রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৬

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৬
রিক্তা ইসলাম মায়া

একটা সুন্দর সকালের সূচনা। বিছানায় শুয়া মায়া ঘুম থেকে উঠে রিদকে কোথাও দেখতে পেল না। মাথা তুলে পাশের জায়গাটা খালি দেখে উঠে বসল মায়া। গায়ের ওড়নাটা পাশ থেকে নিয়ে জড়াতে জড়াতে খালি পায়ে নামল মেঝেতে। দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে এক পলক সময়টাও দেখে নিল। সকাল ৮:২৩। কাল এসেছে পর থেকে মায়া এই ঘর হতে বের হয়নি। বাড়ির বউ এত বেলা করে শুয়ে থাকাটা দৃষ্টিকটু দেখায়। যদিও মায়াকে বলার মতো কেউ নেই। তারপরও মায়ার উচিত ছিল অসুস্থ শ্বশুরের একবার অন্তত খোঁজ নেওয়া।

মায়া দ্বিধা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতে চোখে পড়ল ডাইনিংয়ে বসা রাদিফ, আরাফ খান; আর নিহাল খানকে। সবাই সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। সবাইকে একত্রে দেখে মায়া খানিকটা দ্বিধাবোধ করল নিচে নামতে। হেনা খান দাঁড়িয়ে সবাইকে খাবার খাওয়াচ্ছেন। আবার কিচেন হতে এটা সেটা এগিয়েও আনছেন। তবে রিদকে আশেপাশে কোথাও দেখা গেল না। চঞ্চল রাদিফ খেতে খেতে দেখল মায়াকে সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে। খাওয়া বন্ধ করে তক্ষুনি ডাকল মায়াকে…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ভাবি, আপনি ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? এদিকে আসুন! আমাদের সাথে বসে নাস্তা করুন।
রাদিফের ডাকে সকলেই তাকাল সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মায়ার দিকে। একত্রে এতগুলো মানুষের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যেতে মায়া জড়তায় সিঁটিয়ে মাথার কাপড় টানতেই মায়াকে দ্বিতীয়বারের মতো ডাকল হেনা খান…
“এদিকে আয় মায়া। নাস্তা করবি। তোর ওষুধ আছে। আয় তাড়াতাড়ি।
মায়া জড়তার পা ফেলে সেদিকে এগোল। মায়া অন্য একটা খালি চেয়ার দেখে সেটাতে বসতে চাইলে আরাফ খান বাঁধা দিয়ে নিজের পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে মায়াকে বসতে বলে তিনি বললেন…
‘ তুমি আমার পাশে বসো তো মায়া। তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে বুঝলে? বসো বসো।
মায়া জড়তার পায়ে এগিয়ে এসে আরাফ খানের পাশে চেয়ারটায় বসতে গম্ভীর মুখ খুললেন নিহাল খান। তিনি মায়ার উদ্দেশ্যে বললেন…

‘কেমন আছেন আম্মু? আপনার শরীর ভালো আছে?
মায়া জড়তায় সিঁটিয়ে মিহি স্বরে বলল….
‘ জ্বি আব্বু, আলহামদুলিল্লাহ! আপনি ভালো আছেন?
“জ্বি, আল্লাহ রাখছেন ভালো। তবে রাতে আপনার অপেক্ষায় ছিলাম। শুনলাম আপনি নাকি অসুস্থ ছিলেন? মাথা ব্যথা কমেছে আপনার?
মায়া রাতে রিদের সঙ্গে রাগ করে ঘর হতে বের হয়নি সেটা রিদ বাদে অন্য কেউ জানে না। স্বামীর উপর রাগ থেকে মায়া রাতে কারও সাথে দেখা বা কথা বলেনি। মায়া মনে মনে বেশ অনুতপ্ত হলো রাতের ব্যাপারটায়। তবে মায়া রাতে অসুস্থ ছিল না, বরং ভালোই ছিল। কিন্তু নিহাল খান যখন বলছেন মায়া অসুস্থ, ওর মাথা ব্যথা ছিল—তার মানে কেউ নিশ্চয়ই উনাকে মায়ার ব্যাপারে এটাই বলেছেন। মায়া জড়তা নিয়ে বলল…

“জ্বি।
নিহাল খানের খাওয়া শেষ। তিনি পাশ থেকে টিস্যু নিয়ে মুখ মুছে রাখতে রাখতে মায়ার উদ্দেশ্যে বলল….
” আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল আম্মু।
‘ জ্বি বলুন!
নিহাল খান সময় নিয়ে মায়ার উদ্দেশ্যে গুছিয়ে বলল…
‘ আসলে আমি এবং আমার পরিবার সকলেই অনেক অনুতপ্ত, আপনার প্রতি। আপনার সাথে যা হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা খুবই লজ্জিত। সত্যি বলতে, আমরা আমাদের ছেলের জন্য দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম সেই সময়, সেজন্য আপনার খেয়াল করতে পারিনি আমরা। ছেলের বুকভরা তাজা রক্ত দেখে আমাদের দুনিয়া ঘুরে গিয়েছিল—কী করব, কী করা উচিত তখন ঐ মুহূর্তে সব ভুলে শুধু ছেলের জন্য পাগল হয়ে ছিলাম। আমরা আসলে বুঝতে পারিনি আমাদের অনুপস্থিতিতে আপনি এতটা ভুক্তভোগী হবেন।
নিহাল খানের কথায় মায়া তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারল না কী উত্তর দেবে। মায়া কি ওর শ্বশুরের কথায় ‘ঠিক আছে’ বলবে নাকি চুপ থাকবে? মায়াকে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে হাঁসফাঁস করতে দেখে নিহাল খান মায়ার ভেতরের অবস্থা বুঝে নিয়ে তিনি বললেন…

“সমস্যা নেই আম্মু, আপনার কিছু বলতে হবে না। তবে কথা দিচ্ছি, আপনাকে আপনার যোগ্য সম্মান দিয়ে রাখব এই পরিবারে। দ্বিতীয়বার যেন একই ভুল না হয় সেই খেয়ালও রাখব আমরা। আপনি আমাদের উপর শেষবারের মতোন বিশ্বাস করতে পারেন।
কথাগুলো শেষ করে তিনি খাবার শেষ করে উঠে গেলেন বাইরে। বাহিরে লোকেদের ভিড় জমেছে। তাদের নিয়ে সমাবেশে বের হবেন তিনি। আজ একটা পার্টিদলের সমাবেশ আছে উনাদের। নিহাল খান চলে যেতে যেতে উনার কানে এল রাদিফের কথা। রাদিফ মায়ার উদ্দেশ্যে বলছে…

“ভাবি, সকাল থেকে আম্মু আপনার খোঁজে দশবারের বেশি ফোন দিয়েছে আমাকে। এতবার তো আম্মু আমাদের খোঁজেও ফোন দেয় না, যতটা আপনার খেয়ালে দেয়। ভাবছি আমার হাতের ফোনটা আপনাকে দিয়ে যাব। আমাদের থেকে আম্মুর আপনার চিন্তা বেশি। আপনি আমাদের বোন হলে আরও ভালো হতো ভাবি। অনেক আদুরে থাকতেন আপনি। রিদ ভাই আর আম্মু আপনাকে একটু শাসন করলেও আমি আর আব্বু কিন্তু আপনাকে অনেক আদর করতাম ভানি। রিদ ভাই আপনার বড় ভাই হতো আর আমি ছোট ভাই। বিষয়টা মজার না?
কথাগুলো বলেই রাদিফ জিভ কামড় দেওয়ার মতো করে নিজের কথাটা নিজেই সংশোধন করে বলল…
“সরি সরি ভাবি! ভুল বলেছি, ভুল বলেছি,, রিদ ভাইকে আপনি ভাই বলতে পারবেন না। রিদ ভাই আপনার জন্য যে পাগল মানুষ আল্লাহ! ভাই যদি শুনে আমি আপনাকে বোন বানানোর স্বপ্ন দেখছি তাহলে আমার রক্ষা নেই। আপ…
“আউট!

রিদের গম্ভীর গলার ধমকে তৎক্ষণাৎ মাথা ঘুরিয়ে তাকাল রাদিফ। রিদকে চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝল রিদ রাদিফের কথাগুলো শুনেছে এতক্ষণ । রাদিফ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বোকার মতো হেসে বলল…
“আরে ভাই, আমার কোনো দোষ নেই এতে বুঝলে। এসবে ভাবিই আমাকে বলল উনার নাকি তোমাকে মামা বানানোর খুব ইচ্ছে ছিল। অথচ তুমি যে ভাবির বাচ্চার বাবা হতে ইন্টারেস্ট সেটা উনি বোঝে না।
তুমি একটু বুঝিয়ে বলো তো এমন দুষ্টু ইচ্ছা যেন ভাবি না রাখে। তুমি তাতে কষ্ট পাও।
রাদিফ দুষ্টু হেসে চলে যেতেই রিদ মায়ার দিকে তাকাল। মায়া হাঁ করে রাদিফের দিকেই তাকিয়ে ছিল। কী সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যা বলে রাদিফ! রাদিফ চলে যেতে মায়া দৃষ্টি ঘোরাতে গিয়ে রিদের সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মায়া তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নত মস্তকে বসে পড়ল চেয়ারে। রিদ মায়ার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে মায়ার পাশের খালি চেয়ারটায় বসতে চাইলে পুনরায় বাঁধা দিলেন আরাফ খান। তিনি রিদকে নিজের পাশের চেয়ারটায় বসতে বললে রিদ অগ্রাহ্য করে মায়ার পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল। আরাফ খান চেয়েছিলেন তিনি রিদ ও মায়ার মধ্যখানে বসতে, কিন্তু রিদ সেই সুযোগ না দিয়ে মায়াকে মধ্যস্থ রেখে বসতে বসতে বলল…

“তোমার খাওয়া শেষ হলে উঠে যাও দাদভাই। আমার প্রাইভেসি লাগবে।
আরাফ খানের খাওয়ার পর্বটা আরও আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি খালি কাপের চা নিয়ে বসেছিলেন মূলত মায়ার সাথে আড্ডা জমাবেন বলে। কিন্তু রিদ আরাফ খানকে চলে যেতে বললে তিনি খানিকটা বিরক্ত গলায় বললেন…
” তুই রুমে কি এমন করতে পারিস না যে তোর বউ নিয়ে ডাইনিংয়ে প্রাইভেসি লাগবে?
আরাফ খানের কথায় রিদ একই ভাবে উত্তর দিয়ে বলল…
“তুমি যা বুড়ো বয়সে রুমে করতে পারো না আমি তাই-ই করি।
রিদের হেঁয়ালিপূর্ণ কথায় ক্ষেপে উঠলেন আরাফ খান। উনাকে কেউ বুড়ো বললে বেজায় চটে যান তিনি। রেগেমেগে রিদকে শুধালেন…

“বুড়ো হবে তোর বাপ। আমি এখনো জোয়ান আছি।
রিদ আরাফ খানের কথায় পাত্তা না দিয়ে মায়ার নাস্তার প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বলল…
“আচ্ছা!
“এই আচ্ছা কি হ্যাঁ?
“ওকে!
পরপর রিদের হেয়ালি কথায় আরাফ খানের রাগ বাড়ল। তিনি রিদকে শুধিয়ে বললেন…..
“তুই তোর মাকে আমার নামে মিথ্যা বললি কেন? যে আমার বুক ব্যথা হয়েছিল কাল।
“আমার প্রাইভেসি দরকার ছিল তাই বলেছি।
রিদের কথায় আরাফ খান অবাক সুরে বললেন…
“তোর প্রাইভেসির জন্য আমাকে হার্টের রোগী বানিয়ে দিবি? তুই এত প্রাইভেসি দিয়ে কী করিস বল তো?
রিদ সোজাসাপ্টা উত্তরে বলল…

“বউকে সময় দিই।
রিদের কথায় আরাফ খানও খোঁচা মারার মতো করে বলল….
“বউকে এত সময় দিয়ে করিস কী? বাপ তো আর হতে শুনলাম না। আবার চাস প্রাইভেসি। তোর বয়সে আমি তিন সন্তানের বাপ হয়ে গিয়েছিলাম এতদিনে। আর তুই এখনো একটারও হতে পারলি না।
রিদ মায়ার প্লেটে রুটি তুলে দিতে দিতে বলল…
“আমার বউ ছোট। তোমার মতো বুড়ো বউ বিয়ে করলে এতদিনে তিনটা কেন, সাতটা সন্তানের বাপ হয়ে যেতাম। তুমি নিশ্চয়ই পুষ্টিহীন রোগী ছিলে বলে কষ্ট করে তিনটার বাপ হতে পেরেছিলে। আমার মতো তাগড়া যুবক হলে নিশ্চয়ই এতদিনে খান বাড়িতে লাইন পড়ত তোমার সন্তানদের।
রিদের কথায় আরাফ খানের মুখটা থমথমে হয়ে গেল। তিনি পুষ্টিহীন রোগী ছিলেন? উনি এক ছেলে ও তিন কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। সেই সময়ে তিনি এক হৃষ্টপুষ্ট তাগড়া যুবক ছিলেন। উনাদের স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ব্যবধানও খুব একটা ছিল না। তাই বলে রিদ উনার সুন্দরী বউকে বুড়ো আর উনাকে পুষ্টিহীন রোগী বলবে?
আরাফ খান রিদের কথায় রেগে চলে যেতে যেতে বললেন…

“তুই আর তো বাপ পুষ্টিহীন রোগী। আমি তো তাও টেনেটুনে চার সন্তানের বাপ হয়েছি। তোর বাপের তো তার মুরাদই নেই। দুটোতেই সে ক্লান্ত হয়ে ইতি টেনেছে, বউকে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে। আর তুই এসেছিস আমার পুরুষত্বের দিকে আঙুল তুলতে। তোরা বাপ-ছেলে মিলেও তো আমার চার সন্তানের রেকর্ড ভাঙতে পারবি না। যদি পারিস তাহলে আমার নামও আরাফ খান না অন্য কিছু রাখব। যাহ!

পরপর কথাগুলো বলেই আরাফ খান লাঠি হাতে বেরিয়ে যান। এখানে থাকলে যে রিদের সঙ্গে কথায় পারবে না তা তিনি বেশ জানেন। সেজন্য রিদকে নিজের কথাগুলো শুনিয়ে বের হয়ে যেতে মায়াও রিদের পাশ থেকে উঠে যেতে চাইল। রিদ আর আরাফ খানের মাঝে এতক্ষণ মায়া নীরব দর্শক ছিল। লজ্জায় মুখ থমথমে হয়ে আছে মায়ার। ওহ রিদকে এড়িয়ে চলে যেতে চাইলে রিদ পিছন থেকে মায়ার চুলের বেণি টেনে ধরতে মায়া মৃদু স্বরে ‘আহ’ বলে চেঁচিয়ে উঠল ব্যথায়। রিদ মায়ার বেণি হাতে পেচিয়ে মায়াকে পুনরায় জায়গায় বসাতে বসাতে বলল…

“রিত আমি একই কথা বারবার বলতে ভালো লাগে না। রাতে বিষয়টা ছেড়ে দিলেও যে এখন তোমাকে ছেড়ে দেব বিষয়টা এমন নয়। আমার তোমার উপর রাগ ছিল কিন্তু বিশ্বাস হারাইনি কখনো। যদি বিশ্বাস হারাতাম তাহলে তোমাকে কখনো আমার বাড়িতে জায়গা দিতাম না। তুমি জানো আমি আমার কথা ছাড়া কারও কথা বিশ্বাস করে কাজ করি না। আমার আম্মু তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসার পিছনে আমারও সম্মতি ছিল। যদি আমার সম্মতি না থাকত তাহলে আমার মা কেন, দুনিয়ার কারও ক্ষমতা নেই রিদ খানের বাড়িতে তোমাকে রাখার। সবকিছু একতরফা দেখতে নেই। আমি রাগটা সবার সামনে প্রকাশ করতে পারি কিন্তু ভালোবাসাটা পারি না। আমা…
রিদের বাকি কথা শেষ হওয়ার আগে মায়া মাঝে ফোড়ন কেটে বলল…

“তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাই-তো?
মায়া রিদের কথা গুলোর মাঝে শুধু একটা কথাই বুঝলো—রিদ রাগ প্রকাশ করতে পারলেও রিদের ভালোবাসাটা আড়ালে থাকে। তার মানে রিদ মায়াকে ভালোবাসে? রিদ মায়াকে ভালোবাসে সেটা মায়া জানে, কিন্তু রিদ কখনো মায়াকে প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দেয়নি এটা নিয়ে। তাই আজ মায়া কথায় কথায় রিদের থেকে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি করাতে চাইল। কিন্তু রিদ মায়ার কথায় বিরক্তি চোখে তাকাল মায়ার দিকে, মায়ার চুল ছেড়ে দিতে দিতে বলল…

“নাহ বাসি না।
“তাহলে আমিও আপনার সাথে থাকব না। যান।
মায়া জেদ করে আবারও উঠে যেতে চাইলে রিদ পুনরায় মায়াকে টেনে চেয়ারে বসাতে বসাতে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
“তুই থাকবি, তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীও থাকবে বেয়াদব।
“ঠিক আছে যান, নিয়ে আসুন আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীকে। তারাই আপনার সাথে সংসার করবে নে। আমি পারব না।
রিদ ধমকে বলল…
“রিত!

রিদের ধমকে মায়া হাত গুটিয়ে চুপ করে বসল। রিদ নিজের রাগ চেপে মায়ার প্লেটে খাবার তুলে দিতে মায়া পিঠ বেঁকে বসল খাবে না বলে। রিদ মায়ার কাঁধে হাত রাখতে মায়া রিদের হাত সরিয়ে দিল। রিদ পুনরায় রেগে গেল। সে জীবনে কারও এসব রাগ সহ্য করেছে কিনা সন্দেহ, অথচ বিয়ে করে বউয়ের পাল্লায় পড়ে জীবনে যা না করেছে আজ তাই করতে হচ্ছে। রিদ পুনরায় মায়ার কাঁধে হাত রাখতে চাইলে মায়া একই ভাবে রিদের হাতটা সরিয়ে দিতে গেলে রিদ ক্ষেপে যায়। শক্ত হাতে মায়ার বাহু টেনে নিজের দিকে ফেরাতে ফেরাতে রাগান্বিত গলায় বলল…
“কী সমস্যা তোর? এমন করছিস কেন?

“খাব না আমি!
“কেন?
“আমাকে আম্মুর কাছে দিয়ে আসুন।
“পারব না।
“কেন?
“বিয়ে করেছি আমি। বউ আমার সাথে থাকবে তাই।
“তাহলে আম্মুকে এই বাড়িতে এনে দিন। আম্মু তো এই বাড়ির বউ। আপনারা কেন আম্মুকে এই বাড়িতে ফেরাচ্ছেন না?
রিদ মায়াকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে বলল….

“আমাকে এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে জড়াবে না রিত। আম্মু-আব্বুর বিষয়টা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারা তাদের জীবনের সঙ্গে কী করবে সেটা তাদের একান্ত বিষয়। এত বছরও যখন তাদের সিদ্ধান্ত বদলায়নি তাই আমি সন্তান হয়ে সেসবে জড়াতে চাচ্ছি না। আমার এমনিতেও কারও ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা পছন্দ না। আমার মনে হয় আম্মুরও পছন্দ হবে না উনার ব্যক্তিগত জীবনে কেউ হস্তক্ষেপ করুক সেটা নিয়ে। তুমি এসবের থেকে দূরে থাকো রিত। আমি নতুন ঝামেলা চাচ্ছি না।

রিদের কথায় মায়া তর্ক করল না। কারণ রিদ আর সুফিয়া খান দুজন একই ব্যক্তিত্বের মানুষ। তাদের ব্যক্তিগত জীবনে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না তাঁরা। তবে মায়া এতদিনে বেশ করে সুফিয়া খানকে চিনেছে। উনার সংসার জীবন খুব পছন্দের। উনি যত্নসহকারে আগলে রাখেন সংসারের প্রতিটা মানুষকে। রিদ বা সুফিয়া খান হয়তো তাদের ব্যক্তিত্বের জন্য সহজে কাউকে মেনে নিতে পারে না। কিন্তু একবার যদি কাউকে মেনে নেয় সারাজীবন আগলে রাখার মতো গুণ তাদের আছে। সেজন্য মায়ার ধারণা সুফিয়া খান নিহাল খানের সাথে মনোমালিন্যের জন্য দূরে দূরে থাকলেও আজও হয়তো দুজন দুজনকে ভালোবাসেন। নয়তো বিচ্ছেদের এত বছর পরও কেন কেউ কাউকে ডিভোর্স দিচ্ছেন না? ভালোবাসা আছে বলেই তো তারা বিচ্ছেদ চাচ্ছেন না। মায়ার ধারণা যদি কোনো রকমে ওর শ্বশুর-শাশুড়িকে একত্রে এক ছাদের নিচে আনা যায় তাহলে নিশ্চয়ই তাঁরা তাদের মনোমালিন্য পিছনে ফেলে কথা বলার একটা সুযোগ দেবেন দুজন দুজনকে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো সুফিয়া খান যে মানুষ জীবনেও কারও কথা শুনে এই খান বাড়িতে পা রাখবেন না। বাকি রইল ওর শ্বশুর নিহাল খান—উনি খুবই নমনীয় স্বভাবের মানুষ। উনাকে কোনোভাবে সুফিয়া খানের বাড়ি অবধি কয়েক দিনের জন্য পাঠাতে পারলে হয়তো কোনো একটা কাজ হতো। কিন্তু মায়া ওর শ্বশুরকে শাশুড়ির বাড়িতে পাঠানোর মতো, এই অসম্ভব কাজটা কীভাবে করবে ওহ? মায়ার মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার মাঝে রিদ মায়ার মুখের সামনে রুটি ছিঁড়ে এক টুকরো ধরতে মায়া সেটি মুখে নিতে নিতে বলল…

“আপনার ফোন কোথায়?
রিদ কিছু বলবে তার আগেই মায়া রিদের উপর চিরুনি তল্লাশি চালাল। রিদের বুকে, প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাতড়াল ফোনের খোঁজে। কিন্তু কোথাও রিদের ফোনের খোঁজ না পেয়ে মায়া অধৈর্য হয়ে পুনরায় রিদকে শুধালো…
“আপনার ফোন কোথায় বলুন।
রিদের বাম পাশে ডাইনিংয়ের উপর রাখা ছিল ফোনটি। ডান পাশে মায়া বসে। অধৈর্য মায়া রিদের ডানে-বামে না খুঁজে রিদের উপর তল্লাশি করল। রিদ পুনরায় মায়ার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বাম হাতে নিজের ফোনটি মায়ার দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল…
“তুমি আমার হয়ে থেকো রিত, গোটা দুনিয়া আমি তোমার করে দেব।

রাতের আকাশে অসংখ্য তারার মেলা। মস্ত বড় আকাশে থালার মতো চাঁদও উঠেছে। সেই চাঁদের আলোয় উজ্জ্বল ধরণী। রাত দশটা সতেরো।
জুই গ্রিলের মাথা ঠেকিয়ে সেই আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে। মনের উতালপাতায় অসংখ্য কথা তীরের মতো বিঁধছে বুকে। আজ গত এক সপ্তাহ ধরে সে আয়নের ফ্ল্যাটে থাকছে পরিবার থেকে দূরে। এর মাঝে জুই বেশ কয়েকবার মুক্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল ঐ বাড়ির খোঁজ নিতে। মুক্তাও বেশ জুইয়ের উপর রেগে আছে—এমন পরিস্থিতিতে জুই কেন আয়নের সঙ্গে পালিয়ে গেল তা নিয়ে। জুইয়ের বাবা নাকি ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন জুইয়ের কাজে। আচ্ছা জুই কি আসলেই আয়নের সঙ্গে পালিয়ে এসেছিল? মন বেদনায় ডুকরে কেঁদে উঠল জুই। আয়ন ঘরে প্রবেশ করতে করতে জুইয়ের ফুঁপানো শব্দে দ্রুত ঘরের আলো জ্বালালো। অন্ধকার কাটিয়ে শূন্য ঘরে কাউকে দেখতে না পেয়ে হাতে ব্যাগটা সোফায় রাখতে রাখতে হাঁটলো বারান্দার দিকে। জুইকে গ্রিল ধরে কাঁদতে দেখে আয়ন জুইয়ের বাহু টেনে নিজের কাছে টানতে টানতে উত্তেজিত গলায় বলল…

“আপনি কাঁদছেন কেন জুই? কী হয়েছে?
আয়নের বুকে ঠাঁই পেয়ে জুইয়ের কান্না বাড়ল। দু’হাতে আয়নের পিঠ জড়িয়ে বুকে মুখ লুকাতে লুকাতে ডুকরে কেঁদে উঠে বলল…
“আমাকে কেউ ভালোবাসে না ডাক্তার সাহেব। সবাই ঘৃণা করে। আব্বু আমাকে ঐ বাড়িতে যেতে নিষেধ করেছেন, বলেছেন আমি নাকি তাদের জন্য মরে গেছি। সত্যি আমি মরে গেছি ডাক্তার সাহেব?
জুইয়ের কান্নার কারণটা বুঝতে পেরে আয়ন গুমোট নিশ্বাস ফেলল। এই আজ নতুন নয়। জুই যবে থেকে এই বাসায় এসেছে তখন থেকে জুই নিজের পরিবারের থেকে দূরত্বটা হুট করে মেনে নিতে পারছে না। তাছাড়া আয়নও ভাবেনি জুইকে ঐভাবে নিজের সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। সে জুইকে নিজের কাছে আনতে চেয়েছিল, তবে সেটা সসম্মানে। আয়ন জুইয়ের মাথায় ঠোঁট ছুঁয়ে আশ্বস্ত করে বলল…
“আমার উপর বিশ্বাস রাখুন জুই, আমি সবকিছু ঠিক করে দেব। আমার পরিবার এই মাসে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরবে, তখন আমার বাবা-মাকে আপনাদের বাসায় পাঠাব। আপনার বাবাকে বুঝিয়ে তারপর সসম্মানে আনুষ্ঠানিকভাবে আপনাকে আমার ঘরে তুলব। আপনি কষ্ট পাবেন না জুই। আমাকে একটু সময় দিন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস রাখুন।

“আমি কোনো আনুষ্ঠানিকতা বিয়ে চাই না ডাক্তার সাহেব। যেটা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে। আমি কোনো কিছুর পরিবর্তন চাই না। আমি জানি আমার বাবা কেমন, উনি এক জেদি পুরুষ—যতক্ষণ না তিনি নিজে থেকে সবকিছু বুঝবেন ততক্ষণ পযন্ত তিনি কারও কথা শুনবেন না। আমি চাই না আমার জন্য আপনি বা আপনার পরিবার ছোট হোক। যেটা হচ্ছে সেটা হতে দিন, আমি সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব দ্রুত।
কয়েক মূহুর্ত দুজনের এইভাবে কাটলো। হঠাৎ জুইয়ের হুশ ফিরতে সে আয়নকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরাতে চাইলে আয়ন বাঁধা দিয়ে বলল..
“জুই, আজকে আমি আপনার সাথে থাকি?
জুই আয়ন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল..
“না।
“প্লিজ জুই, না করবেন না। আমি রাতে চোখে দেখতে পাই না।
আয়নের কথার মানে বুঝতে না পেরে জুই অবুঝ গলায় শুধালো আয়নকে বলল….
“মানে?

“হ্যাঁ জুই! আমি দূরের জিনিসটা একদম দেখতে পাই না। সেজন্য ডক্টর বলেছে আমাকে বউয়ের আশেপাশে থাকতে।
“আপনি ডাক্তার হয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন?
“হ্যাঁ! আমিতো হার্ট সার্জন। চোখের ডাক্তারের কাছে না গেলে চোখের সমস্যা ভালো হবে কীভাবে বলুন?
আয়নের মনগড়া কথার মানে জুই বুঝতে পেরে জুই দুহাত বুকে বাঁধতে বাঁধতে বলল…
“তা ডাক্তার আর কী বলেছে আপনাকে?
“বলেছে আমার নাকি ভিটামিনের অভাব।
“তো কি করতে হবে?
“আপনার আশেপাশে থাকতে বলেছে। আপনাকে বেশি বেশি সময় দিতে। রাতে আপনার সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমাতেও বলেছে।
আয়নের কথায় জুইয়ের হাসি পেল। নিজের হাসি চেপে রাখতে না পেরে জুই চলে যেতে নিয়ে বলল…

“যতসব ধান্দাবাজি আপনার! সরেন।
জুই আয়নকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে আয়ন শক্ত হাতে জুইয়ের বাহু টেনে জড়িয়ে ধরতে ধরতে বলল…
“আপনি দূরে গেলে তো চলবে না জুই। এমনি আমার চোখের সমস্যা, দূরের জিনিসটা দেখি না। আপনাকে হারিয়ে ফেললে তো আমার ভিটামিনের অভাব বাড়বে জুই। এর থেকে বরং আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা শক্ত করে চুমু খান, যেন আমার সকল অপুষ্টিহীতায় চলে যায়।
জুই লজ্জায় সিঁটিয়ে গেল আয়নের বুকে। খানিকটা মোচড়ামুচড়ি করে আয়ন থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেয়ে বলল…
“আমাকে ছাড়ুন প্লিজ।
“অসম্ভব।”

“আমি মায়ার কাছে যেতে চাই, প্লিজ আমাকে নিয়ে চলুন।
আয়ন এক হাতে জুইকে জড়িয়ে অপর হাত জুইয়ের গাল স্পর্শ করে শব্দ করে চুমু খেতে খেতে মোহাচ্ছন্ন গলায় বলল…
“মায়া ঢাকায় নেই। রিদের সঙ্গে চট্টগ্রামে আছে। আপনাকে কাল নিয়ে যাব চট্টগ্রামে, তারপরও আজ আমাকে বাঁধা দেবেন না জুই প্লিজ!

রাত এগারোটা সাতাশ। মায়া অন্ধকার রুমে অল্প আলোয় পায়চারি করছে ঘর জুড়ে। হাতে রিদের ফোন। এটা সকালে নিয়েছিল, তখন থেকে এটা মায়ার কাছেই আছে। এই ফোনে মায়া দুটো কাজ করেছে—এক, রাফার সাথে যোগাযোগ করেছে; দ্বিতীয়ত, নিজের বাড়িতে কল দিয়েছিল মায়ের নাম্বারে, কিন্তু রেহেনা বেগমের নাম্বারটা বরাবরই বন্ধ বলেছে। মায়া খানিকটা চিন্তিত নিজের পরিবার নিয়ে। বহুদিন ধরে মায়া নিজের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। এমন না যে মায়া ওর পরিবারের সবাইকে মিস করবে। মায়া শুধু ওর মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে চায়। মায়াকে যখন ওর বাড়ি থেকে সুফিয়া খান নিয়ে আসে তখন ঐ বাড়ির পরিস্থিতি ভালো ছিল না। অনুকূল পরিস্থিতিতে মায়ার মা কেমন আছে সেটাই জানতে চায়। নিজের মায়ের সঙ্গে কথা বলতে না পেরে মায়া ভীষণ হতাশ হলো, তবে আজ বেশ কয়েকবার সুফিয়া খানের সঙ্গে মায়ার কথা হয়েছে। মায়া এখন একমাত্র লক্ষ্য কীভাবে সুফিয়া খানকে এই বাড়িতে নিয়ে আসা যায়। মায়া জানে কাজটা সহজ হবে না, তারপরও মায়া এই অসাধ্য কাজটা সাধন করতে চায়। মায়া রুম জুড়ে পায়চারি করার মধ্যে রিদ ঘরে ঢুকল। অল্প আলোয় মায়াকে কালো ছায়ার মতো দেখাতে রিদ ঘরে আলো জ্বালালো। মায়াকে সাদামাটা একটা সুতির থ্রি-পিস পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিদ দেয়াল ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে কপাল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল…

“ঘুমাওনি? এত রাত অবধি জেগে আছো কেন?
রিদের ক্লান্তি মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে মায়া মিনমিন করে বলল…
“আমার ঘুম আসছে না।
রিদ হাতের কোটটা ছুঁড়ে সোফার উপর ফেলতে ফেলতে মায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে ডেকে বলল…
“কাছে এসো!
মায়া জড়তার পায়ে এগিয়ে গেল রিদের দিকে। রিদ মায়ার নাক টেনে কপালে টোকা দিতে দিতে খানিকটা ঝুঁকে গেল মায়ার উপর। ঠান্ডা গলায় বলল…
“শার্ট চেঞ্জ করো।
রিদের কথায় মায়া অবাক নেত্রে তাকাল রিদের দিকে। বলল…
“আমি?
“হুম!
রিদের সেই অপরিচিত মোহাচ্ছন্ন স্বর। মায়ার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল অদ্ভুত অনুভূতিতে। মায়া হাঁসফাঁস করে জড়তার হাত বাড়িয়ে রিদের শার্টের বোতাম খোলে গা থেকে শার্ট ছাড়িয়ে নিতে মায়ার চোখে পড়ল রিদের শক্তপোক্ত শরীরটা। হাতা কাটা গেঞ্জির ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে রিদের আটসেটে মাংস পেশি শক্ত দেহটা। মায়া হতবাক হতবুদ্ধি চোখে রিদের শরীরের দিকে দৃষ্টি বোলাতে বোলাতে হাত বাড়াল রিদের বাহুতে। রিদের শক্ত বাহু ছুঁয়ে মায়া হতবাক গলায় বলল…

“আল্লাহ, আপনি তো অনেক মোটা হয়ে গেছেন নেতা সাহেব। আপনার শরীর এত শক্ত কেন?
মায়ার কথায় রিদ পুনরায় মায়ার মাথায় টোকা দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল…
“পাওয়ারফুল মেডিসিনে শরীর ফুলে গেছে একটু।
মায়া এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিল রিদের অ্যাক্সিডেন্টের কথা। মায়া অবুঝ গলায় প্রশ্ন করে বলল…
“ওষুধ? কিসের ওষুধ খান আপনি?
“এত অল্পতে অ্যাক্সিডেন্টের কথা ভুলে গেলে হবে ম্যাডাম?

কথাটা বলে রিদ মায়াকে পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেতে চাইলে তৎক্ষণাৎ মায়া রিদের হাত টেনে ধরল। হাতে টান পড়ায় রিদ কপাল কুঁচকে ঘাড় বেঁকিয়ে পিছনে তাকাতে দেখল অশ্রুসিক্ত চোখে মায়াকে কাঁদতে। রিদ হুট করে বুঝল না মায়ার কাঁদার কারণটা। মায়া রিদের হাত টেনে তৎক্ষণাৎ দু’হাতে রিদকে জড়িয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল দীর্ঘ দিনের চাপা কষ্টে। অনেকটা দিন রিদের সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে সুস্থতা কামনা করে কেঁদে কাটিয়েছে মায়া। অথচ মানুষটা সুস্থ হয়ে সামনে আসার পর দুজনের দূরত্ব কমছে না। মায়া এলোমেলো দু’হাতে রিদের গাল আঁকড়ে রিদের মাথা টেনে নিচু করলো মুখোমুখিতে।

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৫

এলোমেলো ঠোঁট রিদের মুখে ছুঁতে দিতে রিদ খানিকটা শকট খেল। মায়া হাইটে ছোট হওয়ায় দু’পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে রিদকে চুমু খেতে গিয়ে দিকে এগিয়ে গেল। রিদ মায়ার শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে পিছু হাটল পরপর। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে রিদের পা বিছানায় ঠেকতে রিদ ধপ করে বিছানায় বসে পরলে মায়া রিদের মুখের উপর ঝুঁকে গেল। দু’হাতে রিদের দু’গাল আঁকড়ে এলোমেলো ঠোঁট রিদের মুখ ছুঁয়ে উঠল রিদের মাথায়। অ্যাক্সিডেন্টের জায়গাগুলোতে মায়া পরপর ঠোঁট বুলিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল দু’হাতে রিদের গলা জড়িয়ে। রিদের গলায় মুখ ডুবিয়ে কেঁদে উঠে বলল…
“আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচব না নেতা সাহেব। সত্যি বাঁচব না। আপনার সঙ্গে দুঃখের জীবন কাটাতে রাজি, কিন্তু আপনাকে হারিয়ে সুখী হতে রাজি নই।

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৭