রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৪

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৪
সিমরান মিমি

ইনস্পেকটর ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলেন। এরপর কনস্টেবলের উদ্দেশ্যে বললেন,
“বাকি দুটোকেও ধরে আনো।আমি এমপিসাহেব কে ফোন করছি। ‘
চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো স্পর্শী।ইনস্পেকটর কে বললো,” স্যার,ওদের জিজ্ঞেস করুন তো;আর্শির সাথে পিয়াশের সম্পর্ক ছিলো। এটা কি পরশ শিকদারকে ওরা বলেছে?

দুপাশে ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো রতন।বললো,”এটা পিয়াশ নিজেই ওর ভাইকে বলেছে।আমরা তো শুধু ওর সাথে সায় মিলিয়েছি।আমরা তো আর্শিকে চিনতাম’ই না।ওইদিন হুট করে পিয়াশ কিডন্যাপের কথা বলেছিলো;তখন’ই দেখেছি প্রথম।আর পিয়াশ তো তোমার বোনকে নয় তোমাকে ভালোবাসতো।কিন্তু তুমি তো পাত্তাও দেও না।এই কারনে তোমাকে ব্লাকমেইল করতে আর্শিকে কিডন্যাপ করতে গেছিলাম আমরা।কিন্তু সফল হয়নি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো স্পর্শী।এতোক্ষণ এই জবাব দিহিতার পুরো কন্ট্রোভার্সি রেকর্ড করা হয়েছিলো। ইনস্পেকটর নিজেই একাজ করেছেন। ধীর পায়ে থম দিয়ে চেয়ারে কিছুক্ষণ বসে রইলো।শরীর থেকে যেন বিশাল এক বোঝা নেমে গেছে।এখন পালা এগুলো পরশ শিকদারকে দেখানোর।কিন্তু আদোও কি তিনি বোনকে ছাড়বেন?স্বীকার পাবে কি?লোকটা ভীষণ খারাপ।পিয়াশের কাতারেই পড়ে।নইলে যতই প্রতিহিংসা থাকুক , একটা ছোট্ট মেয়েকে জিম্মি করতে স্পর্শীকে দুর্বল করতে চাইছিলো।কাপুরুষ!
দ্রুত গতিতে দাবানলের ন্যায় ধুলো উড়িয়ে গাড়ি প্রবেশ করলো ঢাকার মধ্যে।সন্ধ্যা সবে সাতটা বাজে।আর ঘন্টা খানেকের মধ্যেই সে পৌছে যাবে থানা স্ট্যান্ডে।পাভেল পাশে বসে ভাবনায় মগ্ন।পুলিশ অফিসার বলেছে “আপনার ভাই সুইসাইড করেনি,বরং তাকে অপরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে।হত্যাকারীও এখন হেফাজতে আছে।আপনি দ্রুত আসুন।’

ব্যাস! সকল কিছু ছেড়ে প্রলয়ের ন্যায় ঢাকায় রওনা হয়েছে সে। কাল পিয়াশের নামে বিশালাকার মিলাদ আয়োজন করা হবে।প্রচুর কাজ রয়েছে পরশের।কিন্ত এই মুহুর্তে সে অন্য চিন্তাতে ব্যস্ত।ভাই হত্যার সুবাদে পুরো মুখ রাগ এবং বিষাদের সুর বিরাজ করলেও আলতো এক প্রসন্ন ভাব বিচরণ করছে।তার ধারনামতে খুনীই স্পর্শী’ই। সে প্রমাণ সহ হাতে নাতে ধরা খেয়েছে এর থেকে আর সন্তুষ্টির কি হতে পারে?”
থানার বাইরের বেঞ্চির উপর বসে আছে স্পর্শী।অনিচ্ছা সত্ত্বেও পুরো জীবনের শ্রেষ্ঠ্য বিরক্তিকর এবং ঘৃণিত মানুষ টার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।খিদেয় পেট চো চো করছে।আজ কতগুলো ওয়াক্ত সে না খেয়ে আছে।একটু আগেই হাবিলদার বনরুটি আর চা দিয়ে গেছে।বনরুটি পছন্দের না হলেও আজ খেল স্পর্শী।চায়ের মধ্যে ডুবাতেই চক্ষু চড়কগাছ। একি চা গেল কোথায়?আলতো হাসলো স্পর্শী।ধীর কন্ঠে রুটির উদ্দেশ্যে বললো,

“আমা র চা তুইই খেয়ে নিলি?এবার আমি খাবো কি?
থেমে ঘাঁড় কাত করে বললো,
‘চল,আমি তোকেই খেয়ে নেই।কেমন?”
রুটি টুকু শেষ হতেই পরশের গাড়ি ঢুকলো।আজকে আর বডিগার্ড নেই।সে একাই এসেছে গাড়ি চালিয়ে।এমনকি ড্রাইভার ও আনে নি।কিন্তু পাভেল আসতে দিলো না।এই অবস্থায় ওকে একা ছাড়া টা বোকামি হয়ে যাবে।এমনিতেও গত ক-দিনে ভাই এমন সব কাজ করেছে যেগুলো ওর করাই উচিত ছিলো না। কিভাবে এসব সামলাবে সেসব নিয়েই পাভেল চাপের উপর আছে।একবার এগুলো কোনোভাবে পাব্লিকের কাছে ব্লাস্ট হলে ওর ক্যারিয়ারে যে ধস নেমে যাবে ;সে খেয়াল কি আছে।সেটাও বাদ যাক।আব্বু জানলেই তো পুরো পিরোজপুরে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে দেবে।কিভাবে বাপের সামনে দাঁড়াবে দুই ভাই?

দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পড়লো দু-ভাই।স্পর্শীকে সামনে দেখতেই কটম করে চাইলো পরশ।এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না সেখানে।গটগট পায়ে চলে গেল ভেতরে।স্পর্শীও গায়ে মাখলো না।এমনিতেও এসব জানোয়ারদের কাছে এটেনশন পাওয়ার মোটেই ইচ্ছা নেই তার।সেই সকালে বাড়ি থেকে নেমেছে।রাত হয়ে চললো,কিন্তু এখনো যায় নি ফিরে।কি-ভাবে যাবে? খালি হাতে যে মোটেই ফেরা যাবে না। ধীর পায়ে পরশের পিছু পিছু সেও ফিরলো।

পরশ পাথর হয়ে বসে আছে চেয়ারে। পাভেল মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।সে মাথাতেই আনতে পারছে না বিষয়গুলো।কিভাবে সম্ভব এটা?নেশাগ্রস্ত হয়ে খুন করেই কিভাবে ঠান্ডা মাথায় সামলে নিলো ঘটনাটা।পুরো তিন জন হত্যাকারীই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নাটকীয়তা সাজিয়ে চলাফেরা করে ছিলো সবার সঙ্গে।এমনকি একজনের মধ্যেও সামান্যতম সন্দেহের রেশ ধরতে দেয় নি।হোস্টেল ছাড়ার আগে কর্তৃপক্ষ কে জানিয়েছে’যে রুমে আমাদের বন্ধু আত্মহত্যা করেছে সে রুমে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।আমাদের মনে হচ্ছে “পিয়াশ সারাক্ষণ ওই রুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছে।” উফফস!কতটা সাংঘাতিক এই টক্সিক ফ্রেন্ডগুলো।যারা স্বার্থের জন্য গলায় গলায় ভাব, আবার সেই স্বার্থে টান লাগলেই গলায় ছুরির আঘাত।

দুহাতের আঙুল দিয়ে লম্বাচুল গুলোকে পেছনে নিয়ে নিলো পরশ। পেছনে ঝুটি বাধা চুলগুলো এলোমেলো হলো না একাংশ ও।এরপর ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে বললো,
‘আমি ওই কুত্তা”’র বা***চ্চা গুলোর সাথে দেখা করতে চাই।’
ইনস্পেকটর বাধ সাধতেই কঠোর কন্ঠে বললো,”জাস্ট পাঁচ মিনিট,অফিসার।’
চলে গেলেন সেলের দিকে।ইনস্পেকটরের আদেশেই খুলে দেওয়া হলো তালা।ব্যস!মুহুর্তেই এপাশ দিয়ে শোনা গেল অজস্র অশ্রাব্য গালি।সাথে ওদের চিৎকার ও আর্তনাদ।জগৎের কোনো নেতার মুখে এতটা বাজে কথা স্পর্শী কখনো শুনেছে কি না সন্দেহ।হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারন জনগণের সাথে কথা বলার সময় তো তাদের মুখ দিয়ে মধু ঝরে।আর নিতে পারলো না স্পর্শি।দু মিনিটের জন্য কানে আঙুল দিয়ে বধির হয়ে গেল।

মাথার গোছালো ঝুটি টা খুলে ফেলেছে সে।গরমে টপটপ করে পড়তে লাগলো গায়ের ঘাম।গায়ের সাদা পাঞ্জাবি টা ইতোমধ্যে অর্ধাংশ ভিজে গেছে।থানা থেকে গটগট পায়ে বের হয়ে গেল পরশ।পাভেল ও ছুটলো পিছু পিছু।স্পর্শী হতবাক।দ্রুত ছুটলো তাদের পেছনে।পরশকে বললো,
“আমার বোন কোথায়?এখন তো সবটা প্রমাণ হয়েছে।স্বীকারোক্তি সহ সিজিটিভির ফুটেজ ও দেখেছেন।তাহলে এবার আমার বোনকে ছেড়ে দিন।ওকে কোথায় রেখেছেন?
পরশ পাত্তা দিলো না।মুখ তার সম্পুর্ণ লাল হয়ে গেছে রাগে।তেজের সাথে দরজা খুলে বসলো সিটে।পাভেল ঢোকার প্রয়াস করতেই পেছন থেকে কলার টেনে ধরলো স্পর্শী।শান্ত কন্ঠে বললো,

‘আপনার ভাইয়ের সাথে ফোনে বলা যাবতীয় কন্ট্রোভার্সি আমার ফোনে রেকর্ড করা আছে।আমার বোনকে যে আপনার ভাই’ই কিডন্যাপ করেছে ;একথা নতুন করে প্রমাণ করতে হবে না আমায়।আশা করছি,এগুলো যেন পুলিশ বা মিডিয়ার সামনে আমায় প্রকাশ না করতে হয়।আমার বোনকে যেন সহীহ সালামতে আমার হাতে পৌছে দেয়।সময় কাল সকাল পর্যন্ত।নইলে ন’টার মধ্যেই আমাকে ডিবি’র অফিসে প্রেসের সামনে দেখা যাবে।আশা করি আমাকে বুঝবেন।’
কিছুটা ঘাবড়ে গেল পাভেল।কিন্তু প্রকাশ করলো না।কলার থেকে আলগোছে হাত’টা সরিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বললো,
” কথায় কথায় পুরুষ মানুষের গায়ে হাত দিবেন না।আমাদের ও ইজ্জত আছে।একদম বয়েস টিজিং মামলায় ঢুকিয়ে দিবো।’

এই সিরিয়াস মুহূর্তে এমন রিয়াকশন মোটেও আশা করে নি স্পর্শী।পাভলের সামনে আঙুলের তুড়ি বাজিয়ে বললো,
“ওয়ে,বেয়াই লাগো না তুমি আমার।এসব ঠাট্টা পকেটে ভরে রেখে দাও।আমার কথা যেন মাথায় থাকে।”
গলা খাকরি দিলো পাভেল।নিচু কন্ঠে বললো,
“আমি দেখছি বিষয়টা।আপনি চিন্তা করবেন না।আর এসব ছেলেমানুষী ছাড়ুন।মেয়ে মানুষ,এতো পুলিশের কাছে যেতে হয় না।আমি জানাবো আপনাকে।”

বলেই গাড়িতে ঢুকে স্টার্ট দিলো।
গাড়ি কিছুটা দূরে যেতেই হাত-পা ভেঙে বসে পড়লো রাস্তার পাশে।আদোও কি আর্শিকে দেবে তারা।নাকি আরো যুদ্ধ করতে হবে বোনকে পাওয়ার জন্য।আচ্ছা, রাগের বশে তারা কি উল্টোপালটা কিছু করে ফেলেছে আর্শির সাথে।না না।এমন টা কিচ্ছু হবে না।আর্শি ঠিক আছে । একদম সুস্থ আছে।বাড়িতে প্রবেশ করতেই একশো খানা প্রশ্নের সম্মুখীন হলো স্পর্শী।কোনো উত্তর দিলো না সে।শরীর টা ভালো লাগছে না মোটেও।গোসলে ঢোকার আগে বললো,
“আর্শিকে সকালে আনতে যাবো।এখন আমার জন্য দু টো ভাত বারো তো।খিদে পেয়েছে খুব।”
পিপাসার মায়া লাগলো।মুহুর্তেই কান্না করে দিলো।আজ দুদিন ধরে তাদের কারোর ই খাওয়া হচ্ছে না।বড় মেয়েটা না হয় ইচ্ছে করে খায় নি।চাইলেও পাবে।কিন্তু ছোটো টা।আর্শি কি আদোও খাবার পাচ্ছে।দিয়েছে কি খেতে। কিভাবে গলা দিয়ে খাবার নামাবে সে।
পুনরায় আকুল হয়ে বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৩

“এই স্পর্শী,চল না।এখনই আনতে যাই।এখন গেলে কি মেয়েটাকে দেব ওরা? আচ্ছা কোন জায়গায় আটকে রেখেছে?এখন গেলে কি নিয়ে আসতে পারবো?
উফফস!ভালো লাগছে না আর এই প্যানপ্যানানি।সহ্য হচ্ছে না মোটেও।চিৎকার করে বাথরুম থেকে বললো,
” এই রাতে কিভাবে পিরোজপুর যাবো?একটূ ধৈর্য্য ধরো প্লিজ!আমাকে আর জ্বালিও না।
মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো পিপাশার।মস্তিষ্ক হুট করেই অচল হয়ে পড়ে ছে।পুরো শরীর যেন অসাড় হয়ে গেছে।কোনো মতে দেয়াল ধরে নিজেকে আটকালো।চেয়ারে বসে হতবাক মুখে আওড়ালো,
“পি-রোজ-পুর!

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৪ (২)