রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৪
আশু
আকাশের বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও এখন আর নেই। ইশা আর আরিফ হাসতে হাসতে বাসায় এসে পৌঁছাতেই ইশার চোখ যায় সামনে ইয়াসিরের পাণে যে নিশ্চিন্তে ফোন চাপছে। ইশা রাগে কটমট করে তাকিয়ে উপরের চলে যেতেই। আরিফ গিয়ে ইয়াসিরের পাশে বসে বলে,,,”কি ভাই কেমন অবস্থা তোমার?”
ইয়াসির ফোনেই নিজের দৃষ্টি রেখে বলে,,”যেমনটা দেখছিস ”
আরিফ আরেকটু কাছে ঘেষে বলে,,”কি হয়েছে চুপচাপ কেন ভাই?”
ইয়াসির আরিফের কাঁধে হাত রেখে বলে,,,”ইশার থেকে দূরে থাক, আমাদের বাড়ির মেয়ে তোর চরিত্র না জানলেও আমরা জানি। নিজের ভালো চাইলে মেহমানের মতো আসা যাওয়া কর নয়ত তোর শার্টডাউন মারতে এক সেকেন্ড লাগবে না”
আরিফ একটু ঢোক গিলে বলে,,”ইশা তোহ্ আমারো বোন হয় ওকে আমি বোনের,,,,,
আরিফ কিছু বলার আগেই ইয়াসির দাঁড়িয়ে সামনে যেতে যেতে বলে,,”ঐ যে যেটা বললাম এক সেকেন্ডও লাগবে না”
আরিফ দমে যায় কিছুদিন আগেই মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে আয়ান আর ইয়াসিরের কাছে ধরা পড়েছে। ইশাকে ভালো লাগলেও সে চেপেমেপে চলেছে আয়ানের ভয়ে। এখন ইয়াসিরেরও এই রুপ দেখে আরিফ আরও দমে যায়।
রাত ৮ টা সবাই মিলে গল্পগুজবে ব্যাস্ত, বাসায় আয়ান আর ইয়াসির নেই। ইযান কালকে চলে যাবে তাই মা চাচিরা বলছে,,”কী কী লাগবে? কেমন চলছে?আবার কবে আসবে?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইযান হুম হ্যাঁ বলছে। তখনই দরজার পাণে সবার নজর যায় আয়ানের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ ইয়াসির ধরে আনছে আয়ানকে। সবাই দৌড়ে এগিয়ে যায় ইশা তোহ্ কান্না করতে করতে বলছে,, “ভাইয়া কি হয়েছে তোমার?”
সবাই অস্থির হয়ে উঠে বলে,, কি হলো সকালেই তো সুস্থ বের হলো। ইয়াসির এক ধমক দিয়ে বলে ,,,”তোমরা কি শুরু করলে ওকে বসতে দাও সব বলছি।”
তারপর সোফায় আয়ানকে বসিয়ে ইয়াসির বলে,,”বাইক এক্সিডেন্ট করেছে।”
ইশার মা আলেয়া বেগম আহাজারি করে বলেন,,”কতবার তোকে বলি সাবধানে চালাতে কেন শুনিস না?”
সবাই এক এক করে আয়ানকে কথা শোনাচ্ছে । আয়ান বিরক্ত হয়ে রেগে বলে,,”থামবে তোমরা আমার কিচ্ছু হয়নি। আর ইশু তুই চুপ কর তোহ্ বইন এত কান্না মানুষ করতে পারে?”
ইয়াসির পাশ থেকে বলে,,”মানুষ না পারলেও তোর বোন বেশ পারে, কারণ সে মানুষ না শেওড়াগাছের পেত্নী বলে কথা।”
একমুহূর্তে ইশার কান্না থেমে মুখে রাগের আভাস এসে পড়ে । ইশা কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই সামনের টেবিলের আপেল ইয়াসির ইশার মুখে দিয়ে বলে,,”এক কাপ কফি আন পেত্নী।”
আয়ানও বলে,,”আমার জন্যও আনিস আমি রুমে যাচ্ছি ইযান ধর একটু।”
এরপর সবাই আয়ানের সাথে চলে যায়। আয়ান হাত পা ছিলে গেলেও মারাত্মক কোনো ব্যার্থা লাগেনি শুধু পায়ে যা আঘাত লাগার লেগেছে খানিকটা৷
কফি বানাতে বানাতে ইশা বলে,,,,”আমাকে পেত্নী বলা বারুদভাইয়ের বাচ্চা শকুনের বাপ তোমাকে তোহ্!!”
বলতে বলতে বানানো কফির দিকে নজর পড়তেই ইশা বাঁকা হেসে বলে,,”চান্দু এবার তোমাকে আমার থুতু গিলাবো বুঝো কেমন লাগে!!”
ইশা ট্রে তে দু’কাপ কফি নিয়ে সামনে ঘুরে একটাতে সত্যি সত্যি থুতু মেরে হাসতে হাসতে উপরে যেতে নেয়। তারপর আয়ানের রুমে ভালো কফিটা দিয়ে। ইয়াসিরের রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায় তখনই শুনতে পায় ইয়াসির ফোনে কারো সাথে চেঁচাচ্ছে। এসব তোয়াক্কা না করে ইশা বলে,,”ভাইয়া তোমার কফি৷”
ইয়াসির ফোন রেখে বলে,,,”বাহ্ এত তাড়াতাড়ি? ”
ইশা মিষ্টি হেসে বলে,,”হ্যাঁ ”
ইয়াসির ভ্রুকুচকে বলে,,,”তোর কি কফি খেতে ইচ্ছে করছে??”
ইশা থতমত খেয়ে ভাবতে থাকে এখন যদি বলে না তাহলে ওকে খাওয়াবে আর যদি বলে,,হ্যাঁ তাহলে ইয়াসির ওকে দেখিয়ে খাবে
ইশা তাই মিনমিন করে বলে,,,”নিজের জন্য বানায়নি ভাইয়া”
ইয়াসির বলে,,”কোনো ব্যাপার না বইন আমি শাওয়ারে যামু তুই আমারটা খা”
ইশা ঢোক গিলে বলে,,,”না না না আমি খাবো না। ”
ইয়াসির এক পা এক পা এগিয়ে ইশার হাত থেকে কফি নিয়ে বলে,,,,”নে হা কর তাড়াতাড়ি সময় নষ্ট করিস না!”
ইশা তো বেচারি কান্নার তোপে বলে,,”আমি খাবো না।”
ইয়াসিরও ছাড়ার পাত্র না ইশার গাল চেপে বলে,,”তোর থুতু দেওয়া তুই খাবি বলে,,ইশার মুখে খানিকটা ঢেলে দেয়। ইশা সব উপড়ে ফেলে বলে,,ছিহ্ ছিহ্
ইয়াসির রেগে বলে,,”পেত্নীর বাচ্চা আরেকদিন এমন করতে দেখলে তোর জিহ্বা টেনে কুচিকুচি করে কাটবো। বের হ বলছি বের হ।”
ইয়াসির আয়ানের রুমে যাওয়ার সময় ইশার সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখেছিল।
ইশা মুখ বেঙিয়ে বলে,”,বেশ করেছি তুমি কি হ্যাঁ শকুনের বাপ একটা!! ”
ইয়াসির বলে,,তবে রে ইয়াসির দৌড়ে ইশার চুল ধরে বলে,,পেত্নীর বাচ্চা আজকে তোকে,,, ইশাও ঠাস করে ইয়াসিরের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। ইয়াসির চেঁচাতে চেঁচাতে বলে,,”ছাড় রাক্ষসীর বাচ্চা ছাড় বলছি ”
ওদের চেঁচামেচিতে বাড়ির সবাই এসে দেখে ইয়াসির একহাত দিয়ে ইশার চুল ধরে রেখেছে আর ইশা ইয়াসিরের হাত কামড়ে ধরে রেখেছে।।
এসব দেখে ইলহাম চৌধুরী ধমকে বলেন,,”কি করছো কি তোমরা??এখনে ছোট আছো তুমি ইয়াসির?”
ইয়াসির আর ইশা দুজন দুদিকে দাঁড়িয়ে যায়।
ইয়াসির সবাইকে পাত্তা না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ইশা সামনে তাকিয়ে দেখে সবাই যার মতো চলে যাচ্ছে। বেচারি রেগে ইয়াসিরের রুমে সবকিছু এলেমেলো করে পেলো কাপড়গুলো সব বেলকনিতে ফেলে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বসে থাকে যাতে ইয়াসির আর পেটাতে না পারে। এই দিকে ইয়াসিরে বেরিয়ে নিজের রুমে হাল দেখে বিকট চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
“ইশাাাাাাাাাাাাাারররররর বাচ্চাাাাাাাাাাা কই তুই??”
সবাই ছুটে আসে এসব দেখে আলেয়া বেগম বলে,,”নাহ্ পারলাম না মেয়েটাকে আজকে শিক্ষা দিতেই হবে।”
সোহানা বেগম বলে,,”আমার নাতী ডারে তোমার ঐ দামড়া মাইয়া আর শান্তি দিবো না এবার বিয়া দেও বয়স হইছে মেলা, অসভ্য মাইয়া হইছে একটা।”
ইয়াসির রেগে বেরিয়ে যায়। বাইরে এসে ইয়াসির কাউকে ফোন দিয়ে বলে,,”আয়ানকে যে ট্রাক ধাক্কা দিলো তার খুঁজ পেয়েছিস?”
পাশ থেকে বলে,,,,”ভাই আপনি সম্পূর্ণ ঘটনা জানেন না। আয়ান ভাইয়া নিজের ঐ ভাঙা পা নিয়ে ট্রাকের ভিতর থাকা মির্জার লোককে ইচ্ছামতো পিটিয়েছে হসপিটালে সেই বেডায় এখন মরার মতো অবস্থায় আছে।
ইয়াসির হালকা হেসে বলে,,”নির্বাচনে কালকে কোনো ঝামেলা চাই না”
“জ্বি ভাই।” কিন্তু ভাই মির্জা!! ”
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৩
ইয়াসির দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,কারো কলিজা টেনে আনতেও ইয়াসির চৌধুরীর হাত কাঁপবে না। আর ইয়াসির চৌধুরীর কাজে ঘাপলা মারলে তার আত্মাও আস্ত জ্বলন্ত আগুনে পুড়তে সময় লাগবে না। ”
বলেই ইয়াসির ফোনটা কেটে দেয়।
এরপর ইয়াসির সোজা বেরিয়ে শপ থেকে আইসক্রিম কিনে আসতে আসতে বলে,,”পেত্নীর বাচ্চা আজকে দেখাচ্ছি মজা!!!”