মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৫
মির্জা সূচনা
লোকটার বাম হাতের চামড়া খুলে আসে কব্জা পর্যন্ত, আর ওই লোকটা ব্যথায় যন্ত্রণায় এঁকেবেঁকে চেয়ার উল্টে পড়ে গেল। তা দেখে লাবিব মুখ দিয়ে বিরক্তি নিয়ে “চ” উচ্চারণ করলো।
রাজ সেটা দেখে বাঁকা হেসে বলল—
অরে চিল ব্রো, আমি পড়তে দিয়েছি তাই পড়েছে। জানিস তো, আমি না চাইলে আমার শিকার এক চুল নড়তে ও পারে না।
কথাটা লাবিবের বেশ পছন্দ হলো। খুশিতে চোখ চকচক করে উঠলো।লাবিব বলল—
ওয়েট ব্রো, এভাবে ঠিক মজা পাচ্ছি না, আমি কিছু একটা করি।
রাজ সম্মতি দিলো।
লাবিব হাসলো। কী সুন্দর সেই হাসি, যেন সে ছোট্ট বাচ্চা আর রাজ তার পছন্দের কোনো খাবার তাকে এনে দিয়েছে।
রাজ একটা চেয়ার টেনে বসল, পায়ের উপর পা তুলে নজর তার চোখ লাবিবে সীমাবদ্ধ। কিন্তু এভাবে বসে থাকলে তো ব্যায়াম হবে না। তাই লাবিবকে বলল—
তোর খেলা পরে শুরু কর, আগে আমায় ওই ভোঁতা করাতখানা টা দে।
লাবিবের কাজে বাঁধা পড়ায় সে বিরক্ত হলো। রাজের দিকে তাকিয়ে বলল—
নিজের কাজ নিজে করতে পারো না? কত দিন পর একটু খেলবো, তাও তোমার ঝামেলায় মনমতো হচ্ছে না। দূর বা*ল!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিরবির করতে করতে বাক্স থেকে একটা ভোঁতা করাত এনে দিলো রাজকে।
রাজ সেটা হাতে নিয়ে দেখল, তারপর হাসতে হাসতে বলল—
বুঝলি লাবীব, মাঝে মাঝে ধারালো জিনিসের থেকে ভোঁতা জিনিস দিয়ে কাজ করার মজা বেশি।
লাবিব মাথা নাড়ল। আর মাটিতে পড়ে ব্যথায় ছটফট করা লোকটার দিকে এগিয়ে গেল।
রাজ যে হাতের চামড়া তুলেছে সেই হাতটা ধরে, পা রাখল লোকটার গলায়। তারপর সেটা নিয়ে এঁকেবেঁকে কোমর দুলালো আর বলতে লাগলো
টানবো কি টানবো না? টানবো কি টানবো না?
তিন-চার বার এভাবে করলো। তারপর ওই লোকের গলায় পা দিয়ে জোরে আর হাত ধরে রাজকে বলল—
ব্রো, অনেক দিন শক্তি পরীক্ষা করি না। আজ যেহেতু সুযোগ পেলাম, পরীক্ষা করে নেই। কী বলো?
রাজ মাথা নেড়ে বলল—
অবশ্যই, অবশ্যই! দেখি দেখি, এমনি তে তো ভেড়ার বলও ছিঁড়তে পারিস না, এখন দেখি তোর শক্তির বাহার। দেখা ভাই দেখা।
রাজের এমন কথা যেন লাবিবের ইগোতে লাগলো। তার শক্তি নিয়ে কথা, আজ দেখিয়েই দেবে। রাগ, জেদ আর খেলার আনন্দে আরো জোরে পা দিয়ে পারা দিলো লোকটার গলায় আর সেই চামড়া ছিলা হাত ধরে শরীরের জোরে দিলো এক টান।
আর বেসস.. এক টানেই লোকটার হাত একদম গোড়া থেকে খুলে লাবিবের হাতে চলে এল।
লাবিব রাজের পানে তাকিয়ে ভ্রূ নাচালো যার অর্থ দেখালে—আমার শক্তি!
রাজ হাসলো।
ওদিকে লোকটা যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে জ্ঞান হারাল।
তা দেখে রাজ বলল—
উঠা উঠা ওটাকে, জ্ঞান ফিরা। যন্ত্রণা অনুভব করতে হবে।
লাবিব বলল—
ওয়েট! সবাই তো পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরায়। আমি না হয় অন্য কিছু ট্রাই করি।
রাজ হাসলো, নিজের কাজে মন দিলো।
রাজ এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে হাতে ভোঁতা করাত নিয়ে।
রাজ মেয়েটার সামনে গিয়ে বলল—
কি আপা, সব ঠিকঠাক তো? এই বয়সে প্রেম করবেন, পরকীয়া করবেন, বিয়ে করবেন, আপিনি কেন এই বয়সে মরার জন্য নাচতে নাচতে রাজ শিকদারের কলিজায় হাত দিবেন হুম? এটা তো অন্যায় না, এটা ঘোর অন্যায়।
আমি বলি কী, মেয়ে মানুষকে হতে হবে ভদ্র, নরম আর সরল। যে মারামারি, হানাহানি, রক্ত এগুলো দেখলেই ভয় পাবে। আর যদি বলেন, যদি বলেন কুপাকুপি মারামারি রক্তারক্তি করবে, ওটা শুধু আমার বউ বোনরাই করবে। আরে বইন এগুলো ওদেরই তো মানায়। আপিনিও বলেন, কইবেই না কেন? ওদের পেছনে যে আমি, মানে রাজ শিকদার আছি, আপার পিছে তো কেউ নাই।
আর আমার বউকে তো দেখেছেন নাকি? ওর আবার রক্ত একটু বেশি গরম। কথায় কথায় কুপাকুপি করে। অবশ্য আমার ভালোই লাগে। সে খুব খাতারনাক মহিলা।তার প্রমাণ তো মনে হয় আপিনি পেয়েই গেছেন।
তবে বলতে হবে, আপনের কপাল ভালো। শুধু থাপ্পড় মেরে ছেড়ে দিয়েছে। হয়তো মুড ভালো ছিলো। নয়তো তার আবার স্পেশাল মসলা থেরাপি থাকে তার শত্রুদের জন্য। যেখানে ছেলেদের মেরে কেটে লবণ মরিচ লাগিয়ে দেয়, সেখানে আপনের কি করতো? নিশ্চয় ভাবতে পারছেন।
আপনার উচিত ছিলো তার পা ছুঁয়ে মাফ চাওয়া। যদি আবেগে বলতেন, আম্মা আমাকে মাফ করে দেন। তাহলে বিশ্বাস করেন আপা, আপনাকে আমার জারজ সন্তানের মতো ভেবে ছেড়ে দিতাম। মানে, মাফ করে দিতাম। যদিও আমার এমন স্বভাব নেই। আমি আমার বউয়ের ব্যাপারে খুব লয়্যাল।
সে যাই হোক, আপিনি মাফ না চেয়ে, আমার বউজানার পা না ধরে, আপিনি কিনা আপনার চোদ্দ গুষ্টির সাহস আপনার এক কলিজায় নিয়ে আমার কলিজায় হাত দিলেন। ছিঃ ছিঃ আপা, এটা তো ঠিক করেন নাই।
আচ্ছা, কোন হাত দিয়ে মেরেছিলেন আমার বাচ্চার মাকে?
মেয়েটার চোখ-মুখ মরিচের জন্য ফুলে গেছে। এখনও তাকাতে পারছে না, চোখ বন্ধ করছে আর খুলছে। চোখের পানি, নাকের পানিতে পরনের জামা পর্যন্ত ভিজে গেছে।
এদিকে রাজের এমন কথা ভয় আর যন্ত্রণায় মেয়েটার অবস্থা খুব খারাপ। ওদিকে মেয়েটা কথা বলছে না দেখে রাজের মাথা গরম হলো।
রাজ হাক ছাড়ল—
কি রে, কে আসিস! একটা টেবিল নিয়ে আয়।
সাথে সাথে একজন এসে সামনে রেখে দিলো একটা টেবিল।
রাজ জীবনে ও এই মেয়ের হাত ধরবে না। বউ বিয়ের দিনই বলেছিল—অন্য কারো হাত ধরলে হাত কেটে ফেলবে। তার যে বউ, সত্যিই সত্যিই তাই করবে। দেখা যাবে হাত কেটে তার গলায় মালা বানিয়ে ঝুলিয়ে দিল। তার বউদের কাছে এটা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই এক বা*লের জন্য নিজের হাত হাত খোওয়ানোর কোন মানেই হয় না ।
কি করা যায়? কি করা যায়?
তারপর একটা বুদ্ধি মাথায় এল।
হাত দিয়ে ধরবে না, তবে বড় পেলাস দিয়ে তো ধরাই যায়। বউয়ের কথা ও রাখা হলো আবার এটাকে ছুঁতেও হলো না।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ।
একজনকে ইশারা করতেই বক্সটা নিয়ে এলো। রাজ একটা বেশ বড় পেলাস তুলে নিলো। আর তার দ্বারা মেয়েটার ডান হাত রাখলো টেবিলে।
অনেক জোরে ধরাই মেয়েটা ব্যথায় গুঙিয়ে উঠলো।
রাজ হাতটা টেবিলে রেখে একটা পা তুলে দিলো টেবিলের ওপর। মেয়েটার হাতে এক পায়ে পা দিয়ে ধরলো। তারপর সেই ভোঁতা করাত চালালো মেয়েটির হাতে।
মেয়েটা ব্যথায় যন্ত্রণায় কাতরায়, হাত সরাতে চায়, কিন্তু পারে না। এত সহজ রাজের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া।
রাজ হঠাৎ বলে উঠল,
লাবিব, ফিল আসছে না। নিজেকে তো কসাই মনে হচ্ছে রে বেটা! গান-টান বাজা।
লাবিব কিছু মনে করার মতো করে বলে,
হে, তাই তো! এইজন্যই আমি ভাবছিলাম কী নেই, ফাঁকা-ফাঁকা লাগছে কেনো।
রাজ হেসে ওঠে। লাবিব সেই উপরে ফেলা হাত কাঁধে নিয়ে কোমর দুলাতে দুলাতে ডাকে,
কি রে, কে আসিস? বক্সেটা বাজা গান ছাড়। তবে ভলিউম কম দিবি, যেন গান আর শব্দে ওদের চিৎকার ঢাকা না পড়ে।
একজন বক্স চালালো। বক্সে বেজে উঠল একটা ভোজপুরি গান।
রাজা কয়ল পিয়া…!!
লাবিব তো উড়া-ধুরা নাচাই শুরু করল। সেই হাত কাঁধে নিয়ে সে ইচ্ছামতো নাচছে। ওদিকে রাজ মাথা নাড়ছে, গানের ফিল নিচ্ছে। কখনো শরীর দুলিয়ে একটু নাচছে, তো আবার কখনো সেই ভোঁতা করাত খানা ঘুরাচ্ছে।
হঠাৎ রাজ করাতটা সেই মেয়ের হাতের ওপর রাখল। আর তারপর করাতকে একবার এদিক আনছে, তো আরেকবার ওদিক নিচ্ছে।
আর গান আর বিটের সাথে মিলিয়ে করাতকে নাচাচ্ছে।
ওদিকে সেই মেয়ে চোখের জ্বালা, হাতের ওপরে এমন অত্যাচার সইতে না পেরে জ্ঞান হারালো।
মেয়েটা জ্ঞান হারাতেই রাজ করাত তুলে নিল। হাত অর্ধেক কাটা হয়েছে, হাড় অবধি হালকা কেটেছে। রাজ পাশে থাকা একজনকে ইশারা দিয়ে বলল,
জ্ঞান ফিরাতে।
লোকটা মেয়েটার মুখে এক বালতি পানি ঢেলে দিল। মেয়েটা ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখে পানি পড়ায় কিছুটা আরাম পেলও। কিন্তু হাতের যন্ত্রণায় মেয়েটা গুমরে কেঁদে উঠল।
তা দেখে রাজ হাসল। তারপর তুলে নিল এক মাংস কাটার ছুরি। রাজের হাতে ছুরি দেখে মেয়েটা আরো জোরে গুমগুম করে উঠল। তার চোখে বাঁচার আকুতি। রাজ সেই ছুরিটা নাচাতে নাচাতে এক খোপ বসালো সেই অর্ধেক কাটা জায়গায়। মেয়েটা আবার অজ্ঞান হয়ে গেল।
যন্ত্রণা, ব্যথা আর ভয়ের চাপে সে আর টিকল না। রাজ ইশারা দিতেই আবার এক বালতি পানি ঢালা হলো। মেয়েটা উঠে।
রাজ উঠে দাঁড়াল, ঘুরে ঘুরে একটু নাচল। হঠাৎ করেই মেয়েটার হাতের একেবারে গোড়ায় এক কোপ বসাল। ফলস্বরূপ মেয়েটার এক হাত গোড়া থেকে আলাদা হয়ে গেল। রাজ সেটা টেবিলে রাখল।
এরপর লাবিবের দিকে তাকাল—যে তখনও নাচে ব্যস্ত। রাজ ওই মেয়েটার কাটা হাত থেকে একটা আঙুল কেটে ছুঁড়ে মারল লাবিবের পাছায়।
লাবিব তাকিয়ে আতঙ্কিত হয়ে বলল,
এটা কি করলে, ব্রো? তুমি আমার এ কী সর্বনাশ করলে!
রাজ কপাল কুঁচকে চাইল। লাবিব হাতটা ছুঁড়ে মারল ওই লোকটার মুখে, আর বুক চাপড়ে আহাজারি শুরু করল,
আমার এ কী হলো গো, সর্বনাশ হয়ে গেল গো ও বউ গো!
রাজ হেসে বসল পায়ের উপর পা তুলে। লাবিব আবার বলে উঠল,
ব্রো, তুমি আমার এত বড় সর্বনাশ কেমনে করতে পারলা? আমার এখন কি হবে গো? আমাকে এখন কে বাঁচাবে গো? বিয়ের আগেই বুঝি আমায় পটল তুলতে হবে গো!
রাজ বলল,
কি হয়েছে, তা বল।
লাবিব হঠাৎ রাজের কাছে এসে নিজের পাছার দিকটা দেখিয়ে বলল,
তুমি এখানে কেন ওই বেডির আঙুল ছুঁড়ে মারলা? তুমি জানো, আমার জীবনে কত বড় ঝড় আসবে এটার জন্য? যদি আমার বউ, মানে তোমার শালী, জানতে পারে কোনো কোন মেয়ের আঙুল আমার পাছায় লেগেছে—ওটা খোলা আঙুল নাকি হাতে লাগানো আঙুল—এটা সে বুঝবে না! সরাসরি বলবে আমি কোন মেয়ের কাছে গেছি, আর সেই মেয়ে আমার পাছায় আঙুল দিয়েছে। এমনকি এই অপরাধে বিয়েও ভেঙে দিতে পারে। আর বিয়ে হলেও আমার বাসর হবে না, বাচ্চার বাবা হওয়াও হবে না। এখন আমার কি হবে, আমার মা গো!
লাবিব আহাজারি করেই চলল।
ব্রো, তুমি আমার ভাই হয়েও কেমনে একটা মেয়ের আঙুল আমার পাছায় দিতে পারলা! আমার মা গো!
রাজ হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। হাসতে হাসতে যেন প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। রাজকে হাসতে দেখে লাবিব আবার আহাজারি শুরু করল,
ও বউ গো! আমি কিছু করি নাই গো। সব তোমার দুলাভাই, তোমার ভাসর করেছে গো। সে আমার মতো নিরীহ, একটা ভোলা-ভালা নাদান বাচ্চার পাছায় পরনারীর আঙুল দিয়েছে গো। এখন আমার কি হবে গো! এই সমাজে এ কথা জানলে আমায় মানবে না গো!
রাজ কোনোমতে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
আমার শালীকে এত ভয় পাস তুই?
লাবিব মুখটা ছোট করে বলে,
মানুষ আজরাইলরে যেমন ভয় পায়, আমি তেমনই তোমার শালীকে দেখে ভয় পাই, বুঝলা!
রাজ মাথা নাড়ল। লাবিব হঠাৎ আকুতির সাথে বলে উঠল,
ব্রো, প্লিজ, ওরে কিছু বলো না যে, কোনো পরনারীর আঙুল আমার পাছায় লেগেছে।
রাজ হেসে বলল,
ওকে, বলবো না।
লাবিব যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। একটুর জন্য জীবনটাই বেরিয়ে যাচ্ছিল। ভাবা যায়!
এটা যদি মেহবুবা জানে, দেখা যাবে আমার পাছায় এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেবে, বা বলবে—তোর পাছায় অন্য নারীর ছোঁয়া আছে, এই পাছা কেটে ফেল। না না বাবা, এটা কোনো মতেই জানানো যাবে না।
বউয়ের ভয় বড় ভয়।
তারপর লাবিব আবার কাজে লেগে গেল। মরিচ আর ঢাকনা খুলে সেটা ঢেলে দিল ওই লোকটার মুখে, আর উপরে ফেলা হাতের গোড়ায় দিল। অতিরিক্ত জ্বালায় লোকটার জ্ঞান ফিরে এল। আর ব্যথায় যন্ত্রণায় কেঁদে উঠল।
ওদিকে সেই মেয়েকে আবার জ্ঞান ফিরানো হলো। ওদের দুইজনের চোখের সামনেই রাজ আর লাবিব দুই ভাই— হাতে গ্লাভস পরে দুটো স্কেল নিয়ে একদম মেপে মেপে দুই ইঞ্চি করে কাটছে তাদেরই হাত।
অন্যদিকে একটা বিশাল করাইয়ে একজন তেল গরম করছে। পুরো হাত এমনকরে কেটে শেষ করলো দুই ভাই। রাজ একজনকে বলল,
যা, আগুলো সুন্দর করে ধুয়ে মসলা মিশিয়ে আন।
লোকটা সাথে সাথেই চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধুয়ে নিয়ে এল। তারপর গ্লাভস পরে একে একে হলুদ গুঁড়ো, মরিচ গুঁড়ো, লবণ দিল। আর রাজের কাছে দিল।
রাজ বলল,
তোদের লাগবে না রে। দে, আমি তেলে দিবো। আর লাবিব বাজবে।
লাবিব তো সেই খুশি! সে একটা বড় খুন্তি নিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেল গরম তেলের কাছে।
রাজ মসলা মাখানো হাতের কাটা অংশগুলোকে গ্লাভস পরে গরম তেলে দিচ্ছে, আর সেটা নাড়ছে লাবিব।
ওদিকে নিজদের শরীরের অংশকে এমন ফ্রাই হতে দেখে দুজন বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। আর রাজের লোকেরা বারবার তাদের জ্ঞান ফিরিয়ে আনছে।
সবগুলো টুকরো তেলে দিয়ে রাজ চলে আসল। হাতের গ্লাভস খুলল। হাতে তুলে নিল একটা ধারালো ছুরি। ধার আছে কিনা চেক করার জন্য লোকটার উরুতে এক টান দিল। টান দেয়ার সাথে সাথেই গোলগোল রক্ত বের হল।
তা দেখে রাজ হাসল।
ভালোই ধার! কী বলিস?
তারপর লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,
তোর কপাল ভালো রে। আজ বউ শপিং-এ যাবে বলে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছে। নইলে তোর মৃত্যু হতো আরো ভয়ঙ্কর। অনেকটা সময় নিয়ে তিলে-তিলে মারতাম তোকে।
সে যাই হোক,
তোর কলিজাটা দরকার আমার। অনেকদিন হলো এমন সুস্বাধু কলিজা খাই না আমার টমি।
বলেই একের পর এক ছুরি চালালো লোকটার বুকে। ছুরির আঘাতে ঝাজড়া করে দিলো লোকটাকে। তারপর আস্তে আস্তে বুক চিরে হাত ঢুকিয়ে লোকটার বুকের ভেতর থেকে এক টানে বের করে আনল কলিজাখানা।
তারপর সেটা দেখে হেসে বলল,
আরে সালা, এত ছোট কলিজা নিয়ে আমার বউয়ের গায়ে হাত দিয়েছিলি রে।
সালা ভেড়া চু***।
কলিজাটা রাজ ছুঁড়ে মারলো পাশে থাকা লোকটার দিকে। লোকটা সেটি ধরে নিলো। রাজ বলল—
এটাকে সুন্দর করে কেটে রান্না করবি, আর তারপর তুই নিজে বসে টমিকে খাওয়াবি। ঠিক আছে?
লোকটা মাথা নেড়ে চলে গেল। ওদিকে লাবিব মনের সুখে ওদের হাত গুলো নাচতে নাচতে ফ্রাই করছে আর একটা বাটিতে তুলে রাখছে।
রাজ গেল মেয়েটার দিকে—যে ভয়ে আর যন্ত্রণায় অচেতন হয়ে পড়ছে বারবার। রাজ হেসে বলল—
তুই মেয়ে বলে, তোর কলিজা খানা বার করলাম না, নাহয় তোর কলিজা বের করতাম আরও ভয়ানকভাবে।
বলে রাজ হাতে থাকা ছুরিটা গেঁথে দিল মেয়েটার কন্ঠনলিতে।
তারপর লাবিবকে বলল—
চল, গোসল করে দিবি। এভাবে বাড়ি গেলে বউ ঝাড়ু পেটা করবে।
কথাটা শুনে লাবিব বক্সে আরেকটা ডিজে গান চালাল আর নাচতে নাচতে চলে গেল ঘরের বাঁ দিকে—ওখানেই মূলত গোসল করবে। আর রাজ চলে গেল ডান দিকে।
ওদিকে প্রেম নেওয়াজের গাড়ি এসে থামল একটা বিশাল রাজকীয় বাড়ির সামনে। গাড়ি কাছে আসতেই দারোয়ান সেই বিরাট গেট খুলে দিল। সারি বেঁধে সব গাড়ি ঢুকে গেল বাড়ির ভেতরে।
একজন দৌড়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিল। প্রেম নেমে সিগারেট ধরাল, দু’টো সুখ টান দিয়ে সেটা ফেলে দিল, তারপর পা দিয়ে পিষতে পিষতে বলল—
বাংলাদেশে যখন চলে এসেছি, তখন এবার সব কুত্তার বাচ্চাদের গর্ত থেকে টেনে বের করব আর আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করব।
এক ঘণ্টার মধ্যে আবার বের হবো, রেডি থাক সবাই।
তারপর চোখের ইশারায় কাউকে ডাকল। লোকটা সঙ্গে সঙ্গেই কাছে এসে দাঁড়াল। প্রেম কানে কানে কিছু বলতেই লোকটা ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি রেখে বলল—
সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে ভাই।
প্রেম হাসল, লোকটার কাঁধ চাপরে বলল—
এইজন্যই তোকে আমার এত ভালো লাগে রে পিয়াস, তোর মুখে আমি কোনোদিন না বলতে শুনি নায়। পারবো না হবে না শুনি নায়।
পিয়াস হাসতে হাসতেই চলে গেল কাজে প্রেমের বলা কাজ করতে। প্রেম শরীরটা টানা দিয়ে ঘার ফুটিয়ে চুলে বেক ব্রাশ করতে করতে বলল—
চল রে,ওই জানোয়ারের বাচ্চাটাকে কবর পাঠায়ে আসি। অনেকদিন হলো এগুলোতে হাতে দিইনি, আজ ওকে দিয়েই শুরু করব।
প্রেম হাটতে হাটতে পাশে থাকা ছেলেটার দিকে ফিরে বলল—
এই মালটা তুললি কিভাবে? রাজের লোকেরা তো শিকার ছাড়ে না।
ছেলেটা বলল—
ওরা ওটাকে বেঁধে রেখেছিল এক গাছের সাথে। হয়তো ওরা হাকলা হতে গিয়েছিল ভাই, সেই সুযোগে তুলে দিয়েছি।
শুনে প্রেম দাঁড়িয়ে গেল, কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর উচ্চস্বরে হেসে উঠল—
সালা তোরা এত বোকা কেন? রাজ শিকদারের শিকার তোলা এত সোজা না রে বলদ! ওই রাজ ইচ্ছে করেই তোদের হাতে ওটাকে তুলতে দিয়েছে। হয়তো বুঝে গিয়েছিলো তোরা ওদের ফলো করছিস আর তোরা আমার লোক তাই ওটাকে তোদের কাছে ছেড়েছে। ওই সালা বহুত চালাক। হাসতে হাসতে মানুষ মারা ওর স্বভাব বুঝলি?তোদের কপাল ভালো যে রাজ বুজেছে তোরা আমার লোক নয়লে ফলো করাই তোদের পাছায় এমন বাশ দিত আহ করার ও সুযোগ পেতি না— ওই বেটা রাজ শিকদার গভীর জলের মাছ, ওর শিকার ও না চাইলে তোরা কেন তোদের বাপও তুলতে পারবে না।
এই বলে প্রেম হাসতে হাসতে পা বাড়াল বাড়ির পেছন দিকে, একটা বন্ধ ঘরের দিকে।
ঘরে ঢুকে প্রেম দেখল—একজন লোক সাদা এপ্রোন পরে কিছু কাচের গ্লাসে লাল, নীল, সবুজ রঙের নানা রকম তরল জাতীয় কিছু নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে। সেটা দেখে প্রেম হেসে বলল—
আরে বস, দেখি কাজে লেগে গেছেন গুড!
লোকটা তাকিয়ে প্রেমের দিকে সুন্দর করে হেসে বলল—
তুই কিছু করতে বললি আর আমি করব না, তা হয়?
প্রেম হেসে উঠল। দু’জনে কুশল বিনিময় করল। তারপর প্রেম গেল সেই টাকলা লোকটার কাছে—যার হাত-পা বাঁধা, চেয়ারে আটকে রাখা।
প্রেম বলল সেই এপ্রাোন পরা লোকটার দিকে ফিরে বলে—
তোর কাজ কতদূর, ভাই?
লোকটা বলল—
ডান। তুই শুরু কর।
প্রেম হাসল, টাকলা লোকটার সামনে বসে বলল—
কিরে চু*** ভাই, তোর নাকি অনেক হেডাম? গলার জোর আবার নাকি পাওয়ারও আছে? তো তোর সেই পাওয়ার কার লগে মা*রা দিতে গেছে রে, যে তুই এখন এখানে?
লোকটার চোখে মুখে আতংক সে এতক্ষনে ভালোই বুজে গেছে-
সে সাপ লেজে পা দিয়ে ফেলছে, ভুল জায়গায় নিজের পাওয়ার দেখিয়েছে, ওরা যে সাধারন কেউ না তা তো মেহরিনদের কাছে কেলানি খেয়েই বুঝেছিল। তার সামনের লোক টাও যে ওদের এই এটা বুঝতে তার বেগ পেতে হলো না। এখন শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছে… যদি কোন ভাবে বাঁচে, দেশ ছেড়ে চলে যাবে।
প্রেম চিবুকে হাত দিয়ে বলল—
ভাবছি তোর কলিজাটা আমি ওজন করব। না মানে দেখতে চাই কতটুকু ওজন যে, আমার মেহু পাখির সামনে দারালি আবার হেডাম ও দেখালি। ভাবছি তোর জিহ্বাটাও কাটব। ওই যেই গলার কন্ঠনালির সাহায্যে গালি দিয়েছিলি? সেটাই একটানে বের করব। আগে তোর গলায় একটা করাক মাল ঢালব, বেসস একদমই বেশি কিছু করব না, বেশি কষ্টও দিব না। আমি খুব দয়ালু, বুঝলি? মানুষের কষ্ট আবার আমার সয্য হয় না।
প্রেম আবার হঠাৎ বলল—
উফফ, সরি! তুই তো আবার এই চোখ দিয়ে তাকিয়েছিস। আচ্ছা তবে আগে চোখ দিয়েই শুরু করি বলেই, পাশে থাকা একটা ঢালা থেকে একটা কাঁচি তুলে নিল আর তা ঢুকিয়ে দিল লোকটার ডান চোখে। তারপর বাঁ চোখে। একবার না,দুইবার না একসাথে পাঁচ-ছয়বার। লোকটা আগেই আধা-মরা ছিল, এত আঘাত আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারাল।
প্রেমের এত ধৈর্য নেই, তাই আর জাগাল না। পাশে থাকা লোকটার দিকে তাকাতেই লোকটা এসে একটা যন্ত্র বসিয়ে দিল সেই টাকলা লোকের মুখে, যাতে মুখ খোলা থাকে। হলোও তাই যন্ত্রটা লোকটার মুখে দিতেই মুখটা এত বড় হা করে রইলো।
প্রেম বলল—
এবার দে ভাই।
ওই এপ্রোন পরা লোকটা একটা গ্লাস এগিয়ে দিল প্রেমের দিকে। সতর্ক করে বলল—
সাবধান ভাই, এটা খুব মারাত্মক জিনিস। হাতে যেন না লাগে, সাথে সাথে হার অবধি গলে যাবে।
প্রেম মাথা নাড়ল। তারপর গ্লাসের তরল টা ঢেলে দিল লোকটার মুখে। সাথে সাথেই লোকটার মুখ গলতে শুরু করল।
প্রেম তাকাল এপ্রোন পরা লোকটার দিকে। লোকটা বলল—
আমি কি করব? এটা দিলে এমনই হবে। কত কেমিকেল মেশানো আছে জানিস?
প্রেম বিরক্ত হয়ে গেল। কারণ সে আসলে জিহ্বা কাটতে চেয়েছিল, কন্ঠনালি টেনে বের করতে চেয়েছিল। কিন্তু কিছুই করতে পারল না, ওই তরল পড়তেই মুখ-জিহ্বা-সব গলে যাচ্ছে।
ওদিকে টাকলা লোকটা চেয়ার উল্টে পড়ে গেল। কাঁতরাতে কাঁতরাতে মুহূর্তেই মারা গেল। কারণ ওই তরলটা গলা বেয়ে পেটেও নেমে গেছে আর সব গলিয়ে ফেলেছে।
প্রেম বিরক্ত মুখে বেরিয়ে গেল। যাওয়ার আগে শুধু বলল—
এটাকে সমুদ্রে ফেলে দিস।
বিকেল ৪টা। সবাই রেডি হচ্ছে বিয়ের শপিং-এ যাবে বলে।
মেহরিন বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছিল। সে রেডি, এখন শুধু বাচ্চাদের খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে বের হবে।
রাজরা ফিরেছে সেই দুপুরে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাচ্চারা খেয়ে ঘুমিয়ে গেল।
মেহরিন কুলসুমকে ডাকল—
বাচ্চাদের সঙ্গে এ ঘরে থাকতে।
কুলসুমও তাই করল। আর বাকিরা মিলে বেরিয়ে পড়ল শপিং মলের উদ্দেশ্যে।
আরফা আসতে চাইছিল না, কিন্তু মেহরিন আর মেহেরের বকাঝকায় আসতেই হলো।
তিনটে গাড়ি করে সবাই রওনা দিল। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা পৌঁছে গেল শপিং মলে।
চেলেগুলো আজ যেন সিনেমার নায়কের মত লুক নিয়েছে! প্রত্যেকেই হাঁটছে ও হিরোর মত।
ছেলেরা আগে আগে যাচ্ছে আর মেয়েরা পিছন পিছন যাচ্ছে,মেয়েরাও কম নয়—সবাই একেকজন সুন্দরী টার পর ও একটু সেজে গুজেই এসেছে।
ছেলেরা হাঁটছে সামনে সামনে, মেয়েরা তাদের পেছন পেছন।
হঠাৎ রাজ পিছনে এসে লামিয়া আর মহবুবাকে কিছু একটা বলল, তারপর আবার সামনে এগিয়ে গেল।
মেহেররা হাঁটছে, এমন সময় মেহরিন হঠাৎ কিছু শুনে থেমে গেল।
বাকিরাও দাঁড়িয়ে পড়ল।
মেহের জিজ্ঞেস করল—
কী হয়েছে? কোনো সমস্যা?
মেহরিন মুচকি হেসে বলল—
বুজলি তো আজ বাসায় ফিরে একজনের ‘মান্জা মারা’ বের করব।
সবাই হাসে বুঝল, মেহরিন রাজের কথা বলছে।
মেহরিন হাসি থামিয়ে বলল—
জাস্ট ওয়ান মিনিট।
সে একটু পেছনে গিয়ে দুই মেয়ের কাছে দাঁড়াল। ওরা মূলত রাজকে নিয়ে ফিসফিস করছিল।
লাল টপস পরা মেয়ে বলছিল—
দেখ, দেখ! ওই ব্ল্যাক শার্ট পরা ছেলেটা কী হট! উফফ, I like him yeer!
এই কথাটা ভুলবশত মেহরিনের কানে চলে গেল।তাই সে থামে।
মেহরিন মেয়েটাকে বলল—
ব্ল্যাক শার্ট পরা মালটা সেই-ই তো না?
মেয়েটা হেসে উঠল—
উফফ, সিস্টার, মাল বলো না! He is so hot and handsome. পুরো চকলেট বয়ের মতো।
মেহরিনও হেসে বলল—
হট, হ্যান্ডসাম হলে কী হবে, ওই মালটা বুড়ো। বয়স ৩০-এর ওপর! শুধু তাই নয়, ওই মাল টা আবার দুই বাচ্চার বাপ।
কিন্তু মেয়েটা মেহরিনের কথা বিশ্বাস করল না। সে হেসে উড়িয়ে দিল—
তাতে কী? আমি ওর ২ নাম্বার বউ হতেও রাজি আছি। কি হট দেখেছো?
মেহরিন হাসে হেসে চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে বলল—
হট তো হবেই, সেই হ্যান্ডসাম চকোলেট বয়টা যে আমার মাল!
মেয়েটা মেহরিনের কথার ধরন বুঝতে পারল না, তাই মজা করে হেসে বলল—
না সিস্টার, he is mine! I want him. আমি চাই ও আমার হোক।
এইবার মেহরিনের মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে গেল। কী বেয়াদব মেয়ে! একে তো তার সামনে তারই জামাইয়ের প্রশংসা করছে, আবার তার সতীনও হতে চাইছে, আবার বলে কিনা ওকে চাই।
মেহরিন মেয়েটার মুখের সামনে নিজের মাথা নিয়ে ফিসফিস করে বলল—
You know sister, আমি কিছু বিষয়ে খুব হিংসুটে। আর তুমি আমার সামনেই আমার জামাইকে হট হ্যান্ডসাম চকলেট বয় বলছো, আবার বিয়ে করতেও চাইছো? বলি, সামলাতে পারবে তো ওকে?
মেয়েটা ভেবেছিল মেহরিন রাজের কাজিন, তাই মজা করছে। সে হাসতে হাসতে বলল—
আমাকে সতিন বানিয়ে নাও প্লিজ! আমরা দু’জন মিলে সেই চকোলেট বয়কে ভাগাভাগি করে খাবো, সংসার করব।
মুহূর্তে পরিবেশ পাল্টে গেল। এতক্ষণ যারা হাসছিল, সবাই আতঙ্কিত হয়ে গেল।
সবাই বুঝল, এখন কিছু একটা হবে।
মেহরিন মেজাজ হারিয়ে গেল সে সোজা মেয়েটার চুল ধরে বলল—
এখানেই তোকে মেরে পুঁতে দেব! তোর এই সুন্দর টানা টানা চোখ দুটো উপড়ে ফেলব মিনিটের মধ্যে। যে মুখ দিয়ে আমার জামাইকে নিয়ে কথা বলেছিস, সেই মুখে এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেব। ওটা তোর আব্বা বুঝেছিস?
আজ থেকে যেখানেই ওকে দেখবি, আব্বা ডাকবি।
মেয়েটা চেঁচিয়ে উঠল—
কিসের আব্বা ডাকব? ওকে আমি জান ডাকব, বাবু ডাকবো, কলিজা, বেবি, সোনা ডাকবো। আমি কোন দুঃখে আমার ক্রাশ আব্বা বলতে যাব?
এমন কথা শুনে মেহের, চুমকি, আরফা, মহবুবা, লামিয়া, রাহি—
সবাই কপাল চাপড়াল।
মেহরিন বাঁকা হাসল। সে মেয়েটার চুল ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে কিছুটা পিছিয়ে গেল,এরপর হঠাৎ মুহূর্তেই ঘুরে গিয়ে চড় বসাল। একটা না, দুটো না—
প্রতিটা গালে টানা দশটা করে চড় মারল মেহরিন!
মেয়েটার ফরসা গালে লাল দাগ বসে গেল, ঠোঁটের কোণা দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল।
সে চেষ্টা করেও নিজেকে বাঁচাতে পারল না।
রাগে মেহরিনের চোখে পানি চলে এলো।
সে মেয়েটার গলা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল—
আমার স্বামী, আমার ভালোবাসা, আমার কবি সাহেবের দিকে যদি চোখ তুলেও তাকাস,
সেই চোখ আমি উপড়ে ফেলব। জানে মেরে দিবো একদম। তোকে মেরে ফেললেও এক বিন্দু দোষী মনে করবো না নিজেকে ভালোবাসায় সব জায়েজ।
ভালো করে কান খুলে শুনে রাখ,বাস্তবে তো দূরের কথা,ভুলবশত স্বপ্নেও যদি দেখিস আমার স্বামীকে,তাহলে জেনে রাখ—
সেই স্বপ্নটাই হবে তোর জীবনের শেষ স্বপ্ন। তোর জীবন কে জাহান্নাম বানিয়ে দিবো, ছারখার করে দিবো।
আমি যেমন ভালো,তেমনি ভয়ঙ্কর ও খারাপও।
আমাকে তুই চেনিস না।
আমার স্বামী আর সন্তানদের জন্য
হাসতে হাসতেই ১০–১২টা লাশ ফেলতে দু’বার ভাববোও না আমি।
মেহরিনের গলার স্বর, চোখের দৃষ্টি,
হাতে থাকা শক্তি—সবকিছুতে যেন একসাথে আগুন আর বরফ জমে আছে।
মুহূর্তেই চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—
এত বড় কাহিনি, এত গণ্ডগোল, তবু আশেপাশে কোনো ভিড় জমল না।
জমবেই বা কি করে? শপিং মলটা যে আগে থেকেই বুক করা এখানে বাহিরের মানুষ ঢুকাও নিষেধ।
ওই দুই মেয়ে টাকা দিয়ে ঢুকেছিল।
তাই যা-ই ঘটুক, আশেপাশে কেউ আসেনি,আর না আসবে।
পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে দেখে মেহের এগিয়ে এলো। সে মেহরিনকে জোরে ধরে বলল—
মেহু Control yourself! এটা পাবলিক প্লেস। অনেক হয়েছে এখন বাদ দে।
তারপর টেনে হিঁচড়ে মেহের মেহরিনকে নিয়ে চলে গেল।
যাওয়ার সময়ও ওই মেয়ের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ছিল মেহরিন ।
মেহরিনদের চোখের আড়াল হতেই কয়েকজন এসে সেই দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল।
সন্ধ্যা ৭টা।
একসাথে চারটা গাড়ি এসে থামল বাংলাদেশের নামকরা এক বারের সামনে।
গাড়ির দরজা খুলে দিল একজন।
প্রথম গাড়ি থেকে নেমে এল প্রেমনেওয়াজ।
সাদা শার্ট, তার উপর কালো ব্লেজার, সাথে কালো প্যান্ট—পুরো কিল্লার লুকে।
নেমেই সে বাঁকা হাসি দিয়ে বলল—
কাজে লেগে পড়ো। সময় মাত্র পাঁচ মিনিট।
কথাটা বলেই বারের ভেতরে ঢুকে পড়ল প্রেম।
বারের ভেতরে তখন রঙিন পরিবেশ—
ধনী পরিবারের বখে যাওয়া ছেলে-মেয়েরা
ড্রিঙ্ক করছে, গান বাজছে, নাচছে। বারে তখন একটা ডিজে চালাচ্ছে “অন দ্য ফ্লোর”
লাল নীল সবুজ ঝকমকে আলোয় সবাই মাতাল আনন্দে।
প্রেম ঢুকেই শরীর দুলিয়ে নাচতে নাচতে
কাউন্টারে গেল।একটা ড্রিঙ্ক অর্ডার করল।
ওয়েটার দিল, প্রেম গ্লাস হাতে নিয়ে এক ঢোঁক খেল। তারপর চোখ ঘুরিয়ে চারপাশটা পর্যবেক্ষণ করল।
গ্লাস ফাঁকা করেই সোজা মাঝখানে গিয়ে
নাচতে শুরু করল সবার সাথে।
আর ঠিক তখনই—
কাউন্টডাউন—
1… 2… 3…
হঠাৎ সিকিউরিটি অ্যালার্ম বেজে উঠল।
চারদিক কেঁপে উঠল।ভিড় জমে থাকা মানুষ একসাথে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল।
প্রেম সুযোগ বুঝে পাশের লোকটাকে চাপা গলায় বলল—এখানে বোম আছে।
কথাটা মুহূর্তের মধ্যে বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে পড়ল। ভিড়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে গেল।
ধনী ছেলেমেয়েরা জীবন বাঁচাতে
চিৎকার করে দরজার দিকে দৌড় দিল।
কেউ পড়ে যাচ্ছে, কেউ ঠেলাঠেলি করছে—
কয়েক মিনিট আগেও যেখানে গান-নাচে ভরে ছিল,সেখানে এখন শুধু আতঙ্ক আর হাহাকার।
সবাই বেরিয়ে যেতে দেখে প্রেম বাঁকা হাসি দিয়ে বলল—
আমার পাখির দিকে হাত বাড়িয়েছিলি? ক্ষতি করতে চেয়েছিলি সেই ছোট ছোট দুটো প্রাণের। আমি এগুলো কি করে মেনে নিই বলতো? আমাকে কেউ কিছু দিলে বিনিময়ে আমি তাকে অনেক বড় কিছু ফেরত দেই। বড় মনের মানুষ কিনা। সে যাই হোক তোর তো মা*রা খাওয়ার খুব শখ। এই জন্যই আমার পাখি ও তার সন্তানদের দিকে হাত বাড়িয়েছিস। আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। লারা তো একটু দিবই এমন লারা দিব যে তোর দুনিয়া নড়ে যাবে। আগে আমার দেওয়া মা*রাটা হজম করে নে। রেডি থাকিস খুব তাড়াতাড়ি আরো বড় মা*রা খাবি সেটা দিবে স্বয়ং রাজ শিকদার।
শুনে রাখ—শুধু তোর বার নয়,তোর সবকিছু একে একে ধ্বংস করব আমি। তোর জীবনকে জাহান্নাম বানিয়ে দেবো। তুই শুধু দৌড়ের উপর থাকবে এখান থেকে। রেডি হো নিজের অধঃপতনের জন্য। কার দিকে হাত বাড়িয়েছিস তা হাড়ে হাড়ে টের পাবি।তোর বাপের থেকেও ভয়ংকর মৃত্যু হবে তোর। তোকে নিয়ে দাঁড় করাবো মৃত্যুর দৌড় গরায়।এমন সময় আসবে তুই মৃত্যুর ভিক্ষা চাইবি কিন্তু তোকে তা দেয়া হবে না। সবচেয়ে নিশংস মৃত্যু হবে তোর সেটা হোক আমার হাতে বা রাজের। তবে আমি তোকে কুত্তার মতো দৌড় করাবো। গান বাজাবো আমি নাচবি তুই। তুই যেই গর্তেই লুকিয়ে থাক সামনে এবার তোকে আনবই।
এটাতো সবে শুরু রে, দেশে তোর যত বার শপিংমল হোটেল আছে সব একে একে ধ্বংস করে দিব।
আই প্রমিজ।
এ কথা বলে সে বেরিয়ে এল।
গাড়িতে উঠে কয়েক কিছু দূর এগিয়ে
হঠাৎ গাড়ি থামাল।
হাতে ধরা রিমোটার একটা বোতাম টিপল প্রেম।
আর মুহূর্তের মধ্যে—
কিছুক্ষণ আগের সেই আলোকোজ্জ্বল বার যেখানে মানুষে গিজগিজ করছিল, নাচছিল গাইছিল ড্রিংস করছিল সেই বার এখন
ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে জ্বলে উঠল আগুনে।
দাউ দাউ করে পুড়ছে,
যেখানে সবে মানুষের ভিড় ছিল।
দূর থেকে সেটা দেখে প্রেম এক শিষ বাজাল,
গান ধরল,
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭৪
He is a bad boy..
with a tainted heart..!!
and even I know this ain’t smart.!!
but mama I’m in love with a-
criminal..!🫶
গান শেষ এ বললো,
চল, টান দে।