীরে ধীরে মেহরিনের দুই কাঁধে হাত রেখে তাকে নিজের দিকে ঘোরায়।
— “চলো,”
শুধু এই একটি শব্দ, মেহরিন কিছু না বলেই তার স্বামীর হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে।
তারা আবার সেই নদীর ধারে পৌঁছে যায়।
সেই জায়গাটা যেখানে একদিন নৌকায় বসে দুইজন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে হৃদয়ের কথা বলেছিল।
কিন্তু আজ সবকিছু আলাদা।
আজকের নৌকাটা অনেক বড়, আরও সাজানো, আরও স্বপ্নমাখা।
নদীর ধারে আলতো আলোয় ঝিকিমিকি করে নৌকাটা যেনো এক ভাসমান রাজপ্রাসাদ।
মেহরিন অবাক হয়ে বলে—

— এই সব কবে করলেন?
রাজ হালকা হেসে তার গালে হাত রেখে উত্তর দেয়,
—প্ল্যান আগে থেকেই ছিল।আর সাজানো হয়েছে আমরা পৌঁছানোর আগে।
মেহরিন হাসে।
রাজ মেহেরিন কে নিয়ে নৌকায় উঠে বসে।
কিন্ত আজ আর রাজ বৈঠা চালায় না।
নিরব নদীর বুকে ভেসে আছে।
মেহরিন বসে আছে নৌকার মাঝামাঝি আর রাজ এক কোণায় বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহরিনের দিকে।
লাল শাড়িতে কি অপরূপা সুন্দর লাগছে মেহরিনকে। আর মুখে চাঁদের আলো পরাই—
এতটাই অপূর্ব লাগছিল যে রাজ যেনো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
রাজকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেহরিন রাজের মুখে পানি ছিটিয়ে মজার ছলে বলে—

— এভাবে আর কতক্ষণ তাকিয়ে থাকবেন কবি সাহেব?একটু ধীরে সুস্থে তাকান বউ তো আপনারই। কিন্তু আর নিয়ে যাচ্ছে না।
রাজের ধান ভাঙ্গে, রাজ হেসে আকুতি ও তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে এগিয়ে আসে তার দিকে।
আর সেই চোখের চাহনি দেখে মেহরিন ঢোক গিলে, ওটা শুধু তাকিয়ে থাকা নয়—
ওটা ছিল আকুল ভালোবাসার আহ্বান।
সে ফিসফিস করে বলে—
— না… এখানে না, এখন না…ক….
কথা সম্পন্ন করার আগেই রাজ আঁকড়ে ধরে মেহরিনের ঠোঁট। ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই যেনো বুঝিয়ে দিচ্ছি নিজের আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা আর অচেনা এক তৃষ্ণার কথা।
মেহরিন চোখ বন্ধ করে নেয়।

দীর্ঘ সময় পর, রাজ তার ঠোঁট ছাড়ে, কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে কপালে কপাল রাখে, দুজনেই হাপিয়ে ওঠে।
মেহরিন পিট পিট করে চোখ মেলে তাকায়।
রাজ, আবেগ মেহরিনকে কাছে পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, তৃষ্ণা নিবারণের ইচ্ছায় করুণ দৃষ্টিতে তাকায়..
মেহরিন সেই চোখে দৃষ্টি রেখে কেঁপে ওঠে। কিন্তু স্বামীর সেই প্রবল আকাঙ্খার তৃষ্ণার্ত আহবান ফিরিয়ে দিতে পারে না।
এটা তার স্বামী, তার কবি সাহেব, তার ভালোবাসার প্রিয়জন।তার সম্পূর্ণ অধিকার আছে মেহরিনকে কাছে পাওয়ার।
মেহরিন ধীরে ধীরে রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
আর রাজ সেই সম্মতিতে হাসে—এক বিজয়ীর হাসি,
যার ভালোবাসা আজ পূর্ণতা ছুঁয়েছে।
নৌকা নদীর বুকে ভাসে—

আর তার বুকের মাঝে ভেসে চলে দুইটি তৃষ্ণার্ত হৃদয়।
রাজ আবার আঁকড়ে ধরে মেহরিনকে, এলোমেলো চুমু খেতে থাকে! নাক, চোখ, ঠোঁট ঘার সব জায়গায় চুমুতে ভরিয়ে দেয় রাজ।
মেহরিন রাজকে খামছে ধরে এক নিষিদ্ধ চাওয়া দুজনকেই একদম বশ করে ফেলেছে,দুজনেই ভালোবাসার সাগরের উত্তাল জোয়ারে ভাসছে। রাজের ছোঁয়া যতই গভীর হচ্ছে মেহরিন ততই কুকড়ে যাচ্ছে। রাজ মেহরিনের দিকে একবার তাকায়। তারপর নিজের শার্ট খুলে ফেলে মেহরিন তা দেখে ঢোক গিলে চোখ বন্ধ করে নেয়। রাজ মেহরিনের শাড়ি সরিয়ে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
আউজুবিল্লাহি-মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

রাজের কথা শুনে হেসে ফেলে মেহরিন। রাজ ডুব দেয় ভালোবাসার সাগরে যেখানে দুটি মানুষ যায়।মেহরিন রাজকে খামছে ধরতে ধরতে রাজের পিঠের অবস্থা খারাপ করে দিচ্ছে। রাজ মুখ তুলে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে বলে,দয়া করে আমাকে সংঘ দাও এতে তোমারি ভালো। এমন ভাবে খামচা খামচি করলে যদি আরও বেশি বেসামাল হয়ে যায় আমি বিপদ কিন্তু তোমারই হবে, কষ্টটা কিন্তু তুমিই পাবে। তবে চিন্তা করো না ক্ষত আমি করছি মলমও আমিই লাগাবো। রাগে দুঃখে কষ্টে রাজের ঘাড়ে কামড়ে ধরে মেহরিন।
রাজ বলে,
সিগনাল দিচ্ছো ক্ষত বাড়াতে? এই বলে আবারও ডুব দেয় রাজ মেহরিনের মাঝে। চারদিকে শুধু ঝিঝি পোকার ডাক, আর দুই মানব-মানবির ঘনঘন নিঃশ্বাসের শব্দ।

মেহরিন ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে একটু ঝুকে যায় বামদিকে সাথে রাজাও আর তখনই ,
নৌকাটি হঠাৎ এক ঝটকায় উল্টে যায়।
একসাথে পানিতে পড়ে যায় রাজ আর মেহরিন।
মেহরিন পড়ে গিয়েই ব্যথা ভুলে হা হা হি হি করে হাসা শুরু করে দেয়।
— আপনি আর আপনার ঐতিহাসিক বাসর!
মেহরিন পানির মধ্যেই হেসে কুটিকুটি হয়ে যায়।
রাজ অসহায়ের মতো বলে,
— খাটে বাসর করলাম না—ভেঙে যাবে বলে! এখন নৌকাও সহ্য করলো না। এ তো দেখি প্রকৃতিও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে!
মেহরিন রাজের বুকে ঢোলে পড়ে যায় হাসতে হাসতে। মেহরিন ভেজা শাড়ি শরীরে জড়িয়ে সামলে নেয় কোনোরকমে। রাজ নিজের ভেজা শার্টটা তুলে কাঁধে রাখে।মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে নদীর তীরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

মেহরিন উঠতে পারছে না তাই রাজ কোলে করে নিয়ে উঠে আসে রাজ।
মেহরিন তখন থেকে হেসেই যাচ্ছে, রাজ প্রথম কিছু না বললেও,এখন একটা ধমক দিয়ে বলে,
চুপ করবে তুমি। কখন থেকে হেসেই যাচ্ছো।একচোট গম্ভীর গলায় বলে ওঠে,
—এইটা একটা দুর্ঘটনা বুঝছো তুমি? এখনো হাসছো?
মেহরিন ঠোঁটে আঙুল রেখে মাথা নাড়ে। কিন্তু হাসি কিছুতেই থামে না।
রাজ শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে,

—Moonbem….
মেহরিন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে।
রাজ মেহরিনর হাসি দেখে, বাঁকা হেসে বলে খুব হাসি পাচ্ছে তাই না ?
—তখন তো নৌকায় ছিলাম তাই উল্টে গেছে! কিন্ত এখন তো এই ঝর্ণার ধারে ঘাসে উপরে আছি—পানিতে ডুবে যাওয়ার ভয়ও নেই।
রাজ কৌতুক করে আরো বলে,
—তাহলে এখন দেখাই যাক—এবার ঝর্ণার ধারে কেমন বাসর হয়!
একথা শুনে মেহরিন চোখ বড় বড় করে তাকায়,
— কি… কি বলছেন! এসব… না না…দে.দে..দেখুন আ..আপনি…
রাজ বাঁকা হেসে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বলে,
— দেখাও না.. আমি দেখাচ্ছি তো!

মেহরিন উঠে পালাতে চায়, কিন্তু রাজ তাকে খপ করে ধরে ফেলে।
মেহরিন চোখে একধরনের অস্থিরতা, ভয় নিয়ে করুণ চোখে তাকায়।
রাজ উচ্চস্বরে হেসে ওঠে, মেহরিনের অবস্থা দেখে।
রাজ ঝুকে পড়ে মেহরিনের দিকে,
মেহরিন বলে, না প্লিজ…
রাজ বলে, হ্যাঁ প্লিজ…
মেহরিন বলে,কবি সাহেব …
রাজ বলে, Moonbem…
মেহরিন হাল ছেরে দেয়।
রাজ আবার হেসে বলে,

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৩৯

আউজুবিল্লাহি-মিনাশ শাইতানির রাজিম বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
রাজ আবারও ডুব দেয়,ভালোবাসার সাগরে।
ঝর্ণার শব্দ, দূরের ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর বাতাসে মিশে যায় রাজ ও মেহরিনের নিঃশ্বাসের শব্দ—
রাতে প্রকৃতির মাঝেই এক নতুন অধ্যায় লেখা হতে থাকে তাদের ভালোবাসার।

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৪১