মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৩

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৩
মির্জা সূচনা

দুপুর ১২টা।
কনে সাজে বসে থাকা মানে সাধারণত চোখেমুখে উজ্জ্বলতা, বুক ধুকপুকুনি -উত্তেজনা—লজ্জা আর ভয়।
কিন্তু আমাদের মেহের? সে তো সাজেই জিমিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে!
বাকি সবাই রেডি হচ্ছে।
আর মেহের?
কনে সেজে বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে, যেনো আজ কিছুই হয়নি!
মেহরিন রেডি হয়ে ঘরে ঢুকেই দেখে মেহের ঘুমিয়ে আছে।
কপাল চাপড়ে কাছে গিয়ে ডাকে,

— উঠ মেহের! বোন আমার, আজকে কী শুরু করলি তুই? আজ তোর বিয়ে, আর তোর মরার ঘুম শেষ হয় না!
মেহের চোখ মেলে তাকায়না, ঝিমিয়ে বলে,
— I don’t know… এত ঘুম পাচ্ছে কেন আমার…
মেহরিন বিরক্ত গলায় বলে,
— উঠ! এখন আর ঘুমাস না। মান-সম্মান বলে কিছু থাকবে না।
মেহের হাই তুলে বলে,
—মান-সম্মান কে গুলি মার! ঘুমটা ইম্পর্ট্যান্ট। বিয়ে না।
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,
—তাই নাকি? তাহলে ওইদিন অমন ভোর বেলায় নাচতে নাচতে বিয়ে করলি কেন?
মেহের উঠে বসে হেসে বলে,
— ওটা তো জেদ ছিল।
মেহরিন হাসে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— তাহলে আজও ঘুম আর সাডে জেদ দেখিয়ে বিয়েটা সেরে নে।
এর মাঝেই ঘরে ঢোকেন মালিহা মির্জা আর ফাইজা চৌধুরী।
দুবোনকে হাসতে দেখে তাঁরাও হেসে ফেলেন।
মেহরিন মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
—কিছু বলবে, মা?
ফাইজা চৌধুরী বলেন,
— একটু কিছু খাওয়াতে আনলাম। সারাদিন তো অনেক ধকল যাবে।
মেহরিন মাথা নাড়ে।
ফাইজা চৌধুরী নিজ হাতে মেহরিন আর মেহেরকে খাইয়ে দেন।
খাওয়া শেষ হতেই মালিহা মির্জা মেহেরের পাশে বসেন।

— মা-শা-আল্লাহ্‌! খুব সুন্দর লাগছে।
মেহের হেসে বলে,
—থ্যাঙ্ক ইউ মা!
হঠাৎ মালিহা মির্জা বলেন,
—মা, আমার মান-সম্মান এখন তোর হাতে!
তুই তো মেয়ে কম, ছেলে বেশি।
দয়া করে আমার নাক কেটিস না।
মেহের মুখ ভোতা করে বলে,
— “মা…”
মালিহা মির্জা ফের বলেন,
—প্রথমবার বিয়েটা যেভাবে করলি— ওগুলো কি মেয়ের কাজ?
তোর তো সবসময় ছেলেদের মত হাবভাব।
বিয়ের পরে এসব যেনো না শুনি!
স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত।
স্বামীর মুখের মুখে কথা বলা পাপ— বুঝেছিস?
মেহের মনে মনে বলে,
— আহ.. মা তুমি যদি জানতে আমি বিয়ের দিন থাপ্পড় আর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বিয়ে করছি, আমি নিশ্চিত তুমি অজ্ঞান হয়ে যেতে।
মুখে বলে,

—আচ্ছা মা, কিছু করবো না।
নিজের ‘ব্যাটা-ব্যাটা ভাব’ কমিয়ে
নেকা মেয়েদের মতো স্বামীভক্ত হয়ে যাবো।
স্বামী আমার প্রাণনাথ,
আমার জীবন-মরণ।
স্বামীবিহীন আমি পানি-বিহীন মাছ!
ডালছাড়া পাতা!
সুয়ামিইইই… আপনি কোথায়!
আপনার বিরহে আমি অজ্ঞা— যায়!
বলতে বলতেই কপালে হাত দিয়ে ‘নাটক শুরু’!
সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ে।
মালিহা মির্জা পিঠে একটা চাপড় মেরে বলেন,
—চুপ কর, বেয়াদব!
মেহের দুঃখী মুখ করে বলে,

— ওহে আমার মাতা!
আপনি এমন ভাবে আমায় মারিতে পারেন না।
আমার স্বামী যদি জানিতে পারে আপনি আমায় প্রহার করিয়াছেন, তবে সে বড়ই দুঃখ পাইবেন,হে মাতা।
আবারও হাসির ঢেউ!
ফাইজা চৌধুরী বলেন,
—আমার পাগলী আম্মাজানটা!
মেহরিন হাসতে হাসতে বলে,
—হয়েছে হয়েছে, এবার ওঠো!
বরপক্ষ আসার সময় হয়ে যাচ্ছে!
তারপর মেহেরকে নিয়ে বেরিয়ে যায় স্টেজের দিকে।
সঙ্গে যায় মেহবুবা, লামিয়া চুমকি জেরি আর আরফা।
নিজেদের প্ল্যানমাফিক কাজে লেগে পড়ে তারা।
ওদিকে রিদকে সাজানো হচ্ছে বর সাজে। তাকে সাজাচ্ছে রাজ।
আজকের দিনটা অন্যরকম।
সব ছেলেরা সেজেছে কালো পোশাকে—
কালো শার্ট, কালো প্যান্ট,

তার উপর কালো ব্লেজার। একেক জনকে পুরো হিরোদের মতো লাগছে, কারো থেকে কেও কম না। কাকে রেখে কাকে দেখবে মানুষ। এদের দেখে বুঝা যাচ্ছে না এরা বিয়ে খেতে যাচ্ছে, এদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা সয়মবর সভায় যাচ্ছে। মনে হচ্ছে রুপকথার একেক রাজ্যের রাজা তারা।
সবার মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম রিদ।
চুল গুছানো, পোশাক নিখুঁত— যেনো কোনো রাজ্যের রাজপুত্র। আর তার বর জাত্রী হয়ে যাচ্ছে একেক রাজ্যের রাজা।
রাজ নিজের হাতে রিদকে পাগড়ি পরাচ্ছে।
ঠিক সেই সময়ই রাহি হাজির হয়।
তার গায়ে হালকা মিষ্টি রঙের রাজকন্যাদের মতো গাউন,
মাথায় রানি-দের মত তাজ।
যেনো রূপকথার রাজ্য থেকে বেরিয়ে বাস্তবের মাটিতে পা দিয়েছে এই রাজকুমারী! এই ড্রেস টা রাজ বড় ডিজাইনার দিয়ে বানিয়ে এনেছে মালোশিয়া থেকে।
রাজ আর রিদ একসাথে বলে ওঠে,

— “মাশাআল্লাহ!”
রাহি মুচকি হেসে, জামার প্রান্ত ধরে এদিক ওদিক ঘুরে বলে,
— কেমন লাগছে আমাকে?
রাজ হেসে বলে,
—একদম রাজকন্যাদের মতো! আমার পুঁচকি কে।
রিদ মিষ্টি গলায় বলে,
—একদম পুতুলের মত লাগছে।
ভাইদের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত রাহি বলে,
— আমি তো সব সময় সুন্দর’ই এত বলতে হবে না আমি জানি এখন চলো, অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি মেয়ে হয়ে রেডি হয়ে গেছি, আর তোমরা এখনও!
রাজ হাসে,
— পুঁচকি যে সকাল ৮টা থেকে সাজুগুজু করছিলো, সেটা কিন্তু আমরা জানি!
রাহি জিভ কেটে বলে,
—উফফ! ভুলেই গেছি! কিন্তু যাই হোক, আমি তো তবুও আগে রেডি হয়ে গেছি, তাই না?
রাজ আর রিদ মাথা নাড়ে, হেসে সম্মতি দেয়।
তিনজন একসাথে বের হয়ে আসে।

রিদের জন্য ফুল দিয়ে সাজানো গাড়ি তৈরি।
আর বাকিরা যাবে বাইক-এ—
রাজের স্পেশাল প্ল্যান!
বাইকে করে বউ আনতে যাওয়ার নাকি একটা অন্যরকম “ভাইব” পাওয়া যায়!
রিদও আর না করেনি।
রিদ গাড়িতে উঠতে যাচ্ছে,
ঠিক তখনই রাজ বলে,
—দাঁড়া!
রিদ একটু থেমে, তার পর ব্রু কুচকে বলে,
— Any problem?
রাজ গম্ভীর মুখে গাড়ির দিকে তাকায়।
তারপর মোবাইল বের করে কাউকে ফোন করে।
মিনিটের মধ্যে একজন লোক এসে গাড়ি চেক করে বলে,

— Boss, গাড়ির ব্রেকের তার কাটা।
সবাই থমকে যায়।
শান্ত বলে,
— এটা কে করল বল তো?
রাকিব বলে,
—আল্লাহ মালুম, তবে রাজ ভাই বুঝলা কিভাবে!
রাজ বলে,
— ভালো করে খেয়াল করো।
গাড়ির দরজার সাইডের ফুলগুলো কুচকানো।
আমরা এখনও উঠিনি, আর এখানে কোনো বাচ্চাও নেই।
মানে কেউ ঢুকেছিল।
কিন্তু আমরা সবাই তো উপরে ছিলাম!
রিদ বিদ্রূপ করে হাসে,

— স্বার্থপর মানুষ!
রাজ রিদের কাঁধ চাপড়ে বলে,
—আররে ব্যাটা, chill মার!
আমার ভাইয়ের বিয়ে, একটা ধামাকা না হলে চলে?
Businessman রাজের একমাত্র best friend-এর বিয়ে—
সবাই যদি না জানে, তাহলে এত নামডাক দিয়ে লাভ কী?
মিডিয়া তো এমনিই নাটক বানাবে—
আমরা বরং ভালো নাটকটাই বানিয়ে দেই।
লাবিব বলে, একদম।
সবাই হেসে ওঠে।
রাজ আবার ফোন করে—
মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে হাজির হয় একটা হেলিকপ্টার!
ফুলে মোড়া,
আর নিচ দিয়ে বের হচ্ছে রঙবেরঙের ধোঁয়া!
রাহি আনন্দে লাফিয়ে ওঠে,
— OMG! ভাইয়া, আমরা হেলিকপ্টারে যাবো??
রাজ হাসে,

—হ্যাঁ পুঁচকি! আমি জানতাম কিছু না কিছু একটা হবে, তাই বিকল্প আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম।
তারপর রাজ লাবিবকে বলে,
— তোরা রওনা দে।
লাবিব, শান্ত, রাকিব মাথা নাড়ে,
বাইক স্টার্ট দেয়।
প্রতিটা বাইক ফুলে মোড়া,
আর চাকা ঘুরতেই বের হচ্ছে রঙিন ধোঁয়া।এই বাইক গুলো রাজের পক্ষ থেকে দোয়া।
তাদের বিদায় দিয়ে,
রাজ, রিদ আর রাহি উঠে বসে হেলিকপ্টারে।
এদিকে মেয়েরাও রেডি।
সবাই পরেছে সিলভার কালারের শাড়ি,
সাথে মেচিং গহনা।
দেখতে যেনো একেকজন অপ্সরা!
সব রমণীরা অধীর আগ্রহে বরপক্ষ আসার অপেক্ষায়।
অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান…
লাবিব,শান্ত, রাকিব ও ভার্সিটির আরও কিছু ছেলে-মেয়ে এসে গেছে।
সাথে আছে সাথী আর মৌ।
আর আকাশপথে আসছে বর— রিদ!
সবাই বিস্ময়ে ফিসফিস করে—

— আরে বাবা! মির্জা বাড়ির জামাই তো হেলিকপ্টারে আসছে! দেখছো? জামাইগুলোও পেয়েছে ফিরোজ সাহেব!
মানুষের ভিড়, বাচ্চাদের চিৎকার বর এসেছে বর এসেছে উত্তেজনায় চারপাশ সরগরম।
মেহরিনরা তো তৈরি হয়েই গেটের দিকে যাচ্ছে।
বরন ডালা হাতে মালিহা মির্জা, সাথে ফাইজা চৌধুরী, আর রূপা বেগম
তিন বাড়ির তিন কর্তি দাঁড়িয়েছেন জামাই বরন করতে।
তাঁদের পেছনে মেয়েরা—
মেহরিন, চুমকি, জেরি, মেহবুবা, লামিয়া আর আরফা
দাঁড়িয়ে আছে বরপক্ষের“১২টা বাজানো”র জন্য!
হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার জায়গাও রাজের লোকেরা ঠিকঠাক করে রেখেছে।
ঠিক তখন রাজ বলে,
—তোর অনুভূতি কী ভাই?
দ্বিতীয় বার বিয়ে করতে যাচ্ছিস?
রিদ হেসে গান ধরে—

— “Mileen ki Jaldhi hee, plane ki dhimee hey raftaar, meri baash chale toh mai dho uski chaat peh plane utaar…”
রাজ আর রাহি হেসে ফেলে।
রাহি বলে,
— আমি একটা, আমি একটা!
রাজ আর রিদ একসাথে বলে,
— অবশ্যই!
রাহি গলা পরিষ্কার করে বলে,
— Lo chali meh, apni vai ki baarat leke lo chali meh…
রাজ বলে,
— ওকে! তাহলে আমি কেন পিছিয়ে থাকবো!
বলেই রিদকে ইশারা করে,
দু’জন হেলিকপ্টারের দরজা খুলে আধাআধি বের হয়ে গানে গানে হাজির হয়—

— Hiriye chehera banke meh to aya re…
রাহি উচ্ছ্বসিত, চিৎকার করে—
— “হে ইয়া!”
— Doli bhi barat sath me hbhi laya re…
— “হে ইয়া!”
— Hiriye chehera banke meh to aya re,,,, doli bhi barat sath meh to aya re, Abh na hota he ak rojh Intejhar soni tukjo to bash meri honi reeee,,,
te nu leke meh javanga, dil de ke meh javanga…

গান গাইতে গাইতেই হেলিকপ্টার নামে।
নিচে দাঁড়িয়ে সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে—
বর আসছে… রাজকীয় আগমনে।
রাজ আর রিদ গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়।
মাহির ভিডিও করছে,
আজকের প্রতিটা মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি হবে।
বরণ শেষে মালিহা মির্জা, ফাইজা চৌধুরী আর রূপা বেগম সরে যান।
তাদের পাশে দাঁড়ায় মেয়েরা।
হঠাৎ রাহি গেটের ফাঁক দিয়ে সরে এসে মেহরিনের পাশে দাঁড়ায়।
রাজ আর রিদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
রাহি হেসে বলে,

— এখন আমি মেয়েপক্ষ!
সবাই হেসে ওঠে।
আর এদিকে আরশ চলে যায়।
রাজদের ওদিকে।
তা দেখে মেহরিন বলে,
—এটা কী হলো ভাইয়া?
আরশ বলে,
—রাহি চলে গেছে তো, ওদের একজন কমে গেলো। তাই আমি ব্যালান্স করলাম।
মেয়েরা মুখ ঝামটা দেয়।
রাজ গলা পরিষ্কার করে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে বলে—
— তা বিয়াইন সাহেবা, আপনাদের দাবি কী?
মেহরিন বাঁকা হেসে বলে,
— বেশি না, only ১২ লাখ!
রাজ চমকে উঠে—

—What?!
মেহরিন বলে,
— আমার বর আর অনেক খরচ করেছে এই গেট সাজাতে,
সেটা পুষিয়ে নিতে হবে না!
আর আমরা এই রোদে দাঁড়িয়ে আছি, তার একটা দাম আছে না?
রাজ বলে,
— আমরাও তো দাঁড়িয়ে আছি!
আমাদের কষ্টের দাম কে দেবে?
মেহরিন হেসে বলে,
— আরে বিয়াই সাহেব, তার ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে!
মেয়েরা শরবত দাও বিয়াই সাহেবদের।
মেহরিনের কথায়,
সবাই হাত বাড়িয়ে দেয়—
একেকজনের হাতে একেক ফ্লেভারের শরবত।
রাজ বলে,

— আরে, একেক শরবত একেক রঙের কেন?
মেহরিন হেসে বলে,
— একেকজনের ভালোবাসা যেমন এক না,
তেমনই শরবতও এক নয়!
রাজ মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,
— বুঝলাম।
তারপর বলে,
— তবে শরবত সুবিধার লাগছে না। আগে আপনারা খান, তারপর আমরা।
মেহরিন বাঁকা হাসি দেয় মনে মনে বলে,
— আগেই জানতাম, সোনা—এটাই বলবে! মুখে বলে,
আচ্ছা, মেয়েরা—চেক করে দেখাও!
সবাই এক চুমুক খায়, মুখ সামনে আনে—আর হাত নেয় পিছনে।
সবাই বলে,

— “Happy!”
এই সুযোগে গ্লাসগুলো পেছনে রেখে,
আসল গ্লাসে তুলে নেয় স্পেশাল শরবত।
পেছনে থাকা মেয়েরা সেই গ্লাস নিয়ে সরে যায়।
রাজ সবাইকে খেতে দেখে শরবত তোলে,
এক চুমুকেই একেকজনের অবস্থা নাজেহাল!
আর তাদের দেখে মেয়েরা সবাই হেসে ওঠে।
মেহরিন বলে,
— আচ্ছা আচ্চা, অনেক মজা হয়েছে,
আর মজা করার জন্য দুঃখিত—
এবার মিষ্টি খেয়ে নিন বিয়াই সাহেব, সব ঠিক হয়ে যাবে!
কেউ আর কিছু না বলে
মিষ্টি মুখে তুলে নেয়।
আর এক কামড় দিতেই একেকজনের কান দিয়ে বের হতে থাকে ধোয়া!
সবাই পানি পানি করেতে থাকে!
তখন মেহরিন হেসে বলে,

— আপনারা যদি চলেন ডালে ডালে,
তাহলে আমরাও চলি পাতায় পাতায়!
বুঝলেন বিয়াই সাহেব,
শেষ কথাটা একটু টেনে টেনে বলে—
— মেহরিন…!

মেহরিন হেসে বলে,
— এই কে আছো? লেবুর শরবত আনো!
মেহরিনের বলতে দেরি রাজের লোকজন আনতে দেরি করেনি।
ঠান্ডা ঠান্ডা লেবুর শরবত খেয়ে সবাই একটু স্থির হয়।
সাথী আর মৌ একপাশে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে আর খিলখিল করে হাসছে।
রাজ নিজেকে সংযত করে বলে,
— এবার বলুন বিয়াইন, দাবি কী?
মেহরিন চোখ ছোট করে বলে,
—বললাম তো, বেশি না—মাত্র ১২ লাখ!
রাজ হাত তোলে বলে—
—আচ্ছা, মানলাম! কিন্তু একটা শর্ত আছে।
মেহরিন গম্ভীর ভঙ্গিতে বলে,

— কি শর্ত?
রাজ বলে,
—গান আর নাচের লড়াই হবে!
যারা জিতবে, তাদের কথা রাখা হবে।
মেহরিন হেসে ফেলে। হঠাৎ মেয়েরা গানে গানের আর নাচের তালে বলে—
Peysha fek Tamasha dekh!!
মেয়েদের দল নাচ শুরু করে সেই গানে।
দুলছে কোমর, বাজছে তাল।ওদের নাচ শেষ হতেই রাজ গাই—
কত যে শহীদ আছে তোর নামে লেখা…!
তাকালে কারেন্ট লাগে ছুয়ে দিলে ছ্যাকা..!
তাও আজ তোর সাথে জলে পুরে যাবো,
মনে মনে আমি তোর কাছে কেস খাবো..!
তখনই মেহরিন গলা মিলায় সাথে কমর দুলাই,

— O babu… হাটবাজারে বেড়েছে বেজায় গরম,
আমি জেই না দুলিয়েছি কোমর নরম!
আরশ গাইতে শুরু করে,
চোখ তুলে তাকায় লামিয়ার দিকে—
তেরি আখো কে মাতবালে,
কাজল কো মেরা সালাম…!
জুলফোকে কালে কালে
বাদাল কো মেরা সালাম…!
তেরি আখো কিতবালে,
কাজল কো মেরে সানাম..!
জুলফোকে কালে কালে,
বাদাল কো মেরে সানাম…!
ঘায়েল করদে মুঝে ইয়ার…
তেরি পায়েল কি ছানকার..!
হেই সনি সনি তেরি সনি,,,
হারাদো কাল সালাম..!
সালামে ইশক ইশক ইশক সালামে ইশক
লামিয়া হেসে ফেলে, তারপর গায়—
আআআ আগুন…
প্রেমেরি আগুন…

দুচোখে ফাগুন দিনে রাতে,,
হাওয়াই ভেসেছি হাওয়াই..!
প্রেমেরি মায়ায় তোমার সাথে…!
আরশ আবার গেয়ে ওঠে—
— বলি o my god, বলি o my god,
দিও মদদ চোর পুলিশের পিরিতে,,
বসাও এবার বিয়ের পিঁড়িতে..!
ও দরদী বসাও এবার বিয়ের পিরিতে …
নাচ আর গানে উত্তেজনা তুঙ্গে!
কারো থেকে কেউ কম না!
হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে!
একজনও ছাড় দিচ্ছে না!
হঠাৎ শান্ত চুমকির দিকে ফিরে গেয়ে ওঠে—

মুখেতে গালি মিঠা মিঠা হেয়ালি…!
যত খুশি গালাগালি করো লাগে ভালো..!
মুখেতে গালি মিঠা মিঠা হেয়ালি..!
যত খুশি গালাগালি করো লাগে ভালো..!
আমাকে সাথে নিয়ে চলো না..!
মিষ্টি করে তুমি বলো না..!
তোমাকে যে আমি ভালোবাসি…!
ওই ওই চুমকি চলেছে একা পথে..!
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে…!
চুমকি উত্তর দেয় গানে—
হুম হুম হুম হিরো তু মেরা হিরো হে,,,
ভিলেন জেসা কামিনা কর..!
স্বপ্নকি ইস রানি কো..!

এসে তো বদনাম না কার..!
দিবানা ইয়ার কেহতা হ্যায় পেয়ার..!
আচ্ছা নেহি দিবানা পান..!
তু মেরা তু মেরা তু মেরা তু মেরা
তু মেরা হিরো নাম্বার ওয়ান ..!
লাবিব হঠাৎ গেড়ে ওঠে,
তুই আমার ফাকা মনে,
আনলি প্রেমের দিল দরিয়া..!
দিনশেষে ঘুমের দেশে,
তুহি মেরি ঐশ্বরিয়া..!
তুই কি জানিস তোর চোখে কত নেশা?
তোর কাছে হার মানে কারিনার বিপাশা..!
ওই লিপস্টিক টাতে তোকে আজ হেব্বি লাগছে!!
তোকে হেব্বি লাগছে..!
তোকে হেব্বি লাগছে…!
তোকে হেব্বি লাগছে রে…!
তোকে হেব্বি লাগছে …!
উত্তরে মেহবুবা গেয়ে ওঠে,
মধুর মধুর কইয়া কথা..!
সরল মনে দিলা ব্যথা,,,
মানে না মন ছলনা..!
কেটে কেটে যায় দিনে রজনী,
আসি আসি বলে আর আসোনি…!
বলে বলে লোকে পাগলীনি…!
পাগল আমি নই..!
বন্ধু কই কই ???
রাকিব রাহি কে চোখ টিপ দিয়ে গায়,

মুঝে তুম ছুপকে ছুপকে জাব এসে দেখতি হো আচ্ছা লাগতি হো
কাভি জুলফসে কাভি আঁচল সে যাব খেলতি..!হো অচ্ছে লাগতে হো..!
রাহি বাকা হেসে গায়তে থাকে আর নাচতে থাকে,
কেহেদোনা ও সানাম..!
তেরে হে তেরে হাম..!
দিল কি রাহোমে হে..!
বেহেকে হে দিলকে কারাম..!
গিলা গিলা গিলা দিল গিলা গিলা..!
মিলা মিলা কই মিলা মিলা..!
এই গান শেষে মেহরিন শাড়ীর আঁচল কমরে গুছে গায় আর নাচে,
জানু বানু যো কেহতা হে
বিবি তেরা হু লাগতা হে সামে
মোর সামে,,
সামি সামি জো কেহতা হু,,
মারদ মেরা তু লাগতাহে সামে..!
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শেষে জয়ী হয় মেয়েরা।

রাজ, পরাজিত সৈনিকের মতো কাঁধ ঝুলিয়ে, টাকার বান্ডিলটা তুলে দেয় তার ‘বউ’ মেহরিনের হাতে।
মেহরিন বিজয়ীর গর্বে টাকাটা তুলে নেয়—সাবধানে, যেন এই টাকাতেই লুকানো তার দাবির সম্মান।
সব কিছু শেষে সবাই ভিতরে প্রবেশ করে।
বর-কে বসানো হয় তার জন্য বরাদ্দকৃত রাজকীয় আসনে।
রাজ, রাহি, লাবিব, শান্ত আর রাকিব—সাথী আর মৌ, সবাই পাশে বসে।
ঠিক তখনই হাজির হয় রাজের লোকজন বরবরণের খাবার নিয়ে।
তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় মেহরিন, মেহবুবা, জেরি, চুমকি, লামিয়া আর আরফা।
দু’হাত ভরে দাওয়াত, হাসি, দুষ্টুমি আর আতিথেয়তায় ভরপুর আয়োজন।
রাজ আর লাবিব কেবলমাত্র নাম রক্ষার্থে রিদের পাশে বসেছিল।
রিদ খাওয়া শুরু করতেই উঠে যায়—বুঝিয়ে দেয়, তার ক্ষুধা অনেকটা বেশি।
খাবার দাবারের আয়োজন রাজের লোকেরা খুব যত্নে সামলাচ্ছে,
তবু রাজ এ বাড়ির জামাই তার থেকে বড় কথা মেহের তাকে বড় ভাইয়ের স্থান দিয়েছে বড় ভাইয়ের দায়িত্ব তো তাকে পালন করতেই হবে।

তাই সে, লাবিব আর আরশকে নিয়ে পরবর্তী কাজের ব্যবস্থায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
খাওয়া শেষ হতেই আবার হাজির হয় মেয়েরা।
মেহরিন সবার সঙ্গে কথা বলে সবাই কে ব্যস্ত রাখে।
আর একদিকে চুমকি এগোয় শান্তর দিকে—কারন বরের জুতো আসলে শান্তর কাছেই আছে।
মূলত সেটাই নিতে চায় চুমকি।
কিন্তু বেচারা শান্ত তখনও কিছু না বুঝে ফেঁসে যায় চুমকির ফাঁদে।
চুমকি শান্তর কাছে গিয়ে বলে,
— জাননননননন!!
শান্ত আঁতকে উঠে,
— তোমার আবার কী হল?
চুমকি আহ্লাদে কন্ঠেবলে,
—শোনো না।
—হ্যাঁ বলো না।
—আলাবু—নাটকীয়ভাবে।
শান্ত অবাক হয়ে বলে,

— কি ব্যাপার! হঠাৎ এত প্রেম পাওয়ার কারণ?
চুমকি চটে গিয়ে বলে,
—কি বললি?! আমি প্রেম দেখাচ্ছি?! যা তোর লগে ব্রেকআপ!
তোর মুখও আর দেখব না!
শান্ত বেচারা পুরো পড়েছে মুশকিলে।
সে কিছুই বুঝতে না পেরে বলে,
—আচ্ছা, স্যরি স্যরি, আমার দোষ।
চুমকি বলে,
— তোরই তো দোষ! সব দোষ তোর!
তুই আমার বা*লের বয়ফ্রেন্ড! আমার একটু খেয়াল রাখিস না?
শান্ত বলে,
—এমনভাবে বলছো কেন?
কী লাগবে বলো, কি করতে হবে তোমার জন্য?
আমার জান হাজির!
চুমকি গম্ভীর মুখে বলে,
—আমাকে আইসক্রিম এনে দাও এখন। মানে
এখনই!

শান্ত মাথা নিচু করে বলে,
—আচ্ছা, ঠিক আছে।
তবে তুমি আমার একটা কাজ করবে। ঠিক আছে?
চুমকি মনে মনে হাসে,
— হেহ, গাধা! এখন যা বলবি, তার জন্যই অপেক্ষা করছি আমি বল বল…
মনে মনে হেসে হেসে মরছে চুমকি!
শান্ত ধীরে ধীরে পাশে এসে বলে,
— রিদ-এর জুতোটা তোমার কাছে রাখো,
কারো হাতে দিও না যেন,
আমি আইসক্রিম নিয়ে আসি।
চুমকি মনে মনে বলে,
— হ্যাঁ দিয়ে যা, বলদ!
শিয়ালের কাছে মুরগি দিয়ে বলছে,মুরগির কথা কাউকে বলো না! হাদারাম একটা।
মুখে বলে,

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫২

—হেহে, যাও যাও।
তাড়াতাড়ি আসবা, এখন আইসক্রিম না খেতে পারলে
গলা শুকায়ে মরি যাবো কিন্তু!
শান্ত বলে,
— না না, এমন কিছুই হবে না,
আমি এখনই যাচ্ছি!
বলে, চুমকির কাছে জুতো দিয়ে
দৌড় দেয় আইসক্রিম আনতে।
আর চুমকি?
সে জুতো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার লোক? জুতা হাতে পেয়েই সে বগারপার।

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৪