রাজবধূ পর্ব ৫৭
রেহানা পুতুল
আদুরীর মতো শিখাও বুঝতে পারল না রানির কথার মানে। কিন্তু বড়সড় কোন ক্ষতির সম্মুখীন করে দিয়েছে তাকে, এতটুকু বুঝতে শিখার কোন অসুবিধা হলো না। শিখা জমে গেলো বরফখন্ডের ন্যায়। থরথর করে কাঁপতে লাগলো অশীতিপর বৃদ্ধার মতো।
রানী জবাব দেওয়ার সময় পেল না আদুরীর। বাইরে থেকে তার ডাক পড়লো। শিখা চটজলদি করে সরে গেলো রোয়াক হতে। আদুরী ও রানী বেরিয়ে গেলো রসুইঘর হতে। শিখা অচল পায়ে রসুইঘরে প্রবেশ করলো। কাঠের জলচৌকিটা টেনে বসলো। দু’হাত দিয়ে কপালের দু’পাশ চেপে ধরলো। ঝিম মেরে বসে রইলো কিয়ৎক্ষণ। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। তাকে খেতে হবে বাঁচতে হলে। সে ভাত খেয়ে নিলো চরম উৎকন্ঠা নিয়ে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
জড়ানো পায়ে রুমে চলে গেলো। অস্থির লাগছে তার। ভেবে পাচ্ছেনা রানী কি ক্ষতি করলো তার। রানীতো বন্ধ্যা নয়। কিছুদিন আগেওতো রানী দেবর দ্বারা প্রেগন্যান্ট হলো। তাহলে তার পথের পথিক কিভাবে বানালো শিখাকে? উত্তর খুঁজে পায় না শিখা। তার কোমল চিত্তে বৈশাখী তুফান শুরু হলো। সেই তুফানের উম্মাতাল ঝাপটা ভাঙ্গচুর করে দিচ্ছে তার হৃদয়ের আনাচ কানাচ। অশান্তির অনলে সে ছাঁই হয়ে যাচ্ছে। কি মহা সর্বনাশ করলো রানী তার?
শিখা উঠে গিয়ে তার ভরসার মানুষ মতির মাকে খুঁজে বের করলো। তিনি আমগাছের কিছু কাঁচা ডাল হতে দা দিয়ে আমপাতা ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। শিখা চুপিচুপি চাপাস্বরে রানী ও আদুরীর বলা কথাগুলো বলল তাকে। রানীর শেষ কথার মানে জিজ্ঞেস করলো।
মতির মায়ের হাত থেকে ছিটকে দা খানি মাটিতে পড়ে গেলো। হাতের ডালটিও তিনি মাটিতে ঠাস করে ফেলে দিলেন। শিখার দিকে অদ্ভুত চোখে চেয়ে আতংকিত গলায় বললেন,
” হায় আল্লাগো! কাম সারছে। করলোটা কি বান্দীর মাইয়া। আমি বহুত পুরানা হইলেও, এই ঘরের কামের বেডি। তাই সক্কল সময় চুপ থাহি। কিন্তুক যা ঘটতাছে,রটতাছে। তার বেবাক কিছুই আমি দেখতাছি,শুনতাছি। কি করুম জবান নাই আমার। হুনো মা, তুমি কাইলই কলেজে যাওনের কালে রাজ বাবাজিরে টেলিফোন কইরা জানাও। আমারে যেমনে যা কইলা,ঠিক তেমনেই রাজেরেও কইবা। হইয়া যাক এইবার খু*নাখু*নি। তালুকদারের গরিমার ভিটা ভাইসা যাক রক্তের বন্যায়। দরকার হইলে এই বাড়ি ছাইড়া বনবাসে চইলা যামু। তবুও এসব অনাচার,জুলুম আর সহ্য করুম না। সকল কিছুর সাক্ষী দিমু। তুমি তাগোরে বুঝতে দিও না তুমি যে তাগো কথা শুইনা গ্যাছো।”
শিখা ভয়ানকভাবে ঘাবড়ে যায় মতির মায়ের অভিব্যক্তি ও উত্তেজনাকর কথাগুলো শুনে। সে হতভম্ব গলায় জানতে চায়,
” উনাকে অবশ্যই জানাবো কাল। তাদেরকেও কিছু জিজ্ঞেস করব না। কিন্তু কি হয়েছে খালা? আমাকে বলেন? আর আপনার কোন সাক্ষী দিতে হবে না। কোথাও যেতে হবে না আপনার। এই পরিবারে আমার অর্ধেক শক্তি আপনি,আমার শ্বশুর ও ছোট চাচী। আপনাদের সততা, নীতিপরায়নতা,নিরপেক্ষ বিচার,মিথ্যার সঙ্গে আপোষ না করা আমার ভিতরে অঢেল প্রাণশক্তি যোগায়। আর বাকিটা উনি ও জুবায়ের ভাই।
তাই আমি চাই শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনি এই সংসারের একজন হয়ে থাকেন। অন্তত আমার জন্য আমার পাশে থাকেন। আপনিই ত বললেন জোছনার মতো আমি আপনার আরেক মেয়ে।”
শিখার অধিকারসুলভ যৌক্তিক কথায় আটকে যায় মতির মা। শুধু বিজ্ঞের ন্যায় উত্তর দেয় শিখার জিজ্ঞাসার।
“আমি পীর আউলিয়া না। সঠিক কইরা কইতে পারুম না। এতবড় বিষয় আন্দাজ কইরা কওন ঠিক হইবো না। মনে হয় তার মতন বিধবা কইরা দিবো তোমারে। নাহ,মনে হয় এইটা হইব না। রাজ তার স্থানে সহি সালামতেই আছে। তাইলে কি হইতে পারে? ইয়া মাবুদ তুমি রহম করো এই মাইয়াডার উপরে। রহম করো।”
শিখা বুকে হাত দিয়ে মাগো ! বলে মৃদু আর্তচিৎকার দিলো। মাটির উপর বসে পড়লো ভিখারির মতো। কাঁইকুঁই করতে লাগলো। মতির মা শিখাকে সাহস দিলো। কঠোরভাবে বলল,
“এইভাবে ভাইঙ্গা পড়লে হগলে আরো গুঁড়ায়া দেওনের সুযোগ পাইবো। উইঠা যাও। শক্ত গাছের মতো সোজা হইয়া খাড়াও মাইয়া। নিজের কক্ষে চইলা যাও। মাথা খাটায়া বুদ্ধি বাইর করো, ক্যামনে কারে শায়েস্তা করবা তোমার উপরে জুলুমকারীগো।”
শিখা সজনে গাছ পেঁচিয়ে ধরে হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে আসছে তার প্যারালাইজড রোগীর ন্যায়। রুমের ভিতরে নিজের উজ্জীবিত, সুস্থ পা দুটোকে টেনে নিলো বুড়ো মানুষের মতো করে। দরজা চাপিয়ে দিলো। ধড়াম করে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়লো। সেই রাতে শিখা নৈশভোজ সারল না। অভুক্ত অবস্থায় বিনিদ্র রজনী পার করলো। শিখার মানসিক বিপর্যয় তাকে বিছানায় ফেলে দিলো। সে বের হতে পারছে না। কলেজেও যাওয়া হচ্ছে না। রাজকে চিঠি লিখেও কাজ নেই। চিঠি পেতে চার পাঁচদিন লেগে যাবে। তারচেয়ে যেদিন কলেজে যাবে,সেদিনই জানাবে। বাকি হিসাব ত সেই নিবে রানি ও আদুরীর থেকে।
দু’দিন পর শিখা কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলো বিষন্ন মনে। বাজারে গেলো ফোন ফ্যাক্সের দোকানে। রাজকে টেলিফোন করলো। রাজ রিসিভার কানে তুলেই,
“হ্যালো..হু আর ইউ? নওশাদ স্পিকিং।”
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। আমি শিখা।”
আকস্মিক শিখার মোলায়েম স্বর রাজের কর্ণগোচর হতেই সে ভিমরি খেলো গাড়ির ব্রেক ফেলের মতো।
“ওহ মাই বাটারফ্লাই! কেমন আছো তুমি?”
“ভালো নেই। খুব খারাপ।”
নিস্তেজ গলায় উত্তর দিলো শিখা।
” কেন? তোমার দূরে থাকা ফড়িংটার কথা মনে পড়লো বুঝি? আমিতো চাইলেই আসতে পারি। কিন্তু তোমার স্টাডির কথা ভেবে যাচ্ছি না। শিক্ষা জীবনে সবচেয়ে হার্ড হলো এই ইন্টারমিডিয়েট। একদিকে যেমন চ্যাপ্টার বেশী,অপরদিকে পড়াও কঠিন। এবং টাইম ডিউরেশনও কম। বুঝলে?”
ফ্যাক্সের দোকানে মানুষের আনোগোনা। একটু পর পর দোকানের স্টাফ যুবক ছেলেটা ঘুরেফিরে শিখার সামনে আসছে। সুন্দরের আকর্ষণ চুম্বকের মতো। সেজন্যই হয়তো সে আসছে। লুকোচুরি না করে সে সরাসরি শিখার মুখের দিকে ড্যাবড্যাব চোখে তাকাচ্ছে। শিখার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। ঘরের এত ইন্টারনাল বিষয় লোকাল প্লেসে বলা সমীচীন হবে না। তাই শিখা ক্লান্ত স্বরে সংকেত দিয়ে রাজকে বলল,
“এখানে সব বলতে পারছি না। আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত! আপনি জরুরীভাবে বাড়ি আসুন। নয়তো কোন অঘটন ঘটলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবেন না।”
বিচক্ষণ রাজ উপলব্ধি করতে পারলো, বিষ মিশানোকারীকে শিখা মনে হয় শনাক্ত করতে পেরেছে। রাজ উম্মাদের মতো হয়ে গেলো শিখার প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পেরে। উতলা কণ্ঠে বলল,
“প্লিজ শিখা,উল্টাপাল্টা কিছু করো না। আমি আসছি। তুমি কলেজে যাও। নিজের যত্ন নিও। টাইমলি খেয়ে নিও।”
শিখা নিরুত্তর। রাজকে কিছু বলল না আর। খট করে রিসিভার রেখে দিলো। ফোনের বিল মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো। রাজ ভীষণ মর্মাহত হলো। তবুও শিখাকে ভুল বুঝল না। বরং গোপনে আওড়ালো,
“আহা আমার গাঁয়ের বধূ। এই দূর্ভাগার জীবনে এসে তুমি নিজেও কত দূর্গতি পোহাচ্ছো। ক্ষমা করো আমায়। ক্ষমা করো। এই শহরে এনে তোমাকে এক সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী বানিয়ে সুখী করবো আমি।”
তার পরের রাতেই রাজ বাড়ি চলে আসলো। জুবায়ের ঘরের লোহার গেটের তালা খুলে দিলো। রাজ কাউকেই ডেকে তুলল না। সে ভীনদেশী রাজকুমারের মতো ঘুমন্ত শিখার রুমের বদ্ধ দরজায় উপরে হাত বুলিয়ে দোতলায় চলে গেলো নিজকক্ষে। হাট করে দরজা খুললো। ঘুমিয়ে পড়লো সঙ্গীহীন শূন্য বিছানায়।
রাজ সকালে নিচে নেমে এলো। তাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো ঘরের সবাই। খুশী হলো মতির মা ও শিখা। সে শিখার রুমে প্রবেশ করলো। ভিতর হতে দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিলো। কপাটে ঠেস মেরে দাঁড়ালো। দু’বাহু মেলে ধরে তার অপ্সরা বধূকে চোখের পাতার ইশারায় আহবান করলো বাহুবন্দী হওয়ার জন্য। শিখা ঠায় বসে আছে। একচুলও নড়ল না। রাজ দুঃখ পেলো মনে। তবুও খাটে গিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো শিখার পাশ ঘেঁষে। শিখাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো সোনালু লতার ন্যায়। শিখার মসৃণ কোমরে হাত রেখে কপালে,গালে,ঘাড়ে কয়েকটি উষ্ণ চুমু খেলো। শিখা নিস্প্রভ! নিস্পন্দ! জড়বস্তুর ন্যায় মাথা এলিয়ে রাজের কৃষ্ণকায় লোমশ বুকে পড়ে রইলো। রাজের স্পর্শ তাকে পুলকিত করল না। শিহরিত করল না। রাজ উপলব্ধি করতে পারলো। সে ভারি অথচ নরম গলায় শিখার চিবুক উঁচিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
” আমার কি অপরাধ? আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছো? গত পরশু রিসিভার রেখে দিলে আমাকে না বলেই। এখন ডাকলাম উঠলে না। এসে আদর করলাম,কিন্তু তুমি নির্জীব! নো রেসপন্স! অথচ তুমি জানো আমি তোমাকে উজাড় করে কতটা চাই। বাদ দাও। কেন জরুরী তলব বাড়ি আসার জন্য? বলো?”
“নিজে ভালো না থাকলে অন্যকে ভালো রাখা যায় না।”
“আমি অন্যজন? শিখা কি বলছ এসব?”
“এটা একটা উদাহরণ দিয়েছি মাত্র। আমার ভিতরটা প্রায় মৃত আজ। আপনার সুবিধামতে ঘরের সবাইকে এক করেন আমার হয়ে। সবার সামনে আমি বিষ মিশ্রিতকারীদেরকে মুখোশ উম্মোচন করতে চাই।”
বিপন্ন মুখে বলল শিখা।
“দের? বহুবচন। তারমানে একজন নয়? তারা কারা?”
চোখ কপালে তুলে বলল রাজ।
“হুম। একজন নয়। কারা? একটু চিন্তা করলে আপনিই বের করতে পারবেন। আমি কলেজে যাবো কিছুক্ষণ পর। অংকের কোচিং আছে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে। ক্লাসের পর থাকে ইংরেজির। তাই সন্ধ্যার পর হলে ভালো হয়।”
রাজ বিছানা থেকে মেঝেতে নেমে গেলো। হাঁটুগেঁড়ে বসলো। শিখার দু’পায়ের পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। আরক্ত চোখে মিনতি স্বরে বলল,
“প্রাণ থাকতে প্রিয়া মোরে রেখোনাকো দূরে
এই প্রণতি করি আমি আজ তোমার চরণে।”
“কি করছেন? মুখ সরান পায়ের উপর থেকে। আমি একটি ন্যানো সেকেন্ডের জন্যও আপনাকে দূরে রাখিনি। আর রাখবো না। মন মন্দিরে রোজ সন্ধ্যায় পূজো দিও দুই অক্ষরের রাজ নামটাকে স্মরণ করে।”
রাজ উঠে দাঁড়ালো। শিখার উজল মুখখানিতে অপলক চোখে চেয়ে রইলো। কিছু না বলে রুম হতে প্রস্থান নিলো।
বৈঠকখানায় সবাই উপস্থিত রয়েছে জুবায়েরসহ। রাজ সকালেই জুবায়েরকে বলে রেখেছে দোকান থেকে সন্ধ্যার পর যেন বাড়িতে চলে আসে। রানী দিনে কয়েকবার ভেবেছে বাবার বাড়ি কিংবা অন্যত্র চলে যাবে কোন অজুহাত দেখিয়ে। রাজ অসময়ে বাড়িতে আসা মানেই ভূমিকম্প। কিন্তু কাহিনীটা কি? সেটা কল্পনা করতে ব্যর্থ হলো রানী। তবুও গেল না এই ভেবে,এতে তার অপরাধ আরো প্রকট হয়ে ধরা দিবে সবার কাছে।
রানী ও আদুরীর সেদিনের বলা কথাগুলো সবাইকে জানালো শিখা স্পষ্ট ভাষায়। শুনে সবার মুখাকৃতি বিবর্ণ হয়ে গেলো। সুফিয়া মাথা হেঁট করে বসে রইলো। এমনিতেই সেদিনের পর হতে সে নুইয়ে পড়েছে রোদে পড়া পুঁইয়ের লতার মতো।
সে ভাবছে তার কথা। শিখা কয়েকদিন আগে তাকে যা বলল, তা যদি এখন সবার সামনে প্রকাশ্যে বলে দেয়,তাহলে পরিবারের অন্যদের কাছে তার সম্মান ও গুরুত্ব একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। কেননা তার এসবকিছু ঘরের সবাই জানে না। তিনি মনে মনে আল্লার নাম জপতে লাগলেন। বড় খতমের দোয়া পাঠ করতে লাগলেন।
রানী ও আদুরির গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। ভয়ে রুহ বেরিয়ে আসার উপক্রম। তালুকদার উঠে গিয়ে হাতের লাঠিটি দিয়ে আদুরীকে বেদম প্রহার করতে লাগলেন। রাজ বড় বড় পা ফেলে বিদুৎগতিতে উপরে চলে গেলো। মিনিট না হতেই নিচে নেমে এলো। রাজের হাতে বড় একটি ধারালো চাকু। সে বন্য পশুর ন্যায় রানিকে হ্যাঁচকা টানে মেঝেতে ফেলে দিলো। রানির গলায় তার পায়ের চামড়ার স্যান্ডেল দিয়ে পাড়া দিলো। হাতের ছুরিটা রানির গলার নিচের মাঝ বরাবর খাড়াখাড়িভাবে ধরলো। সুফিয়া,আমেনা,সুমনা,ডলিসহ অন্যরা রাজকে কিছু বলতে গিয়েও থামতে হলো। রাজ দানবীয় গলায় বলে উঠলো,
“খবরদার বলছি! কারো কোন কথা শুনতে আগ্রহী নই আমি।”
রানি কথা বলতে পারছে না। দু’হাত দিয়ে অন্ধের মতো রাজের দু’পা হাতড়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইলো। পারলে শিখার পা চাটে তখন সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য।
“প্রাণ ভিক্ষা পাবি। সত্যিটা স্বীকার কর কোন লুকোচুরি না করে। কেন সেদিন বললি শিখা বেঁচেও লাভ নেই? তোর পথের পথিক করে দিলি?”
রাজ নিজের পা ও ছুরি সরিয়ে নিলো রানির গলা হতে।
রানী কোঁকাতে কোঁকাতে বলল,
শিখা যদি তাকে হুমকি না দিতো বাচ্চার বিষয়ে, তাহলে সে খালেদকে ম্যানেজ করতে পারতো। সেও একটা সন্তান পেতো। তালুকদার পরিবারে তার অবস্থান শক্ত হতো। কিন্তু পারেনি শিখার জন্য। তাই শিখাও যেন কোনদিন মা হওয়ার স্বাদ না নিতে পারে সেজন্য বিষ মিশিয়ে দিলো ভর্তায়।
রাজ হুংকার দিয়ে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করলো রানীকে। এবং মুহূর্তেই রানির হাত টেনে ধরলো। এক কোপে চুরি দিয়ে রানির ডান হাতের কবজি আলগা করে ফেলল।
ক্রোধে গরগর করতে করতে বলল,
রাজবধূ পর্ব ৫৬
” যা, সত্য বলার জন্য প্রাণে বেঁচে গেলি। কিন্তু যেই হাত কারো জীবনের জন্য হুমকি হয়ে কাজ করে,সেই হাত রাখা পাপ। পাপিষ্ঠর হাত জিইয়ে থাকতে পারবে না তালুকদার পরিবারে। ”
রানী গগন কাঁপিয়ে আর্তনাদ করতে লাগলো মেঝেতে গড়াগড়ি করতে করতে।
রাজের এত বিভৎস রূপ পরিবারের কেউই এর আগে দেখেনি। জুবায়ের ভাবছে অন্যকিছু। রাজ তার দিকে তাকালে সে শিখাকে দেখিয়ে ইঙিতে অর্থপূর্ণ কিছু বোঝালো।
রাজের উত্তেজিত মস্তিষ্ক বুঝতেই পারল না,জুবায়ের তাকে কি বোঝাতে চাচ্ছে।