রেড রোজ পর্ব ২৩
ফারহানা নিঝুম
পুরুষালী শক্ত হাতে থা’প্প’ড় খেয়ে থরথর করে কাঁপছে উৎসা।খৈ হা’রিয়ে নিচে পড়তে যাওয়ার পূর্বে ঐশ্বর্য বলিষ্ঠ হাতে টেনে ধরলো তাকে।তবে অবশ্যই তার চেপে ধরার কারণে ব্য’থায় কঁ’কি’য়ে উঠলো উৎসা।
“হাউ ডেয়ার ইউ?এত সাহস হলো কী করে অন্য একটি ছেলের ক্লো’জ হওয়ার? আমি তোকে জানে মে’রে ফেলব উৎসা।”
উৎসা স’হ্য করতে না পেরে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।
“লাগছে আমার।”
“লাগার জন্যেই ধরেছি। ওই ছেলের সঙ্গে কী করছিলে?অ্যান্সার মি রোজ।”
উৎসা ফুঁপিয়ে বললো।
“কিছু করিনি, আমার ফ্রেন্ড হয়।”
ঐশ্বর্য থমকে গেল,রাগ হচ্ছে। অন্য কেউ কেনো ছুঁবে?কই ঐশ্বর্য তো এখনো ছুঁয়ে দেখেনি? ঐশ্বর্য পাগলের মতো উৎসার শরীর চেক করতে লাগলো।
“কোথায় টাচ করেছে হুঁ?দেখাও আমায়!”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত পা টেনে দেখতে লাগলো।উৎসা চিৎকার করে উঠল।
“স্টপ ইট,কী করছেন এসব? ছাড়ুন আমার হাত।”
ঐশ্বর্য উৎসার গাল চেপে ধরে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“চুপ। উৎসা তুমি আমার, আমার সঙ্গেই থাকবে। অন্য কারো সঙ্গে না।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কলার চেপে ধরে।
“তো কী হয়েছে? আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন না! তাহলে অন্য কেউ থাকলে এত কিসের প্রবলেম?”
“আই কান্ট টেক দিস ড্যাম।”
উৎসা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে,হাস্কি টোনে বলল।
“আমাকে ভালোবাসেন আপনি।”
ঐশ্বর্য কাউচে সজোরে লা’থি মে’রে বলে।
“নো নো আই ডোন্ট লাভ ইউ।”
“ইয়েস।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে কাছাকাছি নিয়ে এলো।চুল গুলোতে হাত ছুঁইয়ে শব্দ করে চুমু খায় কপালে।
“কেন বুঝছেন না? আপনি……
কথাটা শেষ হওয়ার পূর্বেই ঐশ্বর্য ফের উৎসার অধরে আলতো ভাবে চুমু দেয়।
“আপনি আমাকে ভালোবাসেন।”
উৎসা মৃদু স্বরে আ’র্ত’না’দ করে উঠলো
ঐশ্বর্য উৎসার কপালে কপাল ঠেকিয়ে ক্লান্ত স্বরে বলল।
“ভালোবাসি না, সত্যি বলছি। একটুও ভালোবাসি না।আই ডোন্ট লাভ ইউ।”
উৎসা ফোঁস করে শ্বাস টেনে ঐশ্বর্যের শার্ট খা’ম’চে ধরে।
” উঁহু ইউ লাভ মি।”
ঐশ্বর্য শেষ বারের মতো উৎসার অধরে অধর ছুঁয়ে দেয় ধরে। ঐশ্বর্য দু হাতে আলতো জড়িয়ে ধরে উৎসা কে । উৎসা ঐশ্বর্যের অস্থিরতা অনুভব করতে পারছে। ঐশ্বর্য কাঁপছে, হয়ত ভীষণ ভাবে ভয় পেয়েছে।
দীর্ঘ দশ মিনিট পর ঐশ্বর্য উৎসা কে ছেড়ে দেয়, প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস টেনে ফিসফিসিয়ে বললো।
“আই ডোন্ট লাভ ইউ রেড রোজ।আই,,আই ডোন্ট….
ঐশ্বর্য বড্ড ক্লান্ত,আর একটা শব্দও বলতে পারছে না। আচমকা কাউচের উপর শুয়ে পড়ল,উৎসার হাত টেনে নিজের বুকের কাছে এনে ফেললো। শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরলো তাকে,উৎসা নিশ্চুপ।
মিনিটের মধ্যে ঐশ্বর্য গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়,উৎসা এই সুযোগে নিজের পাসপোর্ট এবং বাকি সব জিনিস নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।চোখ দুটো টলটল করছে,একটা মানুষ এত নির্দ’য় হতে পারে তা জানা ছিল না উৎসার। উৎসা থাকবে না এই লোকটার সঙ্গে,সে চলে যাবে বাংলাদেশ।
একটা বড়সড় ক্যাফেতে বসে আছে নিনা,ওর সঙ্গে আছে আরেকটি যুবক।নিনা হয়তো কাঁদছে, কিন্তু যুবকটি অগোচরে হাসলো।
এই যুবকটি সেই যে নিনা কে খারাপ কাজ করতে বাধ্য করে।
“বেইবি কাঁদছো কেন?”
সিয়ামের মুখে বেইবি শুনে প্রচন্ড রাগ হয় নিনার।এখানে আসার পর এই লোকটি নিনা কে কিনে নিয়েছে। এরপর থেকেই কল গার্ল হিসেবে তাকে ইউজ করছে।
“শাট আপ সিয়াম, আমি আর এসব করব না।”
নিনা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, দ্রুত গতিতে বাইরে বের হতে লাগে। সিয়াম ওর পিছু পিছু এলো।
“তুই করবি না মানে? একশো বার করতে হবে।চল আমার সঙ্গে।”
সিয়াম নিনা কে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে, গাড়িতে উঠতেই নিনা সজোরে লা’থি মা’রলো সিয়ামের পায়ে। সিয়াম পড়ে গেল, কিন্তু তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো, আশেপাশে কিছু খুঁজতে লাগে নিনা কে আ’ঘা’ত করতে।
বড় সড় একটা স্টিক পড়ে থাকতে দেখে,সেটা তুলে এগিয়ে আসতে লাগল সিয়াম।নিনা ভয় পেয়ে পিছোতে গিয়ে গাড়ির সঙ্গে চেপে গেলো। এদিকে সিয়াম দ্রুত এগিয়ে এসে আ’ঘা’ত করতেই যাবে, তৎক্ষণাৎ তার হাতে কেউ সজোরে ভারী কিছু দিয়ে আ’ঘা’ত করে। সিয়াম উল্টো পড়ে গেল,নিনা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টি দেখে চমকে উঠে।
উৎসা দাঁড়িয়ে আছে, নিজের চোখের সামনে নিজের বোন কে দেখে কথা বলতেই ভুলে গিয়েছে সে।
“আ,,,আপু।মমিহি আপু।”
নিনা খানিকটা দূরে সরে গেল, শুকনো ঢুক গিললো সে।এই মূহুর্তে জার্মানিতে,নিনা পালাতে চাইলো। প্রাণপণে দৌড় লাগায়।
“মিহি আপু দাঁড়াও,আপু দাঁড়াও বলছি।স্টপ।”
উৎসা নিনার পিছু পিছু দৌড় দেয়।
আধঘন্টা আগেই নিনা কে ক্যাফেতে দেখে রিতিমত তম্বা খেয়ে গেলো উৎসা। সে তো বেরিয়ে গিয়েছিল, ভেবেছিল এখান থেকে ডিরেক্ট এয়ার পোর্ট চলে যাবে। যতক্ষণ লাগুক ফ্লাইটের,সে আর থাকবে না এই দেশে।
কিন্তু রাস্তায় যেতে যেতে উৎসার চোখ পড়লো পাশেই একটা ক্যাফেতে।সেদিকের লাস্ট টেবিলে মেয়েটি কে দেখে নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে তার। মিহি,তার বড় বোন।
কিন্তু যখন দেখলো একটা ছেলে তাকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তৎক্ষণাৎ উৎসা ওদের পিছু পিছু গেলো।
“মিহি আপু।”
উৎসা দৌড়ে গিয়ে নিনার হাত চেপে ধরলো।
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?আপু আমি উৎসা, তোমার বোন।”
নিনা ঘাবড়ে গেল, তৎক্ষণাৎ উৎসার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো।
“কে মিহি? অ্যাম নট মিহি।অ্যাম নিনা।”
উৎসা নিনার বাহু চেপে ধরে।
“প্লিজ প্লিজ আপু কেনো মিথ্যে বলছো? তুমি আমার বোন মিহি।”
নিনা নিজেকে আড়াল করতে চাইলো, এত বছরে সে এখানে নিনা নামেই আছে।মিহি থাকা কালীন একটা ভদ্র ভালো মেয়ে ছিল। কিন্তু এখানে আসার পর সবাই মিলে অভ’দ্র নোং’রা ট্যা’গ লাগিয়ে দিয়েছে।
“না আমি নিনা।”
উৎসা গ’র্জে উঠে।
“না, তুমি মিহি, আমার মিহি আপু।”
উৎসা আচমকা নিনা কে জড়িয়ে ধরে।কিয়ৎক্ষণের জন্য থমকে গেল নিনা,তার ছোট্ট বোন কত বড় হয়ে গেছে!
“ছাড় আমায়, আমি তোর বোন না উৎসা।”
উৎসা শব্দ করে হাসলো।
“তুমি আমার বোন। আমি ভুল করব না কখনও, তুমি আমার মিহি আপু।”
বয়স্ক মহিলাটির বাড়িতে নিয়ে এলো নিনা উৎসা কে। মহিলাটি উৎসা কে দেখে সৌজন্য মূলক হাসলো। নিনা পরিচয় করিয়ে দিলো।
“উৎসা উনি হলেন গ্রে মা, উনার কাছেই এত দিন ধরে আছি আমি।”
উৎসা মহিলা কে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখলো। নিনা বললো।
“তুই এখানে কেন এসেছিস?”
উৎসা মৃদু হাসলো।
“তোমাকে খুঁজতে এসেছি, তোমার জন্য আমি এই দেশে কলেজে চান্স পেয়েছি।এত দিন ধরে তোমাকে খুঁজছি। আপু চলো আমরা বাংলাদেশে ফিরে যাবো।”
নিনা দু কদম পিছিয়ে গেলো।
“না না আমি যেতে পারব না। আমি আর ফিরতে পারব না।”
উৎসা সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
“কেনো ফিরতে পারবে না? তোমার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই।”
নিনা অস্থির হয়ে উঠে, কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
“না না আমি আর ফিরতে পারব না। আমাকে কেউ মেনে নেবে না।”
উৎসা নিনার মুখশ্রী হাতের আঁজলায় তুলে নেয়।
“কেনো নেবে না?আপু তোমার সাথে হয়েছে টা কী?বলো আমাকে।”
নিনা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।
মিহি যখন বাংলাদেশ থেকে নিজের বয়ফ্রেন্ড এর হাত ধরে পালিয়েছিল। তখন কী আর জানতো তার সঙ্গে কী হতে চলেছে? জার্মানি আসার পর হ্যাভেন মিহি কে একটা লোকের কাছে বি’ক্রি করে দেয়। সেই লোকটি তাকে দিয়ে কত খারাপ কাজ করিয়েছে সে-ই জানে।
মাসখানেক পর মিহি আর স’হ্য করতে না পেরে পালিয়ে গেল।তখন বয়স্ক মহিলাটি মিহি কে বাঁচায়, ওকে আশ্রয় দেয়। এরপর মিহি নিজের নাম পরিবর্তন করে ফেলে, সারা দিন বাড়িতে থাকলেও রাতে সে একটা বারে কাজ করে। কিছু তো করতে হবে তাকে, এরপর থেকেই চলেছে এসব। কিন্তু মাঝখান থেকে সিয়াম এসে তাকে আবার বাজে কাজ করতে বলছিল। কিন্তু মিহি রাজী হয়নি,আর ওদিকে হ্যাভেন বিয়ে করেছে।হাহ্।
মিহির বলা কথা গুলো শুনে উৎসার অ’ন্তরা’ত্মা কেঁপে উঠলো।
“এত কিছু হয়েছে তোমার সঙ্গে?আপু।”
উৎসা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিহি কে,আর না।সে তার বোন কে নিয়ে চলে যাবে।
“রেডি হয়ে যাও আমরা ফিরে যাব।”
মিহি কপাল চুলকে বলে।
“একদম না। আমাকে কেউ মানবে না। কেউ আবার জন্য অপেক্ষা করছে না।”
উৎসা মিহির গাল ছুঁয়ে বলে।
“কে বলেছে অপেক্ষা করছে না?মা অপেক্ষা করছে, তুমি গেলে মা সুস্থ হয়ে যাবে।”
মিহি চমকে উঠে।
“কী হয়েছে মায়ের?”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো,এখান বলা যাবে না মিহি চলে যেতেই মা অসুস্থ হয়ে প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। তাহলে মিহি নিজেকে দো’ষী করবে।
রেড রোজ পর্ব ২২
“বলব সব, কিন্তু তার আগে আমাদের যেতে হবে। তাড়াতাড়ি করো।”
মিহি কে এক প্রকার জোর করেই উৎসা নিজের সঙ্গে নিয়ে গেল। আপাতত তাকেও এখান থেকে যেতে হবে, ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর সামনে আর কখনও আসবে না।
যে মানুষটি তাকে ভালোবাসে না তার কাছে থাকবে না উৎসা। ঐশ্বর্য কখনও পাবে না উৎসা কে,উৎসা লোক টাকে কখনও মুখ দেখাবে না।
উৎসা আর মিহি বয়স্ক মহিলাটি থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল। ওদিকে ঐশ্বর্য গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে,সে তো জানেই না তার প্রাণ পাখি চলে যাচ্ছে।