রং পর্ব ৫৮

রং পর্ব ৫৮
তন্নী তনু

শুনশান নিরব চারপাশ। নির্জন, নিরালায় পাতা জাল গুটিয়ে নেওয়ার সময় চলে এসেছে। এদিক সেদিক চোখ ঘুড়িয়ে সবটা পর্যবেক্ষণ করেন প্রভাতরঞ্জন সরকার। বাইরে ঝুলন্ত তালাটাতে চাবি দেয়। এক সেকেন্ডে খুলে যায় তালা। আর একটু খানি পথ। ক্লোরোফর্মে বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে এই বদ্ধ কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যাবেন তিনি। অতঃপর রঙিন, সুন্দর জীবনগুলোতে নামবে ধূসর রঙের খেলা…….আর একটু… কেবল একটু সময়ের অপেক্ষা….

গুটি গুটি পায়ে নিরব পথে এক অশুভ কালো অধ‍্যায়ের অধিপতির যাত্রা!হৃদযন্ত্র, চোখ,মস্তিস্ক হুঁশিয়ার! সাবধান!প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি শ্বাস, চোখ সতর্ক। শুধু একবার! একবার! এতেই চলবে ধ্বংসলীলা। তাকে রুখবার ক্ষমতা কার! কে রুখবে তাকে! গুপ্ত শেল এখনো তার জন‍্য খোলা জানালা, পাখির মতো ডানা মেললেই মুক্তি। ঐ শূন‍্য আকাশ থেকে তাকে টেনে ধরার ক্ষমতা কার! কার আছে এতো শক্তি! একবার বেরিয়ে যেতে পারলেই নিজের অস্তিত্বকে আধারে লুকিয়ে, মৃত‍্যুখেলায় সে এইবার নামবেই। সেখানে প্রথম বিনাশ হবে ইরফাদ! ওর রক্তের চিহ্ন ফোটায় ফোটায় ফেলে নিঃচিহ্ন করে দিবে সে, ধ্বংসযজ্ঞ চলবে। কল্পনাল ইন্দ্রজালে তার পেঁচানো মস্তিষ্ক বারি খায় একটুকরো মোড়ানো কাগজের ঢিলে। একটা সাদা কাগজ মুড়িয়ে ছোড়া হয়েছে তার দিকেই। মোড়ানো কাগজখানা প্রথমে হাওয়ার গতিতে বুকে এরপরেই গড়িয়ে পড়ে মেঝেতে। সংকুচিত কপাল, ধুরু ধুরু বুকের কাপন, কাঁপা কাঁপা হাতে ছোট্ট মোড়ানো কাগজখানা তুলে ধরে প্রভাত রঞ্জন। অতঃপর চরম নৈঃশব্দতায় ডুবে যায় তার সকল ইচ্ছে, স্বপ্ন, অশুভ পরিকল্পনার জাল একটু একটু করে ছিড়ে ছিড়ে পড়ে। ফকফকে কাগজ খানায় গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–ডোন্ট মুভ! হিডেন সিসি ক‍্যামেরা লাগানো আছে। আপনার শেলের বাইরের সবটা দেখা যায়। আমি জানতামনা স‍্যার! প্লিজ আপনি নড়বেনা। চুল পরিমাণ এগোলে আপনি ধরা পড়ে যাবেন। ভিডিওর এক্সেস এসপির হাতেই আছে। আর ফুল সিকিউরিটি দেয়া। আপনার হাতের ঐ ক্লোরোফর্ম নট এনাফ সকলের সাথে লড়ার জন‍্যে। আর ভাজির নিচে এর চেয়ে বেশী বড় শিশি দিলে আমি ধরা পড়ে যেতাম। আমাকে আরেকটু টাইম দিন। আমি আরেকটা ব‍্যবস্থা করবো।
কল্পনায় ভাসমান সুখের তারাটা হাতে ধরা দিবে বলে বলে হঠাৎ ফুরুৎ হয়ে যাওয়া, পরেরদিন যদি রিমান্ডে নেয়, কুৎসিত ভবিষ্যৎ এর অবস্থা কল্পনার দৃশ‍্যপটে ঘুরে বেড়ায় তার, সবমিলিয়ে ঠান্ডা মস্তিষ্কতে দিয়াশলাইয়ের কাঠির ঘর্ষণে ফুরুৎ করে জ্বলে ওঠে আগুন। হিসহিসিয়ে ওঠে প্রভাতরঞ্জন সরকার। মনে মনে গালি দেন,

— আরে শালা! একদিনের রিমান্ডেও যদি ঐ ইরফাদ আমাকে পায়,নাড়ি-ভুড়ি উল্টে পাল্টে সমস্ত তথ‍্য আদায় করেই ফেলবে।
অদৃশ‍্যমান ব‍্যক্তিকে গুটিকয়েক গালি দিয়ে পিছিয়ে যায় প্রভাত রঞ্জন সরকার।
শেলের ভেতরে নিজেকে তালাবদ্ধকরে অপেক্ষা করে নতুন সুযোগের। কল্পনায় ভাসমান পরিকল্পনা সে স্বার্থক করেই ছাড়বে। হয় আজ! নয় কাল! নয়ত ______!

পরেরদিন তপ্ত দুপুর, ফুরফুরে আকাশ, সূর্যটা আঁচ ঝাঝালো। তপ্ত দুপুর বেলা বাড়ি ফেরে ইরফাদ। কঠিন তাপে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে এককোণে বিড়বিড়িয়ে পড়ছে। অনামিকায় লেপ্টে কপাল মুছে নেয় ইরফাদ। সিনথিয়া ইভার সাথে হাতে হাতে কাজ করছে। ইরফাদের উপস্থিতিতে তার নিশ্চুপ, নিরব ঠোঁটজোড়ায় খেলছে খুশির ঝিলিক। লম্বা পা ফেলে ইরফাদ নিজের কক্ষের দিকে যায়। সিনথিয়া আড় চোখে তাকিয়ে নিজের কাজ করে। কাচের স্বচ্চ পানিপূর্ণ জগটা সিনথিয়ার হাত থেকে নেয় ইভা। মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,
–তোমাকে না বলেছি হাতে যতো কাজ থাকুক। বর ফিরলে তাকে আগে সময় দিবে। তার আশেপাশে থাকবে। মনে থাকে না!
সিনথিয়া তলিয়ে তাকায় ইভার দিকে। লাজুক ঠোঁটজোড়া ধীরে ধীরে নাড়িয়ে বলে,

— একটা যৌথ পরিবার কতো সুন্দর এটা অনুভব করা যায় তোমার মতো বোন থাকলে। এভাবে যদি প্রতিটা পরিবারে ননদ-ভাবির সম্পর্ক হতো। তাহলে কেউ ননদ থাকাটা অপছন্দ করতো না। কেউ বলতো না ছেলের বোন আছে অবিবাহিত, অথবা ডিভোর্সী।অমন পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিলে সব সময় ঝামেলা লেগেই থাকবে। এই বলে পিছিয়ে যেতো না আপু। বোন থাকাটা যে কতোটা ভাগ‍্যের ব‍্যাপার তোমাকে না পেলে বুঝতাম না।
— সব সম্পর্কে দুজনের ই কম্প্রোমাইজ করতে হয়। তুমি ভালো বলেই আমাকে ভালো লাগছে।
— তোমার মনটা এতো ভালো। তোমাদের ভাই বোনকে দেখেই বোঝা যায় তোমরা আদর্শ বাবা মায়ের সন্তান। চোখ জুড়িয়ে যায় আপু।
–কি যে পাকা পাকা কথা। যাও এখন ভাইয়ার কাছে।

ছিমছাম, পরিপাটি কক্ষে পরিচিত সুভাস, গন্ধে হৃদয় তলিয়ে নেওয়ার জন‍্য এতোটুকুই যতেষ্ট। সিনথিয়া নিজের চুলগুলো হাতখোপা করতে করতে দ্রুত ভেতরে প্রবেশ করে। নরম ভেজা ভেজা সুভাসের সাথে ভেসে আসে হীম শীতল সেই গলা,
— খোঁলা চুলেই ভালো লাগে ম‍্যাডাম।
আধখোপা পেঁচানো চুল গড়িয়ে পড়ে পিঠজুড়ে। আপাদমস্তক দীর্ঘদেহী লোকটা তখনো উল্টো দিকে মুখ করে আছে। তাহলে উল্টো দিক ঘুরে কি করে দেখলো সে চুল বাঁধছিলো। কিঞ্চিত ভাঁজ পড়া কপালে ভাসতে থাকা প্রশ্নটা শেষ না হতেই মন পড়তে পারা ইরফাদ থাই গ্লাসের পর্দা চাপিয়ে পেছন দিক ঘুরে বলে,
— এতো ভাবার মতো কিছু নেই। থাই এ দেখা যাচ্ছিলো চুল বাঁধছিলে।
এতেই ভাসমান কল্পনারা ঢেউ তুলে হারিয়ে যায়।আজকাল সে বড্ড বোকা হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ বিষয়গুলো তার মাথায় ঢোকে না। প্রেমে পড়লে কি মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে যায়! ভাবতে ভাবতে ওয়াটার বোতল টা ইরফাদের দিকে এগিয়ে দেয় সিনথিয়া।

— বসুন! এই যে পানি।
— বসো এখানে। তোমার সাথে কথা আছে।
— হুম!
— সেরাতের অকারেন্স টা যদিও মনে করাতে চাই না। তবে আই হ‍্যাভ নো ওয়ে সিনথি!
— কোন ব‍্যাপারটা। আপনার উপর যে এট‍্যাক হলো?
— হুম!
— আমার আর খারাপ লাগে না। আপনি যে সুস্থ আছেন আমি তাতেই খুশি।
— বাকি দুজন লোককে চিনতে পারবে?
সিনথিয়া নিরবে মাথা নাড়ায়।তবে ঐরাতের ভয়ংকর দৃশ‍্যটা মনে পড়তেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কি হতে যাচ্ছিলো তার সাথে। ভালোবাসার মানুষকে জিম্মি করে তার তার সম্মান নষ্টের চেষ্টা। এর চেয়ে ভয়ানক কিছু হতে পারে। চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। শূন‍্যতায় শূন‍্যতায় ধূ ধূ করে বুকটা। সবটা শেষ হতে পারতো, ভালোবাসা! সম্মান সব! সব! সব! পুরোনো ভয়াল দৃশ‍্য চোখে ধরা দিয়েই যন্ত্রণা যেনো তাজা হয়ে ওঠে। একটা মেয়ে কতোটা অসহায় এই কাপুরুষদের ভীরে। আত্মরক্ষার জন‍্য মার্সাল আর্ট শিখেও সে সেদিন নিরুপায় ছিলো। পুরোনো দৃশ‍্যপটের ভয়ানক অধ‍্যায় তাকে নিরব করে দেয়।নিজের ব‍্যাথাতুর হৃদয়, শরীর আরেকটা উষ্ণ বুকের খাঁচার মধ‍্যে নিরবে গুটিয়ে নেয়।

— সিনথি! আই নোউ ইটস সো মাছ প‍্যাথেটিক। বাট আলাদাভাবে আইডেন্টিফাই না করলে এই শাস্তিটা ওরা পাবে না সিনথি। আমি চাইনি তোমাকে আরেকটা বারের জন‍্য এসব মনে করিয়ে দিতে। বাট আ”ম হোপলেস সোনা। তাদের শুধু আইডেন্টিফাই করে দাও। সবগুলোর শরীরের চামড়া আমি খুলে নেবো।
— পৃথিবীটা এতো জটিল কেনো? কেনো সব কিছু সহজ না। এই জটিল পৃথিবীতে কেনো রুখে দাড়ানোর ক্ষমতা মেয়েদের নেই। কেনো ভয়ে কুকড়ে থাকতে হয়।কেনো নরপিচাশদের কাছে মেয়েরা অসহায়! কেনো?
— সিনথি! তুমি তো দূর্বল না। কেনো সবগুলোকে শেষ করে দাওনি?
–জানটাই তো ওদের হাতে বন্দি ছিলো। কি করতাম নিজের ঐ দেহ নামক খাঁচাটা বাঁচিয়ে। যেই পৃথিবীর কঠিন, নির্মম, নির্দয়, পাপিষ্ঠরা আমার ভালোবাসার মানুষটাকে আমার সামনে শেষ করতে চায়। আমি কি করবো? আপনাকে ছেড়ে বাঁচার ইচ্ছে আমার নেই। নেই তো।

হাতের বাঁধনে কোমল শরীরটা তপ্ত ওমে জড়িয়ে রাখে ইরফাদ, নিগূঢ় গলায় নামে শৈত্যপ্রবাহ,
— ইমোশোনাল হয়ে যাচ্ছো সিনথি! আই নো তুমি আমাকে কতোটা ভালোবাসো। তবে সবার আগে তোমার সম্মান। আমাকে মেরে ফেলুক, যাই হয়ে যাক, আগে নিজেকে বাঁচানো উচিত। চোখ দুটো খুলে এই ভয়ানক দৃশ‍্যের সম্মুখীন যদি হতাম! আমি কি ঠিক থাকতে পারতাম? পারতো এই কঠিন মানুষটা ঠিক থাকতে সিনথি…..!
— আমি আর মনে করতে চাই না প্লিজ…প্লিজ….প্লিজ…!
— তোমার ডিরেকশনে যেই স্কেচটা তৈরী হয়েছিলো বাকি দু”জনকে ধরা হয়েছে। তোমাকে যেতে হবে সিনথি। যে যে তোমাকে ছুঁয়েছে। কষ্ট দিয়েছে। ওদের না শাস্তি হলে যে আমি শান্তি পাবো না।

— আমি যাবো।
— আরেকটা কথা- টুম্পাকে নিয়ে যাচ্ছি আজ।
এই বাক‍্যটুকু শেষ না হতেই চোখ খুলে ইরফাদের দিকে তাকায় সিনথিয়া। খোলা চোখের প্রশ্নটা পড়ে নেয় ইরফাদ। রাফসানের রিমান্ড কার্যকর হবে এইটুকু লুকিয়ে রাখে ইরফাদ। তাই আজকের মধ‍্যেই দেখা করাতে হবে। একজন বাবা মেয়ের প্রথম সাক্ষাৎ তো বাবার বিধ্বস্ত অবস্থায় হতে পারে না। সন্তানের সাথে বাবার সম্পর্ক সবসময় সুন্দর,কোমল। ভাবনা থেকে বেড়িয়ে ঢেলা ঢেলা চোখ দুটোর প্রশ্নের উত্তর দেয় ইরফাদ,
— আমি কি এতোই নির্দয়,পাষান, হৃদয়হীন? আমার কাজ অফিসিয়ালি আনঅফিসিয়ালি সেইম।কিন্তু এজ আ হিউম‍্যান বিং–আমি কারো সন্তানকে বাবার থেকে আলাদা করতে পারি না। ঐটা তো শাস্তির আওতায় আসে না।

— আপনি সত্যিই দেখা করাবেন?
— হুম! আজকেই।
— আপু?
— ইভা জানে।
— যেহেতু তোমাকেও আজ যেতেই হবে। সো যখন টুম্পাকে দেখা করতে নিয়ে যাবো তুমি ইভার সাথে থাকবে। টুম্পা অনেক ছোট। ওকে এভাবে একা নিয়ে দেখা করালে প্রেশার পড়তে পারে।কাঁদলে ইভা সামলাবে, তাহলে ইফেক্টা পড়বে না।
তবে তুমি ইমোশোনাল হবে না।হলেও সামলে নিবে। কোনো ভাবেই আমি বলার আগে ও যেনো বুঝতে না পারে তুমি রাফসানের বোন।
সিনথিয়া নিরবে মাথা নাড়ায়।

সন্তান-বাবার সাক্ষাতের প্রথম সাক্ষী হবে আলোয় উদ্ভাসিত কক্ষটা। ইরফাদ তার সর্বোত্তম ব‍্যবস্থা করে রেখেছে। তবে সেই কক্ষ আপতত অন্ধকারাচ্ছন্ন। আধারে ডুবানো। ইরফাদের কোলে ছোট্ট টুম্পা। বাচ্চাটির সাথে যতোটুকু প্রয়োজন বলাই আছে। বাকিটা এখন ঘটবে……
অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষের দরজার নব মুচড়িয়ে কক্ষে প্রবেশ করে ইরফাদ। টুম্পার কানে কানে আদুরে গলায় বলে,
— ভয় লাগছে,মা!
অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে চোখ বন্ধ করে রেখে ইরফাদের গলাটা আলতো করে জড়িয়ে ধরে টুম্পা। তারপর ভেঙে ভেঙে বলে,
— চোখ বন্ধ রাখলে তো তব-ই অন্ধকার মামাই।
— তুমি চোখ খোলোনি বুড়ি?
— উহু! তুমি যে বললে আমাকে আকাশের তালা(তারা) এনে দিবে। তাই তালা দেখার আগে আমি কিততু দেখতে তাইনা।

বাস্তবতার ছিটেফোটা না বোঝা মেয়েটা কতো খুশি। তবে পুরো বাস্তবতা বুঝতে পারা মানুষগুলোর বুকে শুধু দীর্ঘশ্বাস। এই হাহাকার, এই শূন‍্যতা,এই আফসোস কেবল ভুল পথে চলা একটা মানুষের জন‍্য। সে সহ আজকে এই মূহুর্তে আগুনে ভস্মিভূত হচ্ছে আরোও কয়েকজনের হৃদযন্ত্র। ইরফাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। টুম্পাকে নামিয়ে দেয় মেঝেতে। নিজের দুপায়ের মাঝে দাঁড় করায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মূহুর্তেই কক্ষের এককোণে জ্বলে ওঠে আলোকদ‍্যুতি। বন্ধ চোখেও সে আলো অনুভব করে টুম্পা। পাতলা ওষ্ঠজোড়ায় রাজ‍্যজয়কারী হাসি। বাচ্চা মন তারা ছুঁতে পাওয়ার খুশিতে ডুবে আছে। ওষ্ঠজোড়ায় আলো ছড়িয়ে টুম্পা বলে,
— তালা(তারা) খসে পড়েছে মামাই!
ইস্পাতকঠিন হৃদয়ে যতো তিক্ত অনুভূতিই থাকুক এই মূহুর্তে এসপি কেবল ছোট্ট বাচ্চাটার মামাই। শুধুই মামাই। তাই মেয়ের সাথে এই মূহুর্তে বাবার দেখা হওয়াটা সবচেয়ে স্পেশাল! সবচেয়ে স্পেশাল! ইরফাদের ইস্পাতকঠিন গলাটা এই মূহুর্তে কোমল।

— হ‍্যাঁ মা! চোখ খোলো…
ছোট্ট বাচ্চাটা প্রবল খুশিতে চোখ জোড়া আধ আধ করে খোলে। ঘন আখি পল্লবের ফাঁকে মেয়েটা দেখে অন্ধকারাচ্ছন্নে তলিয়ে থাকা রুমের শেষ প্রান্তে একটু খানি আলোকদ‍্যুতি। বাচ্চা মন ভেবে নেয় আকাশের তারাটা সত‍্যিই খসে পড়েছে। তুমুল উচ্ছাসে মেয়েটা বণ‍্য হরিণের মতো লাফিয়ে ওঠে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে ওঠে,
–ইয়েহহহ
ঐ মূহুর্তেই আলোকদ‍্যুতি ঢেকে উদীয়মান হয় এক মানব অবয়ব। আপাদমস্তক দীর্ঘ শরীরের চওড়া পিঠ ঠেকায় সেই আলোকদ‍্যুতির সামনে।অবয়ব এর পিঠের পিছনে আলোকদ‍্যুতি সূর্যের মতো জ্বলছে। মুখটা এখনো আধারে ঢাকা। শুধু পিঠের পেছন ভাগ থেকে সূর্যের তীর্যক রশ্মির মতো আলো ছড়াচ্ছে। একটুকরো আলোটা মানব অবয়ব এর পিঠে লেগে আবছা আলো পুরো কক্ষে ছড়িয়ে যায়। ছোট্ট মেয়েটা কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেই অবয়ব এর দিকে। অস্পষ্ট মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে টুম্পা। ছোট্ট হৃদয়টা শুধু বুঝতে পারে সময়ের সাথে অস্পষ্ট অবয়ব পরিষ্কার হয়ে ধরা দিচ্ছে । তার সাথে দূরত্ব কমছে ক্রমেই। তৎক্ষণাৎ টুম্পা চোখ ফিরিয়ে তাকায় ইরফাদের দিকে। পাতলা, কোমল হাতটা ঠেলে দেয় ইরফাদের হাতের মুঠোয়। ইরফাদ হাঁটুগেঢ়ে বসে। নিজের ওষ্ঠজোড়া টুম্পার কপালের কাছে নামিয়ে ছোট্ট করে হামি দেয়। আদুরে স্বরে বলে,

— তোমার জীবনের সুপারস্টার! তোমার জীবনের সুপার হিরো! তোমার পাপা!
তৎক্ষণাৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষ জ্বলে ওঠে আলোতে। লাল, নীল রঙের ধোঁয়া গোল গোল পাকিয়ে ঘুরতে থাকে। আলোয় আলোয় ভাসতে থাকে কক্ষ।কক্ষ জুরে ঝিলমিল বেলুনের উড়াউড়ি, মেঝে ভর্তি বেলুনে ভাসানো। সেই বেলুনে ভাসানো পথ সাঁতরে ছুটে আসছে রাফসান। হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ দমাতে ছুটে আসছে এক ছোট্ট রাজকণ‍্যার বাবা! একজন বাবা! সে শুধুই বাবা!

রং পর্ব ৫৭ (৩)

আবছা আলোর শেল। সেখানে আরেকটা মোরানো চিরকুট! মোড়ানো চিরকুট মেলে ধরে প্রভাতরঞ্জন সরকার। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
— রেডি থাকবেন স‍্যার! আর অল্প কিছুক্ষণ। এরপরেই আপনার মুক্তি!

রং পর্ব ৫৮ (২)