মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫১

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫১
মির্জা সূচনা

সকাল ৮টা।
লাবিবের কেবিনে বসে আছে রিদ, রাজ, মেহরিন, মেহবুবা, আর মেহের।
মেহবুবা’র ঘুম ভাঙার পরপরই ছুটে আসে লাবিবের কেবিনে।
তার সেই পাগলামো—সে কী অস্থিরতা—
অনেক কষ্টে সবাই তাকে বুঝিয়ে, শুনিয়ে, শান্ত করেছে।
রিদ সবার জন্য কফি এনেছে।
কারও এক ফোঁটা ঘুম হয়নি।
রাতভর জেগে থাকার ক্লান্তি মাথা ব্যথায় রূপ নিয়েছে।
সেই ক্লান্তিতে গরম কফির কাপ নিয়ে বসে সবাই।
রাজ বলে

—বাসার সবাইকে কি বলেছিস?
রিদ বলে,
— বলেছি আজ রাতটা ফিরবো না। এক জায়গায় যাচ্ছি সবাই।
রাজ বলে,
— “ওহ!”
ঠিক তখনই…
লাবিবের জ্ঞান ফেরে।
লাবিব আওড়ায়
— পালাও… মেহবুবা চলে যাও… আমায় মাফ করে দাও…!
হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে মেহবুবা।
সবাই দৌড়ে গিয়ে বসে পাশে।
মেহবুবা ছুটে গিয়ে লাবিবের হাত ধরে বলে,
— এই তো, আমি দেখুন… আমি এই তো আছি… আপনার কাছেই আছি!
লাবিব তাকায় মেহবুবার দিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চোখে শান্তি।
মেহবুবাকে সুস্থ দেখেই উঠে বসে—তবে বুকের আঘাতে ব্যথায় কাতর।
রাজ ধরে বসিয়ে বালিশে হেলান দেয়।
লাবিব রাজের দিকে তাকিয়ে বলে,
— Bro, I am sorry… আমি মেহবুবাকে protect করতে পারিনি।
রাজ মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
— আমি বুঝতে পারছি।
লাবিবের করুণ দৃষ্টিতে তাকায় মেহবুবার দিকে।
মেহবুবা চোখে জল নিয়ে তাকিয়ে আছে তার প্রিয় পুরুষের দিকে—
যে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেও তার কথা ভাবছে।
মেহবুবা দুমরে করে কেঁদে ওঠে।
লাবিব তার কপালে হাত রাখে, মুখ তুলে চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলে,

— কেঁদো না নবনীতা… আমি আর এমন করব না… প্রমিস।
মেহবুবার কান্নার গতি আরও বেড়ে যায়।
আর…
বাকি চারজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
সবার চোখে ভালোবাসার ভাষা।
সবার মুখে প্রশান্তির ছায়া।
সেটা যখন আপন মানুষের ভালোবাসা—তখন সেই ভালো লাগা দ্বিগুণ।
লাবিব মেহবুবাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
তবুও কাঁদতে কাঁদতে তার শরীর কেঁপে উঠে।
হঠাৎ লাবিব বলে,
— এই ল্যাদা বাচ্চা… চুপ করো!
মেহবুবা এবার আর রাগ করে না।
হেসে দেয়।
বাকি সবার মুখেও হাসির রেখা।
কিছুক্ষণ পরে…
লাবিব জিজ্ঞেস করে,
—আমাদের এখানে কে নিয়ে এসেছে?
রাজ বলে,

— সাব্বির।
লাবিব বলে,
— মেহবুবা, তোমাকে ওরা কিছু করেনি তো?
মেহবুবা চুপ করে থাকে।
সবাই এবার তাকিয় মেহবুবার দিকেই।
তার শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
কিছু জায়গায় শুধুই ছিলে গেছে।
মেহরিন বলে,
— হ্যাঁ তাই তো! কিরে মেহবুবা, ওরা তোকে কিছু করল না কেন? মানে… কী হয়েছিল ঠিক?
মেহবুবা চুপ।
রাজ বলে,
— আচ্ছা থাক, ওকে কিছু জিজ্ঞেস কর না।
এই বলেই সে সাব্বিরকে কল করে কেবিনে ডাকে।
দুই মিনিটের মধ্যে সাব্বির কেবিনে ঢোকে।
রাজ বলে,

— ওখানে কী হয়েছিল, বল তো?
সাব্বির একবার মেহবুবার দিকে তাকিয়ে, একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে বলে,
— আমরা পৌঁছে দেখি, মিস্টার তালুকদার এর লোকেরা রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে…
আর ম্যাম স্যার এর বুকে পড়ে কাঁদছিলেন…
মেহরিন আর মেহের তড়িৎ গতিতে তাকিয় মেহবুবার দিকে।
সন্দেহ ভরা চোখ।
মেহবুবা চুপচাপ বসে।
তারপর ধীরে ধীরে ২ বোনের দিকে তাকিশে হাসে।৩২ পাটি দাঁত বের করে।
আর সেই হাসিতে…
সব পরিষ্কার।
সবই বুঝে যায়—মেহরিন মেহের।
আসল ঘটনাটা কী ঘটেছিল সেখানে…
সবাই চুপচাপ।
শুধু রিদ, রাজ আর লাবিব কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
রাজ বলে,

—লাবিব, তুই কিছু আন্দাজ করতে পারিস?কে করেছিলো এসব মানে তুই তো…
লাবিব মাথা নেড়ে বলে,
— না ভাই। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
সাব্বির একটু আগ বাড়িয়ে বলে,
— না স্যার, এটা ওনাদের কেউ করেনি।
মেহরিন আর মেহের ছাড়া বাকিরা হতবাক!
রাজ বলে,
— কে করেছে তাহলে?
সাব্বির কিছুটা গর্বের ভঙ্গিতে বলে,
— বস, আমি আশে পাশে যে সিসিটিভিগুলো ছিল—সব নষ্ট করে দিয়েছি। রাস্তাও ক্লিয়ার করেছিলাম…
তবে আমি জানতাম আপনারা জানতে চাইবেন ঠিক কী হয়েছিল, তাই আমি একটা ফুটেজ রেখে দিয়েছিলাম।
রাজ মাথা নাড়ে।

সবাই তখন উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, অপেক্ষায় ফুটেজ দেখার।
সাব্বির একটা ল্যাপটপ নিয়ে আসে। চালু করে দেয়।
সবার দৃষ্টি ল্যাপটপে।
আর মেহবুবা দাড়িয়ে আছে দরজার সামনে, পর্দা ধরে।
তার মুখে এক অদ্ভুত দৃপ্ততা। পর্দার ফাঁক দিয়ে ভিতরের দিকে চুড়ান্ত মনোযোগে তাকাচ্ছে…
আর মাঝে মাঝে দাঁত বের করে হাসছে।
পুরো ফুটেজটা দেখে সবাই স্তব্ধ।
একজনও মুখে কথা আনতে পারছে না।
রাজ আর রিদ তাকায় লাবিবের দিকে।
লাবিব চুপচাপ ডানে তাকিয়ে থাকে, ল্যাপটপের দিকে।
তারপর আস্তে করে সবার দিকে তাকায়—
শেষে চোখ রাখে মেহবুবার মুখে।
মেহবুবা তখন দাঁত বের করে হেসে ফেলে।
আর তা দেখেই—
লাবিব বুকের মাঝে হাত চেপে ধরে বলে,

— না! … না!
জোরে চিৎকার করে ওঠে—
এত জোরে যে সবার কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম সবার।
রাজ ধমক দিয়ে বলে,
— এই! এত চেঁচাচ্ছিস কেন, বিয়াদব?
লাবিব গলা তুলে বলে,
— Bro, আমি এই বউ নিব না!
এই আমার বউ না… আমার বউ পাল্টে গেছে!!
কথা বলতে বলতেই লাবিবের কান আর নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। সবাই আতঙ্কিত হয়ে লাবিবের কাছে আসে।
মেহবুবা কাছে আসে, হাত ধরে বলে
— কি বলছেন আপনি?আর কি হয়েছে আপনার এমন রক্ত কেন বের হচ্ছে?
লাবিবের পুরো শরীর কাঁপছে,
লাবিব একবার মেহবুবার মুখের দিকে, আবার নিজের কাঁপা হাতের দিকে তাকায়।যে হাতে ধরে আছে মেহবুবা।
হঠাৎ বলে,

— আমার বউ… আমার বউ পাল্টে গেছে আমার বউ……
এই বলেই ঢলে পড়ে।
মেহবুবার দিকেই।
সবাই দৌড়ে এসে ধরে।
সাব্বির বলে,
— মনে হচ্ছে স্যার ম্যামের এই রূপটা সহ্য হয়নি! আমি ডাক্তার ডাকছি।
মেহরিন বলে,
— হ্যাঁ হ্যাঁ, তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকুন!
সাব্বির দৌড়ে ডাক্তার নিয়ে আসে।
ডাক্তার এসে একটু কড়া সুরে বলে,
— এতজন রুগীর কেবিনে কী করছেন? বের হন সবাই।
সবাই বের হয়ে যায়, চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে।
মেহবুবা কাঁদছে।
মেহরিন আর মেহের তাকে শান্তনা দিচ্ছে।
তবে এমন পরিস্থিতিতেও রাজ আর রিদ হাসছে।
পাশে দাঁড়িয়ে সাব্বিরও মুচকি হাসছে।
রাজ বলে,

— ভাই আমার শান্তশিষ্ট বউয়ের এই রূপ দেখে তো সরাসরি মূর্ছা গেলো।
রিদ হেসে বলে,
—মুখটা তখন দেখার মতো ছিল ভাই!
রাজ হেসে বলে,
— আবার বুঝবে মজা…!
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসে।
সবাই এগিয়ে আসে উৎকণ্ঠিত মুখে।
ডাক্তার গম্ভীর মুখে বলে—
—পেশেন্ট অতিরিক্ত চাপের কারণে হঠাৎ হার্ট ব্লক করেছে।
দয়া করে পেশেন্টকে চিন্তামুক্ত রাখবেন। আরেকটু বেশি চাপ নিলে বড় ক্ষতি হয়ে যেত।
এখন খুব সতর্ক থাকতে হবে।
রাজ মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
মেহরিন এগিয়ে এসে বলে,

—আচ্ছা এখন কেমন আছে?
ডাক্তার বলেন,
— আউট অফ ডেঞ্জার।
তবে যদি আবার এভাবে চাপ আসে, বড় বিপদ হতে পারে। খেয়াল রাখবেন।
মেহরিন বলে,
— জি, আমরা খেয়াল রাখবো।
চারপাশে চাপা একটা উদ্বেগ, চিন্তার ছায়া।
সবার মুখে থমথমে নীরবতা।
হঠাৎই মেহবুবা দৌড়ে যায় সাব্বিরের সামনে, রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
— ওর উপর কারা হামলা করেছিল বলুন!
সাব্বির রাজের দিকে তাকায়।
রিদ মাথা নিচু করে চুপচাপ।
মেহের পাশে এসে দাঁড়ায়।
মেহরিন এসে বলে,

— তোকে এত জানতে হবে না, এই বসবি এই।
মেহবুবা মেহরিনের দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
— আমি জানতে চাই!
মেহবুবার কণ্ঠে যেন আগুন ঝরছে।
রাজ কিছু না বলে চুপ করে থাকে।
সাব্বির নির্লিপ্ত মুখে বলে
— “Mr. Talukdar…”
আর কিছু বলার আগেই মেহবুবা ঝাঁপিয়ে পড়ে সাব্বিরের কলার ধরে বলে,
— তাহলে আপনারা কিছু করেননি কেন!?
সাব্বির স্থির দাঁড়িয়ে থাকে, বাধা দেয় না, কিছু বলেও না।
মেহরিন রাগে ধমক দেয়

— মেহবুবা, কী হচ্ছে এখানে? কী করছো তুমি?
মেহবুবা সাব্বিরকে ছেড়ে সামনে এগিয়ে যায়।
রাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
রাজ তাকায় মেহবুবার দিকে।
মেহবুবা আগুন চোখে তাকিয়ে বলে,
— আর আপনি ভাইয়া, আপনি চুপ থাকবেন?
আর কত? আর কত সহ্য করবেন?
রাজ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রিদ ধীর পায়ে চলে যায়।
তার পেছন পেছন মেহের হাঁটতে থাকে।
হঠাৎ রাজ মেহবুবার মাথায় হাত রেখে বলে,

“… ছাড় দিয়েছি
কিন্তু ছেড়ে দিইনি।
একটা কথা আছে না,
— পিপিঁলীকার পাখা গজায় মরিবার তরে।ওদের এখন পাখা আছে তাই উঠছে, খুব তাড়াতাড়ি মুখ থুবড়ে পড়বে।
মরবেইও, খুব তাড়াতাড়ি।যখন ধরবো তখন যমের দুয়ারে নিয়ে ছাড়বো।
কিন্তু মেহবুবা শান্ত হয় না।
ছুটে বেরিয়ে যায়।
মেহরিন পেছন থেকে ডাকে—
—মেহবুবা! দাড়া!
কিন্তু সে শোনে না…
দ্রুতপায়ে দূরে মিলিয়ে যায়।

রাজ বললো মেহরিনকে—
— থাক, আটকিও না।
নিজের রাগ না মেটানো পর্যন্ত শান্ত হবে না।
তোমারই তো বোন!
মেহরিন রাগী চোখে তাকায়। কিছু বলে না।
ওদিকে রিদ হাসপাতালের বাইরে এক ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসে।
আকাশের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে শ্বাস ফেলছে।
তার পাশে এসে বসে মেহের।
রিদ বলে—

—আমার জন্মদাতা পিতা এমন কেন হলো মেহের?
না সে ভালো বন্ধু হতে পারলো,
না হতে পারলো একজন ভালো মানুষ হতে…
তার ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি ছুঁয়ে যায়।
—আর না হতে পারলো ভালো বাবা। নিজের স্বার্থে সন্তানদের ও ব্যবহার করতে দু বার ভাবে না কেন বলো তো?
বাবা কি এমন হয়?
মেহের চুপচাপ শুনে।
সে কিছু বলে না।
প্রিয় মানুষের মনের কষ্ট শুধু হৃদয় দিয়ে অনুভব করে।
তারপর ধীরে বলে—

— আমি যদি পারতাম…
আপনার সকল দুঃখ, কষ্ট, বেদনা শুষে নিতে,
তাহলে আপনাকে করতাম সুখী একজন মানুষ।
তবে আফসোস… সেই ক্ষমতা আমার নেই।
তবে কথা দিচ্ছি…
আপনার যত কষ্ট, দুঃখ, বেদনা—
আমি ভাগ করে নেবো, আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পাশে থাকবো…
রিদ তাকায় মেহেরের দিকে।
তার চোখে এক অপার বিস্ময় আর কৃতজ্ঞতা।
নীরব একটা ভালোবাসার শিহরণ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
মেহের তাকে আশ্বাস দেয়—

কোনোদিন একা থাকবে না আপনি।
ঠিক তখনই রিদ এসে মেহেরকে জড়িয়ে ধরে।
মেহেরও আগলে নেয় তার প্রিয় মানুষকে।
আকণ্ঠ দুঃখে ভেজা, ভালোবাসায় মোড়ানো সেই আলিঙ্গন।
ওদিকে…
মেহবুবা…
সময় তখন সকাল ১০ টা।
মেহবুবা সোজা ঢুকে পড়ে রেদওয়ান তালুকদারের নতুন অফিসে।
চেয়ারে বসে থাকা রেদওয়ান তখন কোনো ফাইল ওল্টাচ্ছিলেন।
চোখ তুলে মেহবুবাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ওঠে।

— তুমি এখানে? — গলায় বিরক্তি স্পষ্ট।
মেহবুবা সামনে রাখা চেয়ারে পা তুলে বসে পড়ল, নির্ভীক ভঙ্গিতে।
তার চোখে চোখ রেখে বলল—
— তোর কলিজাটা কত বড় রে, রেদওয়ান তালুকদার!
রেদওয়ান ফুঁসে উঠলো, দাঁড়িয়ে পড়ল।
— এই মেয়ে, ভদ্রভাবে কথা বলো! কার সাথে কী ভাবে কথা বলতে হয় জানো না?
মেহবুবা হেসে ফেলে, কণ্ঠে তীব্র ঘৃণা।
— আব্বে চুপ! কিসের ভদ্রতা? তোকে তো কুকুরের সাথেও তুলনা করা যায় না! এত নিচ তুই!
রেদওয়ান গর্জে ওঠে—

— এক থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিবো! বেয়াদব মেয়ে!
মেহবুবা উঠে দাঁড়ায়, চোখে আগুন।
— তোর না, তোর বাপেরও সেই সাহস নাই!
রেদওয়ান তালুকদার তেরে আসে থাপ্পড় মারার জন্য, হাত তোলে।টেবিল থেকে পানির গ্লাস তুলে ছুড়ে মারে রেদওয়ান তালুকদারের মুখে। রেদওয়ান তালুকদার আবার আগিয়ে আসে।
মেহবুবা নিচু হয়ে নিজের পায়ের দিক থেকে অস্ত্রটা বের করে নেয়।
ঠাস করে সেটাকে গেঁথে দেয় রেদওয়ানের বুকে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

— তোর কত বড় সাহস, আমার বরকে মারার জন্য লোক পাঠাস! জানের মায়া নেয় তোর? মেরে দেই এখন?
আজ তোকে একদম জোমের দুয়ারে পৌঁছে দেবো, কুকুরের বাচ্চা!
রেদওয়ান তালুকদার মেহবুবার গলা চেপে ধরে
মেহবুবাও রেদওয়ান তালুকদারের গলা চেপে ধরে বলে,
—তোকে আজ এখানেই পুঁতে দিতাম…
শুধু ভাইয়ার জন্য ছেড়ে দিলাম।
মনে রাখিস, তোর ধ্বংস খুব কাছেই!
কথা শেষে মেহবুবা হেসে উঠে, গলায় এক ঘুষি মেরে দেয়—
রেদওয়ান তালুকদার পেছনে হেলে পড়ে বুক চেপে বসে যায় মেঝেতে।
— আহহ… কে আছো, এই মেয়েটাকে ধরো! — চিৎকার করে ওঠে।
মেহবুবা ঠাণ্ডা গলায় হাসে।

পানির জগটা তুলে ছুঁড়ে মারে রেদওয়ানের মাথায়।
তারপর ধীরে ধীরে সোজা হয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, কেউ তাকে আটকায় নি।
চারপাশে কোন লোকই ছিলনা, কিন্তু আসার সময় দেখে ছিলো কত লোক।
সবাই যেনো এক সাথে উবে গেছে!
বেরিয়ে এসে মেহবুবা বলে—
— Thanks ভাইয়া, রাস্তা ক্লিয়ার করার জন্য।
তারপর আবার রওনা দেয় হাসপাতালে,
যেখানে পড়ে আছে তার প্রিয় মানুষ—যার জন্য সে, মৃত্যুর চোখে চোখ রেখেও থামেনি।
বিকেল ৩টা।

মেহবুবা চুপচাপ এসে দাঁড়ায় লাবিবের কেবিনে।
ওই নিঃশব্দ ঘরে কেবল অক্সিজেন মাস্কে মোড়ানো মুখটা,
আর মনিটরের শব্দে কাঁপছে বাতাস।
মেহবুবা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।
লাবিবের হাতটা ধরে নিয়ে ঠোঁটে চুমু খায়।
চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।
গলা ভার করে বলে,

— “আমি তো এমন ছিলাম না, লাবিব…
আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলাম, বিশ্বাস করো।
কিন্তু যখন ওরা তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইল,
তখন আর সহ্য করতে পারিনি।
বলতো, কিভাবে দেখতে পারতাম তোমার মৃত্যু নিজের চোখের সামনে?
তোমার যদি কিছু হয়ে যেত, আমি তো মরে যেতাম!
বলো, কিভাবে সেটা মেনে নিতাম?”
বুক ভেঙে যাচ্ছে কথা বলতে বলতে, আর শেষে হঠাৎ করে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়ে।
গলায় কান্না আটকে আসে, হাতে জোর নেই।
ঠিক তখনই লাবিব চোখ মেলে চায়।
ধীরে ধীরে অক্সিজেন মাস্কটা খোলে।
জীর্ণ কণ্ঠে বলে—

— “নবনীতা… কান্না করো না।
আমি ঠিক আছি… আমি এখন অনেক ভালো।”
মেহবুবা অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকায়।
সেই চোখে অবিশ্বাস আর স্বস্তি, ভয় আর ভালোবাসা একসাথে।
লাবিব হালকা হেসে বলে—
— “আমার বউ…
যে আমাকে রক্ষা করেছে,
সে কীভাবে মরতে পারে বলো তো?”
মেহবুবা এবার লাবিবের বুকের ওপর মাথা রাখে।
চোখের জল তার গায়ের সঙ্গে মিশে যায়।
তাদের ভালোবাসা আজ শুধু অনুভবে নয়—
প্রমাণে, বাঁচার জন্য মরার মধ্যেও।
বিকেল ৩টা।

মেহবুবা চুপচাপ বসে আছে লাবিবের কেবিনে।
ওই নিঃশব্দ ঘরে কেবল অক্সিজেন মাস্কে মোড়ানো মুখটা,
আর মনিটরের শব্দে কাঁপছে বাতাস।
মেহবুবা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।
লাবিবের হাতটা ধরে নিয়ে ঠোঁটে চুমু খায়।
চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।
গলা ভার করে বলে,

— আমি তো এমন ছিলাম না, লাবিব…
আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ ছিলাম, বিশ্বাস করো।
কিন্তু যখন ওরা তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইল,
তখন আর সহ্য করতে পারিনি।
বলতো, কিভাবে দেখতে পারতাম তোমার মৃত্যু নিজের চোখের সামনে?
তোমার যদি কিছু হয়ে যেত, আমি তো মরে যেতাম!

বলো, কিভাবে সেটা মেনে নিতাম?তোমার ভালবাসায় যে আমি উম্মত হয়েছি। হারিয়েছি নিজের সত্তা বিসর্জন দিয়েছি সব কিছু তোমার ভালোবাসার চরণ তলে । ভালোবাসাই তো আমাকে শান্ত থেকে হিংস্র করে তুলল। ভালোবাসা যে মানে না পাপ পুণ্য ভালোবাসা মানে না দোষ গুণ।তোমায় ভালবাসার অপরাধে আমি দোষী তাতে আমার কোন আক্ষেপ নেই জানো? কারণ আমি ভালোবাসি তোমাকে তোমার জন্য শুধু মানুষ খুন কেন! নিজের জীবনে দিয়ে দিতে রাজি আছি তারপরও তোমার গায়ে কোন আচ আমি আসতে দিব না।

আমি জানি না ভবিষ্যতে কী আছে…
কিন্তু আমি জানি,
তোমার গায়ে এতটুকু আঁচড় লাগলে আমার আত্মা ছিঁড়ে যাবে।
তোমার একফোঁটা রক্তের দাম আমার হাজারটা নিঃশ্বাসের চেয়েও বেশি।
প্রয়োজনে…
আমি শেষ নিঃশ্বাসটা দিয়ে হলেও তোমায় বাঁচাবো।
তুমি জানতে পারবে না, কিন্তু আমি থেকে যাবো…
তোমার আশেপাশে, তোমার নিঃশ্বাসে, তোমার প্রতিটা দুঃসময়কে আগলে রাখতে।
ভালোবাসা মানে শুধু হাত ধরা না…
ভালোবাসা মানে, যখন প্রয়োজন হবে,
নিজের জীবনটা দিয়ে তোমার জীবনকে ঢেকে দেওয়া।
তোমার হাসিটুকু যদি টিকিয়ে রাখতে হয়,
তবে আমি কাঁদতে রাজি।

আমি মরতেও রাজি, যদি তাতে তুমি বাঁচো।
তোমাকে হারিয়ে আমি বাঁচতে পারব না—
তোমার জন্য আমি হারিয়ে যেতে রাজি।
আমার ভালোবাসা আমার জীবন।
আর যারা সেই ভালোবাসাকে আঘাত করতে আসবে…
তাদের হাত আমি আর রাখবো না।
ছেঁড়ে ফেলবো, পুড়িয়ে দেবো—
কারণ আমি শুধু ভালোবাসতে জানি না,
আমি রক্ষা করতেও জানি।
তোমার চোখে জল এলে, আমার রক্ত ঝরাতে দ্বিধা নেই।
তোমার বুক স্পর্শ করার আগেই তাদের হাত কেটে ফেলে দেবো।
কারণ আমি প্রেমিকা হয়েও সৈনিক।
যার ভালোবাসা যেমন গভীর, তেমনি প্রতিশোধও নিঃসঙ্গ ও নির্মম।
এই উঠো না..

কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহবুবা লাবিবের দিকে তারপর একটা গান ধরে,
কেন হয় এমন…
মনে নেই তো মন,
হাওয়া বড়ই বে’রঙিন,
না’রে নয় সহজ..!
পাওয়া তোর মতন আর কাউকেও কোনদিন..!
হারিয়ে গেলাম…
ফুরিয়ে এলাম…
চোখে শুকিয়ে গেল জল
বেঁচে থেকে লাভ কি বল..!
তোকে ছাড়া আর..
বুক ভেঙে যাচ্ছে অসহ্য যন্ত্রনায়, আর শেষে হঠাৎ করে কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়ে।
গলায় কান্না আটকে আসে, হাতে জোর নেই।
ঠিক তখনই লাবিব চোখ মেলে চায়।
ধীরে ধীরে অক্সিজেন মাস্কটা খোলে।
জীর্ণ কণ্ঠে বলে—

— নবনীতা… কান্না করো না।
আমি ঠিক আছি… আমি এখন অনেক ভালো।
মেহবুবা অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকায়।
সেই চোখে অবিশ্বাস আর স্বস্তি, ভয় আর ভালোবাসা একসাথে।
লাবিব হালকা হেসে বলে—
— আমার বউ…
যে আমাকে রক্ষা করেছে,
আমি কীভাবে মরতে পারে বলো তো?
মেহবুবা এবার লাবিবের বুকের ওপর মাথা রাখে।
চোখের জল তার গায়ের সঙ্গে মিশে যায়।
তাদের ভালোবাসা আজ শুধু অনুভবে নয়—
প্রমাণে, বাঁচার জন্য মরার মধ্যেও।
লাবিব বলে তবে বউ তোমার এই রূপ দেখে যা আমি স্ট্রোক করে মরে যায়নি এই ডের।
মেহবুবা মুখ তুলে বলে এইসব কী কথা।
লাবিব বলে –

— ভালই হলো মার পিট জানা, বউ থাকলে ভালো বুঝলি তো না, মানে অনক সুযোগ-সুবিধা আছে, এই যেমন কাল আমায় বাঁচালে।এখন থেকে আমি আর কোন মার পিটে যাবো না। তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে বুঝলে তো তুমি মারবে আর আমি বসে বসে দেখব আহা কি ফিল। পুরাই পেয়সা উসুল।জাস্ট একবার ভাবো আমার বউ যে লেভেলের মারা মারি জানে এগুলো যদি বাকি সবাই জানে, সবাই আমাকে কত সম্মান করবে ভাবতে পারছো?আমাকে কেউ কিছু বললেই বলবে দারা আমার বউকে ডেকে নিয়ে আসছি,,আমার বউ এসে মজা দেখাবে তোদের দারা।ইস ভেবে ভেবেই তো আমি গর্বের গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছি বউ।
মেহেবুবা লাবিবের এমন বকবক শুনছে মন দিয়ে।
হঠাৎ লাবিব বলে,

— আচ্ছা একটা কথা বলি?
মেহবুবা মাথা ঝাকিয়ে বলে –
— বলতে।
লাবিব বলে –
— মারবা না তো?
মেহবুবা কপাল চাপরে বলে –
— আপনেকে কোন দুখে মারবো, আপনি তো অসুস্থ! সুস্থ থাকলে না হয়, ভেবে দেখতাম!
লাবিব কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে –
— “বউ…”
মেহবুবা হাসে, বলে –
— মজা করলাম! বলুন, কি বলবেন?
লাবিব বলে –
—”রাগ করবা না, কিন্তু…
মেহবুবা বলে –

— আচ্ছা।
লাবিব বলে –
— তোমাকে না… কাল একদম রক্ত চুষা ডাইনী লাগছিলো… চুল খোলা, মুখে রক্ত, দাঁতগুলা… ইইইই…”
(দাঁত বের করে দেখায়)
মেহবুবা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে,
আর লাবিব হাসে!
মেহবুবা বলে –
— তাই বুঝি!
লাবিব হাসে, বলে –
— হে হে, একদম!
মেহবুবা বলে –
—যা করলেন জীবনে, উপরে গেলে দিব নে।
লাবিব আরও জোরে হাসে ফালে,
আর মেহবুবা মুগ্ধ নয়নে দেখে তার প্রিয় পুরুষের হাসি…
মেহবুবা মনে মনে ভাবে —

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫০

মানুষ বলে, মেয়েদের হাসি নাকি হৃদয়ে জংকার তোলে…
ইস! তারা যদি আমার বাঁদরটার হাসি দেখতো, তাহলে বুঝতো
প্রেমিক পুরুষের হাসি কেমন হয়।
এই হাসি শুধু হৃদয়ে জংকার তোলে না,
আত্মা পর্যন্ত শীতল করে, উষ্ণতা ছড়ায়, মন জুরে…

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫২