রাজনীতির রংমহল সিজন ২ বোনাস পর্ব 

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ বোনাস পর্ব 
সিমরান মিমি

হতভম্ব হয়ে শামসুল সরদারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো সবাই।স্পর্শীর খাওয়া অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেছে।”বেয়াই এর বড় ছেলে” -এই সহজ কথাটাও বুঝতে পারছে না যেন।মস্তিষ্ক বারবার পরশ শিকদারের দিকে ইঙ্গিত দিলেও মন বলছে এটা মিথ্যা।বাবা কখনোই পরশ শিকদারের সাথে বিয়ে ঠিক করে নি এবং এটা হওয়া অস্বাভাবিক।নিশ্চয়ই অন্যকোনো বেয়াই এর ছেলেকে ইঙ্গিত করছে।পিপাসার অনুভূতি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কখনো খুশি,কখনো শঙ্কা এবং কখনো সন্দেহ কাজ করছে।অবিশ্বাস্য কন্ঠে স্বামীর উদ্দেশ্যে থেমে থেমে বললেন,

_”পরশ… শিকদার।আর্শির… ভাসুরের কথা বলছেন আপনি?
মাথা নাড়ালেন শামসুল।স্পর্শীর গা ছেড়ে দিয়েছে ইতোমধ্যে।হাত-পা ক্রমশ অসাড় হয়ে আসছে।মাথার মধ্য টা ঝিম মেরে আছে।যেন এই মুহুর্তটা আটকে রয়েছে।অবিশ্বাস্য মনটা তখন ও সন্দেহের গাঢ় আবরণে।পিপাশা অভিমানী চোখে স্বামীর দিকে তাকালেন।বললেন,
_”আপনি বিয়ের দিন তারিখ ও ঠিক করে আসছেন?কখন গেলেন?আমাকে একটু জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলেন না?কেন মেয়ে কি শুধু আপনার?আমার না?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্ত্রীর মুখপানে একবার তাকালেন শামসুল।এরপর চোখ দুটো ছোট ছোট করে খাবার মুখে নিয়ে বললেন,
_”বেশ তো।তোমার বেশি খারাপ লাগলে ওদের কে বারণ করে দেই।যদি অপছন্দ হয়ে থাকে তাহলে তো বিয়ের দরকার নেই।তুমি তোমার মতো ছেলে খোঁজো।”
শিউরে উঠলো পিপাসা।বোকা হেসে বললো,
_”আরে না না।আমার পছন্দ হয়েছে।আর তাছাড়া আপনার পছন্দের উপর আমি নিশ্চিন্তে ভরসা করতে পারি। কিন্তু গেছিলেন কখন?সকালে? ”

আবারো পূর্বের মতোন মাথা নাড়ালেন শামসুল।আর বসে থাকতে পারলো না স্পর্শী।লজ্জা,ভয়,শঙ্কা,অসস্তি সব একজোটে ধরেছে তাকে।খাবারের বাকি অর্ধেক টা ফেলেই কোনোরকমে উঠে গেলো টেবিল থেকে।পেছন থেকে সোনালী কয়েকবার ডাকলেও সাড়া দিলো না।যেন ফিরলেও সবাই তার লজ্জামাখা মুখ টা দেখে ফেলবে।পায়ের গতি মোটেও এগোচ্ছে না।মনে হচ্ছে মাটির নিচে গেড়ে যাচ্ছে প্রতিটা কদম।এক হাটু কাঁদার মধ্যে ছুটলেও রুমে যেতে এতোটা দেরি হয় না।কিন্তু আজ হচ্ছে। হয়তো পা দুটো তাকে তিরস্কার করে সবার সামনে লজ্জায় ফেলতে চাইছে।দ্রুত কক্ষে প্রবেশ করলো।সহস্তে ধুড়ুম করে দরজা বন্ধ করলো।ইশশ!

আবারো লজ্জা।সে তো চায়নি এতো জোরে শব্দ করে দরজা বন্ধ করতে।তাও কেন হলো এমন?এবারে নিশ্চয়ই সবাই দোতলার দিকে চাইবে এই শব্দের রেশ ধরে।ধুর!বারংবার নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত হচ্ছে।সবাই কি না কি ভাবলো।ভাবতে ভাবতেই বিছানার উপর পড়লো।কলাগাছের মতো উপুড় হয়ে পড়ে রইলো চোখ দুটো বন্ধ করে।নাহ!এটাকে শুধু চোখ বন্ধ করা বলে না।একপ্রকার চোখমুখ খিঁচে শুয়ে আছে।তার বিয়ে,সেটাও সেই অসভ্য লোকটার সাথে।এইতো সেদিনই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করলো।এরমধ্যেই প্রেম হয়ে গেলো?কি অদ্ভুত অনুভূতি। মিনিট খানেক শুয়ে থাকার পর উঠে বসলো।ফোন টাকে হাতে নিয়ে কল করলো পরিচিত নম্বরটাতে।এক বার, দুবার, পর পর তিনবার কল করার পরেও ওপাশ থেকে রিসিভড হলো না।

অবাক হলো স্পর্শী।ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো নাম্বারটার দিকে।পরশ তার ফোন ধরছে না এটা ভাবতেই রাগ লাগলো।জেদ নিয়ে চতুর্থ বার কল করতেই দুবার রিং পড়ার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে কেটে দিলো।সিরিয়াসলি?ফোন কেটে দিলো?স্পর্শীয়া সরদারের মুখের উপর ফোন কেটে দিলো তাও ওই শিকদার।এটা অপমানের।আর এটা শুধু অপমান নয়, ভীষণ ই অপমানের।মুখ গোমড়া করে মিনিট খানেক বসে পুণরায় ফোন হাতে নিলো।গুটি গুটি অক্ষরে লিখলো,

_”মাত্র বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে,এতেই এতো অবহেলা।বিয়ে হওয়ার পর তো নাহয় বাদই দিলাম।করবো না বিয়ে।বিয়ে ক্যান্সেল।পরশ শিকদার,আপনি নতুন পাত্রী খুঁজুন।স্পর্শীয়া সরদার আপনাকে রিজেক্ট করলো।”
পুলিশ কমিশনারের ডেস্কের সামনের চেয়ারটিতে রাজকীয় ভঙ্গিতে আলোচনা করছে পরশ।টুং শব্দে মেসেজটা আসতেই সেদিকে চোখ দিলো।গুটি গুটি শব্দে পুরো বার্তাটা পড়তেই ঠোঁটে হাসি ফুটলো।মুচকি এই হাসি দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন কমিশনার।অসস্তি মাখা কন্ঠে বললো,
_”মিঃ শিকদার,আমার কথাটা কি পছন্দ হচ্ছে না?এটা কি খুব বেশীই হাস্যকর ছিলো?”
পরশ একঝলক তাকালো।এরপর কমিশনারের দিকে তাকিয়ে ইশারায় ফোন টাকে দেখালো।বুঝতে পারলেন কমিশনার।বললেন,

_”তাহলে কি আমরা পরে এ ব্যাপারে কথা বলবো?”
বাধ সাধলো পরশ।বললো,
_”কোনো প্রয়োজন নেই।ততটাও গুরুত্বপূর্ণ ফোন না।আপনি বলুন।”
এরপর সংক্ষেপে খুদে বার্তা টিকে পাঠিয়ে মনযোগ দিলো নিজের কাজে।
_”আমি ব্যস্ত আছি স্পর্শীয়া।পরে কথা বলছি।”
মেসেজ টা পড়তেই ভেংচি কাঁটলো। ব্যঙ্গাত্মক মুখশ্রীতে বললো,
_”এখন তো ব্যস্ত থাকবেই।সব টা যে ঠিকঠাক।অথচ রাজী হওয়ার আগে অবসরের সমুদ্রে ভাসছিলেন।রাত তিনটার সময় দেখা করার জন্য লাফাতেন।অসভ্য লোক!”
_”আপু দরজা খোলো।”

দরজার ওপাশ থেকে আর্শির শব্দ শুনতেই চমকালো স্পর্শী।নিজেকে সংযত করে ত্রস্ত হাতে দরজা খুললো।ছিটকিনি খুলে দরজাটা কে ভিড়াতেই বুকের উপর পড়লো আর্শি।ঝাপটে ধরে উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,
_”আপু,আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।বিশ্বাস করো আমার নাঁচতে ইচ্ছা করছে।আমার তো ভাবতেই লাফাতে ইচ্ছে করছে।পরের বার শশুরবাড়ি আমি একা না।তুমিও সাথে যাবে।আহাহা!শান্তি।এখন আর ওরা আমাকে বাপের বাড়ি নিয়ে খোঁটা দিতে পারবে না।দিলেই তুমি নাক ভেঙে দেবে।”

বোনের উত্তেজনাকে পাত্তা দিলো না স্পর্শী।গা ছাড়া ভাব নিয়ে এসে বিছানায় বসলো।দাম্ভিকতা নিয়ে বললো,
_”বিষয়টা তোর জন্য মোটেও সুখকর নয়।একবার ভাব,আমি এখানে তোর বড় বোন হলেও ওখানে হবো বড় জা।জা চিনিস?না চিনলে এখন থেকে শেখ।সম্মান করে চলতে হবে আমাকে।বাড়ির সকল কাজকর্ম তোকে দিয়ে করাবো।বুঝলি?”
নিমিষেই চুপসে গেল আর্শির মুখমন্ডল।পরক্ষণেই উত্তেজিত হয়ে বললো,

_”তুমিও ভুলে যেও না আমি তোমার সিনিয়র।ও বাড়িতে তুমি নতুন হলেও আমি কিন্তু পুরোনো।এক বাচ্চার মা।অতএব, কাজগুলো উল্টোও ঘটতে পারে।সম্মান দিয়ে কথা বলবে।এখন আমি তোমার ছোট বোন নই।বরং হবু জা।
_”বাহ!মুখ তো দেখছি খই এর মতো ফুঁটছে।”
পাত্তা দিলো না আর্শি।পরমুহূর্তেই বোনকে আবারো জড়িয়ে ধরলো।বললো,

_”আপু প্লিজ!ও বাড়ি থেকে আমাকে নিতে আসলে তুমি বাধা দেবে।আমি মেয়ে পক্ষ হবো।গেট ধরবো,বাসর ঘর আটকাবো,দুলাভাই এর জুতো চুরি করবো, ওনার পকেট থেকে টাকা খসাবো।এটা অনেক ইচ্ছা আমার।কিন্তু পাভেল ভাই বললো ও নাকি আমাকে বিয়ের আগেই নিয়ে যাবে।বলে, “তুমি আমাদের বরপক্ষ।এখানেই থাকবে।না থাকবে সরদার বাড়িতে ভাইয়ের শালি,আর না থাকবে গেট।” প্লিজ!তুমি আমাকে যেতে দেবে না। আমি যাবো না।”
অগোচরে হাসলো স্পর্শী।এরপর ভাবুক কন্ঠে বললো,
_”ওকে,যাহ!তোকে নিতে দেবো না।তবে একটা শর্ত আছে।আমাকে ভাগ দিতে হবে।গেট,জুতো চুরি,বাসর ঘর আটকানো প্রতিটা ক্ষেত্রে যা উঠবে তার সিক্সটি পার্সেন্ট আমার।দিলেই তোর কাজ করে দেবো।নইলে আমি নিজেই তোর পাভেল ভাইকে ফুসলে দিবো।”

হা হয়ে গেল আর্শি।অবাকের সুরে বললো,
_”সিক্সটি পার্সেন্ট মানে?তাহলে আমি আর জিহান কি নিবো?”
_কেন?তোদের টা তো রাখছি।যদি পঞ্চাশ হাজার ওঠে তাহলে সেখানে ত্রিশ আমার, আর বাকি বিশ তোর আর জিহানের।দুজন মিলে ভাগ করে নিবি দশ দশ করে।”
সোজা নাকোচ করলো আর্শি।রেগেমেগে উঠলো বিছানা থেকে।দাঁড়িয়ে নাক ফুলিয়ে বললো,
_”এহহহ!এটা মগের মুল্লুক নাকি?চুরি করবো আমরা,চোর সাজবো আমরা,গেটে-বাসরে খরচ করবো আমরা আর সিক্সটি পার্সেন্ট পাবা তুমি?তাও বসে বসে।এক টাকাও দেবো না।তোমাকে ভাগেই রাখবো না।তোমার দরকারই নাই।দেখি পাভেল ভাই আমাকে নেয় কিভাবে?আমি অসুস্থ হওয়ার ভান করবো,কান্নাকাটি করবো।তাহলেই আর পারবে না।”

ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালো স্পর্শী। শান্ত কন্ঠে বললো,
_”ভুলে যাস না বিয়েটা আমার।আমাকে ভাগ না দিলে বিয়ে ক্যান্সেল করে দেবো । তখন না থাকবে বাশ আর না বাজবে বাঁশি।”
হেসে দিলো আর্শি।দাম্ভিকতার সুরে বললো,
_”তুমি এই বিয়ে ক্যান্সেল করলে আব্বু তোমাকে আঠারো টুকরা করে বিষখালী নদীতে ভাসিয়ে দেবে।আম্মুকে তখন বলছিলো।আমি শুনেছি লুকিয়ে।”
কথাটা কানে যাওয়া মাত্রই নড়েচড়ে বসলো স্পর্শী। কপাল কুঁচকে আর্শির দিকে তাকিয়ে বললো,
_”তাই নাকি?……….আরো কিছু বলার প্রয়াশ করলেও মুখে আনলো না।মনে হলো একমুহূর্তে বাবার সাথে একটু কথা বলা দরকার।গত রাতের হুমকি সরুপ কথা বলার পর আর কথা হয়নি।তার মনোভা ব টা একটু বোঝা উচিত।আদৌ কি খুশিমনে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাকি তার চাপে?

ভাবনা মোতাবেক কাজ করার জন্যই উঠে দাঁড়ালো।দু কদম সামনে এগোতেই ফোন বেজে উঠলো।পরশ শিকদার কল করেছেন।আর এগোলো না স্পর্শী।আয়েশ করে বিছানায় বসলো।রিসিভড করে ঝাঁঝালো স্বরে বললো,
_”ফোন ধরবে না স্পর্শীয়া সরদার।একদমই ফোন দিবেন না।আমার ফোন রিসিভড করেন নি মনে নেই?পুরো চারবার দিয়েছি।লজ্জা নেই।কোন আক্কেলে আবার ফোন দিয়েছেন?”
ওপাশ থেকে পরশ ব্যঙ্গাত্মক সুরে বললো,
_”লজ্জা থাকবে না কেন?অবশ্যই আছে।তবে যতটুকু লজ্জা থাকলে কেউ ফোন রিসিভড করে এইকথা গুলো শোনায়, ঠিক ততটুকুই আছে।”
ক্ষেপে গেল স্পর্শী।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

_”আপনি কি বলতে চাইছেন কল কেটে দেওয়া উচিত ছিলো আমার?ওকে ভুল হয়ে গেছে।শুধরে নিলাম।বায়!
বলেই কেটে দিলো।পরশ পরপর আরো চারবার কল দিলেও রিসিভড করলো না স্পর্শী।বরং কেটে দিলো বারবার।স্পর্শী ফোন হাতে ভাবুক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।এখন আর কল আসছে না।কেন আসছে না?এটা খুবই অন্যায়।মাত্র চারবার কল দিয়েই চুপ করে রইলো।আর একবার দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না।এটা ভীষণ অপমানের।স্পর্শী আবারো মেসেজে ঢুকলো।গুটি গুটি অক্ষরে লিখলো,

_”মাত্র চার বার কল দিয়ে হাঁপিয়ে যাওয়া পুরুষ আর যাই হোক বউ নিয়ে সংসার করতে পারে না।আমি আপনাকে চারবার কল করেছি।সেখানে নিয়ম অনুযায়ী আটবার কল করা উচিত ছিলো।কিন্তু তা আপনি করেন নি।আমি প্রতিনিয়ত হতাশ হচ্ছি।নাহ!এবারে বিয়ে ভাঙার ব্যাপার টা সিরিয়াসলি নিতে হবে।”

মেসেজ টা পড়তেই হতবাক হয়ে গেল পরশ।এ কেমন ছেলেমানুষী?প্রতি মুহুর্তে বিয়ে ভাঙার হুমকি।এটা কি মানা যায়?অবশ্যই যায় না।কিন্তু না,উত্তেজিত হওয়া যাবে না।মানতেই হবে।কবুল বলার আগ পর্যন্ত।যে সাইকো বিয়ে করতে যাচ্ছে তাতে এরকম পাগলামি খুব বেশি অস্বাভাবিক না।কল লাগালো।একবার,দুইবার………..করতে করতে নয়বার দেওয়ার পরেও রিসিভড হলো না। শেষে বাধ্য হয়ে মেসেজ দিলো,
_”আর কতবার?আটবারের জায়গায় তো নয়বার দিলাম।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৬২

হুশ ফিরলো স্পর্শীর।সে ভীষণই মজা পাচ্ছিলো।মেসেজ টা দেখে জিভে কামড় মেরে কল লাগালো।সাথে সাথেই রিসিভড হলো।ওপাশ থেকে পরশ বললো,
_”ন’বার কল করেছি। এখনো কি কথা বলা যায় না ম্যাডাম?

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৬৩