রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১২

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১২
আশু

“আয়ান ভাইয়া শুনছেন? ভাইয়া?আরে এই ভদ্র ভিলেন এই যে মি.জল্লাদ দাঁড়ান!!!”
আয়ানের পা থেমে যায়, মাত্রই গাড়িতে পা রাখবে কি পেছনে ফেরে দেখে রুমি দৌঁড়ে আসছে। বিরক্তিতে আয়ান চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়ায় ততক্ষণে রুমি আয়ানের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কোমড়ে হাত রেখে বলে,,,”কতক্ষণ ডাকছি হিসাব আছে আপনার?”
আয়ান কাঠকাঠ করে বলে,,”সমস্যা কি ডাকছো কেন?”
রুমি চোখ রাঙিয়ে বলে,,” তোহ্ ডাকবো না আমার ফোন নিয়ে যাচ্ছিলেন যে,, নয়ত আপনাকে ডাকতে যাবো কেন?”
আয়ান নিজের হাতের ফোন চেক করতেই বুঝতে পারে এটা রুমির ফোন। তারপর রুমি দিকে ফোন বাড়িয়ে দিবে এমন সময় শুট করার আওয়াজে রুমি বেচারি কেঁপে উঠে। আয়ান বুঝতে পারে ওর পেছনে কেউ লেগেছে। আয়ান একটানে রুমিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে। পরপর কয়েকবার আয়ানের গাড়িতে কেউ শুট করে।

এদিকে উপরের সবাই মিউজিকের জন্য সেটা শুনতে পায় না। তখন সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করছিল। ইয়াসির নিজ হাতে ইশাকে খায়িয়ে দিচ্ছিল। সবাই বেশ আনন্দে ছিল। তখনই সবার খেয়ালে আসে আয়ান আর রুমি নেই।
ইয়াসির বলে,,”ইশা তোর বান্ধবীটকে গিফট করে দে আয়ানকে।”
ইশা বলে,,,”সে তো আমি একপায়ে রাজি তবে বেচারী আমার ভাইকে দেখলেই ভয়ে হারায় জ্ঞান।”
সবাই একদফা হেসে উঠে। সবাই ভাবে আয়ান আর রুমি হয়তো আলাদা কোথাও গল্প করছে। তাই তারা নিজেদের মতো গল্প করতে থাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

একটুপর এক এক করে সবার মাথা ঘোরাতে থাকে। ইয়াসির সেই মুহূর্তে কিছু খাবে কি। ইশাকে নিজের কোলে ঢলে পড়তে দেখে অবাক হয় তারপর তাকিয়ে দেখে সবাই বেহুঁশ। এসব দেখে ইয়াসির ঘাবরে উঠে সবার হলোটা কি। এরপর ইয়াসির সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্সে কল লাগায়।
খানিকবাদে হসপিটালে ইয়াসির কেবিনের বাইরে পায়চারি করছে কাকে রেখে কার কাছে যাবে। আয়ানও ফোন তুলছে না। কি হচ্ছে এসব? তখনই ডক্তর বেরিয়ে বলে,,”সবাই ঠিক আছে মি.ইয়াসির চিন্তা করবেন না।”
ইয়াসির তটস্থ হয়ে বলে,,”কি হয়েছিলো ডক্তর?”
ডক্টর বলে,,”সবার ফুড পয়জন হয়েছে। আপনারা বাইরের থেকে কিছু,,,,
ইয়াসির অবাক হয়,,আর বলে,,”হয়ত কেক থেকে।”
ইয়াসির সময় নষ্ট না করে পুলিশকে ফোন করে।

একটুপর ইয়াসির নিজের বাবা-মা,দাদী,চাচা-চাচী আর ভাইকে দেখে ইশার কাছে যায়। ইশা উঠে বসে পানি খেতে খেতে বলে,,”ভাইয়া কোথায়?”
ইয়াসির বলে,,”ওরা এখনো নিখোঁজ বুঝতে পারছি না”
ইশা আতংকিত হয়ে বলে,,,,”কি হয়েছে?”
ইশাকে ভয়ার্ত দেখে ইয়াসির সব কথা চেপে যায়। আর বলে,,”সব ঠিক আছে,,কেক এ সমস্যা ছিল তাই আয়ান খোঁজ নিতে গিয়েছ।”

ইশা বলে,,”মাত্র না বললে নিখোঁজ, কি হয়েছে আমাকে বলো?”
ইয়াসির বলে,,,,”নিখোঁজ ছিল একটু আগে আমাকে ফোন দিয়েছে টেনশনে সব ভুলে যাচ্ছি”
ইশা বলে,,”সবাই কোথায় কেমন আছে?”
ইয়াসির ইশার হাত ধরে বলে,,,”সবাই ঠিক আছে,,তুই চিন্তা করিস না আমি আছি তোহ্”
ইশা ইয়াসিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,,”সব যেন ঠিকঠাক থাকে। আমার ভেতরটা কেমন শূন্য শূন্য লাগছে”
ইয়াসির ইশাকে আলতো করে ধরে বলে,,”সব ঠিক থাকবে চিন্তা করিস না”

মাঝরাস্তায় গাড়ির ফিউল ফুরিয়ে গেলে। আয়ান আর রুমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। রুমি তো কাঁপছিল কি থেকে কি হয়ে গেল আয়ান কিছু বলছেও না। মাঝপথে আয়ানের কাছে রিভলবার দেখে ভয়ে বেচারী আরো চুপসে গেছে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আয়ান সজোরে গাড়িকে একটা লাথি মেরে বলে,,শিটট্
তখনই আরো গাড়ি আসার শব্দে আয়ান রুমির হাতে ধরে সামনের জঙ্গলের দিকে খানিকটা এগিয়ে নিজের রিভলবার দ্বারা গাড়িতে শুট করে ব্লাস্ট করে দেয়। রুমি ভয়ে আয়ানকে ঝাপটে ধরে আয়ান একহাত দিয়ে রুমিকে আলতো করে ধরে ওর দিকে তাকায় বুঝতে পারে মেয়েটা বেশ শকড্ হওয়ার সাথে সাথে ভয় ও পাচ্ছে । এরপর আয়ান রুমির হাত ধরে সামনের দিকে যেতে থাকে। রুমি শুধু আয়ানের সাথে হাঁটছে কোথায় যাচ্ছে ওর জানা নেই আর জিজ্ঞেস করার মতো সাহস ও নেই।

“”””””বস ওদের পরিবারের সবাই ঠিক আছে। তবে পুলিশ রিপোর্টসহ সব দিকে আমাদের ধরার জন্য বিশাল গার্ড মাঠে নেমে গিয়েছে। আর আয়ানকে ধরা সম্ভব হয়নি। এখনো ওর পিছে আমাদের লোকেরা আজকের মধ্যেই শেষ করে দিবে এমন ভাবনাই আছে।”
“নাহ্ আমার ওকে জ্যান্ত চাই।আয়ান আমার ভাইকে মেরেছে ওর গোটা পরিবার মারলেও আমার প্রতিশোধ শেষ হবে না। ওকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিজ হাতে না মারা পর্যন্ত আমি শান্ত হবো না।”
‘বস আয়ান একা না ইয়াসিরও আছে। ‘
“ইয়াসিরকে সহজে টপকানো যাবে ওর বউ আছে ওর ইমোশন আছে। আয়ান তোহ্ নির্বিকার পরিবার ছাড়া আর কোনো দুর্বলতা নেই। ”
“তবুও,,,’
“আগে আয়ানকে সশরীরে চাই তারপর পর সামনে ওর পরিবারকে শেষ দেবো।”

রাত কয়টা বাজে জানা নেই অন্ধকারে পূর্ণিমার দরুন কোনোরকম এগিয়ে যাচ্ছে আয়ান আর রুমি। একটুপর রুমি থেমে যায়। আয়ান বলে,,”কি হয়েছে?'”
রুমি ক্লান্ত হয়ে বলে,,”আর পারবো না, এত হাঁটা যায় নাকি?”
আয়ান রুমিকে ছেড়ে বলে,,”আর পাঁচমিনিট ”
“আর একমিনিট ও পারবো না এই দেখুন পা ছিলে গিয়েছে। পায়ের জুতো কই হারিয়েছে জানিও না ভয়ে কিছু বলতেও পারছি না। আর আপনি,,,,”
“স্টুপিড নাকি তুমি জুতো নেই বলবে না। এরকম গাধা আমি জীবনে দেখিনি। ভয়ের কি আছে আমি কি বাঘ না ভাল্লুক যে তোমায় গিলে খাবো!!”

“এই জঙ্গলের মাঝখানে বকছেন।একটা অসহায় মেয়েকে বকতে আপনার লজ্জা হচ্ছে না???”
আয়ান বিরক্তিতে কপালে হাত রেখে বলে,,”কি একটা উঁটকো ঝামেলা গড্”
রুমি হুট করে কান্না শুরু করে দেয়। আয়ান রুমিকে কান্না শুনে ধমকিয়ে বলে,,”কি হলো কান্না করছো কেন?.”
“আপনি আমাকে কোথায় এনেছেন?বাসায় যাবো কি করে আমি?আমাকে আপনি মেরে ফেলবেন তাই না?আপনার কাছে রিভলবার দেখেছি,আপনার সব জেনে গিয়েছি এজন্য আমাকে মেরে ফেলেবন তাই না,,প্লিজ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিন আমি কাউকে কিছু বলবো না প্লিজজজজ”
আয়ান একদম স্তব্দ হয়ে বোকবনে চলে গিয়েছে। তার তোহ্ এমন চিন্তাও আসেনি। এই মেয়ে কোথা থেকে কোথায় চলে গিয়ছে।

আয়ান শান্ত হয়ে বলে,,”ঠিক ধরেছো রুমি। তুমি এখন চুপ না থাকলে এখানেই মেরে ফেলে চলে যাবো। আর চুপ থাকলে কালকে মারবো। বলে কি চাও?”
রুমি ঘাবরে গিয়ে বলে,,,,”না না আমাকে মারবেন না আয়ান ভাইয়া, আমি চুপ একদম চুপ হয়ে যাচ্ছি।”
তখনি আশপপাশে কিছু শেয়ালের ডাক শুনে বেচারীর চুপ থাকা উড়ে যায়। একলাফে আয়ান জড়িয়ে ধরে বলে,,ভাইয়া প্লিজ বাঁচান”
শেষ ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারায় বেচারী। আয়ান স্তম্বিত হয়ে এতক্ষণের নমুনা সহ্য করে বেচারীকে পাজকোলে নিয়ে সামনে এগোতে থাকে।

“””””বস আয়ানের গাড়ি ব্লাস্ট হয়েছে সাথে একটা মেয়েও ছিলো।”
“কোন মেয়ে তার সব ডিটেইলস চাই। আর গাড়িতে মরদেহ ছিলো?”
“পুলিশ এসেছে ঘন্টাখানিকবাদে সব জানতে পারবো।”

আয়ান বসে বসে রুমি পায়ে ব্যান্ডেজ করছে আর ইয়াসিরের সাথে কথা বলছে।
ইয়াসির বলে,,,”তুই বের হলেও সমস্যা রুমি বের হলেও সমস্যা তরা কয়েকদিন ঐখানেই থাক”
“অসম্ভব তোর মাথা ঠিক আছে??”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১১

“হ্যাঁ, রুমির বাবা-মাকে আমি বুঝাবো। তুই বের হলে আসল কিলারকে আর পাবো না।”
আয়ান দমে গিয়ে একপলক তাকায় রুমির দিকে একরাতেই মেয়েটা কেমন এলেমেলো হয়ে গিয়েছে।
আয়ান বলে,,,,”কিন্তু ভাই!!”
ইয়াসির বিরক্ত হয়ে বলে,,”কি কিন্তু কিন্তু করছিস মেয়েটাকে তোহ্ আর বিয়ে করতে বলছি না !!”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৩