যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ৫
মম সাহা
সাঁঝের অম্বরে খেলা করছে একঝাঁক কুহেলিকা। নতুন কিশোরী ধবধবে শুভ্র রঙের শাড়ি পরে আবছায়া অন্ধকারে মিলিয়ে গেলে যেমনটা লাগে ঠিক তেমনটা লাগছে মাথার উপর বিশাল দিগন্তে ছড়িয়ে পড়া গগণটাকে। চাঁদনী দাঁড়িয়ে আছে তার নিজের রুমের বারান্দায়। মাত্রই কাজ থেকে ফিরেছে। বুটিক হাউজে টুকটাক কাজ করে সে।এতে একা সময়টা কাটাতে সুবিধা হয়।
সদ্য গোসল করে আসায় চুল বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছে অজস্র। কফির কাপটা খালি হয়নি তখনো। ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেলটা বেজে উঠল। চাঁদনী থাকে একা। তার বাসায় তেমন কেউ আসার কথা না। এই সময়ে তো না-ই। টুইংকেল হতে পারে কিন্তু টুইংকেল তো গিয়েছেন পাশের শহরে! নানান জল্পনা-কল্পনা করে কফির কাপটা বারান্দাতেই রেখে চাঁদনী রুম থেকে বের হলো। নিঃশব্দেই দরজাটা খুলল। দেখলো কেউ নেই বিপরীত পাশে। শূন্য আছে দরজার পাশটা। চাঁদনী কিছুটা অবাক হলো। এই সময়ে কে এমন ঠাট্টা করলো ভাবতেই তার কিছুটা বিরক্ত লাগলো।
চারপাশে তাকিয়ে ঠিক যেই মুহূর্তে নিচে তাকাল দেখল একটি সাদা কাগজ যেন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে মাটিতে। দুমড়েমুচড়ে পড়ে থাকা কাগজটার দেখে আগ্রহ না জাগারই কথা কিন্তু চাঁদনীর জাগলো। কারণ এই দেশে যেখানে-সেখানে কিছু ফেলে রাখা হয় না। তা-ও অপ্রয়োজনীয় কিছু। সবসময় সবটা থাকে ঝকঝকে পরিষ্কার।
চাঁদনী আনমনেই ভাবতে ভাবতে কাগজটা তুলে নিল। দুমড়েমুচড়ে থাকা ভাঁজ খুলল আলগোছে। সাদা কাগজটায় গোটা গোটা অক্ষরে লিখা—
দহনের দিন গুলোর যত আপন ব্যথা,
আমি জানিয়ে দিবো সব, গিলেছি কত কথা।’
অক্ষর গুলো, লেখার ভঙ্গি খুব পরিচিত। সেদিনের আসা চিরকুটের সাথে এই লেখা গুলোর দারুণ মিল। চাঁদনী তপ্ত শ্বাস ফেলে দরজাটা আটকে দিলো। মনের কোণে যে-ই নামটা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে সেই মানুষটা তার আশেপাশে আসার কথা নয়। তাহলে কে করছে এটা?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তন্মধ্যেই ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দ হলো। হাতের কাগজটা নিয়ে ঘরে গেলো সে। টেবিলের উপর কাগজটা রেখেই ফোনটা তুলে নিল। হোয়াটসঅ্যাপে নিজের দেশের একটু অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। নাম্বারটি দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো তার। মেসেজ ওপেন করতেই দেখল দু’টো শব্দ,
‘আমি শাহাদাৎ।’
চোখের পলক, বুকের হৃৎস্পন্দন খানিক কেঁপে উঠল। আজ আর চোখ ঝাপসা হয়নি। না পাওয়ার কোনো ব্যথায় হৃদপিন্ডটা ছলাৎ করেনি। কেবল ছোটো, খুবই ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস বুক থেকে বেরিয়ে এসেছে। চাঁদনী সেই শ্বাসটাকে মুক্ত করেই রিপ্লাই করল,
‘ফোন নাম্বার পেলে কীভাবে?’
মেসেজ পাঠিয়েই ফোনের স্ক্রিনের আলোটা বন্ধ করল। বন্ধ করল রুমের আলোটা। আবার আরামপ্রিয় ব্যক্তির মতন হেঁটে পৌঁছালো বারান্দায়। ফোনের বন্ধ আলোটা আবার জ্বলে উঠল। ওপাশ থেকে শাহাদাৎ এর নতুন মেসেজ,
‘তোমার আম্মুর থেকে নিয়েছি।’
মেসেজটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইল চাঁদনী। ওন মা যে কেন এত বোকা তা ও বুঝে উঠতে পারে না। যেখানে ও বার বার করে সবাইকে বলেছে ওর যোগাযোগ নাম্বার, ঠিকানা যেন কেউ না পায় সেখানে মায়ের কি এটা করা উচিত হয়েছে?
কিছুটা ভোঁতা বিরক্ত নিয়ে চাঁদনী রিপ্লাই করল,
‘কোনো দরকার?’
ওপাশে সাথে সাথে সিন হলো। থ্রি ডট গুলো ঢেউয়ের মতন কাঁপছে স্ক্রিনে। মনে হচ্ছে ওপাশের মানুষটি বেশ গুছিয়ে, সময় নিয়ে কিছু লিখছে। চাঁদনী তাই অপেক্ষা করল। দরকারটুকু শুনে এরপর নাহয় বলবে, তুমুল দরকারেও আর ওকে খুঁজতে যেন না আসে। ও দূরে চলে এসেছে। অনেক দূরে। দরকার, অদরকারের সম্পর্কের বাঁধন ছিন্ন করে ফেলেছে আজ আড়াইটা বছর তো হতে চললো!
“আমার ওয়াইফের আবার মিসক্যারেজ হয়েছে! তোমায় কষ্ট দিয়ে ছিলাম তার ফল পাচ্ছি আমি।”
বিয়ের প্রথম প্রথম একবার না মিসক্যারেজ হলো শাহাদাৎ-এর স্ত্রীর? আবার! চাঁদনীর বেশ খারাপ লাগল। তবে ফর্মালিটিটুকু বজায় রেখে বলল,
“যত্ন নিও ওর। তাছাড়া বয়স তো কম ওর, আরেকটু সময় দাও।”
মেসেজটুকু লিখতে গিয়ে একবারের জন্য হাতটা থেমে গিয়েছিল। যে-ই লোকটার সাথে তার আট বছরের প্রেম ছিল এমনকি বিয়ে করেছিল আড়ালে, যেই লোকটার সাথে ও পরিপূর্ণ,সুখী সংসারের স্বপ্ন দেখেছিল সেই লোকটিকে আজ স্বান্তনা দিতে হচ্ছে অন্য কোনো একটা মেয়েকে স্ত্রীর রূপে দেখে! এজন্যই হয়তো বলে ভাগ্যের খেলা বুঝা দুষ্কর।
“চাঁদ, তুমি আমাকে ক্ষমা না করা অব্দি হয়তো আমি ক্ষমা পাবো না। আমার সাথে এসব চলতেই থাকবে। তোমার সাথে বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি। ক্ষমা কি করা যায় না একটিবার?”
এই মাঝারি আকারের মেসেজটি দেখে হাসল চাঁদনী। হাসারই তো কথা! সে এই দেশে এসেছে অনেকগুলো দিনতো হলো! নিজের পরিবার-পরিজন, আপন মানুষদের ছেড়ে তো তার এখানে আসার কথা ছিল না। না ছিল একা থাকার কথা। শাহাদাৎ নামক মানুষটা ভালো করেই জানে আজ চাঁদনীর একাকীত্বের সমস্ত দায় কেবল আর কেবলমাত্র তার। অথচ একটাবার এতদিনেও এক টুকরো মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করল না একাকী জীবন মেয়েটার কেমন কাটছে! আদৌ ভালো আছে কি-না সে নিজের ব্যক্তিগত দুঃখ গুলো সামলে। এতদিন একবারও অনুভব করেনি সে যে মেয়েটার সাথে অন্যায় করেছে। আজ দুঃখের দিন বলে মনে হচ্ছে অন্যায়ের কথা। দুঃখ ফুরিয়ে গেলে ঠিক আবার ভুলেই তো যাবে!
চাঁদনী এতসব মনের কথা ব্যক্ত করল না। কিছু কথা আড়ালে থাকা ভালো। তাহলে সামনের মানুষটি বুঝতে পারবে না কতটুকু ঝড় বয়ে যায় অন্তরে। কতটুকু গর্জনে ধ্বংস হয় একটি হৃদয় প্রতিনিয়ত!
“আমি তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি, শাহাদাৎ। তোমায় ছেড়েছি মানে তোমার সম্পর্কিত সব ছেড়েছি। রাগ, অভিযোগ, অভিমান, ঘৃণা কিংবা ক্ষমা। তোমায় তো মনের কোথাও, কোনো অনুভূতিতে রাখিনি। শুধু শুধু এসব বলে অস্বস্তি অনুভব করিও না আমাকে।’
মেসেজটুকু সেন্ড করেই নীরবে ব্লক বাটনে ক্লিক করে আটকে দিলো, থামিয়ে দিলো এই যোগাযোগ। তার একেকটা শব্দ বড়ো মূল্যবান। ছেড়ে দেওয়া মানুষের জন্য সেসব শব্দ কেন ব্যবহার করবে সে? যাকে ছেড়ে দিয়েছে তার ছায়ার থেকেও বহু কিলোমিটার দূরে চলে এসেছে। তাহলে নতুন করে আবার কেন নৈকট্যের গল্প হবে?
ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। জুনের শহরে অসহ্য রোদ কিংবা ঝুম বৃষ্টি অবাকের কিছু নয়। জুন মাস হলো প্রেমের মতন। জ্বালিয়েও দিতে পারে আবার শীতলও করতে পারে।
রাত তখন আনুমানিক দশটা। চিত্রার ঘরে আজ আলো জ্বলছে। বাতাসে এলোমেলো উড়ছে বাতায়নের পাশ ঘেঁষে থাকা পর্দা গুলো। চিত্রা আজ রুম অন্ধকার করে, স্লো মিউজিক দিয়ে মহা আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে বৃষ্টি দেখছে না। বরং সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শুকিয়ে যাওয়া, শতসহস্র বছরের ক্লান্তির ধূলো কণা মাখা মুখটা দেখছে। নিখুঁত ভাবে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে কয়টা ব্রণের দাগ কিংবা কতটুকু পরিমাণ অবসাদ জমেছে গালে, ঠোঁটে কিংবা চোখের নিচে। দেখতে দেখতে ঘোর লেগে গেলো নিজের আঁখি দু’টোতে। আহারে! নিজের প্রতি নিজে এতটা অন্যায় কবে, কখন করে ফেলল টেরই পেলো না সে! এতটা অযত্ন কীভাবে করল! কার জন্য করল? যে তাকে ছেড়ে গিয়েছিল এক বুক আশা দেখিয়ে তার জন্য?
চিত্রা বিড়বিড় করল আয়নার দিকে তাকিয়ে। আপন মনে বলল,
“লোকে বলতো, এই পৃথিবীতে আমরা নিজের সাথে নিজে যতটা অন্যায় করি ততটা অন্যায় আর কেউ আমাদের সাথে করতে পারবে না হয়তো! লোকের কথা এভাবে জীবনটার সাথে মিলে গেল!”
সত্যিই তাই। এই পৃথিবীতে আমরা নিজের প্রতি নিজেরা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অন্যায় গুলো করি। কিন্তু এই উপলব্ধিটুকু হতে হতে আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলি। এমন ভাবে হারাই যেমন ভাবে হারালে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ হয় না কখনো।
বাহিরে বেশ বড়োসড়ো বজ্রপাত হলো। কানে তালা লেগে যাওয়ার জোগাড়। চিত্রা আজ ভয়ে চমকালো না, কুঁকড়েও গেলো না। বারান্দার দরজাটা আটকানো বিধায় বজ্রপাতের আলোর ঝিলিক তেমন বুঝতে পারল না। জানালা দিয়ে যতটুকু দেখলো তাতে মনে হলো বেশ ভয়ঙ্কর ভাবেই গর্জেছে আকাশ। মিনিটের মাথার শুদ্ধ, কোমল ধরণীকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলো। পুরো বাড়ি, পাশের বাড়িগুলো, মহল্লা জুড়ে অন্ধকার নেমে এলো রাজ বেশে।
চিত্রা ছোটো ছোটো পা ফেলে ঘর থেকে বের হলো। আজ আর কষ্ট করে মা’কে ডাকতে আসতে হলো না, মোমবাতি নিয়ে মেয়েকে খুঁজতে আসতে হলো না। তার আগেই মেয়ে নেমে গিয়েছে। সৌরবিদ্যুৎ-এর আলো জ্বলে উঠেছে বাড়ি জুড়ে তবে সেটাও তেমন ঝলমলে আলো দিতে পারছে না।
ড্রয়িং রুমে কেউ নেই। রান্নাঘরে আছে মা-চাচীরা। চিত্রা সুযোগ বুঝে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। গেইট অব্দি পৌঁছাতেই দেখলো এলাকার মোড়ে মোড়ে এখনো তেমন আলো জ্বলছে না। মোটামুটি চারপাশ শান্ত, শীতল। কতদিন পর এমন করে বৃষ্টিতে ভিজলো সে! ঠিক কবে ভিজেছিল মনেই পড়ছে না। বৃষ্টির ফোটা যেন সকল ব্যথা অন্তর থেকে ধুয়েমুছে নিচ্ছে। কী এক আলাদা শান্তি! স্বস্তির এই জীবন।
রাস্তা ফাঁকা পেতেই ঠিক নাটকীয় ভঙ্গিতে দু-হাত দু’দিকে মেলে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়াল। এক, দুই, তিন, চার…… করে হাজারটা বৃষ্টির ফোঁটা যখন মুখে এসে আদুরে চুম্বন খেতে লাগল তখন চিত্রা ভুলেই গেলো এ দুনিয়া তাকে দুঃখ দিয়েছে। এ দুনিয়ায় সে মরে গেছে প্রায় আড়াই বছর হতে চলল। কতদিন বাঁচা হয়নি তার।
বৃষ্টির ছন্নছাড়া ধ্বনি, নিস্তব্ধ রাস্তায় খুব দূর থেকে একটি মানব অবয়বকে আসতে দেখা গেলো। চিত্রা নিরুত্তর তাকিয়ে রইল অবয়বের দিকে। পরিচিত, বহু পরিচিত অবয়বটা হাঁটতে হাঁটতে নিকটে চলে এলো। সেই সিগারেটের উদ্ভট গন্ধটা বৃষ্টির বাতাসে নাকে এসে লাগল। চিত্রা চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকের গতি বাড়ছে, বাড়ছে, বাড়ছেই। চিত্রা দাঁত মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে রইল! অবয়বটা তার পাশাপাশি দাঁড়ানো। অনেকটা সময় পর পুরুষালী স্বরটা ডাকল,
“রঙ্গনা….. ”
চিত্রার হার্টবিট মিস হলো। শ্বাস আটকে রাখল। এতদিন যেই মানুষটির প্রতীক্ষায় ছিল সে, আজ সেই মানুষটাকে কাছে পেয়েও দৌড়ে গিয়ে বুকে আছড়ে পড়ছে না। এতদিন যেই বুকটার প্রত্যাশায় সে জেগে ছিল আজ সেই বুকটার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। হয়তো কষ্টের সীমানায় যেই গভীর ক্ষত পড়েছে তা এক ডাকে মুছে যাবে না। মানুষের অভিমান, অভিযোগ যতদিন থাকবে ততদিন অব্দিই তো ফিরে এলে বুকের ভেতর জাপটে ধরার অধিকারটুকু বাঁচিয়ে রাখে। যেদিন থেকে মুছে নেয় সব অভিযোগ সেদিন থেকেই সে আর কারো ফিরে আসার অপেক্ষা করে না। প্রশস্ত বুকে মাথা রাখার অধিকার ছেড়ে দেয়। তবে চিত্রাও কি তুলে নিলো অভিমান, অভিযোগ?
বাহার ভাই আরেকটু এগিয়ে এলো। আরেকটু কাছে। নৈশব্দের ছন্দ ভেঙে করুণ ডাক, “আমায় একটু দেখো, রঙ্গনা। তোমার চোখ গুলো কাঁদছে। আমায় একবার দেখতে দেও তাদের!”
চিত্রা তাকাল তৎক্ষণাৎ। বাড়ির থেকে আসা ক্ষীণ আলোয় বাহার ভাইয়ের মুখ জ্বলজ্বল করে উঠল। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি হয়েছে। কোঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো, অযত্নে নেমে আছে কপালে। ঠোঁটটা পুড়ে পুড়ে কালচে প্রায়। গোল গোল চোখগুলে ডেবে গেছে যেন! কত রাত ঘুমায়নি মানুষটা? কত প্রহর অযত্নে রেখেছিল নিজেকে? কেন এই দশা দেহটার?
চিত্রার বড়ো আদর করে গুছিয়ে দিতে মন চাইল লোকটাকে। বড়ো আহ্লাদ করে বলতে ইচ্ছে হলো—
“এ কী করেছ নিজের! এতটা অযত্ন করেছ কেন? আমি তো জানতাম কেবল চিত্রার জন্যই তোমার সকল অন্যায়, অযত্ন। অথচ তোমায় দেখে তো মনে হচ্ছে চিত্রার চেয়েও বড়ো অযত্ন তুমি নিজেই নিজের সাথে করেছ! তুমি জানো না চিত্রার জান তোমার ভেতর? তাহলে কেন বারে বারে তার প্রতি তোমার এত অবহেলা?” কিন্তু বলা হলো না কথা গুলো। চিত্রা দাঁতে দাঁত চেপে গটগট করে ছুটে গেলো নিজের বাড়িতে। বাহার ভাই পেছন থেকে ভীষণ বিষ্ময়ে ডাকল,
“একটা বার ফিরেও দেখলে না, রঙ্গনা?”
যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ৪
প্রকৃতি বোধহয় হাসলো। যে মানুষ আমাদের নির্বাসিত জীবন দিয়ে চিরদিনের অপেক্ষায় ফেলে রেখে যায়, আশা দিয়ে মনকে ভেঙে আশি টুকরো করে, তারা কী ভাবে? তারা ফিরে এলেই আবার তাদের জড়িয়ে নেওয়া হবে? তাদের ভালোবাসা হয় বলে সব ভুল, দোষ ক্ষমা করে দেওয়া যায়? হাহ্! বোকা মানুষ। ভালোবাসা দিতে জানা মানুষটাও যে তুমুল অবহেলায় মুখ ফেরাতে জানে এই কথা কী করে যেন ওরা ভুলে যায়!