রং পর্ব ৩২

রং পর্ব ৩২
তন্নী তনু

আকাশ হঠাৎ-ই গিরগিটির মতো তার রুপ বদলে ফেলে। কিছুক্ষণ আগের অর্ধ চাঁদ টাও হারিয়ে যায় কালো মেঘের আড়ালে। ঝিরিঝিরি বালু দানার মতো বৃষ্টি ঝড়ছে। তিথি আর কুটুস শুয়ে পড়েছে। রাত বাড়ছে। বাসায় আছে শুধু মামি। মামা ব‍্যবসায়িক কাজে অন‍্য জেলায়। শিশির তার বাবার ফার্মেসী”র দোকানে বসে।রাত করেই বেশীরভাগ বাসায় ফেরে।পড়াশুনা শেষের দিকে হলেও চাকরি করতে চায় না শিশির। সেই সূত্রে বাবার ব‍্যবসায় সাহায্য করে সে।গুরিগুরি বৃষ্টি। আকাশ চিড়ে আগুন ঝড়ছে যেনো। তিথি”র মন টা ব‍্যকুল হয়ে থাকে। আগে এমন লাগতো না। এখন দুটো চোখ যেনো শিশিরের পথ চেয়ে বসে থাকে। গতকাল সকালের পর শিশিরের সাথে সামনাসামনি দেখা হয়নি। তবে কথা হয়েছিলো একবার। আকাশের এহেন অবস্থায় ফোনের প্রথম নাম্বারটিতে কল দেয় তিথি। তারপর সালাম দেয়। তারপরের কথোপকথন।

–বাসায় ফিরবে কখন?
শিশিরের চারপাশে ক্রেতা না থাকলেও বন্ধুবান্ধব আর কিছু পরিচিত লোক বসে আছে। তারা একসাথে বসে মোবাইলে ক্রিকেট খেলা দেখছে। শিশির দোকান থেকে বের হয়। তারপর বলে,
— কেনো?
তিথির মনটা খারাপ হয়ে যায়। “কেনো” সে কি জানে না? এটাও বলতে হবে? নিস্তব্ধ, নিরবতায় তিথি। মনে মনে কিছু একটা ভাবে শিশির। তারপর ঠোঁট ডান দিকে টেনে বলে,
— মিস করছো?
মনের গহীনে থাকা অপ্রকাশিত চিরন্তন সত‍্যটি প্রিয় মানুষটি বুঝতে পারায় শ্বাস ঘন হয়ে আসে তিথির। মুখে হাত চেপে দম বন্ধ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর নিঃশব্দে শ্বাস ছাড়ে। বুকের মধ‍্যে সুখ গুলো সমুদ্রের উচ্ছাসের মতো তেড়ে আসে। চোখ বন্ধ করে থাকে তিথি। ওপাশ থেকে ভেসে আসে শিশিরের গলা,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আসবো?
তিথি কিছু বলতে পারে না। আসলেও বা কি? দূর থেকে এক পলক দেখে সারারাত আফসোসের বন‍্যা বইবে শুধু। তবুও ঘরের মানুষ ঘরে থাক। তার উপস্থিতিও তিথিকে প্রশান্তি দেয়। তিথি ছোট্ট করে বলে,
–হুম….
–আসতেই হবে?
তিথি চুপ করে থাকে। কি চায় শিশির? সে তো বললো আসতে। আর কি বলতে হবে? তিথি চুপ করে থাকে। ওপাশে গলাটা আরেকটু ঘন,
— সেই তো দূরেই থাকতে হয়। বাসায় ফিরে কি হবে….
তিথি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে,

— বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে!
— হুম
–ওকে রাখছি!
–কিছু বলার নেই?
— না…
— সত‍্যি-ই না?
–নাহহ
— একটু ওয়েট করো আসছি।

গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ঘুড়িয়ে দেয় ইরফাদ। সামনের চেকপোস্ট গুলোতে কড়াকড়ি এলার্ট করে। সিনথিয়াকে দেখা যায় যে চেকপোস্টে।সেই চেকপোস্টের দিকে রওনা হয় ইরফাদ। যে করেই হোক। ক্রিমিনাল নাগালের বাইরে যাওয়ার আগে তাকে ধরতেই হবে।হাতের বাইরে চলে গেলে তাদের জালে পা দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। আর জাল তারা শক্তপোক্ত করেই বিছিয়ে দিবে। ইরফাদ নির্ঘুম রক্তচক্ষু নিয়ে আলো আধারের মধ‍্য হ্রেসা ঘোড়ার মতো গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছে। প্রতিদন্দী”র চালা চাল না জানলেও সিনথিয়া”কে দিয়ে যে বড় খেলা খেলবে তা সে ভালো করেই জানে। গতরাত আরেকটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এই দিন আসতো না। জাবির পাশে বসে এটা সেটা আলোচনা করছে।
— স‍্যার চেকপোস্ট থেকে মিস সিনথিয়াকে নিয়ে কোন দিকে টার্ন করতে পারে!
— গুগল ম‍্যাপ থেকে একটা চার্ট তৈরী করুন। কোন দিকে কোন এড়িয়া এটা প্রথমে জানা দরকার!
— আপনার পূর্বশত্রু কেউ আছে? আমার মনে হয় তাদের একটা লিস্ট থাকলে এই কেসটা আরও সহজে সলভ করা যেতো।

জাবিরের কথায় ইরফাদের মাথায় কিছু স্মৃতি ঢেউ খেলে যায়। কে থাকতে পারে এর পেছনে। রাফি? রাফির পুরো পরিবারের সাথে তার কোনো কানেকশন নেই। তবে বাইরে শত্রু”র অভাব তার নেই। কোন টার সাথে কোনটা কানেক্টেড বোঝা কঠিন। যতোটুকু সে জানে! সিনথিয়া এডপ্টেড ছিলো। তার বাবা কে হতে পারে? এটা জানা দরকার। হঠাৎ করেই ইরফাদের মনে পড়ে। কখনো সিনথিয়াকে তার পাষ্ট নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়নি। তার বাবা কে? এটা জানলেও তার ভাই কে? এটা জানা যেতো। রাত গভীর! এই মূহুর্তে দ্রুত খবর পাওয়াও সম্ভব না। ইরফাদ জাবিরের উদ্দেশ্য বলে,
— সিনথিয়া”র বাবা নম্বর টা দরকার।
— স‍্যার! থানায় ফোন করে শুনে নিচ্ছি।

রুমের মধ‍্যে তিনজন মানুষ দুঃচিন্তায় নির্ঘুমে রাত কাটাচ্ছেন। সকালের অপেক্ষায় আছেন তারা। সকাল হলেই আরেকবার থানায় যাবে সিনথিয়ার বাবা। কেনো যুবতী মেয়েকে রাতের আধারে বাইরে নিয়ে গেলো এসপি? কোন বিপদে ফেললো। নাকি তারাই গুম করে রাখলো অনেক প্রশ্নের বাকি। এর মধ‍্যেই ফোন কেঁপে ওঠে। অপর পৃষ্ঠ থেকে কেউ সালাম দেয়। সালামের উত্তর দিয়ে সিনথিয়া”র বাবা বলে ওঠেন,
— কে বলছেন?
— থানা থেকে বলছিলাম! জাবির..
— এতো রাতে আপনি!
— আই ডোন্ট নোউ আপনি কতোটুকু জানেন। তবে প‍্যানিকড হবেন না। আপনার মেয়ে সিনথিয়া ইবনা”কে কেউ কিডন‍্যাপ করেছে।

— বাবা আমি! আমার মেয়ের কিডন‍্যাপ হওয়ার কথা আপনারা এতো দেরিতে জানাচ্ছেন?
— সরি টু সে! আমাদের রুলস এর মধ‍্যে দিয়ে যেতে হয়।
— কিন্তু আমার মেয়ে এতো রাতে বাহিরে কেনো গেলো? আমার ছোট ছেলে বললো-“এসপি সাথে ছিলেন! কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
— সব প্রশ্নের উত্তর এই মূহুর্তে দেয়া পসিবল না। সরি…. আপনার মেয়েকে দ্রুত উদ্ধার করে আনার জন‍্য কিছু ইনফরমেশন প্রয়োজন। কাইন্ডলি ঐগুলো দিন।
— কিন্তু…

— বললাম তো… আমাদের ভিক্টিমকে প্রথমে রেসকিউ করা প্রয়োজন। রুলসের বাইরে একটা শব্দ আমরা বলতে পারবো না। আপনারা টেনশন ফ্রি থাকুন। দ্রুতই সিনথিয়া ইবনাকে আমরা রেসকিউ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
সিনথিয়া ইবনা আপনার এডপ্টেড ডটার?
— হুমম..
— ওনার বাবার নাম কি?
— আমি জানি না।
— জানেন না মানে?
— সিনথিয়াকে আমরা আমার এক বন্ধুর মাধ‍্যমে হসপিটাল থেকে পেয়েছিলাম।
–তবুও আইডেন্টি তো থাকবে!
— নাহ.. ওর মা মেনটালি ফিট ছিলো না। ওকে জন্ম দিতে ওর মা মারা গেছেন। পরবর্তীতে আমরা ওর দায়িত্ব নেই। ওর পিতৃ পরিচয় আমি জানি না।
— ওকে থ‍্যাংস…
ফোন কেটে দেয়ার সাথে সাথে সিনথিয়ার মা বলে ওঠে,
— খোঁজ পেলে কোনো?
— খুঁজছে। বাকিটা আল্লাহ্ জানেন।
সানজিদা বেগমের চোখের জল গড়িয়ে পড়ে।

জাবির ফোন কেটেই বলে,
— বললো- “তিনি জানেন না।”
ইরফাদ নিরবে কিছু একটা ভাবে তারপর বলে,
— জানে না নাকি বলবে না?
— হতে পারে স‍্যার!

সিনথিয়া কাঠের পুতুলের মতো বসে আছে। পাশে বসে আছে বর বেসে অপরিচিত কোনো ছেলে। গাড়ির মধ‍্যে থাকা একটা ছেলেকেও সে চেনে না। কোথায় যাচ্ছে সে জানে না। শুধু জানে অনেক বড় কিছু ঘটবে। অনেক বড় জাল পাতা হয়েছে। বউ সাজে ভারী পোশাকে শরীর ভেঙ্গে আসছে। কাঁধ ব‍্যথা হয়ে ছিড়ে যাচ্ছে। মা”য়ের কথা ভিষণ মনে পড়ছে। মুগ্ধ”র কথা মনে পড়ছে। বাবার কথাও মনে পড়ছে। একদিন পার হয়ে গেছে। তারা কিচ্ছু জানে না। কেমন করছে তারা? কোমরের কাছে ধরা লুকায়িত রিভলবার ঠেলে আরো কাছে এনে ধরে পাশের লোকটি । সিনথিয়া পাশের লোকটা”কে বলে,

— এর কোনো প্রয়োজন নেই। যদি আমি পালাতে চাইতাম তাহলে এর আগেই পালিয়ে যেতাম। মানুষকে শিকল দিয়ে বাঁধলেও পালাতে চায়। তবে আপনাদের বস ফোনে আমাকে যা বলেছেন। তাতে আপনারা রাস্তায় ফেলে গেলেও আমি পালাবো না। আমার জীবনের চেয়ে আমার ভালোবাসার মানুষ গুলোর জীবন বেশী দামি।
পাশের লোকটি কোনো কথা বলে না। গাড়ির লাগানো কালো আবছা গ্লাসের ফাঁকে চোখ রাখে সিনথিয়া। বৃষ্টির গুড়ি গুড়ি ফোঁটা পড়ে ভিজে যাচ্ছে জানালার গ্লাস। মনের মধ‍্যে কষ্টগুলো আর চাপা কান্না উপচে পড়তে চায়। ভুল না করেও যে আগুনে তার পুড়তে হচ্ছে তার শেষ কোথায়! সত‍্যিই জানা নেই। এ যেনো একটার উপর আরেকটা লাফিয়ে পড়ছে তার উপর। চোরাবালির বেড়াজাল থেকে নিজেকে ছাড়াতেই পারছে না সে। সিনথিয়া পাশের লোকটাকে বলে,
— জানালা একটু খোলা যাবে? দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
পাশের লোকটি চুপচাপ কথা বলছে না। সিনথিয়া আবার বলে,
— কথা দিচ্ছি কোনো সিনক্রিয়েট করবো না।
পাশের লোকটি কোমরের কাছের ধরা রিভলবার সোজা মাথায় ধরে। তারপর বলে,
— মুভ..
সিনথিয়া বাঁকা হেসে বলে,

— যদি পালাতে চাই এই রিভলবারের ছয়টা গুলিতে সবাইকে ঝাঝড়া করে দিয়ে যেতে পারি। এতো নাটকের কি আছে বলছি না যাবো না।
পাশের লোকটা বলে,
— কথা কম! সামনে বসুন। মুভ..
সিনথিয়া দরজার বাইরে যায়। তাদের কথা মতো ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে। পথ ঘাট শূন‍্য। পাশে বাঁশ ঝাড় রাস্তার উপরে হেলে পড়েছে। ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তা। সিনথিয়া চুপচাপ বসে আছে। পাশের লোকটি নিজের ফোনটা সিনথিয়ার কানে দেয়। ওপাশ থেকে ভেসে আসা স্বর সিনথিয়ার চেনা।তার গম্ভীর গলা,
— যা বলছি শোন! তোর ফোন ওদের কাছে আছে। ঐ ফোনটা নিয়ে এসপির নম্বরে কল দিবি। আর রাস্তায় দৌড়াতে দৌড়াতে বলবি,”অনেক কষ্টে ফোন করছিস।তুই কোথায় আছিস জানিস না। পেছনে লোকজন তাড়া করছে।” এই টুকু বলেই ফোন কেটে দিবি। তারপর আমার পাঠানো লোকদের কাছে দিয়ে দিবি। কোনো হেরফের যেনো না হয়।

সিনথিয়া চুপচাপ বসে থাকে। সে ভালোমতোই বুঝে গেছে তার ভাই ইরফাদকে তাকে গুটি বানিয়ে বড়সড় জালে ফাঁসাবে। নিলয় ফোন কেটে দেয়। বাকিরা প্ল‍্যান ফুলফিল করার জন‍্য তাড়া দেয়। এতোক্ষণ ব্ল‍্যাকমেইল করছিলো -“সে যদি না আসলে তার বাবা,মা আর ভাইকে তুলে নিয়ে যাবে।” আর এখন যা বলছে তাতে ইরফাদ এর জীবন রিস্কে। কোন দিকে যাবে সে? পাশের জন মাথায় রিভলবার ধরে আছে।বাকি একজন রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। পেছনের জন বলে দেয়,

— এই নিন ফোন। এখান থেকে ঐখান পর্যন্ত দৌড়াবেন। চালাকি করলে সোজা উপরে।
সিনথিয়া ভালো করেই জানে তাকে তারা পুরোপুরি মারবে না। এতোক্ষণ নিলয় যা বলেছে শুনছিলো। কারণ তাকে তার বাসার দোড়গোড়ায় থেকে তুলে আনতে পারলে মুগ্ধ কে নিতে পারবে।তাই যা বলেছে তাই শুনেছে।পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে এখন এসপি”র জীবন রিস্কে ফেলে দিচ্ছে সে। সিনথিয়া নিজের ফোনটা নেয়। ওপেন করার আগে ভাবে,জীবনে সরল সোজা থেকে কিছুই হয়নি। নিজেকে শক্ত করতেই হবে। পরিবার আর সিনহা”কে বাঁচাতে প্রয়োজনে আজকে কয়েকটা মানুষ খু*ন করবে। প্ল‍্যান সাজিয়ে নেয় সিনথিয়া। প্রথমে সবগুলোকে আহত করবে। ফোন যখন হাতের নাগালে একটা রিস্ক নেয়াই যায়। তারপর নিজের ফোনটা দিয়ে সিনহা”কে কল দিবে। যাতে পুলিশ তার পরিবারকে বাঁচায়। তার যা হয় হবে।নিজের মাথায় ঠেকানো রিভলবার আড় চোখে দেখে সিনথিয়া। তারপর নিচু হয় একহাত। মাথা রিভলবার থেকে মাথা সেইফ করে রিভলবার ধরা হাতটিকে মুচরে ধরে ঐ লোকটির বুকে ঠেকায়। ট্রিগারে হাত রেখে বলে,

— বলেছিলাম না ঝাঝড়া করে দিবো। কেউ এক পা নড়লেই শ‍্যুট করে দিবো।
রিভলবার থেকে হাত সরিয়ে লোকটি হাত দুটো উঁচু করে রাখে। সিনথিয়া রিভলবার ধরে রেখে লোকটির পেছনে চলে যায়। একটু দূরে থাকা লোকটি এখনো রিভলবার তাক করে আছে। তাদের দেখে বোঝাই যাচ্ছে তারা প্রফেশনাল। একা কয়েকজনের সাথে কতোক্ষণ টিকে থাকবে সিনথিয়া।গাড়িতে থাকা বাকি লোকদুটো বসে আছে। তারা নামছে না। সিনথিয়া রিভলবার তাক করে লোকটির পেছনে নিজেকে আড়াল করে। রিভলবার তাক করে রাখে হৃদপিণ্ডের অপর পৃষ্ঠে। ট্রিগার চাপলেই যেনো হৃদপিণ্ড ভেদ করে যায়। সামনের লোকটা রিভলবার তাক করে এগিয়ে আসছে। সিনথিয়া গলা কাঁপিয়ে বলে,
— স্টপ! আই সয়ার এক পা এগিয়ে এলেই মেরে দিবো।
সামনের লোকটি কোনো কথা শোনে না। সে রিভলবার তাক করে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। তার পূর্ণ বিশ্বাস সিনথিয়া ট্রিগার চাপবে না। আর চাপলেও নিশানা বরাবর লাগবে না। সামনের লোকটি আর এক পা এগিয়ে আসতেই রিভলবার নল সিনথিয়া তার কাছের লোকটির পিঠে শক্ত করে চেপে ধরে ইঙ্গিত দেয়। সেই লোকটি সামনের লোকটিকে বলে,

— ভাই থাম..
কিন্তু সামনের লোকটি থামে না। আর একটু এগিয়ে আসে। সিনথিয়া লোকটির পেছনে নিজের শরীর আড়ার করে রাখে। মাথা টুকু পাশ থেকে বের করে সামনের লোকটিকে চোখে চোখে রাখে। তার আর সামনরে লোকটির মধ‍্যে এই মূহুর্তে পাঁচ হাতের দূরত্ব। মূহুর্তেই সাইলেন্সার লাগানো রিভলবার সামনের লোকটির পায়ের দিকে তাক করে ট্রিগার চেপে দেয় সিনথিয়া। নিজের পা থেকে রক্ত ছিটকে বেরিয়ে যেতে দেখে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে আসে লোকটির। রিভলবার নামিয়ে ফেলে লোকটি।
গাড়িতে থাকা দুজন ছেলে মেয়েটির অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি ফোনে একটা নাম্বারে ডায়েল করে,
— বস!মেয়েটি তো পুরাই আগুন। এতোটা সময় চুপচাপ বসে থাকলেও এখন তো মানছেই না। একজনকে তো গুলি মেরেছে।

— যে করেই হোক! ওকে গাড়িতে তোল। বাকিটা দেখছি আমি।
দুজন লোক নিলয়ের কথা মতো বাইরে বেরিয়ে আসে। প্রথমত ভালো করে বুঝানোর চেষ্টা করে।কিন্তু সিনথিয়ার চোখ থেকে আগুন ঝড়ছে। সে সবাইকে এলার্ট করে,
— কেউ এগোবে না। কেউ না….

— সিনথিয়া বাম হাতে নিজের বন্ধ ফোন। ফোন অন করার জন‍্য সাইড বাটনে আঙুল রাখে সিনথিয়া। সে সময় পেছন থেকে কেউ একজন মাথায় আঘাত করে। হাতের ফোনটা ছিটকে পড়ে যায়। সামনের লোকটি ঘুরে দাঁড়ায়। জোর পূর্বক কেড়ে নেয় রিভলবার। সিনথিয়া লেহেঙ্গার নিচের ভারী অংশ টেনে ধরে। পায়ের কেডস পড়া। শূন‍‍্যে পা তুলে আঘাত করে লোকটির রিভলবার রাখা হাতে। রিভলবার ছিটকে পড়ে দূরে কোথাও। পাঁচ হাত দূরে থাকা লোকটি রিভলবার তাক করে। তাতেও ভয় পায়না সিনথিয়া।প্রয়োজনে বুলেট খেয়ে মরবে। তবুও হাল ছাড়বে না। বাকিরা তার দিকে এগিয়ে আসে। দুহাতের মুষ্টি পাকিয়ে আগে পরে করে উঁচু করে ধরে সিনথিয়া। পেছনে দুজন সুযোগ বুঝে এগোতে চায়। সামনের জনের সাথে ফাইটিং এর জন‍্য হাতে মুষ্টি পাকিয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মাথায় আটে পরিকল্পনা। সামনের জনকে আঘাত না করে সেকেন্ডের মধ‍্যে ঘুরে ওঠে সিনথিয়া।

পেছনের দুজনের মধ‍্যে একজনকে বুকে সজোরে লাথি মারে। আরেকজনে চোয়ালে মুষ্টি পাকিয়ে ঘুষি মারে। পেছনের জন সিনথিয়ার গলা পেঁচিয়ে ধরে। কেডস পড়া পা দিয়ে হাঁটুর ভাজে লাথি মারে। লোকটি কোকিয়ে ওঠে। সিনথিয়া নিজের ফোনটা খোঁজে। অন্ধকারে ফোন না পেয়ে শূন‍্য হাতেই সামনের দিকে দৌঁড়ায়। পেছনে দৌড়ায় বাকি লোক গুলো। সিনথিয়া একবার পেছনে একবার সামনে তাকায়। বাতাসের শব্দ কানে শাঁ শাঁ করে আসছে। গাছ পালা পথ ঘাট পেরিয়ে সামনে ছোটে সিনথিয়া। পাশে থেকে কারো শক্ত হাতের বাঁধনে আটকে যায় তার হাত। হেঁচকা টানে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চায় সিনথিয়া। তবে ব‍্যর্থ হয়। পুরুষালি গমগমে গলায় কেউ বলে,

রং পর্ব ৩১

–জিসানকে নিশ্চয়ই চেনো?? তোমার ভাই মুগ্ধ তার কাছেই আছে। তাকে গুম করতে জাস্ট এক মিনিট লাগবে।
চিরচেনা গলাটা তার বুকের গহীনে পৌঁছায়। সমুদ্রের উত্তাল উচ্ছাস যেনো হৃদয়ে বারি খায়। পেছন ঘুরে তাকায় সিনথিয়া। খরস্রোতা নদী যেনো একদিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাকে।কেঁপে ওঠে গলা। অতীতের সকল কষ্ট, যন্ত্রণা উগলে আসে গলায়। দলা পাকিয়ে ওঠে প্রতারণার দৃশ‍্যপট। সিনথিয়ার হাতটা আচমকাই কেঁপে কেঁপে ওঠে। কাঁপা গলায় সিনথিয়া বলে,
— রাফি!

রং পর্ব ৩৩