মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪৫
সাদিয়া
ইহামের কথা শুনে মায়রা লজ্জায় আচমকা বিষম খেয়ে বসে। শরীর গুলাচ্ছে দেখে আর থাকতে না পেরে এক প্রকার দৌড়ে গেল ওয়াশরুমে। হঠাৎই গড়গড় করে বমি করে দিল মেয়েটা। সবেমাত্র দুই তিন চামচ জাউভাত খেয়েছিল তাই উগলে দিয়েছে। আকস্মিক এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় হকচকিয়ে যায় ইহাম। হাতের প্লেট টা ছুড়ে দৌড়ে চলে যায় মেয়েটার কাছে। আলতো করে দুই বাহু চেঁপে ধরে। চিন্তায় মাথা দপদপ করছে তার। সে তো নিহাত মজার ঝলে বলেছিল কথাটা। কিন্তু মেয়েটার শরীর তো সত্যি খারাপ। সে তো নিজ দায়িত্বে পিল দিয়েছিল মেয়েটা কে। তবে কি মায়রা খায়নি তা? ভয়ে কলিজাটা তার খুবলে ধরেছে। এই বয়সে মায়রার বাচ্চা নেওয়ার বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারবে না সে। নিতেও দিবে না। এসব বিষয়ে কোনো রিস্ক নিবে না সে। নিহাত বেয়াদব মেয়েটা তার সামনে থাকলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না, সামলে রাখতে পারে না। তাই ইন্টিমেটের বিষয়টা নিয়েও এত ভাবেনি। তাই বলে এই বয়সে বাচ্চা? নেভার।
মায়রা পিঠে আলতো হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম সুরে জিজ্ঞেস করে,
“শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে?”
জবাব দিতে পারে না মেয়েটা। শরীটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। হাত পায়ের জোড়ায় জোড়ায় ছেড়ে দিচ্ছে। কোনো রকম ইশারা দিয়ে বুঝালো পানি। ইহাম তৎক্ষণাৎ এক গ্লাস পানি এনে দিতেই মেয়েটা আগে কুলকুচি করে। মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ওয়াশরুমে পরিষ্কার করতে ভেতরে যেতে চাইলেই ইহাম জিজ্ঞাস করে,
“ক্লিন হবে?”
মাথা নাড়ায় মায়রা। ক্ষীণ দুর্বল স্বরে জবাব দেয় “এটা পরিষ্কার করে দেই।” তখনি ইহাম চোখ গরম করে। ভারি গলায় জানায় “নো নীড।” ইহাম মায়রা কে ধরে বেডে বসিয়ে দেয়। নিজেই গিয়ে ওয়াশরুমে ক্লিন করে আবার ফিরে আসে। মেয়েটা ঘামছে। ইহাম হাটু ভাঁজ করে ফ্লোর ছুঁয়ে বসে। কোলের উপর থাকা মায়রা হাত দুটি মুঠোয় নিয়ে শুধায়,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ডক্টর ডাকব? বেশি খারাপ লাগছে?”
মায়রা মাথায় না জানায়। একটু সময় নিয়ে ইহাম আবার জানতে চায়,
“আচ্ছা বলো তো মায়রা তোমায় যে পিল দিয়েছিলাম আমি সেটা কি মিস করেছো?”
মায়রা একটু ভাবুক হয়। ওসব পিলটিল খেলেই তো তার বমি আসে। শরীর খারাপ করে। হিমেল ভাইয়ের গায়ে হলুদের আগের দিন রাতে ইহামের সাথে একসঙ্গে থাকার পর পিল খেয়েছিল কিনা মনে করতে পারছে না। তার মধ্যে মাথাও ব্যথা করছে। ইহামের প্রশ্নাত্মক মুখের দিকে মেয়েটা করুণ ভাবে তাকিয়ে থাকে কেবল। মেয়েটার নির্লিপ্ত ভাব অন্য ইঙ্গিত দেয় তাকে। দাঁতে দাঁত চেঁপে তিক্ত স্বরে বলে উঠে “শীট।”
কাঁপে মায়রা। ভীত মুখে চেয়ে রয় ইহামের পানে। লোকটা হঠাৎ রাগ করছে কেন বুঝতে পারে না সে। ভীত মুখে ঢোক গিলে। তার দিকে মানুষটা গরম চোখে তাকালেই শরীর শিউড়ে উঠে শঙ্কায়। এই লোকটাকে আজকাল ভয় হয়। মনে হয় যতই লোকটার কাছাকাছি যাওয়া হচ্ছে ততই যেন নতুন করে চিনতে পাচ্ছে সে। কেমন অদ্ভুত। মানুষটার রিয়েকশন অভিভঙ্গিমা কিছুই আগে থেকে ঠাউর করা যায় না যেন। হুট করে দেখা যাবে ভালো তো ওমনি কঠোর হতেও সেকেন্ড সময় নেয় না। আজকাল লোকটাকে দেখলে খানিক ভয়ও হয় তার। মানুষটার চাউনি দেখে ভীত স্বরে বলে মায়রা,
“ক কি হয়েছে?”
“ইচ্ছে করে পিল মিস করেছো?”
“….
“উত্তর দাও ড্যাম ইট।”
ভয়ংকর ধমকে কেঁপে উঠে মায়রা। মাথা নিচু করে হাত কচলায়। সময় নিয়ে এপাশ ওপাশ মাথা দুলিয়ে জানায় না বলে। আবারও লোকটার ভারী গলা শুনা যায়,
“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো।”
ভয়েভয়ে মায়রা মাথা তুলে। ঢোক গিলে অল্প। মানুষটা শান্ত ভাবে তাকিয়ে আছে তবুও যেন মনে হচ্ছে উত্তপ্তের আভাস। শান্ত অথচ তীক্ষ্ণ গম্ভীর সুরে শুধালো,
“তুমি এখনি বেবি কন্সিভ করতে চাও?”
ইহামের এমন ধারালো শীতল স্বর স্থবির করে দেয় মায়রা কে। অদৃশ্য এক জড়তা জড়িয়ে নিয়েছে তার কন্ঠস্বর। মেয়েটা বেশ বিচলিত হচ্ছে।
“চুপ করে থাকতে বলিনি মায়রা। উত্তর দিতে বলেছি। আন্সার মি।”
“বমি করলেই কি বেবি হয়ে যায়? আমার শরীর খারাপ লাগছে তাই হয়তো.. আর চাইলেই বা কি? আপনি এমন করছেন কেন?”
“আমি চাইছি না।”
ফ্লোরে হাটু মুড়ে এখনো বসে আছে ইহাম। তার এমন স্বাভাবিক মুখভঙ্গি আর নির্দ্বিধায় বলা কথা আতঙ্কে সংকোচিত করে মায়রা কে। ভয় সংশয়ে কপাল কুঁচকে আসে তার। মাথা ঝুঁকে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে এক নাগাড়ে। মনের কোণে অন্য কিছুর আভাস জাগে। লোকটা বেবি নিতে চায় না? তাদের জীবনে ছোট্ট নরম তুলতুলে একটা প্রাণ আসুক ওই পাষাণ মানুষটা চায় না? বেবিকে অপছন্দ করার কি কারণ থাকতে পারে? ভয়ে গলা আরো শুকিয়ে আসে মায়রার। নিস্তেজ চোখের দৃষ্টি পড়ে না মেয়েটার।
“আমি এখন চাইছি না বেবি নিতে।”
এই মুহূর্তে মায়রার মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। ভয়, সংশয়, রাগ সব মিলিয়ে তার তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তবুও কোনো রকম করে সে জানতে চাইল,
“হলেই বা কি? আপনার প্রবলেম টা কোথায়?”
যদিও মেয়েটা সজ্ঞানে এখনো পিল মিস করেনি। আচমকা ইহাম দুই হাত বাড়িয়ে তালুতে নিয়ে আসে মায়রার গাল দুটি। রয়েসয়ে ভারিক্কি গলায় জবাব দিল,
“আমি চাই না তুমি এই বয়সে কন্সিভ করো। তোমায় নিয়ে কোনো রিস্ক নেওয়ার প্রশ্ন উঠে না মায়রা।”
মায়রা কি বলবে কি অনুভব করছে সে বুঝতে পারছে না। বিমূঢ় রূপে তাকিয়ে থেকে অনুভূতিহীন।
“এ কেমন ধরনের ইচ্ছা আপনার? আমার থেকেও ছোট মেয়েরা কি মা হয়না?”
“আমার ওসব দেখার কোনো দরকার নেই। আমার প্রায়োরিটি অন্য সব মেয়েরা না। তুমি। সো তোমার ভালো টা আমায় দেখতেই হবে।”
“আপনার এই ইচ্ছাটা আমার কাছে ভিত্তিহীন লাগছে।”
মুখ ফিরিয়ে নেয় মায়রা।
“একটা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে রিস্কি সময় হয় প্রেগন্যান্সির টাইমটা। সেটা যদি হয় অপরিপক্ব অবস্থায় তো কি হওয়ার সম্ভবনা থাকে ধারনা আছে তোমার? আই কান্ট এক্সপেকট ইট। আমার এত তাড়াতাড়ি বাবা হতে হবে না। কারণ আমার বাবা হওয়ার চেয়ে আমার কাছে তুমি বেশি ইম্পরট্যান্ট। সরি টু সে এই বিষয়ে রিস্ক আমি নিতে পারব না।”
মায়রা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে লোকটার পানে। কিছুদিন আগেও এই লোকটা তাকে সহ্যই করতো না। এখন পর্যন্ত কথায় কথায় বেয়াদব মাথামোটা বলে সামান্য কারণে রেগে বসে। সেই লোকটার মুখে এমন কথা ও চোখের গভীরে তাকে নিয়ে সূক্ষ্ম ভয় মায়রা কে কেমন স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
“অথচ বাচ্চা হচ্ছে না বলে কতশত লোক দ্বিতীয় বিয়েও করছে।”
মায়রার কথা শুনে প্রচন্ড বিরক্ত হতে দেখা যায় ইহাম কে। উঠে দাঁড়িয়ে তিক্ত সুরে বলে,
“অগ্রিম কথা একটুও পছন্দ নয় মায়রা। না হলে না হবে বাচ্চা। আজকাল বাচ্চা না হলেও অনেক ওয়ে আছে। তার ব্যবস্থা করা যাবে। তবুও এই মুহূর্তে বেবি নয়। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?”
“কিন্তু আমার একটা বেবি চাই। চাই মানে চাই’ই।”
ইহাম বুঝল মায়রার ত্যাড়ামি টা। সব দিক বিবেচনা করে একটু শান্ত হয়ে মেয়েটাকে বুঝ দিল, “আচ্ছা আগে তোমার এক্সাম শেষ হোক এর পর আমরা এটা নিয়ে প্ল্যানিং করব। কেমন?”
“সত্যি তো?”
“হুম। কিন্তু এখন ডক্টরের কাছে যেতে হবে। তোমায় নিয়ে কোনো রিস্ক নয়।”
ইহাম দরজার কাছে যেতেই মায়রা বলে উঠল,
“আমার কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে।”
“কি খাবে?”
“গরম ভাত আর কালাভোনা।”
“এই সময়ে এসব চলছে না।”
“শুনে যান আমার কথা। ওগুলি না আনলে কিন্তু আমি খাবো না।”
ইহাম তার কথা শুনল কিনা বুঝা যায়নি। তার আগেই গটগট পায়ে কেবিন ছাড়ল।
অস্থির অস্থির করে শিফুর ভেতর। এক দন্ড শান্তি লাগে না তার। ফ্যালফ্যাল করে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে দূরে তুহিন ভাই এর দিকে। মানুষটা অসুস্থ হবার পর থেকে একেবারে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। যেটা তাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে। দমটা বন্ধ করে দিচ্ছে এই তিক্ত বিষয়টা। যেন আরো ছুটে যেতে ইচ্ছা করছে মানুষটার কাছে। যদিও সে জানে এটা তার উচিৎ নয়।
“তুহিন ভাই আপনার সাথে একটু কথা ছিল।”
তুহিন গ্রুপে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করছিল। ৫ দিন পরই তার ফ্লাইট সে সব নিয়েই টুকটাক কথা হচ্ছে। শিফুর কাতর গলা শুনে স্কিনের আঙ্গুল থেমে যায়। তবে ছেলেটা মুখ তুলে তাকায় না। কাঠাকাঠ কন্ঠে জবাব দেয়,
“আমার কোনো কথা নেই শিফুটিফু। যাও এখান থেকে।”
তুহিন ভাই এর মুখে এই শিফুটিফু ডাকটাই যেন তাকে আরো বেশি করে ঘায়েল করে। ভেতরটা দলা পাকিয়ে আসে কান্নায়। নিজেকে চেয়েও পারছে না মানুষটার থেকে দূরে রাখতে।
“একটু কথা ছিল প্লিজ শুনুন না।”
তুহিন মুখ তুলে তাকায়। “বলছি তো আমার কথা নেই। শুনতে পাচ্ছো না?”
“এমন কেন করছেন আমার সাথে তুহিন ভাই?”
“চুপ। বলেছি না আমায় ভাই ভাই করবে না। যাও এখান থেকে।”
তুহিনের ধমকে চোখ টলমল করে উঠে শিফুর।
“আপনি সব ভুলে গিয়েছেন তাই না তুহিন ভাই? আমাদের সেই দিন গুলি সব ভুলে গেলেন?”
তুহিন বিরক্ত হচ্ছে। বলতে গেলে নিজেকে যে দৃঢ় প্রত্যয়ে শক্ত করেছিল তা ভেঙ্গে পড়ছে দেখে চুপচাপ উঠে দাঁড়াল। চলে যেতে চাইলেই শিফু এবার আচমকা অবিশ্বাস্য একটা কাজ করে বসে। যা তুহিন কে ভেতর থেকে করে একেবারে উন্মাদ। তুহিনের হাত ধরে মেয়েটা নির্লিপ্ত তাকিয়ে আছে।
“হাত ছাড়ো শিফু।”
“আমার একটু কথা আছে তুহিন ভাই।”
“তোমার যা বলার নিজের ভাই এর সামনে বলো আমার সঙ্গে নয়। হাত ছাড়ো।”
শিফু ছাড়ে না হাত। টলমল চোখে তাকিয়ে থাকে বোকার মতো। তুহিন এবার না পারতে শক্তি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। এতে মেয়েটা অবশ্য দুই পা পিছিয়ে যায়। এক বুক নীরব যাতনা নিয়ে তুহিন কোনো রকম চলে যায় ঝাপসা চোখে। টপটপ করে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে শিফু মেয়েটার। এবার মনে হচ্ছে নিজের আত্মসম্মান খুঁয়ে নিচ্ছে সে। কালকেই না মনে মনে দৃঢ় ভাবে ঠিক করে নিয়েছিল তুহিন ভাইয়ের জন্যে সে শুধু অপেক্ষা ছাড়া আর কিছু করতে পারবে না। তবে বেহারা মনটা এত মানতে চাইছে না কেন? নাকি আগে তুহিন ভাই যখন তার কাছে ঘেঁষত কথা বলতে চাইতো তখন নিজেকে শক্ত করে রাখা সহজ ছিল। এখন যখন মানুষটা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে পাত্তা দিচ্ছে না তাই দেখে বারবার বেহায়ার মতো পিছলে যাচ্ছে? সে একটু বেশিই করে ফেলছে না এবার? সে তো এমন নয় ভাই এর মতো শক্ত মনের মেয়ে সে। যার প্রমাণ আগেও সে সবাই কে দিয়েছে। তবে এখন কেন পারছে না? নিজেকে আরো শক্ত করতে দাঁত খিঁচে নিল শিফু। মনে পড়ল ভাইয়ের বলা একটা কথা,
“নিজেকে কখনো নরম করে নেই। সবসময় শক্ত দৃঢ় থাকতে হয়। মনে রাখবি শিফু তুই যত নিজেকে নরম দেখাবি মানুষ তোকে আরো তত বেশি ভাঙ্গতে চাইবে। এই নশ্বর দুনিয়ায় নরম জিনিস ভাঙ্গা খুব সহজ।”
সূর্যটা যখন পশ্চিম আকাশের দিকে ঝুঁকে পড়েছে রোদের তেজ যখন মিয়ে আসছে এমন সময় ইহাম বাড়ি এসেছে। প্রয়োজনীয় কিছু কাজ আছে। বাড়ি ফিরেই দেখতে পায় শিরিন বেগম টিভি ছেড়ে উদাস ভঙ্গিতে বসে আছেন। তা দেখে ইহাম ভ্রু কুঁচকায়। গলা কেঁশে বলে,
“এভাবে বসে আছো কেন মা?”
চমকে তাকান শিরিন বেগম। ভার কন্ঠে কপালে রেখা টেনে জিজ্ঞেস করেন,
“তুই কখন এলি?”
“মাত্রই।”
“হাসপাতাল থেকে চলি এলি যে?”
মায়ের কন্ঠে কিঞ্চিৎ বিদ্রূপের আভাস পায় ইহাম। তবে বেশি পাত্তা দেয় না।
“একটু দরকার ছিল। আবার সন্ধ্যার পর যাবো।” আশপাশ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শিফু কোথায়? ও না দুপুরে হসপিটাল থেকে চলে এসেছিল তোমার সাথে?”
“নিজের ঘরেই আছে হয়তো দরজা আটকে।” থমথমে নিরস মুখে বলেন শিরিন বেগম। “আমার মনে হয় ওর আর হাসপাতালে যাওয়া ঠিক হবে না।”
মায়ের মুখ দেখে ইহাম কিছু আঁচ করে। শার্টের দুই বোতাম খুলে জবাব দেয়, “ঠিক আছে দিও না আর যেতে।”
“আমি কাল ভোরে চলে যাবো মা। বাবা তো হসপিটাল যাবেই। মাঝে মাঝে তুমিও যেও না হয় মায়রা কে দেখতে।”
“যেতে তো হবেই। তা না হলে ছেলে আবার বউ এর হয়ে কথা শুনাতে কাজ ফেলে চলে আসবে না?”
শিরিন বেগমের মুখটা গম্ভীর। শুভ্র মুখের নাকের পাটা ফুলে আছে। সে বুঝল মা রেগে আছেন। ধীর পায়ে তাই এগিয়ে গেলেন মায়ের কাছে। পাশের সোফাটায় উনার মুখোমুখি হয়ে বসে প্রশ্ন করে,
“তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে মা?”
“রাগব কেন? রাগার তো কিছু নেই। ছেলে বড় হয়েছে। বউ কে একটু বকেছি বলে মা কে দুইটা কড়া কথাও শুনিয়ে দিয়েছে। ছেলে যা বলেছে তা তো ঠিকি। এখানে রাগের তো কিছু নেই।”
কিঞ্চিৎ হাসল ইহাম। মায়ের হাত ধরে নরম সুরে বলল, “আচ্ছা তুমি আমার উপর আর রেগে থেকো না। মায়রাও তো ছোট। তোমার শিফুর মতোনই তো। তুমি না হয় ওকে মেয়ের মতো খুব বেশি না একটু খানি বকে দিও। আবার সঙ্গেসঙ্গে কাছেও টেনে নিও। আমি কিছু বলব না হয়েছে?”
শিরিন বেগম জবাব দিলেন না। তবে উনার চোখ মুখ হাল্কা দেখা গেলো। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ইহাম উঠে দাঁড়াল। নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে, “এক কাপ কফি হবে মা?” শিরিন বেগম এক উত্তরে “দিচ্ছি” বলে টিভি অফ করে উঠলেন। যদিও তিনি মনে মনে আহামরি রাগ পুষে রাখেন নি। ইহাম যা বলেছিল হয়তো সব সঠিক তবুও তিনি কোথাও সংকোচ বোধ করতেন। ছেলে বউ এর কারণে মা কে চলে এসেছে বুঝাতে বিষয়টা কেমন লেগেছিল উনার মনে। যদিও মেয়েটার প্রতি উনার কোনো বিরূপ মনোভাবই নেই। সময়ের সাথে গা ভাসাবেন বলে তিনি স্থির হলেন।
ছোট বেডটায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে দুটি দেহ। একেবারে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখে। কেবিনে জ্বলছে মৃদু আলো। ইহামের বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে মায়রা। পড়ে যেন না যায় তাই এক হাত দিয়ে যত্ন করে আগলে রেখেছে ইহাম। সেই হাত উঠিয়েই মায়রার মাথায় আলতো করে বুলিয়ে দিচ্ছে।
“মায়রা?”
“হুম?”
“তুমি কি মার উপর রেগে আছো।”
মায়রা একটু চুপ করে। সত্যি এটাই মেয়েটা কখনো আশা করেনি শিরিন বেগম এভাবে বকবেন। তাই নিজের ভেতর একটু অস্বস্তি হচ্ছে কিন্তু রাগ করেনি কখনো। একটু থেমে জবাব দেয়,
“উনি আমার গুরুজন। একটু বকেছে বলে রেগে থাকব কেন? আমি কিছু মনে করিনি।”
ইহাম যেন মায়রার কথায় খুশি হয়। মেয়েটার মাথায় আলতো করে নিঃশব্দে চুমু খায়। এই বুঝি ইহামের মৃদু পোড়া গাঢ় ঠোঁট দুটি ভুল করে কুন্তল ছুঁয়েছে।
“মা কিন্তু মুটেও রাগি নন। উনি অনেক নরম মনের মানুষ। তোমাকেও খুব ভালোবাসেন। সেদিন আদরের ছেলের কারণে হয়তো একটু রেগে দুটো কথা শুনিয়েছেন। তাই বলে তুমি কিন্তু মুটেও মায়ের উপর ক্ষোভ পুষে রাখবে না। আমার সব কিছু মানেই কিন্তু তোমার। আমার মা মানে তোমার মা। তাই নিজের মা বকলে যেমন রাগ পুষতে নেই তাই কখনো আমার মা তোমায় কিছু বললেও তর্ক করবে না, রাগ করে থাকবে না। যদি উনি কখনো ভুলও হন তবে সঠিক জবাব দিতে কখনো বেয়াদবি টানবে না। আর মা তোমায় বকবে না। উনার কথা শুনলে তোমায় মাথায় তুলে নাচবে। শুধু মাথায় রেখো তোমার দ্বারা মা যেন কষ্ট না পান কখনো। কারণ তুমি কিংবা আমার মা দুজনই আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।”
“আমি কি এমনই? যে মার সাথে বেয়াদবি করব? আপনার মনে হয়? হয়তো একটু কষ্ট পেয়েছি খারাপ লেগেছে এই যা।”
“সংসার জীবনটা বড্ড কঠিন। এখানে সবটা নিজের ভাবলে সহজ লাগে। কঠিন মনে হলেই সব কিছু আরো জটিল হয়ে উঠে। বুঝাতে পেরেছি?”
“হুম।”
“আর আমার পিচ্চি মিসেস চৌধুরী শুধু মাত্র আমার ক্ষেত্রেই বেয়াদব আর ঘাড়ত্যাড়া সেটা আমি বেশ জানি।”
নাক টেনে ধরল মায়রার। মায়রাও মানুষটার বুকে মুখ লুকিয়ে ভেংচি কাটে। রাত বাড়ছে। বাড়ছে নিস্তব্ধতা। আবছা আলোয় দুই কথোপকথোপী নিরিবিলি তাদের হৃদ স্পন্দন শুনতে ব্যস্ত। ওই মনোরম নীরবতাকে পিষে ইহাম বলল,
“এভাবে রাত পার করতে পারবে?”
“হুম।”
“কষ্ট হবে সরো। আমি সোফায় যাচ্ছি। হাতে ব্যথা।”
“কিচ্ছু হবে না এভাবেই থাকুন না ক্যাপ্টেন সাহেব।”
জবাব দিল না ইহাম। মায়রা একটু সময় নিয়ে অধীর আগ্রহের সাথে প্রশ্ন করে,
“আপনি আমায় ভালোবাসেন ক্যাপ্টেন সাহেব?”
“না।”
ইহামের অকপটে বলা কথায় মায়রা মাথা উঁচু করে তাকায় লোকটার পানে। আবছা আলোয় দেখা যায় স্বাভাবিক মুখশ্রী। নাক ফুলিয়ে বিরক্তির সাথে আবারও জিজ্ঞেস করে,
“আপনি আমায় ভালোবাসেন না?”
“না।”
“তাহলে যে আমার খেয়াল রাখেন, কিছু হতে না হতেই রাগ দেখান, দোষ করলে বকেন ও গুলি কি?”
“….
“কি হলো? বলছেন না যে? আপনার কথার আর কাজের সাথে তো কোনো মিল নেই।”
“না থাকলে নেই।”
“না থাকলে নেই মানে? কি বলতে চান আপনি?”
“তুমি যা মনে করো তাই।”
“দূর” বিরক্ত হলো মায়রা। লোকটাকে একটা প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে চায় না। রাগ দেখিয়ে উঠতে নিলে ইহাম দুই হাত দিয়ে তাকে টেনে আবার বুকে নিয়ে এলো।
“হুসসস। নড়ো না। চুপটি করে শুয়ে থাকো। তোমার নিশ্বাস গুলি একটু গায়ে মাখতে দাও।”
কথা থেমে যায় মায়রার। বুঝে এই লোক মুখে কিছু বলার মানুষ নয়। বুকের ভেতরটা আচমকা ধুকবুক করে উঠে তার। ভেতরটা উতলা হয় মানুষটার ফিসফিসানো কথায়। নিশ্বাসটাও আকস্মিক বেড়ে যায়। কানের কাছে শরীর শিউড়ে উঠা হিসহিস শব্দ আসে।
“আমার মিসেস পিচ্চি চৌধুরী আপনার হঠাৎ এই ঘনঘন নিশ্বাস নেওয়ার মানে কি? আবার আমায় কোনো দুষ্টু ইঙ্গিত দিচ্ছেন না তো?”
মুহূর্তে ইহামের বুকের কাছটায় টিশার্ট খামছে ধরল। মায়রার ভেতরটা সত্যি বড় অস্থির, বিচলিত। উদ্বিগ্নের সাথে নিশ্বাস হয়ে উঠছে ভারি। মনের গভীরে যেন ঢেউ উঠেছে উশৃঙ্খল ভাবে। হৃদয়রটা ধিকিধিকি করছে। অনুভূতিতে টালমাটাল লাগছে চারপাশ। মায়রার অবস্থা দেখে খেঁই হারায় ইহাম। দাঁত পিষে নিজের ধৈর্য সামলে রাখে। মায়রার খুব ঘনিষ্ঠ থেকে ঠোঁট নাড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,
“প্লিজ মায়রা আর না। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। ভেতরের সব কিছু খানখান হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্লিজ এরকম করো না আর। আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেলফ এনিমোর। নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব মুশকিল হয়ে যাচ্ছে জান।”
মায়রার নিশ্বাস আরো ভারি হয়ে আসে। হাপানো রোগীর মতো করে মেয়েটা। তা দেখে নিজের সব ধৈর্যের শিকল ভাঙ্গে। মায়রার এলোমেলো চুলের ভেতর শক্ত করে হাত গলিয়ে দিয়ে উষ্ণ ঠোঁটে ঠোঁট বুলায়। আস্তেধীরে ইহামের স্পর্শ গাঢ় হতে থাকে। চুম্বনের তীব্রতা এত যেন মেয়েটার নরম কমলা আভাযুক্ত ঠোঁটের সব টুকু মাধুর্য শুষে নিবে অদম্য তৃষ্ণায়। ইহামের হাত নিষিদ্ধ জায়গায় হন্নে হয়ে ঘুরছে। নিজের ছোঁয়ার প্রগাঢ়তা টুক উপলব্ধি করে হুট করে চোখ মেলে চায়। মেয়েটা নিজেও যেন অনুভূতির তাড়নায় তাকে নীরবে সায় দিচ্ছে যাচ্ছে। তবে সে কিছু একটা ভেবে হুট করে বেড থেকে উঠে দাঁড়াল। এতক্ষণে নিজের টিশার্টটাও খুলা হয়ে গিয়েছিল বেচারার। কিন্তু করুন নাজেহাল অবস্থায় সেটা গায়ে জড়িয়ে নিল। কোনো রকম ভেতরের অশান্ত ঝড় সামলে বলল,
“তোমার এই মুহূর্তে এসব? অসম্ভব। সে যতই ভেতরে তুফান বোক।” একটু দম নেয় ইহাম। এসিতেও ঘেমে একাকার ছেলেটা। লম্বা করে শ্বাস টানছে। “পাঁচ মিনিট সময় দাও ফিরে আসছি।”
মায়রা রক্তলাল চক্ষুতে তাকিয়ে। রাগে তার অনুভূতিতে এক বালতি বরফ পানি পড়ে তা জমে গেলো। নিজেই কাছে এলো ভালোবাসার লোভ দেখিয়ে আবার নিজেই প্রত্যাখ্যান করে দিয়ে ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে চলে যাচ্ছে। আবার তার অসুস্থতার অজুহাত দেখানো হচ্ছে। ঢং! যেন সতীসাবিত্রী একটা। সে কি মানা করেছে নাকি? তার উষ্ণ অনুভূতিতে ঠান্ডা পানি ঢালার মানে কি? লজ্জায় সংকোচে মেয়েটা তবুও কিছু বলল না। কেমন কেমন করে শুধু তাকিয়ে রইল ইহামের মুখের দিকে।
মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ইহামের ভ্রু কুঁচকে আসে। যেন ওই চোখের ভাষা বলে দেয়, “আমি তো আপনায় না করছি না। তবে এত দূরে ঠ্যালা কেন?” মায়রার নীরব চোখের ভাষা বুঝে ইহাম নিজ উদ্যোগে জানাল,
“যদি মানুষ জানতে পারে যে অসুস্থ বউ এর সুযোগ নিয়ে জামাই হসপিটাল বেডেই কাজ সেরেছে তখন ক্যাপ্টেন ফাহাদ ইহাম চৌধুরী কে সবাই ছিঃ ছিক্কার দিবে। বলবে এ কেমন পুরুষ যে বউ এর অসুস্থতাতেও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না? না বাবা আমি এমন আস্তাগফিরুল্লাহ মার্কা কাজে নেই।”
সকাল পনে এগারোটা বাজে।
আজ বাড়িতে মেয়ের শ্বশুর আর ননদ আসবে দেখতে। সেই হিসেবে বাড়িতে রান্নার তোরজোড় চালিয়ে দিয়েছেন ফাতেমা বেগম। কোমরে আঁচল গুঁজে এক হাতেই বাহারি রান্নায় ঘেমে ঘেটে একাকার। এক মাসে মায়রা এখন বেশ খানিক সুস্থ। সামনের সপ্তাহ পরীক্ষা শুরু। হাতে হাতে দুই একটা কাজ করে দিতে চাইলেও ফাতেমা বেগম একদমই দেন না। মুখের সামনে মেয়ের খাবার ধরে রাখেন। মেয়েদের যত সুখ বুঝি বাবার বাড়িতেই। প্রতিটা মেয়ে যেন বাবার বাড়ির একেকটা রাজকন্যা। এই যে সুস্থ তবুও মা কোনো কাজ করে দেন না বরং মুখের সামনে খাবার নিয়ে খ্যানখ্যান করেন একটু পরপর। অথচ শ্বশুর বাড়িতে আদৌও কখন এমন সম্ভব? কি জানি মেয়ে কিভাবে সামলাবে শ্বশুর বাড়ি। এসব ভেবেই ফাতেমা বেগম মাঝেমাঝে নীরবে অশ্রুবিসর্জন দেন।
মায়রা এখন সুস্থ। ভালো চিকিৎসা আর এন্টিবায়োটিকের প্রভাবে মায়রার হাত এখন শুকিয়ে গিয়েছে একদম। খুব বেশি মস্তিষ্কে চাঁপ না দিলে মাথা ব্যথাটাও করছে না।
রোজ সময় করে ইহামের সাথে তার ভিডিও কলে কথা হয়। মানুষটার সাথে তার সরাসরি দেখা হয় না আজ ১ মাস ১ সপ্তাহ। মানুষটার উষ্ণ নিশ্বাস, শক্ত দৈর্ঘ্য বুকটায় মাথা রাখা হয় না লাগে যেন অনেক বছর। রোজ নিয়ম করে কথা হয় কিন্তু এমন দিন নেই যে “বেয়াদব” ডাকটা বলে না ওই পাষাণ লোকটা। কাল নিজেই তাকে জানিয়েছে আজ ইসহাক চৌধুরী আর শিফু আসবে তাদের বাসায় তাকে দেখতে। শিরিন বেগমেরও তো আসার কথা ছিলো তবে কি তিনি আসবেন না?
মধ্যাহ্নের সময় চলছে। শিরিন বেগম মলিন মুখে বসে আছেন ড্রয়িংরুমে। চোখ মুখের অবস্থা ভালো নয়। ফোনটা বেজে উঠলে তিক্ত মুখে এগিয়ে গিয়ে ফোন নেন। সোফায় বসতে বসতে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে ইহামের সালাম আসে। তিনি জবাব নেন।
“শিফু বাবা গিয়েছে মা?”
“হুম। এগারোটার পর বের হয়েছে।”
“তুমিও না বলেছিলে যাবে? গেলে না?”
“ও, তা তুই কৈফিয়ত নিতে কল দিয়েছিস নাকি? যে তোর শ্বশুর বাড়ি কেন গেলাম না? মা কে খুব খারাপ ভাবিস তাই না? মনে করছিস মা রেগে তোর শ্বশুর বাড়ি যায়নি তোর বউকে দেখতে তাই তো?”
বিষণ্ণ গম্ভীর মুখে বললেন তিনি।
“না মা। আমি মুটেও এমন কিছু ভাবছি না।”
“….
“এসব ভাবতে যাবোই বা কেন? যেখানে তুমি নিজ মুখে আমায় বললে মায়রা কে একটা বার গিয়ে দেখে আসার কথা সেখানে এসব ভাবার কোনো মানে আছে কি? জবাব দাও?”
ছেলের কথাতে শিরিন বেগম একটু সন্তুষ্ট হোন। খানিক মেঘ সরতেই বলে উঠেন,
“আমিও যেতাম। কিন্তু মাথা ব্যথা এত বেড়েছে যে তাকাতেও কষরত করতে হচ্ছে। চোখ ফুলে গিয়েছে। নয়তো আমি নিজেও যেতাম ওদের সাথে।”
মেদিনী তে গোধূলি নেমেছে। মায়রা আর শিফু খাওয়াদাওয়া শেষে বিছানায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। মেয়েটা উষ্কখুষ্ক করে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
“ভাবি, তোমার ভাই এর সাথে কথা হয়?”
মায়রা গভীর ভাবে তাকালো শিফুর দিকে। মেয়েটা অস্বস্তিতে কেমন হাসপাস করছে। তুহিন ভাই বিদেশ গিয়েছে আজ এক মাস হয়। শিফুকে দেখলে তার যেমন মায়া লাগে তেমনি লোকটার উপর রাগও হয়। এই বিষয়ে তিনি কি একটু বেশিই জেদ করেননি? সে ধীর গলায় নিজে প্রশ্ন করে,
“কেন তোমার সাথে কি ভাইয়ার কথা হয়?”
শিফু মলিন মুখে মাথা নুয়ায়। এপাশ ওপাশ করে জানায় না ইঙ্গিত দিয়ে। যদিও এক মাসের মাঝে পরশু রাতে একবার তুহিন নিজেই কল দিয়েছিল। কিন্তু এক মিনিটের বেশি তাদের কথা হয়নি। ওপাশ থেকে তুহিন ভাই কে কেউ ডাকছিল বলে কল কেটে গিয়েছে।
মায়রার ফোন বাজতেই এগিয়ে গিয়ে পড়ার টেবিল থেকে ফোনটা তুলে নেয়। রিসিভ করে সালাম জানালেও ওপাশ থেকে সালামের উত্তর না দিয়ে ইহাম কেমন হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“কাল প্রাইভেট যাওয়ার সময় কি হয়েছিল?”
আচমকা এমন প্রশ্নে থমকায় মেয়েটা। ভয়ে কপাল কুঁচকায় মৃদু। ঢোক গিলে থেমে থেমে জানায়,
“ক কি হবে? প্রাইভেট শেষ করে বাসায় এসেছি?”
মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪৪
মুহূর্তে ওপাশ থেকে ভয়ংকর চিৎকারে কান তব্দা হয়ে উঠে মায়রার। শোঁ শোঁ শব্দ হতে থাকে যেন কানের ভেতর।
“বেয়াদবের বাচ্চা একদম মিথ্যা কথা বলবি না আমায়। সত্যি সত্যি বল কাল বাড়ি ফেরার পথে কিছুই হয়নি তোর সাথে? যদি একটাও মিথ্যে কথা বলিস জবান কেড়ে নিবো কিন্তু মায়রা।”