মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৬৪
মির্জা সূচনা
মেহরিন রাজের বুকে কিল দিয়ে হেসে বলে,
—আপনার প্রেমে বাধা দেওয়ার মানুষ চলে এসেছে,যাদের আপনি চাইলেও কিছু বলতে পারবেন না।
রাজ মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে বলে,
— আমি এসব মানবো না, বলে দিলাম।
মেহরিন হেসে বলে,
—মানুন বা না মানুন, সেটা আপনার ব্যাপার মশাই। এখন আমাকে ছাড়ুন, আমার বাচ্চাদের এখন মা-কে প্রয়োজন।
রাজ কিছু বলবে—
ঠিক তখনই দরজায় ঠুকঠুক শব্দ হয়, ওপাশ থেকে চুমকি চেঁচিয়ে বলল,
— এই দরজা খোল!
বাচ্চারা কান্না করছে, মনে হচ্ছে খিদে লেগেছে ওদের!নয়তো হিসু করেছে।
রাজ আর মেহরিন একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। রাজ মেহরিনকে ছেড়ে দেয়। মেহরিন চলে গেল বাচ্চাদের কাছে।
আর রাজ গিয়ে দরজা খুলে দিল।
দরজা খোলামাত্র চুমকি ঘরে ঢুকল, আর শান্ত বাইরে দাঁড়িয়ে রাজের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে বলে,
ভাই, তোমার আর বউয়ের সাথে প্রেম করার কপাল নাই,আর না আছে আমার,
বউয়ের সাথে রোম্যান্স করার কপাল।
তোমার বাচ্চাদের কান্না আমার কানে পৌঁছায়নি,কিন্তু আমার বউয়ের কানে ঠিক পৌঁছে গেছে,
আর সে আমাকে ফেলে চলে এসেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমি আর কী করব?
তাই বউয়ের লেজ ধরে আমিও চলে এসেছি!
রাজ শান্তর পিঠ চাপরে বলে,
— কপাল বুঝলি ভাই… সবই কপাল।
শান্ত মাথা নাড়ে।
তখনই ঝড়ের মতো এসে,ওদের
পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল মেহের,
চোখ মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
— কি হয়েছে?
বাচ্চারা কাঁদছে কেন?
Any problem?
ওদিকে রিদ চোখ ডলতে ডলতে এসে দাঁড়াল রাজ আর শান্তর পাশে।
রাজ আর শান্ত একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।
রিদ বলে,
— ভাই, তোর বাচ্চারা আমার বউকে আমার বুক থেকে টেনে নিয়ে এসেছে! কী সুন্দর বউকে বুকে নিয়ে ঘুমাছিলাম। তা আর সয্য হলো না ওদের।
রাজ রিদকে কিছু বলবে এমন সময়—
লামিয়া আর মেহবুবা দৌড়ে ঘরে ঢোকে।
রাজ, রিদ, শান্ত—
তিনজনেই এবার শব্দ করে হেসে ওঠে।
হাসতে হাসতে দেখে, পিছনে আরশ আর লাবিব আসছে।
তা দেখে রাজ আর রিদ দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওদের দিকে।
লাবিব দৌড়ে গিয়ে পাশে রাখা ফুলদানিতে ফুঁ দিতে দিতে বলে,
— দেখেছো কি ময়লা!
কেউ এগুলো পরিষ্কার করে না।
রাজ, রিদ আর শান্ত একসাথে বলে ওঠে,
— ওওওওও!!!
লাবিব দাঁত বের করে হেসে বলে,
— হ্যাঁ, তাই তো!
সবাই এবার লাবিবের দিকেই তাকিয়ে থাকে।
লাবিব একবার ফুলদানিতে ফুঁ দেয়,
আর একবার সবাইকে দেখে।
রাজ বলে,
— যা ভাই, যা!
তুই ফুলদানিটা নিয়ে ঘরে যা।
ইচ্ছেমতো পরিষ্কার কর।
লাবিব বলে,
— না না, এখনই পরিষ্কার হয়ে যাবে!
বলে সে ফুলদানিতে আরও ফুঁ দিতে থাকে।
সবাই এবার আরশের দিকে তাকায়।
আরশ শিস বাজাতে বাজাতে এদিক-ওদিক তাকায়। সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে দেখে
ও দাঁত বের করে হেসে বলে,
— আমি আসলে এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম।
তোদের দেখেই আসলাম।
বিশ্বাস কর!
রাজ হাত তুলে বলে,
— বিশ্বাসের মা অনেক আগেই মরে গেছে।
এখন আসল কারণটা বল।
আরশ বলে,
— না, বিশ্বাস না করলে নাই।
আমি একটু এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম।
আমি মোটেও তোর বোনের পিছু পিছু আসিনি, হুঁ!
সবাই একসাথে বলে ওঠে—
— ওওওওও!!!
আরশ বলে— হে হে…
রাজ ভ্রু কুঁচকে বলে—
—কিন্তু আমি তো একবারও বলিনি,
তুই আমার বোনের পিছু পিছু এসেছিস!
আরশ কাশতে শুরু করে।
কাশতে কাশতে বলে—
— পানি… পানি পানি খেয়ে আসি…
তারপর সে দৌড়ে গিয়ে বারান্দা পার হয়ে পালায়।
সবাই হেসে ওঠে।
রাজ, রিদ আর শান্তর কাঁধে হাত দিয়ে বলে—
—বুঝলে ভাইরা ভাই,আজকাল বিড়ালগুলো মাছের পেছনে একটু বেশিই ঘোরাঘুরি করছে।
ওরা তো জানেই না, মাছ খেতে মজা হলেও তাতে কাঁটা থাকে।
যখন জায়গামতো কাঁটা আটকে যাবে,
তখন বুঝবে মজাটা ঠিক কোথায়!
শান্ত আর রিদ রাজের কথার মানে বুঝে হেসে ফেলে।
ওদিকে লাবিব, কানে পেতে,ওদের কথাগুলো সব শুনছিল।
সে বুঝে রাজ মূলত বেড়াল টা তাকে আর আরশকেই বলেছে, তাই সে প্রতিবাদ জানিয়ে বলে—
— আমি মোটেও বিড়াল না!
I am a gentleman!
ওর কথা শুনে
রিদ, রাজ আর শান্ত শব্দ করে হেসে ওঠে।
রাত তখন ৩টা পেরিয়েছে।
বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে।
সবাই নিজের নিজের ঘরে শুয়ে গেছে হয়তো।
প্রায় ১টা নাগাদ মেহরিন ও ঘুমে ঢলে পড়েছে।
রাজ তখনো জেগে। ল্যাপটপে কাজ করছিল।
কাজ শেষ করে মেহরিনের দিকে তাকায়।
সে করে খুঁটিয়ে দেখে তার বউকে—
বউটা আগের চেয়ে একটু গুলুমুলু হয়েছে,
আরও বেশি সুন্দর লাগে এখন। দেখলেই কেমম প্রেম প্রেম পায়।
এই যে, রাজ এখনো তার বউয়ের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে,মনটা আনচান করছে।
একটু আদর করতে মন চাইছে, টুপ করে কয়েকটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু এই মেয়েকে বুঝাবে কে?
বললেই বলে—
আপনি এখন দুই বাচ্চার বাবা।
রাজ মুখ দিয়ে বিরক্তির শব্দ করে।
তারপর ফিসফিসিয়ে বলে,
— এই মেয়েকে কে বুঝাবে প্রেম কি!
আর বাবা-মা হবার পর আটকে যায়?
প্রেম হলো আনলিমিটেড অনুভূতি—
যেকোনো সময় চলে আসে।
আর আমি তো আবার ‘বউ-বক্ত’,
আমার প্রেম আর ‘বউ-বউ’ একটু বেশিই পাই। এখন তো আবার এসেছে দুজন—
ওদের মায়ের কাছে গেলেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। না এভাবে বেশি দিন বউ ছাড়া থাকলে,আমি ‘ভিটামিন বউ’র অভাবে শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে যাবো।
না না, তা হতে দেওয়া যাবে না।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ এক দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
— পাইছি তোরা! বাপ তোদের মায়ের সঙ্গে আমাকে দেখলেই তোরা কান্নাকাটি শুরু করবি? কিন্তু যদি তোদের সামনেই না থাকি,
প্রেম করার সময়,তখন কি করবি?
ভুলে যাস না, আমি তোদের বাপ রাজ শিকদার!
তোরা যদি চলিস ডালেডালে,তবে
আমি ও চলি পাতায় পাতায়!
বলে সে পা টিপে টিপে এগিয়ে যায়।
খুব আস্তে করে মেহরিনকে ডাকে,
— বউ… ও বউ… এই Moonbem…
এই বউ, উঠো না, আমার বউ-বউ পাচ্ছে!
মেহরিন ঘুমের ঘোরে বলে,
— যা তো, বাল সড়!
মাঝরাতে ‘বউ-বউ’ পাই!
চুপচাপ ঘুমা সালা!
রাজ ভ্রু কুঁচকে বলে,
— দেখছো?
আমাকে ঘুমের মধ্যেও বকে!
সে যাই হোক, আমি ওইসব গায়ে মাখি না—
বউ তো একটাই, বকুক, মারুক, তাতে কী?
আবার ডাকে,
— বউ, উঠো না!
মেহরিন পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
রাজ পাশ ঘুরে গিয়ে কিছুক্ষণ ডাকে।
যখন দেখে, উঠছে না—
তখন এক দুষ্টু হাসি দিয়ে তার ভালোবাসার অস্ত্র চালায়।
মেহরিনকে বলে,
— তুমি কি উঠবে,
নাকি আমি কিছু করবো?
মেহরিন ঘুমের মধ্যেই বলে,
— যা মন চায় কর,আমি এখন ঘুমাচ্ছি!
ডাকলে মার আছে কপালে!
রাজ সঙ্গে সঙ্গে মেহরিনের ঠোঁট আকড়ে ধরে।
মেহরিন তৎক্ষণাৎ চোখ মেলে তাকায়।
আসলে সে ঘুমায়নি,দেখছিল রাজ কী করে।
এমনটা করবে বুঝতে পারেনি।
রাজ যখন তার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত,
মেহরিন সুযোগ বুঝে রাজের ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে দেয়।
রাজ চোখ রাখে মেহরিনের চোখে,
আর সেই শান্ত চোখে তাকাতেই
মেহরিনের সারা শরীরে এক অদ্ভুত স্রোত বয়ে যায়।
রাজ কিছু বলে না—
মেহরিনকে তোলে নেয় কোলে।
মেহরিন চিৎকার করতে যায়,
কিন্তু পারে না—
বাচ্চারা উঠে যাবে বলে
ধীরে বলে,
— এই! মধ্যরাতে কোথায় নিচ্ছেন?
রাজ বলে,
—প্রেম করতে আমার বউ-বউ পাচ্ছে!
মেহরিন হেসে বলে,
— আচ্ছা আমাকে নামান।
রাজ নামিয়ে মেহরিনের হাত ধরে বলে,
— চলো, ছাদে যাবো—
একটু চন্দ্র বিলাস করে আসি!
মেহরিনও রাজের হাত ধরে বলে,
—ওকে, চলুন।
ওরা দুজন চাঁদের দিকেই যাচ্ছিল।
হঠাৎ, কারো পায়ের শব্দে ওরা সতর্ক হয়ে ওঠে।
রাজ-মেহরিন শব্দের উৎস খুঁজে সেদিকে যায়।
একটু এগোতেই দেখে,
দুজন চুপি চুপি,একদম চোরের মতো,
ছাদের দিকে যাচ্ছে।
রাজ কিছু বলতে চায়,
মেহরিন তৎক্ষণাৎ রাজের মুখ চেপে ধরে বলে,
— হুশ… চুপ… দেখি, কী করে!
রাজ মাথা নাড়ে।
আর তারা পিছু পিছু যেতে শুরু করে…
তারা দু’জন গিয়ে থামে একদম ছাদের দরজার কাছে। ওরা ছাদে না গিয়ে ফিরে আসছিলো।যেই পিছু ফিরে—
ঠিক তখনই দেখে, রাজ আর মেহরিন
দুই হাত বুকের কাছে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
দু’জনেই থমকে যায়।
মুহূর্তেই দু’জনে দুই দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
মেহরিন ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলে—
—রাত কয়টা বাজে? তোমরা এখন এখানে কেন?
আরশ আর লামিয়া,
দু’জন যেনো চুরি করতে এসে ধরা পড়ে গেছে!
রাজ খেক খেক করে বলে—
— কয়দিন পর তো বিয়ে করবি,
এখন একটু প্রেমটা আটকে রাখা যায় না?
আরশ বলে—
— ভূতের মুখে রাম রাম!
রাজ ভ্রু কুঁচকে বলল—
— কি বললি?
আরশ গলা নামিয়ে বলে—
— না ভাইজান, কিছু না…
আপনারা এখানে কী করছিলেন?
মেহরিন ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলে—
— চোর ধরতে এসেছি।
সে যাই হোক, তোমরা এমন ছাদে চোরের মতো এসে আবার ডাকাতের মতো চলে যাচ্ছিলে কেন?
আরশ চট করে বলে—
— কারণ ছাদে আরেক জোড়া প্রেম করছে!
রাজ ভ্রু কুঁচকে বলল—
— কারা?
লামিয়া মুখ চেপে হাসে, তারপর বলে—
— আমার ভাই আর তোমার শালীকা।
রাজ কপাল চাপড়ে বলে—
— ছেহ ছেহ ছেহ…
একটাও আমার মতো হলো না রে!
একটাও প্রেম আটকে রাখতে পারে না!
ওদের তো আমাকে দেখে শেখা উচিত,
কীভাবে প্রেম আটকে রাখতে হয়।
মেহরিন হালকা কটাক্ষ করে বলে—
— ও আচ্ছা! তাই নাকি?
রাজ এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলে—
— হ্যাঁ, অবশ্যই!
মেহরিন বলে—
— আপনাদের ‘ক্লাস’ পরে নিচ্ছি,
আগে ওদের ‘ক্লাস’ নেয়।
এই বলে ওরা ছাদের দিকে এগোতে চায়,
ঠিক তখনই আরও দু’জোড়া পায়ের শব্দ শোনা যায়।
মেহরিন চারপাশে তাকিয়ে বলে—
— সবাই লুকাও! দেখি এবার আবার কারা প্রেম করতে আসে।
যেমন কথা, তেমন কাজ!
সবাই লুকিয়ে পড়ে।
লাইট অফ, তাই তেমন কিছুই বোঝা না যায়।
দু’জোড়া পা এগিয়ে আসে,
ছাদের দরজার কাছে দাঁড়ায়।
ছাদে দেখা যায়—
লাবিব আর মেহবুবাকে দেখে,তারা কেটে পরতে চেয়েছিলো।
কিন্ত ঠিক তখন সবাই বেরিয়ে আসে!
রাজ আর আরশ গিয়ে হাত রাখে রিদের কাঁধে।
রিদ চমকে ওঠে।
মেহরিন আর লামিয়া গিয়ে দাঁড়ায় মেহের সামনে। সঙ্গে সঙ্গে মেহের দূরে যেতে চায়,
কিন্তু তার আগেই লামিয়া আর মেহরিন ধরে ফেলে।
মেহের বলে—
— কি… কি হয়েছে?
এইভাবে ধরা-ধরি করছো কেন?
লামিয়া বলে—
— ভাবি, তুমি এখানে কী করছিলে বলো তো?
মেহের বলে—
— এয়ে… আসছিলাম।
মানে… আসলে…কেন আসছিলাম বলো তো?
আমরা আসছিলাম না… মানে আমরা…
বাড়ি পাহারা দিচ্ছিলাম! হে হে!
বাড়ি পাহারা দিচ্ছিলাম আমরা, তা…তাই না রিদ?
রিদও বলে—
— হে হে! আমরা বাড়ি পাহারা দিচ্ছিলাম।
রাজ বলে—
— হ্যাঁ ভাইয়া,
আমরা ছোটবেলায় খেয়েছি সুজি,
তাই সব কিছুই বুঝি।
বুঝো নাই ব্যপার টা!
রিদ কিছু বলবে,
ঠিক তখনই আবারও কারো পায়ের শব্দ পাওয়া যায়।
সবাই একসাথে কপাল চাপড়ায়—
— নিশ্চয়ই চুমকি আর শান্ত।
মেহরিন হাসে—
— আসতে দাও, লুকাও সবাই।
সবাই হাসতে হাসতে আবার লুকিয়ে পড়ে।
চুমকি আর শান্ত বকবক করতে করতে এসে দাঁড়ায় ছাদের দরজায়।
ছাদে লাবিব আর মেহবুবাকে দেখে
চুমকি বলে—
— দেখেছো আমার এই পুচকি বোনটাকে!
এই মাঝরাতে প্রেম করছে!
দাঁড়াও, ওদের দেখাচ্ছি মজা!
শান্ত চুমকিকে টেনে ধরে বলে—
— ওদের কিছু বলতে গেলে আমরাই ফাঁসবো।
ওরা যদি জিজ্ঞেস করে আমরা কেন এসেছি?
তখন? তার থেকে ভালো,
চলো, ঘরে চলে যাই।
চুমকি ‘ধুম্’ করে শান্তর পিঠে একটা কিল মেরে বলে—
— আমি আসতে চেয়েছিলাম,
তুই তো জোর করে নিয়ে এলি!
তোর নাকি এই আধা রাতে পিরিত করতে মন চায়!
শান্ত কাতর গলায় বলে—
— ইশ… তুমি কথায় কথায় মারো,
কেন, ব্যথা পাই তো!
চুমকি খেঁক খেঁক করে ওঠে—
— বেশ করেছি!
তোর প্রেম-পিরিত যদি আর মাঝরাতে আসে,
তোকেও আর তোর প্রেমকে দুইটাকেই মেরে
বালিচাপা দিয়ে দেবো!
মারা মারি শেষে যেই না ওরা যেতে যাবে,
ঠিক তখনই সবাই বেরিয়ে আসে।
রাজ, রিদ আর আরশ হাসতে হাসতে গিয়ে দাঁড়ায় শান্তর পাশে।
মেহরিন, মেহের আর লামিয়া গিয়ে দাঁড়ায় চুমকির পাশে।
সবাইকে দেখে চুমকি আরও এক ঘা দেয় শান্তর পিঠে।
তারপর বলে—
— নে, এখন ষোলকলা পর্ণো হলো!
মেহরিন হাসতে হাসতে বলে—
—আহারে! বেচারা শান্ত ভাইয়া… কী মারটাই না খেলো!
রাজ আর রিদ একসাথে বলে ওঠে—
— এগুলো সবার কপালেই আছে!
শান্ত কষ্ট নিয়ে বলে—
— দেখ ভাই দেখ, আমরা ‘স্বামী জাতি’ কত অবহেলিত,
কত নির্যাতিত এই দুনিয়ায়!
রাজ আর রিদ বলে ওঠে—
— “ঠিক! ঠিক!!”
মেহরিন, মেহের, আর চুমকি একসাথে বলে করে—
— “কীইইই!!!
ওমনি রাজ, রিদ, শান্ত তিনজনেই একসাথে সেরেন্ডার স্টাইলে হাত তুলে বলে—
— মাফ চাই!
আরশ আর লামিয়া হেসে ফেলে।
মেহরিন হেসে বলে—
— চলো, সব চোর ধরা শেষ, এবার ডাকাতদের ধরতে যাই!
সবাই হেসে এগিয়ে যায়।
ওরা ছাদে গিয়ে দেখতে পায়,
মেহবুবা লাবিবের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে,
আর দু’জন গুজর-গুজর, ফুসুরফুসুর করছে।
ঠিক তখন রাজ কাশি দেয়।
লাবিব হঠাৎ বলে ওঠে—
— কি ব্যাপার! তোমার গলা এমন ছেলেদের মতন হয়ে গেল কেন?
মেহবুবা সাথে সাথেই খেঁকিয়ে ওঠে—
— কি বললা তুমি! আমার ভয়েস ছেলের মতন? তুমি জানো কত ছেলে আমার বয়েসের জন্য আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে?
লাবিব কিছু বলবে,
ঠিক তখনই মেহরিন কাশি দেয়।
মেহবুবা বলে—
— আরে! তোমার ভয়েস তো মেয়েদের মতন হয়ে গেল কেমনে?
দু’জন এটা নিয়ে কিছু বলবে,
তার আগেই লাবিব আবার বলে—
— তুমি তো ছেলেদের মত কাশলে!
আর ওমনেই… বেসসস!
মেহবুবা রেগে বোম!
ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারে—
— তুই আমায় ছেলে বলিস?বেয়াদব!
তোকেই বিয়ে করবো না!
প্রয়োজনে কানা-ল্যাংড়া বুড়াকে বিয়ে করবো,
তাও তোকে না!
লাবিব অসহায় গলায় বলে—
— তাহলে আমাদের ‘টুনির’ কি হবে?
মেহবুবা বলে—
— তোর আর তোর টুনি —
দু’জনেই চুলোই যা, শয়তান!
যেই না মেহবুবা উঠে চলে যাবে—
ওমনি সবাই একসাথে হেসে ফেলে।
হাসি থামতেই চায় না কিছুতেই ওদের।
মেহবুবা আর লাবিব একে অপরের দিকে তাকিয়ে তড়াক করে পেছন ফিরে চায়।
তারা দেখে—রাজ, মেহরিন, চুমকি, শান্ত, রিদ আর মেহের—হাসতে হাসতে একে অপরের শরীরে পড়েই যাচ্ছে!
মেহবুবা রেগে তাকায় লাবিবের দিকে।
লাবিব অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে সবার দিকে। তা দেখে সবাই আরো জোরে হেসে ওঠে।
মেহবুবা দৌড়ে পালাতে চায়,
কিন্তু মেহরিন, মেহের, চুমকি আর লামিয়া তার পথ আটকে দাঁড়ায়।
লাবিব ততক্ষণে দৌড়ে গিয়ে একটা পানির টব হাতে নিয়ে ফুলগাছে পানি দিতে দিতে বলে—
— গাছগুলোতে কেউ পানি দেয় না! দেখেছো? কাজের লোক গুলো কেমন কাম চুরা তাই ভাবলাম একটু পানি দিয়ে আসি!
এসে দেখি—মেহবুবা মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
লাবিব গলায় সুর এনে বলে—
— তাই আমি শুধু বসে ওকে একটু সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম, সত্যি…
সবাই একসাথে বলে ওঠে—
— ওওওওও!
তারপর সবাই আবার হেসে ওঠে।
লাবিব ফাঁক বুঝে দেয় এক দৌড়!
দৌড়াতে গিয়েও কতবার যে এদিক ওদিক পড়ে গেছে—তাও থামে না!
সবাই সেটা দেখে আরো জোরে হেসে ফেলে।
তারপর আবার একে একে সবাই নিজের রুমে ফিরে যায়।
আধার কাটে যেমন আলো আসে,
তেমনি রাত শেষ হয়ে আসে দিন।
আরো একটা নতুন দিনের সূচনা।
রাতে জেগে থাকার কারণে ঘুম ভেঙে উঠতে দেরি হয়ে যায় সবার।
তবে এতে বিশেষ সমস্যা নেই।
আরশ,শান্ত আর রিদ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে,রাজ আর লাবিব আজ অফিসে যাবে না।
বাচ্চারা তাদের নানুদের কাছে।
ফাইজা চৌধুরী রান্না করেছে,আর তাকে হেল্প করছে দু’জন কাজের লোক।
রূপা বেগম আর মালিহা মির্জা—দুজনেই বাচ্চাদের নিয়ে বসে গল্প করছে।
সময় তখন ১১:৪০।
সবাই বসে সকালের নাস্তা করছে আর বকা খাচ্ছে।
রূপা বেগম, মালিহা মির্জা আর ফাইজা চৌধুরী—তিনজনেই প্রবলভাবে বকাবকি করছে—
কেন সবাই এত রাতে জেগে ছিল!
খাওয়া শেষ হলে সবাই বসে আলোচনায় মেতে ওঠে।
কাল বাচ্চাদের ৭ দিন আর আকিকা।
অনেক মানুষ আসবে।
তার পাশাপাশি রাজ অনেক এতিমখানায় দান করেছে।
জামা দিয়েছে, খাবার পাঠিয়েছে।
গরিব-দুঃখীদের জন্য অনেক সাহায্য করেছে।
কালকে কী কী হবে, সেই নিয়েই চলছে আয়োজনের আলাপ।
বড়রা কেউ নেই, সবাই রূপা বেগমের ঘরে।
বাচ্চারাও ওখানেই।
হঠাৎ রিদ বলে ওঠে—
— তুই ভালো ভাই, বাচ্চার বাপ হয়ে গেলি।
আমার কপালে মনে হয় বাবা হওয়া লেখা নেই।
শান্ত বলে—
— হ্যাঁ ভাই, ঠিক আমারও!
আরশ আর লাবিব একসাথে বলে ওঠে—
— তোমাদের তো অন্তত বউ আছে!
আমাদের তো সেটাও নেই!
ঠিক তখন মাহির বলে ওঠে—
— তোমাদের অন্তত ভালোবাসার মানুষ আছে, হবু বউ আছে…
আমার তো কেউ নেই!
মাহিরের কথায় সবাই একসাথে বলে ওঠে—
— আহা রে!
মাহির গেয়ে উঠে,
কবে আয়বে আমার পালা রে…
কবে দিমু গলায় মালা রে.. মালা রে..
রাজ বলে,
আরে শালা মালা দেওয়ার খুব শখ তায় না? সেই মালা যখন গলায় ফাসি হয়ে যাবে তখন বুঝবা সোনা বিয়ে কত মজা।
রিদ আর শান্ত বলে,
ঠিক, ঠিক।
ওদের কথা শুনে লাবিব হটাৎ গেয়ে উঠে,
মনটা করে উরু উরু,,,
বুকটা করে দুরু দুরু…!
পরানের বন্ধু যখন পায় রে,,
আকাশে উড়াল দিয়া…!
যামু রে ওরে লইয়া,,
কলিজায় বাজে বোল,,
তাক ধুমা ধুম ধুম রে…!
আজ আমার মনটা যে তাই..
পেখম তুইলা নাচে রে…!
আজ আমার মনটা যে…
তাইপেখম তুইলা নাচে রে…!
রাজ বলে,
কুব মজা লাগচে বলো সোনা..হবু বউয়ের এত কেলানি খেয়েও, বিয়ে করতে মন চায় তোমার।
তোমার শখকে ও বলি হারি যায় সোনা। এরপর মেহবুবার দিকে ফিরে বলে,
বিয়ের পর তার জাইগা মতো আগে কইটা দিবে ঠিক আছে?যাতে করে বিয়ের শখ আকাশে উরাল দেয়, আর পারি জমায় দূর দেশে।
রাজের কথায় সবাই হেসে ফেলে।লাবিব শুধু অসহায় মুখে তাকায় মেহবুবার দিকে।আর মেহবুবা ইশারায় বুঝায় রাজ যা বলল তাই করবে। তা দেখে লাবিব ঢুক গিলে।
লাবিবকে চোখ টিপে মেহবুবা গেয়ে উঠে,
ও.. ফাগুন মাসে
দারুন ঝড়ে, দক্ষিণা বাতাসে..
তোমার মনের সুবাস-
আমার ঘরে বাইসা আসে..!
ও সোনা বন্ধু তোমায় ভালোবাসিয়া….
অন্তর গেল ফাঁসিয়া….
মেহবুবার গান শুনে সবাই হেসে উঠে। আর লাবিব কেশে উঠে।
মাহির বসা থেকে উঠে দারাই,
রাজ আর রিদের মাঝখানে এক পা রেখে কমর দুলি দুলি গায়,
কইতে আমার শরম লাগে,,
প্রেম আগুনে পুইড়া ছাই…!
সানডে মানডে ক্লোজ কইরা দিতে,
একজন মানুষ নাই…!
ভাইরে…. ভাই…!
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৬৩
গান শেষ এ রাজ আর রিদ কে চুমু খেয়ে বলে আমি বিয়া করমু দুলাভাই।
মাহিরের কান্ড দেখে বাকি সবার হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।
রাজ আর রিদ এক সাথে বলে উঠে,
ওহহহহ সিটটটটটটট