রেড রোজ পর্ব ২৭

রেড রোজ পর্ব ২৭
ফারহানা নিঝুম

কাঁদায় মাখো মাখো হয়ে পড়ে আছে উৎসা। ঐশ্বর্যের হাসি যেনো থামছেই না,বেশ বিরক্ত হয় উৎসা। রাগে দুঃখে এক মুঠো কাদা তুলে ঐশ্বর্যের উপর ছুড়ে দেয়।
“ইয়াক,হোয়াট ডিড্ ইউ ডু?”
উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“আমাকে বিরক্ত করার সময় মনে ছিলো না! এখন দেখুন আর কী করি?”
উৎসা কথাটা বলতে বলতে ঐশ্বর্যের হাত ধরে টেনে কাঁদায় ফেলে দেয়। ঐশ্বর্য চমকে উঠে, এমনিতেই তার এলার্জি আছে।তার উপর এখন এভাবে কাঁদায় মাখো মাখো হয়ে গেল।
“স্টপ রেড রোজ।”
ঐশ্বর্য উঠে গেল,উৎসা কে টেনে তুললো। ঐশ্বর্য দ্রুত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।তার ইমিডিয়েটলি শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন।

“তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে রিক।”
আফসানা পাটোয়ারী ঐশ্বর্যের রুমে এলো, ঐশ্বর্য আই প্যাড দেখছিল। আফসানা পাটোয়ারী কে দেখে ভ্রুক্ষেপ করলো না। কিন্তু আচমকা আফসানা পাটোয়ারী বলে তার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চায়। ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
“ফাইভ মিনিট.. যা বলার বলুন।”
আফসানা বিরক্তের রেশ টেনে বললো।
“তোমার প্রবলেম কী? কেনো এসেছো এখানে?বার বার কেন আমাদের বাড়িতে আসছো তুমি?”
ঐশ্বর্য এতক্ষণ যাবত আই প্যাডের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। কিন্তু এখন আই প্যাড ডিভানের উপর রেখে পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আফসানা পাটোয়ারীর দিকে।
“প্রথমত এটা আপনার বাড়ি নয় মিসেস মহিলা!আর সম্পর্কের টান যদি ধরি, তাহলে হয়তো এই বাড়িটা আমার ফুপা আর ফুপির তাই না!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আফসানা দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“দেখো তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো! আর কোন অধিকারে থাকবে হ্যা? সবসময় সব কিছু ছি’নিয়ে নেওয়া যায় না।”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“সিরিয়াসলি মিসেস মহিলা? আপনি বলছেন ছিনিয়ে নেওয়া যায় না! আচ্ছা অনেক গুলো বছর আগে যখন একজনের স্বামী কে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তখন মনে ছিল না?”
“ঐশ্বর্য!”
“আস্তে কথা বলুন। আমি যা বলছি একদম সত্য,সেই মহিলার কী অবস্থা করেছিলেন মনে পড়েছে?তার সবচেয়ে বড় সম্পদ নিয়ে নিয়েছেন। এখন আবার আরেকজনের বাড়িতে তারই পদবী নিয়ে ঘুরঘুর করছেন।শেইম অন ইউ মিসেস মহিলা।”

আফসানা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে তার মন চাচ্ছে এই ছেলে কে মে’রে ফেলতে। এত বড় সাহস তাকে অপমান করা!
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব ঐশ্বর্যের আর আফসারর কথোপকথন শুনলো উৎসা।
মনের মধ্যে প্রশ্ন উঁ’কি দিচ্ছে,সে যতটুকু শুনেছে। ঐশ্বর্যের মায়ের সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পরেই আফসানার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে শহীদের। তাহলে এখন ওরা আবার এসব কী বলছে?

সন্ধ্যার আকাশ, সূর্য মামা ডুবে যাচ্ছে। চারিদিক লালচে আভায় আর’ক্তি’ম হয়ে উঠেছে,পাখিরা ফিরছে নীড়ে।
এই সময়টায় ঐশ্বর্য ঘুমাচ্ছে,কী অদ্ভুত তাই না! মাগরিবের আজান কর্ণ স্পর্শ করতেই ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসলো ঐশ্বর্য।
সে বিরক্ত,খুব বিরক্ত।একই তো এখানে কমফোর্টেবল ফিল করছে না।তার উপর ইদানিং তার ঘুমও কম হচ্ছে। এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করতে করতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ঐশ্বর্য। মাথাটা ধরেছে,এই মুহূর্তে কড়া করে এক কাপ কফির প্রয়োজন তার।

ঐশ্বর্য রুম থেকে বের হয় ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে। ড্রয়িং রুমে এসে থমকে গেল ঐশ্বর্য, সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি কে দেখে হৃদয় স্পন্দন দ্রুত গতিতে বেড়ে গিয়েছে।
এলোমেলো চুল গুলো কপালে ছড়িয়ে আছে,মুখে ক্লান্তির ছাপ।পরণের হালকা বাদামি রঙের ওড়না খানি দু’পাশে ঝুলছে। খুব সাধারণ সে, বাদামী রঙের সালোয়ার কামিজে অপূর্ব লাগছে। ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
উৎসা পাটোয়ারী,এক অদ্ভুত মেয়ে।এই মেয়ে কে দেখে বারংবার নিজেকে সংযত করতে অক্ষম ঐশ্বর্য।একেক সময় একেক রূপে নিজেকে প্রদর্শন করে এই মেয়েটি। এই তো জার্মানিতে জ্যাকেট জিন্স টপস্ পড়েছে।তাতেও বারবি ডল এর মতো লাগছিল।আর সেদিন রাতের লাল শাড়িতে নতুন ভাবে দেখিয়েছে।আর আজকে! একদম বাঙালি মেয়েদের মতো সালোয়ার কামিজ।

উৎসা এদিক থেকে ওদিক বারংবার যাচ্ছে আসছে,যার দরুন পায়ের নূপুরের ছন ছন শব্দ কানে তীব্র ভাবে লাগছে ঐশ্বর্যের।
আচমকা নিজের হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে উৎসা। ঐশ্বর্য!হাত ধরেছে তার। উৎসা খানিকটা বিব্রত বোধ করছে।
“কী হয়েছে?”
ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে বললো।
“কিছু মিছু।”
উৎসা থতমত খেয়ে গেল,চোখ পা’কিয়ে বলল।
“অস’ভ্য।”
ঐশ্বর্য আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা?তবে কেউ থাকলেও পাত্তা দেয় না ঐশ্বর্য। আচমকা অদ্ভুত কান্ড ঘ’টিয়ে বসলো।

টুপ করে উৎসার গালে চুমু খায়,চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল উৎসার।মনে হচ্ছে এখুনি মনি কোঠা থেকে বেরিয়ে আসবে।উৎসা মুখ খুলে কিছু বলতে,তবে তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য আবারও চুমু খেল। উৎসা যেনো মূর্তি হয়ে গেছে, এদিকে ঐশ্বর্য সিস বাজাতে বাজাতে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল।
সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। দৌড়ে বাইরে গেল সে, জিসান কে ঐশ্বর্যের কা’ন্ড বলতে।বের হতে গিয়ে ঘটলো আরও একটি বিপ’ত্তি। রুদ্রর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হাতে খানিকটা ব্যথা অনুভব করলো কেয়া।

“উফ্ কী করছো মিস সিনিয়র!দেখতে পাও না নাকি?”
কেয়া ফুঁসে উঠে,একে তো ধাক্কা দিয়েছে,ব্যথাও সেই পেলো! এখন আবার বলছে চোখে দেখিনা?
“এই যে মিস্টার হ্যান্ডসাম একদম বাজে কথা বলবেন না।”
রুদ্র ঠোঁট টিপে হাসলো।কেয়া বিরক্ত হয়ে বলল।
“আমি তো জিসানের কাছে যাচ্ছিলাম, আপনি তো সামনে চলে এলেন।ডিসকাস্টিং।”
রুদ্র বেশ ভাব নিয়ে বললো।
“সিনিয়র আপনারে হে’ব্বি লাগতেছে।”
কেয়া ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই হে’ব্বি?
“মানে বিউটিফুল,একটু বেশি সুন্দর।”
কেয়া চোখ গুলো ছোট ছোট করে নেয়।
“উঁহু, আমি আপনার সিনিয়র।”
রুদ্র হামি তুলে বললে।

“ব্যাপার না, তবুও আপনাকে বাচ্চাদের মতো দেখতে।আর আমাকে আপনার সিনিয়র মনে হয়,তবে একটা কথা বলি। আপনার আমার জুটি কিন্তু সেই লাগবে।কি বলেন মিস সিনিয়র?”
কেয়া মুখ বাঁকিয়ে নেয়।
“হুউ ডার্টি ম্যান।”
“হেই।”
কেয়া যেতে যায়, রুদ্র ওর হাত ধরে। কেয়া নিষ্পলক তাকালো, রুদ্র ঠোঁট গোল করে চুমু ছু’ড়ে দেয়। কেয়ার ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল, শুকনো ঢুক গিললো সে।এই প্রথম ভেতরে ভেতরে কিছু ফিল হচ্ছে তার। এর আগেও অনেকবার সঙ্গে ডেটে গিয়েছে, আরো কত কী?সব কিছুই মজার ছ’লে করেছে। কিন্তু আজ প্রথম ভেতর থেকে কিছু অনুভব করছে সে।
“ছাড়ুন,ধুরা ধুরা পাগল মানুষ।”
রুদ্র কেয়ার কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো। কেয়া দৌড়ে জিসানের কাছে যেতে লাগল। রুদ্র বুঝলো, মেয়েটা অবুঝ।যতই শরীরে বড় হোক! মনের দিক থেকে এখনো বাচ্চা।

“তুই কি সত্যি ঐশ্বর্যের সঙ্গে থাকতে চাস উৎসা?”
উৎসা নিজের রুমে কাপড় গুছিয়ে আলমারি থেকে রাখছিল।সেই সময় মিহি ওর রুমে এসেছে। হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে উৎসা।
মিনমিনে গলায় বলল।
“হঠাৎ এই প্রশ্ন আপু?”
মিহি বিছানার কাছে বসলো।
“দেখ বোন আমি জীবনে যে ভুলটা করেছি,তা তোর জীবনে রিপিট হোক তা আমি চাই না।”
উৎসা বুঝলো,তার বোন এখনও নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বি’শ্রী ঘটনা ভুলতে পারেনি।
“প্লিজ আপু তুমি এসব বলো না।ভুলে যাও সব কিছু।”
মিহি মলিন হাসলো,চাইলেই কি সব ভোলা সম্ভব?
“দেখ আমি সব আস্তে আস্তে ভুলার চেষ্টা করছি। এখন তুই বল,কী ব্যাপার ঐশ্বর্যের?”
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,কি বলবে? ঐশ্বর্য তো তাকে ভালোই বাসে না।

“কী রে চুপ কেন?বল?”
“জানি না আপু,তবে…….
“রেড রোজ কাম ফার্স্ট।”
ঐশ্বর্য উৎসার কথার মাঝখানে এসে উৎসা কে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।মিহি কিছুই বুঝলো না।
ঐশ্বর্য উৎসা কে রুমে এনে ডোর লক করে দেয়
“আরে কী করছেন?ছাড়ুন, সবসময় এত টানাটানি করেন কেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার হাতের উল্টো পিঠ চুমু খায়।
“তুমি কাছে আসো না বলেই এত টানাটানি করতে হয় বেইবি।”
উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।

“সবসময় বাজে কথা বলেন।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো। উৎসা নাক মুখ কুঁচকে বলে।
“আচ্ছা আমাকে কেন ডেকেছেন?”
ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
“এমনি, ভালো লাগছিল না,তাই ভাবলাম তুমি কিছুক্ষণ কাছে থাকো। তুমি কাছে থাকলে ভালো লাগে।”
“আচ্ছা তাই নাকি? আপনি আর আপনার বন্ধু গন, সবাই আস্ত পাগল।আর এই সব পাগল আমাদের বাড়িতে এসে হাজির।”

ঐশ্বর্য বিছানায় গিয়ে বসলো। উৎসা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
ঐশ্বর্য বললো।
“সত্যি তুমি ভালো লাগছে না ইদানিং।”
উৎসা চুপসে গেল, তবুও কী এই লোকটা বলবে ভালোবাসে না?
“লাভ মি?”
ঐশ্বর্য চোখ বুজে জড়ানো কন্ঠে বলে।
“নো।”
“উঁহু,ইউ লাভ মি।”
“আই ডোন্ট লাভ ইউ!”
“সত্যি?”
“ইয়া।”

উৎসা নিশ্চুপ, ঐশ্বর্য আর কিছু বললো না।কিয়ৎক্ষণ চললো নিরবতা। অতঃপর? অতঃপর ঐশ্বর্য টুকরো টুকরো চুমু খায় উৎসার ঘাড়ে ‌। মৃদু কেঁপে উঠলো উৎসা, ঐশ্বর্য কে কিছুটা ধাক্কা দিলো। ঐশ্বর্য উৎসার পেট চেপে ধরে আরো জড়িয়ে নেয় নিজের বুকের সঙ্গে। ঐশ্বর্যের বেসামাল স্পর্শে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে উৎসা। ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো,উৎসা আবেশে চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে নেয়।

রেড রোজ পর্ব ২৬

“ছাড়ুন, আমাকে ছুঁবেন না।”
“বাট হোয়াই? তুমি তো আমার ওয়াইফ।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গেল।
“ওয়াইফ ওই পেপারে, ইসলামী শরিয়তে কবুল বলিনি।যান সরেন।”
“হেই সুইটহার্ট…..
উৎসা দাঁড়ালো না, দৌড়ে বেরিয়ে গেল। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয়। ইসলামী শরিয়তে কবুল! প্রয়োজন হলে বলিয়ে নেবে।

রেড রোজ পর্ব ২৮