রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২১
সিমরান মিমি
দুপুরবেলা।সূর্যের কড়া উত্তপ্ততা ধরনীকে করে দিচ্ছে চৌচির।কাঠফাটা এই রোদে ঘেমে নেয়ে একাকার স্পর্শী।আর্শির অবস্থাও এক।একটু আগে ড্রয়িংরুমে নাস্তা দেওয়া হাস্যোজ্জ্বল মহিলা’টা স্পর্শী এবং আর্শিকে নিচতলার একটা রুমে নিয়ে এসেছে।মুচকি হেসে তাদেরকে বিশ্রাম নিতে বলে তিনি চলে গিয়েছেন রান্নাঘরের দিকে।হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো স্পর্শী।দ্রুতপায়ে ছুটে এসে দরজা লাগালো।ব্যাগ থেকে জামাকাপড় নামিয়ে ছুটলো বাথরুমে। এই রুম টা নিচতলার এক কোনায় অবস্থিত।গেস্ট রুম হিসেবে এপাশের তিনটা রুম ব্যাবহৃত হয়।সেখানকার’ই একটা রুমে স্পর্শীদের থাকতে দিয়েছে মহিলাটি।যেটার সাথে এটাচ বাথরুম ও রয়েছে।একটানা পাঁচ মিনিট ঠান্ডা পানিতে ভিজলো স্পর্শী।এরপর দ্রুত গোসল সেরে চেঞ্জ করে বাইরে বের হলো। আর্শি বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।টেনে তুললো তাকে।এরপর জোর করে গোসলে পাঠিয়ে দিলো।
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুইটা।এক মধ্যম বয়স্ক ভদ্রমহিলা দরজার সামনে এসে স্পর্শীদের ডাকলেন।ঘুমের মধ্যে অপরিচিত ডাক শুনে তড়িঘড়ি করে উঠলো আর্শি।ভদ্রমহিলা ত্রস্ত কন্ঠে বললেন,
“তোমরা কি ডাইনিং বসে খাবে?নাকি খাবার টা এখানে দিয়ে যাবো।”
খাবার বাড়তে বাড়তে এদিকে তাকালো সোনালী।ছোট ঝায়ের মুখে এমন কথা শুনে এগিয়ে এলেন দ্রুত।আলতো চোখ রাঙিয়ে বললেন,
“ওমা!সে কি কথা?এখানে দিয়ে যাবো মানে টা কি?এই তোমরা টেবিলে আসো।খেতে আসো তাড়াতাড়ি। ”
চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেল স্পর্শীর। চোখ-মুখ কুঁচকে কপাল ঘুঁচিয়ে ফেললো।মাথা যন্ত্রণা করছে খুব।দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে সোনালীর দিকে তাকালো।অতিকষ্টে বললো,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“আমরা আসছি আনটি।”
চলে গেল সোনালী।বাথরুমে গিয়ে মুখ হাতধুয়ে মাথায় পানি ঢাললো কিছুক্ষণ।এরপর ত্রস্ত পায়ে বোনকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো।ডাইনিং এ ইতোমধ্যে অনেকেই বসে পড়েছে।আর্শি বোনের হাত ধরে থেমে গেল।ফিসফিস করে বললো,
“আপু এখানে তো অনেক লোক। আমার লজ্জা করছে যেতে। কি ভাববে সবাই?”
স্পর্শী দীর্ঘশ্বাস ফেললো।তার নিজের ও খুব খারাপ লাগছে। এখানে থাকার জন্য কতটা বেহায়া সেঁজেছে সে।সবাই তাদের ব্যাপারে না জানি কি কি ভাবছে।একপ্রকার জোর করেই আতিথিয়েতা গ্রহণ করছে।এরপর বোনকে বোঝানোর পরে বললো,
“এটা আমাদের বাবার বাড়ি।নিজেদের বাড়ি।লজ্জা কিসের?নিজের বাড়িতে বেহায়া হলেও কে দেখে?”
বলেই আলতো হাসলো।এরপর গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আর যাই হোক,খুব শীঘ্রই চলে যাবো এখান থেকে।আমাদের এখানে থাকা উচিত হয়নি।বাবাকে দেখেই চলে যাওয়া উচিত ছিলো।উনি এখানে ভালোই আছে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে।মা চায় না এই সংসারকে।শুধু শুধু অধিকার খাঁটিয়ে কি লাভ বল।বাবাকে কাছ থেকে দেখতে চেয়েছিলাম।ইচ্ছে পূরণ হয়েছে।”
সোনালী বেগম ওদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলেন।দুজনার দুহাত ধরে টেনে নিয়ে বললেন,
“আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন তোমরা?খেতে আসো।”
স্পর্শী অবাক হয়ে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে রইলেন।শুরু থেকেই ভদ্রমহিলা ভীষণ মিশুক এবং হাস্যোজ্জ্বল। অথচ জীবনের শুরুর দিকে নিজের করা ভুলের মাশুল পোহাতে দিয়েছেন দু-দুটো মেয়ে এবং তাদের মা’কে।স্পর্শী চেয়েও রাগ করতে পারছে না মহিলাকে।আবার ভালোবাসতেও পারছে না।কেমন যেন এক দোটানায় পড়ে আছে।
খাবার টেবিলে শামসুল শিকদার বসে আছেন।তার পাশেই আরো দুজন মধ্যবয়স্ক লোক। এপাশে জোয়ান দুটো ছেলে সহ তখনকার সেই ভদ্রমহিলা।খাবার বেড়ে দিচ্ছেন সোনালী বেগম।স্পর্শীরা চেয়ারে বসতেই শামসুল সরদার তার দিকে তাকালেন।আতিথেয়তার সহিত বললেন,
“বোসো,বোসো।”
এরপর পুণরায় বললেন,
“তোমাদের পরিচয়’টা জানা হলো না।কি নাম তোমার?(স্পর্শীকে উদ্দেশ্য করে।)
মলিন হাসলো স্পর্শী।বাবার দিকে স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো।এরপর ভাঙা স্বরে বললো,
” স্পর্শীয়া সরদার।”
থমকে গেল সবাই।শুধুমাত্র জোয়ান ছেলেদুটো ছাড়া।শামসুল সরদার চমকে স্পর্শীর দিকে তাকালেন।বুকের ভেতর টা কেমন মোঁচড় দিয়ে উঠলো।চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরোনো সব স্মৃতি। চোখ দুটো হয়ে গেল ঝাপসা।তার রাজকন্যার নাম নিজে পছন্দ করে স্পর্শীয়া রেখেছিলো সে।
সোনালী বেগম আঁতকে উঠলেন।বললেন,
“তুমিও সরদার গোষ্ঠীর মেয়ে।তোমাদের বাড়ি কোথায়?”
স্পর্শীয়া সজাগ হলো।এই মুহুর্তে টেবিলের প্রতিটা মানুষের রিয়াকশন তার কাছে আতংকের ঠেকলো।সে চায় না নিজের পরিচয় দিতে।নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“আমাদের বাড়ি ঢাকাতে।ও আমার বোন। ওর নাম আর্শিয়া।”
পুনরায় খাবার খাওয়ায় নিমগ্ন হলো সবাই।খলিলুর সরদার বললেন,
“ও কি তোমার আপন বোন?”
আর্শি কেমন এক দৃষ্টি নিয়ে লোকটির দিকে তাকালো।স্পর্শী সেদিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো।এরপর বললো,
“নাহ,মা ওকে বুড়িগঙ্গায় এক নৌকার মধ্যে খুঁজে পাইছে।”
ডাইনিং জুড়ে বিস্তর হাসির শব্দ হলো। আর্শি ভীষণ লজ্জা পেয়েছে।মাথা নিচু করে মুখ ভেঙিয়ে স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললো,
“তোমাকে আম্মু টোকাইয়া পাইছে।”
বোনের দিকে তাকালো স্পর্শী।এই একদিনেই কেমন নরম হয়ে গেছে।বাসায় থাকলে এতোক্ষণে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতো।বাবার দিকে তাকাতেই দেখলো সে গম্ভীর মুখে খাচ্ছে।সারা মুখ ভর্তি এক আশ্চর্য মায়া। স্পর্শী বাবার দিকে তাকিয়ে নিজের দিকে তাকালো।সত্যিই মা মিথ্যে কিছু বলেনি।বাবার মতন’ই সৌন্দর্য্য পেয়েছে সে।আর্শির রঙ একটু চাপা হলেও সে অসম্ভব মায়াবী।একদম মায়ের মতো।আচ্ছা, তাদের সম্পর্ক টা কি স্বাভাবিক হতে পারতো না?
পরক্ষণেই নিজেকে কড়াভাবে শাসন করলো।এতো কল্পনা ভালো নয়।অতিরিক্ত রঙিন কল্পনা মানুষের লক্ষ্যকে ভ্রষ্ট করে দেয়।দরকার নেই এমন আয়েশের জীবন।সে তার সংগ্রমী জীবন যাপনেই অভ্যস্ত।মুখের খাবার টুকু গিলে বাবার উদ্দেশ্যে বললো,
“আংকেল,ক্ষমা করবেন। আপনাদের অনেক কষ্ট দিলাম।আসলে আমার পরিকল্পনা এমন ছিলো না।হোটেলে উঠতে চেয়েছিলাম।এরমধ্যে ঝামেলা বাঁধলো।বোনটা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো বলে আপনাদের বাড়িতে জোর করে আশ্রয় নিয়েছি।আমরা বিকেলেই লঞ্চে উঠবো।”
চোখ তুলে তাকালেন শামসুল।অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন,
“আর তোমার ঘোরার প্লান?সেটা তো সম্পন্ন করলে না।”
স্পর্শীর গলা কেঁপে উঠলো।বললো,
“থাক না।অন্য কোথাও ঘুরে নেব।এখানে থাকলে যেতে মন চাইবে না।”
সোনালী বেগম বললেন,
“আরে না না।আমাদের সমস্যা হবে কেন?এখানে বারো মাস’ই কোনো না কোনো অতিথি থাকেই।তোমরা থাকো না ক-দিন।ঘুরে দেখো পিরোজপুর। এখানকার মানুষ গুলো ভীষণ ভালো।শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিষয়গুলো এড়িয়ে চললেই বাকিটা সুন্দর।”
এরপর বাটি হাতে শামসুল সরদারের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ভাইজান,আপনাকে মাছের মাথাটা দেই?”
চমকে তাকালো স্পর্শী।আর্শিও অবাক হয়ে গেল।স্ত্রী হয়েও কেন সে বাবাকে ভাইজান ডাকে তার উত্তর পেলো না।স্পর্শী অসস্তি নিয়ে সোনালীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“আনটি,ভাইজান কেন বলছেন আংকেল কে?”
কেউ প্রশ্ন টা বুঝলো না। ভ্রুঁ কুঁচকে তাকাতেই আর্শি বললো,
“আপনি তো ওনার বউ।তাহলে ভাইজান কেন ডাকছেন?”
মুহুর্তে ‘ই জিভ কাটলেন সোনালী।শামসুল সরদারের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললেন।এরপর দু বোনের উদ্দেশ্যে বললেন,
ছিঃ ছিঃ!তোমরা ভুল ভাবছো।উনি আমার ভাসুর হয়।এরপর খলিলুর সরদার কে দেখিয়ে বললেন,
“উনি তোমাদের আংকেল।’
দাঁত দিয়ে জিভ কেটে অস্পষ্ট স্বরে স্পর্শী বললো,
” ওহ শিট!সরি!সরি!আনটি আমরা বুঝতে পারিনি।আংকেল,ক্ষমা করবেন প্লিজ।
শামসুল সরদার আর মাথা তুললেন না।নিচের দিকে তাকিয়ে খেতেই লাগলেন।এবারে স্পর্শী ভেতর থেকে আরো ছটফট করে উঠলো।আশেপাশে তাকিয়ে বার বার দেখতে লাগলো বাড়িতে অন্য কোনো মহিলা আছে কি না? এরপর বাবার দিকে তাকিয়ে আমতা-আমতা করে বললো,
“আংকেল,আনটি কি বাড়িতে নেই?দেখছি না যে।”
মুহুর্তেই ধমক মারলেন শামসুল সরদার। ভাত ভর্তি প্লেটে হাত ধুয়ে স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললো,
“তোমার কি মনে হয় না তুমি একটু বেশীই কথা বলছো।অন্যের পারিবারিক ব্যাপারে এতো কেন জিজ্ঞাসা?বিকেলে যাবার কথা না তোমার ;রিহান,ওদেরকে লঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে আসিস।”
ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো আর্শি।সে ভয় পেয়েছে ভীষণ। স্পর্শী মাথা নিচু করে ফেললো।বাকিটা সময় চুপচাপ পাথরের ন্যায় খাবার গুলো গিলতে লাগলো। একে একে সবাই খাওয়া শেষে চলে গেল।সোনালী বেগম স্পর্শীর কাছে এলো।মাথায় হাত রেখে বললো,
“তুমি মন খারাপ করো না।আসলে ভাইজানের স্ত্রী নেই। একটা ছেলে আছে শুধু।স্ত্রীর কথা মনে পড়লেও উনি কষ্ট পান। যার কারনে সবাইকে রাগ দেখান।”
স্পর্শী অবাক হয়ে আর্শির দিকে তাকালো।এরপর সোনালী বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন,
“ওনার স্ত্রী নেই মানে বুঝলাম না।মারা গেছেন নাকি?”
বিরক্ত হলো সোনালী।ধমক মেরে বললো,
“আরে বাবা,তুমি এতো খোঁচাও কেন? ধুর!বড্ড বাঁচাল তো তুমি।বিকেলে যাওয়ার আগে আমায় বইলো।রিহান কে বললে,ও গিয়ে দিয়ে আসবে।”
আশাহত হলো স্পর্শী।আর্শী বোনের কানে ফিসফিস করে বললো,
“আপু,এই বাড়ির এক একটার পেছনে বোমা মারলেও কথা বের হবে না।”
অসহায় ভাবে বোনের কথায় সাড়া দিলো স্পর্শী।সোনালী রান্নাঘরে ঢুকেছে।স্পর্শী পিছু পিছু গিয়ে দাঁড়ালো।ঠোঁট দুটো আলতো বাঁকা করে বললো,
“আনটি,জাস্ট এক টা কোয়েশ্চেন।আপনার নাম টা বলুন প্লিজ!”
সোনালী পিছু ফিরেই হেসে দিলো।বললো,”সোনালী।”
খাবার খেয়ে রুমে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দিলো স্পর্শী।মায়ের নাম্বারে কল দিয়ে আয়েশ করে বসলো। ওপাশ থেকে সাথে সাথেই রিসিভড হলো।মাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে স্পর্শী সরাসরি জিজ্ঞেস করলো,
“মা সোনালী কে?”
পিপাসা থমকে গেল।বহুদিন পর প্রিয় একজন মানুষের মুখ ভেসে উঠলো চোখের পাতায়।মৃদু স্বরে বললেন,
“সোনালী আপা তো তোর মেঝো কাকি হয়।খলিল ভাইয়ের বউ।কেন?কিছু কি হয়েছে?”
স্পর্শী সবটা চেপে গেল।বাবা তাকে ধমক দিয়েছে,অপমান করেছে শুনলে ভীষণ কষ্ট পাবে মা।ইনিয়েবিনিয়ে বললো,
“ওই তেমন কিছু না।আনটি টা ভীষণ ভালো আর মিশুক।আমাদের কত আদর করে খাওয়ালো।যাই হোক,বাদ দাও।তুমি কেমন আছো?”
এভাবেই কিছুক্ষণ কথা বললো মায়ের সাথে।এরপর বোনের হাতে ফোন দিয়ে রুমে বসিয়ে স্পর্শী নেমে পড়লো সোনালীর খোঁজে।কিন্তু এতো বড় বাড়ির এতো গুলো রুমের মধ্যে নিজেকে এলোমেলো করে ফেললো। একে একে উঁকি দিতে লাগলো প্রত্যেকটি রুমে।দোতলার সিঁড়ির কাছের রুমটার ও দরজা ভেড়ানো।আলতো হাতে দরজা ফাঁক করে উঁকি দিতেই ওপাশ থেকে পুরো দরজা টা খুলে ফেললো সোভাম।চমকে উঠলো স্পর্শী। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের দিকে।সোভাম ভ্রুঁ কুঁচকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মাত্র গোসল করে খেতে যাওয়ার জন্য দরজা খুলেছিলো।এর’ইমধ্যে স্পর্শীকে দেখতেই অবাক হয়ে গেল।সন্দেহের দৃষ্টিতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো।
স্পর্শী অসস্তিতে পড়লো।দ্রুতপায়ে সেখান থেকে কেটে পড়ার জন্য পা বাড়াতেই সোভাম বললো,
“এইই দাঁড়াও।তুমি সকালের সেই মেয়েটা না?আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি আমি তুমি আমার বাড়িতে কেন?আর রুমেই বা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেলে কেন?
স্পর্শী দাঁত মেলে হাসলো।আমতা-আমতা করে বললো,
” আসলে ভাইয়া আপনি তখন বললেন না “বাইরে থাকা আমার জন্য রিস্ক হয়ে যাবে।তাই তো সেফ জোনে চলে এলাম।আর শুনুন, আংকেল এখানে থাকার অনুমতি আমায় দিয়েছেন।আর আপনার রুমে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলাম না।আমিতো সোনালী আন্টিকে খুঁজছিলাম।আমি বুঝতে পারি নি এটা আপনার রুম।ক্ষমা করবেন।”
বলেই দ্রুতপায়ে নেমে গেল নিচে।সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে সোনালী।স্পর্শীকে দ্রুতপায়ে নিচে নামতে দেখে ধরে ফেললো।ভ্রুঁ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কি হয়েছে? ছুটছো কেন?”
স্পর্শী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।এরপর সোনালীর হাত ধরে বললো,
“আমার সাথে আমাদের রুমে চলো।”
বলার পর আর কিয়ৎক্ষণ নষ্ট করলো না।দ্রুত টেনে রুমে নিয়ে গেল ।আর্শি ঘুমিয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে।সোনালীকে বিছানায় বসিয়ে তার পাশে বসে জিরিয়ে নিলো।বললো,
“আমি আপনাকে খুঁজছিলাম।কিন্তু রুম তো আর চিনি না।তাই প্রত্যেকটা রুমে উঁকি মেরে মেরে দেখতে দেখতে সোভাম ভাইয়ার কাছে ধরা পড়ে গেছি।আসলে আমি জানতাম না এটা ভাইয়ার রুম।উনি মনে হয় খুব রাগ করেছেন।”
সোনালী মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন।স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললেন,
“তুমি ঝামেলা না বাঁধিয়ে সুস্থ হয়ে বসে থাকতে পারো না?” যাই হোক,আমাকে খুঁজছিলা কেন?”
স্পর্শী হুট করেই সোনালীর হাত জড়িয়ে ধরলো।অনুনয়-বিনয় করে বললো,
“প্লিজ আনটি আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর দাও।আসলে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছি তো।সবকিছুতে অতিরিক্ত কৌতূহল।আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে আংকেল সম্পর্কে। উনি ওনার স্ত্রীর নাম শুনে এভাবে রাগ করলেন কেন?প্লিজ বলুন না।না জানলে আমার আর ঘুম আসবে না। ”
সোনালী বিরক্ত হয়ে বললো,
“কেন একই প্রশ্ন বারবার করছো?এটা আমাদের পারিবারিক ব্যাপার।এসব ঘটনার সাথে আমাদের সম্মান জড়িয়ে আছে।হুট করে তোমাকে বলে দিব তার এক কান, দুকান হয়ে পুরো পিরোজপুর ছেয়ে যাবে।পরিবারের নামে দুর্নাম ছড়াবে।বাদ দাও,তুমি কখন যাবে?”
স্পর্শী হতাশ হলো।বললো,
“আর্শি একটু অসুস্থ।আজকেই এলাম জার্নি করে।আবার আজকেই ওকে নিয়ে যেতে আমি সাহস পাচ্ছি না।আমি কাল সকাল পর্যন্ত একটু থাকি।”
অসস্তিতে পড়লো সোনালী।বললো,
“আরে থাকো না।তোমাকে তো ভাইজান বলেই দিয়েছি যতদিন আছো থাকতে পারবে। কিন্তু তুমি তো আমাদের পারিবারিক ব্যাপার গুলো নিয়ে বেশী ঘাটছো। যার কারনে ভাইজান রাগ করেছে।তুমি আরো দু-দিন এখানে থাকো।বোন সুস্থ হোক তারপর যেও।আচ্ছা,তোমার বাবা কি করে?”
স্পর্শী গোমড়ামুখে উত্তর দিলো,”জানিনা।”
অবাক হলো সোনালী।বললো,”তোমার বাবা কি করে সেটা জানো না?অদ্ভুত মেয়ে তো।”
পুনরায় অন্যমনস্ক হয়ে স্পর্শী বললো,
“জানবো কিভাবে?মা বাবা প্রায় অনেক বছর হয়েছে আলাদা থাকে।তাদের মধ্যকার ঝামেলার কারনে।আমি তো বাবার মুখ টাও মনে করতে পারতাম না, যদি না দেখতাম।”
স্পর্শী চলে গিয়েছে কি না সেটা দেখতেই শামসুল সরদার গেস্ট রুমের সামনে এসেছে।দরজার সামনে আসতেই ভেতরের যাবতীয় কথা সে শুনতে পায়।মেয়েটার বাবা নেই।ঝামেলা চলছে তাদের মধ্যে।কিন্তু কিসের ঝামেলা?ভীষণ কৌতুহল জাগে সমস্ত ঘটনা টা শোণার।ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করতেই তাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায় স্পর্শাই এবং সোনালী।শামসুল সরদার স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বললো,
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২০ (২)
“তোমার বাবার বাড়ি কোথায়?আর কি এমন ঝামেলা চলছে যে তার ছেলেমেয়েরা বাবার পেশাটা সম্পর্কেও জানে না।?”
দু-পা সামনে এগিয়ে এলো স্পর্শী।ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে শামসুল সরদার কে চেঁচিয়ে উঠে বলে,
“কেন বলবো আপনাকে?আমার পারিবারিক ব্যাপারে আপনাকে কেন বলবো?আপনি বলেছিলেন আমাকে নিজের স্ত্রী সম্পর্কে? উলটো ঝাড়ি,ধমক মেরে বসিয়ে রেখেছিলেন।তাহলে আমি কেন বলবো?বলবো না,কিছুতেই বলবো না।”
হা হয়ে গেল সরদার।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“ষ্টুপিড মেয়ে।বাপের বয়সী লোকের সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে লজ্জা লাগে না?”