রাজবধূ পর্ব ৪৭
রেহানা পুতুল
“আদুরী আপা, বাইরে গিয়ে কোন লাভ হবে না। শিখার চোখের সামনে তালুকদার পরিবারে কারো অসৎ উদ্দেশ্য সফল হবে না।”
অগ্নিঝরা কণ্ঠে বলল শিখা।
আদুরী ভড়কানো ও বিতৃষ্ণার চাহনি নিক্ষেপ করলো শিখার মুখপানে।
পাশ হতে সুফিয়া বিবি শুনে যায় শিখার কথা। প্রচন্ডবেগে ক্ষেপে উঠে শিখার আস্পর্ধা দেখে। তার মেয়েকে এতবড় কথা শিখা কিভাবে বলতে পারলো। রাজের কথা মনে হতেই সুফিয়া বিবি নিজের ধৈর্য পরিক্ষায় অবতীর্ণ হলেন। শিখার কথার প্রতিউত্তর দিলেন না। কৌশলে এই মেয়েকে শায়েস্তা করতে হবে। কড়া ডোজ দিতে হবে। আগের চেষ্টা বিফলে গিয়েছে। নতুন করে কঠিন ফন্দী আঁটতে হবে। হাল ছেড়ে বসে থাকলে এই মেয়ে একদিন সবাইকে নিজের কব্জায় নিয়ে নিবে। তবে আদুরী থেকে বিষয়টা কি তা জানতে হবে।
আদুরী শিখার উত্তাল রূপ দেখে থমথমে মুখে নিজের রুমে চলে গেলো। নয়তো এক্ষুনি সারাবাড়ি রটে যাবে। হট্রগোল বেঁধে যাবে। শিখা আদুরীর পিছন পিছন গেলো। বলল,
“বড় ভাবির কুরুচিপূর্ণ অসৎ ইচ্ছে সফল হবে না। ভিন্ন চিন্তা করে সমস্যা সমাধান করে ফেলুন পাঁচকান না হতেই।”
আদুরী নিঃশ্চল রইলো। তর্কে জড়ালো না। যুক্তিখণ্ডনেও গেলো না শিখার সঙ্গে। শিখা ঘরের বাইরে গেলো। টুকটাক কিছু গৃহকার্য করলো। রান্নাঘরে গিয়ে মতির মায়ের পাশে বসলো। মতির মা তাকে বলল,
“রাজ বাড়িতে আছে। তোমাগো দুইজনের মিলন দেইখা দিলে শান্তি লাগলো মা। দুই জাহানের মালিক তোমাগোরে জনমভর এমন মানিকজোড় কইরা রাখুক।”
শিখা অমলিন হেসে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“শুকুর আলহামদুলিল্লাহ খালা। জোছনারেও বিয়ে দিয়ে দেন।”
“খুঁজতাছি মা,মনমতো পোলা পাইতাছি না।পাইলেই কাম সাইরা ফালামু। কখন আমার ডাক আসে ঠিক নাই। মাইয়াটারে কারো হাওলা কইরা দিতে পারলেই আমি মুক্ত।”
“মায় কেবল আমারে তাড়াইবার চায় ভাবিজান।”
উড়ু উড়ু কণ্ঠে বলল জোছনা।
আদুরী রানীর রুমে গিয়ে ভীতু স্বরে বলল,
“ভাবি, শিখার কথায় মনে হলো তোমার বিষয়ে সে সন্দেহ করছে। সে আল্টিমেটাম দিলো। আগানো ঠিক হবে? মনে হয় না।”
রানী প্রচণ্ড উগ্র মেজাজে বলে উঠে,
“আমার এতো স্বপ্ন,এতো অপেক্ষা, এতো আশা, এতো লুকোচুরি, এতো কষ্ট’র পরে এতটুকু আগাইলাম, সেইখানে একটা ফইন্নীর মাইয়ার লাইগা আমার সব ভেস্তে যাইবো? আমি কি ভুল করছি? সারাজীবন আমি এই ঘরে নিঃসন্তান হিসেবে থাকুম না। গতর ও খাটুম না। তার লাইগা যদি আমি বাচ্চা না রাখতে পারি,তাইলে হ্যারেও আমি জিন্দা রাখুম না।”
আদুরী দোটানায় পড়ে যায়। তার মাথা কাজ করছে না। সে যদি রানীর বিপক্ষে যায়,তাহলে তার অতীতের ঘটনাও ফাঁস হয়ে যাবে। সাংঘাতিক কাণ্ড রটে যাবে তখন। রাজ তাকে আস্ত রাখবে না। ভেবেই আদুরী নিশ্চুপ থাকে।
সুফিয়া বিবি আদুরীকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
“সেই বান্দীর মাইয়া তোরে সক্কালবেলা অমন শক্ত কথা কইলো ক্যান? তুই কই যাইতাছিলি?”
আদুরী তব্দা খেলো। তবুও টনটনে সুরে মাকে বলল,
“আম্মা কিছুই না। তার স্বামী বাড়িতে এখন। তাই পাওয়ারে আছে। ফোঁস,করে দু এক কথা বলে কর্তৃত্ব ফলাতে চায়।”
“তাইলে হ্যারে জব্দ করন লাগব না? ছাইড়া দিলি ক্যান? বান্দরের মতন মাথার উপ্রে উইঠা গ্যালে মাটিতে নামাইতে পারবি?”
আদুরী মাথা খাটিয়ে উত্তর দেয় মায়ের।
“আরেহ আম্মা ধীরেএএ। ধীরেএএ। এই আদুরী ছাইড়া দেওনের মানুষ? প্ল্যান করতাছি বড় ভাবিসহ।”
এভাবে নয়ছয় বুঝিয়ে মায়ের থেকে উদ্ধার হলো আদুরী।
নিচের কাজ সেরে ব্যস্ত দুপুরে শিখা দোতলায় নিজেদের বেডরুমে গেলো। দেখলো রাজ রুমে নেই। সে ভিতর থেকে দরজা চাপিয়ে দিলো। টেবিলের উপরে থাকা অডিও ক্যাসেটগুলো ধরে ধরে দেখলো। কুমার বিশ্বজিতের ‘মাইক্রো’ শুভ্রদেবের ‘বুকের জমিন’ অবসকিওরের ‘মাঝরাতে চাঁদ’ ‘পার্থ বড়ুয়া’র ‘সোলস’ এবং হিন্দি ও ইংলিশ মিলিয়ে ইত্যাদি সব জনপ্রিয় শিল্পীর জনপ্রিয় ক্যাসেটগুলো। সে একটি বাংলা ক্যাসেট চালু করে দিলো।
হ্যাঙ্গারে চোখ যেতেই রাজের একটি ফুলহাতার শার্ট নিয়ে নিলো। নাকে চেপে ধরলো। কি হৃদয় হরণ করা তীব্র সুঘ্রাণ। এর আগে এমনভাবে তীব্র ঘ্রাণ পেতো সে কেবল তার মা নূরীর। মায়ের ব্যবহার করা গামছাটা থেকেও সে কি মায়া মায়া ঘ্রাণ পেতো।
সে রাজের শার্টটি শাড়ির উপরে পরলো দুষ্টমি করে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে ঠোঁট মেলাতে লাগলো প্লে হওয়া গানটির সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
“মন শুধু মন ছুঁয়েছে…ওহ সেতো মুখ খুলেনি
ওহ হো হো….”
রাজ দরজা ঠেলে ভিতরে পা রাখলো। তার উদাম শরীর। পরনে সাদা চেকের লুঙ্গি। কাঁধের উপর ছড়ানো একটি বড় তাওয়েল। তাকে দেখামাত্রই শিখার চঞ্চল পা জোড়া স্থির হয়ে গেলো। আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো। রাজ তাওয়েল রেখে দিলো বিছানার উপরে। পিছন হতে শিখার পিঠ নিজের চওড়া বুকে চেপে ধরলো। আয়না বরাবর দাঁড়িয়ে বলল,
“প্রজাপতি কি এমনি এমনি নাম দিয়েছি?
তুমি রঙিন প্রজাপতির মতো চঞ্চল,ছুটন্ত, উড়ন্ত। যাইহোক তোমাকে শার্টে সুন্দর লাগছে। পরবে?”
শিখা মাথা ডানা বামে নেড়ে বোঝালো, নাহ পরবে না।
” কলেজের জন্য দিবসভাবে তোমাকে পাওয়া যায় না। আজ পেলাম। আসো গল্প করি।”
“আমার কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে। তাই এলাম।”
সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল শিখা।
“আজ তুমি কলেজে যাওনি এইজন্য?”
“বলতে পারেন। কারণ রাতে আপনি রোমান্টিক মুডে থাকেন। অন্যসময় বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমিও পড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকি। সামনে ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা।”
” বুঝলাম গুরুত্বপূর্ণ কথা সেগুলো তোমার জন্য। সব শুনবো। আসো বেডে। তুমি আমার কোলে মাথা রেখে শোও। আর যা যা বলতে চাও বলবে।”
শিখা সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সদাপ্রস্তুত। নিঃসংকোচে রাজের কোলে মাথা রাখলো পাখির ছানার মতো। রাজ দুই বালিশের মাঝে হেলান দিয়ে বসলো পিঠ ঠেকিয়ে। শিখার একহাতের পিঠে,কপালে,দুই গালে চুমু খেলো একাধিক।
“থামলে ভালোলাগে ফড়িং ভাই।”
ভ্রুকুঞ্চন করে চোখ পাকিয়ে বলল শিখা।
“হোঃহোঃহোঃ। সরি। বলেন রঙিন আপা?”
শিখার এক হাতের তালুতে নিজের একগাল ও ঠোঁটের নিবিড় ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে বলল রাজ।
শিখা রানীর বিষয় আপাতত সাইডে রাখলো। আগের চিরকুট ও ফুলের কথাও সে গোপন রাখবে বলে ঠিক করলো। স্কুলে কে না কে দিয়েছে তার নাই ঠিক। বাড়িতেও একদিন কে দিয়েছে আল্লায় জানে। তবে এটা বলবে সে। নিজেকে স্বামীর কাছে স্বচ্ছ রাখা জরুরী।
তার মা বলেছে,
সংসারে অনেক ছোটখাটো বিষয় পুরুষের কানে তোলা উচিত নয়। এতে সুবিধা না হয়ে অসুবিধা হয় বেশি। কথা বাড়ে। সন্দেহ বাড়ে। ঝামেলা বাড়ে। আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলো একদিন বড় আকার ধারণ করে বোমের মতো ফেটে পড়ে। শিখা তার মতো করে শুরু করলো।
“আপনাদের ঘরে নাকি বিয়ের পর বউদের বাসর হয় তিনদিন পরে। বরের মুখ দর্শনও হয় তিনদিন পরে। কেন?”
“এটা সুফিয়া বিবির আইন। কারণ মা মনে করেন,বাসর ঘরে বউরা বরের ছোঁয়া পেয়ে গেলে প্রশ্রয় পাবে। শুরু থেকেই তাদের টাইট দিলে তেমন সম্ভাবনা থাকবে না। উনাকে ভয় করবে। উনার হুকুম মেনে চলবে।”
“বুঝলাম। আপনার বাবা,মা একসঙ্গে ঘুমায় না কেন?”
“আমি যতটুকু জানি আব্বা রাতে অনেক নাক ডাকে। মায়ের ভাষায় করাত দিয়ে বাঁশ কাটা। মায়ের রাতে ঘুম আসে না। তাই আলাদা থাকেন দুজন।”
“আপনাদের পরিবারে আমাকে কে কে পছন্দ করে না জানেন আপনি?”
রাজ ইতস্ততবোধ করলো এবার। শিখার হাত ছেড়ে দিলো। বলল,
“জানি। মা,তিনভাবি, আসলাম ভাই,ও কিছুটা আদুরী।”
“আদুরী কিছুটা নয়। বাকিদের মতো পুরোটা। যাইহোক উত্তর সঠিক ছিলো।”
“আপনার মামু আমাকে ব্যাড টাচ করতে চেয়েছে। কিভাবে জানলেন?”
“জুবায়ের বলেছে। সেই মামুকে মেরে ফেলেছে আমার পরিবর্তে। নয়তো তুমি রক্ষা পেতে না।”
শিখা বিস্ময়কর কণ্ঠে বলে উঠে,
” জুবায়ের ভাই? আমার জন্য খুনের দায় মাথায় নিলো? উনিতো নিজামকেও মেরে ফেললো। সেটা আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউই জানে না।”
রাজ স্তম্ভিত স্বরে,
“জুবায়ের এটা ত বলেনি আমাকে। নাকি মনে ছিল না। যাইহোক তুমি তৃতীয় কান করো না। খবরদার।”
“মরণেও কাউকে বলব না এই কথা।”
“তারপর বলো?”
“আপনার চেয়ে আমি মিনিমাম বারো, চৌদ্দ বছরের ছোট হবো। তবুও আমার ছোট মাথা,কাঁচা মগজ দিয়ে যতটুকু আপনাকে দেখেছি,তাতে মনে হলো আপনি শহরের একজন মর্ডান মেয়েকে বিয়ে করলেই ভালো হতো। কিন্তু আপনি করলেন গ্রামের এক সাধারণ নিম্নবিত্ত ঘরের কিশোরী মেয়েকে। কেন?”
“শহরের মেয়েদের সাথে অভ্যন্তরীণ মিল হতো না আমার। তাদের মাঝে ভেজাল বেশি। আমি আগেই পরিবারকে জানিয়েছি, গ্রামের সুশ্রী স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করবো। ক্লিয়ার?”
“হুম। আচ্ছা আপনি কিসের ব্যবসা করেন শহরে?”
রাজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে উঠে। মনে মনে উচ্চারণ করে,
এই মেয়েটা উপরে উপরে যতটা বাচ্চামো,হ্যাংলামো,বোকা বোকা। ভিতরে ভিতরে ততটাই বুদ্ধিমতী ও চতুর। কিভাবে সব বিষয় মাথায় সেট করে নিয়েছে। অবশ্য আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য এমন কাউকেই দরকার ছিলো৷ যে প্রয়োজনে তার গতি পরিবর্তন করে শিখা থেকে অগ্নিশিখা হয়ে উঠতে পারবে।
রাজ বলল,
“আমার বিজনেস হলো দেশের বাইরের সঙ্গে। গার্মেন্টস রয়েছে আমার গাজীপুরে। পোশাক রপ্তানি করা হয় বিভিন্ন দেশে।”
“মাশাল্লাহ! এটাতো খুব ভালো এবং বড় বিজনেস। এজন্যই আপনার এত টাকা।”
“আর?”
” কলেজে একদিন কে যেন একটা চিরকুট দিয়েছে আমাকে। তবে তার আগে বাড়িতেও একটা পেয়েছি। আপনার সঙ্গে যেই রুমে প্রথম দেখা হয়েছে, সেই রুমের জানালা দিয়ে পড়েছে। কিন্তু দুটোর লেখার মানে ভিন্ন।”
রাজ চমকে উঠে। অক্ষিকোটর হতে অক্ষি বেরিয়ে আসার উপক্রম।
“কই দেখিতো?”
শিখা ব্লাউজের ভিতর হতে বের করে চিরকুটটি রাজের হাতে দিলো। রাজ বার তিনেক পড়লো।
“বাড়িতে পাওয়াটা?”
“সেটা তখনই ছিঁড়ে ফেলেছি।”
“কি লিখা ছিল?”
“মনে নেই। তবে খুব সাধামাটা দুটো বাক্য।”
“ওহ। এটা আমার কাছে থাকুক। এরপর হতে কেয়ারফুল্লি চলবে। আমি যেহেতু থাকি না,তাই জুবায়েরকে বলব খেয়াল রাখতে একটু। পরিক্ষা শেষেত আমার কাছেই থাকবে তুমি।”
” ও হ্যাঁ আরেকটা কথা। আপনাদের ঘরে তাবিজ,কবজ,দরবেশ, ফকিরের আসা যাওয়া আছে। এটা জানেন?”
“নাহ। মাত্র সেদিনের বিষয়টা জানি তোমাকে নিয়ে। সেটার জন্য আমি অনুতপ্ত ও ক্ষমাপার্থী তোমার কাছে।”
শিখা তার প্রথম থাকার রুমের খাটের তলার পঁচা পেঁপেটার কথা বলল রাজকে। রাজ লজ্জিত অনুভব করলো। শিখাকে শোয়া থেকে তুলে ছোট বাচ্চার মতো নিজের কোলের ভিতর বসিয়ে নিলো। দু’হাত দিয়ে কোমরের নিচে চেপে ধরলো। শিখার কাঁধে চিবুক ঠেকিয়ে ছড়া কাটার মতো করে বলল,
“ভাবছি তুমি কাঁচা আম/পড়লেই যাবে ফেটে।
ভাবনা আমার ভুল হলো।
তুমি পাকা তাল আস্ত/পড়লেও থাকো মস্ত।”
শিখা হিঃহিঃহিঃ করে রিনরিনিয়ে হেসে ফেললো।
“আর কিছু বলার আছে প্রজাপতি?”
“আপাতত নাহ।”
“তো কি বুঝলে?”
“বুঝাবুঝির কিছুই নাই। শুধু আপনার থেকে এসব জানতে মন আকুলিবিকুলি করছিলো।”
“আর কিছু জানতে মন এমন করে না?”
শিখার চিবুক নেড়ে জিজ্ঞেস করলো রাজ।
“নাহ। আপনার কিছু বলার আছে আমাকে?”
“আছে। গোপন অভিসারের কথা। আমার কেবল তোমাকে নিয়ে ঘুমাতে ইচ্ছে করে।”
“ছাড়ুন। শুধু ফাজলামো করেন। রাতের কথা রাতে বলবেন। দিনের কথা দিনে। নিচে যাই। কাজ আছে।”
শিখা রাজ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যায় নিচতলায়।
তার পরেরদিন সকালে শিখা কলেজে চলে যায়। যাওয়ার আগে রানীর রুমে প্রবেশ করে। রানী নির্দয় চোখে তাকায় শিখার দিকে।
শিখা ধীর গলায় বলে,
“ভাবি আমি অনুরোধ করতেছি আপনাকে। সমস্যার সমাধান দেন দ্রুত। আমি কাউকে বলব না। গোপন থাকবে। উনাকেও বলব না। মেজো ভাবিকেও বলব না। নিজের জীবনের দূর্ভাগ্যের সঙ্গে অন্য একজন মেয়ের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলবেন না দয়া করে। অযথা জলঘোলা করার কোন মানেই হয় না। পরে সেই ঘোলা জল আপনাকেই পান করতে হবে। মনে রাখবেন।”
শিখা চলে যায়। রানী জ্বলে উঠে দাউদাউ করে। চিন্তা করতে থাকে কিভাবে শিখাকে মেরে ফেলা যায়।
তার কিছুক্ষণ পর রাজ জুবায়েরের রুমে যায়। প্রসঙ্গ টেনে জিজ্ঞেস করলো,
“নিজামকে তুই মারলি। এটা বললি না কেন?”
“অসুস্থ ছিলাম। তাই মাথায় ছিল না। কোথায় তোর কাজ আমি করলাম বলে কৃতজ্ঞতা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করবি? তা না…”
“আমি অভিযোগ করছি? বললাম মাত্র। আচ্ছা বাদ।”
পরে রাজ পকেট হতে সেই চিরকুটটি বের করে জুবায়েরকে দেখায়। চিন্তিত সুরে বলে,
“আমাদের চেনাজানা কারো হ্যান্ডরাইটিং এটা? চিনিস নাকি?”
জুবায়ের ভালো করে চিরকুটটা পড়ে নেয়। বলল,
” চিনলাম নারে।”
“একটু চেষ্টা করিস এই ইতরটাকে খুঁজে বের করার। গেঁড়ে ফেলবো মুহূর্তেই।”
” পেলেতো শালা? অচেনা কেউ হবে। মজা করেছে। নয়তো আর দেয়না কেন? দিলে অবশ্যই জানতি। তবে কঠিন কথাগুলো। কি মায়া! কি আকুলতা!”
রাজবধূ পর্ব ৪৬
রাজ জানালা দিয়ে বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি ফেলে উঠানে। ব্যকুল স্বরে বললো,
“আমার চেয়ে এই পৃথিবীতে কোন মানব শিখাকে বেশি ভালোবাসতে পারে না।”
“এত কনফিডেন্স? যদি পারে?”
চাপাহাসি দিয়ে জানতে চাইলো জুবায়ের।
রাজ উঠে দাঁড়ায়। আত্মবিশ্বাসী সুরে বলল,
“যদি পারে। আর যদি শিখা চায়,আমি নিজ হাতে হাসিমুখে শিখাকে সেই মহাপ্রেমিকের হাতে তুলে দিবো।”
জুবায়ের চটুল হেসে বলল,
” ওরেব্বাস! তুই দেখি দানশীল হাজী মুহাম্মদ মহসিনের ছোটভাই। বেঁচে থাকো বৎস! দীর্ঘজীবী হও! দেখি, তাকে খুঁজে বের করা যায় কিনা কোন ক্লু ধরে।”