মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৬

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৬
সাদিয়া

অনেকক্ষণ যাবত তুহিন শিফু কে কল করছে। কিন্তু মেয়েটা পাষণ্ডর মতো তার কল এড়িয়ে যাচ্ছে। ইহাম বলার পর থেকে এ যাবত সে আর শিফুকে কল দেয়নি। তবে এই রাতের আঁধার, পরিবার, প্রিয়জন, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হাহাকার তাকে চুপ থাকতে দিচ্ছে না। অবাধ্য পিছুটান বারবার হাতড়ে ডাকছে তাকে এই নিকশকালো আঁধারে। বারবার কল দেবার পরও যখন শিফু রিসিভ করছে না দেখে অগত্যা সে ফোনে ম্যাসেজ পাঠায়।
“দূরেই তো চলে যাচ্ছি। দেশ ছেড়েই চলে যাচ্ছি। এমনকি তোমার মন থেকেও বহু দূরে চলে গিয়েছি হয়তো। এখন তো একটু কথা বলো। একটু অন্তত মায়া করো আমার উপর। কলটা রিসিভ করো প্লিজ। আমি বড্ড একা বোধ করছি শিফু।”

বয়ঃসন্ধির ছোট্ট মনটা আর নিজের শক্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি শিফু। হৃদয়টা হু হু করে কেঁদে উঠেছে। কাছের প্রিয় মানুষটার হাহাকার তার কঠোর ভীত ভেঙ্গেছে বলেই নিঃশব্দে মায়রা কে বলে সে ঘর থেকে বের হয়েছে। আস্তেধীরে বাড়ির এক কোণায় গিয়ে দাঁড়াল। এই সাথেই আবার কল এলো তুহিনের। কাঁপা গলায় ঢোক গিলল মেয়েটা। ওপাশ থেকে ভগ্নহৃদয়ের কম্পিত গলায় “হ্যাঁলো” শব্দটা শুনে সর্বাঙ্গে শিউড়ে উঠেছে শিফুর ষোড়শী কায়া। ভেতরটা ধকধক করে হাতুড়ি পেটার শব্দ লাগছে। বুকের ভেতর খুব ব্যথা অনুভব করছে। গলা দিয়ে বিপরীত শব্দ তুলতে কেমন যেন আটকে আসছে। কান্না গুলি বুঝি গলায় এসে ঠেকেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অনেকক্ষণ নীরবতা চলল। ফোনের দুই পাশ থেকে দুই মানব মানবী গভীর নীরবতায় যেন নিজেদের না বলা কথা, যন্ত্রণা, হতাশা গুলি উগলে দিচ্ছে। ইশশ নীরব থেকেও যেন একে অন্যকে কত কথা বলছে। গাঢ় ভাবে দুজন দুজনকে অনুভব করে নিচ্ছে নিঃসংকোচে। তাদের চাওয়া এক হয়েও যেন বাস্তবতা তাদের কে দুইপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। সেখান থেকে না একে অনেকে নির্দ্বিধায় ধরা যায় আর না সব পিছু টান ফেলে কাছে আসা যায়।
“কথা বলবে না শিফুয়া?”

কোমল আদুরে গলা পেয়ে শিফুর বড্ড কান্না পেল। গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছা হলো,
“তুহিন ভাই আমার আপনার জন্যে বড্ড মন কেমন করে। আমার খুব কষ্ট। আশেপাশের সব কিছুতে আমি আমার একাকীত্ব খুঁজে পাই আপনার জন্যে।”
আচ্ছা তুহিন কি তাকে অভিমান করে কিংবা রাগ করে এই প্রথম শিফুয়া নামে ডাকল? এর আগেও ডেকেছিল কি? কই তার তো মনে পড়ে না। তাদের যে খুব বেশি কনভারসেশন হয়েছে এমনটাও নয়। তবুও তার ষোড়শী মন ওই কোরিয়ান দেখতে ছেলেটার জন্যে কেমন কেমন করে। ভেতর গহীন বড্ড জ্বালা করে তার। আচ্ছা ভাইয়ার যুক্তিটা কি আসলেই বাস্তবিক? তাহলে তুহিনের যুক্তিটাও কেন বিবেচনা করা হলো না? এই যে দুদিক থেকে দুইটা মানুষ একই ভাবে একই কারণে আলাদা, মাঝের অদৃশ্য দেওয়ালের কারণে কষ্ট পাচ্ছে তার কি কোনো অর্থ পোষণ করে না?

“কথা বলবে না শিফু?”
গলায় খুব যন্ত্রণা হচ্ছে ঢোক গিলতে। অবাধ্য কষ্ট গুলিকে ভাইয়ের মুখের দিক তাকিয়ে গিলে ফেলার চেষ্টা করল সে। কোনো রকম জবাব দিল,
“জ জ্বি বলুন।”
ওপাশ থেকে তুহিন শান্ত শীতল কন্ঠে জানতে চাইল,
“খুব ভালো আছো তাই না?”
“আপনার জন্যে আমার হৃদয় পুড়ছে আর আপনি কিনা আমায় বলছেন আমি ভালো আছি? মানুষ হৃদয় কেন দেখতে পায় না? ভেতরের কথা গুলি কেন প্রকাশিত হয় না না বললে?” মনের গহীনে কথা গুলি আসলেও অদৃষ্টের বন্ধনে গলা দিয়ে আর বের হলো না শিফুর। উত্তর দিল,

“হুম।”
“বিয়ে খেতে ফেণী গিয়েছো। নিশ্চয় অনেক মজা করছো।”
“বিয়েতে তো মানুষ এটাই করে তাই না? বিয়েটা তো আর দুঃখ কষ্টের নয়।”
“অথচ আমার বেলায় তোমরা কৃপণতা করলে সকলে।”
তুহিন ম্লান হাসল। বুকের চিনচিন ব্যথাটা তার বাড়ছে। মেয়েটা ভাইটার মতোই পাষাণ। কোনো অনুভূতি কোনো কিছুর ধারধারে না। সে শুধুশুধু একা একা নিজের অনুভূতিগুলির জন্যে ওই স্বার্থপর নিষ্ঠুর মেয়েটার কারণে কষ্ট পাচ্ছে।

“আমার জন্যে তোমার একটুও খারাপ লাগে না তাই না শিফুয়া?”
“আপনার জন্যে আমার বুকটা ফালাফালা হয়ে যায় তুহিন। কি নিষ্ঠুর বোকা আপনি না বললে কিছুই বুঝতে পারেন না।” মনের কথা গুলি মনেই চেঁপে রাখল শিফু। ঠোঁটে ব্যথাতুর তাচ্ছিল্য হাসি তুলে জবাব দিল,
“যে খারাপ লাগার আদৌত কোনো ভবিষ্যৎ নেই তা মনে পুষে রেখে লাভ কি? আপনিও বরং খারাপ লাগা গুলি দূর করে দিন। আপনিও ভালো থাকবেন।”
“তুমি আসলে খুব স্বার্থপর মেয়ে। তোমার কারণে আমার হৃদয় খণ্ডবিখণ্ড হচ্ছে আর তুমি কেমন কঠোর হয়ে আছো। শা’লা আমার জন্যে তোমার একটু মায়া দয়াও হচ্ছে না।”
“আপনার জন্যে যে আমার হৃদয়টাই নীরবে নিঃশব্দে জ্বলেপু’ড়ে যাচ্ছে তার বেলায়? সে খুঁজ তো আপনি জানেন না। কই আমি তো আপনায় দোষারোপ করছি না।” মনে মনে কথা গুলি ভেবে তুচ্ছ হাসিটা চওড়া করল শিফু। কথা বলতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে তার। গলা টা যে ভার হয়ে আসছে যন্ত্রণায়।
“বাদ দিন সেসব। নতুন জীবনে পা রাখছেন সব ভুলে সব নতুন করেই শুরু করুন। যা হবার সামনে ভালোই হবে।”

“তোমরা ভাই বোন মনে হয় শা’লা আমার কেচ্ছা খতম করার জন্যে উঠে পড়ে লাগছো। আমার অনুভূতি গুলার কোনো দামই পাইলাম না তোমাদের কাছে। শা’লা দুনিয়া সবটাই স্বার্থপর।”
তুহিন যে খুব ক্ষোভ নিয়ে কথাটা বলেছে তা বেশ বুঝা যাচ্ছে। তার ভেতরের যাতনা আরো বাড়ল। গাঢ় হলো দহন। যে দহনের খুঁজ পৃথিবীর আড়ালে। এমনকি যার জন্যে এতটা যাতনা পুষে রেখেছে মনের গহীনে সে নিজেও জানে না। তার ছোট্ট হৃদয় যে এত দহন নিতে পারছে না। সেটা কাকে বুঝাবে সে? শিফুটা ফোনটা একটু দূরে নিয়ে সময় করে তীব্র নিশ্বাস ফেলল। যেন তার সাথে বের হয়ে এসেছে এক দলা যন্ত্রণার অগ্নিকুণ্ড।
“যেখানে দুনিয়া স্বার্থপর সেখানে অন্যের জন্যে খারাপ লাগাটা বোকামি নয়কি তুহিন ভাই?”
“চুপ। আমি তোমার ভাই না। আমার সাথে একদম বড় বড় কথা বলতে আসবে না।”
তুহিন যে বেশ ক্ষোভ নিয়ে কথা বলছে তা বুঝায় যাচ্ছে গলার আওয়াজে। ছেলেটা বুঝি জ্বলছে। শিফু চুপটি করে চোখ বুজে থাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটা সময় যাওয়ার পর আবার তুহিনের করুণ গলা শুনা যায়। ধরে আসা গলায় আহ্লাদী স্বরে বলে উঠল সে,

“তোমাদের সবার সব কথা মেনে নিলাম। বেকার কিছু করিনা বলে আমার কথা না হয় তোমরা নাই’ই শুনলে। কিন্তু আমার জন্যে অপেক্ষা করো শিফু? ভিনদেশে গেলে বেশি কিছু না আমি যখন তোমায় কল দিলে আমায় একটু সঙ্গ দিও প্লিজ? তোমার দূরত্বটুক আমায় বড্ড পুড়াবে শিফু।”
তুহিন কি কাঁদল? গলাটা কেমন কেঁপে উঠল না তার? এদিকে শিফুর ভেতরটা গরম খুন্তি লাগার মতো ছ্যাঁত করে উঠল। নিশ্বাসটা তার আটকে আসবে আসবে। ঝাপসা চোখ আর কম্পিত দেহ নিয়ে কল কাটল। শরীরটা অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। তিড়তিড় করছে ঠোঁট গুলি। কান্না গুলি আটকে রাখছে বলে কি ভেতরটা আরো বেশি কষ্টের দামামা বাজাচ্ছে? নীরব পীড়ার আন্দোলনে নেমেছে তারা? তার কি একটু কাঁদা উচিৎ? আর সবার মতো চিৎকার করে ভেতরটা পরিষ্কার করা উচিৎ নয়কি?

ঝাপসা ঘরটায় অদৃশ্য এক অবয়ব এখনো মায়রা কে ঝাপটে ধরে রেখেছে। মুখের উপর এখনো শক্ত ভাবে চেঁপে রেখেছে বলিষ্ঠ হাতটা। আতঙ্কে শঙ্কায় শরীর কাঁপছে মায়রার। চোখ গুলি সংশয়ে ত্রাসে কোঠর থেকে বের হবার উপায়। মুখ চেঁপে ধরায় নিশ্বাস নিতে কষ্টই হচ্ছে এক প্রকার। পেছনের অবয়ব যে বেশ শক্তিশালী তা সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। এক হাতে তাকে এমন ভাবে পেঁচিয়ে ধরেছে যে দুই হাতও নাড়াতে পারছে না। নিজের অসাড় শরীরটা পেছনের মানুষটার দখলে কাবু হয়ে আছে। হৃদয়টা দুরুদুরু করে কুডাক ডাকছে। মনে বারবার উঁকি দিচ্ছে কে হতে পারে মানুষটা? এমন অচেনা অজানা এক পরিবেশে এভাবে অসভ্যতা কেই বা করতে পারে? হুট করে তার মস্তিষ্ক সংকেত দিল হাসিবুল্লাহর। ঘৃণায় গা টা রি রি করে সঙ্গেসঙ্গে। রাগে চোয়াল শক্ত হয়েও এলো। এবার একটু সাহস নিয়েই নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে ছটফট করে উঠল মেয়েটা। গলায় ওড়না নেই। কাঁধ উন্মুক্ত। সেখানে পেছনের মানুষটার গরম নিশ্বাস পড়তেই শরীরটা জ্বলে উঠল মায়রার। মনে হলো তখনের সেই হাসিবুল্লাহর বিশ্রী হাসিটা। শরীরের সব শক্তি জমা করে এবার মুচড়ে উঠল ছুটবার আশায়। খুব বেশি নড়াচড়াও করতে পারছে না পেশিবহুল হাতের জোরে। সময়টা তিক্ত বিষাক্ত হয়ে এলো তার কাছে। ছুটবার আপ্রাণ চেষ্টা চালালেও উপায় হচ্ছে না। তবে কি বাজে কোনো পরিস্থিতির স্বীকার হবে সে? কেউ আসছে না কেন? এত অসহায় লাগছে কেন তার? ভেতরটা তীব্র যন্ত্রণায় ব্যাকুল হয়ে লুটিয়ে পড়ছে অসাড় বস্তুর মতো।

তাকে ছটফট করতে দেখে পেছনের মানুষটা এবার তাকে তড়িৎ বেগে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। লাইটের উল্টোপিঠে হওয়ায় ক্ষীণ আলোতে খুব বেশি দেখা গেল না মানুষটার মুখ। আর না সে দেখতে চাইল। তার ভেতর আর মস্তিষ্ক প্রবল ভাবে বারবার একটা সংকেত দিল তাকে ছুটতে হবে। এই বদ্ধ ঘর থেকে বের হতে হবে।
একটু ফাঁক পেতেই জান হাতে নিয়ে দৌড় দিতে চাইল মায়রা। তার আগেই শক্তপোক্ত হাতটা টেনেই ওই অবয়ব নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিল। কোমরে হাত পেঁচিয়ে নিজের সাথে চেঁপে ধরতেই বিতৃষ্ণা অনুভবে মুখের আদল বদলে গেল মায়রার। এই দুর্বিষহ মুহূর্তে মস্তিষ্ক তাকে যতটুক ধারনা দিল সে ঠিক ততটুকই করল। এই রাতের আঁধারে কোনো রকম চিৎকার চেঁচামেচি না করে আচমকা সে ওই মানুষটার বুকে সর্বশক্তিতে কা’ম’ড়ে ধরল। আকস্মিক ব্যথার জোয়ারে হাতের বাঁধন শিথিল হতেই ছিটকে সরে গেল মায়রা। চুলে হাত বুলিয়ে কোনো রকম দৌড়ে রুম থেকে বের হওয়ার পূর্বেই রাশভারী গম্ভীর কন্ঠে শুনা গেল “মায়রা” ডাকটা। এমন একটা অপ্রত্যাশিত সময়ে পরিচিত ডাকটা শুনে চমকে উঠল মায়রা। বিস্ময় নিয়ে সামনে তাকাল কপাল কুঞ্চন করে।

লাইটের আলোয় ঘরটা ফকফকে হতেই অবিশ্বাস্য ভাবে চোখের সামনে ভেসে এলো কাঙ্ক্ষিত চিরপরিচিত মুখটা। অস্ফুট হতবিহ্বল কন্ঠে বলে উঠল “আপনি?” সামনের মানুষটার চোখ মুখে তখন বিরক্তের ভাব। কপালের চামড়া এক করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে মুখে এখনো মেয়েটার বিস্মিত কুটিল ভাব।
“এভাবে কেউ কা’মড় দেয় মাথামোটা বলদ?”
লাইট অন করে দরজার সামনেই চোখ মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে ইহাম। ব্লু কালার শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খুলে রাখা হয়েছে। বাম পাশের কলারটা সরানোতে ধবধবে উন্মুক্ত বুক স্পষ্ট। বুকের বা পাশটা টকটকে লাল বর্ণ ধারন করে আছে। সেদিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে আবার বলল ইহাম,
“দেখেছো কি করলে? আরেকটুর জন্যে র’ক্ত বের হতো। তুমি এত রাক্ষস মায়রা?”

কটমট চোখে রাগান্বিত ভাবে মায়রা তাকিয়ে রয়েছে ইহামের দিকে। বুকের লাল অংশ সবটাই দেখছে। তবুও তাতে তার আফসোস নেই। তার অবচেতন মন বারবার হাসিবুল্লাহর নাম আওড়াচ্ছিল। তাই মানুষটার কোনো কিছু সে তোয়াক্কায় আনেনি। ভ’য়াবহ পরিস্থিতিতে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য মায়রা ঠাউরও করতে পারেনি লোকটার অবয়ব। নিজেস্ব মানুষটাকে দেখে স্বস্তির চেয়েও বেশি রাগ লাগছে তার। কটমট করে আগুন চোখে বলল,
“উচিৎ ছিল ভ্যাম্পায়ারের মতো আপনার গলায় কা’মড় দিয়ে মাংস টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলা। অসভ্য পুরুষ মানুষ।”
মায়রা আগুন লাল মুখ দেখে বেশ মজা পেল ইহাম। কেমন সুস্নিগ্ধ একটা প্রশান্তির বাতায়ন তাকে দুলিয়ে নিয়ে গেল। মেয়েটার রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠে সে। গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল মায়রার অস্থির ভাবে নেওয়া ঘনঘন নিশ্বাস গুলির দিকে। ইহাম ঠোঁটের এক কোণে অদ্ভুত ভাবে হাসি ঝুলিয়ে ঘোরঘোর চোখে এগিয়ে এলো মায়রার দিকে। মোহ ভরা কন্ঠে ফিসফিস করল,

“ভ্যাম্পায়ারদের ভালোবাসা কিন্তু গভীর আর চিরস্থায়ী হয়। ওরা ভালোবেসে নিজের অধিকার বোধ থেকে যেমন অতি রোমান্টিক হয় তেমনি ধ্বংসাত্মকও হতে পারে। তুমি কি এমন কিছুই হতে চাইছো নাকি মায়রা।”
তাকে ধরার জন্যে ইহামের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা এক ঝাটকায় সরিয়ে দিল মায়রা। দাঁত কেটে ক্রোধে বলল,
“একদম আমাকে ধরতে আসবেন না। আপনি কি মানুষ এরকম কেউ করে?”
ইহাম তীক্ষ্ণ চোখে খেয়াল করল মায়রা কে। মেয়েটা কি এত ভয় পেয়েছে? এখনও কেমন থেমে থেমে নিশ্বাস নিচ্ছে। যেন ভেতর থেকে এখনো তরাসের লেশটা কমাতে পারেনি।

“আমি জানতাম তুমি মাথামোটা তাই বলে যে এত মোটা তা জানতাম না। এত ভয় পাবার কি আছে? আমার স্পর্শ তুমি চিনো না? আমি ছাড়া কেইবা তোমায় এমন করে জড়াবে?”
ইহামের অবোধ বেখাপ্পা প্রশ্নে শরীরে আরো আগুন জ্বলল। কটমট চোখে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দিল মায়রা,
“কেন আপনার বানানো আত্মা। যার ভয় দেখিয়ে ছিলেন আপনি।”
“মানে?”
মায়রা জবাব দিল না। নিজের অস্বস্তির লাগাম টানার চেষ্টা করল। আসলেই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। আতঙ্কে এখনো ভেতরটা প্রবল বেগে উঠানামা করছে। চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টানল। শরীরটা এখনো খানিক কাঁপছে তার। কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে চোখ খুলে পরিস্থিতিটা বুঝল। নিজের গায়ের দিকে তাকিয়ে ওড়না না পেয়ে কিছুটা বিব্রত বোধও করল। ছুটে গিয়ে বিছানা থেকে ওড়না টা আনার পূর্বেই ইহাম খপ করে ধরল। শক্ত হাতে পেঁচিয়ে আনল মায়রার কোমর।

“হচ্ছে কি ছাড়ুন বলছি।”
ইহাম জবাব দিল না। বরং ঠোঁটে হাসি তুলে মায়রার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মায়রা সরু চোখে দেখল ইহাম কে। চোখে মুখে কেমন মোহিত, তীব্র মাদকতা ভাব। কিভাবে বিভোর চোখের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এক নিমিষে মায়রা সব কিছু ভুলে গেল। দিনদুনিয়া ভুলে ডুব দিল লোকটার ওই গভীর চোখের চাউনিতে। ভেতরে কোমন উথালপাতাল ঢেউ তৈরি হলো।

কপালে ঘামে লেপ্টে থাকা চুল গুলি কে আলতো করে ইহাম সরিয়ে দেয়। কানের পিছনে খুঁজে দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ললাটে গভীর চুমু খেলো। তৃপ্তিময় আবেশে মায়রা চট করেই চোখ বন্ধ করে অনুভব করল তা। পরক্ষণে কাল বিলম্ব না করেই আঁটসাঁট করে জড়িয়ে ধরল তাকে। মেয়েটাকে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে আলাদা একটা শান্তি অনুভব করল বুঝি। ঠোঁটের কোণটা আলগোছ প্রসারিত হলো মনের অনুভূতির খেলায়। কেমন আরামবোধ করল।
অনেকটা সময় দুটি পবিত্র শরীর একে অন্যের সাথে লেপ্টে থেকে নীরবে অনুভূতির আদানপ্রদান করল যেন। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাওয়া মায়রার মুখ লুকাতে ইচ্ছা হলো। দ্রুত ইহামের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে গেল বিছানায়। বালিশের কাছ থেকে গায়ে ওড়নাটা জড়িয়ে নেয় ইতস্তত বোধের সাথে। তা দেখেও মুচলি করে হাসে ছেলেটা।

“আপনি এখানে কি করছেন?”
“বারে তুমি না বললে স্বামী বউ বউ করে না তাই বউও স্বামী স্বামী করে না? এই জন্যই আমি ছুটে চলে এসেছি বউ কে স্বামী স্বামী করাবো বলে।”
“মা মানে?”
মায়রার ভড়কে যাওয়া ভাব দেখে দুষ্টু হাসি ফুটল ইহামের ঠোঁটে। আরেকটু এগিয়ে বলল,
“মানে হলো বউ কে জমপেশ ভালোবাসা দিয়ে স্বামী স্বামী করাবো। নারী লোকদের মতো ছেলেদের তো আর আঁচল নেই তাই ভালোবাসাতেই বাঁধতে হবে। নয়তো বউ আবার স্বামী স্বামী করবে না। আর যদি হয় তোমার মতো স্বেচ্ছায় ভালোবাসা চেয়ে নেওয়ার বউ তাহলে তো আরো বেশি করে এপ্লাই করতে হয়।”
“দ দেখুন। একদম উল্টাপাল্টা ক কথা বলবেন না।” একটু রাগ দেখানোর চেষ্টা করে গলার স্বর মোটা করল মায়রা। “আপনার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? এখানে আসলেন কি করে? চাকরি নেই আপনার? দুদিন পর পর ছুটি দেয় কে আপনাকে?”

ইহামের চোখে মুখে তখন দুর্দান্ত দুষ্টুমিরা খেলা করছে। মায়রার লজ্জায় রঙ্গিম হয়ে যাওয়া মুখশ্রী, জড়তায় তোতলানো কথা, ইতস্তত ঢাকার মেকি রাগ সব কিছু সে উপভোগ করছে। সে নিজের মতো করেই মায়রার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে নরম গলায় জবাব দিল,
“গাড়ি করে পায়ে চড়ে এসেছি। কেন বলো তো? চিন্তায় আছো নাকি আমায় নিয়ে? হু হুম? আর চাকরি নেই কে বলল তোমায়? দায়িত্বের জন্যেই তো এসেছি।”

“এখানে আবার কি কাজ আপনার? আর আপনি আমার কাছে আসছেন কেন? দূরে যান। দূর হাটুন।”
ইহাম কোনো রকম নিষেধের তোয়াক্কা না করে একদম কাছে গেল মায়রার। মেয়েটা খানিক আড়ষ্টতায় পিছাতে পিছাতে একদম বিছানাতেই দপ করে বসে পড়ল। ইহাম বিছানায় দু হাতের ভর দিয়ে তার দিকে ঝুঁকতেই অনেকটা নিজেকে বিছানার সাথে লাগিয়ে নিল। কথা বলতে গলা কাঁপছে। তবুও শীর্ণ স্বর উঁচু করতে বলল,
“একদম কাছে আসবেন না আমার। আপনি একটা অসভ্য মিথ্যেবাদী লোক। দূরে যান আমার থেকে।”
ইহামের রাগ হলো না। বরং বেশ আনন্দ পেল স্বীয় স্ত্রী নামক মেয়েটার এমন খামখেয়ালিতে। ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণায় ক্রুর হাসিটা দেখা গেল। মুখটা আরেকটু মায়রার দিকে এগিয়ে নিয়ে জবাব দিল ফিসফিস করে।

“তোমরা স্ত্রীরা এই অসভ্য শব্দটা বলে কি পাও বলো তো? স্ত্রীদের কাছে স্বামীরা আজন্মেও অসভ্য হয় না। সেটা যতই গভীর নিলজ্জ মার্কা কাজ হোক না কেন। তুমি সেসব বুঝবে না। এখনো বয়স হয়নি। তবুও প্রতিনিয়ত এই শব্দটা উচ্চারণ করে কি মজা পাও তোমরা?”
মায়রা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। তার ফ্যালফ্যাল চোখের দৃষ্টি সরছেই না লোকটার উপর থেকে। কি বলে এই লোক? তার বয়স হয়নি? সে ছোট, কিছু বুঝবে না? তবে সেদিন রাতটা কি ছিল?
“আসো বউ তোমাকে স্বামী স্বামী করানোর প্রক্রিয়া শুরু করি।”

থতমত খেয়ে গেল মায়রা। বিস্মিত বিবশ চোখে তাকিয়ে রইল ইহামের দিকে। লোকটা এমন বেপরোয়া হয়ে গেল কেন হঠাৎ? কোথায় গেল তার সেই চেনা কঠিন খোলস? পাষণ্ডের আবরণ? মোহে গ্রাস হওয়া আঁখির দৃষ্টি খানিক বেপরোয়া ও অসংযত দিকের ইঙ্গিত পেয়ে থমকে গেল মায়রা। জড়তায় ভেতর সংকোচিত হয়ে এলো তার। মানুষটার আরো একটু অগ্রসর তার বুক পিঞ্জিরার ঢিপঢিপ ধ্বনি প্রখর করে তুলছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রসঙ্গ পাল্টাতে গলা কাশল মায়রা। শুকনো ঢোক গিলে ইতস্তত বোধ নিয়ে বলল,
“আ আপনি আমায় মি মিথ্যে কথা কেন বলেছিলেন? আগে থেকে স সবটা জানালে আমি সাবধান হতে পারতাম। এত ভণিতা করলেন কেন?”
হঠাৎ এমন কথায় থমকায় ইহাম। মায়রার দিকে ঝুঁকেই কপাল সরু করে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। মৃদু কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“কি বললে?”

ইহামের প্রশ্নে মায়রা বোকার মতো এদিকওদিক তাকায়। বিষয়টা এই মুহূর্তে তুলা কি ঠিক হলো? একটু সময় নিয়ে ধীরে বললে হতো না? তার যে বড্ড অস্বস্তি হচ্ছিল। পেটের ভেতর কেমন সুড়সুড়ি লাগছিল। এইযে লাজুকতায় তার কায়া দুলছে, গলা শুকিয়ে আসছে।
জহুরী চোখে ইহাম পরখ করল মায়রা কে। সামথিং ইজ রং। ইহাম মায়রার থেকে খুব দূরে গেল না। বরং বিছানায় ঠেসে দেওয়া নিজের হাত দুটি আলগা করে হাটু মুড়ে বসল নিচে। পায়ের কাছটায় ইহাম কে এভাবে বসতে দেখে আহাম্মক হয়ে যায় মায়রা। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। পরক্ষণে নড়েচড়ে উঠলে ইহাম আলতো হাতে তার দুই হাত নিজের মুঠোয় পুরে নেয়। কোমল কন্ঠে শুধায়,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড মায়রা? ডো ইউ ওয়েন্ট টু সে সামথিং মি?”
ইহামের এই ব্যবহার এই কোমলতা মুগ্ধ নজর সব যেন মায়রা কে গুলিয়ে দিচ্ছিল। একটা সূক্ষ্ম বিভোরতায় ডুবে যাচ্ছিল মেয়েটা। কিভাবে কি উত্তর দিবে কিছু মাথায় আসছে না তার। কেবল মাত্র মানুষটার এই মায়া মায়া মাদক মেশানো মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে।
“আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো মায়রা? কিছু হয়েছে কি এইটুক সময়ে?”
মায়রা কেবল মোহাগ্রস্থ মানবীর মতো এদিকওদিক মাথা দুলিয়ে অসম্মত জানায়। তার চোখের পাতা স্থির। মানুষটার মাঝে এক দৃষ্টে ডুবে গিয়েছে যেন।

“মায়রা মেজাজের দফারফা না করে কিছু হলে বলো। রাগ না উঠিয়ে চুপচাপ বলে ফেলো। কেউ কিছু বলেছে কি? কোনো খারাপ ব্যবহার?”
“যা করার আপনার বানানো ভূতই করেছে।”
“হাসিবুল্লাহ!” মাথা নিচু করে চিবিয়ে নামটা বিড়বিড় করল। এভাবেই বসে রইল কিছুক্ষণ। তড়িতে আবারও মায়রার দিকে তাকাল সে। “কি করেছে আবাল টা?”
মাথা নুয়ে নিল মায়রা। ইহাম একটু সময় দিলেই মেয়েটা ধীরেসুস্থে আগাগোড়া সবটা জানাল। ইহাম অনেকক্ষণ থম মেরে বসে কিছু একটা ভাবল। পরক্ষণে ক্রুর হাসি তুলে বলল,

“মুখটা তালপাতার সেপাই এর মতো না করে এবার একটু হাসো মাথামোটা গবেট।”
“এভাবে বললে কেউ হাসতে পারবে?”
“পারবে, হাসবেও। বেয়াদবের মতো মুখে মুখে তর্ক না করে হাসো তো একটু।”
মায়রা গাল ফুলিয়ে দিল। কপট রাগ দেখানোর চেষ্টা করে বলল,
“আপনার মতো রসকষহীন মানুষই পারবে এভাবে বলার পরও হাসতে। আমাকে হাসতে বলছেন তাও ধমকে। ওভাবে আমি হাসতে পারব না। আপনি সবসময় আমাকে বেয়াদব মাথামোটা গবেট গর্দভ বলেন।”
“তো বলব না? তোমার মতো বলদি কে আরো বেশি মিষ্টি নামে ডাকা যায়?”
“আপনি বলতে চাইছেন এগুলি মিষ্টি নাম?”
“নয়তো কি? এরচেয়ে বেশি মিষ্টি নামে ডাকা যায় না। তুমি তো জানো আমি মিষ্টি পছন্দ করি। অতিরিক্ত মিষ্টি ভেবে পরে তোমাকেই গিলে ফেলব। আর তুমি আমার পেটে গিয়ে বেয়াদবের মতো কিলবিল কিলবিল করবে। পরে হবে আরেক বিপদ।”

মায়রা ফিক করে হেসে উঠল। তার হাসির দিকে ইহাম বিভোর হয়ে তাকিয়ে আছে। অন্য জনের হাসি দেখেও কি এত আনন্দ তৃপ্তি পাওয়া যায় নাকি? কই আগে তো এরকম টা অনুভব হয়নি। তবে আজ শান্তি শান্তি লাগছে কেন?
“ইহাম বাবা? কিরে খাবি না? টেবিলে ভাত দিয়েছি। খেতে আয়।”
মায়রা হাসি থামিয়ে চকিতে তাকায় বদ্ধ দরজার দিকে। সে উঠতে চাইলে ইশারায় ইহাম বুঝিয়ে দেয় “আমি খুলছি।”
দরজা খুলতেই শিরিন বেগম বললেন,
“কিরে বাবা? খাবি না? বাহির থেকে খেয়ে এসেছিস নাকি?”
“না মা। ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুমি যাও ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে।”
“সেকি কথা? খাবি না? একা একা পারবি?”
“মায়রা তো আছেই।”

ছেলের মুখ দেখে মুচকি হেসে উঠলেন শিরিন বেগম। কিভাবে এলো, কেন এলো সেসব কিছু জিজ্ঞেস না করে তিনি চলে গেলেন মিঠিমিঠি হেসে।
ইহাম দরজাটা লাগিয়ে আবার মায়রার কাছে এলো। মেয়েটা তখনো বসে আছে। আলতো করে মায়রার গালে চুমু খেয়ে নরম তীক্ষ্ণ গলায় বলল ইহাম,
“ছাতার মাথা মুখে সবসময় হাসি রাখতে পারো না? এমন লাল হচ্ছো যে কিনা কি করে ফেলছি তোমার সাথে। প্রসেসিং কিন্তু এখনো শুরু হয়নি আমার পিচ্চি মিসেস চৌধুরী।”
“অসভ্য একটা পুরুষ হয়ে গেছেন আপনি।”
ঠোঁট টিপে হেসে ইহাম চুপচাপ ওয়াশরুমের দিকে এলো।

শিফু অনেকক্ষণ সময় পর নিজেকে কিছুটা ঠিক করল। আর আবেগি ছোট্ট মনের যন্ত্রণায় চোখ গুলি ফুলে উঠেছে। নিজেকে লুকানোর অভিপ্রায়ে দ্রুত রুমের দিকে গেলে শিরিন বেগম পিছন ডেকে উঠেন। শিফু নাক টেনে দাঁত খিঁচে দাঁড়াল। মাথাটা নুয়ে রেখেছে একদম। যেন মা কিচ্ছুটি দেখতে না পায়। চোখ দেখলেই উনি হাজারটা প্রশ্ন করতে ভুলবেন না।

“ওই রুমে যেতে হবে না শিফু। তোর ভাইয়া এসেছে।”
“ভাইয়া?”
“হুম। তুই বরং দখিনের রুমটায় চলে যা। আমি তোর নানী আর তুই ওখানেই থাকব।”
“কিন্তু আম্মু ভাইয়া এই সময়ে? ছুটি পেয়েছে?”
“কি জানি? কিছু তো বলল না। কাল সকালে জিজ্ঞেস করব। তুই ঘরে যা আমি এখনি আসছি।”
“আচ্ছা” বলে শিফু আগে ছুটে একটা ওয়াশরুমে গেল। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলে এতটা বিষাদ দেখাবে না চেহারা। এতক্ষণ মায়ের দিকে তাকায়নি সে। একবার দেখলেই মা বুঝে যেত। পানির বিন্দুবিন্দু কণা গুলি হাত দিয়ে ঝেড়ে শিফু ওয়াশরুমের দেওয়ালে লাগোয়া আড়নার দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ এক নজরে তাকিয়েই থাকল নিজের মুখাবয়বে। পরক্ষণে ওষ্টে তুলল একটু বাঁকা হাসি। ঠোঁট নাড়িয়ে বিড়বিড় করল,
“যার অন্তরে বিষাদ সে আর তা লুকায় কোন উপায়ে? সত্যিই কি তুহিন ভাই আমি খুব বড়বড় কথা বলে ফেলেছি?”

তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ইহাম ঘরে এলো। মায়রা তখন বিছানায় পা ভাজ করে ফোন দেখছে। সেদিকে একপল তাকিয়ে বলে উঠল,
“সারাদিন ফোন টিপো? কি আছে এই ফোনে?”
“মোটেও আমি ফোন টিপছি না। নোটের কিছু পিক তুলে এনেছিলাম সেগুলিই পড়ছি। আমি এত ফোন আসক্ত না।”
“গুড। এই না হলে ফাহাদ ইহাম চৌধুরীর বউ?”
মায়রা ফোনের উপর থেকে নজর সরিয়ে ইহামের দিকে তাকাল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্যাবলার মতো নিজের চেহারা দেখছে লোকটা। কপাল কুঁচকে শুধায় সে,
“এখানে আপনার প্রসঙ্গ আসছে কোন দিক দিয়ে?”

“সে তুমি বুঝবে না। বাচ্চা মানুষ। তোমার মতো তো আর আমি বেয়াদব না তাই মুখেমুখে তর্ক করতে পারবো না। খিদে পেয়েছে চলো।”
“আমি বেয়াদব না। একদম এসব বলবেন না। আর আমি খেয়ে এসেছি। আপনি খান।”
“দেখলে তো মুখে মুখে তর্ক করছো কি করে? প্রমাণ পেয়েছো? তোমার খেতে হবে না তো। তুমি বসে থাকবে আর আমি খাবো।”

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৫

“আপনি খাবেন আমার কেন বসে থাকতে হবে?”
“তোমার কি মনে হয় বউ রেখে একা ঘরে ভাত খাবো আমি? সেই ভাত আমার হজম হবে বলে মনে হয়? মাথামোটা একটা চলো।”

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৭