মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৪

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৪
মির্জা সূচনা

রাত এখন ৩টা বাজে বোধ হয়।
জমিদার বাড়ির সবাই এখন গভীর ঘুমে। না, সবাই নয়—সবাই ঘুমালেও জেগে আছে রাজ। তার চোখে ঘুম নেই, মনে অশান্তি। কোনো এক কারণে শান্তি লাগছে না। মন বলছে কাউকে যেন যমের দুয়ারে পাঠাতেই হবে, নইলে বুকে প্রিয় বউকে না জড়ানো পর্যন্ত এই অশান্তি থেকে মুক্তি নেই।
রাজের বর্তমান অবস্থা—সে বিছানায় বাবু হয়ে বসে, দুই গালে হাত দিয়ে মুখে মৃদু হাসি নিয়ে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ নারীর দিকে। যে তার প্রাণনাশিনী, সহধর্মিণী, ভালোবাসা, বউ, ও তার দুই রাজপুত্রের মা—আরিওনা তার Moonbem। ঘুমন্ত বউকে দেখেই বুকের ভেতর এক অদ্ভুত অনুভূতি জমে উঠছে। বুকটা জ্বলছে, ঘুম আসছে না—একটা শূন্য শূন্য অনুভূতি।

হঠাৎ মুখের মৃদু হাসিটা মিলিয়ে গেলো, চোখ-মুখে ভর করলো ভয়ানক রাগ। রাগে নাকে পাটা ফুলে ফুলে উঠেছে, গালে রাখা হাতগুলো হয় মুষ্টিবদ্ধ। রাজ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রাণভোমরার দিকে। যেই বউকে ভালোবেসে সে নিজের জীবন দিয়ে দিতে রাজি, আবার প্রয়োজনে হাসতে হাসতেই অন্য কারো জীবন কেড়ে নিতেও কার্পণ্য করবে না রাজ শিকদার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর এই নারীর দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তার চোখ উপড়ে ফেলবে, যে ছুঁতে আসবে তাকে আগুনে জ্বালিয়ে ছাই করে দেবে। যে নারীর গায়ে একটি ফুলের আঁচড়ও সে লাগতে দেয় না, তার গায়ে দুইজন হাত তুলেছে! জীবিত রেখে শরীর থেকে তাদের চামড়া ছিঁড়ে ফেলা না পর্যন্ত রাজের শান্তি নেই। যে হাত দিয়ে তার আরিওনাকে চড় মারা হয়েছে, সেই হাত রাজ মেপে মেপে ঠিক দুই ইঞ্চি করে করপ কেটবে। আর তাদের কলিজা বের করে পিস পিস কাটবে। নতুন কেনা টমি কে দিয়ে খাওয়াবে—আর টমি সেটা পেয়ে খুশি হবে, আহা!
ভাবতে ভাবতেই রাজের চোখ চকচক করে উঠলো। এভাবেই তো কত শান্তি লাগছে! কাজটা করে ফেলতে পারলে কতো শান্তি লাগবে! মনে মনে ভাবলো, ইস্‌, এই খুশিতে এখনই যদি তার বউকে ১১১টা চুমু খাওয়া যেতো! কিন্তু খাবে কীভাবে—তার রাজপুত্রদ্বয় মায়ের বুকে আঁকড়ে ঘুমিয়ে আছে।

রাজ মাঝেমাঝে ভাবে—ওর হয়তো উচিৎ হয়নি এত তাড়াতাড়ি বাবা হওয়া। বেবি আসার পর থেকেই বউটা যেন ধূর ছায় করে। আগের মতো কাছে আসে না, ভালোবাসে না, আদর করে না। আর আদরবঞ্চিত হয়ে রাজ শুকিয়ে কিসমিসের মতো চেপ্টা হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কি তার বউয়ের চোখে পড়ে না? সে যে কতোদিন ধরে ভিতরে ভিতরে ভুগছে, সেটা কি বউ বোঝে না? নাকি বউ পাথর হয়ে গেছে?
ভাবতে ভাবতেই সে আবার তাকায় তার দুই রাজপুত্রের দিকে। মুখে আপনাতেই এক তৃপ্তির হাসি চলে আসে। দুই ছেলের কপালে আদরমাখা চুমু দিয়ে রাজ বলে—আমার সুখ, আমার ভালোবাসার তৃপ্তি তোমাদের মাঝেই।
তারপর মুখ গম্ভীর হয়ে আসে সে ফিসফিস করে বলে—

তোমরা কিন্তু পাপার সঙ্গে অন্যায় করছো। মানছি তোমরা এখনো ছোট, মাম্মাকে ছেড়ে থাকতে পারো না। কিন্তু তাই বলে পাপার কষ্ট বুঝবে না? তোমাদের পাপা এতটা মানবিক, আর তোমরা কিনা এমন অমানবিক? ছিঃ ছিঃ! কাল থেকে মাম্মার আদর খাওয়া শেষে কেঁদেকেটে মাম্মাকে বলবা—মাম্মা, যাও এবার পাপার কাছে যাও, পাপা ও তো তোমাজে দরকার আছে নাকি?তোমাদের মাম্মা খুব পাষান হয়ে গেছে। একটুও ভালোবাসে না, এমন কী একটা চুমু টুমু ও দেয় না।
যা-ই হোক, শোনো—যেহেতু তোমরা মাম্মাকে ছেড়ে থাকতে পারো না, আমিও না। আমাদের তিনজনেরই এই আদর-ভালোবাসার অধিকার আছে।

রাজ আবার তাকায় ঘুমন্ত মেহরিনের দিকে। ইস্‌, কী সুন্দর লাগে ঘুমালেও তার বউকে! দেখলেই মন চায় টপাটপ কতগুলো চুমু খেতে। কিন্তু খাবে কীভাবে—বউ এখন তাকে দেখলেই বুড়ো বলে খোঁচা দেয়।
হঠাৎ রাজ ঠোঁট কামড়ে হাসে। তারপর পরম যত্নে, ভালোবাসায় ভরা এক গভীর চুমু মেখে দেয় মেহরিনের কপালে। তারপর দুই সন্তানকেও। বুকের ওপর হাত রেখে ফিসফিসিয়ে বলে—
বুঝলে তো আমার ছানারা? তোমাদের মাম্মাকে এই বুকে না পাওয়া পর্যন্ত আমার কলিজা ঠাণ্ডা হয় না। আর না, ঘুম আসে না—অনেক দিনের অভ্যাস কি না?

শোনো, একটা প্ল্যান করি—তোমরা তো মাম্মাকে ছাড়া ঘুমাতে পারো না, আমিও না। তাই তোমরা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি তোমাদের মাম্মাকে আমার বুকে নিয়ে নেবো কেমন?
আচ্চা শোনো… কিন্তু এটা আমাদের সিক্রেট, বুঝলে? আমরা ছাড়া কেউ যেন না জানে।
রাজ আবারও দু’জনের কপালে চুমু খেলো, তবে খুব সাবধানে যেন তাদের ঘুম ভেঙে না যায়। ওদের ঘুম ভেঙে গেলে দেখা যাবে, তার বউ মেরে তার হাত পা ভেঙে ও দিতে পারে। বা বলতে পারে, তুই এখন ওদের ঘুম পাড়া নয়তো সকালে ওদের ডাইপার চেঞ্জ করবি তুই। না বাবা এসব করতে পারবো না ডাইপার চেঞ্জ করা খুব হেপার কাজ। তারপর একটু ঝুঁকে মেহরিনকে আস্তে করে তুলে নিলো, যাতে বাচ্চারা না জেগে ওঠে। কিন্তু মেহরিনকে কোলে তুলতেই রাজ এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হলো যাতে সে বেলুনের মতো চুপসে গেলো—কারণ মেহরিন তার গলা শক্ত করে চেপে ধরেছে।

রাজ কাতর মুখে তাকালো মেহরিনের দিকে। তাকাতেই ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক গর্বিত হাসি।
রাজ বিড়বিড় করে বললো—
এই না হলে রাজ শিকদারের বউ! যে ঘুমের ঘোরেও শত্রুকে উপড়ে পাঠানোর ক্ষমতা রাখে!
তারপর রাজ মুখটা মেহরিনের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললো—
রাজ শিকদারের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে তার বেডরুমে ঢুকে তার স্ত্রীকে ছোঁবে—এমন সাহস কোনো বাপের ছেলের এখনও হয়নি, বউজান! আর যদি কেউ সেই সাহস দেখাতেও চায়, তবে তার কলিজা আমি নিজ হাতে কেটে কুকুরকে খাওয়াবো।
রাজের কথায় যেন কাজ হলো। মেহরিনের হাতটা ঢিলে হলো, আস্তে আস্তে সরে গেলো। রাজ সেটা দেখে হাসলো।
কিছু মানুষ আছে, যারা ঘুমালেও তাদের মস্তিষ্ক কাজ করে। মস্তিষ্ক বিপদ আপদ ধরতে পারে, তেমনি একজন মেহরিন।

রাজ একবার পিছনে ফিরে তার রাজপুত্রদের দেখলো, তারপর পা বাড়ালো বারান্দার দিকে। মেহরিনরা যে ঘরে আছে, তার বারান্দায় বিশাল এক দোলনা আছে। যেখানে শুধু বসা নয়, চাইলে শোওয়াও যায়।
রাজ মেহরিনকে নিয়ে দোলনায় বসলো দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে, মেহরিনকে বুকে চেপে ধরে তাকালো আকাশের দিকে। অসংখ্য তারা ঝিলমিল করছে, তাদের ফাঁক দিয়ে আলো ছড়াচ্ছে সেই চাঁদ।
রাজ মেহরিনকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, কপালে একের পর এক চুমু খেতে থাকলো। হঠাৎ মেহরিনের ঘুম ভাঙলো, চোখ দুটো আধোঘুমে পিটপিট করছে।
মেহরিন রাজের দিকে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো—
ঘুমাননি এখনো?
রাজ হেসে উত্তর দিলো—

আমার বউ হয়তো ভুলেই গেছে, তাকে বুকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসে না।
মেহরিন হেসে বললো—
এখনও আপনার প্রেম একচুলও কমলো না! বরং দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে, কবি সাহেব।ভুলে গেলেন নাকি আপনি দুই বাচ্চার বাপ।
রাজ নেশাগ্রস্ত চোখে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে ভারী গলায় বললো—
তোমার এই আধোঘুম কণ্ঠটা শুনলেই আমি পাগল হয়ে যাই, বউ… একেবারে পাগল।
মেহরিন হেসে মুখ লুকালো রাজের বুকে।

রাজ ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠলো, খোঁচা দিয়ে বললো—কী ব্যাপার বউ, তুমি দেখি এখনো নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছ? ব্যাপার কি? ভুলে গেছো নাকি? তুমি এখন আর মেয়ে নও, মহিলা হয়ে গেছো—মানে দুই বাচ্চার মা হয়ে গেছো। ভুলে গেলে নাকি? দুই বাচ্চার মায়ের নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাওয়ার মানে কী?
রাজের শেষ কথায় মেহরিন শুধু হেসে রাজের বুকে মুখ রেখে দিলো। রাজ বুঝলো, সে তার কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছে।
রাজ মুচকি হেসে আবার বললো—
জানো, তোমার এখন কিসের বয়স?
মেহরিন চুপ করে রইলো।
রাজ নিজেই উত্তর দিলো—
জানবে কী করে? আমি তো বলিনি। আচ্ছা, শোনো—রাগ করবে না। এখন তোমার লজ্জা পাওয়ার সময় নয়। এখন তোমার উচিত আমাকে ধর্ষ…

রাজের কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহরিন রাগে রাজের বুকে কামড়ে ধরলো। রাজ দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করলো। বুঝলো, বউ বেশ খেপেছে। তবু সুন্দর মুহূর্তটা রাগারাগি করে নষ্ট করা যাবে না। তাই রাজ মেহরিনের দুর্বল জায়গায় আঘাত করলো—সে কবিতা বলা শুরু করলো।
তুমি পাশে এলে জীবনের পথটা সহজ হয়,
তুমি হাসলে মনে হয়— সব দুঃখ সরে যায়।
তোমার স্পর্শে জেগে ওঠে নতুন ভোর,
তোমার কথায় বাজে হৃদয়ের সুরের ঝড়।
স্বপ্ন যতই ভাঙুক, তবু আশা থাকে অটল,
কারণ ভালোবাসা তো হৃদয়ের সবচেয়ে সফল।

তুমি আমার আকাশ, তুমি আমার ঢেউয়ের স্রোত,তুমি ছাড়া এই জীবন যেন অচেনা পথ।
শেষে শুধু বলি— আমার সকল সুখ, সকল অনুরাগ, তুমি-ই আমার মেহরিনের স্বপ্নরঙ।
রাজ একটু থামে, ঠোঁট কামড়ে হাসে এইযে কেমন বিড়াল ছানার মতো ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে মেহরিন রাজার বুকে। রাজ আবার বলে উঠে,
তুমি আমার নিঃশ্বাসের ভেতর লুকানো গান,
অচেনা ভিড়ের মাঝেও তুমি-ই একমাত্র আপন প্রাণ।
জীবনের প্রতিটি কষ্টে তুমি যেন আলো,
অন্ধকারের শেষে দেখি তুমি-ই একমাত্র ভালো।
তুমি না থাকলে পৃথিবীটা ফাঁকা লাগে,
স্বপ্নগুলো ভেঙে গিয়ে ছাই হয়ে জাগে।
কিন্তু তুমি থাকলে—

সব দুঃখ হয়ে যায় নদীর ধারা,
সব কান্না মুছে যায় তোমার একটুখানি হাসির ইশারায়।
ভালোবাসা কি জানো?
এটা শুধু শব্দ নয়, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়—
এটা হলো হৃদয়ের সেই অঙ্গীকার,
যা মৃত্যুর পরও ভাঙে না, থাকে অটল, থাকে অবারিত।
তুমি-ই আমার শেষ ঠিকানা,
তুমি-ই আমার অশেষ স্বপ্নভঙ্গ,
তুমি ছাড়া আমি কিছুই নই—
তুমি-ই আমার মেহরিনের স্বপ্নরঙ।
কবিতা শুনে মেহরিন শান্ত হয়ে গেলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে। কবিতা শেষ হলে রাজ হাসলো।
মেহরিন শক্ত করে রাজকে জড়িয়ে ধরে বললো
এত ভালো কেমন করে বাসে মানুষ?

রাজ শুধু হাসলো। এর উত্তর যে তার জানা নেইয়। এর উত্তর ব্যাখ্যা করার যে কোনো ভাষা নেই, কোনো শব্দ নেই।
কিছুক্ষণ দু’জনেই নীরব রইলো। অনুভব করলো সেই সুন্দর মুহূর্তকে। স্বামী-স্ত্রী বুকে আগলে রেখেছে একে অপরকে। এই মুহূর্ত অসাধারণ। এই অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়।
এই সুখ কোটি টাকা দিয়েও কেনা যায় না।
ওদিকে মেহের শুয়ে আছে সোফা আর রিদ বসে আছে বিছানায়। গালে হাত দিয়ে রেখেছে, কারণ সে বউয়ের হাতে খেলানি খেয়েছে।
প্রায় দুই ঘণ্টা আগের কথা।
মেহের আয়নার সামনে বসে চুল আচড়াচ্ছে। আজ তার মনটা খুব ফুরফুরে, অকরণেই যেন সবকিছু ভালো লাগছে। এর সূত্রপাত ঘটে বিকেল থেকে সেই পার্কে। রিদ বারান্দায় ছিল, মেহেরও সেখানে গেল। গিয়ে দেখে রিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

খুশি মনে মেহের পিছন থেকে রিদকে জড়িয়ে ধরলো। বউকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে রিদ হাসলো—বুঝলো, আজ তার বউয়ের মুড ভালো। রিদ মেহেরের দিকে ফিরে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরলো, পাশে থাকা চেয়ারে বসে তাকে বসার ইশারা করলো। কিন্তু মেহের বসলো না। বরং রিদ-এর গলায় হাত জড়িয়ে তার কোলেই বসে পড়লো।
এ দৃশ্য দেখে রিদ আবার হাসলো। জড়িয়ে ধরে মেহেরের কপালে একটা চুমু দিলো। মেহের তাকালো রিদ-এর দিকে, রিদ-ও তাকালো মেহেরের চোখে। সেই চোখেই বুঝলো, রিদ তার বউ তাকে কাছে চাইছে।
বুঝেই রিদ আবার হেসে উঠলো। ভাবা যায়! যে রিদ একসময় এত গম্ভীর ছিল, সে এখন হাসছে। যদিও এখনও সে গম্ভীর, তবে এই হাসি পাওয়া যায় শুধু মেহের আর রাহির সামনে। পরিবারের সাথেও মাঝে মাঝে, কিন্তু বাইরে সে আগের মতোই সেই গম্ভীর মানুষ।

যাই হোক—মেহের একদম রিদ-এর কাছে এলো। এগিয়ে গেল রিদ-এর ঠোঁটের দিকে চুমু খেতে। হঠাৎ করেই মেহেরের ভেতর প্রচণ্ড রাগের সঞ্চার হলো। চুমু তো দিলোই না, বরং ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো।
এমনটা দেখে রিদ-এর কপাল কুঁচকে গেল। বললো—
কি হলো? হঠাৎ এত রেগে গেলে কেন?
মেহের কোনো উত্তর না দিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসালো। গজগজ করতে করতে বারান্দা থেকে ঘরে চলে গেল।
বেচারা রিদ অবাক হয়ে বসে রইলো। কিছুতেই বুঝতে পারছে না, তার বউয়ের এমন রোমান্টিক মুড হঠাৎ অ্যাকশনে মুডে কেন পাল্টে গেল। গালে হাত দিয়ে অনেক ভেবে অবশেষে কারণটা টের পেল।
ওহ শিট! আমি কেমন করে ভুলে গেলাম এটা!

বলেই দৌড়ে ঘরের দিকে গেল। কিন্তু মেহের তখনই ঠাস তার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো।
বেচারা রিদ দরজায় ধাক্কা মারতে লাগলো, ফোন দিলো, এসএমএস পাঠালো। কোনো লাভ হলো না। এদিকেই বেশি জোরে ডাকাও যাবে না বাকিদের ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে।
আবার অন্যদিকে বউকে কাছে পাওয়ার চান্স মিস হলো। বউ রাগ করে চলে গেল। তার উপর মশার কামড়!
রিদ বিরক্ত হয়ে বললো—
উফফ! জীবনে এত ঝামেলা থাকলে চলে নাকি? ধুর ছাই!
পাক্কা এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট পর অবশেষে মেহের দরজা খুললো।
রিদ ঘরে ঢুকেই আগে ছুটে গেল ওয়াশরুমে। ব্রাশ করলো, কুলকুচি করলো। ভয় ছিল—সিগারেটের গন্ধ আছে কি না। ভাগ্য ভালো, নেই।নয়লে কপালে আজ আরও মাির আছে।

রিদ মনে মনে শপথ করলো—জীবনে আর সিগারেট ছুঁবে না। এক সিগারেটের জন্য আজ কত ঝামেলা পোহাতে হলো—বউয়ের মার, মশার কামড়, আর দেড় ঘণ্টা সময়ের ক্ষতি!
এদিকে মেহের অনেকদিন ধরেই রিদকে সিগারেট ছাড়তে বলছিল। এমনকি হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল—আরেকদিন যদি ধরতে পারে, তবে আজীবনের জন্য সিগারেটের শখ মিটিয়ে দেবে।
রিদ বেশি না ভেবে মেহেরের কাছে গিয়ে কাকুতি মিনতি করে বললো—
আর কোনোদিন সিগারেট খাবো না, প্রমিজ।
তারপর ঠোঁট বাড়িয়ে এগিয়ে এলো চুমু খাওয়ার জন্য।
কিন্তু মেহের হঠাৎ আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
বালিশ তুলে শুয়ে পড়লো।

রিদ উঠে গিয়ে মেহেরের পাশে বসল। দোয়া-কালিমা পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে ডাকলো—
বউ, ও বউ… শোনো না।
দেখলো, মেহের চোখ কুঁচকে আছে।
রিদ ঢক গিলে দাঁত বের করে বললো—
বউ, তুমি কি রেগে আছো?
মেহের খেঁকিয়ে উঠলো—
সালা নাটক মারাবি না আমার লগে! কত আশা নিয়ে গেছিলাম একটা চুমু খাবো, তোর সিগারেটের গন্ধে মুড আর কিস দুইটাই শেষ। এখন আসছিস প্রেম দেখাইতে? যা তো যা! তুই তোর প্রেম ধুইয়া পানী খা। চোখের সামনে থেকে সর। নিকুচি করেছে তোর আর তোর চুমু।
রিদ মুখটা কাদু-কাদু করে তাকিয়ে থাকলো। তা দেকে মেহের পাশে তাকা ফুলদানি হাতে নিয়ে বললো—
এই, তুই যাবি?

মেহেরকে ফুলদানি নিতে দেখেই রিদ তাড়াতাড়ি গিয়ে উঠে বিছানায় বসে পড়লো।
না না, রিক্স নেওয়া যাবে না! তার বউ যা জিনিস। সত্যি সত্যি ওইটা দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতে পারে।
আবার ডাকলো—
—বউ… মেহের…।
মেহের গর্জে উঠলো—
আরেকটা আওয়াজ বের হলে আমি তোর বউ ডাকবার শখ চিরতরে মিটিয়ে দিব। আমার মুডের পিন্ডি চটকে দিয়ে, এখন বউ-বউ করছিস? ধুর হো শালা।
রিদ মুখ ছোট করে বসে রইলো।
মেহের চোখে হাত দিয়ে রিদকে বিরবির করে বকতে লাগলো।
রিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে,

এই মেয়ে নাকি জন্মের পর থেকে সিঙ্গাপুরে ছিল! অথচ বাংলার সব গালি মুখস্থ। কীসব যে বলে।
তারপর আবার তাকালো মেহেরের দিকে। তাকে বিরবির করতে দেখে হতাশ হলো।
ঠিক যখন মেহের থেমে গেলে, রিদ পা টিপে টিপে এগিয়ে এসে তার গায়ে হাত রাখলো। মেহের উঠে বসল, চুল খোপা করতে লাগলো। কিছু একটা বলবে, এর আগেই রিদ ভালোবাসার আক্রমণ চালালো।
নিজের ঠোঁট দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো মেহেরের ঠোঁট…

মেহের হতবাক—এমন সময় এমন একটা কাজ রিদ করবে, তার ধারণায় ছিল না। যখন সে বুঝলো রিদ আজ ঠিক কিভাবে তাকে শাস্তি দেবে, সেটা বুঝেই সে ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত-পা ছুরতে থাকে। ইতি মধ্যে কয়েক দফা চড়, থাপ্পড়, কিল খাওয়া শেষ রিদের। রিদ মেহের—দুই হাত চেপে ধরলো দেয়ালে, আর নিজের কাজ চালিয়ে গেলো।
একটা মেয়ে কখনোই একটা ভালোবাসার উন্মাদ পুরুষের সাথে পেরে ওঠে না, আর সে যদি হয় স্বামী, তাহলে তো আরও নয়। নরমালি একটা পুরুষের সাথে মারামারি বা দুষ্টামি তে পারলেও, ভালোবাসার আক্রমণ চালালে সেখানেই নারী বার বারই হারে। এই যেমন মেহের হেরে যাচ্ছে, আস্তে আস্তে তার নড়া-চড়া কমে যাচ্ছে, স্থির হচ্ছে। সে হবেই নাইবা কেনো? সে যে বুঝে গেছে আজ তার কপালে ভালোবাসার যন্ত্রণা আছে।

রিদ আজ আট ঘাট বেঁধে নেমেছে। সে আজ বউকে শারিস্থা করবেই, করবেই। বউকে বশে আনার একমাত্র পথ হলো ভালোবাসার অত্যাচার। বেশি বেশি অত্যাচারের ও যন্ত্রণার ভয় পেয়ে ও যদি বউটা একটু ভয়-টয় পায়, এটা অবশ্য তার কথা নয়। এটা রাজ তাকে শিখিয়ে দিয়েছিলো। কথা ছিল এমন—
শোনো বৎস, যদি উঠতে বসতে বউয়ের হাতে কেলানি খেতে না চাও, তাহলে বউকে অত্যাচার করো, যন্ত্রণা দাও। তবে সেটা ভালোবাসার। দেখবে ভালোবাসার অত্যাচার ও যন্ত্রণার ভয়ে হলেও বউ তোমাকে কম কেলাবে।
রিদ এখন ঠিকই বুঝেছে—এটাই বউকে সায়েস্থা করার আসল ওষুধ।
রিদ নিজের ভালোবাসার যন্ত্রণা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এভাবেই কাটলো একটি সুন্দর রাত।
ওদিকে মেহরিন রাজের বুকে শুয়ে, আর এদিকে মেহের ভালোবাসার যন্ত্রণা সয়ে।

একটি নতুন দিনের সূচনা।
সকাল তখন ৭:৩৩।
মহিলা মির্জা, রুপা বেগম আর ফাইজা চৌধুরী তিন জন মিলে গল্প করছে আর নাশতা বানাচ্ছে। সাথে আছে কুলসুম আর ফুলবানু। ফাইজা চৌধুরী ইতি মধ্যে জাহানারা বেগমকে নাশতা দিয়ে এসেছেন। ভদ্র মহিলা গ্রামের মানুষ, সকাল সকাল উঠেন, ফজরের নামাজ পড়েই তার নাশতা লাগে।
সবাই এখনো ঘুমে।

আরফা ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। মা’এর কাছে এক কাপ কফি চায়। ফাইজা চৌধুরী মেয়ের হাতে কফির কাপ দিয়ে আবার আড্ডা ও রান্নায় ব্যস্ত হন। তিনজনকে গল্প করতে দেখে হাসলো আরফা, সে পা বাড়ালো বাইরে দিকে। জমিদার বাড়ির বিশাল উঠান পেরিয়ে গেলো বাগানের দিকে।
জমিদার বাড়ির বাগানে একটা ঘাট বাঁধা পুকুর আছে। বাড়ির মেয়েরা-বউরা মাঝে-মধ্যে নামে সেখানে। বিশেষ করে মেহরিনরা আসলে সব মেয়েরা নামে পুকুরে।
আরফা আস্তে আস্তে চলে এলো পুকুরপাড়ে। পায়ের জুতো খুলে কয়েক সিঁড়ি নেমে পা দুটো পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে বসলো। আহা, কি স্নিগ্ধ অনুভূতি! সকাল সকাল প্রকৃতি যেন অন্য রকম জাদু ছড়ায়।
আরফা সবসময় আসে না এখানে। কেবল তখনই আসে, যখন খুব মন খারাপ থাকে। তখন এখানে বসে একা একা সময় কাটায়।

আরপা কফিতে চুমুক দেয়, আবার পাশে রেখে কিছুক্ষণ একমনে তাকিয়ে থাকে পুকুরের পানির দিকে। তারপর গুনগুন করে উঠলো—
তুমি চিরদিন..ভিষণ কঠিন,
তোমার ঘর ভেসে যায়..!
ওরা মুখ দেখে বুঝতে পারে না!!
ওরা এ মন কেমন বোঝে না,,
ওরা আসল কারণ খোঁজে না!!
আরফার গুনগুন শেষ হতেই ভেসে এলো এক গম্ভীর কণ্ঠস্বর—
জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া কোনো সাধারণ সিদ্ধান্ত নয়। এটা জীবনের সবচেয়ে বড়ো মোড়, যেখানে এক ভুল পা সারা জীবনের দুঃখ বয়ে আনে, আর এক সঠিক সিদ্ধান্ত সারা জীবনকে জান্নাতের মতো সুন্দর করে তোলে।
কারণ, জীবনসঙ্গী মানেই শুধু হাসির সময় পাশে থাকা নয়—বরং বিপদের সময় হাত শক্ত করে ধরা,ঝড়ের রাতে আশ্রয় হয়ে দাঁড়ানো,
অন্ধকারে আলো দেখানো। সঠিক মানুষকে সঙ্গী হিসেবে পেলে জীবনটা হালকা হয়ে যায়,বেঁচে থাকার ইচ্ছে দ্বিগুণ হয়,

সকালের সূর্যের মতো প্রতিটি দিনই নতুন করে জাগিয়ে তোলে।
কিন্তু যদি ভুল মানুষকে বেছে নেওয়া হয়—
তাহলে জীবনটা হয়ে ওঠে এক দমবন্ধ করা জাহান্নাম। তখন প্রতিটি নিশ্বাস লাগে বিষের মতো,প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয় পালিয়ে যেতে,
কিন্তু পালানোর পথ থাকে না।
তাই জীবনসঙ্গী নির্বাচনের সময়—
মনকে, মস্তিষ্ককে আর আত্মাকে ভালোভাবে শুনতে হয়।যেন সেই সঙ্গী হয় জীবনের আশ্রয়,
না যে সঙ্গী হয় জীবনের বোঝা।
সবচেয়ে বড় সত্য হলো—যে সত্যিই ভালোবাসে, সে কখনো বিপদের মুখে হাত ছেড়ে দেয় না। বরং আরও জোরে আঁকড়ে ধরে। যেন বলতে চায় তুমি একা নও, আমি আছি।
অসময়ে কাপুরুষের মতো পালিয়ে যাওয়া ভালোবাসা নয়।ফ্যামিলির দোহাই দিয়ে পিছু হটে যাওয়া, দায় এড়িয়ে যাওয়া ওগুলো শুধু ভণ্ডামি।

ভালোবাসা মানেই দায়িত্ব, ভালোবাসা মানেই একসাথে ঝড়-ঝাপটা সামলানো।
কারণ জীবনের সফর ছোট নয় পথে আসবে ঝড়, অন্ধকার, খরা আর দুঃসময়।
সেই সময়ে যদি হাতটা শক্ত-পোক্ত, অথচ নরম মমতায় ভরা না হয় তাহলে পথচলা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
ভালোবাসা মানেই একসাথে থাকা,সব বাধা মোকাবিলা করা,একই ছাতার নিচে ঝড় সামলানো,একই আলো ভাগ করে দেখা।
আর সেই হাত—যদি সত্যিই শক্ত করে ধরা হয়,

তাহলেই জীবনটা হয় পূর্ণ,না হলে জীবন শেষ হয়ে যায় ভেতর থেকেই।
কথাগুলো মন দিয়ে শুনলো আর্ফা। কেন যেন বাস্তব মনে হলো ভালো ও লাগলো।
আরফা চোখ তুলে তাকালো লোকটার দিকে। লম্বা, উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, মায়া-মায়া দুটি চোখ, সরু নাক, ধারালো চিবুক, সিগারেট পোড়া কালচে ঠোঁট, গাল ভর্তি চাপ দাড়ি। আচ্ছা এমন পুরুষকে কি বলে শ্যামপুরুষ? হ্যাঁ বলা যায়। পরনে সাদা ট্রাউজার আর সাদা টি-শার্ট। কপালে ও নাকে লেগে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। দেখে যে কেউ বলবে, সে এখন জগিং করে এসেছে।
হঠাৎই আরফার মনে পড়ে গেলো—সে কাল এই লোকটাকে কষ্ট দিয়েছে। লোকটা তার সাথে রাগ করেছে। সেই সময়ের পর আর কথা বলেনি।

বাড়ি ফিরে সবাই আড্ডা দিলো। তখনও সবার সাথে কথা বললো, কিন্তু আরফার সাথে না। কতবার ‘সরি’ বলার সুযোগ চেয়েছিলো আরফা, কিন্তু সুযোগ পায়নি।
এমন না যে সে জীবনের সাথে কথা বলতে সে মরিয়া, তবে একটা মানুষ একই বাড়িতে থাকবে, অথচ তার সাথে কথা বলে না রাগ করে—ব্যাপারটা কেমন না!
তার থেকেও বড় কথা—সে অতিথি, আবার ভাইয়াদের ফ্রেন্ড।
আরফা কিছু বলবে ভেবে তাকাতেই দেখে—জীবন হনহন করে এসে বসে পড়লো তার পাশে। পা দুটো পানিতে ভিজালো। আরফা কিছু বলবে ভেবে তাকাতেই দেখে জীবন তার দিকেই এগিয়ে আসছে। এটা দেখে ঘাবরে গিয়ে আরফা মাথাটা পিছনে নেয়।
জীবন শান্ত চাহনি ছুঁড়ে দিয়েছে তার পানে—সেই চোখে চোখ পড়তেই আরফার ভেতর কেমন একটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।

আরফা হঠাৎই ঘাবরে গেলো জীবনের এমন চাহুনিতে। এদিক ওদিক তাকিয়ে, আমতা আমতা করে কিছু বলার চেষ্টা করছিলো, এমন সময় ওর চোখ গিয়ে পড়লো জিবনের হাতে—কফির কাপ। তখন বুঝলো, জিবন সেই কফি নিতেই কাছে এসেছিলো। আর সে কি না কি ভাবছিলো ছিঃ। হটাৎ আরফা খেয়াল করলো ও একটু আগে যেখানে ঠোঁট লাগিয়ে খেয়েছিলো জীবন ও ঠিন সেখানটায় ঠোঁট লাগিয়ে খাচ্ছে। আসলে ঘুম থেকে ওঠার পর ঠোঁট কেমন জানি টানছিলো বলে সে লিপবাম লাগিয়েছিলো। তাই কাপে সেই দাগ লেগে ছিলো। আরফার মনে হঠাৎই ধাক্কা লাগে—
আরে আরে! কী করলেন এটা ? আপনি কফি খাবেন বললেই তো হতো আমি নিয়ে আসতাম। এটা তো আমি খেয়েছি! এটো তো এটা।

জিবন সহজ ভাবে উত্তর না দিয়ে তেরা বাঁকা উত্তর দিলো—
এটা খেলে কী হবে? বিষ আছে নাকি? খেলে মারা যাবো?
এই নির্লিপ্ত উত্তরে আরফার চোয়াল ঝুলে গেলো। কিছু বললো না, শুধু চুপচাপ তাকিয়ে রইলো জিবনের দিকে। মনে মনে ভাবলো—
লোকটা কেমন অদ্ভুত! একদিকে মনে হয় প্রাণখোলা, হাসিখুশি, মজার মানুষ। আবার অন্যদিকে কেমন যেন গম্ভীর, রাগী আর ঘাড়তেরা স্বভাবের। আরফা জেনেছে, ছেলেটার বাবা-মা কেউ নেই। সম্পূর্ণ অনাথ।
এ কথা মেহরিন-ই বলেছিলো—
আরফা ভাবে,
জিবনের তো কেউ নেই। অসুস্থ হলে কে দেখে, রান্না করে কে খাওয়ায়, জামা-কাপড় কে ধোয়? সবকিছুই ওকে একা একা সামলাতে হয়।

এই ভেবে আরফার বুকটা হু হু করে উঠলো।
ও একটু এগিয়ে এসে ধীরে বলে উঠলো—
শুনছেন?
জিবন মনে হাসি চাপলেও চোখে তখনও সেই গম্ভীর দৃষ্টি। উত্তর করলো না।
আরফা আবার ডাকলো, তবুও কোনো সাড়া নেই। তখনই মনের ভেতর থেকে ঝড়ের মতো রাগ এসে ধাক্কা দিলো।
এত রাগ কিসের? আমি কী এমন বলেছি যে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকতে হবে? মানুষ তো নিজের বৌ-এর সাথেও এতটা রাগ করে না!
অনেকবার “সরি” বলতে গিয়েও কোনো উত্তর পায়নি। হঠাৎ আবার দেখলো—জিবন ভান করছে রাগারাগি করে উঠে যাবে। আরফা দাঁত চেপে বললো—
এই মিস্টার!
জিবন ভেতরে ভেতরে হাসতে হাসতেই মাথা একটু পেছনে নিয়ে শান্ত চোখে তাকালো। সেই দৃষ্টিতে কিছুক্ষণেই চুপ হয়ে গেলো আরফা। হঠাৎই নিজের কথা ভুলে গিয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো।
জিবন বললো—

আপনি কি চিংড়ি?
কী বললেন? — বলে আরফা চোখ বড়ো করে তাকালো জীবনের দিকে।
জিবনের হাসি আটকাতে কষ্ট হলে ও সে হাসি আটকে বললো—
মানে, কথাই কথাই চিংড়ি মাছের মতো লাফান তো… তাই জিজ্ঞেস করলাম।
রাগ তখন আকাশ ছুঁলো আরফার। দাঁত চেপে বললো—
আপনি কি বললেন আমাকে?
জিবন বললো—
যা বুঝেছেন, তাই বলেছি।
তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো। আরফা ওর পিছু পিছু এগিয়ে গেলো। জিবন যখন বেরোতে যাবে, ঠিক তখনই আরফা ওর হাত ধরে ফেললো।
হে আল্লাহ! আমাকে বাঁচান!
চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে জিবন।

তারপরই চোখ গম্ভীর করে আবার তাকালো আরফার দিকে।
আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে চিংড়ি মাছের সাথে তুলনা করার?—আরফার শরীর রাগে কাঁপছে।
জিবন ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বললো—
বলেছি। কারণ…আপনি…?
আমি কী? আমি?
আপনি….
আমি….
আরফা পিছায় তো জিবন সামনে আগায়।রাগে ফুঁসে ফুঁসে করছে। পিছাতে পিছাতে যখন পরে যাওয়ার আগেই জিবন হঠাৎ খপ করে হাতটা ধরে ফেললো। আরফা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
জিবন ঠোঁট কামড়ে হাসলো—
প্রমাণ পেলেন তো, আপনি-ই চিংড়ি।
আরফা চোখ খুলে তাকালো। রাগে থরথর করে বললো—
কিসের প্রমাণ?
আপনি যে চিংড়ি।

এই শুনে আরফা ভয়ংকর রেগে উঠলো। আর সেই রাগে হঠাৎ জিবনকে টান দিয়ে উঠতে চাইলো—দু’জনেই পড়ে গেলো পাশের পুকুরে ধপাশশশশশ!!
ফলে দুইজনেই পুকুরে।
দু’জনে উঠে দাঁড়ায়। আরফা রাগী রাগী চোখে তাকায় জিবনের দিকে। আরফার সেই দৃষ্টি দেখে জিবন ঠোঁট কামড়ে হেসে ফেলে। কিন্তু আরফার কাছে সেই মুহূর্তে জিবনের হাসিটা একেবারেই ভালো লাগলো না।
আরফা পানি ছুঁড়ে মারে জিবনের দিকে আর বলে ওঠে –
বেয়াদপ লোক, অসভ্য, শয়তান!
জিবন ভ্রূ কুঁচকে তাকায়। তারপর মুহূর্তেই সেও পানি ছুঁড়ে মারে আরফার দিকে।
আমি কী করলাম? এইটুকুতেই এতগুলো ট্যাগ লাগিয়ে দিলেন? আমি যদি সত্যিই অসভ্যতা করি, তখন নেবেন কিভাবে, মিস চিংড়ি?
আরফা চোখ বড় বড় করে তাকায় –
কি বললেন আপনি?

জিবন একটু পিছিয়ে যায়, আরফাও এগোয়। অবস্থা খারাপ বুঝে জিবন সাঁতরে একটু দূরে যায়, আরফা পিছু নেয়। হঠাৎ একসময় জিবনকে ধরে ফেলে আরফা। পানির মাঝেই আরফা জিবনের কলার চেপে ধরে বলে –
আর একবার চিংড়ি বললে…!
জিবনের শান্ত চোখে তাকায়। আরফার বুক কেঁপে ওঠে।
জিবন আবার বলে,
কি হলো মিস চিংড়ি?
দুঃখ, রাগ মিশ্রিত আবেগে আরফা দাঁত বসিয়ে কামড়ে দেয় জিবনের ঘাড়ে। জিবন হঠাৎই থমকে যায় শিহরিত হয়, শিরদাঁড়া বেয়ে নামে শিতল স্রোত। বলিষ্ঠ শরীরটা কেমন শিরশির করে ওঠে। এই বোকা মেয়ে কী জানে তার এমন হুট হাট কাচে আশায়, ছোঁয়ায় যে কেউ পুরোপুরি বেসামাল হয়ে যায়। সে কী বুঝে নিজেকে সামলানো কত টা দুস্কর হয়ে উঠে।

আরফা ছেড়ে দেয়। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে
আর একবার আগের মতো কিছু বললে, বা আমায় রাগানোর চেষ্টা করলে, মেরেই ফেলব একদম!
বলে জিবনকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। জিবন ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় পানির তলায়। শরীরটা অসাড় হয়ে যায়। উঠতে হবে জেনেও ভুলে যায় সব। জলে ডুবে যায়।
ওদিকে আরফা উঠে দাঁড়ায়। কি ভেবে জেনো পিছু তাকিয়ে দেখে,জিবন উঠছে না! ও তো সাঁতার জানে তবে উঠছে না কেন?
বুক কেঁপে ওঠে তার। আতঙ্কে ফিসফিসিয়ে ডাকে –
জি… জি… জিবন!
কিন্তু কোনো সাড়া নেই। চোখ ভিজে ওঠে তার। তবুও সাহস করে ঝাঁপ দেয় আবার পানিতে। অনেক কষ্টে জিবনকে টেনে আনে ঘাটের কাছে। জিবন শুধু তাকিয়ে থাকে তার দিকে। সেই চোখ লালচে, তাতে যেন অজানা কত গল্প।
আরফা কাঁপতে কাঁপতে ডাকে –

আপনি ঠিক আছেন? কি হয়েছে আপনার? খুব ব্যথা পেয়েছেন? আসলে… আসলে আমার রাগ উঠলে মাথা কাজ করে না… প্লিজ, মাফ করে দিন… আমি সো সো সরি…
জিবন চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। তারপর হঠাৎই জিবন ঢলে পড়ে আরফার গায়ের উপর। বুকটা ধক করে ওঠে আরফার। আরফা জিবন কে কোন মতে সরাই তার মাথাটা নিজের কোলে রাখে। চোখে জল চলে আসে। ভয়ে তার হাত-পা অবশ হয়ে যায়।
আরফা পুকুর থেকে পানি নিয়ে চোখে মুখে পানি ঝাপটা দেয়।

কিছুক্ষণ পর জিবন চোখ মেলে তাকায়। কিন্তু সেই মুহূর্তেই—আরফাকে তার জন্য কান্না করতে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়।আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে অনেক পুরেছি এবার তোমার পালা।
ঠিক তখনই ঠাসসসস! করে এক থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আরফা জিবনের গালে!
জিবন তরাক করে তাকাই অবাক হয়ে উঠে বসে। আরফা আবার থাপ্পড় মেরে ছুটে যায় বাড়ির ভেতর।
জিবন বসে থাকে, দুই গালে হাত দিয়ে।
তখনই পিছনে হাসির শব্দ পায়। ফিরে তাকিয়ে দেখে— লাবিব আর আরশ হেসে হেসে একে অপরের উপর পড়ে যাচ্ছে।

আসলে তারা গিয়েছিল খেজুরের রস খেতে। বাড়ি ফেরার পথে এই দৃশ্য দেখে ফেলে। আরফা জিবনকে পানির তলা থেকে তুলে আনছে। আরশ আসতে চাইলে লাবিব আটকে দেয়।
তাদের এভাবে হাসতে দেখে জিবন এগিয়ে এসে বলে –
সালা- সমন্ধী, তোরা বেটাকাচ্ছিস কেন? তোর বোন আমায় মেরে গেলো, আর তোরা হাসছিস!
লাবিব হাসতে হাসতে বলে –
ওটা আমাদের বোন, ভুলে যেও না ব্রো! ওকে বিয়ে করলে মাইর খেতে হবে না ভাবলে কেমন করে চলবে? যেখানে গ্যাংস্টার মাফিয়া রাজ শিকদারও বউয়ের কেলানি খায়, রিদ তালুকদারের মতো ভদ্রলোক ও মাইর খাই, যেখানে আমি উঠতে বসতে কেলানি খায়,এমন কী বাদ যায় না আরশ ও ওখানে তুমি বাদ যাবে, তা ভাবাটাই তো বিলাসিতা!
আরশও হাসে।

জিবন ভ্রু কুঁচকে বলে –
ঠিক আছে, খেলাম। কিন্তু আমার বউ আমাকে মারবে আর আমি সেটা সয়ে নেব তোদের মতো তা তো হবে না। আমি শোধ তুলে নেব।
কথা বলতে বলতেই আরশ আর লাবিব কে পুকুর পারে নিয়ে এসেছিলো জিবন।
কথা শেষে হঠাৎই জিবন লাবিবকে পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয় পুকুরে। লাবিব ধপাশ করে পড়ে যায়।
তারপর আরশকে বলে –
সমন্ধী, এবার তোর পালা!
আরশ ভয়ে বলে –

না না! আমি কিন্তু তোমার সমন্ধী, এমন করলে কিন্ত বোন দেব না!
কিন্তু জিবন কোনো কথা না শুনে আরশ কে পাজা কোলা করে তুলে লাফ দেয় পানিতে।
হাসি-আনন্দে ভরে ওঠে চারপাশ। তিনজন মিলে মজা করে সাঁতার কাটে।
জিবন আসলে আগেই আকরাম চৌধুরীকে জানিয়েছে, সে আরফাকে বিয়ে করতে চায়। রাজ, লাবিব, আরশ— সবাই তার ঘনিষ্ঠ। ছেলে ভাবলো ভালো জব করে তাই দ্বীমত করে নি। কিন্তু সবাই জানলেও আরফা এখনও কিছু জানে না।
জিবনের শর্ত হলো— আগে সে আরফার মনে জায়গা করে নেবে, তারপরই জানাবে তাকে।
ওদিকে আরফা ঘরে গিয়ে গোসলে ঢুকেছে টেপ ছেরে দারিয়ে আছে সে। বুকটা ধুকপুক করছে। নিজেকেই গালি দেয় সে –

আমি এ কী করলাম!একজন ছেলেকে কামড়ে দিলাম… ছিঃ ছিঃ! এখন যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, কে কামড়াল? আর উনি যদি বলে দেন আমি?
আরফা নিজের চুল টেনে ধরে বলে—
উফফ, আমি কী করলাম এটা!
কিন্তু মনে পড়তেই বুকটা আবার ধকধক করে ওঠে। হার্টবিট বেড়ে যায়।
ইস্‌স্‌… এ কী হলো আমার …?
কি মুসিবদ এমন কেন হচ্ছে।
সকাল ৯ টা।

সবাই খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে আর কিছু নিয়ে হাসাহাসি করছে।
আর জিবন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
হাসাহাসির কারণ মূলত জিবনের কাঁধে সেই অনটাইম বেন্ডেজ।
ইতি মধ্যে সবাই জেনে গেছে এই বেন্ডেজ আর পেছনের কারণ।
খাবার টেবিলে সবাই থাকলেও আরফা নেই।
হয়তো লজ্জায় নামে নি। বড়রা বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত।
রাজ হঠাৎ বলে—
শোনো ভায়া, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি…
সবাই রাজের দিকে তাকায়।
রাজ অভিজ্ঞতার ভঙ্গিতে বলে—

সংসার সুখী হয় পুরুষের গুণে, যদি সে চুপ চাপ বউয়ের কথা শোনে।
রাজের কথায় ছেলেরা ঠিক ঠাক করে ওঠে, মেয়েরা তেসরা চোখে তাকিয়ে থাকে।
রাজ আবার বলে—
শোন, বউয়ের মাইর থেকে বাঁচার উপায় আমার কাছে আছে। দরকার পড়লে জেনে নিস সবাই। না বিশ্বাস হলে রিদ ভায়া কে জিজ্ঞেস কর। আমার দেওয়া ওষুধ কাজে দেয় কি না।
সবাই আবার তাকায় রিদের দিকে।
ওদিকে মেহের কাশে ওঠে। তা দেখে রাজ হাহা করে হেসে ওঠে।
রিদ রাজকে চোখ টিপ দিয়ে বলে—

“Thanks bro।”
কেউ না বুঝলেও কারণটা মেহরিন আর মেহের বুঝে ফেলে। ফলস্বরূপ মেহের টেবিলের নিচে একটা লাথি দেয় রিদকে।
সেই একই কাজ মেহরিনও করে।
রাজ আর রিদ “আহহ” বলে ওঠে।
তা দেখে মেহের আর মেহরিন বলে—
কি হলো?
রাজ আর রিদ একসাথে বলে—
মশা, মশা।
তা শুনে মেহের আর মেহরিন হেসে ফেলে।
Hey, অভাগা দুলাভাইগণ, Miss you!

হঠাৎ চিনা এক গলায় সবাই সেদিকে ঘুরে তাকায় আর দেখে মাহির দাঁড়িয়ে আছে।
পরনে ব্ল্যাক প্যান্ট আর ব্ল্যাক শার্ট, সানগ্লাসটা ঝুলছে বুকের কাছে। চুলগুলো পরিপাটি।
এখন আর সেই বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা নেই।
কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে কিনা। দেখতে অনেকটা সালমান শাহ’র মতো লাগছে।
তেমনি লম্বা, সুন্দর আর অ্যাটিটিউড।
কেননা সে এতদিন ছিল সিঙ্গাপুরে, তাদের পাপার কাছে। এক্সাম শেষে তার ডাক পড়েছিল। যে ডাক মেহরিন, মেহের আর মেহবুবাকেও পড়েছিল এক সময়।
সে যাই হোক—এতদিন পর বাড়ি ফিরে কিনা সে বাবা মা বোনদের ভুলে দুলাভাইদের ডাকছে!
তা দেখে মেহবুবা বলে—

ঘরশত্রু বিভীষণ এসে পড়সে!
কথাটা মাহির শুনলেও পাত্তা দিল না।
রাজ, রিদ তাদের সাপোর্টারকে পেয়ে খুব আবেগি হয়ে উঠল। শুধু রিদ বা রাজ নয়, সাথে শান্ত, লাবিব আর আরশ ও রাকিবও আছে।
রাজ আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে ওঠে—
শালা !
ওদিকে মাহিরও বলে—
দুলাভাই!
সিনেমার নায়ক নায়িকার মতো একে অপরকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।
তা দেখে মেহরিন মুখ বাঁকিয়ে বলে—
ড্রামাবাজ, কুত্থাকার।
রাজকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে মাহির বলে—
এত শুকিয়ে গাসো কেন দুলাভাই? আমার দজ্জাল বোনটা অত্যাচার করসে বুঝি?
রাজ আবেগে আপ্লুত হয়ে বলে—

না শালা, তোর বোনের ভালোবাসার অভাবে! তুই একমাত্র আমার কষ্ট বুঝিস, আর কেও বুঝে না রে।
মাহির সবসময় তার দুলাভাইদের পক্ষে থাকে।
তাই সে সবার প্রিয়। সবসময় সবাই খুশিও রাখে তাকে তাই সে এই দলে।
যেমন কিছুদিন আগে রাজের সাপোর্ট নেবার জন্য একটা R15 গিফট করেছিল।
রিদের সাপোর্ট নেবার জন্য iPhone 16 Pro।
লাবিবের দিকে যাওয়া মাত্র দামি ব্র্যান্ডের পারফিউম। শান্ত দিয়েছে ব্র্যান্ডের ঘড়ি।
আরশ দিয়েছে পকেট গরম করে।
রাকিব দিয়েছে ড্রেস।
এত এত ফায়দা এই দল করাই সে কোন দুঃখে বোনদের দলে যাবে! আর সত্যি কথা বলতে, মাহির তো জানে তার বোনগুলো কেমন।
বেচারা দুলাভাইদের দিকে মায়াও হয়, আবার ফায়দাও আছে। তাই দুনিয়া উল্টে গেলেও দুলাভাইদের সাপোর্টে সে থাকবে।
মাহির হঠাৎ বলে—

আমি জানি, আমার দুলাভাইগণ, তোমরা খুব অত্যাচারিত, নিরুপায় ও অসহায়—আমার এই দজ্জাল রিনা খানের টাইপ বোনদের কাছে।
এমন একটা অপমানজনক কথা শুনেও নারী গোষ্ঠী কিছু বলল না। তারা খেয়েই যাচ্ছে।
ওদিকে মাহিরকে দেখে সব ছেলেরা ঘিরে ধরেছে।পছন্দের মানুষ কিনা।
কিন্তু এমন শালা পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার।
মাহির একে একে সবাইকে ধরে দুলাভাইগিরি ও শালাগিরি করল।
যাতে সবাই গলে গেল।
আর তার পকেট গরম করে দিল।
এক হাতে দিচ্ছে আর মাহির নিচ্ছে আর পকেটে রাখছে।
হঠাৎ মাহির বলে—
দুলাভাইগণ!
সবাই একসাথে বলে ওঠে—
হে শালা!
মাহির বলে—

I love you!
সবাই বলে—
I love you too!
তারপর জড়িয়ে ধরে মাহিরকে।
মাহির ছেলেদের কিছু একটা বলল চুপি চুপি।
যা শুনে সবাই “হই হই” করে উঠল।
তা দেখে নারী গোষ্ঠীর কপাল কুঁচকে গেল।
আবার কিছু সিক্রেট ভেবে বাদ দিল।
ভাবনার মাঝে, এতক্ষণে খাওয়া শেষ করে উঠে যায় জিবন।
জিবনকে দেখে মাহির হেসে বলে—
কি অবস্থা bro?
জিবন হেসে কুশল বিনিময় করে বলে—
খুব তাড়াতাড়ি তোমার দুলাভাইগণে ঢুকে যাবো।
মাহির হেসে বলে—

তবে মাইর খাবার জন্য প্রস্তুত হও। সে হচ্ছে শান্ত খুনি।
জিবন নিজের ঘারে হাত দিয়ে বলে—
হে হে, তা আর বলতে।
এমন সময় রাজ বলে—
বড় হয়ে গেছিস শালা! তোকে ও এবার গেরাকলে ফেলব। কেমন রমনী পছন্দ বল খুঁজ কইরা দেয়।
মাহির হেসে বলে—
আমি নিজেই খুঁজে নেবো। আর পছন্দ হলে সবার আগে দুলাভাইগণকেই জানাবো।
ওদিকে মাহিরের গলা পায়ে ছুটে আসে মালিহা মির্জা, ফাইজা চৌধুরী আর রূপা বেগম।
ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে নিয়েই।
এভাবেই সকালটা কেটে গেল খুব সুন্দরভাবে।

আজ শুধু মাহির নয়—
আরো একজন বাংলাদেশ মাটিতে পা রেখেছে বহু বছর পর।
তার বাংলাদেশে আসার একটাই কারণ—মেহরিন ও তার পরিবার।
সকাল ১০:৪০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষের ভিড়।
তার মাঝেই কালো পোশাকধারী ২০-২২ জন লাইন বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের বসের অপেক্ষায়।
আজ বহু বছর পর সে আসছে—এই খবরেই সবার চোখ ভেতরের দিকে তাকানো।
হঠাৎ করেই দেখা যায় তাদের কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে।
কালো ফরমাল ড্রেস, চোখে সানগ্লাস পরে হিরোর মতো হেটে আসছে সে।
হাতে ট্রলি।
দেখা মাত্রই একজন দৌড়ে গিয়ে ট্রলি নেয়।
থামল তার লোকেদের সামনে।
প্রেম চোখের সানগ্লাস খুলে গম্ভীর স্বরে বলল—
যা বলেছিলাম কাজ হয়েছে তো?

Yes boss, আপনার কথামতো সব হয়ে গেছে। ম্যামরা আজ বিকেলে যে শপিং মলে যাবে, আমাদের লোকেরা আগেই পুরো শপিং মল বুক করে ফেলেছে। আর সেখানে যাতে সন্দেহ না হয় তাই অনেকে ঠিক করা আছে যারা নর্মাল ক্রেতার মতো যাবে।
প্রেম ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটাল—
“Good job.”
সে এগিয়ে যায়। একজন এসে দরজা খুলে দেয়। গাড়িতে ওঠার আগে প্রেম একবার লোকজনের দিকে তাকায়।
তারা সবাই মাথা নিচু করে ফেলে।
তা দেখে প্রেম নওয়াজ হেসে গাড়িতে ওঠে।
তার সাথে সাথেই আরো ৭-৮ টা গাড়িতে প্রেমের লোকেরা উঠে বসে।
গাড়ির বহর ছুটে চলে গন্তব্যের দিকে।
গাড়িতে বসে প্রেম পাশের সিটে তাকায়—
সেখানে ২-৩ ধরনের বন্দুক রাখা।
প্রেম একটা হাতে তুলে নিল।
তা দিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে বলল—

আমি থাকতে কোনো জা*নো*য়ারের বাচ্চা তোমাদের কখনো ক্ষতি তো দূরের কথা—ছায়াতাও মারতে পারবে না। আমি প্রেম নওয়াজ, তা করতে দেব না। তোমাকে আমি ভালোবাসি, মেহু। আগে যেমন বাসতাম, এখনো বাসি। তোমার বিয়ে হয়ে গেছে, বাচ্চা হয়েছে বলে যে তোমার ক্ষতি করব বা অন্য কাউকে করতে দেব—এটা হবে না। পায় বা না পায়, তোমকে আমি ভালোবাসি। আগে যেমন আগলে রাখতাম, এখনো তাই করব।
যদিও ওই শালা রাজ শিকদার থাকতে কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। তাও পাখি, সাবধান আর মড়ের নেই—কিছু শকুনির নজর পড়েছে তোমার আর তোমার পুরো পরিবারের উপর।
তবে চিন্তা করো না, আমি থাকতে তোমকে বা তোমার পরিবারকে কিছু হতে দেব না। এটা আমার প্রমিস, মেহু।
প্রেম নওয়াজ কথা শেষ করে হেসে বলে—

আমিও দেখব রে, তোর কত বড় হেডাম যে আমার মেহুর ক্ষতি করতে চাস। অবশ্য আমি জানি, যদি রাজ শিকদার জানতে পারে তবে তোকে ১০ ফুট মাটির নিচে পুঁতে দেবে। তবে এখনো কিছু বলব না। দেখি তুই কত খেলতে পারিস। প্রয়োজনে আমি নিজে রাজ শিকদারকে হেল্প করব। তখন তোর শেষ পরিণতিটা আমি প্রেম নওয়াজ দেখব।
আমার মেহুকে মারতে চাওয়া ওই ফুঁটফুঁটে দুই রাজপুত্রের দিকে যে চোখ দিয়ে তুই তাকিয়েছিস, তা যদি আমি নিজের হাতে না উপড়াই তাহলে আমার নাম পালটে তোর মায়ের জামাই রাখিস!
বলে হাহাহা করে হেসে দেয় প্রেম।
প্রেমের এমন আকস্মিক হাসিতে ড্রাইভার ঘাবড়ে যায়।
তা দেখে প্রেম গা এলিয়ে বসে, পা দুটো তুলে দেয় সামনের আসনে।
আরে শালা, এত ভয় পেলে চলবে? এই লাইনে থাকতে হলে জীবন নিয়ে বাজি ধরা শিখতে হবে। সামান্য হাসিতে ভয় পেলে তো মিনিট দুই পরেই ওক্কা যাবি, বেটা!

সে যাই হোক, চল, একটো গেম খেলে আসি ওই কুত্তার বাচ্চার কাছে গিয়ে। যে গলার জোরে চিৎকার করছিল, যে মুখে গালি দিয়ে আমার মেহুকে —সেই জা*নো*য়ারের বাচ্চার গলায় একটু গরম সিসা দিয়ে আসি।
ড্রাইভারটা ভেতরে গাবরে গেলেও প্রকাশ করল না।
চলল প্রেমের কথামতো—
শহরের রাস্তায় ৮-৯ টা গাড়ি নিয়ে রাজত্ব করতে করতে ছুটে চলল প্রেম আর তার লোকেরা।
ওদিকে রাজের হাতটা কেমন নিফিস করেছিল, যার জন্য রাতভর ঘুম হলো না। এখন ওটা করতেই হবে, না হলে মনে শান্তি মিলবে না। তাই রাজ বের হবে। অনেক দিন একটু ব্যায়াম হয় না—কাটাকাটি, কুপাকুপি হয় না। আহা! কত দিন পর রক্ত দেখবে, খুশিতে তো এখন গান গাইতে চাইছে।
ওই যে ওই গানটা…

আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!!
বের হবে —বলে রাজ রেডি হচ্ছে গুনগুন করতে করতে। এদিকে মেহরিন খাটে বসে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে আর রাজের ভাব দেখছে।
মেহরিন হঠাৎ খোঁচা মেরে বলে উঠল—
বুড়া বয়সে এমন কুচি খোকাদের মতো মান-যা মেরে কোথায় যাচ্ছেন, হুঁ?
রাজ মুখটা ভোতা করে তাকাল মেহরিনের দিকে। আজকাল এটা নতুন কিছু নয়, রাজকে মাঝে মাঝে রেডি হতে দেখে তার বউ তাকে এমন করে খোঁচা দেয়। সে জায়গায় এখন রাজ আসলেই কান দেবে না। আর বউয়ের কথায় রাগ করা উচিতও নয়।
কোন কবি জানি বলেছিল… কী জানি কে বলেছিল! তাকেই পেলে রাজ লাল সালাম দিত।
রাজ মেহরিনের কাছে এসে টপাটপ দুটো চুমু দিয়ে বলল—
অনেক দিন ব্যায়াম করি না, বউ। শরীরটা মেজমেজ করছে। একটু ব্যায়াম করে আসি।
বলে চোখ মারল মেহরিনকে।
মেহরিন হেসে বলল—

সে আপনার ব্যাপার, তবে বিকেলে শপিং-এ যাব। সময়মতো যেন পাই।
রাজ সুন্দর করে হেসে মেহরিনের দু’গাল টেনে দিয়ে বলল—
আপনি খুঁজেছেন, আর আপনার স্বামী হাজির হয়নি—এমন কি কোনোদিন হয়েছে? শুধু সরন করবেন। দেখবেন আলাদিনের জিনের মতো হাজির হব।
মেহরিন হেসে বলল—
বাজে কথা বন্ধ করে এখন যান। তবে সাবধানে যাবেন, নিজের খেয়াল রাখবেন।
রাজ মেহরিনের কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল
যথা আগ্যা, মহারানী। বলে বেরিয়ে পড়ল।
নিচে নেমে দেখে লাবিব বাইক আর চাবি হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও বের হবে। রাজ তাকাতেই লাবিব বাঁকা হেসে বলল,

অনেক দিন ব্যায়াম করি না, ব্রো। শরীরটা কেমন জং ধরে গেছে। একটু জং ছাড়াতে হবে। সামনে বিয়ে কিনা! না হলে তোমার শালি আবার গালমন্দ করবে।
রাজ হেসে ফেলল। দু’ভাই বেরিয়ে গেল দুটো বাইক নিয়ে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই জায়গামতো পৌঁছে গেল রাজ আর লাবিব। শিস বাজাতে বাজাতে দু’জন ঢুকল এক অন্ধকার ঘরে।
হঠাৎ লাবিব হাঁক ছেড়ে বলল—
কইরে, জ্বালা জ্বালা, বাতি খান জ্বালা। রত্নগুলোকে দেখি।
সাথে সাথেই লাইট জ্বলে উঠল। অন্ধকার ঘরটা মুহূর্তেই আলোতে ভরে উঠল। অনেকক্ষণ অন্ধকারে থাকার পর হঠাৎ আলোয় চোখ কুঁচকে গেল চেয়ারে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় বসে আছে এক নারী আর এক পুরুষ। আর কেউ নয়—ওই যে, মেহরিনের গায়ে হাত তোলা দুইজন।

তাদের দেখেই লাবিব বাঁকা হেসে বলল—
কিরে মা****, সব ঠিকঠাক তো নাকি?
রাজ লাবিবকে এক ধাক্কা দিয়ে বলল—
যা, দুষ্ট! গালি দিচ্ছিস কেন? সম্মান দে প্লিজ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কলিজার মানুষগুলোকে কী না তুই গালাগাল করছিস, ইটস নট ফেয়ার।
লাবিব নাটক করে বলল—
উফস, সরি সরি, খমা করেন বড় ভাই। ভুল হয়ে গেছে। আসলে ওর মতো চু*** ভাই যে এত বড় কলিজার মানুষ, আমি তো জানতামই না। তাই ভুলে মা**** বলে ফেলেছি। আর এমন ভুল হবে না ভাইজান, খমা দেন।
রাজ বাঁকা হেসে বলল—

এই, কে আছিস সম্মানিত দুইজনের জন্য যে স্পেশাল নাস্তার ব্যবস্থা করেছি, নিয়ে আয়। কত বেলা হলো, খেয়াল আছে? মেহমানদের এখনো খাবার দিসনি কেন রে?
রাজের কথা শেষ হতেই এক ছেলে দৌড়ে এসে দু’হাতে দুইটা বক্স দিল—একটা লাবিবের হাতে, আরেকটা রাজের হাতে।
তারপর রাজ লাবিবকে বলল—
তুই শুরু করবি নাকি আমি?
লাবিব বলল—
তুমি কর।
রাজ বলল—
না তুই কর।
এমন কথার পর হঠাৎ রাজ বলল—
আচ্ছা, যা টস করি—যে জিতবে, সে করবে। ওকে?
লাবিব মাথা ঝাঁকাল, মানে রাজি। পাঁচ টাকার একটা কয়েন দিয়ে টস হলো। কয়েনটা গিয়ে খাড়া হয়ে দাঁড়াল।
রাজ হেসে বলল—
যা সালা, আমরা দু’জন একসাথে করি। তারই সংকেত দিল রে।
লাবিবও হেসে বলল—
সেই তো ভালো, চল লেগে পড়ি।
দুই ভাই বসে পড়ল সেই লোকটার সামনে। বক্স দুটো খুলে দিল। ভিতরে থাকা নাস্তা দেখে লোকটার চোখ কপালে উঠল, দম আটকে যেন মরেই যাবে এমন অবস্থা।
লাবিব একটা ছোট কাঁচি বের করল, রাজ বের করল দু’টা পেলাস। তারপর একটা স্কেল, একটা করাত। লাবিব বের করল একটা হাতুড়ি।

হঠাৎ লাবিব চেঁচিয়ে বলল—
কিরে, ভাবি-মার স্পেশাল মসলা কই?
বলতে দেরি, আসতে দেরি হল না, একজন লোক ঘরে ঢুকে হাতে নিয়ে এল দু’টো কৌটা। একটাতে মরিচ গুড়া, আরেকটাতে লবণ।
তা হাতে পেয়েই লাবিব ভীষণ খুশি হয়ে শিস বাজাতে বাজাতে কৌটাগুলো নিল। মরিচ গুড়োর কৌটোর মুখখানা খুলে বললো —
কিরে মরিচগুরো কোনটা আনছিস ঝাঁজ কেমন?
লোকটা বলল—
ভাই, সেই ঝাঁজ। বোম্বাই মরিচ শুকাইয়া পাউডার বানানো হইছে ভাই।
লাবিব কপাল কুঁচকে বলল—
তাই নাকি! দাড়া দেখি কেমন ঝাঁঝ।
বলে মরিচে হাত দিতে চাইলে লোকটা বাঁধা দিয়ে বলল—

ভাই, হাত দিয়েন না। খুব জ্বলে। আমি এই কৌটাই গুড়াগুলো শুধু ভরছি, ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুইছি কয়েকবার। পরে বাথরুমে গেছিলাম ভাই। একদম তিন ঘণ্টা আমার ইয়ে খুব জ্বলসে ভাই।
লোকটার কথায় লাবিব হাহা করে হেসে দিল। হেসে হেসে গ্লাভস পরে নিল।
ভাগ্য ভালো তুই বললি, না হলে তোর মতো আমারও পাছা জ্বলতো রে। দেখা যেত বউকে একটু ধরতে গেছি, বউ আর আমি দুইজনেই জ্বলতাম ভাই। না না নিজে জালা সহ্য করে নিলেও বউকে জালা দেওয়া যাবে না। রিক্স নেয়া যাবে না।
এরপর মরিচের কৌটা খুলে এক মুঠো মরিচ গুড়া মেয়েটার চোখে ছুঁড়ে মারল লাবিব।
তারপর দাঁত চেপে বলল—

সালি, তোর এত বড় সাহস? আমার ভাবি-মার গায়ে হাত তুলিস! মানলাম তোর মরার কুড়ুকুড়ানি বেশি, তাই বলে মানুষ দেখবি না? থাপ্পড়টা যদি আমায় মারতি, আমি হয়তো মাফ করে দিতাম। নইলে দিতাম সহজ মৃত্যু। কিন্তু তুই আমার ভাবিরে—আমার দ্বিতীয় মায়ের গায়ে হাত তুলেছিস। তোর এই হাতগুলোকে আমি তিন ইঞ্চি করে কেটে টুকরো টুকরো করব, এর পর গরম তেলে ভাজব।পরে সেটা টমেকে খেতে দিব।
মেয়েটার অবস্থা খারাপ—চোখ-মুখ সব জ্বলছে। মনে হচ্ছে শরীরে আগুন ধরে গেছে।
ওদিকে রাজ বাঁকা হেসে চেয়ারে বাঁধা লোকটাকে বলল—

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৩

কিরে, সোনা। তুই তো নাকি আমার বউর গায়ে হাত দিয়েছিস। জানিস সোনা, তোর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। একদম প্রেমিক-প্রেমিকার মতো কষ্ট। প্রেমে ছ্যকা খেললে যেমন কষ্ট পায় মানুষ, তেমন কষ্ট।
বলেই রাজ কাঁচি দিয়ে লোকটার বাঁ হাতের একটু খানি চামড়া কেটে দিল। তারপর হাতে তুলে নিল পেলাশ। কাটা জায়গাটা শক্ত করে ধরে পুরো শরীরের শক্তি দিয়ে এক টান দিল…

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৫