রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১১

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১১
আশু

চৌধুরী ভিলার সবাই ছাদে বসে মিটিং করছে তাদের সাথে আজকে ইয়াসিরও যুক্ত কারণ কালকে আশুর বার্থডে রাতে সারপ্রাইজ প্ল্যান করছে সবাই। এদিকে ইয়াসির রুমিকে বলে দিয়েছে আশুকে বিকাল পর্যন্ত ঠেলেঠুলে আটকে রাখতে তারপর ইশার সাথে যেন সেও চলে আসে।
আয়ান আর ইযান সবকিছুর ডেকোরেশন করছিল আর ইয়াসির পায়ের উপর পা তুলে বলছে,,”এটা এভাবে কর তোহ্, তাহলেই না আমার বউয়ের ভালো লাগবে। আর হ্যাঁ চকলেট ফ্লেবারের কেক অর্ডার দিয়েছিস না ইযান?” ইযান মাথা নাড়িয়ে বলে,,,”সবগুলোই করেছি ভাইয়া”

দুইভাইকে গাধার মতো খাটিয়ে নিজে আরাম করে বসে আছে। আয়ান আর ইযান রাগে ফোসফোস করলেও বোনের জন্মদিন তাই চুপচাপ হজম করছে। কিন্তু সেই শান্তি কই ইয়াসির সাথে সাথে আবারও বলে উঠে,,”আয়ান এবার তুই একটা বিয়ে কর নাকি করে ফেলেছিস লুকিয়ে টুকিয়ে রেখেছিস?”
আয়ানের গায়ে ফোসকার মতো লাগলো ইয়াসিরের কথাটা, বড় ভাই তার উপর টিটকারী বেচারা কতক্ষণ হজম করবে। আয়ান চেঁচিয়ে বলে,,”হ্যাঁ ভাই বিয়ে তোর আগেই করেছি বাচ্চাও আছে। তোর বাচ্চা হউক আগে তারপর আমারটা ওপেন করবো”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কস কি শালা এতো ফার্স্ট সব করা শেষ”
আয়ান হাসতে হাসতে বলে,,”হ্যাঁ বাবা হওয়ার আগে তোকে জেঠু বানিয়ে দিলাম জোস্ না??”
“ধুর শালা আমি ভাবলাম সত্যিই”
ইযান বলে,,”তোমরা কাজটা শেষ করো তারপর গল্পের মেলা নিয়ে বসো প্লিজ”
ইয়াসির বলে,,”তরা কাজ কর আমার বউ আসবে এখনি, বউকে আমি সামলাচ্ছি। আর বউয়ের বান্ধবীকে এখানে পাঠাচ্ছি।”

আয়ান ফোনে কথা বলায় ইয়াসিরের কথা শুনতে পায়নি তবে ইয়াসির যে চলে গিয়েছে সেটা শুধু দেখেছে।
ইশা আর রুমি চলে আসে। রুমি বলেছে,,কালকে প্রোগামে দুইবান্ধবী একসাথে যাবে তাই আজকে ইশার এখানেই থাকবে। ইশা তোহ্ মহাখুশি নাচতে নাচতে বান্ধবীর গলা জড়িয়ে বাসায় আসা মাত্রই দেখে ইয়াসির সামনে দাঁড়িয়ে।
ইশা ভেঙিয়ে বলে,,”মি.অভদ্র জামাই ”
ইয়াসির না শুনার ভান করে নিজের রুমের দিকে যাওয়া শুরু করে। কারণ এটাকে একবার পাত্তা দিলে ঝগড়া করেই রাত পারি দিবে।

ইয়াসিরের পাত্তা না পেয়ে ইশা রুমির দিকে ঘুরে বলে,,”দেখলি কেমন খচ্চর মার্কা জামাই জুটছে”
রুমি বলে,,,”আরে ভাই হাইপার হচ্ছিস কেন কয়েকদিন পর দেখবি বউ বউ করবে এখন নতুন তোহ্!!”
রুমি কথা শেষ হওয়ার আগেই ইশা বলে,,”আমিন আল্লাহ যেন তাই করে রে চল চল।”
ইশা রুমে গিয়ে আয়নার সামনে নিজের চুল আঁচড়াচ্ছে আর গুণগুণ করে গান গাইছে,,,,
“ধরো না আমারই হাত”
বলো না
হবে কি আমার”

ইয়াসির আড়চোখে বার বার বউকে দেখছে। সেদিকে বেচারী ইশার মনোযোগ নেই। কারন তার ধারণা তার জামাই তাকে শত্রু ভেবেই বাকি জনম পাড়ি দেবে তার তিন তিনটা বাচ্চার শখ জীবনেও মিটবে না।
এদিকে তার জামাই ফুটবল নাকি ক্রিকেট টিম বানাবে এ নিয়ে ভাবছে আর চিন্তা করছে তার এমন মোটাতাজা বউয়ের আসলেও এত শক্তি হবে নাকি দুইটা হলেও কুপোকাত হবে কে জানে।
দুজনের চিন্তা ভাবনার মাঝেই ডাক পড়ে রাতের খাবারের জন্য।
ইশা পিছনে ঘুরে বলে,,”এই যে মি. অভদ্র জামাই চলুন”
ইয়াসির দাঁত কপাটি সব বের করে বলে,,”হুম চল”

ইশা হা হয়ে তাকিয়ে হলো কি বেডার। এই হাসে এই থাপ্পাড়ায় জিন ভুতে ধরলো, না না সুন্দর বেডা যেহেতু পরী তেও ধরতে পারে। পরী ধরলে তার কি হবে না না। বেচারী এত সাধের জামাই হারাবে কখনোই না তাই জামাইয়ের পিছন পিছন হাঁটতে থাক। আর যাওয়ার সময় রুমিকেও টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে। এদিকে সবাই খাবার টেবিলে বসে রয়েছে। আয়ানকে দেখে রুমি বেশ অস্বস্তি লাগছে আয়ান তা বুঝতে পেরে খাবারের প্লেট নিয়ে সোফায় ধারাম করে বসে ক্রিকেট ম্যাচ অন করে বলে,,”তোমরা খাও আমি খেলা এনজয় করবো আর খাবো। ”
রুমি হালকা হাসে আয়ানের এরুপ আচরণ দেখে। মনে মনে বলে,,”লোকটা ভিলেন হলেও ভদ্র মানে ভদ্র
ভিলেন।”

তখনি ইশা রুমিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,,,”বস দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন? আজকে প্রথম এলি নাকি?”
ইশার মা বলে,,”মা বসো।’ তখনই ইশার জেঠী মা এসে বলে,,”যা যা ভালো লাগে নিয়ে খাও মা একদম নিজের বাড়ি মনে করো এত লজ্জা পেতে হবে না বুঝেছো??”
রুমি হালকা মাথা নাড়ায় বরবারই বাড়ির সবার ব্যবহার এমন অমায়িক তা রুমি জানে তবুও মাঝে মাঝে লজ্জারা তাকে হানা দেয়।
একটুপর সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যে যার যার মতো চলে যায়। তবে একটু পরই আবার সবাই ছাদেও চলে আসে।
বালিশে মাথা দেওয়ার দুমিনিটে ঘুমানোর মতো আধ্যাত্নিক এক শক্তি ইশার মাঝে আছে । তাইতো বেচারী এখন ঘুমের তোপে রয়েছে।

আর এদিকে ইয়াসির,ইযান,আয়ন আর রুমি তিনজন মিলে বেশ সুন্দর করে সবটা এতক্ষণে গুছিয়ে ফেলেছে।
বাড়ির সবাইকে আয়ান বলেছে ডেকে নিবে। তাই সবাই যার যার মতে না ঘুমিয়ে গল্প করছে। এদিকে ফুলের একটা বুকেট নিয়ে আয়ান আর রুমির মাঝে ঝামেলা লেগে গিয়েছে। আয়ান বলছে এটা পেছনে তো রুমি বলছে না সামনে। দুজন মিলে টানাটানি করছে এসব দেখে ইযান বিরক্ত হয়ে একপাশে ফোন চাপছে। ইয়াসিরও ফোনে কারো সাথে বকবক করছে।

তখনই সোহানা বেগম উপরে এসে আয়ান আর রুমিকে এমন করতে দেখে। আয়ানের চোখ নিজের দাদীর উপর পড়তেই আয়ান বুকেটটা ছেড়ে দেয়। হঠাৎ ছেড়ে দেওয়া রুমিও ফসকে গিয়ে আয়ানের উপর ঢলে পড়ে ততক্ষণে বাড়ির সবাই এসে পড়েছে। সবার নজর ওদের দিকে। আয়ান সবাইকে ইশারায় তেমন কিছু না বুঝাচ্ছে।
সবাই একসাথে শয়তানি হেসে বলে উঠে,,ওওওওওওওওওওও
রুমি একটু লজ্জা পায় সবার সামনে। এদিকে আয়ানও বিরক্তিতে ঘুরে দাঁড়ায়। তখন সোহানা বেগম ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে বলে,,”নাতী যা তোর কুম্ভকর্ণ বউকে তুলে আন।”
ইয়াসির এক চিলতে হাসি নিয়ে দৌঁড়ে যায়। সবাই অবাক হয়ে ইয়াসিরের যাওয়ার পানেই তাকিয়ে রয় দুদিনেই কেমন বউপাগলা হয়ে গিয়েছে।

ইয়াসির ইশাকে ডাকতে নেয়। না এত সহজে ঘুম ভাঙার নয়। কিছু একটা ভেবে হুট করে ইয়াসির ইশার কপালে চুমু দিয়ে বসে। ইশা তবুও নির্বিকার দেখে। ইয়াসির পর পর ইশার গালে কপালে চুমু দিয়ে বলে,,”নাহ্ বউ উঠবে না পানি ঢালাই লাগবে”।
সামনে থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে ইয়াসির ঠাস করে ইশার মুখে ঢেলে দেয়। বেচারী ইশা ধড়ফড়িয়ে উঠে। ইয়াসির বলে,,”বউ ঘুম ভেঙেছে তাহলে?”
ইশা রেগে ইয়াসিরের দিকে তাকিয়ে বলে,,”আজকে আমি তেমাকে মেরেই ফেলবো।”
ইয়াসির উঠে বলে,,'” আগে ধর আমাকে।”
ব্যাস ইশা কি আর বসে থাকবে ইয়াসিরের পিছু পিছু ছুট লাগায়। একটুপর ইয়াসিরের পিছু পিছু ইশা ছাদে উঠামাত্রই ইশা দেখে অন্ধকার। সবসময় তোহ্ লাইট অনই থাকে আজকে অফ বেচারী একটু ভয় পায় কেমন থমথম একটা ভাব।

তখনই চারিদিকে আলো জ্বলে উঠে সবাই একসাথে বলে উঠে,, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ইশা হ্যাপি বার্থডে।
সবাই একটা করে লাল গোলাপ নিয়ে ইশার দিকে এগিয়ে আসে। সবগুলো প্রিয় মানুষকে একসাথে দেখে বেচারী কান্না শুরু করে দেয়। ইয়াসির বলে,,”বইন কান্দিস না আর কতো কাঁনবি। তোর খুশির জন্য এতো আয়োজন আর তুই,,,”

ইশা তোহ্ ইয়াসিরকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে বলে,,”ভাইয়া আমি তোমার বউ”
ইয়াসির বলে,,,” হ হ এখন ছাড় ছাড় বাপ-মা, শ্বশুর-শাশুড়ী,দাদী প্লাস ছোট ভাইবোন ও এখানে ।”
ইশা ইয়াসিরকে ছাড়লে ইয়াসির ইশাকে একটা গোলাপ দিয়ে বলে,,”হ্যাপি বার্থডে আমার ফেয়ারী বউ”।
এরপর সবাই একে একে ইশাকে উইস করে। রুমিও জড়িয়ে ধরে। সোহানা বেগম বলে,,”এবার পুতিন আন বুঝছত?”ইশা বলে,,আরে চিল্ দাদী আনমোই তোহ্”
আয়ান ইশার মাথায় হাত রেখে বলে,,”সবসময় হাসিখুশি থাক তোর প্রত্যেকটা জন্মদিন এমন হোক। ”
তারপর বিশাল এক কার্ড ধরিয়ে বলে,,”তোদের হানিমুনের টিকেট কক্সবাজার টু সাজেক হ্যাপি??”
ইশা খুশিতে মাথা নাড়ায়।

তখনই পিছন থেকে গিটারের সুর ভেসে আসে,,ইয়াসির গান গাইছে ইশার জন্য। সবাই সরে দাড়াঁয় ইশা আর ইয়াসির এবার সামনাসামনি ইয়াসির গাইছে ইশার চোখের দিকে তাকিয়ে আর ইশাও অপলক তাকিয়ে আছে। সবাই একসাথে ইয়াসিরের গান উপভোগ করছে।গানটা,,,,,
Ke ab kuchh hosh nahin hai
Tu mujhko pila degi kya?
Main peekar jo bhi kahunga
Tu subah bhula degi kya?
Tu baahon mein rakh le do pal
Phir chaahe duur hata de
Main gaud mein rakh loon agar sar
Tu mujhko sula degi kya?
Jaati nahin teri yaadein
Kasam se, ke dil ka bharam hai tu
Baaki nahin ab koi sharam
Jaana, ek dharam hai tu
Jo kehti thi, “Mat piyo na
Meri jaan, zehar hai ye”
Use dekhta hoon koi gair chhuye
Ab aur zehar kya piyoon?

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১০

সবার আনন্দের মাঝেই আয়ান বেরিয়ে যায়। কেউ লক্ষ্য না করলেও রুমি দেখতে পায়। তবে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রুমি ছবি তোলার জন্য নিজের ফোন অন করতেই দেখতে পায় আয়ানের ছবি। মানে দুজনের ফোন অন্ধকারে উলট পালট হয়ে গিয়েছে। ফোন ছাড়া কি থাকা যায় নাকি। রুমি আর কি করবে বেচারী আর না দাঁড়িয়ে দৌঁড়ে লাগায় আয়ানের পিছনে,,

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১২