মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ১১
সাদিয়া
সূরের কুসুমকোমল মিষ্টি আভা ছড়িয়ে গিয়েছে চারিদিকে। মাথার উপর তপন মেলে ধরলেও খুব বেশি তেজ লাগছে না গায়ে। শহরের মতো ঝলসানো গরম টা নেই এখানে। শীতের আগাম বার্তা এই হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে। শত শত ট্যুরিস্টের ভীড় আনাগোনা। তবুও ইহাম কপাল কুঞ্চন করে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে মায়রার দিকে। ভেতরের মিহি শঙ্কা তাকে এই মুহূর্তে নির্বোধ করে দিয়েছে পুরো দমে।
ওই তো চোখের সামনে ভাসছে মায়রার ভীত সংশয় ঝাপটানো কাতর মুখশ্রী টা। খুব ধীরে ইহাম আবার তাকাল মায়রার পায়ের দিকে। রেলিংএর গা ঘেঁষে তার পা টা বেকায়দায় পড়ে আছে। সেটা কি ওই বোকা গাধা মেয়েটা বুঝতে পারছে না? আরেকটু বেকায়দা হলে সোজা পা ভাঙ্গবে নয়তো একদম পগারপার।
শিফু আতঙ্ক নিয়ে একদম মায়রার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। যেন সে মায়রার ভেতরেই লুকিয়ে যাবে। এদিকে ভীত ত্রস্তে কাবু হয়ে থাকা মায়রার দিনদুনিয়া ভুলে তাকিয়ে আছে ইহামের দিকে। তার মূল চিন্তার বিষয় এখন হবে টা কি? ওই লোকটা এভাবে নিভৃতে তাকিয়ে আছে কেন? এটা বুঝতে মনোযোগ সেদিকে দিলে শিফুর আরেকটু গা ঘেঁষায় মনে হলো সে নিজের পায়ের উপর ব্যালেন্স রাখতে পারল না। আচমকা শরীর দুলিয়ে তার মনে হলো কোনো একটা অঘটন ঘটে গিয়েছে। বুকটা ধক করার সাথে সাথে কম্পিত ভারসাম্যহীন শরীরটা নড়েচড়ে উঠল। কিছু বুঝে উঠার আগেই পায়ের ব্যথায় মুখ খিঁচে রাখল সে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ধীরেধীরে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতে পেল ইহাম হাটু ভাঁজ করে তার সামনেই বসে আছে। চোয়াল শক্ত দৃঢ় করে পা টা ছেড়ে অগ্নিচক্ষু নিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। কিছু বলা কিংবা বুঝে উঠার আগেই মায়রার গালে ঠাসস করে একটা চ’র বসিয়ে দিল সে। অনাকাঙ্ক্ষিত এক চরে ভীষণ লজ্জা বিচলতায় মায়রা আর মাথা তুলে তাকাল না। ইহাম তখনো ক্রোধে জ্বলতে থাকা দুটি চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে মায়রার দিকে। এখনি যদি ছুটে এসে পা টা না সামলাতো তাহলে কোন ভয়াবহ কাজটা হতো এ নিয়ে মেয়েটার কোনো ধারনা আছে? উপস্থিত অনেক মানুষ উৎসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও কেউ কেউ সেদিকে পাত্তাও দিল না। পাশেই তুহিন দাঁড়িয়ে ছিল। শিফু ভয়ে তার পিছনে লুকিয়ে আছে। তুহিনের বাকি বন্ধু গুলিও নির্বাক উৎসুক নজরে তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিক। কিন্তু তুহিন কেমন যেন ফুঁসে উঠল। বিষয়টা তার একটুও ভালো লাগল না। এতগুলি মানুষের সামনে বোনের গায়ে হাত তুলাটা একদমই মেনে নিতে পারছে না সে। চাঁপা ক্ষোভ নিয়ে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইহাম হাত বাড়িয়ে তাকে থামতে ইশারা দিল। বিক্ষুব্ধ স্বরে হিসহিস করে ইহাম জানাল,
“আর একটাও কথা বলবে না তুমি তুহিন। একদম চুপ। এত ম্যাচিউর হয়েও কি করে এমন নির্বোধের মতো কাজ করতে গেলে তুমি? বাড়ির সবাই কে মিথ্যে বলে কেন ওকেও নিয়ে আসতে গেলে তুমি? তোমার কোনো ধারনা আছে এই মুহূর্তে জায়গাটা কত বিপদজনক? আর শিফু? তুই এখানে কি করছিস হারা’মিরবাচ্চা? তোকে এখানেই পু’তে ফেলব আমি।”
ইহাম তেড়ে আসতেই শিফু একেবারে নিজেকে আড়াল করে নিল। ভাইয়ের সামনে ঠেলে দিল তুহিন কে। তুহিন নীরবে ফুসলেও খেয়াল দিয়ে তাকাল ইহামের দিকে। তাকে কেমন উদভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছে। ব্যগ্র বিচলিত ভাব ছেলেটাকে অস্থির ব্যাকুল করে তুলছিল। সবকিছু কেমন ছন্নছাড়া লাগছে। সাজানো পরিকল্পনাটা বিগড়ে গিয়ে মেজাজ চটিয়ে দিচ্ছে তার। ছক ছন্দপতনের ক্ষোভটা তার মুখে হিংস্র ভাবে ফুটে উঠছে। সে আবার পা বাড়াল মায়রার দিকে। মেয়েটা এখনো মাথা তুলে তাকায়নি পর্যন্ত। নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে দেখে সেটাও বুঝি তার মনঃপুত হলো না। বিদ্বেষে তার বাহু চেঁপে চিবিয়ে বলল,
“এই মেয়ে, বাসার সবাই কে মিথ্যে বলে কেন এখানে আসলে? নীরব না থেকে আন্সার দাও ড্যাম ইট।”
ইহাম মায়রার বাহু শক্ত হাতে খামছে রেখেই ঝাঁকিয়ে উঠল তাকে। মেয়েটা একদম নির্লিপ্ত নিস্তেজ ভাবে তখনো মাথা নুয়ে রেখেছে। ভুলক্রমেও একটিবার নতমস্তক উপরে তুলে তাকায়নি তার দিকে। তার লম্বা উন্মুক্ত চুল দিয়ে মুখের একপাশ একেবারে ডেকে আছে। চোখের কুর্নিশ বেয়ে পড়া শুভ্র কণা একপল দেখে ছেড়ে দিল মায়রার বাহু। খামছে রাখা হাতটা আস্তেআস্তে ঢিলে করে দূরে সরে এলো। এক পাশে গিয়ে চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড নীরবেই ভাবল কিছু। এখনি এদের সবাই কে এখান থেকে পাঠিয়ে দিতে হবে। ইমিডিয়েটলি ওদের এই জায়গা থেকে দূরে সরাতে হবে। তাহলে সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক করতে খুব বেশি ঝামেলা পুহাতে হবে না। ইহাম মায়রার দিকে তাকাল। ওর করুণ মুখটা দেখে আচমকা হুহু করে উঠল হৃদয়টা। কোথাও যেন উৎপীড়ন অনুভব করল খানিক। তবুও নিজেকে সামলে ফোঁস করে দম নিল। ক্ষীণ গলায় কিছু বলতে যাবে তার আগেই হট্টগোল লেগে গেল বুঝি। সবার বিশৃঙ্খল কোলাহলে চমকে ইহাম ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল সেদিকে। একটা লোক চার বছরের একটা বাচ্চাকে রেলিংএর উপরে উঠিয়ে রেখেছে। গলায় ছু’ড়ি ঠেকানো। আস্তেধীরে পি’স্তল ছু’ড়ি দিয়ে ১০ বারো জনকে কাবু করে নিল দুর্বৃত্তের নয়জন লোক।
অতর্কিত হামলায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছে ইহাম নিজেও। আচমকা সে চোখের পলকেই প্যান্ট থেকে নিজের পি’স্তলটা তাক করল রেলিং এর উপর বাচ্চাটার গলায় ছু’ড়ি ধরা লোকটার দিকে। মুহূর্তে হাউকাউ ছুটোছুটি শুরু হতেই সন্ত্রা’সবাদী একজন রুক্ষ তিরিক্ষি গলায় চেঁচিয়ে উঠল,
“ওই একদম চুপ কইরা খাড়া কইতাছি। নয়তো সবকটার মাথার খুলি উড়াইয়া দিম।”
সবার মাঝে আতঙ্ক ছেয়ে গিয়েছে। শুধু কান্নাকাটি আর চাঁপা আর্তনাদের সুর খালি। ইহামের ইশারা দেওয়াতে তার বাকি দুই সঙ্গিও নিজেদের রি’ভেলবার তাক করেছে ধ্বংসকদের দিকে। ইহাম শান্ত স্বরে বলল,
“আপনারা কেউ ঘাবড়াবেন না। আমরা প্রশাসনের লোক। আপনারা প্লিজ একটু নীরব থাকুন। কোঅপারেট করুন আমাদের সাথে।”
“তুই আমাদের বা* ছিড়তে পারবি? আমাদের ওস্তাতের কথা পরে। পা’ছার মোড়ে ঘুইরা দেখ একবার হালা বাই*”
ইহাম সতর্কতার সাথে পিছন ঘুরল। চোখের সামনের করুণ দৃশ্যটা একদম তাকে বিহ্বল করে দিতে সক্ষম হলো। মায়রার ভয়ার্ত শঙ্কিত চোখ মুখটা সরাসরি তার বুকে বিঁধল তীক্ষ্ণ বাণের মতো। হৃদপিন্ড কামড়ে উঠল তার। নাম মাত্র এক সম্পর্কের জোরে ওই মেয়েটার জন্যে তার ভেতরটা এত চিনচিন করছে? কেন ওরা এখানে আসতে গেল? তার সব পরিকল্পনা ছিন্নভিন্ন করে তাকে এমন অসহায় পরিস্থিতিতে কেন ফেলল মায়রা? মায়রার গলায় খুব জোড়ালো ভাবে ধরে রাখা ছু’ড়িটার দিকে তাকিয়ে এক মিনিটের জন্যে নিজেকে উন্মত্ত লাগল নিজের কাছে। মায়রার ভীত শঙ্কিত চোখ জোড়া তার ভেতর কাঁপিয়ে অস্থির করে তুলল। ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করল সে। হিংস্র দাবানল টা চেঁপে কন্ঠে লঘু তেজ মিশিয়ে বলল,
“রিলেক্স, ওদের সাথে তো ঝামেলা নেই। ওদের ছেড়ে কথা বল।”
খ্যাঁকখ্যাঁক করে হেসে উঠল মায়রার গলায় ছু’ড়ি ধরা লোকটা। ওর এই হাসি শরীরের রগ গুলিকে দাপিয়ে তুলল ইহামের। তবুও কঠিন মুহূর্তে নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করল। দৃঢ় মনোবলের অসীম সাহসী ইহামটাও যেন নিজ জায়গা থেকে পিছলে যাচ্ছে।
“তোদের দুইজনের গভীরতা অনেকক্ষণ ধইরা খাড়াইয়া দেখছি। কি হয় জানি না তয় কামে লাগার মতো মাল।”
দাঁত খিঁচে আনল ইহাম। বিদঘুটে হেসে লোকটা মায়রার গলায় আরেকটু চাঁপ প্রয়োগ করতেই মেয়েটা অসহায়ের মতো গলা টানটান করে আনল। এই মুহূর্তে ভেতরটা ব্যাকুল ব্যগ্র হলেও খুব বেশি প্রকাশ করছে না সে। নিজেকে একেবারে ধীরস্থির করে রাখল কেবল।
ইহাম তীক্ষ্ণ নজরে এদিক ওদিক তাকিয়ে সবটা পর্যবেক্ষণ করল। এই মুহূর্তে এতএত মানুষের ভীড়ে তার সবচেয়ে বিপদজনক লাগছে। রেলিং এর উপর বাচ্চা মেয়েটা আর তার ব্যাকুলতার কেন্দ্র বিন্দু জুড়ে থাকা মায়রা। নিজেকে একটু ধাতস্থ করল সে। খুব গোপনে তার আরো ৪ জন সঙ্গিও মিলে গেল ওই আতঙ্কিত মানুষের ভীড়ে। নীরবে কিছু একটা ইশারায় বুঝি দিতেই সে আবার তাকাল মায়রার দিকে। শান্ত নির্লিপ্ত চাউনি। লোকটা বিশ্রী ভাবে এক হাতে চেঁপে রেখেছে মায়রার হাতটা। সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর দিল ইহাম। একটু আগে নিজেও যে স্বেচ্ছায় খামছে ধরেছিল তার দিকে কোনো খেয়াল নেই। অথচ এখন রাগে ফুঁসছে। টগবগ করছে ভেতরটা।
তুহিনের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করল বোনের জানের শঙ্কায় নিজের প্রতি কোনো ভয় ঢর দেখাচ্ছে না সে। তাকে নীরবে তার বন্ধুরা বুঝি আটকে রেখেছে ওখানে যেতে। দৃষ্টি ঘুরাতে ইহাম কাশল। তুহিন তার দিকে তাকাতেই সংগোপনে কিছু ইশারা করল সে। কে জানে ছেলেটা তার ইশারার সঠিক মানেটা বুঝল কি না। যদি একটুও কোনো কিছু হেরফের হয় তবে মায়রার জীবন সংকটে। ভয়াবহ বিপত্তির মুখে।
খুব চতুরতার সাথে তুহিন এক চুল একচুল করেই বুঝি পাশ কাটিয়ে গেল। রেলিং এর কোণ ঘেঁষে দাঁড়াল। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার। হাত পা কাঁপছে। নিজের প্রতি ভরাসও পাচ্ছে না। শুকনো ঢোক গিলে সে ইহামের দিকে তাকাল। সে কথার দ্বারা ব্যস্ত রাখছে লোকটাকে। সেই ফাঁকে চোখের আভাসে বুঝিয়ে দিল আস্থা টা। শুকনো ঢোক গিলে তুহিন ফোঁস করে দম ছাড়ল। ইহাম আবারও ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল পিছন দিকে। যে লোকটা বাচ্চাকে রেলিং এর উপর দাঁড় করিয়ে রেখেছে তার উপর। ঠিকঠাক লক্ষ্য টা ধরিয়ে দিতেই লেগে গেল তুমুল ভয়াবহ কান্ড।
তুহিন যেমন মায়রার গলায় ছু’ড়ি ধরা লোকটার হাত চেঁপে ধস্তাধস্তি শুরু করেছে ঠিক তেমন করেই রেলিং এর উপর দাঁড় করিয়ে রাখা বাচ্চাটাকে একদম ঝড়ের বেগেই ইহামের এক সৈনিক বাঘের থাবার মতো টেনে এনেছে নিচে। দুটি কাজ একেবারে একই সঙ্গে তড়িৎ বেগে করা হয়েছে। আকস্মিক কাণ্ডটায় সবাই হকচকিয়ে গিয়েছে।
ইহামের গাইডে থাকা মোট ১১ জন সৈনিক এখানে উপস্থিত। অতর্কিত ঘটনাটা সামাল দিতে খুব একটা ঝামেলা তাদের পুহাতে হয়নি। এক সঙ্গে সবার আক্রমণের ফলে মজিদ পাহাড়ির ৯ জন লোক অনায়াসে কাবু হলো তাদের কাছে। তখনই এগিয়ে আসা একদল সেনাবাহিনীর কাছে তাদের হ্যান্ডওভার করা হলো। আজ যে এখানে কিছু একটা হবে তারা আগে থেকেই জেনে বুঝে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। মজিদ পাহাড়ির লোকেরা ভুলক্রমেও আগে থেকে টের পায়নি কিছু। নয়তো খেলাটা বেদিকে ঘুরতে কিংবা তাদের প্রস্তুতি নিয়ে আসায় মোড় নিতে এক চুল এদিক ওদিক হতো না।
মায়রার গলায় ছু’ড়ি ধরা শ্যামলা বর্ণের লোকটার বয়স বোধহয় ৩৪ এর উপরে। সে ক্ষোভান্বিত গলায় বলল,
“তোরে ওস্তাদ দেইখা লইব।”
ইহাম শুনল সেটা। মুচকি হেসে একপা বাড়িয়ে বলল,
“তোর ওস্তাদ আমার বা’ল ছিঁড়বে। শ্যাম্পু লাগিয়ে যত্ন করে রাখব বলিস তারে।”
প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ছিল লোকটা। সেদিকে ইহান আর দ্বিতীয় বার তাকালই না। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল মায়রার দিকে। শিফু আর তুহিন তাকে অভয় জানাচ্ছে। ইহাম শান্ত পায়ে এগিয়ে গেল সেদিক। একেবারে মায়রার সামনে দাঁড়াল সে। মায়রা এবার বিস্মিত বিমূঢ় নয়নে দেখল ওই ধারালো তলোয়ারের মতো মুখখানা। দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললে কেমন অস্বস্তি হলো তার। তবুও পারল না নিজের বেহায়া নজরটাকে সংযত করতে। কেমন কাঠকাঠ গলায় জিজ্ঞেস করল,
“অল রাইট?”
মায়রা জবাব দিতে পারল না। কেবল মানুষটার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছে তার নির্লিপ্ত চাউনি। ভাইকে দেখা মাত্র শিফু একটু চেঁপে দাঁড়াল। তুহিনের থেকে খানিক দূরত্ব রেখে। তুহিন সেটা পরখ করে তাকাল ইহামের দিকে। তখনকার ওই রাগের সবটা বুঝল তুহিন। ফলশ্রুতিতে ভেতরের বিদ্বেষ শিথিল হলো তার।
“কারো কাছে পানি আছে? থাকলে ওকে দাও।”
ইহাম কথা শেষ করেই ডিউটিরত একজন সেনাবাহিনী কে একটু দূরে নিয়ে কিছু বলল। এমন ভয়াবহ কাণ্ডে এমনিতেই মানুষের ভীড় কমে গিয়েছিল। এরপর আস্তেআস্তে সকলকে জায়গা খালি করতে বলা হলো। একেএকে সবাই চলে গেলে ইহাম পা বাড়াল মায়রাদের দিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ে মায়রাকে দেখল একপল। ভেতরটা হঠাৎই এত শীতল বাতায়নে পূরণ হলো কেন? পরক্ষণে সামলে বলল,
“যেভাবে এখানে এসেছো ঠিক সেভাবেই আজ বান্দরবন থেকে ঢাকায় ফিরবে সকলে। নয়তো বান্দরবনের বান্দর দিয়ে তোমাদের চুল ছিড়াবো।”
ইহামের কথায় সবার মাথায় ভাঁজ ভেঙ্গে পড়ল? কি বলে এই লোক? এত কষ্ট করে গাড়ি রিসার্ভ করে এসেছে কিছু দেখলও না অথচ এই লোক কেমনে এসব বলে? তুহিনের সব বন্ধুরা কপাল কুঁচকে সন্দিহানি নজরে তার দিকে তাকাল। তার মানে কি নিজেদের সাথে দুই লেডিস আনার অপরাধে তাদের বয়কট করা হচ্ছে বান্দরবন থেকে? কি ঝঞ্ঝাট ব্যাপারস্যাপার। ইহাম সবার দিকেই চোখ বুলাল। অতঃপর শান্ত রাশভারী কন্ঠে বলল,
মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ১০
“আগামী দুইদিন হয়তো সব ট্যুরিস্ট এড়িয়া বন্ধ থাকবে নিরাপত্তার জন্যে। সেখানে আর্মির টহল চলবে কেবল। এখানে যদি ঘুরতেই না পারো তবে থেকে কি করবে তোমরা?”