রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫০

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫০
রিক্তা ইসলাম মায়া

আতঙ্কিত ভঙ্গিতে পায়ের কাছটায় তাকাতে দেখল শশী দু’হাতে মায়ার পা চেপে বিছানা কপাল ঠেকিয়ে ফুপাচ্ছে কান্নায়। আতঙ্কিত মায়া তাড়াহুড়োয় শশীর হাত থেকে নিজের পা ছাড়াতে চেয়ে বলল…
‘ আপু কি করছেন? উঠে বসুন। পা ছাড়ুন প্লিজ!
শশী সেইভাবে মায়ার পায়ে হাত দিয়ে বসে। দূর্বল শরীরে কান্নার শব্দও নিশ্চুপ। মানুষের জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত কিছু ধাক্কা যেমন ভিতর থেকে ভেঙ্গেচুরে গলিয়ে দেয় মানুষকে, ঠিক তেমনই শশীর মন মস্তিষ্ক দুটোই এই মূহুর্তে ভেঙ্গেচুরে ঘায়েল হয়ে আছে। কাঁচের টুকরো নেয় খণ্ডিত হয়ে আছে শশীর সাজানো গুছানো স্বপ্ন গুলো। বুকফাটা আর্তনাদে সেইভাবে লুটিয়ে পরে শশী বলতে লাগল…

‘ সবই তো আমার ছিল মায়া তাহলে আমার জায়গায় তুমি কিভাবে এসে গেলে? আমার মানুষটা তোমার কিভাবে হয়ে গেল? এসব তো আমার হওয়ার কথা ছিল তাই না? তাহলে আমি ভুল করলাম কোথায়? এই বাড়ি! এই ঘর! এই মানুষগুলো সবই তো আমার আপনজন তাহলে তোমার কিভাবে হল? জম্ম থেকে বড় হলাম এই বাড়িতে। ভালোও বাসলাম এই বাড়ির ছেলেকে। আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হয়েছে এটা আমার শশুর বাড়ি। রিদ খান আমার ভবিষ্যত স্বামী। রিদের জন্য কখনো কোনো খারাপ রিলেশনে জড়ায়নি। কলেজ লাইফে আমার একটা ক্লাসমেটকে আমার ভালো লাগতো। ছোট ছিলাম, আবেগী বয়সে প্রায় ছয়মাস প্রেমও করেছিলাম কিন্তু কখনো কোনো খারাপ কিছুতে জড়ায়নি। তবে একটা সময় যখন বুঝতে পারলাম আমি আসলে রিদকে ছাড়া অন্য কাউকে কখনো ভালোবাসতেই পারবো না তখন থেকে রিদকে ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষের দিকে চোখ তুলে তাকায়নি পযন্ত। আমার অনেকটা বছরের সাজানো গুছানো স্বপ্নে তোমার আগমন ছিল ধ্বংসে নেয় মায়া। ঠুকনো হাওয়ায় ঝড়ে গেল সব। আজ আমি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব শূন্য হয়ে গেলাম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শশীর কান্নায় মায়া অপরাধ বোধ করলো। সে সত্যি কারওর সাজানো গুছানো স্বপ্নে ঢুকতে চাইনি। আর না শশীকে কষ্ট দিতে চেয়েছে। মায়া যদি বুঝতো ওর স্বামীকে খোঁজা পিছনে শশী আজকের মতোন কষ্ট পাবে তাহলে সে কখনোই রিদের খোঁজ করতো না। বরং অনেক আগেই এই সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে যেত। মায়াতো নিজেও দেখেছিল রিদের প্রতি শশীর কেয়ারনেস। কতো লেবু পানি খাওয়াত রোজ। তখন তো মায়া রিদকে চিনতো না স্বামী স্বরুপ। মায়ার ভিষণ মায়া হলো শশীর জন্য। কান্নাও পেল তীব্র অপরাধ বোধে। মায়া দু’হাতের মুঠোয় শশীর হাত নিজের পা থেকে সরাতে চেয়ে বলতে লাগল….
‘ আপু প্লিজ এমন বলছেন কেন?আমি সত্যি আপনার কষ্টের কারণ হতে চাইনি। আমাকে মাফ করবেন সবকিছুর জন্য। আপনি প্লিজ উঠে বসুন।

মায়ার কথায় শশীর মাথা তুলে তাকাল। অনেক সময় নিয়ে কান্নার দারুণ মায়ারও চোখ মুখ ফুলে আছে। শশী মায়ার চোখের দিকে তাকাতেই গাল ছুয়ে টুপ করে অশ্রু জড়াল নিচে। কষ্টয়িত ভেজা গলায় শশী ফের বলল…
‘ আমার স্বপ্ব ভাঙ্গা কষ্টে বুকটা হাহাকার করছে মায়া। মনে হচ্ছে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। সবত্র হারিয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছি। প্লিজ মায়া আমার সবকিছু আমাকে ফিরে দাও না। আমি আমার সবকিছুর জন্য তোমার কাছে ভিক্ষা চাইছি, আমার স্বপ্ন, আমার ভালোবাসা, আমার রিদ, আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমি বাঁচতে পারব না রিদকে ছাড়া। প্লিজ দয়া করো আমার উপর। আমার আর রিদের মাঝে তুমি এসো না। আমাদের জীবন থেকে চলে যাও প্লিজ। আমি তোমার পায়ে পরছি। প্লিজ দয়া করো।
শশীর হাহাকারের কান্নায় মায়া কেঁদে উঠলো। ওহ কিভাবে ওর স্বামীকে ছাড়া থাকবে? মায়াতো স্বামী চেহেরা না দেখেই ভালোবেসেছিল তাহলে আজ কিভাবে অন্য কারও জন্য সেই স্বামীকে ছেড়ে দিবে? মায়া বুঝতে পারছে শশীর অনেকটা বছরের সাজানো স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে কিন্তু তাই বলে মায়া তো এখানে অপরাধী নয়। রিদ খান মায়ার প্রেমিক নয় যে ব্রেকআপ করে নিবে। মায়া রিদের বিবাহিত বউ। যেখানে প্রেমের মতোন চাইলেই ব্রেকআপ করা যায়না, তালাক দিতে হয়। মায়া নিজের জীবন থাকতে কখনোই তালাক শব্দ নিজের জীবনে ছড়াতে দিবে না। মায়া শশীর দু’হাত মুঠোয় নিয়ে বুঝাতে চেয়ে বলল….

‘ এসব কি বলছেন আপু? আমি বিবাহিত! আমার উনার সাথে বিয়ে হয়েছে। আপনি আমার কাছে আমার স্বামীকে ভিক্ষা চাইছেন যেটা আমি দিতে অক্ষম। প্রেমিক হলে ব্রেকআপ করে নিতাম কিন্তু স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ব্রেকআপ হয়না। আমি পারব না আপনার কথা রাখতে।
মায়ার কথায় শশী দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আকুতি স্বরে বলল…
‘ তোমার সামান্য দুই দিনের পরিচয়ে বিয়ের জন্য রিদকে ছাড়তে পারবে না তাহলে ভাবো, আমার বিশ বছরের স্বপ্ন ভেঙ্গে তার উপর তুমি ঘর বানাচ্ছো সেটা আমি কিভাবে মেনে নিব?
শশীর কথাটা মায়ার পছন্দ হলো না। মায়া মোটেও কারণ স্বপ্ন ভেঙ্গে নিজের ঘর সাজাচ্ছে না। বরং রিদকে মায়া চিনতোও না। আর না রিদ চিনতো মায়াকে। দুজনের হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বিয়ে হয়েছিল। কেউ নিজ থেকে চাইতো না এই বিয়েটাকে। পরিস্থিতির দায়ে কিংবা ভাগ্যে একত্রে লেখা ছিল বলে দুজনের বিয়ে হওয়ার দুই বছর পরও ওরা একে অপরকে খোঁজে পেয়েছে। এখানে ওরা কেউ ইচ্ছাকৃত কিছুই করেনি বরং শশী যেটা করছে সেটা ইচ্ছাকৃত। মায়া শশীকে বুঝাতে চেয়ে বলল…

‘ আমি আপনার স্বপ্ন ভেঙ্গে নিজের ঘর বানাইনি আপু। আমার ভাগ্যের যে ছিল তার সাথেই ঘর বানানোর চেষ্টা করছি। বরং আপনি জোর করে সেটা পেতে চাচ্ছেন যেটা আপনার ভাগ্যে নেই। আপনি মানুষকে মন দিয়েছেন।
মায়ার কথায় শশী হা করে নিশ্বাস নিলো। অতি কষ্টে বুকটা হাহাকার করছে ওর। নিশ্বাস আঁটকে আসছে বারবার। এতো বছরের যত্ন গড়া ভালোবাসায় কতো সহজেই মায়া বলে ফেলল শশী ভুল মানুষকে ভালোবেসেছে এতোদিন। যে ভাগ্যে ছিল না তাঁকে মন দিয়েছে। আসলেই কি তাই? যে ভাগ্যে থাকে না সে কেন মনে বসত গড়ে? কেন? শশী মায়ার চোখে চোখ রেখে দুই নয়নের অশ্রু ফেলে অসহায় গলায় মায়াকে বলল….
‘ আমি শূন্য ! তুমি পূর্ণ। আমি হারিয়েছি, তুমি পেয়েছ! আজ আমি কাঁদছি হয়তো একদিন চুপ হয়ে যাবো এইভেবে আমার মানুষটা তোমার, আমার স্বপ্ন তোমার! আমার ভালোবাসা তোমার, তোমার দুঃখ আমার।
শশীর চোখে তার অসহায়ত্ব প্রকাশ পেল। ভালোবাসা হারানোর তীব্র বেদনা দেখা গেল। মায়া শশীর দু’হাত ধরে রাখা অবস্থায় কিছু বলতে চাইল কিন্তু তার আগেই ভেসে আসল কারণ গম্ভীর কন্ঠ….

‘ নাটক করা শেষ তোর? নাকি আরও বশীকরণ করা বাকি আছে?
রিদের কথায় তৎক্ষনাৎ ধরফরিয়ে ঘুরে তাকাল জুই ও মায়া। শশীর তেমন ভাবাবেগ দেখাল না। বরং রিদের কন্ঠে ব্যর্থ হয়ে নেতিয়ে পরলো বিছানায় কপাল ঠেকিয়ে। মায়া জুই রিদকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিকটা ভয় পেল বিশেষ করে মায়া। একবার শশীর দিকে তাকাচ্ছে তো অন্যবার ঘুরে দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রিদের দিকে তাকাচ্ছে। অফিসিয়াল গেটআপে দাঁড়িয়ে রিদ, হয়তো সবে বাহির থেকে ফিরেছে। গায়ের কালো কোটটা বামহাতের মুঠোয় চেপে ডান হাত পকেটে গুঁজে দাঁড়িয়ে শশীকে উদ্দেশ্য করে উক্ত কথা গুলো বলল সে। মায়া রিদকে দেখে চুপ করে যেতেই রিদ কক্ষের ভিতর প্রবেশ করতে করতে হাতে কোটটা পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা আসিফকে দিতে দিতে ফের শশীর উদ্দেশ্য বলল রিদ….

‘ হারায় তো তাঁরা যার পেয়েছিল। তোর কি ছিল যেটা হারানোর এতো কষ্ট পাচ্ছিস তুই?
রিদের কথায় শশী নিরুত্তর হয়ে বিছানায় মুখ গুঁজে ফুপাচ্ছে। মায়া একবার শশী অন্যবার রিদের দিকে তাকাচ্ছে। রিদ শশীকে উত্তর করতে না দেখে সেও আর কথা বাড়াল না। এমনিতে সকালে ঘটনাটা নিয়ে মেজাজ খারাপ তার, এখন আবার বাড়ি ফিরে শশীকে মায়ার রুমে দেখবে সে ভাবিনি। মায়া শশীর দুজনের কথায় রিদ শুনেছে। হয়তো রিদের আসতে আরও একটু দেরি হলে এখানে কি ঘটতে পারতো সেই ধারণা আছে রিদের। প্রথমে শশী মায়াকে নিজের কথায় ইমোশনাল করে বুঝাতে চাইতো রিদের জীবন থেকে চলে যেতে। বরাবরই মায়া কথা না শুনলে দ্বিতীয় পদক্ষেপ নিতো শশী। যেটার ধারণা হয়তো মায়ারও নেই। শশী মেন্টাল পেশেন্ট! সেটা জানার পরও বাড়ির সবাই কিভাবে শশীকে একা ছেড়ে দিল ওর বউয়ের ক্ষতি করতে? রিদ শশী উপর নিজের মেজাজ দেখাল না। পাগলের সামনে কি বা মেজাজ দেখাবে সে? তারচেয়ে বরং তার বউকে নিয়ে সে-ই চলে যাবে এই বাড়ি থেকে। এই বাড়িতে তার বউ আপাতত সেইফ না। রিদ দক্ষ হাত বাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ মায়ার হাত টেনে বিছানা থেকে নামাতে নামাতে আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলল….

‘ আসিফ জুইকে ওদের বাসায় দিয়ে আয়।
‘ জ্বি ভাই।
আসিফ তৎক্ষনাৎ সম্মতি জানাতেই রিদ মায়ার হাত চেপে চলল দরজার দিকে। রিদের পিছন পিছন আসিফও জুইকে নিয়ে বেড়িয়ে আসল শশীকে কক্ষে রেখে। রিদ যখন মায়াকে নিয়ে নিচের ড্রয়িংরুম পার হয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছিল তখন সেখানে খান বাড়ির সকলেই উপস্থিত ছিল। শশীর মা সালমা বেগমও ছিলেন। তিনি রাগে ফুঁসতে থাকেন রিদ মায়াকে নিয়ে বেড়িয়ে যেতে দেখে। মুক্তা হেনা খানের সঙ্গে ছিল সেও দেখেছে মায়াকে নিয়ে রিদ আর আসিফের সঙ্গে জুই বেড়িয়ে যেতে। সকালে ঘটনা পুনরায় তাজা হলো। রিদের সামনে কেউ কিছু বলতে না পারলেও মুক্তাকে কেউ ছাড়লো না এবার যা-তা শুনাতে। শেষ পযার্য়ের সালমা বেগম হাইপার হয়ে যান শশী যখন মায়ার রুম থেকে নিচে এসে সবার সামনে আবারও অজ্ঞান হয়ে পরলো তখন। মেয়ের অবস্থা খারাপ দেখে রাগে হিতাহিত অজ্ঞ হয়ে তিনি তেড়ে যান মুক্তাকে মারতে। ছোট বোনকে না পেয়ে বড় বোনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করতে চাইলে হেনা খান আর আরাফ খান সেই যাত্রায় বাঁধা দেয় সালমা বেগমকে।

অস্থির উত্তেজিত পরিস্থিতিতে ফাহাদ তখন শশীকে কোলে নিয়ে রুমে দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ সালমা বেগমকে ঐভাবে মুক্তা উপর হামলে পরতে দেখে সেও মূহুর্তে থমকে দাঁড়ায় জায়গায়। কয়েক সেকেন্ড থমকানো অবস্থা গেল ফাহাদের। হুসে ফিরেই শশীকে নিয়ে উপরে না গিয়ে তৎক্ষনাৎ সোফায় ফেলে সেও রাগের বশে মুক্তাকে নিয়ে বেড়িয়ে গেল সোজা। দোষী যারা তাদেরকে কেউ কিছু না বলে সবাই মুক্তাকেই কেন দোষ দিচ্ছে? মুক্তাকে কি ওর বোনকে বলেছিল যে রিদ খানের সঙ্গে গিয়ে বিয়ে বসতে? সবার মতোন মুক্তাও তো আজ প্রথম শুনলো মায়ার বিয়ে করেছে সেটা। তাহলে সবাই কেন মুক্তাকে হেনস্ত করছে এর জন্য? ওর কি দোষ এখানে? সাহস থাকলে গিয়ে রিদ খান বা তার বউকে গিয়ে প্রশ্ন করুক কেন তাঁরা বিয়ে করেছে?

সেটা না করে সবাই ফাহাদের বউয়ের দিকে আঙ্গুল তুলছে। ফাহাদ মুখ ফুটে কিছু বলে না বলে সবাই কি ওর ভদ্রতা সুযোগ নিবে ওর বউয়ের উপর দিয়ে? তাহলে ফাহাদ কিসের সপুরুষ হলো যদি সে তার বউয়ের হিফাজতই করতে না পারলো? তাই ফাহাদ ঠিক করলো এই পরিবেশে আর নয় সে আজ এই মূহুর্তে মুক্তাকে নিয়ে ঢাকা চলে যাবে এখানে আর নয়। রিদ মায়াকে নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে বসতেই আসিফ জুইকে নিয়ে উঠলো অপর গাড়িতে। পরপর দুটো গাড়ি বেড়িয়ে যেতেই ফাহাদ নিজেদের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেল মুক্তাকে নিয়ে। অসহায় অপমানিত হওয়া মুক্তা তখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে তীব্র অপমানে। আজ পযন্ত ওর মা-বাবা কেউ ওর গায়ে হাত তুলেনি শত অন্যায়ের পরও। এমনকি এতোদিনের রিলেশনে ফাহাদ পযন্ত ওর গায়ে হাত তুলা তো দূর উচু গলায় দু’টো কথা পযন্ত বলেনি। সেখানে মায়া জন্য নিজের শশুর বাড়িতে ওকে আজ কতো অপমানিত হতে হলো, গায়ে হাত তুলার নবাত পযন্ত হয়ে গেল। এই সবই হয়েছে মায়ার জন্য। মায়া কিভাবে পারলো ছোট বোন হয়ে মুক্তাকে এই পরিস্থিতিতে ফেলতে?

নিশ্চুপ উদাস ভঙ্গিতে চুপচাপ নত মস্তিষ্কের বসে মায়া। রিদ সামনে তাকিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে দুই তিনবার চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিল নত মস্তিষ্কের মায়াকে। সে সমাবেশ থেকে সোজা বাড়ি গিয়ে ছিল তাই ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ পাইনি। গায়ে সকালের সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট এখনো ইন করা। দু’হাতের শার্ট কুইন অবধি টেনে ভাজ করা। বামহাতে ঘড়ি খোলে ফোনের সাথে গাড়ি ডেস্কের উপর রাখা।। দক্ষ হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরানোতে দু’বাহু শক্ত পেষি ফুলে শার্ট ছিড়েখুঁড়ে যেন বেড়িয়ে আসতে চাইছে। মায়া দুই একবার আড়চোখে রিদকে দেখে পুনরায় নিচে তাকাল। রিদকে কথা বলতে না দেখে কোলের উপর দুহাতের দিকে তাকিয়ে অনেক সময় পর মিনমিন গলায় মায়া বলল…

‘ শশী আপু মনে হয়…
রিদ মায়ার কথাটা শেষ করতে না দিয়ে শক্ত গলায় বলল….
‘ কার কি মনে হলো সেটা আপনার দেখার দরকার নেই ম্যাডাম। আপনার জামাই কি চাই সেটা দেখেন শুধু। আপনার জীবনের লক্ষ শুধুমাত্র আপনার জামাই হবে অন্য কিছু নয়। যতদিন আমি বেঁচে আছি, আমার থেকে আপনাকে আলাদা করার সাহস কারও বাপেরও নাই। যে আপনার দিকে আঙ্গুল তুলবে আমি তাকে সোজা উপরে টিকেট ধরাই দিব রিত। আমার তুমি ছাড়া চলবে না একদমই চলবে না। আই নিড ইউ! এন্ড আই মিন ইট!
রিদের কথায় মায়া চুপ করে গেল। মায়া জানে এরপর কি হবে। আজকে যা হয়েছে নিশ্চয়ই এতক্ষণে মায়ার পরিবারের সেই খবর পৌঁছে গেছে? আচ্ছা মায়ার পরিবার কিভাবে রিয়েক্ট করবে এসব ব্যাপারে? যতকিছু হোক মায়া ওর স্বামীকে কোনো কিছুর জন্য ছাড়বে না। বিয়েতো ওরা অনেক আগেই করে ফেলেছে। ভুল যেহেতু হয়েছে তাই দরকার হলে মায়া সবার পায়ে পরে থাকবে, ক্ষমা চাইবে, তারপরও স্বামীর সঙ্গ ছাড়বে না ওহ। মায়া ভয়ে ভয়ে রিদ থেকে জানতে চেয়ে বলল…

‘ আমাদের বাড়িতে মনে হয় এতক্ষণে বিয়ের খবরটা পৌঁছে গেছে তাই না? আপনি কিছু জানেন এই ব্যাপারে?
রিদ স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলল….
‘ খবর না পৌঁছালেও পৌঁছে যাবে দূত, আমি পৌছাব সেই খবর। আজ থেকে তুমি আমার সাথে থাকবে। তোমার কলেজের ট্রান্সফার ঢাকা করাব। বি রেডি! প্রস্তুত হও সবকিছুর জন্য।
রিদের ইঙ্গিত মূলক কথায় মায়া আতঙ্কে উঠলো। মায়া মোটেও প্রস্তুত নয় দুজন একত্রে থাকার জন্য। সেজন্য মায়া আতঙ্কিত ভঙ্গিতে আপত্তি জানাতে চেয়ে বলল….
‘ কি বলছেন এসব? আমি পারব না।
‘ তোমার মতামত চাইনি। আমার ডিসিশন জানিয়েছি।
‘ প্লিজ…
‘ স্টেআপ!

রিদের ধমকে মায়া গাল ফুলিয়ে বসল। রিদকে আর রাগাতে চাইল না সে। এমনিতে সবাই জেনে গেছে ওদের সম্পর্কে। এখন নিশ্চয়ই রিদ মায়াকে সময় দিবে না আলাদা ভাবে। মায়া মন খারাপ করে জানতে চাইল…
‘ আমি কি আপনার মার সাথে থাকব?
রিদ আগের নেয় বলল…
‘ নাহ! আমার সাথে।
মায়া কপাল কুঁচকে রিদের দিকে তাকিয়ে সন্দেহ করে বলল….
‘ আপনি কি আমাকে আপনার ঐ আলাদা বাড়িতে রাখতে চাইছেন কোনো ভাবে?
‘ রাখতে চাইছি না তুমি সেখাবেই থাকবে আমার সাথে।
মায়া নাহুচ স্বরে তৎক্ষনাৎ আপত্তি জানিয়ে বলল….
‘ অসম্ভব! আমি আপনার সাথে ঐ বাড়িতে একা থাকব না কক্ষনো। আমি আপনার আম্মুর সঙ্গে থাকব নয়তো না।
রিদ গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে মায়ার দিকে তাকাল কপাল কুঁচকে? একটা ভ্রুর উঁচিয়ে বলল…

‘ বিয়ে করেছি আমি বউকে মার সাথে রাখার জন্য?
আমার বউ আমার সাথে থাকবে।
মায়া জেদ করে বলল….
‘ আমি এতোকিছু জানি না। আমি আন্টির সঙ্গেই থাকব নয়তো না।
রিদ মায়ার কথায় সামনের দিকে ঘুরে গেল। ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিতে দিতে বলল…
‘ কথা কিছু বুঝে শুনে বইলেন ম্যাডাম। আমার মধ্যে কিন্তু লজ্জার সিস্টেমটাই ডাউনলোড নেই। চাইলে চেক করতে পারেন। আপনি যার সাথেই ঘুমান তার ঘর থেকে ধরে আনব আমি। সেটা নিশ্চয়ই আপনার জন্য ভালো হবে না রাইট?
রিদের কথায় মায়া নাক মুখ ছিটকে বলল…

‘ আপনি এতো নির্লজ্জ ছিঃ।
‘ সমাজে আমি এমনই বদনাম। বউয়ের জন্য না-হয় আরও একটু বদনাম হলাম। সমস্যা কই?
মায়া বুঝতে পারছে রিদের সঙ্গে তর্কে সে পারবে না। তাই সে আপোষেই হার মেনে নিয়ে বলল…
‘ আমরা এখন কই যাব?
‘ আমার ফ্ল্যাটে।
‘ মুরাদপুরে?
‘ হুম।
‘ কতদিন থাকব?
‘ দুইদিন।
‘ কেন?
‘ কাজ আছে।
‘ কি কাজ?

রিদ মায়ার কথার উত্তর না দিয়ে গাড়ি স্টিয়ারিং ঘুরাতে লাগল। রিদকে উত্তর দিতে না দেখে মায়া বুঝতে পারলো মায়ার কথার উত্তর রিদ দিবে না। মায়া চুপচাপ বসে থাকতে না পেরে রিদের ফোন চাইতেই রিদ হাত বাড়িয়ে ডেস্কেের উপর থেকে নিজের ফোনটা মায়াকে দিল লক খোলে। মায়া রিদের ফোন হাতে নিতেই প্রথমে গ্যালারিতে ঢুকলো কি আছে তা দেখতে। সচরাচর রিদের ফোনে তেমন কিছুই থাকে না তাই মায়াও তেমন কিছুই পেল না। শুধু হোয়াটসঅ্যাপ ফোল্ডারে মায়ার বেশ কিছু ছবি দেখল যেগুলো মায়া নিজেই সময়ে সময়ে রিদকে পাঠিয়ে ছিল সেগুলো। রিদের নিজের ছবিও নেই ফোনে। সচারাচর সে কখনো ছবিটবি তুলে না। যার জন্য ফোনে তেমন ছবিও দেখা যায় না।

তবে মায়া ভাবি আশ্চর্য হলো কিছু একটা দেখে। রিদের ফোনের ক্যামেরা ফোল্ডারে মায়ার বেশ কিছু নতুন ছবি দেখলো যে গুলো মায়া কখনোই পাঠাইনি রিদকে। এমনকি মায়া জানেও না মায়া এসব ছবি রিদের ফোনে আছে সেটা। ছবি গুলো দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই গুলো মায়ার অজান্তে তুলে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। মায়া গুনে গুনে নয়টা ছবি পেল ওর নতুন। তারমধ্যে প্রায় সবগুলো ছবিই কলেজ ড্রেস পড়া। একটা ছবি মায়াকে ভিষণ ভাবে চমকিত করলো। সেই সঙ্গে ছবিটা দেখে মনে পরে গেল মায়ার সেই প্রথম দিনের দেখা পাঞ্জাবি ওয়ালা রিদ খানকে। নীল শাড়িতে মায়া কলেজের করিডোরে দাঁড়িয়ে হাতের চুড়িগুলো দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মায়া ছবি তুলার জন্য এমনভাবে দাঁড়িয়েছে। দেখতে অসম্ভব সুন্দর হয়েছে ছবিটা। মায়া নিজেকে এই ছবিতে ভিষণ সুন্দর লাগছে। কিন্তু এই ছবিটা তুললো কখনো? মায়ার রিদের সাথে প্রথমদিনের সাক্ষাৎকার ছিল কলেজের সেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানে। তখনতো কেউ কাউকে চিনতো না তাহলে রিদের ফোনে মায়ার তখনকার ছবি আসল কোথায় থেকে? এই ছবিটাতো মায়ার কাছেও নেই তাহলে? মায়া রিদের দিকে ফোনটা দেখাতে দেখাতে ভারি আশ্চর্য নেয় বলল…

‘ এই ছবিটা আপনার ফোনে কিভাবে আসল? এটাতো আমাদের প্রথম দিনের সাক্ষাৎকারের ছবি ছিল তাইনা? আপনি তখনকার ছবি কই পেলেন?
রিদের জানতো মায়া রিদের ফোনে এই ছবি দেখে এমন কিছু একটা প্রশ্ন করবে সেজন্য রিদের মধ্যে তেমন ভাবাবেগ দেখা গেল না মায়ার প্রশ্ন। বরং স্বাভাবিক নেয় স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলল….
‘ তুলেছিলাম সেজন্য পেয়েছি।
মায়া অস্থির ভঙ্গিতে বলল….
‘ তুলেছিলাম মানে? আপনি তুলেছেন এটা?
‘ হ্যাঁ!
‘ আপনি তখন আমাকে চিনতেন?
‘ না!
‘ তাহলে?
‘ সন্দেহ হয়েছিল।
‘ কি সন্দেহ করেছিলেন? আমি আপনার বউ হতে পারি এটা?
‘ হুম!

রিদের কথায় মায়ার মাঝে তীব্র থেকে তীব্রতর কৌতূহল দেখা গেল সবকিছু জানতে। সে বারবার প্রশ্ন করে বলল…
‘ আপনার আমার চেহেরা মনে ছিল? আপনিতো বিয়ের রাতে ঠিকঠাক আমাকে দেখেন নি মনে হয়।
‘ মনে ছিল না বলেই সেজন্য বারবার তোমাকে তোমার পরিচয় জিগ্যেসা করছিলাম। কিন্তু তুমি ঘুরেফিরে আমাকে মিথ্যা বলে যাচ্ছি। তোমার সম্পর্কে সত্যিটা আমার জানা ছিল না বলে আমার অনেকটা দিন লেগেছে তোমাকে খোঁজে বের করতে।
রিদের কথায় মায়ার মাঝে আরও অস্থির উত্তেজিত দেখা গেল…
‘ আপনিও আমাকে খোঁজেছেন? আল্লাহ আমিতো জানতামই না। কবে থেকে খোঁজেছেন?
রিদ মায়ার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিতে না চেয়ে ত্যাড়ামি করে বলল…
‘ জানি না।
মায়া অস্থির ভঙ্গিতে পুনরায় বলল…

‘ প্লিজ প্লিজ বলুন না। এমন করছেন কেন? কবে থেকে খোঁজছেন আমাকে? আমাদের বিয়ের পরদিন থেকেই?
‘ না!
‘ তাহলে কবে থেকে?
‘ তোমাকে দেখার পর মনে হয়েছে তোমার খোঁজ করা উচিত।
মায়া পরপর প্রশ্ন করে বলল…
‘ তাহলে আমাকে কবে খোঁজে পেলেন? কবে জানতে পারলেন আমি আপনার বউ?
‘ যেদিন সকালে থাপ্পড় খেয়েছিলে, সেদিন।
রিদের কথায় মায়া উৎসাহিত মুখটা ফুস করে নিভে গেল। মনে পড়ে গেল রিদের হাতের তিন তিনটে থাপ্পড় খাওয়ার কথাটা। কেউ যে হারিয়ে যাওয়া বউকে খোঁজে মারতে পারে তা জানা ছিল না ওর? কই মায়াতো রিদকে মারেনি বরং স্বামীকে খোঁজে পেয়েছিল বলে পাগল পাগল হয়ে জড়িয়ে ধরে ছিল। আর মায়ার ত্যাড়া স্বামী কি করলো ওকে মারলো? কই সে মায়াকে আদর করবে বউকে চিনতে পেরেছে বলে, তা না করে উল্টো মায়াকে মারলো। মায়া মন খারাপ করে রিদকে পুনরায় প্রশ্ন করে বলল…

‘ আপনি সেদিন আমাকে ঐভাবে মারলেন কেন?
রিদের উত্তর আসলো তৎক্ষনাৎ…
‘ কারণ ছিল তাই।
‘ কি এমন কারণ ছিল যে হারিয়ে যাওয়া বউকে খোঁজে পাওয়ার পরও মারতে হবে আপনার? একটু আদুরেও করতে পারতেন তাই না।
‘ তুমি আদুরের মানুষ না তাই মেরেছি।
‘ আদুর করতে না পারেন? অন্তত আপনি সত্যিটা জানার পর আমাকে জানাতে পারতেন তাই না?
মায়ার কথায় রিদ ফের কপাল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকাতে তাকাতে বলল।
‘ তুমি আমাকে জানিয়ে পালিয়েছিলে সেদিন রাতে? যে আমি জানাব?
‘ আমি জানাই নি বলে আপনি জানাবেন না? আপনিতো দেখছিলেন আমি কতোটা পাগল পাগল হয়ে আপনার খোঁজ করছিলাম তাই না?

‘ তো? তুমিও তো দেখেছিলে আমি সেদিন রাতে অসুস্থ ছিলাম। তারপরও তো অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে ফেলে এসেছিলে তাই না?
রিদের কথায় মায়া অপরাধ বোধ হলে। মায়া ফের মন খারাপ করতে করতে বলল…
‘ আমি আপনাকে ফেলে আসতে চাইনি। আমি তখন অনেক ভয় পেয়েছিলাম সেজন্য ভয়ে ভয়ে শেষ রাতে পালিয়ে গেছিলাম যাতে কেউ আমাকে খোঁজে না পায়।
রিদ সামনের দিকে ঘুরে যেতে যেতে বলল…
‘ ব্যাস এতটুকুই! আপনি চেয়েছেন যাতে আমি আপনাকে খোঁজে না পাই সেজন্য আমিও ধরা দেয়নি আপনার খোঁজা অপেক্ষায় ছিলাম।
‘ আপনি অনেক পাষাণ, নিষ্ঠুর। আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।
‘ আপনাকে ভালোবাসার জন্যই সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি ম্যাডাম। আপনার কি কি ভালোবাসা চাই সেটা লিস্ট করুন মনে মনে। সব রাতে পোষায় দিব।

রিদের কথায় মায়া থমথমে খেয়ে বসল। হঠাৎ রিদ এমন কিছু বলবে তা মায়ার ধারণাতে ছিল না। মায়া রিদের কথায় নাক মুখ ছিটকে বলল….
‘ ছিঃ!
‘ কি ছিঃ? আমাকে লিংক পাঠাতে আপনার ছিঃ মনে হয়না আর আমি কি বললেই ছিঃ? ইন্টারেস্টিং!
রিদের কথায় মায়া ক্ষেপে যাওয়ার মতোন করে বলল…
‘ মিথ্যা বলেন কেন? কিসের লিংক পাঠিয়েছি আপানকে?
মায়ার কথায় রিদ হেয়ালি করে বলল..
‘ আচ্ছা তাই? মেসেজ অপশনে যান। এখানো আপনার পাঠানো লিংক আছে সেখানে। রাতে জন্য রেখে দিয়েছি আপনার সবলিংক গুলো। সবগুলো একত্রে এপ্লাই করবো তাই।

রিদের মুখে মেসেজ অপশনের নাম শুনতেই মায়ার রাফার পাঠানো মেসেজ গুলোর কথা মনে পরে গেল। মায়া নিজেও জানে না সেদিন রাফা রিদকে কি পাঠিয়েছিল। মায়া রিদের সঙ্গে কথা না বাড়িয়ে তৎক্ষনাৎ ঢুকলো মেসেজ অপশনে রাফার পাঠানো মেসেজ গুলো দেখতে। পরপর তিনটা মেসেজ রাফা পাঠিয়েছিল সেদিন বাকিগুলো মায়ার। মায়া রাফার লাস্ট তিনটা মেসেজ পরে চোখ কপালে উঠালো। সবগুলো আস্তাগফিরুল্লাহ কথাবার্তা। ছিঃ এতো নোংরা কথা কেউ কাউকে লিখে পাঠায়? সবগুলো কথায় কেমন নোংরা আর গা শিউরে উঠার মতোন ছিঃ! মায়া দাঁতে দাঁত চেপে রাফার পাঠানো লাস্ট লিংকটাতে ক্লিক করতেই মায়াকে গুগল ১৮+ ওয়েবসাইট নিয়ে যেতেই অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু
ভিডিও দেখে তৎক্ষনাৎ চিৎকার করে উঠলো হাতের ফেলে। ভাগ্যক্রমে সেই ফোন গিয়ে পরলো রিদের পায়ের উপর। ফোনের স্কিনে তখনো ভিডিও প্লে হচ্ছিল সেই সাথে কিছু অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ। মায়া এক চিৎকারে লাফ দিয়ে উঠে বসলো সিটের উপর। দুগালে হাত দিয়ে তাওবা করতে করতে বলতে লাগল….

‘ ছিঃ ছিঃ আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আপনি এতো খারাপ? এসব দেখেন? ছিঃ ইয়াক!
মায়ার কথায় রিদ ঘাড় বেঁকে কপাল কুঁচকে তাকাল মায়ার দিকে। তাঁকে লিংক পাঠিয়ে এখন তাঁকে দোষারোপ করছে সবকিছুর জন্য। বিষয়টা কেমন হয়ে গেল না? রিদ গাড়ির স্পিড কমে আনলো। দৃষ্টি নত করে পায়ের দিকে তাকাল। সেখানে স্পষ্ট দেখা গেল কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য, রিদের দেখাদেখি মায়াও তাকাল সেইদিকে ছিঃ ছিঃ করতে করতে। ফোনের স্কিনে চোখ পরতেই আবারও আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ বলে চিল্লাতে লাগল। রিদ একহাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে ঝুঁকে নিচে থেকে ফোনটা উঠালো। ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে সেচ্ছায় ফোনের ভলিউম বাড়িয়ে মায়ার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল…

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৪৯

‘ তুমি চাইলে কন্টিনিউ করতে পারো। রাতের জন্য কাজে দিবে।
মায়া তৎক্ষনাৎ নাক মুখ ছিটকে রিদের থেকে দূরে সরে বসল গাড়ির সাথে সিঁটিয়ে। উত্তেজিত গলায় বলল….
‘ ছিঃ সরান এইটা। আমি আপনার সাথে যাব না। আপনি অনেক খারাপ! কিসব দেখেন ছিঃ! গাড়ি থামান, থামান বলছিল অসভ্য লোক।
রিদ মায়ার কথা শুনলো না। বরং ফোনটা বন্ধ করে ডেস্কে উপর ডিল মেরে রাখতে রাখতে বলল…
‘ সরি জান! আপাতত ফুল মুডে আছি। গাড়িতো তোমার শশুর বাড়ি গিয়েই থামবে।

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫১