রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৬
সিমরান মিমি
“আমার ভীষণ ভয় করছে, পাভেল ভাই।”
হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল গুলো মিলিয়ে নিলো পাভেল।শক্ত করে ধরে পাশে এনে দাঁড় করালো।কিন্তু সেকেন্ড অতিবাহিত হতেই আর্শি আবারো বিড়াল ছানার মতো তার ঘাড়ের পেছনে লুকালো।লজ্জা,ভয়,অসস্তি সব ঘেরাও ভাবে ধরেছে তাকে।সাহস দিয়ে পাভেল বললো,
“আরে ভয় কিসের?আমি তো আছি।”
“যদি এখানে আব্বু, সোভাম ভাইয়া,বা আপু চলে আসে।ওরা যদি আমায় নিয়ে যায়।”
এক ঝলক পেছনে তাকিয়ে পুনরায় সামনে তাকালো।আলতো হেসে চাপা স্বরে বললো,
“তুমি এখন আমার বউ।বিয়ে করা বউ।আর এ বাড়িতে কেউই আসবে না।আর তাছাড়াও ভাই বলেছে সে সামলে নেবে।”
‘বউ’ শব্দটা শুনেই সামান্য লজ্জা পেল আর্শি।চোখ তুলে সামনে তাকালো।এই মুহূর্তে তারা সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আর ভেতরে মা সহ বাকিরা। প্রত্যেকের মুখেই গাম্ভীর্যের ছোঁয়া।ঢোক গিললো পাভেল।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে পরশকে খোঁজার চেষ্টা করলো।কিন্তু পেল না।আশাহত হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে করুন কন্ঠে বললো,
“ভেতরে আসবো?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
মুখ ফোলালেন পিয়াশা।অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন,
“কেন?যাওয়ার সময় কি আমার অনুমতি নিয়ে গেছিলি?এখন জিজ্ঞেস করছিস কেন?”
ধমক খেয়ে আঁড়চোখে আর্শির দিকে তাকালো।ইশশ!এই বাড়িতে তার কোনো মানসম্মান নাই।নতুন বউ সাথে।অথচ বউয়ের সামনেও একটু সম্মান দিচ্ছে না।আর্শি আবারো তাকে খোঁচালো।নিচু স্বরে বললো,
“পাভেল ভাই,আমার শাড়ি আস্তে আস্তে নিচে নামছে।খুলে যাবে মনে হচ্ছে।আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?”
চোখ বড় বড় করে তাকালো পাভেল।”একটু ধরে বসো।মানসম্মান খুইয়ো না।একটা শাড়ি সামলাতে পারে না অথচ প্রেমিকের হাত ধরে পালাতে এক পায়ে রাজি ছিলো।”
এরপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,”ঠিক আছে।যেহেতু একা চলে গেছি।তাহলে একাই আবার ঢোকা উচিত।কারো পারমিশন নেওয়া উচিত হবে না হয়তো।”
বলে আর্শিকে নিয়ে পা বাড়ালো ভেতরে।দু পা ঢুকতেই ধমক দিয়ে উঠলো আমজাদ।”
“লজ্জা করে না তোর?অভদ্র ছেলে।তোর জন্য আমার মান সম্মান নষ্ট হয়েছে।”
কেঁপে উঠলো আর্শি।খাঁমচে ধরলো পাভেলের হাত।পরশ দরজা ঠেলে বাইরে বের হলো।গলার স্বর গম্ভীর করে দোতলা থেকে বললো,
“সারাদিন জার্নি করে এসেছে।ওদেরকে বিশ্রাম নিতে দাও।কিছু বলার হলে পরে বলো।”
চমকে উঠলো পাভেল।তড়িৎ গতিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো।এরপর আর্শিকে নিয়ে দ্রুতপায়ে দোতলায় উঠলো। চোরাচোখে তাকিয়ে পরশের পাশে এসে বললো,
“থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ।তোকেও কোনো এক দিন বাঁচিয়ে নেবো।শোধবোধ করে দিবো।”
ভ্রুঁ কুঁচকে পাভেলের দিকে তাকালো পরশ।বললো,
“আমাকে বাঁচাবি?তা আমাকে মারবে টা কে?”
উত্তর দিলো না পাভেল।খুক খুক করে কেশে উঠলো।পরশ আর্শির দিকে তাকালো।এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছে ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে প্রেমার থেকেও ছোট।
“দশমিনিট পর আমার রুমে আসিস।”
বলে নিজের রুমে ঢুকে গেল পরশ।পাভেল ও চলে গেল আর্শিকে নিয়ে।
রুমের মধ্যে ঢুকতেই শাড়ি খুলে বসলো আর্শি।হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় বসে কপালে হাত দিয়ে বললো,
“বাব্বাহ!আরেকটু হলেই আমার মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত।ভাগ্যিস রুমে আসতে পারলাম।”
“শুধু তোমার?সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো।বলতো, এমনিতেই তো বাচ্চা বিয়ে করছি তার উপর আবার শাড়ি পড়তে পারে না।যেখানে সেখানে খুলে যায়।”
এরপর অলসতা কাঁটিয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।বসা আর্শিকে টেনে নিয়ে নিজের বক্ষপিঞ্জরের নিচে শোয়ালো।গালে নাক ঘঁষে জড়ানো কন্ঠে বললো,
“শাড়ি সামলাতে পারে না ঠিকই।কিন্তু জামাই কিভাবে সামলায় সে ব্যাপারে কোর্স করা আছে আমার পিচ্চি বউয়ের।”
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আর্শি।পাভেলকে সরানোর প্রয়াস করে অভিমান জড়ানো কন্ঠে বললো,
“একদম পিচ্চি বলবেন না। আর ক’টা দিন পরেই আঠারো তে পা রাখবো। মানছি যে একটু শর্ট আমি।কিন্তু তাই বলে আপনি যখন তখন আমাকে অপমান করতে পারেন আন।সরুন, আপনার ভাই যে সেই কখন ডাকলো তার খেয়াল আছে?”
চমকে উঠলো পাভেল।তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো বিছানায়।ব্যাগ হাতরে তোয়ালে নিয়ে দ্রুত ছুটলো বাথরুমে।সারা দিন আজকে জার্নি করতে হয়েছে।পাভেল বের হওয়ার সাথে সাথে পোশাক নিয়ে আর্শি ভেতরে ঢুকলো।
“আসবো?”
শোয়া থেকে উঠে বসলো পরশ।দরজার দিকে তাকাতেই জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাভেলকে নজরে এলো।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“হুম।”
এ পর্যায়ে ভেতরে ঢুকলো পাভেল। কিন্তু বসলো না।ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে নিচুমুখে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলো।বেশ খানিকক্ষণ চুপ রইলো পরশ।এরপর নিরবতা ভেঙে বললো,
“তোকে একটা কাজ করতে হবে।”
চমকালো পাভেল।এমনিতেই বিগত ঘটনাগুলোতে ভাইয়ের সাথে কিছুটা মনমালিন্যতা হয়েছে।এ পর্যায়ে যদি তার কিছু কাজ করে আবারো সম্পর্ক টা আগের মতো করা যায় তবে মন্দ কি?দ্রুতকন্ঠে বললো,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, তুই বল।কি করতে হবে?”
ভ্রুঁ কুঁচকে একবার ভাইয়ের দিকে তাকালো পরশ।কারন এই মুহুর্তে তার মধ্যে যে উত্তেজনা টা দেখা যাচ্ছে সেটা কাজের কথা বলার সাথে সাথে নিভে যাবে।আতংকে পাংশুটে হয়ে যাবে তার বর্ন।ভয়ে ক্রমাগত মাথা নাড়িয়ে একছুটে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে থাকলেও সেটা অস্বাভাবিক মনে হবে না।ভাইয়ের ওই উৎফুল্ল মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজের হাসিটাকে থামালো।
“আমি বিয়েটা করছি না।আর এটা তুই গিয়ে এক্ষুণি আব্বুকে বলবি।”
“কিইইই!!!”
মাথার উপর যেন বজ্রপাত পড়লো পাভেলের।চোখদুটো বড়বড় করে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের দিকে।বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ঢোক গিললো।বললো,
“তুই কি পাগল?এমনিতেই আব্বু আমার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে রেগে আছে।এর মধ্যে তোর এই আলতু-ফালতু,উদ্ভট কথা গুলো আমি আব্বুকে বলি।আর সে আমাকে তুলে একটা আঁচাড় মারুক।আর এসব কি বলছিস তুই?কাল বিয়ে আর এখন বলছিস বিয়ে করবি না।কি হয়েছি কি তোর?মাথা ঠিক আছে?প্রথমে দেখলাম স্পর্শী সরদারের সাথে কক্সবাজারে ঘুরছিস।ভাবলাম প্রেম করছিস।ভালো কথা।এরপর হুট করে আরেকজনকে বিয়ে।এখন আবার বিয়ের আগের দিন বলছিস বিয়ে করবি না।কেন?”
“সেই কেন’র উত্তর আমি তোকে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না।যাকে দেওয়ার তাকেই দিবো।তোকে শুধু যা বললাম তাই বলবি।বাকিটা আমি সামলে নিবো।চল।”
“আমি পারবো না।”
সূচালো দৃষ্টিতে তাকালো পরশ।বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
“আমি যেন ড্রয়িংরুমে পা ফেলার আগে ওখানে তোকে দেখি।”
“আব্বু,ভাইয়া বিয়েটা করতে চাইছে না।”
টিভিটা মুহুর্তেই অফ করে দিলো আমজাদ।তীর্যক দৃষ্টিতে পাভেলের দিকে তাকিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
“কি বললি?”
করুন চোখে পরশের দিকে তাকালো পাভেল।আগে জানলে কখনোই পিরোজপুরে পা দিতো না।ভেবেছিলো বড় ভাই বিয়ে করছে এখনতো বাড়ির সবাই হাসি-খুশি,আনন্দেই আছে।এই অবস্থায় গেলে কেউই কিছু বলবে না।কিন্তু পরিস্থিতি এখানে আরো ভয়ংকর রুপে দেখা যাচ্ছে।আমতা-আমতা করে বললো,
“আব্বু,ভাইয়া বললো ও বিয়েটা করবে না।”
মাথা ঘুরছে পিয়াশার।ছুটে এলো পরশের কাছে।হায় হায় করে উঠলো।উত্তেজিত হয়ে বললো,
“বিয়ে করবি না মানে?এসব কি বলছিস?কাল বিয়ে।তুই নিজে গিয়ে পছন্দ করে মেয়েকে আংটি পড়িয়ে আসছিস।তাহলে এখন আবার কি হলো?”
নিশ্চুপ রইলো পরশ।বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুমি ওদেরকে ফোন করে জানিয়ে দাও বিয়েটা করছি না।ওরা যেন অন্যকোথাও মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়।”
হুংকার ছুঁড়লেন আমজাদ।চায়ের কাপ টা ছুঁড়ে ফ্লোরে ফেলে দিলেন।ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গেল কাঁচের অবয়ব টা।চিৎকার করে বললেন,
“মশকরা পেয়েছো?মানুষ কে মানুষ মনে হয় না?তোমার যা খুশি তাই করবে।সব জায়গায় নিজের এমপিগিরি দেখাচ্ছো?ভুলে যেও না এটা কোনো রাজনীতি না।এ পর্যন্ত ক’টা বিয়ে ভেঙেছো?কাল বিয়ে,আর এখন আমি কোন মুখে ওদেরকে বলবো বিয়েটা হচ্ছে না।জুতো ছুঁড়ে মারবে তো আমার মুখে।একে বিয়ে করবে না ওকে বিয়ে করবে না।তাহলে করবে টা কাকে?কোন হুরের অপেক্ষায় আছো?বেয়াদব ছেলে।একটাও মানুষ হলো না।আমার মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিলো।তোরা আমার ছেলে না।যা চোখের সামনে থেকে।আমি কাউকে কিচ্ছু বলতে পারবো না।বিয়ে করে পারো,না করে পারো যা খুশি তোমরা বোঝে।কাল সকাল হওয়ার আগে এই বাড়ি ছাড়বো আমি।”
বলে হনহন করে উঠে গেল দোতলায়।পিয়াশা ছেলের দিকে তাকিয়ে অভিমান নিয়ে কান্নাজড়িত গলায় বললো,
“তোদের যা ইচ্ছা কর।আমাকে কখনো ডাকবিনা।”
ঠোঁট দুটো গোল করে নিঃশ্বাস নিলো পরশ।পাশেই পাভেল দাঁড়িয়ে আছে।গম্ভীর কন্ঠে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে শুধালো।
“রেডি হয়ে দ্রুত নিচে যায়।ও বাড়িতে যাবো।”
চমকে তাকালো পাভেল।করুন কন্ঠে বললো,
“আরে ভাই তুই একা যা না।আমাকে কেন নিতে হবে সব বিপদে।”
চোখ রাঙিয়ে তাকালো পরশ।কন্ঠে কঠোরতা এনে বললো,
“কারন, আমাকে এই বিপদ গুলোতে ফেলেছিস ই তুই।না তুই পালিয়ে যেতি, আর নাতো আমি কখনো কক্সবাজার যেতাম।পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে আসবি।”
গাড়ি চলছে দুর্বার গতিতে।পিরোজপুর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তারিণ দের বাড়ি।একটানা ত্রিশ মিনিট চলার পর পৌছালো তারা।গেটের সামনে গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনতেই বেরিয়ে এলো তারিণের বাবা।পরশ সহ পাভেল কে দেখতেই তিনি অবাক হয়ে গেলেন।দ্রুতপায়ে বেরিয়ে এসে তাদের কাছে এলেন।
“আরেহ,একি তোমরা।কখন আসলে?আর আসার আগে বললে না কেন?এসো এসো,ভেতরে এসো।”
পরশ ত্রস্ত পায়ে হেঁটে গেল তার পিছু পিছু।পাভেলের হাত চেপে ধরে চাপা স্বরে বললো,
“যা বলেছি, মনে থাকে যেন।”
দ্রুত মাথা হ্যাঁ স্বরুপ নাড়ালো।
দোতলায় রুমের মধ্যে চাপা হাসির শব্দ পাওয়া গেল।তিনজন রমনি ক্রমাগত সারিবদ্ধ ভাবে উঁকি মেরে দেখছে পরশদের।তারিণের কাজিন দোলা চিমটি কাঁটলো তারিণকে।বললো,
“কিরে?দুলাভাই যে বিয়ের আগের দিনই হাজির।তুই কি ডেকেছিলি নাকি?”
লজ্জায় গুমরে উঠলো তারিণ।অন্যদিকে তাকিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো,
“আরে ধুর!না,ওনার সাথে তো এ বিষয়ে কোনো কথা হয় নি।জানিনা কি জন্য এসেছে।”
পুনরায় হেসে উঠলো ছোঁয়া।হেসে বললো,
“আরে বুঝিস না,দুলাভাই য়ের তর সইছে না আর।বিয়ের আগের রাতেই হাজির।ওই যে বিয়ের আগের রাত গুলোতে জামাই বউ লুকিয়ে দেখা করে হয়তো সে জন্যই এসেছে।উনিতো আবার এমপি।লুকানো, টুকানো ওনার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না।তাই জন্য সরাসরি সবার সামনে চলে এসেছে।দেখিস এক্ষুণি গড়গড় করে বলে উঠবে” শুনুন,আমি আমার বউয়ের সাথে একান্তে কিছুক্ষণ থাকতে এসেছি।আপনারা সবাই বিদায় হোন।”
কথাগুলো শুনতেই লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো তারিণ।ছুটে চলে গেল রুমের অন্যকোনে।
একে কে সাত-আট পদের নাস্তা দিলো সামনের টেবিলে।পাভেল নড়েচড়ে বসলো।যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে সেটা এরা শুনলে নাস্তা খাওয়ানো তো দূর, এই নাস্তায় চুবিয়ে মারবে।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।গা জ্বলে উঠলো পাভেলের।এতো বড় একটা কাহিনি ঘটিয়ে একটা লোক কিভাবে এতটা স্বাভাবিক থাকতে পারে ভেবেই পায় না।
“তা বাবা কিছু বলবে?এতো রাতে এতদুর এলে যে।”
খুঁক খুঁক করে কেশে উঠলো পাভেল।”আসসালামু আলাইকুম আংকেল,আমি পাভেল শিকদার।”
কথা শেষ হওয়ার আগেই লোকটি বললো,”আরে পরিচয় দেওয়ার কি আছে?আমি চিনি তোমাকে।”
বিনয়ী হাসলো পাভেল।আমতা-আমতা করে বললো,
“আসলে আংকেল, আমরা সত্যিই ক্ষমা প্রার্থী।আসলে ব্যাপার টা এতোটা জটিল হয়ে যাবে ভাবতে পারি নি।”
চমকে তাকালো লোকটি।”কিসের জন্য ক্ষমা চাইছো?আমি কিছু বুঝলাম না।”
নড়েচড়ে বসলো পাভেল।বললো,
“আসলে ব্যাপার টা ক্ষমা চাওয়ার মতোই।বাবা তো লজ্জায় আসলোই না।ঘটনা টা হচ্ছে ক’দিন আগে ভাইয়ার সাথে একটা মেয়ের কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছিলো।দেখেছেন নিশ্চয়ই।
” হ্যাঁ, কিন্তু এসব কেন বলছো?”
“আসলে স্পর্শীয়া সরদার, মানে আমার স্ত্রীয়ের বড় বোন। ওর সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক ছিলো।মাঝখানে দু পরিবারের ঝামেলায় রাগের বশবর্তী হয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।কিন্তু এখন সব ঠিক আছে।ব্যাপার টা হচ্ছে গিয়ে বিয়েটা হচ্ছে না।আমরা সত্যিই ক্ষমা চাইছি।আপনি তারিণ কে অন্যকোথাও ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবেন।ব্যাপারটা হচ্ছে যদি বিয়েটা হয়েও যায় তখন কিন্তু সংসার টা সুখের হবে না।মন তো অন্যকোথাও থাকবে।তাই না?আপনার যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমরা মিটিয়ে দিবো।এর থেকে বেশি কিছু করা সম্ভব নয়।”
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন লোকটি।নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।এরপর হুশ ফিরতেই ক্ষোভ ঝেড়ে বললেন,
“বিয়েটা কি মশকরা পেয়েছো তোমরা?আমার সমস্ত আত্মীয়-স্বজন দের দাওয়াত করা শেষ। এখন এসে এসব বলছো?আমার মান-সম্মানের কথা একবার ও মাথায় এলো না?”
আলতো হাসলো পাভেল।বললো,
“আংকেল,আপনার থেকে বেশি অতিথি আমাদের দাওয়াত দেওয়া আছে।আশেপাশের সব এমপি,মন্ত্রীরা অলরেডি বিয়ের খবর জেনে গেছে।কি মনে হয়,আমাদের মান-সম্মান যাবেনা।”
“আমি মানহানির মামলা করবো তোমাদের নামে।কি ভেবেছো?এমপি বলে বেঁচে যাবে।”
ঘার কাত করে আবারো সোজা করলো পাভেল।লোকটির কাছে এসে শান্ত কন্ঠে বললো,
“মান হানির মামলা আমরাও করতে পারি আংকেল।আপনি আমাদের সাথে প্রতারণা করতে চাইছিলেন।আপনার মেয়ের যে এর আগেই অন্যকারো সাথে কলেজ লাইফে রিলেশন ছিলো সে কথা লুকিয়েছিলেন কেন?”
হা হয়ে গেল লোকটি।অবাকের সুরে বললো,
“সেটাতো অনেক আগের।এখন ও অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে।সেই চার/পাঁচ বছরের আগের কথা কেন এখন উঠবে?”
এ পর্যায়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো পরশ।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“আপনাকে আমি এনগেজমেন্টের আগেই বলেছিলাম আপনার মেয়ের কোথাও সম্পর্ক আছে কি না।আপনি সরাসরি অস্বীকার করেছেন।আমি আপনার থেকে এরকম টা আশা করি নি।যাই হোক,আপনার দিক টা আপনি সামলে নিবেন।আমাকে যেন সামলাতে না হয়।আমি চাইছি না আপনার মেয়ের কোনো দূর্নাম হোক।ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবেন।আসি।”
বলে বেরিয়ে এলো বাইরে।পাভেল পেছন পেছন একপ্রকার ছুটে এলো।গাড়ির কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
“দ্রুত গাড়ি স্টার্ট কর।ওরা যে নাস্তার প্লেট গায়ে ফিক্কা মারেনি এটাই তোর ভাগ্য।দ্রুত ভাগ।”
পরশ হেসে গাড়িতে উঠলো।কিছুটা সস্তি পাচ্ছে এবার।কিন্তু পাভেল হাসলো না।বরংচ একা একা বিরক্তিকর কথা বলে ঝাড়তে লাগলো পরশকে।আচমকা গাড়ি ব্রেক কষলো।পরশ শান্ত দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকালো।
“এবার দ্বিতীয় কাজ।বাড়ি যাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোর বউয়ের থেকে তোর শাশুড়ীর নাম্বার এনে দিবি।ও ফোন বন্ধ করে রেখে দিয়েছে।”
ফুঁসে উঠলো পাভেল।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“পারবো না।এতো ভালোবাসা উতলে পড়ছে তো আগে বলিস নি কেন?সেই তো একই গর্তে পা মচকালি।শুধু শুধু আমাকে হয়রানি করলি কেন?এর থেকে দুজন মিলে ভাগাভাগি করে দু বোনকে নিয়ে পালাতাম। হানিমুন -টানিমুন সেরে একসাথে বাড়ি ফিরতাম।”
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৫
থেমে পরশের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো।বললো,
“অবশ্য স্পর্শীয়া সরদার তো।এতো আর আমার বউয়ের মতো মিষ্টি না।যে বলার সাথে সাথে আমার সাথে ছুটবে।দেখা গেল পালানোর কথা বলার সাথে সাথেই তোর ঠ্যাং ভেঙে পেছনের আমগাছে ঝুলিয়ে রেখেছে।