রাগে অনুরাগে তুই আমার শেষ পর্ব

রাগে অনুরাগে তুই আমার শেষ পর্ব 
আশু

সকাল সকাল ক্লাসিক লুক নিয়ে নিচে নেমে আসে ইযান। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। ইযানের গেটআপ দেখে ইশা বলেই উঠে,,”আরেহ্ এ কোন নায়ক নেমে এলো চৌধুরী বাড়িতে। ”
ইয়াসির ইশার মাথায় বারি মেরে বলে,,”নায়ক তোর পাশে ওইটা নায়কের ছোট ভাই।’
ইশা ইয়াসিরের দিকে ভেঙিয়ে বলে,,”নায়ক কাকে বলে জানো? কই আমগাছ আর কই কচুগাছ ছিহ্!! ”
ইয়াসির কটমট করে বলে,,””ইশাা'”””
ইশাও মুখ ভেঙিয়ে বলে,,”””কিইইই???”

“””””আরে থাম থাম আমি জানি আমি হ্যান্ডসাম বইন তুই এটা বলে আর তোর জামাইয়ের সাথে লাগিস না, পারবি না তোহ্, তোর জামাই নিজেকে বিশ্ব পরা ভাবে”””
ইয়াসরি আবারও দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,’ইযান মুখ সামলে”
ইশা বলে,,”কেন কেন ভাইয়া ঠিক বলেছে একদম ঠিক। আচ্ছা ভাইয়া পরা কি?”
ইযান দাঁত কেলিয়ে বলে,,”পরী যদি মেয়ে হয় পরা নিশ্চয়ই ছেলে” এই বলে সবাই হাসতে লাগে।
ইয়াসির রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ইশার কানের কাছে গিয়ে বলে,,,,”হাসো বউ তোমার হাসি বেশ সুন্দর তবে বেশি হাসলে কপালে শনি আসে ভুলে যেও না বউ। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এরপর ইযান বলে,,” আমি বেরুচ্ছি আসতে দেরি হবে”
ইশা বলে,,”কেন ভাই ডেইটে যাচ্ছো নাকি!!??”
ইযান থতমত খেয়ে বলে,,”দূর পাগলি ঘুরতে হ্যাঁ ঘুরতে যাচ্ছি!!!”
আয়ান বলে,,,”””সাবধানে যাস কিন্তু যা দিনকাল কখন কে কট খেয়ে বউ,,,,
আর বলার আগেই রুমি আয়ানের পায়ে চাপ মেরে থামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,”””যান ভাইয়া তাড়াতাড়ি আসবেন। “””

তারপর রুমি আয়ানের দিকে তাকালে আয়ান কাঁদো কাঁদো হয়ে পায়ের দিকে ইশারা করে। রুমি দেখে এখনো সে আয়ানের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে। রুমি একঝটকায় দূরে গিয়ে বলে,,””সরি সরি”””।
ইযান হাসিমুখে সানগ্লাস লাগিয়ে বলে,,,””আয়ান ভাই তোমার বাইকটা নিলাম ডোন্ট মাইন্ড “”
ইয়াসির বলে,,””বাইক কি তুই হেলিকপ্টার নিয়ে যা তবুও যা”””
ইযান সানগ্লাসটা খুলে নিজের শার্টে ঘষতে ঘষতে বলে,,””এত তাড়া কেন আমি গেলে কি মহাভারত বিশুদ্ধ করে ফেলবে?””

আয়ান বলে,,,””বিশুদ্ধ না করলেও শুদ্ধ করার চেষ্টায় থাকবো। “”
ইযান যেতে যেতে বলে,”!!,খরগোশ লাফালেও কচ্ছপই জিতে।”””
ইযান কাকে কি বলল কে জানে আয়ান আর ইয়াসির চোখাচোখি করে বলে,,””কাকে বলল?””
ইশা তখনি দাঁড়িয়ে বলে,,,””চলো চলো পিছু নিতে হবে তোহ্!!””
ইয়াসির বলে,,”””আরে দূর তোদের ফোন দিলে আসবি সব রেডি রাখ। আমি আর আয়ান যাচ্ছি। “”
রুমি বলে,,””আমার ভয় করছে!! ”
আয়ান একদমক দিয়ে বলে,””,এত ভীতু কেন তুমি?আমার সাহসী বোনের সাথে থেকেও তোমার সাহস হলো না?””
ইশা একটু ভাব নিয়ে বলে,,””হয়ে যাবে তোমরা যাও যাও”””
এরপর আয়ান আর ইয়াসিরও বেরিয়ে যায়।

ইযান একটা ক্যাফের সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে হেসে কথা বলছে। এদিকে ইয়াসির এক কাপ চা নিয়ে মাথায় টুপি দিয়ে এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। ইযানের থেকে খানিকটা কাছে নিউজ পেপারে মুখ ডুবিয়ে আছে আয়ান। হুট করে ইযানের চোখ যায় ইয়াসিরের দিকে। ইয়াসির বুঝতে পেরে সামনে দিকে যেতে নেয়। ইযান তেমন পাত্তা না দিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়। তখনি রিকশা থেকে নামতে দেখা যায় রিমিকে।
“হাই বিয়াইন সাহেবা কেমন আছেন?”

“এই তো ভালো আপনি?”
“আছিলাম বেশ হয়ে গেলাম আরো বেশ”
“চলুন যাই গল্প করি’
রিমিও বলে “চলুন।”
ওদের ভেতরে যেতে দেখে আয়ান আর ইয়াসিরও ভেতরে চলে আসে। ওদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখে।
ইযান তোহ্ রিমির থেকে চোখই ফিরাচ্ছে না। আর রিমির হালও তাই। দুজন আজ বেশ পরিপাটি সেজেগুজে। ইয়াসির বলে,,”কি প্রেম ভাবা যায়? ”
আয়ান বলে,,”তাই তোহ্ দেখছি!!”
ইয়াসির বলে,,””শালার ছোট ভাইয়ের প্রেমও দেখতে হবে নিজের বাসরের জন্য ছিহ্!!”
আয়ান থতমত খেয়ে বলে,,””চুপ কর তোহ্””

খানিকবাদে ইযান রুমিকে কফি সার্ভ করতেই দুজনের হাতে হাত লেগে কতক্ষণ তাকায়। দুজন কেমন লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে।
এসব দেখে ইয়াসির কটমট করে বলে,,,”ঢং কত,মেয়ে মানুষ আর দেখেনি!!”
আয়ান বলে,,”মেয়ে মানুষ মানেই এলার্জি কপালে একটা জুটিয়ে দিলি সেটা এক এলাচ এখন জীবন আমার তেজপাতার দেশ। ”

ইয়াসির বলে,,”তোর বোনকে সুবিধার ভাবছিস নাকি একটা ইন্দুর সারাদিন টইটই করতে থাকে”।
আয়ান হেসে বলে,,”ইন্দুর দেখেই তোর মতো বিড়ালের কাছে দিয়ে দিলাম দেখে রাখিস। ”
ইয়াসির মিনমিন করে বলে,,”বিড়াল তোহ ইদুর পেলেই খেয়ে ফেলে আমি তো ছুঁতেও পারিনা””
আয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,,””ফিসফিস কি করছিস একটু জোরে বল।””
ইয়াসির বলে,,””নাহ তেমন কিছু না। আর কতক্ষণ এই নাটক চালাবি।””
আয়ান বাকা হেসে বলে,,



সাথে সাথে ক্যাফেতে পুলিশ চলে আসে। আর সোজা ইযানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,”আপনি কি ইযান চৌধুরী? আর ওনি কি আপনার মিসেস?”
ইযান কপিতে চুমুক দুতে দিতে শান্তসরে বলে,,”হুম” আমি ইযান,কি সমস্যা স্যার?”
পুলিশটি বলে,,”আপনার নাম অভিযোগ আছে ইভটিজিংয়ের!!”
তখন রিমি বলে,,”আপনাদের ভুল হচ্ছে কোথাও!!”
ইযান তোহ্ আশ্চর্যবনে কি বলছে। পুলিশ আবারও বলে,,”এত কিছু জানি না থানায় যেতে হবে আর আপনাকেও ম্যাম”

ইযান বলে,,,”আমি যাবো ও কেন যাবে?ওকে যেতে দিন। আর চলুন””
“না না আপনার মিসেস কে নিতে হবে।”
“ওনি আমার মিসেস না আমার গার্লফেন্ড”
রিমি অবাক হয়ে তাকিয়ে।
পুলিশ বলে,,”তবুও!!!’
ইযান বলে,,”বেশি বাড়াবাড়ি মোটেও পছন্দ করি না আমি। এখানে ঝামেলা,,,,,
আর কিছু বলার আগেই রিমি বলে,,”আমি যাবো।”
ইযান রেগে তাকায় রিমির দিকে।রিমি ইযানের হাত ধরে বলে,,”আমি জানি আপনি নির্দোষ তাহলে আমি গেলে সমস্যা কি?”
ইযান বিরক্ত হয়ে বলে,,”চলুন’
ইযান আর রিমির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইয়াসির আর আয়ান হাইফাইব করে বলে,,”ঝাক্কাস।’

গাড়িতে রিমি ইযানের হাত শক্ত করে ধরে আছে। বেচারি ভয়ও পাচ্ছে আবার ইযানকে এক ছাড়বেও না। ইযান রিমির হাল দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসছে। এদিকে রিমি ইযানের কাছে ঘেষে বলে,,”আপনি কাউকে ফোন দিন আপনার ভাইয়াদের। ”
ইযান হাত ছাড়িয়ে রিমিকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে বলে,,”ভরসা রাখো। এসব কিছুই না৷” রিমি কেঁপে উঠে৷ তারপর ইযানের হাত সরিয়ে বলে,,”বেশি হচ্ছে।” ইযান নির্বিকার রিমিকে ধরেই বাইরের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে,,

“বরবাদ হয়েছি আমি তোর অপেক্ষায়
চুরমার করে দে আরো কিছু ইশারায়,
আমাকে থাকতে দে ডুবে ডাকতে দে
তোর নাম ধরে,
আমাকে রাস্তা বল কোনোও আস্তানা
কোন বন্দরে,
বলে দে, বল আমায়,
বলে দে, বল আমায়।”

রিমি মনে মনে বলে,,”আল্লাহ বাঁচাও এ কোন পাগলের আস্তানায় পড়লাম পুলিশের গাড়িতে প্রেমের গান শুনাচ্ছে কপালে কি আছে কে জানে।!!”
একটা হোটেলের সামনে ইযান আর রিমিকে দাঁড় করিয়ে পুলিশ বলে,,,”আপনারা দাঁড়ান।”
ইযান কিছু বলবে তার আগেই সব পুলিশ হাওয়া।
রিমি তখনে ইযানের হাত ধরে দাঁড়িয়ে। ইযান পেছনে ঘুরে হোটেল দেখে বলে,,”শালার এ কোন জায়গায় দিয়ে গেলে কেসটা কি? ”
তখনই আয়ান আর ইয়াসির নেমে আসে। আয়ান ঠাটিয়ে এক চড় লাগায়। তারপর পেছন থেকে রুমি এসে রিমি এক হেঁচকা টানে এনে বলে,,”লজ্জা করলো না হোটেল আসতে তোদের?”
ইযান কিছ বলার আগেই আয়াম বললো,,,”একবার বলতি ভালো লাগে,,বিয়ে দিয়ে দিতাম এসব কি?তোরা!!’
ইযান একটু চিল্লিয়ে বলে,,”হচ্ছে টা কি?
আমরা এখনে তোমরা জানো কি করে?”

ইয়াসির বলে,,”চেচাচ্ছিস কেন?পুলিশ জানিয়েছে তোদের হোটেল রুম থেকে পেয়েছে। ”
রিমি কান্না শুরু করে দিয়েছে। ইযান বাকরুদ্ধ হয়ে বলে,,”তোমরা ভুল শুনেছো কেউ ফাঁসাচ্ছে আমাদের”।
ইয়াসির বলে,,”আর কত মিথ্যা বলবি। এখনি চল”
ইযান নিশ্চুপ কি করবে বুঝতে পারছে না। খানিকবাদে গাড়ি থামে কাজী অফিসে। ইশা একটা লাল দোপাট্টা দিয়ে দপয় রিমির মাথায়। খানিকবাদে দুজনের বিয়ে সম্পন্ন হলে সবাই মিলে নাচতপ শুরু করে ইযান আর রিমি হা করে তাকিয়ে ওরা নিচর ফ্লোরে গান গাইছে।

“রসিক আমার…
রসিক আমার মন বান্ধিয়া,পিন্জর বানাইছে
হায়রে,রসিক আমার মন বান্ধিয়া
পিন্জর বানাইছে
সোনার ময়না ঘরে থুইয়া
বাইরে তালা লাগাইছে
রসিক আমার মন বান্ধিয়া,পিন্জর বানাইছে
হায়রে,রসিক আমার মন বান্ধিয়া
পিঞ্জর বানাইছে..”
ইযান দাঁত চেপে বলে,,এ”সব তোমাদের কারসাজি তাহলে???”
সবাই দাঁত কেলিয়ে বলে,,”হুম”
এরপর ইশা বলে,,”পাগলু ডান্স না দিলে শান্তি হবে না”।ইয়াসির বলে,,”ঠিক বউ আর কালকে কিন্তু হানিমুন ফিক্সড। ”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৯

আয়ান বলে,,”ফিক্সড মানে কিডন্যাপ করব না গেলে।”
ইযান বলে,,”আর দাঁড়িয়ে কেন?”
সবাই একসাথে বলে,,,,”Let’s danceee!!”
“নাচ না জানলে উঠুন বাঁকা যে বলে বলুক রে তাল বে তালে হেলে দুলে কোমর টা দুলুক রে লে চান্স লে, লে চান্স লে, লে চান্স চান্স চান্স লে পাগলু ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স লে পাগলু ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স লে পাগলু ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স লে পাগলু ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স ডান্স।”

সমাপ্ত