রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১০
আশু
সকাল দশটায় নিচ থেকে কান্না আওয়াজ শুনে চোখ -মুখ কুঁচকে ইয়াসির উঠে বসে। পাশে ইশাকে না দেখে বুঝতে পারে নিচে কোনো সিনেমা শুরু করে দিয়েছে তার বউ। কালকের কথা মনে পড়তেই ইয়াসিরের ভেতর ভেতর একটু রাগ আসে। তবে সব ইগনোর করে ইয়াসির ফ্রেস হতে চলে যায়।
“জামাইয়ের সাথে ঝগড়া লাগলে বাপের বাড়ি মেয়েরা চলে যায়। আমার বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ি একটাই কেন দাদী?”
সোহানা বেগম পান চিবোতে চিবোতে বলেন,,”কারন তোর চাঁদ কপাল,দিন রাত চব্বিশঘন্টা এতো সুন্দর কপাল পাইছোত তার জন্য নাচবি তা না কানতাছোত ক্যা মাইয়া?”
“তোহ্ কান্না করমো না তোমার ঐ সাধের নাতী এই দেখো আমার গালে তার পাঁচ আঙুল বসাইয়া দিছে। আমি এখনো নাচমো বলো?”
“এটা আদর করলে ঠিক হইয়া যাবো। ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান করিস না সর তোহ্!!”
“হ আমি কানলে ঘ্যান ঘ্যান আমি থাকমো না, তোমার নাতীর সংসার আমি করবো না।”
তখনই ইয়াসির নিচে নামতে নামতে বলে,,”দাদীজান তোমার ঐ পেত্নী নাতনীরে বলো,,তার সাথে সংসার করার জন্য কেউ মরছে না। ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“দেখলে দেখলে দাদী? কত খারাপ রাতে বউ পিটিয়ে এখন কি ভাব!!! আমি একমুহূর্ত ও থাকবো না আমি আজই নানু বাসায় যাবো। থাকো তোমরা তোমাদের সোনায় সোহাগা নাতী নিয়ে। আমি কে আমাকে মারলেই কি বা আসে যায়!!”
আয়ান আর ইযান একপাশে দাবায় মেতে আছে। রান্নাঘরে বাড়ির দুই জা। ইলহাম আর ইশান চৌধুরী পারিবারিক ব্যবসা দেখভালে বেরিয়ে গিয়েছে সকালেই।
ইয়াসির সোফায় হেলান দিয়ে নিজের ফোন চাপছে। ইশা ফ্লোরে নিজের দাদীর পায়ের কাছে বসে হিঁচকি তুলে কান্না করছে। সবাই সবার মতো ব্যাস্ত কারণ এখন কেউ ইশার কান্না থামাতে গেলে তাকে জড়িয়ে তিনঘন্টা কান্না করবে আর বলবে কেউ ভালোবাসে না। সবাই শিকার হয়েছে ইশার এই সিনেমায় তাই তোহ্ কেউ যেচে পড়ে শান্ত্বনা দিতেও যাচ্ছে না আজকে।
এদিকে সবার পাত্তা না পেয়ে বেচারী ইশা নিজের রুমে গিয়ে হালকা গোছগাছ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। কারণ সে তাকবে না তার নানু বাসায় চলেই যাবে। তখনই ইয়াসিরও রুমে সামনে দাঁড়ায়।
ইশা বলে,,”সরো বেরুতে দাও ”
“কেথায় যাবি?”
“জাহান্নামের চৌরাস্তায় যাবে?”
“না তুই যা আমার এতো শখ নেই ”
“তাহলে সরো”
“কেন তোর জায়গায় দাঁড়িয়েছি নাকি”
“কি শুরু করেছো যেতে দাও”
“যা তুই তোকে ধরে রেখেছি ”
“দরজার সামনে থাকলে যাবো কি করে?”
“তা আমি কি জানি!!”
ইশা বিরক্ত হয়ে ইয়াসিরকে ঠেলতে যাবে।
ইয়াসির বলে উঠে,,”এই এই আমাকে টার্চ করবি না একদম বাই দা ওয়ে তুই কি আমার ইজ্জত হরণ করতে চাইছিস?”
ইশা নাকমুখ কুঁচকে বলে,,”ছিহ্ কত নির্লজ্জ তোমার ভাবনা সরো বলছি।”
তখনই পিছন থেকে ইশার মা এসে বলে,,”কি হলো তদের এমন দরজার সামনে সারেগামাপা লাগিয়েছিস কেন?রুমের ভেতরে আয় তোহ্। ”
ইশা বলে,,”আমি নানু বাড়ি যাবে মা”
ইশার মা বলে,,”চুপ থাক। কীসের নানুবাড়ি যাবি? দুদিন হলো বিয়ে হয়েছে এখন কোথাও ঘুরতে যাওয়া বাদে নানু বাড়ি কেন?”
“কার সাথে ঘুরবো, আমার তোহ্ কপাল পুড়া জীবন্ত জামাই থাকতেও আমি বিধবা। ”
ইশার কথায় ইয়াসির আর ইশার মা দুজনেই বিরক্ত হয়ে দম ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এই মেয়েটার আজগুবি কথা শেষ হওয়ার নয়।
একটুপর ইশা তার রুমে এসে বিছানায় দু’গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আজকাল বড্ড একা লাগে বেচারীর বান্ধবী থাকে ভার্সিটির ক্লাসে ফোন দিলেও মন ভরে না। তখনি ইয়াসির ইশার পাশে এসে বসে।
ইশা ভ্রুকুচকে তাকায় ইয়াসিরের পাণে। ইয়াসির একটা কিটক্যাট বাড়িয়ে দেয় ইশার দিকে।ইশা বলে ,,”আমাকে বাচ্চা মনে হয় তোমার?বেরিয়ে যাও ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না?তোমাকে তোহ্ সবাই মাথায় নিয়ে নাচে সব সুখ তোমার, আমি মরলেও হয়ত কারো কিছু যায় আসে না।”
ইয়াসিরের মেজাজ গেল চটে ঠাস করে আরেকটা চড় পড়ল ইশার নরম গালে। বেচারী ফ্যালফ্যাল করে তাকায় ইয়াসিরের দিকে। ইয়াসির দাঁড়িয়ে বলে,,”কবে বড় হবি তুই?তোকে যে সবাই কত ভালোবাসে জানিস না তুই?বাচ্চা দেখে তোর আবদার কেউ রাখে না। সবাই তের ভালোই চায় এটা বুঝতে শিখ। আমারই ভুল তোকে বুঝাতে এসেছিলাম,তুই তোহ্ নিজেই বিশাল বিলিয়েন্ট। একদম কান্না করবি না ইশা। কান্না থামা বলছি। নয়ত আরেকটা দিবো থামতে বলছি ইশা। ”
ইশা কান্না করতে করতে বলে,,”থামছে না আমি কি করবো দেখো আমি চেষ্টা করছি না থামলে আমার কি দোষ?”
বাচ্চাদের মতো কান্নার তোপের কথা শুনে ইয়াসির হেসে ফেলে কী এক পাগলের সাথে তার ভাগ্য জুড়ে গেলো? এই ভেবে বেচারার নিজেকে জুকারের থেকে কম মনে হচ্ছে না।
ইশা সেভাবেই বলে,,”হাসছো তুমি?”
ইয়াসির আবারও বসে ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,”বইন থাম প্লিজ তোকে কান্না করলে একটুও সুন্দর লাগে না।”
ইশা একদম বরফের মতো জমে যায় হচ্ছে টা কি?ইশা তখন মিনমিন করে বলে,,”তাহলে কেমন লাগে আমাকে ভাইয়া?”
ইয়াসির আস্তেধীরে বলে,,”একদম মানে একেবারে বিশ্বাস কর তোকে একদম শেওড়াগাছের পেত্নীর চেয়ে কম না বেশিই লাগে!!”
ইশা এক ধাক্কা মেরে ইয়াসিরকে সরিয়ে বলে,,”তুমি সত্যিই খারাপ। ”
“খারাপ হলেও তোর জামাই ভালো হলেও তোর জামাই আর কান্না করিস না বইন,,এবার তোর কান্নার সমুদ্র হয়ে যাবে আর আমরা সেখানেই ডুবে মরবো”
ইশা রেগে বালিশ ছুড়ে বলে,,”যাবে তুমি?’
ইয়াসির বলে,,”যাচ্ছি যাচ্ছি পেত্নীর রাণী”
ইশা বলে,,”মোটেও না আমি তোমার রাণী”
“ও হ্যালো সিস্টার আপনি কোনো রাজাকে বিয়ে করেনি যে নিজেকে রাণী দাবি করছেন!!”
ইশা এবার ইয়াসিরকে মারতে দৌড় লাগায়। নিচ থেকে সবাই ওদের কান্ড দেখছে আর হাসছে। ইয়াসির বলে,,”থাম বলছি’
ইশা বলছে “আজকে তোমাকে মেরেই ফেলবো”
“ইশারেেেে থামম বইন”
“বউ বলো বউ তোমার”
ইয়াসির নিজের রুমে যাওয়া মাত্রই থেমে ইশা দৌড়ে এসে ইয়াসিরের প্রশস্ত বুকে ধাক্কা লেগে থেমে যায়।
ইশা বলে,,”এবার কোথায় পালাবে মি.অভদ্র জামাই”?
রাতের আঁধারে ঘন জঙ্গল ভাঙাচোরা একটা বাঁশের ঘর থেকে গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে সাথে ঝিঁঝিঁপোকার ডাক। হাতে লোহার স্টিক নিয়ে ঘরটার ভেতরে গিয়ে দাঁড়ায় আয়ান। সামনে থাকা লোকটির চোখ ভীতুর ন্যায় শূন্য হয়ে আসে। আয়ান একটানে লোকটির মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে দিলে,,লোকটি কান্না ভেজা কন্ঠে অনুনয় শুরু করে,,ছেড়ে দিন আমাকে দয়া করুন।
আয়ান বাঁকা হেসে লোকটির মাথায় এক বারি মেরে বলে,,আমার ভাইয়ের পিছু নেওয়ার আগে মনে ছিল না?আমার ভাইকে ট্রাক দিয়ে পিষে ফেলার আগে মনে ছিল না?মিটিংয়ে আমার ভাইকে পরাস্ত করার সময় জীবনের মায়া ছিল না তোর?
লোকটি থরথর করে কাঁপতে থাকে মাথা থেকে রক্তের স্রোত বইছে।আয়ান ছুরির মতো ধারালো গলায় বলে উঠে,,,,
“আলোতে যাই দেখিস অন্ধকারে তা দেখতে চাস না, পুড়িয়ে মারার খেলা আঁধার ভালো আলোতে তোহ্ অভিনয়ই শ্রেয়।”
এরপরই বেশ কয়েকবার কড়াঘাত করে লোকটিতে একদম নিশ্চিহ্ন করে ফেলে আয়ান। এরপর দিয়াশলাই দিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে ঠোঁটে রেখে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বেরিয়ে আসে।
“ভার্সিটি বাদ দিয়ে ভাবছি বিয়ে করবো বুঝলি। তোকে ছাড়া ক্লাসে মন বসে না আমার।”
ইশা বলে,,”আমারও সংসারে মন বসে নারে বান্ধবী তোকে ছাড়া আমার দিন চলে না।”
রুমি বলে,,”পড়ালেখা থেকে বিয়ে ঢের ভালো। এই মনে কর বিয়ে করলাম একবছর হানিমুনেই পার করবো তারপর বাচ্চা হবে এরপর বাচ্চা একটু বড় করে শপিং করবো তারপর ঘুরবো জামাইয়ের পকেট ফাঁকা করবো শান্তি আর শান্তিইইইই”
ইশা বলে,,”জামাই যদি হয় জল্লাদ তখন!!”
রুমি ইশার মাথয় বারি মেরে বলে,,”দূর বিয়ে তোহ্ ভালো দেখেই করবো জল্লাদ ফল্লাদ তোর ভাইয়ের মতো থুরি কাউকে জুটাবো নাকি??”
“এই খবরদার আমার ভাইকে টানবি না। হিরোর মতো ভাই আমার”
“হ্যাঁ হিরোর মতো ভাই তোমার ভিলেনের মতো স্টাইল তার নয়ত আমাকে মাঝরাস্তায় নামিয়ে দিতে পারতো”
“তোরই কুরকুরি বেশি তাই তোহ্ বললি ভাইয়া নামিয়ে দিন সমস্যা হলে”
“তাই নামিয়ে দিবে?”
“হ্যা্ তা নয়তো কি ছোট থেকে দেখে আসছি ভাইয়ের যেন মেয়েতে এলার্জি কাজিনদের সাথেও কথা বলে না তোর সাথে টুকটাক তোহ্ বলে”
“বান্ধবী ঐটা কথা বলা বলে না রে ঐটা তোহ্ দাবাং স্টাইলের ছুরি মারা”
“কি স্টাইল?”
“রাখ স্টাইল চল তোহ্ শপিংয়ে, ভার্সিটির প্রোগামে শাড়ী পড়বো চল দেখি স্টলে নতুন কিছু পাই নাকি!!”
ইশাও সায় জানিয়ে দুবান্ধবী শপিংয়ের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।
অফিসে আয়ানের সামনে ইয়াসির বসে।আয়ান বলে,,”ভাই তুই সিঙ্গাপুর যা এখানে কি করবি?”
ইয়াসির বলে,,”বউ রেখে দেশের বাইরে যাবো?”
“বাহ্ বউয়ের প্রতি এতো টান?”
“ছিল না রে হুট করেই তোর বোনটা মনে জায়গা কখন করে নিলো। এখন শুধু বার বার দেখতে ইচ্ছা করে। মানসম্মানের ভয়ে আর তোর বোনের টিটকারির দুঃখে কিছু বলি না। বউ তোহ্ ভালোবাসা হয়ে গিয়েছে।”
আয়ান কাশতে কাশতে বলে,,”আমি তোর ভাই আমার সামনে একটু,,,,
“রাখ শালা তোর বোনের জন্য রাজনীতি থেকে বিদায় নিলাম আর তোর বোন!!”
“আমার বোন তোকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করে আমি দেখেছি ওর তাকানো ওর ব্যবহার নিজের বোনের ফিলিংস বুঝতে সময় লাগেনি।”
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৯
“তুই তো একটা ধান্দাবাজ শালা আগে বলিসনি কেন?”
“বাদ দে কালকে ভার্সিটির প্রোগামে যাবো। প্রধান গেস্ট আমাকে দিয়েছে। যাচ্ছেতাই একটা!!”
ইয়াসির তখন হুট করে দাড়িয়ে বলে,,”আমার হানিমুনের ব্যবস্থা কর আসছি!!”
আয়ান অবাক হয়ে তাকায়,,” কি নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছে তার বড় ভাই যে ছোট ভাইকে নিজের হানিমুনের জন্য বলছে।
ইয়াসির নির্বিকার বেরিয়ে যায়। এদিকে আয়ান বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে তার নির্লজ্জ বড় ভাইয়ের দিকে।