যাতনা আমার পর্ব ৩৫
সানজিদা ইসলাম সূচনা
সেদিনের পরে আজ পনেরোদিন পেরিয়ে গেছে। ইনায়া প্রথম কয়েক দিন করিম ভিলায় ছিলো। সেখানে থাকা কালিন তার সময় মুটামুটি ভালোই কেটেছে। মিনারা বেগম ইনায়াকে জায়ান প্রসঙ্গে কোনো কথা জিজ্ঞেস করেনি। ইনায়ার অনেক সেবা যত্ন করেছেন তিনি। জায়ানও তার সামনে খুব কম এসেছে। ইনায়া ও তাকে ইগনোর করেছে। কিছুটা রাগ কিছুটা অভিমান। তারপর সানিয়ার সাথে নতুন ফ্লাটে উঠেছে ইনায়া। ক্লাস কোচিং এইসব পার করে দিন কাটছে তার আপাতত। আজ অফ ডে, ইনায়া একটা ক্যাফেতে এসেছে সোহানা মির্জার সাথে কথা বলতে। হঠাৎ জরুরি তলব করায় ইনায়া একটু ভয়ে আছে। সাদা চুড়িদার পরা অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে ইনায়া। যার মুখে হালকা ঘামের রেশ। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সোহানা মির্জা হাসলেন। প্রথমেই সোহানা ইনায়ার পড়াশোনা চাকরি এইসব নিয়ে কথা তুললেও, হঠাৎ করেই কথার মোর ঘোরান তিনি। শান্ত গম্ভীর গলায় ইনায়া কে জিজ্ঞেস করলেন,
-” অতীত ভুলতে পেরেছো? না কি আরো একটা সুযোগের অপেক্ষা করছো? ”
ইনায়া গম্ভীর মুখে কফির কাপের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সোহানা মির্জার কথায় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে।
-” তুমি এই প্রশ্ন করছো মামনী? আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বুঝবে। তা তো দেখছি হলো না। ”
-” তোমাদের এই ছন্নছাড়া জীবনে কি আছে। তাকে মাফ করে আসন্ন ভবিষ্যৎ সুন্দর করলে দোষ কি? ”
ইনায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্যাফের জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। ভবিষ্যৎ? আসলেই সেটাতে কি লেখা আছে জানা নেই তার। হতে পারে ভালো আবার যাতনায় মুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে। সোহানা মির্জার দিকে ফিরে ইনায়া ম্লান কন্ঠে বলে উঠে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” স্বপ্ন কল্পনায় সুন্দর, জানো তো? নাভানের সাথে নয়টি মাসের সংসার কল্পনায় থাকুক। বাস্তবে তা আমায় দিয়ে সম্ভব নয়। ”
-” জানি সে পাপ করেছে মহা পাপ। এখন কি তাকে ক্ষমা করতে পারবি না? জীবনটা সুন্দর হতো। মায়ের মন তো? বারবার ক্ষমা করতে মনে চায়। ”
সোহানা কথাটা বলে ইনায়ার দিকে তাকালো। সে অন্য ভাবনায় মগ্ন যেন। কেটে গেলো কিছুক্ষণ। তারপর আচমকা ইনায়া শান্ত গলায় বলতে লাগলো,
-” উনার আমার প্রতি কোনো আগ্রহ ছিলোনা কখনো। বিয়ে করে যেদিন সে কানাডায় ফিরে গিয়েছিল, সেইদিন আমি নামক অচেনা মেয়েটাকে চিরদিনের জন্য স্মৃতি থেকে মুছে দিয়েছিলো। আর আমরা দুজনেই ঝুলে রয়েছিলাম বিবাহ নামক সম্পর্কে। যে সম্পর্কে কোনো প্রাণ ছিলোনা। যা ছিলো শুধু নামের। ছিলোনা কোনো স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা না কম্প্রোমাইজ, না ছিল মান অভিমান। বাবা-মা বেচে থাকলে হয়তো নাভান যাওয়ার পরেরদিনই তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত আমার। স্বামী ছাড়া এই নামের নয় মাসের সংসার হতো না হয়তো। ”
ইনায়া কথা গুলো বলে সোহানার দিকে তাকালো। তার চোখ জোড়া ছলছল করছে। ইনায়া হেসে উঠে বাকি কথায় গেলো,
-” কেমন লাগে? যখন একটা মেয়ে তার স্বামী কে অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে দেখে। যেটা তার প্রাপ্য সেটা অন্য মেয়েকে তার স্বামী দিয়ে দিবে, কি করে মানা যায় সেটা? আমি মানলাম সে পরিস্থিতির দায়ে পরে এমন হয়েছে। তবুও তাকে মাফ করে দিতাম। কিন্তু বিয়ের পরে সে আমার কোনো সম্মান রাখেনি। আমি তার কাছে অচেনার মতো ছিলাম। অদিতির সাথে ধোঁকার পরও তার আমার কথা মনে পরেনি। বিডি তে এসেছিলো আমাকে মুক্ত করতে। আমি তার কাছে সর্বদাই সেকেন্ড অপশন হিসেবে ছিলাম। যা আমার কাছে খুব জঘন্য ব্যাপার। মানতে পারবো না তাকে আর। পারবোনা মানতে। তাই তো মুক্তি দিয়ে দিয়েছি। তাকে বলো, সুন্দর ভাবে জীবন টা গুছিয়ে নিতে। আমি তার ভালোবাসায় নই, হয়তো মায়ায় জড়িয়ে আছি। যা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। ”
সোহানা মির্জা থমকালেন মাতৃত্বের টানে ইনায়ার কষ্ট কি করে ভুলতে পারলেন তিনি। স্ত্রী হিসেবে ইনায়ার অসম্মান, সবার কাছে লাঞ্চিত। এইসব কি ভোলা সম্ভব? ইনায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন। সে তো বলেছিলো ইনায়ার পাশে সবসময় থাকবেন। তাহলে? সোহানা হ্যান্ডব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন। কান্নারত চোখে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
-” জায়ান ভালো ছেলে। তোমাকে ভালো রাখবে। ভালো থেকো তুমি। ”
বলেই সোহানা স্থান ত্যাগ করলেন। ইনায়া আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পরে সেও বাইরে এসে রিকশায় উঠে। দুপুরের রোদ ঠিক মাথার উপরে। ইনায়া ঘেমে যাওয়া মুখটা মুছে নেয়। নাভানের কথা মাথায় আসতেই সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কবুলের জোরে তার প্রতি মায়া ভালোবাসা সে শেষ করে এসেছিলো মির্জা বাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে। যে পথে পথভ্রষ্ট হয়েছিলো সে পথে আবার নতুন করে পরবেনা সে। ইনায়ার ভাবনার মাঝেই নিজের সেই জায়গায় এসে থামে রিকশা। ইনায়া নেমে ভাড়া মিটিয়ে চারতলা বাড়িটার দিকে এগিয়ে যায়। দুতালার তিন রুম বিশিষ্ট ছোট একটা ফ্ল্যাটে উঠেছে তারা। ইনায়া তিন বার ডোরবেল বাজাইতে রোগা-সোগা শরীরের একটা মেয়ে দরজা খুলে। ইনায়া কে দেখে সে হাসলো।
-” ইনু মাই জান, কেমন কাটলো দিন? ”
-” খুব মিষ্টি, তোমার দিন কেমন ছিলো রায়া ? ”
ইনায়ার কথায় মেয়েটা মুখ গোমড়া করে ছোট ড্রয়িংরুমে আসে। ইনায়া ও তার পিছনে এসে ছোট সোফাটিতে বসে পরে। রায়া সানিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। ওরা তিনজনই একসাথে থাকে। রায়া গোমড়া মুখেই ইনায়াকে বলে ওঠে,
-” খুব বোরিং ছিলো আমার আজকের দিন। জানোইতো, আমার কপালে কোনো লাকী ডে নাই। ”
ইনায়া ইশারায় বোঝালো সানিয়ার কথা। রায়া মুখটা দুঃখী ফেস করে ফিসফিস করে বলে,
-” তার প্রেমিক ধলার সাথে কথা বলছে। তুমি যাওয়ার সময় যেমন যে পজিশনে দেখে গিয়েছিলে? তেমনই আছে। ”
ইনায়া সামনের টেবিলে রাখা পানির গ্লাস নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে,
-” সানিয়া কি জানে, তুমি তার আশিক কে ধলা বলো? ”
রায়া মুখ বাকিয়ে উঠে,
-” বলবো না তো কি? পুরাই চাইনিজ। এ ভুলবসত বাংলাদেশে ডাউনলোড হয়ে গেছে। ”
-” কে ডাউনলোড হয়েছে? ”
হঠাৎ সানিয়ার আগমনে রায়া চমকায়। ভোলানো হাসি দিয়ে কথা ঘোড়ায় সে,
-” তোর কথা শেষ? ব্রেকফাস্ট করবি তো। এখন অবশ্য লাঞ্চের সময়। তুই ব্রেকফাস্ট করে নে। ”
সানিয়া কুটিল দৃষ্টিতে রায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইনায়া হেসে উঠে। রায়ার মুখ আপাতত বন্ধ। সানিয়া
রায়া কে রেখে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে খোঁচা মেড়ে বলে,
-” বাহার যা কে দেখো। তোমহারা দিওয়ানা খারি হে। কাপতাক সে ইন্তেজার মে হে। ”
ইনায়া ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে। রায়া, সানিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়। তখনই তার নজর পরে, নিচে গাড়িতে হেলান দিয়ে থাকা জায়ানের দিকে। যে তার দিকেই শান্ত নজরে তাকিয়ে আছে। ইনায়া হকচকালো না। কারণ, এখানে আসার পর এটা নিত্যকার ঘটনা। ইনায়া দৃষ্টি জায়ানের দিকে রেখেই, ফোন বের করে জায়ান কে কল করে। জায়ানও রিসিভ করে। তার নজরও ইনায়ার দিকে।
-” কি চাই? আজ আবার নতুন বাহানা নিশ্চয়ই। ”
জায়ান বাকা হাসলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠে,
-” বোকা হরিণী, তোমাকে দেখার জন্য আমার বাহানার দরকার পরে না। নাম শুনলে তুমি নিজেই আমার সামনে চলে আসবে। ”
ইনায়া থমকালো। কথা সত্য, জায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-” ফোন রাখছি আমি। আপনি যান এখান থেকে। ”
-” দাড়াও, ব্যাগ গুছিয়ে জলদি চলে আসো। ”
-” কেনো? ”
ইনায়া অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো। জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
-” সাপ্তাহ খানিক সময় আছে তিথির বিয়ের। সেটা কি ভুলে গেছো? ”
ইনায়া মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করলো যেন। তার মনেই ছিলো না। তিথি গতকালকেও কল দিয়ে বলেছে তাড়াতাড়ি চলে আসতে। ইনায়া জায়ান কে সহসা বলে ওঠে,
-” আপনি চলে যান। আমি বিয়ের দুইদিন আগে ঠিক পৌঁছে যাবো। ”
উত্তরটা পছন্দ হলো না জায়ানের। সে অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলে,
-” তুমি কি চাইছো, আমি নিজে এসে তোমাকে রেডি করে নিয়ে যাই? তাহলে ঠিক আছে আমি আসছি। ”
-” একদমই না, আমি আসছি। ”
কথাটা বলে ফোনটা ধপ করে কেটে দিলো ইনায়া। হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে পড়লো সে। জায়ান হাসলো, খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠে,
-” তোমার আমার দুরত্ব শীগ্রই ঘুচতে চলেছে। সেদিন বেশী দূরে নেই। ”
সকাল থেকেই নিধির মেজাজ তুঙ্গে। ফাহাদ কে সে নানা ভাবে বলছে, তাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে। কিন্তু ফাহাদ তা নাকচ করে দিচ্ছে। নিধির কোনো বিশ্বাস নাই। বাড়িতে গেলে বদলে যেতে তার একটুও সময় নেবে না। তিথির বিয়ে নিয়ে বাড়ির সবার মধেই প্রচুর ব্যস্ততা। মিনারা বেগম নিশ্বাস ফেলবার সময় পাচ্ছেন না। তার মধ্যে আত্নীয় স্বজন সব বিয়ের চারদিন আগেই চলে আসবে। ফাহাদের এমন হুট করে বিয়ে করার বিষয়টা কি করে সামলাবেন তিনি? এটা নিয়েও দুকথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন নিধিকে। সে থেকেই পাগল নিধির পাগলামি আরো বেড়েছে। সে এখন বাড়ি যাবেই। নিধির পড়নে একটা জাম কালারের সেলোয়ার স্যুট। ফাহাদ তাকে জিন্স শার্ট পড়তে নিষেধ করে দিয়েছে। একগাদা শপিং করে এনেছে নিজের পছন্দ মতো। ফাহাদ দুদিনের জন্য শহরের বাইরে যাবে একটা ইম্পরট্যান্ট একটা কাজের জন্য। না গেলেই নয়। সাদা পাঞ্জাবি পরে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে ফাহাদ। নিধি তার পেছনে এসে দাড়িয়ে বাজখাঁই গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” আমাকে দিয়ে আসবেন না বাড়ি? ”
-” যেটা সম্ভব না সেটা নিয়ে বারবার কথা বলা পছন্দ করিনা আমি। ”
নিধি রেগে ফাহাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাগে লাল মুখটা আরো লাল হয়ে আছে।
-” আমাকে জোর করে কতোদিন বেধে রাখবেন? ”
-” যতোদিন নিঃশ্বাস চলবে, ততোদিন। ”
-” নিঃশ্বাস টা যদি বন্ধ করে দেই? ”
-” তবে ভুত হয়ে ফিরে আসবো। ”
-” খুবই জঘন্য। ”
নিধি রাগান্বিত হয়ে ফাহাদের বেস ভুস দেখে শুধালো,
-” আপনি কোথাও যাচ্ছেন? ”
-” হুম জরুরি কাজে দুইদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। ”
নিধি চমৎকার হাসলো। তারপর ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো,
-” আপনার আর জরুরি কাজ? নিশ্চয়ই কারো ক্ষতি করতে যাচ্ছেন? যাইহোক, দুইদিন আরামে থাকতে পারবো। ”
ফাহাদ সরু চোখে নিধির দিকে তাকিয়েই থাকলো। আলতো পায়ে হেঁটে নিধির নিকটস্থ গিয়ে দাঁড়াল। হাইটে ছোট বিধায় নিধি মাথা উঠিয়ে ফাহাদের দিকে তাকালো। ফাহাদ আস্তে করে বলে উঠে,
-” ট্রাস্ট মি? তোমাকে এই দুইদিন আরামে থাকতে দিচ্ছি না। ”
কথাটা বলে ফাহাদ নিধির কোমড় জড়িয়ে আরো কাছে আনলো। মিলিয়ে দিলো দু জোড়া ওষ্ঠদ্বয়। অনুভূতির সাগরে যখন ফাহাদ। নিধি তখন আশ্চর্যের পর্যায়ে। তিন মিনিট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করলেও, হঠাৎ করেই চোখ খুলে নিধি। চোখের কার্নিশ ঘেঁষে গড়িয়ে পরলো এক ফোটা পানি। নিধি জোরে সড়িয়ে দেয় ফাহাদকে। তাতেই শান্ত হয়নি নিধি। ফাহাদের বাম গালে ঠাস্ করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ফাহাদ হতবাক হয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে। নিধি রীতিমতো কাপছে। সে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকালো। কম্পিত গলায় হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে,
-” আর কতো জোর করা হবে? আমি নিতে পারছি আর। আমাকে মুক্তি দিন। মুক্তি চাই আমার। ”
ফাহাদ কতক্ষণ স্তব্ধ থেকে হেসে উঠে। নিজের ব্যাগ হাতে নিয়ে যেতে যেতে বলে ওঠে,
-” আমি আর ফিরে না আসলে তোমার যাওয়া কনফার্ম। দেখো, দোয়া করো আল্লাহর কাছে। যেন না আসি। ”
কথাটা বলে ফাহাদ রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো। নিধি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শুধু।
রাস্তার পাশে জনমানবহীন জায়গায় দাঁড়িয়ে জায়ান ইনায়া। তীব্র গতিতে বাতাসের ঝাপটা এসে গায়ে লাগছে তাদের। গলায় পেচানো কালো উড়না টা বাতাসে ঝাপটিয়ে চলছে। গোধুলির বিকেলের শেষ দিক, পশ্চিম দিকে সূর্য লাল থালার ন্যায়। সেই উত্তাপ লাল আভা ফুটে উঠেছে জায়ানের মুখে। ইনায়া দূর দৃষ্টিতে এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। পাশে জায়ানের দিকে ফিরে সে। অতঃপর শুকনো মুখে জিজ্ঞেস করে,
-” আমরা ফিরবো কখন? ”
-” আমাকে এতোদিন ইগনোর করার কারণ কি, জানতে পারি? ”
ইনায়ার গলা শুকাল। নিচু দৃষ্টি রাখলো জায়ানের দিকে। কথা এলো না আর। কি জবাব দেবে? এতো কিছু হঠাৎ করে হওয়াতে মানতে পারেনি। তবুও জায়ানের চোখে দৃষ্টি মিলিয়ে মিনমিন স্বরে বললো,
-” অদিতির সাথে কাজটা ঠিক করেননি আপনি। এটা আমার খুব খারাপ লেগেছে। ”
জায়ানের নজরের হেলদোল হলো না। তা ঠিক রেখেই গম্ভীর গলায় বলে,
-” এই খারাপটা তোমার সাথেও হতো। বুঝতে পারছো তো? ”
-” তাহলে তার সাথে আমাদের পার্থক্য কি রইলো? ”
জায়ান এবার ইনায়ার কাছে গিয়ে দাড়ালো। মুখটা কিঞ্চিত পরিমাণের বাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
-” অদিতি কতোটা চিফ মেন্টালিটির তোমার জানা নেই। এগুলো ওর কাছে দুধভাত। হ্যাঁ যা ওর মতে হয়। তা এখন অমতে হয়েছে। পার্থক্য এটাই। ”
ইনায়া চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। জায়ান ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধালো,
– ” খলিল, আমাদের বিরোধী দলের লোক। সে বিয়ে করেনি এখনো। কিছু মেয়েদের পছন্দের সুগার ড্যাডি। আর অদিতিও সেই মেয়েদের একজন। সেদিনের ছেলে গুলোও খলিলের লোক। খলিল কে ধরেই সে এইসব গেম খেলছিল। এইসব বিস্তারিত তোমাকে পরে বলবো আর একবার। কারণ, কিছু জিনিস এখনো আমার অজানা। ”
ইনায়া আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। একটা মেয়েকে আর কতো ভাবে ঘৃণা করা যায় জানা নেই তার। নিজেকে? নিজের শরীর কে এতোটা সস্তা কেনো করে এসব মেয়েরা? ইনায়ার ভাবনার মাঝেই জায়ান তার হাত ধরে। ইনায়া ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে জায়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করে। জায়ান এবার মৃদু স্বরে বলে উঠে,
যাতনা আমার পর্ব ৩৪
-” সামনের সপ্তাহে অনেক বড়ো সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য। রেডি থেকো। ”
ইনায়া জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকালো। জায়ান হাসলো। ডুবে যাওয়া সুর্যের দিকে একবার তাকিয়ে বলে ওঠে,
-” দিন খুব নিকটে। যেদিন আমি তোমাকে পেয়ে যাবো। সেদিন পৃথিবীতে হয়তো একমাত্র আমিই হবো যে বুক ফুলিয়ে পৃথিবীকে জানান দিতে পারবে, আমিই সবচেয়ে সুখী মানুষ। ”