রং পর্ব ৩৭
তন্নী তনু
রাত ভারী হচ্ছে। পাঠানো খাবার প্লেটেই পড়ে আছে। পেটের মধ্যে ক্ষুধারা জ্বালা ধরাচ্ছে সিনথিয়ার। মনের বিষণ্নতা পেটের জ্বালা চাপা দিচ্ছে । মাথার মধ্যে এক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার।ইরফাদকে কি কিছু খেতে দিয়েছে রাফসান! সিনথিয়া উঠে দাঁড়ায়। শেকল ধরে টানে।একটু পরেই দরজা খুঁলে ভেতরে আসে রাফি। তারপর বলে,
— কোনো প্রবলেম?
— ভাইয়া কোথায়?
— আছে?
–আছে তো আমিও জানি। কোথায় জানতে চেয়েছি।
—কেনো?
সিনথিয়া বিরক্ত হয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— এতো প্রশ্ন কেনো? দরকার আছে ডেকে দিন।
— আমার সাথে এতো জেদ কেনো দেখাচ্ছো?
–আপনি ডেকে দিবেন?
— আগে বলো!
–কি বলবো….
— তুমি আগের মতো কেনো কথা বলছো না?
— জীবন কি আগের জায়গায় আছে??
— জীবনে একটু ভুলের জন্য পুরো আমিকে তুমি অগ্রায্য করছো।
— আমার কি করা উচিত?
— আমি তো বলেছি সিনথিয়া আমি ভুল করেছি। আমি নিরুপায় ছিলাম।
— কিছু ভুল শোধরানো যায় না। এই মূহুর্তে আমারও কিছু করার নেই।
— তোমার জন্যে আমি কি না করলাম। তোমার ভাইয়ের কথায় উঠলাম বসলাম আর তুমি?
— তাতে কি আমার মঙ্গল হয়েছে?? নাকি শান্তিতে থেকেছি! আপনার জন্য জেল খেটেছি আমি।
— আমার জন্য না সিনথিয়া। তুমি তোমার ভাইয়ের জন্যে জেল খেটেছো….. আমাকে দোষারোপ কোরো না। আর আমি চাইলেও এই জাল ছিড়ে বের হতে পারতাম না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সিনথিয়ার মুখটা কালো হয়ে আসে। সত্যিই কি তাহলে রাফির দোষ নেই।রাফির জন্যে জেল খাটেনি। রাফির জন্য এতো কষ্ট পোহাতে হয়নি। সবটা যদি রাফসান-ই করে থাকে। তাহলে রাফির দোষ কোথায়। একটা মানুষের অনুপস্থিতিতে অন্যকে মনে জায়গা দেওয়া অন্যায় হয়ে গেলো কি? মনটা বিষণ্ন হয়ে আসে। তার পরে মনে হয়। “আচ্ছা? ভালোবাসলে কি কেউ কাউকে কষ্ট দিতে পারে? একজন মানুষকে শুধু নিজের করে পাওয়া কি ভালোবাসা! একজনকে পেতে সকল অন্যায় করাকে কি ভালোবাসা বলে? প্রতিদিন, প্রতি স্পেশাল মূহুর্তে ফুল নিবেদন করে ভালোবাসি বললেই কি ভালোবাসা হয়? ভালোবাসা তো ভালোবাসার মানুষকে ভালোরাখা, খুশি রাখা, শান্তিতে রাখাকে বলে। ভালোবেসে অসুস্থ লাইফ লিড করা। প্রতি মূহুর্তে অশান্তিতে রাখা, কষ্ট দেয়া, যন্ত্রণা দেয়া,জ্বালানো পোড়ানো কখনো ভালোবাসা হতে পারে না। যে ভালোবাসে-সে কখনো আঘাত করতেই পারে না। সেই সূত্রে রাফি তাকে কখনোই ভালোবাসেনি। এটা তো কেবল নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছা। সিনথিয়া আবেগঘন চিন্তা ঝেড়ে ফেলে তারপর বলে,
— ভালোবাসলে কেউ কাউকে পোড়াতে পারে! “রাফি”?
— আমি নিরুপায় ছিলাম সিনথিয়া। বিয়ে না করলে আমার আমার লাইফ শেষ হয়ে যেত! মানসম্মান শেষ হতো….জেল হতো…
— বিচ্ছেদ তো হতো না?? বিচ্ছেদের কষ্ট বোঝ? নিজের চোখের সামনে নিজের মানুষটাকে অন্যকেউ স্পর্শ করলে কতো যন্ত্রণা হয় জানো? ভালোবাসো নি কোনোদিন। ভালোবাসলে এমন পারতে না…..
— আমার উপায় ছিলো না… বললাম তো ভুল হয়েছে। ভালোবাসি বলেই তোমার ভাই যা বলেছে তাই করেছি।
— ভুল! ঐটা ভালোবাসা না। শুধু আমাকে পাওয়ার ইচ্ছে,জেদ অথবা আকাঙ্ক্ষা। ভালোবাসার মানেই তো তুমি জানো না।
–তুমি তো জানো! আমাকে ভালোও বেসেছো। তাহলে এখন কি প্রবলেম? এখন কেনো অন্য কাউকে মনে জায়গা দিতে চাচ্ছো। ভালোবাসার সঙ্গা” আর ভালোবাসার যে বর্ণনা দিলে তাতে তুমিও আমাকে ভালোবাসোনি!
— কখনো কখনো ভুল মানুষকে ভালোবাসার বিনিময়ে পাওয়া যন্ত্রণা আসমান ছুঁয়ে যায়। জানো তো কষ্ট পাওয়ারও একটা লিমিট থাকে। ঐটা যখন ক্রস হয়ে যায়। পুড়তে পুড়তে মানুষ তখন বাঁচার রাস্তা খোঁজে।তখন যদি কোনো সঠিক মানুষ তার ছায়াতলে হৃদয়ভাঙ্গা মানুষটাকে আগলে রাখে। যখন কোনো ভাঙা হৃদয়ের মানুষ শেলটার পায়। জীবনে যে শান্তি তুমি এক মূহুর্ত্তের জন্যে পাওনি সেই শান্তি যদি সঠিক মানুষের উপস্থিতিতে পাও। ভুল মানুষকে তুমিও ভুলে যাবে। তাই আমিও ভুলে গেছি….
— আমি ভুল মানুষ??
–যে মানুষ নিজে বাঁচতে অন্যেকে বিয়ে করে বিচ্ছেদ টানে। সে সত্যিই কি সঠিক মানুষ! পরের চ্যাপ্টার না হয় নাই টানলাম।
— আমি কি তোমাকে কখনো ভালোবাসিনি?
— আগে ভালোবাসা কি জানো! তারপর এই প্রশ্নের উত্তর জানতে এসো।
— সিনথিয়া…. আমি সত্যিই ভালোবাসি তোমাকে….
— অন্যজনের বর তুমি। ভুলে যেও না। গেট লস্ট।
— সিনথিয়া….
বলেই দু”পা বাড়ায় রাফি। সিনথিয়া পিছিয়ে যায়। ঝাঝালো গলায় বলে,
— স্টপ….
থেমে যায় রাফি। চোখ পাঁকায় সিনথিয়া। তারপর- বলে ভাইয়া কোথায়?? ভাইয়াকে ডাকো।
রাফি ওখানেই দাঁড়ায়। তারপর বলে,
— ভাইয়ার কাজ আছে। উপরে গিয়েছে…
সিনথিয়ার মাথায় দূরে থেকে এক ঝাপটা বাতাস যেনো বারি খায়। মনের মধ্যে দুলে ওঠে। আসার পথে সে দেখে এসেছে কেবিনগুলো পাশাপাশি। মাঝখানে সরু রাস্তা।পায়ের শেকল লম্বা।চাইলেই এই সুযোগ কাজে লাগানো যেতেই পারে। ইরফাদকে একপলক দেখার ইচ্ছায় ভেতরটা মরুভূমির মতো ধূ ধূ করছে। কথা শোনার তৃষ্ণায় অন্তর আত্মা শুকিয়ে আছে। কতো কষ্ট করে মানুষটা তাকে খুঁজতে খুঁজতে এই পর্যন্ত চলে এসেছে। সিনথিয়া বাস্তবে ফেরে। তারপর মাথায় বুদ্ধি আটে। ধীর গলায় রাফিকে বলে,
— ভাইয়াকে ডেকে পাঠান প্লিজ।
— ভাইয়া এখন নিচে আসবে না। কাজ আছে।
— তাহলে তুমি চলে যাও…
–খাবার খেয়ে নাও….
— যাও তুমি!
— আমি এখানে বসে থাকি তুমি খাও। দ্যান চলে যাবো কথা দিচ্ছি।
— সিনথিয়া পিছিয়ে যায়।সাইড টেবিলের উপর রাখা ফুলদানি হাত বাজিয়ে তুলে নেয়। বুকের মধ্যে ঘন্টা বাজছে। এখন যেটা চাচ্ছে তা অন্যায়। তবে এছাড়া কোনো উপায় ও নেই। সিনথিয়া ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। মুখোমুখি হয় রাফির। ডান হাত মুষ্টি পাকিয়ে চোখের পলকে একটা বুকে আরেকটা পেটে ঘুষি দেয় সিনথিয়া। পেটে হাত রেখে কাচির মতো বাকা হয়ে যায় রাফি। বাম হাতের ফুলদানি দিয়ে মাথায় আঘাত করে সিনথিয়া। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রাফি। হঠাৎ করে পড়া আঘাতে জ্ঞান হারায় রাফি।রুমে রাখা ছোট টাওয়েল রাফির মুখে গুজে দেয় সিনথিয়া। রাফসানের খুলে রাখা শার্টে শক্ত করে পিছমোড়া করে বাঁধে রাফির হাত। তারপর দরজা চাপিয়ে বেরিয়ে যায়। সরু রাস্তার এপাশে ওপাশে দড়জায় কান পাতে সিনথিয়া। সরু রাস্তা জুড়ে আলো সুইচ চেপে বন্ধ করে। সব দড়জায় কড়া নাড়া সম্ভব না। তাহলে ধরা পড়ে যাবে। সিনথিয়া প্রতিটা দরজায় কান পেতে থাকে। ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসছে না। লম্বা সরু যায়গায় পায়চারী করে। দরজায় কান লাগিয়ে থাকে। কিন্তু আশাহত হয় সিনথিয়া। হয়তো অন্য কোথাও রেখেছে ইরফাদকে।এতো পাশাপাশি অবশ্যেই রাখবে না। মন খারাপ হয় সিনথিয়ার। চুপচাপ নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ঠিক তখন-ই পাশের রুম থেকে পরিচিত স্বর শুনতে পায়। সিনথিয়া ভেতরটা হু হু করে ওঠে। কেমন যেনো শিক্ত হয়ে ভেতরটা। ঠান্ডা অনুভূতি পায় হৃদয়। হাতের তালু আর পায়ের তলা শিরশির করে ওঠে। সিনথিয়া দরজায় কান পাতে। সব ভুল হতে পারে। গলার স্বর চিনতে কোনো ভুল হয়নি তার। সিনথিয়া টোকা দেয় দরজায়। তারপর অপেক্ষা করে।
রাফসান আশেপাশ পর্যবেক্ষণ করছে। কেবিনের দায়িত্বে আছে রাফি। বাকিরা বাইরে বসে আছে। এখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। চাইলেও এখান থেকে সহজে বের হতে পারবে না কেউ।
সিনথিয়ার হৃদয়ের স্পন্দর বাড়ছে। শব্দ গাঢ় হচ্ছে। ঐদিকে কেউ দরজা খুলছে না। সিনথিয়া আবারো শব্দ করে ঠক ঠক করে। কিন্তু নাহ কেউ দরজা খুলছে না। বাইরের দিকে তাকায় সিনথিয়া। কেউ আসছে কি না। একদিকে ভয় অন্য দিকে প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলার উচ্ছাস। সব মিলিয়ে বুকের মধ্যে তোলপাড়। সিনথিয়া আবার শব্দ করে। জাবির শুয়ে পড়েছে। ইরফাদ খেয়াল করেছে আওয়াজ। জাবির বলে,
— স্যার! কেউ আসবে মনে হয়। শব্দ শুনছেন?
— হুমম।
— আসবে তো আসুক। গা/ধা নাকি! ঠক ঠক করে কেন?
এর মধ্যে আরেকবার শব্দ হয়। ইরফাদ উঠে বসে। দরজার দিকে তাকায়। জাবির বিরক্ত হয়। তারপর বলে,
— আরে গা/ধার দল। দরজা ঠক ঠক করে লাভ আছে। দরজা তো বাইরে থেকে লক।
ইরফাদ উঠে দাঁড়ায়। জাবির তড়িঘড়ি করে বলে– কোথায় যাচ্ছেন স্যার??
ইরফাদ ওষ্ঠের মাঝে আঙুল চেপে ইঙ্গিত দেয়।”চুপ।” জাবির স্ট্যাচুর মতো বসে থাকে। ইরফাদ দরজার কাছে য়ায়। দরজায় কান পাতে।
তারপর একটা শব্দ উচ্চারণ করে,
— সিনথি!!!
অপর পাশের গলার স্বরে নিজের নাম শুনে নিজেই বরফের মতো জমে যায়। বরফ ঠান্ডা অনুভূতিতে হৃদয়ের বিট মিস হয়। শ্বাস বন্ধ হয় মিলি সেকেনডের জন্যে। শরীরের সমস্ত শক্তি যেনো ঐ বরফ শিক্ত গলার স্বর শুষে নেয়। নিঃস্তেজ হয়ে আসে পায়ের তলা। দরজা ঘেষে শরীর ছেড়ে দেয় সিনথিয়া। এপাশে জাবির লাফ দিয়ে দাঁড়ায় বিছানার উপর। ঠক ঠক শব্দেই মানুষটা বুঝে নিলো দরজার ওপারে কে? বিষ্ময়ে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থাকে জাবির। ওপাশ থেকে ভেসে আসে রিনরিনে মিষ্টি গলা,
–হুম স্যার! আমি….
অপরপৃষ্ঠের মানুষটার গলা শুনে জাবির বিস্ময়ে বলেই ফেলে,
— কিভাবে বুঝলেন স্যার! ওহ মাই গড……
— আরে গাঁধা। ওদের কেউ হলে তো দরজা খুলেই আসতো চলে আসতো। শব্দ করছে তার মানে অবশ্যেই অন্যকেউ।
–তাই বলে যে সিনথিয়া ইবনা”ই হবে…
— ও ছাড়া এমন কাজ করার মতো কেউ নেই।
জাবির বসে পড়ে ধপাস করে। মুখ দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর বলে,
— ওহহ। আমি ভাবলাম কি না কি?
–ধুরর।
ইরফাদ দরজার দিকে ঝুকে যায়। তারপর বলে,
–আর ইউ ওকে??
সিনথিয়ার মুখে কথা আসে না। গলায় দলা পাকিয়ে আসে বুকের অনুভূতিগুলো। এইভাবে তাকে কেউ বোঝেনি। কেউ না। সিনথিয়া জড়ানো গলায় বলে,
— আপনি ঠিক আছেন?
— আ”ম ওকে।
–রাতে খেয়েছেন?
যদিও খাওয়া হয়নি। খাবার দিলে না খাওয়া হবে। ইরফাদ কথা এড়িয়ে যায়। বলে,
— তুমি খেয়েছো?
–আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।
ইরফাদ বলে,
— হুম।
জাবির বলে,
— কখন খেলেন স্যার? আমাকে একটু দিলেন না।
ইরফাদ চোখ পাকায়। সিনথিয়া বুঝে নেয় বাকিটা। তারপর বলে,
— খেতেও দেয়নি!
ভাবতেই খারাপ লাগে সিনথিয়ার। তার জন্যে কতো কষ্ট পেতে হচ্ছে ইরফাদকে। সিনথিয়া জড়ানো ভাঙা গলায় বলে,
— সরি! সরি ফর এভরিথিং।
— হোয়াই?
— আমার জন্য আপনাকে এতো কষ্ট পেতে হচ্ছে। আসলে মুগ্ধ…
–ডোন্ট প্যানিক সিনথি। আই নোউ….. তোমার আর এক্সপ্লেইন করতে হবে না।
— তবুও….
— কিচ্ছু না সিনথি… এভরিথিং উইল বি ফাইন। এখন বলো তুমি কি করে এখানে আসলে?
— রুমে বন্দী ছিলাম।আমার পায়ে তো শেকল দেয়া। যদিও অনেকটা লম্বা। রাফি ঢুকেছিলো রুমে। ওকে মেরে সেন্সলেস করে ফেলে আসছি।
— হেই কি বলো!
জাবির এইবার খিকখিক করে হাসে। ইরফাদ চোখ পাকায়। তবুও থামেনা। তারপর বলে,
— এই মেয়ে দুনিয়া ভেঙ্গেচুড়ে আপনার কাছে আসবে। রাব নে বানায়া দে জোড়ি….
–থামবেন??
সিনথিয়া শুনতে পায় কথাটা। নিজের শরীরের ভার রাখতে না পেরে দরজা ঘেঁসে বসে। তারপর সিনথিয়া বলে,
— স্যার একটা রিকুয়েস্ট করবো।
–অফকোর্স!
–আমার কোনো এক্সপেক্টেশন নেই। যদি দরজা ঘেষে একটু বসতেন। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। না মানে কথা শুনতে পাচ্ছি না।
জাবির আবারো মৃদু হাসে। ইরফাদের চোখাচোখি হয়।কাজের বাইরে ইরফাদ অনেকটাই বন্ধুসুলভ। সেইম এইজ হলেও জাবির ইরফাদকে যতেষ্ঠ সম্মান করে। আবার মাঝে মধ্যে রশিকতাও করে। সেই জায়গা থেকে আবারো হাসে। তারপর জাবির বলে,
— স্যার মনে করুন আমি নেই। মানে এখানে আপনি আর সিনথিয়া ইবনা ছাড়া আর কেউ নেই।সময় দেন।
ইরফাদ চোখ ফিরিয়ে নেয়। সিনথিয়াকে বলে।
— রুমে যাও…. এখানে বসে থাকতে হবে কেনো এতো কষ্ট করে?
সিনথিয়া কথা বলে না। তার বলার আর কিছু নেই। এই মানুষটাকে সে রিকুয়েস্ট করতে পারে। তবে জোর করার অধিকার তো তার নেই। আর কোনো কথাও নেই। সে চুপচাপ বসে থাকে। জাবির বলে,
— বেশী কিছু তো চায় নি মেয়েটা। এতো কষ্ট করে একজনকে সেন্সলেস করে আসছে মেয়েটা। এইটুকু প্রাপ্য না?? আমি লাইট অফ করে দিচ্ছি। মনে করুন রুমে কেউ নেই।
ইরফাদ আবার চোখ পাঁকায়। আর সেই চোখ রাঙানির উপর জাবির লাইটটা টুক করে বন্ধ করে দেয়। ওপাশ থেকে সিনথিয়ার গলা আবারো শোনা যায়।
–আরেকবার রিকুয়েস্ট করলে কি আপনি রেগে যাবেন? প্লিজ একটা মিনিট!
ইরফাদ অন্ধকার রুমে দাঁড়িয়ে আছে। অপর পাশের মেয়েটিকে আর কি বলবে সে। তবুও বলে,
— যাও… এভাবে বসে থেকো না।
— খুব বেশী কিছু চাইনি। একটা মিনিট। প্লিজ…..
–সিনথি!! যাও বলছি….
— বসতে হবে না আমি এখানেই বসে থাকবো। আপনি বিছানায় যান।
— আমি কিন্তু সত্যিই রেগে যাচ্ছি।
— সরি স্যার! চলে যাচ্ছি। রাগ করবেন না প্লিজ।
এভাবেই চলে যায় কয়েক মিনিট। ঘরে বাইরে পিনপতন নিরবতা। তবে ইরফাদ জানে সিনথি যায়নি। মিনিট দশেক পর ইরফাদ ডাকে,
— সিনথি!!
সিনথিয়া উত্তর নেয় না। ইরফাদ বলে,
— আমি জানি তুমি যাওনি।
সিনথিয়া সাড়া দেয়। ইরফাদ বলে,
–জেদ কোরোনা। রুমে যাও…
সিনথিয়া আর কথা বলে না। ইরফাদ আবারো দাঁড়িয়ে থাকে। অনেকটা সময় পর ফোস করে শ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে,
রং পর্ব ৩৬
–যাও…
ওপাশ থেকে উত্তর আসে,
–আমি এভাবেই বসে থাকবো..
ইরফাদ আরেকবার দীর্ঘশ্বাস টানে তারপর দরজা ঘেঁষে বসে। দরজার গায়ে লাগানো পিঠের মৃদু ধাক্কা নিজের পিঠে অনুভব করে সিনথিয়া। ঘন অন্ধকার যেনো আলোয় আলোকিত হয়। পায়ের তলাটা নতুন করে শিউরে ওঠে। শ্বাস ঘন হয়ে আসে। দরজায় মাথা ঠেকায় সিনথিয়া। তারপর পাশ ঘুরে বসে সিনথিয়া। দরজায় হাত বুলায়। যেনো অপর পাশের মানুষটিকে স্পর্শ করার অনুভূতি। গলা জড়িয়ে আসে। শিক্ত হয়ে আসে হাতের তালু। যেনো পৌষ মাসের শীতে সে বরফ হয়ে যাচ্ছে। জড়িয়ে আসা গলায় অস্পষ্ট স্বরে বলে,
— ধন্যবাদ স্যার! এইটুকু নিয়েই সারাজীবন বেঁচে থাকবো।ভালোবাসার অনুভূতি সত্যিই সুন্দর।