যাতনা আমার পর্ব ৩৭
সানজিদা ইসলাম সূচনা
হাতে ময়ূরের পালকের কলম, যেটার পালক গুলো আপাতত ভেঙে আছে। ইনায়ার রাগ হলো, প্রচন্ড রাগ। টলমলে চোখের একফোঁটা পানি, গোলাপি আভার গাল স্পর্শ করলো। নাকের ডগা হলো টুকটুকে লাল। ঠোঁট উলটে এলো প্রায়। অসন্তুষ্ট হয়ে সামনে অতি সুদর্শন হোয়াইট ব্লেজার পরহিত নাভানের পানে তাকালো। নাভান ইনায়ার এমন বাচ্চাসুলভ কান্নায় হতবাক হলো। আর কতো নিজের ভিন্ন রুপ দেখাবে এই অপার সৌন্দর্যের নারী?
বিয়ের কাবিননামায় বর কনে উভয় সাইন করবে এই কলমটা দিয়ে। যেটা নিধি গিফট করেছিলো ইশানকে বিয়ের দুইদিন আগে। গেস্ট রুমে ডালায় রাখা ছিলো সেটা। ইনায়ার দায়িত্ব ছিল সেটা স্টেজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। কিন্তু? ডালা নিয়ে আসার পথে আচমকা নাভানের সাথে ধাকা খায় ইনায়া। তাতেও সমস্যা ছিলোনা। ডালা পড়ে কলমের স্থান হলো নাভানের পায়ের তলায়। যার দরুন পালক কিছুটা ভেঙে এবং বেকে আছে। এখন কি হবে? তাই ভেবে ইনায়ার এমন কান্না পেলো। সে গম্ভীর গলায় নাভানকে শুধালো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” দিলেন তো শেষ করে? এখন কি হবে? বিয়েতে এইটা দিয়েই সাইন করার কথা ছিলো। ”
নাভান জবাব দিলো না। গভীর চোখে পরক্ষ করলো ময়ূর পালকের কলমটা কে। চোখের সামনে ধরা দিলো কিছু আবছা স্মৃতি। যা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলোতে এক কোনায় পরেছিলো। যেটা হয়তো স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন। নাভান হাত বাড়িয়ে ইনায়ার থেকে কলমটা নেয়। শান্ত ম্লান গলায় বলে ওঠে,
-” আমি দেখছি কি করা যায়। ”
বলেই ফোন বের করে কাউকে মেসেজ করলো নাভান। ইনায়া রা করলো না। চুপচাপ দেখতে লাগলো নাভানের কর্মকান্ড। কিছুক্ষন বাদে একজন ছেলে নাভানকে একটা ব্যাগ দিয়ে গেলো। নাভান একপলক ইনায়ার দিকে তাকিয়ে, পাশের একটা টেবিলের পাশে চেয়ারে বসে পরে। ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করে নাভান নিজের কাজ শুরু করে দেয়। ইনায়া দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। টেনশনে কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে তার। নাভান মাঝেমধ্যে ইনায়ার দিকে দৃষ্টিপাত করছে। সেইদিনের পর আজ প্রথম দেখা তাদের। কতো কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়ও তা নাভানের জিভের গোড়ায় আটকে আসছে। সময় নিয়ে নাভান সবটা ঠিক করলো। ইনায়ার কাছে কলমটি ফেরত দিয়ে বলে উঠলো,
-” এবার ঠিক আছে তো? ”
ইনায়া কলমটা ফের পরোক্ষে করলো। নাহ, আগের থেকে এটাকে আরো সুন্দর করে দিয়েছে নাভান। ইনায়া কৃতজ্ঞতা স্বরে বলে উঠে,
-” ধন্যবাদ, আসলেই সুন্দর হয়েছে এটা। ”
নাভানের দৃষ্টি স্থির হলো তাতে। চোখের দৃশ্য পটে ভেসে উঠে আবারো প্রায় একবছর আগের স্মৃতি। বড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাভান। চোখ রাখে ইনায়ার পানে। মুখটা মলিন করে শুধালো,
-” কিছু মনে পরলো ইনায়া? ”
সাবলীল ভাবে জানতে চাইল নাভান। চোখে তার আকুল আগ্রহ। যে স্মৃতি তাকে এতো বিরল হয়ে যাতনায় বিদীর্ণ করে তুলেছে, সে স্মৃতি কি তাকে ও কিছু মনে করায়? জানতে চায়ছে তার ভেতরটা। ইনায়া কলমটায় চোখ স্থির করে। আগে ময়ুরের পালক থাকলেও, নাভান এখন তার সাথে জোড়া ময়ূরের স্টিক লাগিয়ে দিয়েছে একটা। যেমনটা তাদের বিয়ের কলমটায় ছিলো। যেটা নিধির বানানোই ছিলো। সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা মস্তিষ্কে হাতছানি দিয়ে যাচ্ছে বারবার। ইনায়া পলক ঝাপটালো কয়েকবার। ঘুরিয়ে দেখলো ময়ূরাক্ষীর সেই প্রেমময় যুগলবন্দী। ইনায়া তাচ্ছিল্যের সুরে হেঁসে বলে উঠলো,
-” এতো সে-ই বিভীষিকাময় রাতে দুর্ধর্ষ মরিচীকা পত্রের লেখনী। যা দিয়ে শুধু আমি একা নাম লিখে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ফের পথহারা পথিকের মতো একাই ছুটেছিলাম সেই মরিচীকার পেছনে। সেখানে আর কেউ ছিলোনা, কেউ না। শুধু আমার হৃদয় নিংড়ানো যাতনা ছাড়া। সে লেখনী কি করে ভুলবো বলুন? ”
নাভানের দৃষ্টি শীতল হয়। ইনায়া কলমটা ডালায় রেখে নিজের গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতেই, নাভান মলিন কন্ঠে বলে উঠে,
-” নেক্সট উইকে আমি কানাডায় ব্যাক করছি। হয়তো এটাই আপাতত শেষ দেখা। ”
ইনায়া ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরে। মুখে ফিচেল হাসি টেনে এনে মৃদু স্বরে বলে উঠে,
-” অবশ্যই! কারণ আপনি যে কাজের জন্য এসেছিলেন, সেটাতো হয়েই গেছে। এখন তবে ফিরতে পারবেন। ”
ইনায়া কন্ঠে অভিমান নাকি উপহাস ছিলো, তা ঠাওর করতে পারলো না নাভান। শীতল চোখেই তাকিয়ে রইলো সামনের অদ্ভুত রমনীর দিকে। যাকে এক দেখায় ভাংচুর মনে হলেও পরক্ষনেই মনে হবে সে ইস্পাতের চেয়ে দৃঢ় কঠিন। ইনায়া যেতে-যেতে ফের একটা কথা বলে ওঠে,
-” আপনার জীবন টা কে ভালো রাখবেন। আজকে যা দেখছেন সবই মরিচীকা। এটাকে সঙ্গী করবেন না ভুলেও। ”
নাভান দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেখলো তার শেষ যাওয়া অবধি। নেই, কেউ নেই। আসলেই সব মরিচীকা।
ইশান আর তিথির ফটোসেশান শুরু হয়েছে সেই কখন থেকেই। ক্যামেরার ফ্লাশ ও ক্লিকের শব্দ, এসব কিছুতে আয়েশা মির্জার মাথা ধরে গেছে। একে একে পরিবারের সবাই তাদের সাথে ফটো তুলা শেষ হলে, আয়েশা মির্জা ফটোগ্রাফারকে আপাতত স্থির থাকতে বললেন। তার মাথায় ধরে গেছে অনেকটা। কাজী আর রেজিস্ট্রার নিজেদের কাগজ পত্র গুছিয়ে নিয়েছেন। আয়েশা মির্জা আবার চোখ রাখে করিডোরে ইনায়ার খোঁজে। মেয়েটা যে এখনো এলোনা। এতোক্ষণ লাগে ডালাটা আনতে? নাওয়াজ মির্জা আর নাহিদ মির্জা মিজানুল করিমের সাথে আপাতত কাবিনের টাকা নিয়ে কথা বলছেন। আয়েশা মির্জা চোখ ঘুড়িয়ে ইশান আর তিথির দিকে তাকালো। তারা দুজনেই হাসি খুশিতে কথা বলায় মশগুল। আয়েশা মির্জা তেতলেন। মুখ বাকিয়ে বলে উঠেন,
-” তোদের কি লজ্জা সরম নাই? বিয়ের দিনে বর কনে এমন হাত ধরাধরি করে হাসে? বেসরম। আমাদের কালে জামাইর সাথে একমাসেও এতো ফ্রী হই নাই। আর তোরা? ”
আয়েশা বেগমের তিতা কথায় ইশানের দাত কেলানি হাসি বন্ধ হয়ে যায়। আজকে তার বিয়ে বলে গিন্নীর সাথে কোমড় বেধে লাগতে পারছে না। একবারই তো বিয়ে, তা আবার ভালোবাসার মানুষের সাথে। একটু তো আনন্দ করা যায়। কিন্তু তার গিন্নী সেটা হতে দিচ্ছে কই? এদিকে নিধিও ফাহাদের থেকে নিজের হাত ছোটাতে চেষ্টা করে। সেই যে ধরে আছে ছাড়ার আর নাম গন্ধ নেই। যেখানে যাচ্ছে তাকে টেনে বেধে নিয়ে ছুটছে। কখন না যানি দাদি তাদের ধমকে উঠে। কিন্তু ফাহাদের তাতে হুঁশ নেই। হাত ছোটাতে চেষ্টা করলে কাধ জরিয়ে ধরছে। আয়েশা মির্জার কথায় তিথির রাগ হলো একটু হাসলে ক্ষতি কি? সে তার কথার উত্তরে হেসে হেসে জবাব দেয়,
-” আসলে কি দাদি, আপনাদের সময় বাবা-মা বর কনে না দেখিয়ে বিয়ে করাতো। আমাদের সময় আমরা নিজেরাই দেখে শুনে বিয়ে করি। একটু তো ডিফারেন্স হবেই, তাইনা? ”
আয়েশা মির্জার চোখ কপালে। ইশানও ভীমড়ি খেলো। তার বউ আর গিন্নীর ঝগড়া এখান থেকেই শুরু হয়ে গেছে। তিথি হাসিমুখেই থাকলো। আয়েশা মির্জা চোখের চশমা টেনে ঠিক করে পান চিবুতে চিবুতে বলে ওঠে,
-” তোমারে তো আমি বাড়িতে নিয়ে ঠিক করবো বজ্জাত মাইয়া। আদব কায়দাও শেখানো দরকার। শাশুড়ী না বড় শাশুড়ীর কবলে পরবা তুমি। ”
-” ঠিক আছে। খুব মজা হবে বড় শাশুড়ী মা। ”
আয়েশা মির্জা মুখ বাঁকালেন। তিথি আর কিছু বললোনা। ইনায়া ডালা নিয়ে তখনই স্টেজে আসলো। আয়েশা মির্জা রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-” এই মাইয়া, এতোক্ষণ লাগে সামান্য একটা জিনিস আনতে? ”
কথাটা বলেও শেষ করিডোরে নাভান কে দেখে তিনি রুখে গেলেন। ইনায়া কোনো উত্তর না দিয়ে ডালাটা রেখে নিধির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণের মাঝেই বিয়ে পরানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। ইনায়া স্থির চোখে ক্ষানিকটা চেয়ে থেকে আশেপাশে তাকায় জায়ানের খোঁজে। বোনের বিয়ে, আর এই লোক গেলো কই? ইনায়া ভিড় ঠেলে বেড়িয়ে আসে মজলিস থেকে। ভেন্যুর একপাশে পুল সাইট। সেখানে এসে ইনায়া জায়ানের কোনো খোঁজ পেলো না। এই সন্ত্রাসীর কোনো বিশ্বাস নেই। ঠিকই গুন্ডামী করতে চলে গেছে বোধহয়। ইনায়া ঘাড় কাত করতেই উপরের টেরিসে চোখ যায় তার। হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকালো সেখানে। দু’হাতে রেলিঙে ভর করে ঘাড় কাত করে পা ঝুলিয়ে বসে আছে জায়ান। দৃষ্টি ইনায়ার দিকেই নিবদ্ধ ছিলো এতোক্ষণ। ইনায়ার দৃষ্টিও গাঢ় হলো। আজকাল জায়ানের চোখে তাকাতে ভয় করে না তার। এই অবাধ্য মন কবেই তার ভয়কে জয় করে ফেলেছে নিমিষেই। নিচে থেকে জোর গলায় শুধালো,
-” এখানে বসে আছেন কেন? হাত পা ভাঙার খুব সখ হয়েছে? ”
ঘাড় কাত করেই গা দুলিয়ে হেসে উঠে জায়ান। ইশারায় ইনায়াকে ডাকে নিজের কাছে। ইনায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে সময় নিয়ে জায়ানের কাছে যায়। মিনি টেরিসে উঠতে একটু সময় লেগেছিলো ইনায়ার। হাঁপিয়ে ওঠে ইনায়া জায়ানের পাশে বসে পরে।
-” বোনের বিয়ে, সেখানে না থেকে এখানে কেনো? ”
ইনায়া অনেক টা হাঁপানো গলায় জিজ্ঞেস করে। জায়ান মৃদু হেসে ইনায়ার চোখের পানে তাকায়। তারপর স্ফুট গলায় বলে ওঠে,
-” রাতের চাঁদ উপভোগ করতে, আমার চাঁদ টা খুব সুন্দর। তাই না হরিণী? ”
-” সত্যিই অনেকে সুন্দর। তাকিয়ে থাকতেই মন চায়। ”
-” হুম,শত জনম পাড় করে দেওয়া যাবে নিসন্দেহে।”
‘ হুম ‘ ইনায়া কিছুক্ষণ জায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার কথার ধরন খুঁজলো। নিমিষেই মুখ বাকিয়ে তাকালো অন্য দিকে। তার এইসব ফিল্মি কথায় চলবে না। জায়ান ইনায়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো। স্নিগ্ধ মধুময় ঠেকলো সময়টা। দৃষ্টিজোড়া দু’জনেরই মোহিত। আবারো যেন পরে গেল অবাধ্য মিউটেশন। ইনায়ার কালো কুচকুচে মনি জোড়া জায়ানের ধুসর বাদামী চোখেতে কিছু খোঁজার চেষ্টায়। সময়টা স্থির থাক। বক্ষস্থলের সেই অবাধ্য যাতনাকে লঘুচিত্তে বহন করা হৃদয় টা আজ মুগ্ধতায় থাক। কিছু না আসুক এই ক্ষনে। কিন্তু নিয়মের সেই দিন আসলো না। ছাদ কাপিয়ে বেজে উঠলো জায়ানের ফোনের রিংটোন। কল্পনারা গত হয় দুজনেরই। জায়ান ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই ফাহাদ বলে ওঠে,
-” কই তুই? তিথির বিদায়ের সময় চলে এসেছে। এবার তো আয়। ”
-” আমি দেখছি তোমরা রিচুওয়াল ফিল আপ করো। ”
তিথির বিয়ে শেষে বিদায়ের পালা। জায়ান ইনায়া সেখানেই বসে থাকলো। অবাকের পাল্লা বাড়লো যেন। বেশিরভাগ মেয়ের বেলায় বিদায়ের ক্ষনে কান্নায় ভেঙে যায়। কিন্তু তিথি ঘটালো অন্য কান্ড। হাসিমুখে বাবা-মা ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলো সে। আয়েশা মির্জা বিরবির করে গাড়িতে উঠলো। আজকালকার মেয়েরা একটু বেশিই ডিফারেন্স। ইশান তিথি আর আয়েশা মির্জার মাঝখানে বসলো। কোন সময় না জানি ঝগড়া বাধিয়ে দেয় এরা। নিধি গাড়ির দিকে এগিয়ে আসতে গেলেই ফাহাদ তার হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়। আর জোর গলায় বলে, এক পা ওদিকে যেতে পারবেনা নিধি। জায়ান যেন খুশি হলো এই কান্ডে।
-” এই না হলে আমার বোন আর ভাই। গুড, ভেরি গুড। ”
ইনায়া হাসলো জায়ানের কথায়। সবার কপালে কি এমন বিদায় জোটে। আস্তে করেই সব গাড়ি ছুটে চলে গন্তব্যের দিকে। তিথির হাতের মুঠোয় ইশানের হাত। ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো আজ তাদের৷ খুব করে এমন মানুষ কমই হয়। যাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়। আজকের রাতটা হয়তো মনে করার মতোই সবার কাছে। সবাই যেন নিজেদের জীবনের আসল গন্তব্য খুঁজে পেয়েছে। সাই-সাই করে তিব্র গতির বাতাস এসে নাভানের নাকে মুখে লাগছে। গাড়ির উইন্ডোর কাচ নামানো। এবেলাই ড্রাইভ করছে সে নিজেই। আজ যেন সকল সমীকরণ সমাধান করে গেছে সে। যাতনারা আড়ালে আবাডলেই থাকুক না।
তাদের দেখানোর কোনো মানেই নেই। হঠাৎ সামনের বিকট শব্দে নাভান গাড়ি থামিয়ে দিলো। সামনের দুই গাড়ি আগে ইশানের গাড়ি। নাভান ও পেছনে বসা নাহিদ মির্জা ও নওয়াজ মির্জা সবাই বেড়িয়ে সেদিকে অগ্রসর হয়।ইশানরা কথার মাঝেই ছিলো। আচমকা বিপরীত পাশ থেকে ধেয়ে আসা লরির ধাক্কায় উলটে যায় বিয়ের গোলাপে আবৃত সাদা গাড়িটা। হঠাৎ কিছু চিৎকার। আর লোকজনের সোরগোলে মুখরিত হয় চারপাশ। ইশান চোখ মেলে কিঞ্চিৎ তাকালো। মাথা থেকে হাত সড়িয়ে মৃদু চোখে তাকালো পাশেবসা তিথির দিকে যার রক্তাক্ত হাত এখনো তার হাতের মাঝে। ইশান উঠালো তিথির মুখটা। রক্তে ভেজা নির্জীব চোখ জোড়া। কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। মুখে রক্ত। ভেতরে সত্তা টা যেন ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির লাভার মতো টগবগিয়ে উঠেছে। সক্রিয় হলো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ গুলো। ইশান মৃদু স্বরে ডেকে উঠে,
-” উঠো না আমার স্নো হোয়াইট। এখনই ঘুমিয়ে গেলে চলবে? আমাদের তো একসাথে শতপথ পাড়ি দেওয়া বাকি। কতো স্বপ্ন পূরণ করা বাকি। এখানেই শেষ হলে হবে না তো? ”
তিথি আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস ফেলছে। ইশান ডানপাশে বসা আয়েশা মির্জার দিকে লক্ষ্য করলো। মাথা দিয়ে অনগল রক্ত গড়িয়ে পরছে তার। চোখ আধ বোঝা হয়ে আছে। ইশান ঝাকালো তাকে কিন্তু না। আয়েশা মির্জা নড়লেন না। ইশান কষ্ট করে বিরবিড়িয়ে বলে ওঠে,
-” তুমি না তিথিকে শিক্ষা দেবে গিন্নী? তাকে বাড়ি নিয়ে যাবার আগেই তুমি হার স্বীকার করছো? ভালো হলোনা গিন্নী, ভালো হলো না। ”
যাতনা আমার পর্ব ৩৬(২)
ইশান আর কথা বলতে পারলোনা চোখ বোঝার আগে অস্পষ্ট ভেসে উঠলো নাভানের মুখটা। আজকের রাতের শেষটা কেমন যেন ছিলো। কিছুক্ষণ আগের সুন্দর মুহূর্ত গুলো এখন কেবল যাতনার ধোয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। যা ডাকছে তা সবকিছুই হাতছানি।