মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৩৯

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৩৯
সাদিয়া

মায়রা একদম উদভ্রান্তের মতো আচারণ করছে। দেখে মনে হবে কোনো বদ্দউন্মাদ একজন। শরীরে লাগানো অসংখ্য তারগুলি এদিকওদিক হয়ে জট পাকিয়ে গিয়েছে। মাথার চুল এলোমেলো। বেডের উপর বসে উন্মাদের মতো চিৎকার করছে আর চুল টেনে রেখেছে দুই হাতে। পাগলের মতো ছুটে এসে মায়রার এমন করুন হাল দেখে বুকটা মুচড়ে উঠল ইহামের। কলিজা শুকিয়ে এলো তার। দৌড়ে এগিয়ে গেল মায়রার কাছে। মেয়েটা তখনো বেডের উপর বসে থেকে চুল শক্তি দিয়ে টেনে ধরেছে। যেন সবগুলি চুল হাতে তুলে আনবে। গুলিবিদ্ধ বাম হাতে পেঁচানো সফেদ ব্যান্ডেজ টা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হাতে শক্তি প্রয়োগ করছে বলে কাঁচা ঘা থেকে বুঝি র’ক্তে ব্যান্ডেজ ভিজে উঠেছে। কনুই বেয়ে শোণিত উঁকি দিচ্ছে দেখায় যায়। সেটা নজরে আসতেই ইহামের হৃদপিন্ড কা’মড়ে ধরে তীব্র যন্ত্রণায়। মুহূর্তে চোখ গুলি ঝাপসা হয়ে আসতেই দুই হাতে ঝাপটে ধরে মায়রা কে। বেডের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওভাবেই মায়রাকে আগলে ধরে বুকের সংস্পর্শে। গলায় তার কিছু একটা ঠেকে গাঢ় ভাবে। দাঁতে দাঁত পিষে দলা পাকানো দহন গুলি হজম করার চেষ্টা করছে কেবল।

ইহামের শক্ত বাহুডোরেও যেন থাকতে চায় না মায়রা। তীব্র অসহনীয় যন্ত্রণায় আগলে ধরা শক্ত পেশীবহুল বাহুর ভেতরেই ছটফট করে উঠে মেয়েটা। ওই বাহুবন্ধনে থেকেও অনার্গল ডানে বামে মাথা নাড়ায়। চিৎকার করে কাঁদে। ছুটার জন্যে হাসপাস করতে ইহাম আরো প্রগাঢ় করে টেনে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে। দাঁতে দাঁত চেঁপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। ইহাম ব্যগ্র কন্ঠে শুধায়,
“মায়রা? এই মায়রা? জান। কি হয়েছে? প্লিজ শান্ত হোও জান আমার। হোয়াটস রং ইউথ ইউ? আমায় বলো। কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার জান? প্লিজ কুল ডাউন। এমন করো না। একটু শান্ত হোও।”
ফোঁপাতেফোঁপাতে মায়রা দুই পাশে মাথা নাড়াতে নাড়াতে জবাব দেয়,
“আমি.. আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না ক্যাপ্টেন সাহেব।”
বুকটা হাহাকার করে উঠে ইহামের। বুক থেকে তুলে হাত বুলিয়ে চুল ঠিক করে। গালের দুই পাশে হাত রাখে। স্থির ভাবে বুঝানোর চেষ্টা চালায়,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“প্লিজ শান্ত হোও। এমন করো না। ডক্টর দেখছে। কিচ্ছু হবে না। তুমি শান্ত হোও।”
“আ আমার মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে ক্যাপ্টেন সাহেব। প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে। মরে যাচ্ছি আমি। আমার কানে কোনো শব্দ আসছে না। আমি কিছুই শুনতে পারচ্ছি না। কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছি না।”
ইহামের শুভ্র কুচবুচ হয়ে যাওয়া শার্টটা দুই হাতে খামছে ধরেছে মায়রা। হয়তো লম্বা নখ গুলি চামড়াও বেদ করে গিয়েছে। সেদিকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা নেই তার। সে শুধু মায়রা কে সামলাতে ব্যস্ত। ডক্টর নার্স এমনকি মায়রার বাবা মহিন সাহেব আর ইসহাক চৌধুরীও চলে এসেছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তুহিন। তার বুকটা ছটফট করছে। মহিন সাহেব মেয়ের অবস্থা দেখে ডুকরে কেঁদে উঠেই এগিয়ে যেতে চাইলেন মেয়ের কাছে। তখনি ইহাম ইশারায় না বুঝিয়ে দেয়। মায়রা কে এই মুহূর্তে সামলানো খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা সর্বশক্তি দিয়ে চাইছে চুল টেনে ধরতে। ইহাম তার দুই গালে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করতে চায়। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,

“মায়রা। মায়রা প্লিজ লক্ষ্মী টা আমার। শান্ত হোও। জান আমার একটু চুপ করো। ডক্টর কে দেখতে দাও। এসব করো না জান। তোমার শরীরের ক্ষতি হবে। জান আমার একটু শান্ত হোও।”
নিজের বাবা কিংবা শ্বশুর কাউকে তোয়াক্কা করছে না ইহাম। বারবার মায়রার মুখ উঁচু করে নিজে ঝুঁকে নিজের খুব কাছে টেনে আনে তাকে। গভীর ভাবে মেয়েটার আঁখিতে আঁখি রাখে। করুন চাউনি দিয়ে একটু শান্ত হতে ইশারা করে। কিন্তু তার মাথার ভেতরে যে যন্ত্রণার পোকা কিলবিল করে খেয়ে নিচ্ছে মস্তিষ্ক তা কাউকে বুঝাতে পারছে না সে। দাঁতে দাঁত খিঁচে রাখে মায়রা।
“মায়রা। একটু চুপ করে বসো। ডক্টর কে একটু দেখতে দে প্লিজ। এভাবে নিজের ক্ষতি করছিস কেন বুঝতে পারছিস না।”
আবারও ইহাম ঝাপটে ধরে শান্ত করতে চায় মায়রা কে। ইহামের কাঠপেটা বুকের গভীরে জড়সড় হয়ে মায়রা ক্ষীণ আওয়াজে জবাব দেয়,

“আমি ব্যথা সহ্য করতে পারছি না। মরে যাবো আমি। আমার ব্যথা ঠিক করে দিন। আমার ব্যথা কমিয়ে দিন আপনি।”
ইহামের এত অসহায় লাগল বুকের ভেতরটা। সব যেন তার খা খা করছে। এতটা অসহায় কি আদৌও তার কখনো লেগেছিল? ছোটবেলা থেকে বিত্তশালী জীবন পার করে এসেছে। কখনো কোনো কারণে কষ্ট ভোগ করতে হয়নি তার। কর্ম জীবনে নানান রিস্কি কাজ করেছে। মৃত্যু স্বচক্ষে দেখেও এত বিচলিত আর অসহায় বোধ করেনি। তবে আজ বুকের সাথে যে মেয়েটা লেপ্টে আছ তার জন্যে মন কেন উতালা হচ্ছে? হৃদয় জমিনে মরুভূমি নেমেছে? এই করুন কাতর কন্ঠ কেন তার ভেতর দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে?
“দেখো তুমি যদি শান্ত না হোও তবে ডক্টর দেখবে কি করে? ব্যথা কমবে না তো। তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো। ডক্টর কে দেখতে দাও মায়রা।”

“আমি এই ব্যথা আর নিতে পারছি না ক্যাপ্টেন সাহেব। আল্লাহ নিশ্চয় আমার মৃত্যু দিয়েছে এই যন্ত্রণায়।”
বুক কেঁপে উঠল ইহামের। সেই সাথে রাগও হলো প্রচন্ত। ডক্টরের দিকে তাকিয়ে সেই রাগী এক ধমক বসাল,
“মায়রার সমস্যা কি আমার মুখের ভেতর লেখা আছে? দেখছেন না কেন? কেন ট্রিট করছেন না ওকে রাবিশ।”
মায়রা কিছুতেই কারো কথা শুনতে নারাজ। সে শুধু অসহ্য ব্যথায় চুল টানতে চায়। যেটা বারবার বাঁধা দিচ্ছে ইহাম। বিরক্ত হয় সে। নিজেকে ওই লোকটার বুকের মাঝ থেকে সরাতে চায় ঠেলে।
“আমাকে ছাড়ুন। ছাড়ুন আমায়। আমি কানে কিচ্ছু শুনতে পারছি না। আমার চোখ গুলি ঝাপসা হয়ে আসছে। আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছা হচ্ছে মাথা ফাটিয়ে ফেলি। আমার… আমার ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে যাচ্ছে ইহাম।”
মায়রা উন্মাদের মতো নিজের কথা নিজেই বলছে। ডক্টর কে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। উপায়ন্তর না পেয়ে ডক্টর ঘুমের কড়া ইনজেকশন পুশ করতে চায় তার শরীরে। সুই দেখেই আবারও ইহামের বাহু খামছে ধরে মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে ব্যাকুল গলায় বলে,

“আমি সুই দিবো না। আমার শরীরে সুই দিবে না কেউ। আমি কিন্তু সবাই কে একদম মে’রে ফেলব। এখনি বের হয়ে যাও এখান থেকে। সবাই কে কিন্তু মে’রে ফেলব আমি।”
মহিন সাহেব হো হো করে কাঁদে। তুহিন সামলাতে ব্যস্ত হয় বাবা কে। ডক্টর এগিয়ে আসতেই মায়রা চিৎকার করবে ওমনি শক্ত কঠোর হাতে ইহাম চেঁপে ধরে তার হাত। বল প্রয়োগ করে হেচকা টানে নিজের মুখোমুখি করে। রাগি গরম চোখে তাকায় মায়রার নেত্রপল্লবে। মায়রা অবাক হয়ে চেয়ে দেখে ওই রঙ্গিম চোখ। ওই আগুন চোখের ভাষা সে জানে। লাল চোখের চাউনির সাথে সে পূর্ব পরিচিত।

মানুষটা আবার তার দিকে রাগী হয়ে উঠেছে। ঠোঁটের দিকে এক নজরে তাকিয়ে থাকে। চিবিয়ে চিবিয়ে ঠোঁট নাড়ানো দেখে বুঝে ক্ষোভে কিছু বলছে তাকে। রাগে অভিমানে যন্ত্রণায় মেয়েটা কাতর চোখে স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে লোকটার মুখ পানে। বুক ভার হয়ে ঠোঁট উল্টে আসে তার। হাতের শিরায় সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করার সাথে সাথে বুঝে ক্ষিপ্রে লোকটা বুকের সাথে চেঁপে ধরেছে তার মাথা। ওই শক্তপোক্ত বুকের গহীনে নীরবে ফোঁপায় সে। আস্তেআস্তে চোখ তার ঝাপসা লাগে। হাত পা গুলি কেমন নিস্তেজ লাগে। আস্তেআস্তে একদম হালকা লাগতে শুরু করে শরীরটা। পরক্ষণে চোখের সামনে সব ঝাপসা অন্ধকার ঠেকে।
মায়রা মিনিট কয়েকের মাঝে ঘুমে টলে পড়তেই শক্ত করে আগলে নেয় হাতের পিঠে। গভীর ভাবে মাথা নুয়ে তাকিয়ে থাকে ঘুমন্ত ফ্যাকাসে মুখটার দিকে। ওর চোখের ভাষা বুঝে ইসহাক চৌধুরী একটু কেশে উঠলেন। বেয়ান আর তুহিন কে নিয়ে তিনি বের হোন।

“মাইনর স্ক্যাল ফ্যাকচারের কারণে এই তীব্র ব্যথা। কখনো কখনো রোগী কানে কিছু শুনতে পায় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোখেও ঝাপসা দেখে। তবে এটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। ঠিক হয়ে যাবে। আপনি টেনশন নিবেন না মিস্টার ইহাম চৌধুরী।”
ইহাম তখনো মায়া মায়া চোখে মায়রার দিকে ওভাবেই তাকিয়ে আছে দেখে ডক্টর চলে গেল। আরো কিছুক্ষণ ইহাম ওই আদলে দৃষ্টি বুলিয়ে মেয়েটাকে আস্তে করে বেডে শুয়িয়ে দেয়। পাশেই বসে খানিক ঝুঁকতেই এবার টপটপ করে কয়েক ফোঁটা নোনাপানি গাল বেয়ে গড়িয়ে মায়রার উন্মুখ বুকে পড়ে। মেয়েটা একদম অসাড়ের মতো চোখ বুঝে আছে। ইহাম আলতো হাতে মায়রার হাতটা আকড়ে ধরে। ক্যানুলা যুক্ত হাতের উল্টো পিঠে ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। ঝাপসা চোখে ভাঙ্গা কন্ঠে বিড়বিড় করে,

“আমি টোটালি পাগল হয়ে যাচ্ছি মায়রা। তোমার অবুঝপানা না ঠান্ডা মাথায় সহ্য করে নিতে পারছি আর না তোমার দূরত্ব আমার হৃদয়কে পু’ড়ানো থেকে ঠেকাতে পারছে। তুমি কি কিছুই বুঝতে পারো না মেয়ে? আর কবে বুঝবে আমায় আমার মিসেস পিচ্চি চৌধুরী? কবে মুখ ফুটে বলার আগে আমার মনের কথাটা তুমি আঁকড়ে ধরতে শিখবে? আর কত দূর সেই দিন? কবে আর আমায় বুঝবে জান?”

এই মাত্রই মহিন সাহেব কে কোনো রকম একটা স্যালাইন খায়িয়ে ঘুম পারিয়েছে। একটু পরই ফজরের আজান দিবে। সব পরিস্থিতি এক সাথে তাকে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে। ঠিক ভাবে নিশ্বাস নিতে পারছে না। শরীরটা খারাপ লাগছে তার। তবুও সুস্থ ভাবে চলার চেষ্টা করছে সবার সামনে। ভঙ্গুর মন নিয়ে পা ফেলে ফেলে যাওয়ার সময় একটা কেবিনের সামনে থমকে দাঁড়ায় সে। অল্প একটু কাঁচের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় শিফুর ঘুমন্ত মুখ। শিরিন বেগম কে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে সে। দেখতে আসলেই তাকে খুব ছোট লাগছে এই মুহূর্তে। একদম নিষ্পাপ। ঢোক গিলে তুহিন। অনেক কিছুই অনুধাবন করে নিজের মনে মনে।

দরজার ওপাশ থেকে ব্যথিত হৃদয় নিয়ে আওড়ায়, “আর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করব না শিফুটিফু। আর তোমাকে চাইব না এই মুহূর্তে। তুমি বড় হোও। খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও। মালয়েশিয়া থেকে ফিরে যেন তোমাকে আমি একদম ম্যাচিয়োড পাই। যেন সবার সামনে তোমাকে চাইলেও তুমি নিজে তা অস্বীকার না করে আমায় চাইতে পারো। অপেক্ষা করব শিফুটিফু। তোমায় আমি ছাড়ব না। আমার এই কষ্টের দাম তোমাকে পোহাতেই হবে শিফুয়া চৌধুরী।” চোখের কিনারা দিয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই এক বিন্দু পানি তুহিন মুছে নেয়। এরপর দ্রুত মাথা নুয়ে ছুটে হসপিটালের বাহিরে। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে এক জোড়া চোখ ছলছল হয়। ভেতর থেকে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে নীরবে।

অম্বর ফকফকে হয়ে আসে। ব্যস্ততা বাড়ে। সেই সাথে বাড়ে হসপিটালের কোলাহল। মায়রা তখনো নিস্তেজ হয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে। বেলা তখন ১০ টার উপরে। তার ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ১২ টা নাগাত। ইহাম সকাল আটটার পর নিজের মা বোন কে দিয়ে জোর করে পাঠিয়েছে ফাতেমা বেগম আর মহিন সাহেব কে তাদের বাসায়। মহিন সাহেব কিছুতেই যেতে চান নি মেয়ের রিপোর্ট না শুনে। ইহাম শান্ত ভাবেই বুঝিয়ে বলে বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে একটু পর আবার আসার কথা। অনেক বুঝানোর পর রাজি করানো গিয়েছে মায়রার বাবা মা কে। ইসহাক চৌধুরীও ছেলেকে ছেড়ে যেতে অমত পোষণ করেন। তবে ইহাম রাজি হয় না। জোর করেই সবাই কে বাসায় পাঠায়। কাল থেকে মানুষ গুলি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে হসপিটালে চিন্তার সময় পার করছে। একটু বিশ্রাম না নিলে তাদের নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করতে হবে পরে। শুধু যায় নি তুহিন। তাকে জোর করেও রাজি করানো যায় নি ইহামের বাসায় যেতে। ইহামও তেমন শক্ত গলায় বলেনি কিছু।

তুহিন এক পলক ইহামের দিকে চেয়ে মায়রার কেবিনের সামনেই বসল। দুজনই কেমন শক্ত ভাবে একেঅপরের দিকে তাকিয়েছিল। তুহিন বসতেই মনে পড়ল শক্তপোক্ত মানুষটার বোনের কথা। বাসায় যাওয়ার আগেও শিফু তার কাছে এসে নরম গলায় বলেছিল,
“তুহিন ভা ভাইয়া চলুন না আমাদের বাসায়। আপনার শরীর তো খারাপ। এখনো ঠিক করে সুস্থ হোন নি।”
“তোমায় বলিনি আমায় নিয়ে চিন্তা না করতে? তবুও কেন সামনে এসে জ্বালা বাড়াও শিফুটিফু?”
“আমি আপনার সামনে আসলে খুব খারাপ লাগে আপনার?”
“এমন করে বলছো,যেন তুমি সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে বসে থাকো আর সেই অধিকারও পেয়ে গিয়েছি আমি?”
শিফু কোনো জবাব দিতে পারেনি তখন।

“কি হলো? জবাব দিচ্ছো না যে? যেহেতু এর একটারও উত্তর ‘হ্যাঁ’ না তবে সেটা নিয়ে চিন্তাও করো না। আমার প্রতি দূর্বলতা গুলি কে নিজের ভবিষ্যতের দূর্বলতা হিসেবে গড়ে তুলো না। সময় কথা বলবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আমার কথা গুলি না বুঝার মতো অবুঝ তুমি নও। বয়সের তুলনায় একটু বেশিই বুঝদার আর কঠিন মনের মানুষ তুমি শিফুটিফু।”

বেলা ১১ টা ৩৮ বাজে।
মায়রার ঘুম ভাঙ্গে। ঝাপসা চোখ গুলি পিটপিট করে তাকিয়ে গোটা রুম জুড়ে কেবল তুহিন ভাই কেই দেখতে পায়। লম্বা করে চোখের পাতা ফেলে আবারও তাকালো রুম জুড়ে। অসহায় চোখ দুটি যে মানুষটাকে খুঁজে চলছে তাকে না দেখে বড় বিচলিত হলো।
এগিয়ে গেল তুহিন। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“এখন ঠিক লাগছে শরীর? কোথাও কষ্ট হচ্ছে না?”
মায়রা নিরুত্তর হয় ফ্যালফ্যাল করে ভাই এর দিকে তাকাল। তুহিন প্রশ্ন করল আবারও,
“বোন আমার, আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস? আমি কি বলছি কানে আওয়াজ পাচ্ছিস তা?”
“আ আম্মু আব্বু কোথায়?”
“ওরা সবাই সকালে ইহাম ভাইদের বাসায় গিয়েছে বোন। একটু পরই চলে আসবে।”
মায়রা আর জবাব দেয় না। তার সরল মন ভেবে নেয় ইহামও বাড়ি চলে গেছে। ভাবতেই বুকটায় আরো ব্যথা অনুভব করে।

“বোন, মুখে একটু পানির ঝাপটা দিবি? উঠাবো? কোনো নার্স কে ডাকি? হাতের স্যালাইনও তো শেষ, আবার দেয় কি না নাকি মুখেই কিছু খেতে বলে। তুই একটু অপেক্ষা কর আমি ডক্টর ডাকি।”
“ভাইয়া? ক্যা ক্যাপ্টেন সাহেব?”
অবুঝ ইচ্ছাগুলিকে দমিয়ে রাখতে না পেরে লঘু আওয়াজে প্রশ্ন করে মায়রা।
“ইহাম ভাইয়া তো অনেকক্ষণ আগে কোনো কাজে বের হয়েছে। কেন কিছু প্রয়োজন? আমায় বল। নাকি নার্স ডাকব?”

মায়রা জবাব দেয় না। মুখ টা ভার করে মাথা দুই পাশে দুলিয়ে না জানায়। মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠে তার। লোকটার কাজ কাজ আর চাকরি। ওসব ছাড়া কি কিছু নেই লোকটার জীবনে? তার জীবনের কি কোনোই মূল্য নেই ওই লোকটার কাছে? এতটাই গুরুত্বহীন মানুষ সে? তার পাশে কি থাকা যেত না? তার থেকে কি লোকটার কাজ বড় নাকি? হৃদয়টা ফুলে ফেঁপে উঠে মায়রার।
“মাথা ব্যথা করছে?”
থমথমে মুখে মায়রার মাথা দিয়ে অসম্মতি জানায়।
“তোকে হয়তো আজ আবার টেস্ট করানো হবে কয়েকটা। আমি ডক্টর করে বলে আসছি। তুই এখানে চুপকরে বসে থাক বোন।”
তুহিন বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বাহিরে বের হওয়ার জন্যে পিছু ফিরতেই দেখে ইহাম দরজা ঠেলে ভেতরে আসছে। মায়রা একপলক দেখে চোখ সরিয়ে নেয়। মুখের আদল তার শক্ত। ইহাম কে আসতে দেখে তুহিন নীরবে জায়গা প্রস্থান করে।

অসম্ভব লাল হয়ে আছে ইহামের মুখশ্রী। চোখ দুটি যেন আগুনের গোলা। গত দুই রাত ধরে ঠিক ভাবে ঘুম নেই তার। কাল একটা রাত গিয়েছে এক মিনিটের জন্য চোখের পাতা লাগাতে পারেনি সে। গায়ের শার্টটাও খুলা হয়নি। শুভ্র শার্টের কিছুকিছু জায়গায় ছোপছোপ দাগ দেখা যায়। সবসময় গুছিয়ে রাখা চুল গুলিও আজ এলোমেলো উষ্কখুষ্ক। মায়রা তখনো মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। কেবিনে পা রাখতে রাখতেই ইহাম প্রশ্ন করে,
“কখন ভাঙ্গল ঘুম?”
মায়রার জবাব নেই। মুখ ফিরিয়ে রেখেছে সে। তাকে দেখে চোখ সরু হয় ইহামে। মেয়েটা এখনো গাল ফুলিয়ে রেখেছে?

“হয়েছে কি?”
“……
“মায়রা কিছু জিজ্ঞেস করছি?”
“আমি কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না।”
“ও আই সি। মায়রা তুমি গাল ফুলিয়ে যে রেখেছো মনে হচ্ছে দশ মণ চাল ঢুকিয়েছো?”
মায়রা ক্ষিপ্ত ভাবে চায়। ইহাম মুচকি হাসে। ওই হাসি দেখেই তার শরীর আরো জ্বলে।
“খুব ভালো লাগছে তাই না? আমাকে এভাবে দেখে আপনার খুব ভালো লাগছে? সারাক্ষণ ঠোঁটে হাসি লেগেই আছে। মনে অনেক শান্তি পাচ্ছেন তাই না?”
মায়রার এমন কথায় স্তব্ধ হয় ইহাম। স্থির চিত্তে দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটার পানে।
“আপনার জীবনে কাজ আর চাকরি ছাড়া যখন কিছু থাকবেই না তখন বিয়ে করলেন কেন আমায়? যখন সময়ই দিতে পারবেন না তবে জীবনে জড়ালেন কেন?”

“….
“আমাকে আপনি ঠিকভাবে সময় দেন না। ভালো করে একটু কথা বলেন না। আমার দুঃখ কষ্ট কিছুই আপনার গায়ে লাগে না। বাঁচি কি মরি তাতেও আপনার কিছু যায় আসে না তাই না ক্যাপ্টেন সাহেব?”
মায়রার এই ধরনের কথায় প্রচন্ড বিরক্ত হয় ইহাম। দাঁত চেঁপে আনে ক্ষণেই। তবে শ্লেষোক্তি টা আর মেয়ের কম্পিত ভাঙ্গা কন্ঠস্বর শুনে দমে যায় সে। ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায়।

“লিসেন মায়রা, আই এক্সপ্লেইন টু ইউ।”
“কি এক্সপ্লেইন করবেন আপনি? আপনার কোনো এক্সপ্লেনেশন আমি শুনতে চাই না।”
“…..
“আপনার লাইফে আমার কোনো দাম আছে বলুন তো? নেই। আপনার জীবনে আমার কোনো ভ্যেলুই নেই। আমি আছি কি না আছি তা কোনো মেটারই করে না আপনার কাছে। তবে বিয়ে করেছেন কেন আমায়? যদি পছন্দই না করেন থাকতেই না পারেন তবে ছেড়ে দিন।”
বলতে বলতেই মায়রার গাল বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ল। মেয়েটার ঠোঁট তিড়তিড় করে কাঁপছে। বুকের ফাঁপা কষ্ট টা কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারছে না। তার অশান্ত মাথায় যা আসছে তাই উগলে দিয়ে কষ্ট ঝাড়ার চেষ্টায় মেতে উঠেছে সে। মনে হচ্ছে যাই বলছে তাই ওই লোকটার জন্যে কম হয়ে যাচ্ছে।
মেয়েটার অবুঝপানায় তিক্ত হয়ে উঠছে ইহামের ভেতর ঘর। চোখ গুলি আপনাআপনি মরিচের মতো জ্বলছে। টেনশন, নির্ঘুম, না খাওয়া শরীর, মাথার পীড়া সব মিলিয়ে এমনিতেই মেজাজ খিটখিট করছে তার। এরউপর বোকা মেয়েটার এই ধরনের কথা বিগড়ে দিচ্ছে তার মস্তিষ্ক। সব ঘেটে ঘ হওয়ার জোগাড়। তবুও মায়রার অসুস্থতার কথা চিন্তা করে নিজেকে দমিয়ে নেয়। দাঁতে দাঁত পিষে চোখ মুদে আনে সে। ক্ষীণ গম্ভীর স্বরে বলে,

“মায়রা, স্টপ ইট। এই বিষয় নিয়ে আপনার পরে কথা বলব। উঠো। টেস্ট করাতে যেতে হবে। আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে এসেছি। কাম।”
মায়রার বাহু ধরতে গেলেই মেয়েটা কেমন ফুঁসে উঠে। ইহামের নীরব শান্ত স্বভাবটাই যেন তাকে আরো সাহস জুগিয়ে দেয়। ঝাড়া মেরে হাত সরিয়ে চোখ ভর্তি পানি নিয়েই ক্ষোভান্বিত গলায় বলে উঠল,
“ছুঁবেন না আপনি আমায়। কেন ছুঁতে আসেন? কিসের জন্যে? যাকে মনে জায়গা দেন না তাকে আবার ছুঁতে যান কোন লজ্জায়? নিলজ্জ লোক একটা।”
এবার মায়রার কথা গুলি শুধু ইহামের মেজাজ বিগড়ে দিচ্ছে না বরং প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। চোয়াল শক্ত করে দাঁতের পাটি চিবিয়ে রেখেও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে শুধুই।

“আমি এখনো বুঝতে পারলাম না আমাকে পছন্দ করেন না কেন আপনি? কোন কারণে বলবেন? আমার কোনো কিছু কেন ছুঁতে পারে না আপনায়? সারাক্ষণ অবজ্ঞা করেন, বকাবকি করেন রাগ দেখান। কেন? কারন কি বলেন? কালকে যখন আমি ওদের ওখানে বন্দি ছিলাম হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে ছিলাম তবুও আপনার মায়া হলো না। আপনি একটুও বিচলিত হলেন না। বরং শান্ত আর গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বকে গেলেন আমায়। আজ জ্ঞান ফেরার পর দেখলাম কি? আপনার ঠোঁটে হাসি লেগে আছে। একটুও আমায় নিয়ে আপনার মাঝে চিন্তা নেই। কেন নেই? কত তো দেখি ড্রামা সিনেমায় হিরোদের উদ্বিগ্নতা। তার উন্মাদনা।”

“ননসেন্স” মায়রার কথা মাঝপথে দাঁমিয়ে দেয় ইহাম। “নাটক আর বাস্তব এক লাগে তোমার?”
“চুপ করুন। একদম কোনো জ্ঞান দিতে আসবেন না আপনি আমায়। সেদিনও নিউজে দেখিয়েছে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে প্রবাসী স্বামী নিজেই মা’রা গিয়েছে। আপনার তো শুধু কাজ আর চাকরি আছে। আর কাউকেই চাই না আপনার জীবনে। বউ বাচ্চা পরিবার কিছু চায় না। কারো মূল্য নেই আপনার কাছে। তো এসেছেন কেন? চলে যান এখান থেকে। আপনার কাজে যান। যেখানে ডুবে থাকেন সেখানে যান। আমার কোনো দাম নেই আপনার কাছে তাই তো? পছন্দই যখন করেন না তখন ছুঁতে আসেন কেন? সব পুরুষের খালি ছুঁয়ে দেখাবার বাহানা থাকে।”

ডুকরে কেঁদে উঠে মায়রা। ইহামের ওই শান্ত নির্জীব বিহেভিয়ার কিছুতেই তার মন নিতে পারছে না। অশান্ত মন কিছুতেই আজ শান্ত হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। ক্ষিপ্রে মায়রার দুই গাল প্রবল ভাবে চেঁপে ধরার প্রয়াস জাগল ইহামের মনে। শরীর নিসপিস করে উঠল ক্রুদ্ধতায়। তবে সেটা করল না। দাঁতে দাঁত পিষে তখনো মেয়েটার পানে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। ভেতর থেকে শুধু তপ্ততা ঝড়ছে। শরীর থেকে নির্গত হচ্ছে ক্রোধের উত্তাপ। যে মেয়েটার জন্যে সর্বাঙ্গ মনে হয়েছে এই বুঝি তার নিশ্বাসটা থমকে আসছে এই বুঝি সে মরন কবুল করে নেয় সেই মেয়েটা অন্যের কাহিনী শুনায় তাকে? স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে স্বামীর মৃত্যু? যে মেয়েটার জন্যে চাকরির উর্ধ্বে গিয়ে সব কিছু তোয়াক্কা না করে এত বড় রিস্ক নিল সেই হাদারাম টাই বলছে তার জীবনে আছে শুধু কাজ আর চাকরি। কিভাবে? হৃদয়টা দাউদাউ করে জ্বলে উঠল ইহামের। মায়রার কান্না চোখের স্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে ক্রোধ আর ধাতস্থ করতে পারল না সে। ক্ষোভ নিয়ে বিক্ষুব্ধ কন্ঠে চিবিয়ে বলল,

“আই সেড স্টপ ক্রায়িং ড্যাম ইট।”
“করব। শুনব না আপনার কথা। আমি কাঁদি বাঁচি মরি তাতে আপনার কি?”
ইহাম বেডের কাছেই ছিল। ভেতরের হিংস্রতা কে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে বেগে বেডের পায়ায় একটা লাথি মারে। শক্তপোক্ত মজবুত বেডটাও নড়ে উঠে সেই লাথির প্রবলে। মুহূর্তে কেঁপে উঠে মায়রা। চোখ বন্ধ করে নেয় সে সহসা। লোকটার রাগ এবার তাকে ভয় পাওয়ায়। সাহস হয় না চোখ তুলে ওই রাগী চোখের দিকে তাকানোর। শরীরটা বুঝি এবার মৃদু আঁচে কাঁপে। কানে ভেসে আসে ভয়ংকর কন্ঠস্বর।
“আরেকবার ওই কথা বললে একদম জানে মে’রে ফেলব বেয়াদব।”
কিছু সময় অতিবাহিত হয়। কেবিন জুড়ে মায়রা কেবল ওই লোকটার ফোঁসফোঁস দানবীয় ধ্বনি শুনতে পায়। বুকে ভয় জমে খুব। শুকিয়ে আসা গলা ভেজানোর চেষ্টা করে। আস্তেধীরে নেত্রপল্লব মেলে তাকায়। তখনি ওই মানুষটা কেমন শীতল অথচ শাণিত গলায় বলে,

“তোমার মেইন সমস্যা কোথায় জানো মায়রা? তুমি মাথামোটা গবেটের চেয়ে বেশি হলে বেয়াদব। আদব টাই রপ্ত করতে পারলে না এত বছরে। এর চেয়েও বেশি কোনটা আছে তোমার মাঝে জানো? জেদ। তোমার চোখে আমি যে যে রিজন গুলির জন্যে অপরাধী হয়ে আছি তুমি জেদ ধরে সেই গুলির বাহিরে আর কিছুই দেখতে পাচ্ছো না। ইচ্ছাকৃত দেখতেও চাইছো না। শুধুমাত্র জেদ দেখিয়ে। তাই তোমার চোখেও কিছু পড়ছে না। আর না তুমি চোখে ফেলতে চাইছো। তোমার জেদ তোমাকে সেসব থেকে দূরে করে অন্ধ করে তুলছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে চোখ দেয়, বুদ্ধি দেয় ভালো মন্দটা দেখে বিবেচনা করে ভালোটা কে আঁকড়ে ধরার জন্যে সেটাকে লালন করার জন্যে। কিন্তু তুমি তো চোখ থাকতেও জেদের কারণে অন্ধ। তাই পজেটিভ কিছুই তোমার চোখে আটকাচ্ছে না। তোমার চোখ বারবার নেগেটিভের দিকেই ঠেকছে মায়রা। তাই অনেক কিছুই তুমি দেখতে পাওনি। এখনো ছোট বাচ্চা নও তুমি। যে পরিস্থিতি দেখে শুনেও কিছু বুঝবে না তুমি। যথেষ্ট বুঝদার হয়েছো। তবে জেদ তোমার সেগুলিকেই লাঘব করে দিচ্ছে ক্রমশ। তুমি দিনদিন জেদের বশে অবুঝ আর অন্ধ হয়ে যাচ্ছো মাথামোটা। আমার হাসিটা টা দেখলে অথচ ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলে না মেয়ে। অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু আমার কন্ঠ তা রুদ্ধ করে দিচ্ছে মায়রা।”

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৩৮

কথা গুলি শেষ করে ইহাম আর এক সেকেন্ড দাঁড়াল না। দম্ভ নিয়ে লম্বা পায়ে কেবিন ছেড়ে বের হয়ে গেল। কেবিনের দরজা সজোরে লাগানোর শব্দে ভেতরটা যেভাবে কেঁপে উঠেছে মায়রার তেমনি করেই ফুঁপিয়ে উঠেছে মেয়েটা। লোকটার শেষের কথা গুলির কম্পিত, ভাঙ্গা কন্ঠ তার ভেতর ঘরকে দুমড়েমুচড়ে তছনছ করে দিচ্ছে। বারবার মনে হতে চাচ্ছে লোকটা কথার মাঝে নীরব আহাজারি গুঁজে দিয়ে গেছে। বারংবার কানে ঝংকার তুলা ওই ভেজা কন্ঠস্বরটা ছুরির মতো বিঁধ করছে তার হৃদপিন্ড টা। আজ ভেতর থেকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে নিঃশেষ হচ্ছে সে।

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪০