রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৮

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৮
সিমরান মিমি

স্তব্ধতার চাঁদরে মুড়িয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো স্পর্শীয়া।মুঠোভর্তি হাতে ফোন টা রয়েছে।দুপা মুড়িয়ে এক পায়ের হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে সাদা চাঁদর টার উপর।প্রকৃতি তার সাথে অদ্ভুত এক খেলায় মেতে উঠেছে।যতই প্রাণপনে চেষ্টা করুক না কেন দিনশেষে ব্যর্থতা গুলো হানা দিচ্ছে হৃদয়ে।সযত্নে লুকিয়ে রাখা ঘাঁ গুলো তাঁজা হয়ে উঠছে ক্রমশই।চোখের কোণ দুটো তপ্ত পানিতে ভরে উঠলো।পাপড়ি ডিঙিয়ে সেটা মুখের নরম আস্তরণকে ভেদ করার আগেই বৃদ্ধা আঙুল উঁচিয়ে মুছে ফেললো।স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে ডাকলো।হাত দিয়ে আলতো গতিতে দু বার নাড়া দিলো।ধড়ফড় করে উঠে বসলো পিপাসা।

“কি হয়েছে রে?খারাপ লাগছে আবার?বমি করবি?”
স্পর্শী ক্লান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো।মাথাটাকে হেলিয়ে বুকের মধ্যে ঠায় নিলো।তার ডান হাতটাকে দুহাতের মধ্যে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।কন্ঠে নমনীয়তা এনে অনুনয় করে বললো,
“আম্মু,বাসায় চলো প্লিজ!আমার এখানে একটুও ভালো লাগছে না।হস্পিটালের মধ্যে কেমন ওষুধ ওষুধ গন্ধ।আমার ভীষণ বমি পাচ্ছে।এই গন্ধের মধ্যে খেতে পারবো না।আমাকে বাসায় নিয়ো যাও।এখানে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বো।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখবো।আগে আসুক।যদি বলেন তোকে ছাড়পত্র দেওয়া যাবে তাহলে সাথে সাথেই বাসায় নিয়ে যাব।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিরক্ত হলো স্পর্শী।মুখভঙ্গি করুন করে অন্যদিকে তাকালো।এরপর মাকে বোঝানোর স্বরুপ বললো,
“উফফ!মা।তুমি বুঝতে চাইছো না কেন?এখানে থাকলে বরং ওদের’ই লাভ।ওরা আমাকে এখানে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে।প্লিজ!ওদের পারমিশন নেওয়ার প্রয়োজন নেই।তুমি বলো,❝আমার মেয়ে এখানে থাকতে পারবে না।ও হস্পিটালে বসে খেতে পারে না।বমি করছে।ওকে বাসায় নিয়ে যাব আমি।❞ব্যস!এরপর উনারা শুনতে বাধ্য।আর তাছাড়াও আমি কোনো অপারেশনের পেসেন্ট নই যে আমাকে প্রত্যেক বেলায় ড্রেসিং করতে হবে, যার কারনে হস্পিটালে থাকবো।জ্বর হয়েছে,অতিরিক্ত দুর্বল ছিলাম বলে ওষুধে কাজ করছিলো না তেমন।এখন সুস্থ আছি।কালকে কত্তগুলো স্যালাইন নিলাম।এখন বাড়ি গিয়ে সময় মতো খাবার আর ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবো।”

শান্ত হয়ে শুনলেন পিপাসা।মেয়ের কথা মাথা নাড়িয়ে মেনেও নিলেন।কেননা মেয়ে যথার্থই বলেছে।তার এই বক্তব্যে কোনোপ্রকার ভুল নেই।কিন্তু সায় দিতে গিয়েও আবার বাধাপ্রাপ্ত হলেন।উৎকন্ঠিত হয়ে বললেন,
“কিন্তু তোর যে জ্বর।নার্স তো কয়েক ঘন্টা পর পর এসে চেক করে যায়। ওটা কে করবে বাসায় বসে?”
“ওহহহোও!তুমি মোটেও কাজের না।আরে সকাল বিকাল প্রয়োজনে ফার্মেসীতে গিয়ে মেপে নিবো।খুব বেশী দরকার হলে একটা থার্মোমিটার কিনে নাও।আমি মেপে নিবো।”

মেয়ের কথার পিঠে আর কোনো জবাব দিতে পারলেন না পিপাসা।ডাক্তারকে সবটা বলার পর পরই তিনি তৎক্ষনাৎ যাওয়ার অনুমতি দিলেন।হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। একে তো এখানে বসে খাওয়ার সমস্যা, তার উপর ঘুম।জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সব থেকে প্রয়োজনীয় দুটো উপকরণ হলো খাওয়া এবং ঘুম।এ দুটিই যদি বাদ যায় তাহলে তো সেটা মহা মুশকিল।একদিকে রোগী ভালো হবে।অন্যদিকে রোগীকে দেখভাল করার জন্য থাকা অভিভাবক তার থেকেও গুরুতর অসুস্থ হবে।এ যেন এক চক্র।দ্রুতই এই চক্র থেকে বের হতে যায় পিপাসা।বাড়ি গিয়ে কোনোমতে একটু খিচুড়ি রান্না করে গোসল সারবে।এরপর মেয়েকে খাইয়ে-দাইয়ে সোজা ঘুম দিতে হবে।

“আমি আমজাদ শিকদারের সাথে কথা বলতে চাই।ওনাকে ডাকুন।”
হাঁক ছেড়ে উত্তর দিলেন ব্যক্তিটি।খানিকটা তব্দা খেয়ে গেল মতিউর।দোতলার দিকে তাকিয়ে জনশূণ্য বারান্দা টা একবার দেখে নিলো।সামনেই বেহাই হতে গিয়েও না হওয়া ব্যক্তিটি ক্ষুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার এই ক্রোধের কারন ও যুক্তিসঙ্গত। এই তেজ, এই ঝাঁঝালো কথার পরিবর্তে কিছু বলার মুখ আর শিকদার বাড়ির কারো নেই।মতিউর বললেন,

“শান্ত হোন আপনি।এখানে বসুন।আমার সাথে কথা বলুন।আমি বুঝিয়ে বলছি।”
ব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করলেন না। শুনলেন ও না।বরং কন্ঠকে তিনগুণ উচ্চতায় নিয়ে চিৎকার করে উঠলেন।
“আমাকে কথা দিয়ে, আমার মেয়েকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আংটি পড়িয়ে এখন নানা অজুহাত দিয়ে বিয়ে ভেঙছেন কেন আপনারা?আমি আমজাদ শিকদারের সাথে কথা বলবো।ওনার থেকে জবাবা চাই।উনি নিজেই তো মেয়ে দেখে আংটি পড়িয়ে আসছেন।তাহলে বিয়ের আগের দিন রাতে এমন নাটক কেন করা হলো?এত্তো এত্তো আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়েছি।সবাই চুনকালি দিচ্ছে আমার মুখে।কত্ত আয়োজন ছিলো।সব ব্যর্থ!”

দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন আমজাদ।ত্রস্ত পায়ে গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে এগিয়ে এলেন সোফার দিকে।রাজকীয় ভঙ্গিতে সেখানে বসে ইশারায় তারিণের বাবা কে বসতে বললেন।কিন্তু তিনি বসলেন না। বরং ক্রোধ কে সর্বোচ্চে তুলে ঘৃণা ভরা চোখে তাকালেন।আমজাদ কন্ঠে শীতলতা আনলেন।বললেন,
“ঘটনাটার জন্য আমি সত্যিই অনুতপ্ত। এরকম টা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিলো না। কল্পনাও করি নি কখনো।কিন্তু ওই যে ভাগ্যে ছিলো।আপনার ও আর আমার ও।সেই সন্ধ্যা থেকে অতিথিদের ফোন দিয়ে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।আয়োজন ও সব করা ছিলো।কিন্তু!যাই হোক,আমি এ বিষয়ে আর কথাই বলতে চাইছি না।যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে।
লোকটি ফুঁসে উঠলেন।বললেন,

” তিন তিন টা গরু বিয়ে উপলক্ষে কেনা হয়েছে।ডেকোরেশন থেকে শুরু করে যাবতীয় বাজারের ও অগ্রিম দিয়ে অর্ডার করা ছিলো।লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।এগুলোর ক্ষতিপূরণ কে দেবে?আমি মানহানির মামলা করবো আপনাদের নামে।”
“দুঃখিত আংকেল!থানা থেকে গতকাল’ই আমাদেরকে কনফার্ম করা হয়েছে।তারা আপনাদের মামলা নেবে না।”
চমকে তাকালো উপস্থিত সবাই।পাভেল সিড়ির কোনায় হেলান দিয়ে আপেল খাচ্ছে।তারিণের বাবা ক্ষেপে গেল।ক্রোধ নিয়ে বললো,
“ক্ষমতা দেখাচ্ছো?”
চকিতে তাকালো পাভেল।চমৎকার ভাবে হেসে বললো,

“আরে হ্যাঁ, ঠিক ধরতে পেরেছেন আপনি।এত্তো বড় একজন এমপি,অথচ একটু-আধটু দু-এক জায়গায় ক্ষমতা না দেখালে কি চলে বলেন?অনেক অনুনয়-বিনয় করা হয়ে গেছে।এবার সোজা হিসাব।ক্ষতিপূরণ নিয়ে চুপচাপ মেয়ের বিয়ে অন্যকোথাও দিয়ে দিন।আর তা না করে যদি এক পা বেশি হাঁটতে যান তাহলে সেটাও পাবেন না।আফসোস!বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট, বুঝলেন?”
চোখ টিপ মেরে কথা গুলো বলে ডাইনিং এর দিকে এগিয়ে গেল পাভেল।থতমত খেয়ে গেল লোকটি। ইতোমধ্যে আমজাদের ইশারা মোতাবেক টাকা নিয়ে এসে পড়েছে মতিউর।গুণে গুণে পাঁচ লাখ টাকা হাতে দিয়ে পুণরায় বললো,

“আমি খুবই অনুতপ্ত।ভালো একটা ছেলে দেখে মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিবেন।ভীষণই লক্ষী মেয়েটা।”
লোকটি অসস্তিতে পড়লেন।কিছু বলতে গিয়েও কিছু একটা ভেবে চুপ রইলেন।এরপর টাকা হাতে থমথম পায়ে বেরিয়ে গেলেন বাড়ি থেকে।পাভেল বাবার দিকে তাকালো।পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে হিমশিম খেলো।এরপর মিনমিন করে চাচার উদ্দেশ্যে বললো,
“লোকটা বেকুব।শুধু শুধুই এতো কাহিনি।ক্ষতিপূরণের কথা আগে বললেই মিটে যেত।ভাই পাঁচ কেন দশ লাখ দিতেও এক পায়ে রাজী ছিলো।ধুর!এর থেকে আমাকে বললেও হতো।অন্তত পাঁচ দিয়ে বাকি পাঁচ কমিশন খেতে পারতাম।লস!লস!আমার কোনো লাভ লস নাই।জীবন টাই লস।”

“মেয়েটার কি জ্বর কমেছে?”
থমকালো পিপাসা।ফোনের দিকে বার কয়েক তাকালো।নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে।ফোনের অপর প্রান্ত থেকে নিরবতা পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শামসুল।ডাকলেন,
“তৃষ্ণা,কথা বলবে না?”

শরীর টা কেমন কেঁপে উঠলো পিপাসার।এই ডাক,এই কন্ঠের নমনীয়তা গত কয়েক যুগ ধরে শোনা হয় নি।এরকম একটু ডাক,একটু আদর,একটু সোহাগ পাওয়ার জন্য ছোট্ট হৃদয় টা একসময় বিভোর হয়ে উঠতো।সময় পাল্টালেও যে মন পাল্টায়নি।ডাক টুকু শোনার সাথে সাথেই যে মন টা কেমন উতলা হয়ে উঠলো।শান্ত কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

“এটা তো আমার পারসোনাল ফোন।নাম্বার টা পেলেন কোথা থেকে?”
এই প্রশ্নের আশা শামসুল মোটেও করে নি।তার মন যে উতলা হয়ে আছে মেয়ের অসুস্থতার শঙ্কা করে।ত্রস্ত কন্ঠে বললো,
“সোভাম দিয়েছে।হস্পিটাল থেকেই জোগাড় করেছে।
থেমে,
” স্পর্শীয়া কেমন আছে?জ্বর কি কমেছে একটুও?”
“হ্যাঁ, কমেছে। বাসায় এসেছি নয়টার দিকে।খেয়ে ঘুমিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।”
মনটা শান্ত হলো শামসুলের।যাক,চিন্তাটা কমলো।পরক্ষণেই দ্বিতীয় প্রশ্ন ছুঁড়লো।
“ওর রাগ কি কমেছে?আমি আসার পর আমাকে নিয়ে কিছু কি বলেছিলো?
থেমে,

” আচ্ছা,আমি কি কাল আসবো?ও কি খুব বেশি রাগ করবে?”
অবাক হলো পিপাসা।লোকটা এতো অপমানের পরেও আবারো আসতে চাইছে।যে লোক সারাটা জীবন নিজের প্রখর আত্মসম্মান নিয়ে বুক উঁচিয়ে হেঁটেছে।কেউ কোথাও তাকে দেখে চোখ ঘুরিয়ে নিলেও দ্বিতীয়বার সেই লোকের ছায়াও মারাতেন না।সেই লোক আজ এতো অপমানের পরেও মেয়ের অসুস্থতা নিয়ে চিন্তিত।বার বার ছুটে আসতে চাইছে এতোটা দূরে।বাবা বলেই হয়তো এতো নমনীয়তা।
“এই ভালোবাসা টুকু আপনার বোনের সামনে বসে প্রকাশ করলে হয়তো আজ মেয়ের কাছে আসার জন্য আমার অনুমতি নিতে হতো না।আপনার আদুরে বোনকে সারাজীবন প্রশ্নের বাইরে রেখেছেন। শাসনের বাইরে রেখেছেন।সেটা ভালো কথা।বোনের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা থাকতেই পারে,কিন্তু তাই বলে স্ত্রী-সন্তান দের জন্য ও কিছু রাখা উচিত।আজ আপনার বোনের কারনে দুই যুগ ধরে আমি সংসার ছাড়া,স্বামীছাড়া।”
চমকালেন শামসুল সরদার। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“তুমি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছো তৃষ্ণা।শান্তি কিন্তু তোমাকে বের করে দেয় নি।শুধু শুধু দোষ দেওয়া বন্ধ করো।”
হাসলো পিপাসা।আফসোসের স্বরে বললো,
“এই অন্ধবিশ্বাসের জন্যই আজ আপনি একা।আমি ঠিকই আমার সন্তান দের নিয়ে সুখে আছি।কিন্তু দিনশেষে আপনি একা।আপনি নিজেও জানতেন শান্তি আপা আমাকে পছন্দ করে না,আপনার আগের স্ত্রীকে পছন্দ করে।এও জানতেন আপনার বাড়ির বাইরে থাকাকালীন উনিই আমায় নানা ভাবে হেনস্তা করতেন।কিন্তু বিশ্বাস করেন নি।দ্বিতীয়বারের মতো স্বপ্নাকে বিয়ে করার কথা আপনার বোনই আমায় জানিয়েছিলো। আর সে রাতেই আমি স্পর্শীকে নিয়ে এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।হয়তো ওটা আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।আজ বাড়ি না ছাড়লে হয়তো সরদার বাড়িতে আপনার বোনের মিথ্যের শেকড় টা ওতোটা বেশিও গাঢ়তে দিতাম না।যাই হোক,আপনার এখানে না আসাই ভালো।আমার মেয়ের এক কথা।আপনার বোন নিজে এসে ক্ষমা চাইলেই সে সরদার বাড়িতে পা রাখবে।নইলে না।রাখছি।আর ফোন দিবেন না।

বলেই কেঁটে দিলো।বিতৃষ্ণায় মুখ তেঁতো হয়ে এলো।লোকটা আজ ও নিজের বোনকে অন্ধবিশ্বাস করে।তার সম্পর্কে যাবতীয় কথা তার মিথ্যে ভিত্তিহীণ মনে হয়।আফসোস!
মাথা থেকে সমস্ত চিন্তা ঝেড়ে ফেললো পিপাসা।ফোন টাকে দুরত্বে রেখে পুণরায় স্পর্শীর পাশে শুয়ে পড়লো।

বিকেল প্রায় চার টা।হাই তুলে বিছানা থেকে উঠে বসলো স্পর্শী।যথেষ্ট ঘুম হয়েছে।হয়তো ওষুধের প্রভাবেই এই ঘুম।তবে এটা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।যাবতীয় সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।এখন থেকে প্রতিদিন দশ+ঘন্টা ঘুমাবে স্পর্শী।মনে মনে পাকাপাকি ভাবে ঠিক করে নিলো স্পর্শী।পরক্ষণেই চমকে গেল।কার থেকে পালাবে সে?কেন পালাবে?কে এই লোক?দরকার নেই ঘুমের।এমন কোনো ইম্পর্ট্যান্ট ব্যক্তি তার জীবনে নেই যার কারনে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে পালাতে হবে।জীবনের এই সামান্য হোঁচট নিমিষেই সামলাতে পারবে স্পর্শী।ভাবতে ভাবতেই টাইম দেখতে ফোনের দিকে হাত বাড়ালো।চার বেজে গেছে।এর মধ্যে নিশ্চয়ই গায়ে হলুদ শেষ। হয়তো ফোন দিয়েছিলো, কিন্তু তাকে পায় নি।এটা জম্পেশ কাজ করেছে স্পর্শীয়া।কিন্তু কললিষ্টে ঢুকে হতাশ হলো।কেউই ফোন দেয় নি।বেশ কিছু মেসেজের নোটিফিকেশন চোখে আসতেই সেখানে ক্লিক করলো।সবগুলোই সিম কোম্পানির।কিন্তু এর মধ্যে চতুর্থ মেসেজ টা একটা আননৌন নাম্বার থেকে এসেছে।মেসেজ টা পড়তেই গা জ্বলে উঠলো।গুটি গুটি অক্ষরে লেখা,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৭

“আচ্ছা,তুমি কি বলতে পারো গায়ে হলুদে কেন জামাই য়ের গায়ে ছোঁয়ানো হলুদ বউকে দেওয়া হয়?নিশ্চয়ই এতে ভালোবাসা বাড়ে।স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল মহব্বত ভালো হয়।একটা কাজ কিন্তু ভালোই হয়েছে।এই দেখো,তোমার সাথে বিয়ে হলে আমার গালে ছোয়ানো হলুদ কেন?আমার চোখ-মুখ,নাক-কান,হাত -পা এমনকি সারা শরীর ছোঁয়ানো হলুদ তোমাকে মাখালেও মিল মহব্বত হতো না।বরং ফাইটিং হতো।তবে এদিক থেকে আমার হতে যাওয়া বউ ভীষণই ভদ্র,সভ্য,সুন্দরী,লজ্জাবতী।এক কথায় অমায়িক।দোয়া করো,যেন বছর খানেকের মধ্যেই তোমার বোনকে কাকি ডাক শোনাতে পারি।মনে করে দোয়াটা অবশ্যই করো কিন্তু।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৯