রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৯

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৯
সিমরান মিমি

_আমাকে মনে হয় সবাই ভুলে গেছে।
চমকে তাকালো পাভেল।আর্শি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।মুখ-চোখ জুড়ে উদাসীনতার ছোঁয়া।একদৃষ্টিতে বারান্দার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো।সেখানকার দরজা টা পুরোপুরি খোলা।ফলস্বরূপ এখান থেকেই বাইরের আকাশের সৌন্দর্য্য দেখা যাচ্ছে।

_আরে নাহ।ভুলে যাবে কেন?রাগ করে আছে যার কারনেই ফোন দিতে বারন করেছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর্শি।চোখ টা টলমল করছে।তপ্ত পানি গুলো আবারো হানা দিয়েছে চোখের কার্ণিশে।কন্ঠটা কেমন কেঁপে উঠলো।যেন গলা দিয়ে কথা বের হতে চাইছে না।বহু কষ্টে কান্নাটাকে আঁটকে বললো,
_নাহ,রাগ করে নি।ভুলে গেছে।অবশ্য আমি যা করেছি তাতে ভুলে যাওয়ার ই কথা।কিন্তু তাও কেমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার।এই যে আপনিও তো পালালেন আমার সাথে।কই?আপনার ফ্যামিলি তো মেনে নিলো।তাহলে ওরা কেন আমাকে মেনে নিতে পারলো না।নিশ্চয়ই এতোক্ষণে শুনেছে আমি পিরোজপুরে এসেছি।এরমধ্যে একবার ও আমার কথা মনে করলো না।দেখতেও আসলো না।আপুতো কথাই বলবে না।ফোন দিতে বারন করে দিয়েছে।
পাভেল উঠে গিয়ে আর্শির পাশে বসলো।দুহাত দিয়ে দুগাল জড়িয়ে ধরে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

_বোকা মেয়ে।তারা তোমাকে দেখতে আসবে কেন?এই যেমন আমি যেচে বাড়ি উঠেছি সেরকম ভাবে তোমার ও ওই বাড়িতে যাওয়া উচিত।এরপর ওদের রাগ ভাঙানো উচিত।নইলে কি ওরা সেধে সেধে তোমাকে দেখতে আসবে?
_আপনি যাবেন আমার সাথে?আমার ভীষণ ভয় করে।আসলে সোভাম ভাই ভীষণই রুড।আমার ভয় লাগে ওনার সাথে কথা বলতে।আর তাছাড়া আব্বুও অনেক রাগী।যদি থাপ্পড় মেরে দেয়।
হাসলো পাভেল।বললো,
_একটা থাপ্পড় হজম করার ক্ষমতা না থাকলে ও বাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই।আর গেলেও এখন না।আরো ক’টা মাস যাক।ওদের ও রাগ টা কমুক।তারপর না হয় আমি নিয়ে যাবো তোমায়।মন খারাপ করার কোনো দরকার নেই।সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাতের দ্বিতীয় প্রহরের সূচনালগ্ন। চারদিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন।রুমের এক কোনে উত্তাল হয়ে বসে আছে পরশ।ঘড়ির কাঁটায় তখন দশ টা।সে অপেক্ষা করছে সময়ের।এইতো আর মিনিটখানেকের মধ্যেই সেই কাঙ্ক্ষিত লগ্ন।যে সময়টাতে স্পর্শীয়া সরদার জ্বলে-পুড়ে খাগ হবে। সারা রুম জুড়ে পায়েচারি করতে করতে সাঁজিয়ে নিলো জ্বালাময়ী কথাগুলো।এরপর ফোন হাতে এগিয়ে গেল বেলকনির দিকে।আজ পূর্ণিমা।চাঁদটা নিজের সমস্ত সৌন্দর্য্যকে বহিঃপ্রকাশ করে মাতোয়ারা করতে চাইছে। কিন্তু এই সৌন্দর্য্য টানতে পারলো না পরশকে।এ যেন হার মানলো তার প্রেয়সীর রুপের সামনে।সত্যিই তো,রূপবতী। স্পর্শীয়া অত্যধিক মাত্রায় সুন্দরী।ঘন মেঘের ন্যায় কালো কেশী হাটু অবধি চুল,সারা মুখশ্রী জুড়ে মায়া এতো কম নয়।

ভাবনার মধ্যেই সিম চেঞ্জ করা শেষ করে ফেললো।কেননা দুপুরের দিকে যেই মেসেজ দেওয়া হয়েছে তাতে যে সেই নাম্বার টাকে এখনো স্পর্শীয়া সরদার আস্ত রাখবে এটা সম্পুর্ন অবাস্তব।এমনকি তার ওই নাম্বার টা বন্ধ থাকাও অসম্ভবের কিছু না।আবার হতেও পারে মায়ের ফোন হওয়ার সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ কলের আশায় সিম টাকে অন ই রেখেছে।
রিং পড়ছে অনবরত। তিন বারের সময়ই রিসিভড হলো কল।ওপাশ থেকে এক ভদ্রমহিলার আওয়াজ এলো।তিনি সালাম দিয়ে বললেন,

_কে আপনি?
থমকে গেল পরশ।গুরুগম্ভীর কন্ঠটা সম্পুর্ন রুপে স
স্পর্শীয়ার মাকে ইঙ্গিত করছে।ইশশশ!ফোনটা তাহলে মায়ের হাতে দিয়ে দিয়েছে। উত্তেজনায় কন্ঠ কাঁপছে।কান থেকে তড়িৎ গতিতে ফোন টা নামিয়ে সামনে রাখলো।ক্ষানিকটা দম নিয়ে নিজেকে সংযত করলো।বললো,
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।আন্টি, আমি স্পর্শীয়ার ভার্সিটির ফ্রেন্ড।ওর ফোনটা বন্ধ।একটু দেওয়া যাবে ও কে।খুবই ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিলো।জাস্ট ফাইভ মিনিট’স!

_আচ্ছা,একটু ওয়েট করে দিচ্ছি।তোমার নাম কি?
বিপাকে পড়লো পরশ।কি নাম বলবে সে?আর নাম জিজ্ঞেস করছে কেন?সে কি আদৌ তাকে সন্দেহ করছে।
_জ্বী! আমার নাম…
বলার আগেই ওপাশ থেকে পিপাসা বললো
_নাও,কথা বলো।
ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো স্পর্শী। ডান ভ্রুঁ উঁচিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
_কে ফোন করেছে?
_কথা বলে দেখ।
বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল পিপাসা।যাওয়ার সময় হাঁক ছেড়ে বললো,

_দ্রুত টেবিলে আসবি।তোকে খাইয়ে-দাইয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে।এরপর আমি ঘুমাতে যাব।
ফোন কানে ধরে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো।কেমন একটা গাঢ় সন্দেহ হচ্ছে।ওপাশ থেকেও কোনো সাড়াশব্দ আসছে না।হয়তো বিপরীত পাশের ব্যক্তি থম মেরে রয়েছে।স্পর্শী সতর্ক হলো।শান্ত গলায় বললো,
_কে বলছেন?
খুঁক করে কেশে উঠলো পরশ। গলা ঝেড়ে বললো,

“আর কিছুক্ষণ পরেই তো বাসর ঘরে ঢুকছি।ভাবলাম একবার কথা বলে নিই তোমার সাথে।কি করছো?”
চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো স্পর্শীর।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
_আমি পৃথিবীর সব থেকে নির্লজ্জ ব্যক্তিটাকে এতোটা কাছ থেকে দেখেছি;ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে যাচ্ছে।সিরিয়াসলি আপনার বউয়ের জন্য আমার খুব আফসোস হচ্ছে।আশেপাশে কি আছে সেই বেচারী?থাকলে একটু দিন।আমি তাকে কিছু পরামর্শ দিতাম ।”বইন,তোর জামাইরে একটু বেশিই ভালোবাসিস।বেচারা এখনো আমাকে ভুলতে পারে নি।দিনে রাতে সারাক্ষণ ফোন-মেসেজ দিতেই থাকে।”

এই আপনার কি মনে হয় এইসব থার্ড ক্লাস মার্কা কথাবার্তায় আমি জেলাস হই?মোটেও না।বরং আমি উপভোগ করি।জীবনে একটু আধটু বিনোদনের প্রয়োজন হয়।ব্যাস সেটাই ফ্রিতে পাচ্ছি আপনার থেকে।ইডিয়ট!লজ্জা থাকলে আর আমার কাছে ফোন দিবেন না।
ঠোঁট দুটো গোল করে নিঃশ্বাস নিলো পরশ।বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো,
_তা বিয়েটা কবে করছো?
থমকে গেল স্পর্শী।পরক্ষণেই মনে পড়লো রাহুলের কথা।তেজি কন্ঠে বললো,
_বেঁচে থাকলে করে নিবো।আমার বিয়ে নিয়ে আপনার এতো উতলা হওয়ার কোনো দরকার নাই।নিজে বিয়ে-শাদি করেছেন, এবার ঘর সংসার করুন।রাখছি।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো পরশ।সে মোটেই এই ধরণের রিয়াকশন আশা করেনি।ভেবেছিলো বাসর শুনে একটু হলেও তার কন্ঠে হতাশা থাকবে,ব্যর্থতা থাকবে।কন্ঠ কাঁপবে।অথচ কতটা সহজেই বলে দিলো ঘর সংসার করতে।তাও অন্য আরেকটা নারীর সাথে।আচ্ছা,অন্যকারো সাথে এতো সহজে ঘর সংসার করা কি সত্যিই যায় প্রিয় মানুষটাকে ভুলে?হয়তো যায়।কন্ঠে ব্যর্থতা এনে বললো,

“হ্যাঁ,অবশ্যই।ও তো রুমে একা আছে।আমার এখন যাওয়া উচিত।রাখছি,বায় বায়।”
ফোনটা কেটে গেল। কিন্তু কান থেকে আর নামালো না।বাসর!হ্যাঁ আজ তার বাসর।তাও অন্য কোনো নারীর সাথে।ওই প্রশস্ত বুকটাতে কেউ আজ লজ্জায় লুকাবে।ওই সদ্য শেভ করা গালটাতে আজ কেউ চুমু খাবে।খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ওই অংশবিশেষ অন্য কাউকে শিহরিত করবে।সারা শরীর টা জুড়ে লেপ্টে থাকবে।উফফফফ!কলিজাটা কেমন খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাচ্ছে।চোখের কার্ণিশ ভেঙে অশ্রুর ধারা পড়ছে গাল বেয়ে।ঠোঁট দুটো ক্রমশ কাঁপছে।কি অদ্ভুত!প্রেম নয় হয়েছে শুধু ঝগড়া,মায়া নয় হয়েছে শুধু যুদ্ধ,সুন্দর করে দুটো কথা নয় শুধু হয়েছে অপমান।চেনা নয়,জানা নয়,অপরিচিত,বাপ-ভাইয়ের শত্রু সমতূল্য অন্য কাউকে কোন সময়ই বা মন দিয়ে বসলো সে?কেন তার বিচ্ছেদ এতোটা যন্ত্রণা দিচ্ছে?কেন তার কাছে যেতে ইচ্ছে না হলেও তার আশার অপেক্ষায় হৃদয় পুড়ছে?কেন?

“আর্শি!!কই তুমি?”
চমকে উঠলো আর্শি।প্রেমা নিজেও চমকে গেছে।হুট করেই এমন চিৎকারে সাময়িক ভাবে অবাক হয়েছে দুজনেই।লুডুর কোর্ট ওভাবেই ফেলে ছুটে গেলো রুমের বাইরে।পাভেল দ্রুতপায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে।
“শুনেছো তুমি?”
ঘাবড়ে গেল আর্শি।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কি শুনবো?”
হুশে ফিরলো পাভেল।আর্শির শুরুতেই এমন ঘাবড়ানো অবস্থা দেখে নিজেকে সামলে নিলো।এরপর ধীর কন্ঠে বললো,
“একটু পানি দাও তো।”
থমকে গিয়ে পাভেলের দিকে তাকিয়েও আবারো টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল।ভয়েরা ঝেঁকে ধরেছে প্রবলভাবে।পাভেল সোফায় বসলো।পাশেই প্রেমা বসেছে।হুট করে এমন হাঁক ছেড়ে ডাকায় পরশ বেরিয়ে এলো রুম থেকে।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে?”

মলিন চোখে তাকালো পাভেল।বললো,
“শামসুল সরদার হার্ট অ্যাটাক করছে, ভাই।অবস্থা অনেক খারাপ।বাঁচে কি না সন্দেহ। ওরা বরিশাল নিয়ে গেছে।ওখান থেকে নাকি ফেরত দিয়ে দিয়েছে।এখন ঢাকায় উদ্দেশ্যে রওনা দিছে।
থমকে গেল আর্শি।গ্লাসে অর্ধেক পানি সবে ভরেছে।হাত টা যেন অসাড় হয়ে গেলো।পুরো শরীর টা কাঁপছে। মস্তিষ্ক সব ধরণের রেসপন্স করা বন্ধ করে দিয়েছে।ডুকরে কেঁদে উঠলো।পাভেল চমকালো।ছুটে এলো আর্শির কাছে।কিন্তু তার আগেই দিশেহারা হয়ে গেল আর্শি।চিৎকার করে উঠলো।কান্নারত কন্ঠে অনবরত বলতে লাগলো,
” আমি আব্বুর কাছে যাবো।আমাকে নিয়ে যান।”

“হ্যাঁ, নিয়ে যাবো তো।এখন তো রাত হয়ে গেছে অনেক।সকালে নিয়ে যাবো।একটু শান্ত হও।কিচ্ছু হবে না।ভালো হস্পিটালে নিয়ে গেছে তো।সুস্থ হয়ে যাবে।”
শুনলো না আর্শি।অনবরত খামছি দিতে লাগলো পাভেলের হাতে।হুশ হারিয়ে দুপাশে মাথা নাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো,
“আমার আব্বু মরলে তারপর নিয়ে যাবেন আমাকে?আমি এক্ষুনি যাবো।না নিয়ে যেতে পারলে আমাকে ছাড়েন।আমি একা যাবো।”

আর্শিকে জোরহাতে আটকে রাখলো পাভেল।সান্তনা দিয়ে বললো,
“একটু শান্ত হও। আগে ডিটেইলস তো জানি। কোন হস্পিটালে নিয়ে গেছে,কোন ডাক্তারের কাছে এসব কিচ্ছু জানি না।হুট করে তোমায় নিয়ে কোথায় যাবো।আর এগারোটা বেজে গেছে।একটু সকাল টা হোক।সবকিছু জেনেবুঝে
নিয়ে যাবো।”
মানলো না আর্শি।ওভাবেই ছেড়ে দিলো শরীর টা।বার বার মনে হতে লাগলো বাবা বাঁচবে না।কিভাবে যাবে সে?
মাথায় আসতেই ছুটলো রুমের দিকে।জিহানের নাম্বার আছে তার কাছে।নিশ্চয়ই ওর থেকে জানা যাবে।কিন্তু তা আর হলো কই?ফোন দিতেই ওপাশ থেকে এক ভদ্রমহিলা জানালো সিম টা নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে।হয়তো গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করেছে আর সেজন্যই সিমটাও চেঞ্জ।

এক এক করে এ পর্যন্ত পাঁচ বার কল করেছে পরশ।কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে ফোনের মালিক রিসিভড করে নি।এমনকি কেঁটেও দিচ্ছে না।ভীষণ বিরক্তিকর!কপাল কুঁচকে পুণরায় কল দিতেই ওপাশ থেকে কেঁটে দিলো।পরশ এবারে মেসেজ করলো।গুটিগুটি অক্ষরে লিখলো,
“প্লিজ স্পর্শীয়া,কল টা ধরো।খুবই আর্জেন্ট”
স্পর্শী মেসেজ দেখলো।পরক্ষণেই নাক-মুখ কুঁচকে ফেললো।এর মধ্যেই আবারো কল দিয়েছে।ফোন রিসিভড করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর শোনা গেল।
“আরে পাগল নাকি?একটা মানুষ এতোবার ফোন দিচ্ছে তার মানে কথাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতটুকু বুদ্ধি ঘটিতে নেই? অসভ্যের মতো বার বার কেটে দিচ্ছো,রিসিভড করছো না,মশকরা পেয়েছো?”

হা হয়ে গেল আর্শি।অবাকের সুরে বললো,
“আরে আশ্চর্য! আপনি কে যে আপনার ফোন ধরতেই হবে?ধরবো না,কি করবেন?”
ঠোঁট দুটো গোল করে নিঃশ্বাস ছাড়লো পরশ।শান্ত কন্ঠে বললো,
“তোমার আব্বু হার্ট-অ্যাটাক করেছে।শুনেছো?”
স্তব্ধ হয়ে গেল স্পর্শী। মাথার উপরে যেন বজ্রপাত পড়লো।চিৎকার করে বললো,
“হোয়াট!হার্ট এট্যাক করেছে মানে?কোথায় আছে আব্বু?কোন হস্পিটালে?কখন হলো এমন? কি হলো বলছেন না কেন?হ্যালো!”
“স্পর্শীয়া,স্পর্শীয়া।একটু শান্ত হও।আমাকে তো বলার সুযোগ’ই দিচ্ছো না। মে বি আট টা -সাড়ে আটটার দিকে উনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন।

মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেল স্পর্শীর।কাতর কন্ঠে বললো,
” আট টার দিকে আব্বু অসুস্থ হয়েছে আর আপনি আমাকে এখন বলছেন?এই তো দশ টার দিকেও কথা বললেন।তখন কেন বলেন নি।মজা লাগছিলো আমার বাবা অসুস্থ বলে।বেশ ভালোই তো মশকরা করছিলেন নিজের বাসর নিয়ে।বেইমান!অকৃতজ্ঞ!”
চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো পরশ।নিজেকে যথাযম্ভব সামলে নিয়ে বললো,
“তুমি আমায় ভুল বুঝছো স্পর্শীয়া।আমি মাত্র’ই জেনেছি।পাভেল এসে বললো।উনাকে বরিশাল থেকেও ফেরত দেওয়া হয়েছে।ঢাকার দিকে নিয়ে গেছে আরো আধ ঘন্টা আগে।”
কান্নারত কন্ঠে ওপাশ থেকে জবাব এলো,
“কোন হস্পিটাল?

” আমি জানি না।কিভাবেই বা জানবো বলো?আর্শি খুব কান্নাকাটি করছে।ও যেতে চাইছে এক্ষুনি। কিন্তু ডিটেইলস তো কিছুই জানি না আমরা।আমাকে প্লিজ এড্রেস টা জানিয়ো। ”
ফোন কেঁটে দিলো স্পর্শী।বিছানা থেকে উঠে ড্রয়ার খুললো দ্রুতহাতে।ভাঙা ফোন টাকে বের করতেই ঠোঁট ভেঙে কেঁদে দিলো।ডিসপ্লে, টাচ কিছুই আর আস্ত নেই।কিভাবে বাড়ির নাম্বার পাবে সে?একছুটে মায়ের কাছে গেলো।আজ প্রায় দুদিন পর পিপাসা নিজের রুমে শুয়েছে।মেয়েটা একটু সুস্থ হয়েছে বলেই একা ছেড়েছে।দরজার সামনে গিয়ে অনবরত ধাক্কাতে লাগলো স্পর্শী।
“আম্মু,আম্মু দরজা খোলো প্লিজ!”

ব্যতিব্যস্ত হয়ে বিছানা থেকে উঠলো পিপাসা।দ্রুতহাতে দরজা খুলে স্পর্শীকে ধরলো।বললো,
“কি হয়েছে?বমি করেছিস আবার?শরীর কি খারাপ লাগছে?”
ঠোঁট ভেঙে কান্না করে দিলো স্পর্শী।হাটু ভেঙে বসে পড়লো ফ্লোরেই।
“আম্মু,আব্বু হার্ট অ্যাটাক করেছে।ওনাকে পিরোজপুর, বরিশাল সব জায়গা থেকে ফেরত দিয়েছে।অবস্থা একটুও ভালো না।ঢাকায় নিয়ে আসছে।তোমার কাছে কি কারো নাম্বার আছে?”

কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গেল পিপাসা।মুখ দিয়ে যেন কথাই বের করতে পারছে না।এইতো সকালেই লোকটা ফোন দিয়ে কত কিছু বললো।মেয়ের রাগ কিভাবে ভাঙবে,সে কি আদৌ আবার আসবে কতকিছু।এইতো সেদিন হস্পিটালে বসে মেয়ের সাথে একসাথে খেতে চাইলো।অথচ ভাগ্যে সইলো না।চলে গেলেন না খেয়েই।আচ্ছা,লোকটা কি এভাবেই চলে যাবে? স্ত্রী,দুই মেয়ে কাউকেই পেল না।দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে।পরক্ষণেই স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার ফোন,ফোন টা কই?

বের করে দিলো।কললিস্টে ঢুকে স্বামীর নাম্বার টা বের করে দিয়ে বললো,
” এই যে,এটা তোর বাবার নাম্বার।আমাকে সন্ধ্যায় ফোন ও দিয়েছিলো।”
রিং পড়ছে।ওপাশ থেকে রিসিভড হওয়া মাত্রই একদফা গ্যাঞ্জামের সম্মুখীন হলো স্পর্শী।এম্বুলেন্সের সাইরেন সহ আশেপাশে অজস্র গাড়ির শব্দ।বোঝাই যাচ্ছে যানজটের সম্মুখীন হয়েছে।ওপাশ থেকে সোভামের আওয়াজ পাওয়া গেল।স্পর্শী ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

“ভাইয়া,কোন হস্পিটালে আসছেন?”
অবাক হলো সোভাম।স্পর্শীকে ইচ্ছে করেই জানায়নি সে।এমনকি বাড়ির সবাইকেও জানাতে বারন করেছে।কিন্তু তারপরেও সে ঠিক কিভাবে জানলো ভেবে পাচ্ছে না।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“জানি না।আগে ঢাকা পৌছাই।তারপর ভালো কোনো হস্পিটালে এডমিট করাবো।”

“ভাইয়া শুনুন।আপনি স্কয়ার হাসপাতালে আসুন।এটা খুব ভালো হস্পিটাল। মিরপুরেই এটা।রোড নামার ৩২ এর স্টার্ট লাইনে মেইন রোডের লেফট সাইডেই পান্থপথ। ওখান থেকে কিছুটা সামনে গেলেই হস্পিটাল।আপনি আসুন।আমি যাচ্ছি।আমি যাবতীয় ফর্মালিটিস ফিল আপ করে রাখছি। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৮

স্পর্শী ভেবেছিলো সোভাম কখনোই রাজী হবে না।হয়তো বলবে তোমার সাহায্যের কোনো প্রয়োজন নেই,আমি দেখে নিবো।কিন্তু তাকে পুরোপুরি মিথ্যে করে দিয়ে সোভাম সায় জানিয়ে বললো,
“ঠিক আছে।আমাদের পৌছাতে আর ঘন্টা চারেক লাগবে।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫০