রেড রোজ পর্ব ২৪
ফারহানা নিঝুম
হিমশীতল আবহাওয়া, বাইরে তুষারপাত হচ্ছে। ফায়ারফক্সে আ’গু’ন জ্ব’লছে, কাউচের উপর শুয়ে আছে ঐশ্বর্য।
ওর পাশে এসে দাঁড়াল মিস মুনা, তিনি মৃদু স্বরে বলল।
“স্যার?বড় স্যার?”
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো ঐশ্বর্য। চোখের সামনে মিস মুনা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হন।
মিস মুনা স্বভাব সুলভ হাসলো।
“গুড মর্নিং স্যার।”
ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।
“গুড মর্নিং।”
মিস মুনা ভেতরের রুমে গেলেন পরিষ্কার করতে। ঐশ্বর্য ভালো করে বসলো, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে উৎসা কে খুঁজতে লাগল। যতটুকু মনে আছে কাল উৎসা ঐশ্বর্যের সঙ্গে ছিল, তাহলে এখন কোথায়?
ঐশ্বর্য তৎক্ষণাৎ রাতের কথা মনে পড়লো, কী একটা ভেবে উৎসার রুমে গেল। উৎসা নেই রুমে, ঐশ্বর্য পুরো বাড়ি খুঁজলো। শেষমেশ উৎসা কে না পেয়ে মিস মুনার কাছে গেল।
“মিস মুনা আপনি কি উৎসা কে দেখেছেন?”
মিস মুনা খানিকটা ভেবে বললো।
“নো স্যার আজকে আমি দেখিনি ম্যাম কে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঐশ্বর্য চিন্তা পড়ে গেলো,কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। উৎসা পুরো বাড়িতে কোথাও নেই!
ঐশ্বর্য হঠাৎ কিছু একটা ভেবে দৌড়ে উৎসার রুমে গেল। কাবার্ড খুলে দেখলো কোনো জামা কাপড় নেই। ঐশ্বর্য তম্বা খেয়ে গেলো, বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শিট শিট,উৎসা চলে গিয়েছে?হোয়াট দ্যা হেল?”
ঐশ্বর্য পাগলের মতো করতে লাগলো,উৎসা কোথায় গিয়েছে? ঐশ্বর্য চিৎকার করে উঠল।
“উৎসা ড্যাম কোথায় তুমি?”
ঐশ্বর্য দ্রুত ফোন জিসান কে কল করলো।
“জিসান তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়,কুইক।”
জিসান কিছু বলার সুযোগই পেলো না, তার আগেই ঐশ্বর্য ফোন কা’ট করে দেয়।
সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা আর মিহি। উৎসা খুব খুশি,তার মা কত দিন পর বোন কে দেখবে। এদিকে মিহির গলা শুকিয়ে আসছে, না জানি কী অপেক্ষা করছে তার জন্য।
উৎসা আর মিহি রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশ ব্ল্যাক করেছে। ডিরেক্ট বাড়িতে এসেছে ওরা, কলিং বেল বাজানো মাত্র দুতলা থেকে নেমে এলো নিকি। কাজের বুয়া কে ডেকে বললো।
“মিনতি দিদি দরজা টা খুলে দাও।”
মিনতির কোনো পা’ত্তা নেই, আবারও কলিং বেল বেজে উঠল।নিকি বিরক্ত হয়ে নিজেই গেল দরজা খুলতে।
দরজা খোলা মাত্রই চক্ষু দয় আ’টকে গেল নিকির। উৎসা আর মিহি দাঁড়িয়ে আছে,মিহি কে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে নিকি।
মিহি কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো উৎসা,নিকি পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয় মিহির।
মিহি মিনমিনে গলায় বলল।
“ননিকি!”
নিকি হাফ ছেড়ে বাঁচল যেনো, তাহলে এটা তার ভ্র’ম না।নিকি আচমকা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মিহি কে।
“মিহি,তুই ফিরেছিস!ও মাই গড সত্যি তুই চলে এসেছিস?”
মিহি যেনো স্বস্তি পেলো,যাক অন্তত তার বোন তাকে ভুল বুঝেনি।
“হ্যা আমি সত্যি এসেছি।”
নিকি দৌড়ে ভেতরে গিয়ে রুদ্র কে ডাকতে লাগল।
“ভাইয়া, ভাইয়া তুমি কোথায়?দেখো কে এসেছে?”
রুদ্র ল্যাপটপে কাজ করছিল,নিকির কন্ঠস্বর শুনে ড্রয়িং রুমে আসলো। শেষ সিঁড়ির কাছাকাছি এসে পা দুটো যেনো থমকে গেল তার।
অস্ফুট স্বরে বলল।
“মিহি!”
রুদ্র দেখে চোখ দুটো ভরে উঠলো মিহির, রুদ্র নিচে আসতেই মিহি গিয়ে বুকে হা’ম’লে পড়ে।
“ভাইয়া,,,অ্যাম স্যরি।ভভাইয়া আমাকে মাফ করে দাও।”
এত দিন পর নিজের আদরের বোন তাকে ধরেছে, রুদ্রের বুকটা কেঁপে উঠলো। অজান্তেই মিহির চুলে হাত রাখলো, অস্ফুট স্বরে আওড়ালো।
“বোন কেমন আছিস তুই?”
মিহি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো,তার ভাই।
“ভাইয়া আমি ভালো নেই। তোমাদের ছেড়ে ভালো ছিলাম না একটুও।”
রুদ্রের চোখে আজ পানি জমেছে, অগোচরে মুছে নিল সে।
“হেই মিহি তুই কাঁদছিস? পাগলী!”
মিহি সত্যি পাগল,তা না হলে এত সুন্দর ফ্যামিলি ছেড়ে ওই খারাপ মানুষটার সঙ্গে চলে যেতো? কখনও না।
“মিহি তুই!”
আফসানা পাটোয়ারীর কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে সবাই তাকালো,রেগে ফুঁ’সে উঠেছে উনি।বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো মিহির দিকে।হাত টেনে ধরে মিহির।
“অস’ভ্য মেয়ে তুই ফিরে এলি কেন?বের হো এখুনি বের হো।”
আফসানা পাটোয়ারী মিহি কে ধাক্কা দেয়,উৎসা ধরে ফেলল। চেঁচিয়ে উঠলো সে।
“মামী! তোমার সাহস হলো কী করে আমার বোন কে বের করে দেওয়ার?”
আফসানা দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“চুপ, বেশী কথা বললে দু’জন কে বের করে দেবো।”
আজ যেনো উৎসা র’ণ চ’ন্ডী রূপ নিয়েছে।
“তুমি মুখ সামলে কথা বলো,এই বাড়ি আমাদের।এটা আমাদের বাড়ি, আমার বাবার তৈরি করা বাড়ি।”
আফসানা পাটোয়ারী রি রি করছেন, উৎসার কথা ওনার কানে ঝং’কার তুলছে।
“উৎসা! আমি কিন্তু…
“কী করবে তুমি? তুমি আমাদের ঘাড়ের উপর বসে খাচ্ছো।জানো আমরা তোমাকে কেন কিছু বলি না?কারণ তুমি অসময়ে আমাদের ব্যবসা শক্ত করে ধরেছো। সামলেছো, কিন্তু এখন দেখছি তুমি এসব করে যেনো সব কিছুর মা’লিক মনে করো নিজেকে।”
আফসানা পাটোয়ারী কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু পারছে না। রুদ্র বলে উঠে।
“মা প্লিজ দয়া করে চুপ থাকো। তোমার এই রোজকার নাটক ভালো লাগে না।উৎসা তুই মিহি কে নিয়ে উপরে যা।”
আফসানা চিৎকার করে উঠল।
“একদম না,এই ন’ষ্ট মেয়ে কে আমি কিছুতেই এই বাড়িতে থাকতে দেব না। নির্ল’জ্জ মেয়ে কিছু দিন আগে কত কান্ড করে গিয়েছে। এখন আবার এসেছে।”
উৎসা আঙুল তুলে শা’সানোর সহিতে বলে।
“ব্যস মামী, আজকের পর আমার বোন কে নিয়ে একটা বাজে কথা বললে আমি ছেড়ে কথা বলব না। তুমি যদি আমাকে দুটো কথা বা দুটো থা’প্পরই মেরে দিতে তাহলেও কিছু বলতাম না। কিন্তু আমার মা বা আমার বোন কে নিয়ে কিছু বললে আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না।”
আফসানা পাটোয়ারী চমকালেন,এই কোন উৎসা?
উৎসা মিহি কে নিয়ে দুতলায় যেতে লাগে। এদিকে নিকি আর রুদ্র আফসানা পাটোয়ারী কে তাচ্ছিল্য করে বেরিয়ে গেল।
আফসানা পাটোয়ারী এক মুহূর্তের জন্য ভয় পেলেন,এমন মনে হচ্ছে সব কিছু যেন তার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।
“সিরিয়াসলি! আচ্ছা মিস বাংলাদেশী এখন কোথায় আছে সেটা তো বল?”
কিছুক্ষণ আগেই জিসান ঐশ্বর্যের বাড়িতে এসেছে,সে একাই এসেছে,কেয়া হোমে গ্রে মা সঙ্গে কিছু জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিল।তাই আসতে পারেনি।
এখানে আসার পর ঐশ্বর্য কাল উৎসার সঙ্গে ঠিক কী কী করেছে তা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে জিসান।যখন জিজ্ঞেস করে উৎসা কোথায়? ঐশ্বর্য জবাব দিতে পারলো না,দিবেই বা কী? সে তো নিজেও জানে না উৎসা কোথায়?
ঐশ্বর্য বিরক্তের রেশ টেনে বললো।
“সিরিয়াসলি ভাই, সত্যি আমি জানি না,আই রিয়েলি ডোন্ট নো।”
“মানে টা কি? বুঝতে পারছি না মিস বাংলাদেশী গেল কোথায়?”
ঐশ্বর্য আচমকা বাঁ’কা হাসলো।
“যেখানেই যাক,খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। একবার হাতে পাই ট্রাস্ট মি জান খেয়ে ফেলব।”
জিসান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত,সে বলেছে দু’টো মিটিং আছে। জিসান বেরিয়ে গেল, ঐশ্বর্য ঠায় কিছুক্ষণ বসে রইল।
সময়টা তখন ২.৩০ এর কাছাকাছি , ঐশ্বর্য এখনও জেগে আছে। বারংবার মস্তিষ্ক হানা দিচ্ছে,উৎসা ঠিক আছে তো!।ডান হাতের শার্টের হাতা ফোল্ড করে নেয়। আপাতত তার ঘুম প্রয়োজন। ঐশ্বর্য ডক্টরের দেওয়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেয়,যার দরুন কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল সে।বক্ষ স্থলে তীব্র য’ন্ত্র’না হচ্ছে, স’হ্য করার মতো নয়।
পুরোটা দিন ঘুমিয়ে পাড় করলো ঐশ্বর্য, পরের দিন সকালে ডক্টর নিয়ে আসে জিসান আর কেয়া। ঐশ্বর্যের অবস্থা সত্যি খুব খারাপ, ডক্টর মেডিসিন দিয়ে গেলো।
কেয়া ঝাঁ’ঝালো স্বরে বলল।
“রিক হোয়াট হ্যাপেন্ড?এমন কেন করছিস তুই?”
ঐশ্বর্য হাত উঠিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করার মতো পিছন দিকে ঠেলে দিলো।
জিসান প্রচন্ড রেগে গেলো ঐশ্বর্যের ভাবলেশহীন আচরণে।
“তুই কী শুনছিস?”
ঐশ্বর্য হামি তুলে বলে।
“আমাদের টিকিট রেডি কর, বাংলাদেশ যাবো।”
বাংলাদেশ যাবে? কথাটা বেশ অবাক করলো জিসান কেয়া দু’জন কে।
“হোয়াট?রিক আর ইউ ক্র্যাজি?”
কেয়ার কথায় মৃদু হাসলো ঐশ্বর্য।
“তাড়াতাড়ি কর,লেইট হচ্ছে।”
জিসান তর্জনী আঙ্গুল তুলে বললো।
“এক মিনিট বাংলাদেশ যাবি,তার মানে মিস বাংলাদেশী ওখানে আছে অ্যাম আই রাইট?”
ঐশ্বর্য ফের হাসলো।
“অফকোর্স।”
জিসান স’ন্দেহ নিয়ে শুধোয়।
“তুই কি করে জানলি?”
ঐশ্বর্য জুতো পড়তে পড়তে বলে।
“নিকি কে কল করলেই তুই কনফার্ম।”
জিসান তম্বা খেয়ে গেলো, এখন নিকি কে কল করা মানে বাঙালি গা’লি খাওয়া।
“কিন্তু ব্রো এখন কী ভাবে যাবো? আমি তো আমার প্যাকিং পর্যন্ত করিনি!”
কেয়ার কথায় ঐশ্বর্য অকপটে বলে।
“ওখানে গেলে তোকে নতুন ড্রেস দেব, এবার চল।”
কেয়া ভীষণ হ্যাপি হয়ে উঠে।
সময়টা তখন রাত ২.৪৫ ছুঁই ছুঁই, পাটোয়ারী বাড়ির সকলেই গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে।
বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠা মাত্র তীক্ষ্ণ ভাবে তা কর্ণ স্পর্শ করলো উৎসার। বিছানায় উঠে বসলো সে,মাথা ব্যথা করছে তার।এর মধ্যে আবার কলিং বেল বাজলো,উৎসা চমকে উঠে।দেয়ালে টা’ঙ্গা’নো ঘড়িটা দেখলো।এত রাতে কে এসেছে? উৎসা বেশ আগ্রহ নিয়ে বাইরে বের হয়।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বার কয়েক বেল বাজলো।উৎসা বিরক্ত নিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো,চক্ষু চ’ড়কগাছ বলতে গেলে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটি কে দেখে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া….
রেড রোজ পর্ব ২৩
উৎসা আর কিছু বলবে তার পূর্বেই শক্ত হাতের থা’বায় ছিটকে দূরে পড়ে গেল উৎসা।উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই তার আর, মাথায় ঝিম ধরে গেছে। সব কিছু ঝাপসা দেখছে সে,এমন মনে হচ্ছে কানেও কিছু শুনতে পাচ্ছে না। দূর্বল শরীর টা টেনে উঠাতে পারলো না আর,তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে রইল। মূহুর্তে বাড়ি জুড়ে নিরবতা ছেয়ে গেল,উৎসা জানেও না সামনে কী হতে চলেছে?