রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৩

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৩
সিমরান মিমি

সন্দেহী চোখ জোড়া নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে স্পর্শী।সামনেই কাগজের টুকরো হাতে বিছানার উপর থম মেরে বসে আছে পরশ।চোখ তার ফ্লোরে নিবদ্ধ।যেন পাথর হয়ে গেছে।তার নিরবতা দেখে স্পর্শী এগিয়ে এলো।হাতের কাগজের টুকরো টা খপ করে টেনে নিয়ে গেল নিজের কাছে।লেখাগুলো পড়তেই চোখ দুটো কপালে উঠলো।হা হয়ে একবার কাগজ তো অন্যবার পরশের দিকে চাইছে।মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলো স্পর্শী।ক্ষোভ ভর্তি কন্ঠে বললো,

“পালিয়েছে মানে?ও আল্লাহ!আমার বোন কই?ওকে কোথায় নিয়ে গেছে আপনার ভাই?কি অবস্থায় আছে ও?আরে কথা বলছেন না কেন?”
ফুঁসে উঠলো পরশ।আওয়াজ উঁচুতে নিয়ে বললো,
“আমি কি করে জানবো?আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন?জিজ্ঞেস করো তোমার বোনকে?কিভাবে আমার ভাইটার মাথা চিবিয়ে খেয়েছে।”
হা হয়ে গেল স্পর্শী।রাগে সারা গা গিজগিজ করছে।ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“সিরিয়াসলি! আপনার ভাই কি কচি খোকা নাকি? কিচ্ছু বোঝে না?অসভ্য,চরম লেভেলের অসভ্য আপনারা ক’ভাই।ইচ্ছে করে করেছেন, তাই না?নিজের অসভ্য ভাইকে আমার অবুঝ বোনটার পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন আপনি।আমি কি কিছু বুঝি না নাকি?এসব আপনার চাল।আমার বোনটাকে ভুলভাল বুঝিয়ে বাড়িছাড়া করেছেন।

শুনে রাখুন,আমি লাস্ট বারের মতো আপনাকে সাবধান করছি।বিকালের মধ্যে আপনার ভাইকে আসতে বলুন।আমার বোনকে যেন সসম্মানে সে সরদার বাড়িতে দিয়ে আসে।যদি কোনোরকমের উল্টোপাল্টা কিছু করে না আমার বোনের সাথে;তাহলে খুন করে ফেলবো।এটাই লাস্ট ওয়ার্নিং।যদি বিকালের মধ্যে আমার বোনকে ফেরত না পাই তাহলে কিন্তু আমি পুলিশে ইনফর্ম করবো,প্রেস কনফারেন্স বসাবো।প্রয়োজনে নারী ও শিশু নির্যাতন মন্ত্রণালয় থেকে অফিসার আনাবো।সো সাবধান।’
দিশেহারা হয়ে গেলেন পিয়াশা।দ্রুত এসে স্পর্শীর হাত ধরলেন।মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে করুন কন্ঠে বললো,

” দেখো মা,তুমি উত্তেজিত হয়ো না।এটা মানসম্মানের ব্যাপার।আমরা কালকেই জেনেছি তোমার বোনের সাথে পাভেলের সম্পর্ক আছে।পরশ মেরেছেও এজন্য।কিন্তু বুঝতে পারিনি এভাবে পালিয়ে যাবে।তুমি মাথা গরম করো না।দেখো,পুলিশ বা মিডিয়ায় জানাজানি হলে আমাদের চেয়েও তোমার বোনের বেশি ক্ষতি হবে।তোমাদের বাড়ির সম্মান নষ্ট হবে।এর চেয়ে আস্তে আস্তে খোঁজো,আমরাও খুঁজে দেখি পাই কিনা।এরপর না হয় যা হওয়ার হবে।’
শান্ত হয়ে শুনলো স্পর্শী।এরপর কিছু না বলেই পরশের দিকে চাইলো।নিরব হয়ে চোখ দিয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে পুনরায় চলে এলো সে বাড়ি থেকে।

সকাল আট’টা।বাড়ির কেউ’ই এখনো ঘুমোতে যায়নি।সবাই’ই ড্রয়িং রুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে।স্পর্শী ক্লান্ত পায়ে সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো।একে একে গোটা খানেক প্রশ্ন করার পরেও উত্তর দেওয়ার ইচ্ছে হলো না।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বসলো বাবার পাশে।মাথাটা হেলিয়ে বুকের উপর রেখে শান্ত কন্ঠে বললো,
“আব্বু,আমি বলেছিলাম আর্শিকে সাথে নিয়ে যাব।কিন্তু তুমি রাজি হলে না।আজ তুমি বাঁধা না দিলে ওকে আমি কখনো একা রেখে যেতাম না।আর নাতো এমন কোনো ঘটনা ঘটতো।”

মাথা নিচু করে ফেললেন শামসুল সরদার।নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হলো।কাতর কন্ঠে বললেন,
‘ওর কোনো খোঁজ পেয়েছো মা?আমি বুঝতে পারছি না বাড়ির ভেতর থেকে গুম হয়ে গেল কিভাবে?চারদিকে আট ফিট উঁচু করে দেয়াল।গেট থেকেও বের হয় নি।অথচ বাড়ির ভেতরেও নেই।কোথায় গেল মেয়েটা।’
স্পর্শী আলতো হাসলো।তার এই হাসিটা অদ্ভুত লাগলো সবার কাছে।শান্ত কন্ঠে বললো,

“আব্বু,তোমার বাড়ির পেছনের আম গাছ গুলোর কথা মনে আছে?ওখানে পাশেই কিন্তু বড় একটা মই রাখা আম পাড়ার জন্য।ওই মই বেয়ে দেয়াল টপকানো খুব বেশি কঠিন না।’
চমকে গেল শামসুল।বললো,
” কিন্তু সোনালী আর্শিকে দশ’টার সময় ও দেখেছে।আর এতো রাতে ও দেয়াল’ই বা টপকাতে যাবে কেন?”
বাবার মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।এরপরে শান্ত স্বরে বললো,

‘আব্বু,শিকদার বাড়ির ছোট ছেলে পিয়াশকে চেনো?ও কিন্তু আমাদের ভার্সিটিতেই পড়তো।ওর মৃত্যুতে খুনী হিসেবে আমাকে জেল খাটতে হয়েছে।পুরো দেড় দিন।কারন আমি ওর মৃত্যুর আগের দিন ক্যাম্পাসের সবার সামনে বসে পিটিয়েছিলাম।সেই ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পরে সবাই ভেবেছিলো লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে।যার কারনে আমার নামে মামলা করেছিলো পরশ শিকদার।কিন্তু পরিস্থিতি ছিলো ভিন্ন।পিয়াশকে ওর রুমমেটরা খুন করেছিলো নেশা করার কারনে।যদিও সেটা জানা যায় পড়ে।কিন্তু যা ঘটার সেটা আগেই ঘটে যায়।ওই ছেলের সাথে প্রেম করে ঠকানোর অভিযোগে ওই পরশ শিকদার আর্শিকে তুলে নিয়ে গেছিলো আমি জেলে যাবার পর।পুরো তিন দিন আটকে রেখেছিলো।

কিন্তু ঘটনা ছিলো উলটো।পিয়াশ আর্শিকে খারাপ উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো বলে আমি ওকে পিটিয়েছিলাম।যদিও পরে সত্য জানার পর ওরা আর্শিকে আবার আমার কাছে ঢাকায় দিয়ে আসছিলো।যাই হোক,আমি এসব ব্যাপারে কাউকে কিছু বলিনি আর্শির কারনে।কেননা,এতে ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে।এমনকি নতুন বাসাও রাখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু হুট করে পিরোজপুরে এসে পড়লাম তোমাদের খোঁজে।জানতাম না এখানেই ওই শিকদার দের বাস।এরপর খেয়াল করলাম পাভেল শিকদারের উপর আর্শির এক আলাদা ঝোঁক।প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে শঙ্কা হয়েছিলো।এর কারনে ওকে রেখে যেতে চাইনি।আর নাতো ফোন দিতে চেয়েছি।কিন্তু তুমি সেই ভুল টাই করলে।ওকে ফোনটা পর্যন্ত কিনে দিলে।
থেমে,

আব্বু,আর্শি পাভেল শিকদারের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে।আর কাল রাতে ওর সাথেই পালিয়েছে।”
মাথায় যেন বজ্রপাত পড়লো শামসুলের।ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলেই যেন আকাশ থেকে পড়লো।তেজ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো শামসুল।ক্ষোভ নিয়ে বলল,
‘ওদের এত্তো বড় সাহস!আমার বাড়ির সম্মানে হাত দেয়।আমি খুন করে ফেলবো।’
চোখ রাঙালো স্পর্শী।বাবাকে টেনে আবারো পাশে বসালো।এরপর ধমকের সুরে বললো,
‘এইজন্য আমি তোমাদের কিচ্ছু বলতে চাই না।একটু হলেই বাড়ি মাথায় কেন তোলো?ধীরে সুস্থে কিচ্ছু করা যায় না?শোনো,আব্বু একটু শান্ত হও।এই সব ঘটনায় তোমার এই চিৎকার বিপদ ঘটানো ছাড়া আর কিচ্ছু করবে না।আমি যা বলছি একটু শোনো।”

থেমে পুনরায় বললো,
‘আমি ওদের কে যা বলার বলে এসেছি।তুমি এক্ষুণি যাদের কে আর্শিকে খোঁজার কথা বলেছো তাদেরকে বারন করো।লোক জানাজানি হলে পরবর্তীতে এটা আর্শির উপর’ই এফেক্ট পড়বে।আমি ওদের কে খুঁজে বের করে নেবো।তুমি একটু চুপ থাকো আপাতত।প্লিজ!’

দিনের মধ্যভাগ।সূর্যটা তার সর্বোচ্চ তেজ নিয়ে মাথার উপর অবস্থান নিয়েছে।মাঝেমধ্যে কিছু পূবালী হাওয়া আবার ছুঁয়ে দিচ্ছে মানবহৃদয় কে। সেই হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে অনবরত ফোন দিয়ে চলেছে আর্শির নম্বরে।কিন্তু বরাবরই ওপাশ থেকে একই কথা ভেসে আসছে।এর অর্থ আর্শীর নাম্বার বন্ধ রয়েছে।হতাশ হলো স্পর্শী।এইতো আরেকটু পরেই তিনটা বেজে যাবে।অথচ এখনো আর্শির কোনো খোঁজ নেই।বাড়ির সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে।হয়তো তারা কখনো ভাবতেই পারে নি তাদের ঘরের সবথেকে ছোট সদস্য সবার আগে প্রেম করে প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যাবে।শামসুল সরদার সেই যে রুমে ঢুকেছে এখনো বার হওয়ার নাম নেই।তিনি মেয়ের এমন আহাম্মক কান্ডে ব্যথিত হয়েছেন।সোভাম গতকাল’ই পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে গিয়েছে।ওখানেই নাকি নতুন একটা রিসোর্ট বানাবে সে কারনেই জমি দেখতে গিয়েছে।তাকে এই তো কিছুক্ষণ আগেই পুরোটা জানানো হয়েছে।শোনামাত্রই সে রওনা দিয়েছে পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে।

সময় যত এগোচ্ছে স্পর্শী ঠিক ততটাই উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে।হাতের ফোনটা সেকেন্ড সময়ের জন্যেও কোথাও রাখেনি।বিছানায় ভাঁজ হয়ে শুয়ে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো আর্শির কথা।ওর কি একবার ও মা-বোন এর কথা মনে হয়নি?আচ্ছা এরকম অচেনা একটা ছেলের হাত ধরে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যেতে একটু ভয় ও হয়নি।কিভাবে সম্ভব।ও কি আদৌ স্বেচ্ছায় গেছে নাকি জোর করা হয়েছে।কাল রাত এগারোটায় যদি ঘর থেকে বের হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এখন প্রায় চৌদ্দ ঘন্টা হয়ে গেছে।আচ্ছা,ওই ছেলেটা এরমধ্যে ওর সাথে কোনোরকম উল্টোপাল্টা কিছু করেনি তো।যদি ফিজিক্যালি টর্চার করে।কিভাবে সহ্য করবে ওইটুকু বোনটা?

না না, এরকম কিচ্ছু হবে না।খুব শীঘ্রই খুঁজে বের করবে স্পর্শী।ভাবনার মধ্যেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো।পরশ শিকদার ফোন দিয়েছে।নিশ্চয়ই ওদেরকে খুঁজে পেয়েছে।দ্রুত হাতে রিসিভড করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে পরশ জিজ্ঞেস করলো,
‘তোমার বোনের কি কোনোরকম সন্ধান পেয়েছো?’
হতাশ হলো স্পর্শী।নিচু কন্ঠে বললো,
‘নাহ,আপনি পেয়েছেন আপনার ভাইয়ের খবর?’
খুব একটা বিচলিত মনে হলো না পরশকে।বরাবরের মতো শান্ত কন্ঠে বললো,
‘নাহ,ওর ফোন ও নেয় নি সাথে করে।লোকেশন যে ট্রাকিং করবো তার ও কোনো সুযোগ নেই।আচ্ছা,তোমার বোন কি ফোন নিয়ে গেছে?’

চমকে উঠলো স্পর্শী।সারা সকাল সে রুমের মধ্যে ফোন খুঁজেছে। কিন্তু পায়নি।পেয়েছে শুধু মাত্র নতুন ফোনের প্যাকেট সহ কাগজগুলো।সেগুলো আলমারির উপরেই ফেলে রেখেছিলো। শান্ত কন্ঠে বললো,
‘ হ্যাঁ, ও ওর ফোন নিয়ে গেছে।কিন্তু সিম তো বন্ধ।কিভাবে ট্রাকিং করবেন?’
কিছুক্ষণ ভাবলো পরশ।এরপর বললো,
‘স্মার্টফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে গুগলের ফাইন্ড মাই ডিভাইস কাজে আসে।যতক্ষণ না পর্যন্ত ফোন সুইচ অফ করে রাখা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এটা ট্রাকিং করা যায় সঠিকভাবেই।তবে সুইচ অফ থাকলেও IMEI নম্বর ব্যাবহার করে ট্রাকিং করা যায়।তবে এজন্য পুলিশের সাহায্য নিতে হবে।তুমি একটু থানায় আসবে? আমি সেদিকেই যাচ্ছি।ফোনের ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে আসবে।আমার মনে হচ্ছে ওরা সিম চেঞ্জ করেছে কিন্তু ফোন অফ করেনি।’

থেমে বিরক্তির সাথে আবারো বললো,
‘আর হ্যাঁ প্লিজ!পারলে মুখে একটু সুপার গ্লু মেখে এসো।আমার কান যন্ত্রণা করছে।’
রাগ লাগলো স্পর্শীর।কিন্তু তাও কিচ্ছু বললো না।সোভাম ভাই এখনো এসে পৌছায় নি।বাড়ির সবাই যে যার ঘরে গুমোট মেরে বসে আছে।কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে চুপচাপ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল স্পর্শী।

ঘড়ির কাঁটায় মাত্র চার টা।রোদ তার তপ্ততা হারিয়ে ফেলেছে ইতোমধ্যেই।সারা ধরনী জুড়ে এখন বাতাস-ছায়া খেলায় মেতে উঠেছে।হাত পা ঘামছে স্পর্শীর।সেই কতক্ষণ ধরে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে আছে।গরমে যেন সিদ্ধ হয়ে যাবে এক্ষুনি।পরশ ও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কম্পিউটারের দিকে।হুট করেই লোকেশন ট্রাকিং কর‍তে থাকা লোকটি আলতো আর্তনাদ করে উঠলো।মুখ গোল করে শ্বাস নিয়ে বললো,

‘ইয়েস!পেয়ে গেছি।এই মুহুর্তে এই ফোনটা কক্সবাজারে দেখাচ্ছে।তবে এটা সমুদ্রসৈকতে রয়েছে।কিন্তু স্থির নয়।গতিশীল।এই যে দেখুন,এটা ধীরে ধীরে সামনের দিকে যাচ্ছে।তবে আমি শিউর এটা বর্তমানে বিচের মধ্যেই আছে।দেখুন গতিটা খুবই স্লো।সামনের দিকে যাচ্ছে আবার পেছনে আসছে।মনে হচ্ছে কোনো যানবাহনে আছে তারা।হয়তো ঘুরছে বিচের মধ্যে।’
সারা টা দিন না খেয়ে আছে স্পর্শী।কাল রাত থেকে জার্নি করছে।শরীর টা নিয়ে আর দাঁড়িয়ে থাকা যাচ্ছে না।ক্লান্ত চোখে আস্তে করে রুমের এক কোনার টুল টাতে বসে পড়লো।পরশ এগিয়ে এলো।ভদ্রতার সহিত বললো,

‘কোনো সমস্যা হচ্ছে তোমার?শরীর খারাপ লাগছে?বাড়ি কি পৌছে দিয়ে আসবো।’
বিরক্ত লাগলো স্পর্শীর।ফুঁসে উঠে বললো,
“এই চুপ করুন তো।এত্তো আদিক্ষেতা ভালো লাগছে না আমার।ইচ্ছে করে এসব করেছেন আপনারা।আমার বোন টা যে কিনা ঠিকমতো নিজের গ্রাম টাও চিনতো না।সে আজ কক্সবাজারে তাও একটা অসভ্য ছেলেকে সাথে নিয়ে।আপনার ভাই আমার অবুঝ বোনটাকে ফুসলে ফাসলে নিয়ে গেছে।না জানি ওর সাথে কি না কি করছে।আল্লাহ,আমার আর্শী না জানি কি অবস্থায় আছে।’
চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো পরশ।এরপর ধমক দিয়ে বললো,

‘এইই,তুমি বারবার কি মিন করতে চাইছো?তোমার বোনের কোনোরকম ইচ্ছে ছাড়া আমার ভাই ওকে নিয়ে গেছে।আর কি না কি করবে মানে?তোমার বোন কি ছোট?ছোট হলে আমার এত্তো বড় ভাইটার মাথা চিবুতে পারে?তোমার মধ্যে প্রেমের ছিঁটেফোঁটাও না থাকলে কি হবে?তোমার বোন তো প্রেমের ফ্যাক্টরি।এখন শুধু শুধু আমার চিবাচ্ছো কেন?গিয়ে জিজ্ঞেস করো নিজের বোনকে।আমার ভাই ওকে কোনো জোর -জবরদস্তি করেছে কিনা।করলে তারপর বকবক করে।অসহ্য মেয়ে।’
কিছু বলার ইচ্ছে হলেও বললো না স্পর্শী।মুখ বুজে সয়ে নিলো।কেননা শরীর টা ভালো লাগছেনা।চেয়ার টাতে মাথা এলিয়ে দিয়ে ধীর স্বরে বললো,

‘আমি শীঘ্রই কক্সবাজার যাবো।’
পরশ স্পর্শীর দিকে তাকালো।ক্লান্ত মুখখানিকে সেকেন্ড কয়েক তাকাতেই আবার অন্যদিকে তাকালো।যে ঠোঁটপোড়া মেয়ে,যদি এই অফিসার দের সামনে চেঁচিয়ে উঠে বলে,’এইইই আপনি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?চোখ গেলে দেব।’
তখন?তখন মানসম্মান কিচ্ছু থাকবে না।নিজেকে সামলে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
‘দরকার নেই তোমার যাওয়ার।আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।’
চমকে উঠলো স্পর্শী।ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,
‘হোয়াট?আমি যাব না মানে?একশোবার যাবো।আপনি আমাকে আটকানোর কে?আমি আমার বোনকে আনতে যাবো না?’

বিব্রত হলো পরশ।বললো,
“আশ্চর্য তাঁরছিঁড়া মস্তিষ্ক তোমার!বলেছি অনেক দুরের জায়গা।তোমার যাওয়ার দরকার নেই।আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।’
‘হাহ!আমি বিশ্বাস করবো আপনাকে?দেখা গেল আমার বোনটাকে ওই সমুদ্রের মধ্যে চুবিয়ে দিয়ে আপনার ভাইটাকে নিয়ে আসছেন। আর পরে এসে সব অস্বীকার করছেন।হুহ,আমার বোনকে আমি নিজে আনতে যাবো।আর ওখানে ওই কক্সবাজারে বসেই আপনার ভাইকে ধোলাই দিয়ে আসবো।ওর সাহস কি করে হয় আমার এতোটুকু বোনটাকে কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে গেছে।আর্শি কি সাতার জানে?ও যদি ডুবে যায়?আমি কাল সকালেই রওনা দিবো।’
মানলো পরশ।পুনরায় শান্ত কন্ঠে বললো,

“বেশ।আমিও কাল ই যাবো।তুমি বাড়ি থেকে বার হয়ে ফোন দিয়ো।আমি পিক করে নিবো তোমায়।অনেক দুরের রাস্তা।আর তাছাড়া একসাথে গেলে খুঁজতেও সুবিধা হবে।’
অবাকের অষ্টম আশ্চর্যে পৌছালো স্পর্শী।বললো,
‘সিরিয়াসলি?আপনার সাথে যাবো আমি?আমার বোনটাকে তো আপনার ভাই নিয়ে গেছে।এবারে আমি আপনার সাথে গেলেই তো ষোলকলা পূর্ণ হবে, তাই না?যাতে এলাকার লোকজন মাইকিং করে বলতে পারে সরদার বাড়ির মেয়ে দুটো শিকদার বাড়ির ছেলেদুটোর সাথে চিপকে থাকে।একেবার কক্সবাজার পর্যন্ত গিয়েছে তারা ঘুরতে।এটাই তো?সেগুড়ে বালি।আমাকে কি আপনার দুর্বল মনে হয়?কি মনে হচ্ছে?আমি একা একা কক্সবাজার যেতে পারবো না আপনার সাহায্য ছাড়া?লেইম।আপনার মতো আপনি যান।আমি আমার মতো চলে যাবো।বুঝতে পেরেছেন।’

দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইলো পরশ।তার ভাবতেই অবাক লাগছে, একটা মেয়ে কিকরে এতটা উদ্ভট হয়।স্পর্শী হাতের ব্যাগটা নিয়ে মাত্রই থানা থেকে বার হবে।পরশ দু পা সামনে এসে হেসে বললো,
‘তুমি কি জানো তোমাদের বংশ সরদার কেন?’
ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো স্পর্শী। বললো,
‘কেন?’

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩২

পরশ দুপা সামনে এগিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো,
‘কারন তোমার বাপ-দাদা ডাকাত দের সর্দার ছিলো।সেই থেকেই তোমাদের বংশের নাম সরদার।আর তুমিও অবিকল ডাকাতের মতোই হয়েছো। ডাকাত সর্দারনী।’
এরপর ত্রস্ত পায়ে গাড়িতে ঢুকে স্টার্ট দিয়ে এগিয়ে গেল বাড়ির দিকে।অপমানে হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৪