রেড রোজ ২ পর্ব ২৬

রেড রোজ ২ পর্ব ২৬
ফারহানা নিঝুম

সময় চলেছে আপন গতিতে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে আছে উৎসা।কপাল ঠেকেছে ঐশ্বর্যের ঘাড়ে, কিন্তু ঘুমের ঘো’রে তার কী সে খেয়াল আছে?যদি থাকতো তাহলে কখনই এমন করতো না। ঘনঘন নিশ্বাস টানছে উৎসা, ঐশ্বর্য বুঝতে পারলো সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ঐশ্বর্য ঘাড় বাঁকিয়ে পাশের সিটে দেখলো জিসান,কেয়া দুজনেই ঘুমিয়ে কাদা হয়ে আছে। ঐশ্বর্য এক পলক তাকালো উৎসার স্নিগ্ধ মুখশ্রীর পানে, অদ্ভুত মায়া কাজ করছে তার। ঐশ্বর্য আলতো করে উৎসা কে কোলে তুলে নিল, ধীর গতিতে সামনের দিক এগুতে লাগলো। স্পেশাল কেবিনে চলে গেল, সিটে গিয়ে উৎসা কে আলতো করে শুয়ে দিল। ঐশ্বর্য গিয়ে ভেতর থেকে সফট ড্রিংকস নিয়ে এলো, আপাতত এটা প্রয়োজন তার। এরপর গিয়ে ভেতরের পর্দা টা টেনে দিলো।

ভেতরে গরম লাগছে তার, উৎসা কে যত বার দেখছে ততবার কেঁপে উঠছে ঐশ্বর্য।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে পাশে গিয়ে বসলো। ঐশ্বর্য গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর উৎসা কে দেখছে, মিনিট দশেক পর ভেতরের লাইট টা অফ হয়ে গেল। ঐশ্বর্য জ্যাকেট খুলে উৎসা কে জড়িয়ে নেয়, এরিমধ্যে উৎসার ঘুম হালকা হয়ে আসে। উৎসা চোখ খুলেই ঐশ্বর্য কে দেখতে পেলো, লোকটা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। উৎসা খেয়াল করে দেখলো সে খুব কাছাকাছি বসে আছে ঐশ্বর্যের।তার উপর ঐশ্বর্যের জ্যাকেট জড়ানো তার গায়,উৎসা উঠতে চাইল কিন্তু পারলো না। ঐশ্বর্য তাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিল, দুদিকে পা ছড়িয়ে বসেছে উৎসা।কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেছে সে, ঐশ্বর্য তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। অস্ফুট স্বরে বলল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তুমি কতটা সুন্দরী জানো রোজ? আমাকে পাগল করার ধা:ন্দায় আছো বুঝি?”
উৎসা থমকালো চমকালোও বটে।
ঐশ্বর্য ফের বলতে লাগল।
❝তোমাকে দেখলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না রোজ। হারিয়ে যাই,নে’শা করতেও ইচ্ছে করে না।ওই সব নে’শায় কিচ্ছু হয় না আমার, তোমার নে’শা বড্ড মা’রাত্মক সুইটহার্ট।❞
উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে হাত রাখলো,মিহি স্বরে বলে উঠে।
“আপনি খুব অদ্ভুত অস’ভ্য রিক চৌধুরী। একটু কী ভালো হতে পারেন না? সবসময় আজেবাজে চিন্তা কেন মাথায়?”
ঐশ্বর্য মুচকি হাসলো, উৎসার গালে স্পর্শ করে বলে।
“মাথায় সবসময় আজেবাজে চিন্তা ঘুরে সেটা তোমাকে দেখলে বেইবি। কন্ট্রোল হারাই তখন!”
উৎসা কপাল কিঞ্চিৎ কুঁচকে নিল।

“ক্যারেক্টারলেস মানুষ আপনি।”
“ইয়া।”
“ছাড়ুন আমায়।”
“না এভাবে থাকো,যদি ত্যারামো করো তাহলে এখানেই অঘটন ঘটাবো।”
উৎসা তবুও জোর করে উঠতে চাইলো, ঐশ্বর্য রাগলো।জে দ দেখিয়ে গলার ট্রাই খুলে উৎসার হাত দুটো পিছমোড়া করে বেঁধে দিল।
“উঁহু কী করছেন?”
ঐশ্বর্য কোনো কথা বললো না, ঝাপটে ধরে বসে রইল। উৎসা কে বুকে জড়িয়ে রেখেছে, উৎসা হাঁসফাঁস করছে!
“প্লিজ ছাড়ুন না! আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।”
ঐশ্বর্য মুখ তুলে চাইল, অস্বস্তি কেন হবে?কিছুই তো করেনি!
“অস্বস্তি কেন?”

“ইস্ এভাবে কোলে বসে থাকতে পারি না! নামান না!”
ঐশ্বর্য শুনলো না, উৎসা কে ওভাবেই জড়িয়ে ধরে বসে রইল।
বার্লিন জার্মানির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। এটি দেশের উত্তর-পূর্ব অংশে স্প্রি নদীর তীরে অবস্থিত। বার্লিন একটি সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন। শহরটি তার বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান, যেমন বার্লিন ওয়াল, ব্রান্ডেনবার্গ গেট, এবং রাইখস্টাগ বিল্ডিং এর জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
অদ্ভুত এই সুন্দর শহরের অনেক কিছুই অজানা এবং অদেখা রয়ে গেল উৎসার।
বার্লিনে অসংখ্য জাদুঘর, শিল্পকেন্দ্র এবং থিয়েটার রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পারগামন মিউজিয়াম এবং আইল্যান্ড মিউজিয়াম কমপ্লেক্স। এটি ইউরোপের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত।
উৎসার ভীষণ শখ বার্লিন শহরের জাদুঘর আর থিয়েটার হলে যাওয়ার।
বার্লিন তার সবুজ পার্ক, নদী এবং খালের জন্যও জনপ্রিয়। যেমন, টিয়ারগার্টেন পার্ক এবং স্প্রি নদীর তীর। শহরটি ভিন্ন সংস্কৃতি এবং বহুমুখী খাবারের জন্য পরিচিত। বার্লিনের নাইটলাইফও অত্যন্ত জীবন্ত এবং বৈচিত্র্যময়।
শহরটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং পরিবহন ব্যবস্থার এক অসাধারণ উদাহরণ, যেখানে সাইক্লিং, ট্রেন এবং বাস পরিবহন সহজলভ্য। বার্লিন তার বহুমাত্রিক ঐতিহাসিক ও আধুনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিশ্ব পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।

বার্লিন শহর নিয়ে লেখা ম্যাগাজিন টা পুরোপুরি ভাবে পড়ে শেষ করলো উৎসা। অজানা অনেক কিছুই আজ সে জেনেছে। ক্লান্ত সে, ফিরেছে কাল অনেকটাই রাতে তাই আজকে আর তার কলেজ যাওয়া হলো না।উৎসা ভেবে রেখেছে কাল থেকে কলেজে যাবে। ঐশ্বর্য সকাল সকাল অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে!এই ফাঁকে কিছুক্ষণ পড়া শেষ করলো উৎসা। এখন বেশ বিরক্ত হয়ে ম্যাগাজিন নিয়ে বসলো,এ দেশ সম্পর্কে তো খুব একটা জানে না তাই আগ্রহী হয়ে ম্যাগাজিন পুরোটা শেষ করে ফেলল।
উৎসার ফোনে তখনই ম্যাসেজ এলো, হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করতেই মুখটা চুপসে গেল তার। আফসানা তাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে, তাতে স্পষ্ট ভাবে বলেছে সে যেনো ঐশ্বর্যের থেকে দূরে থাকে। না হলে আফসানা যা তা করবে!
উৎসা কিঞ্চিৎ চমকে গেল, সর্ব তার মিহির মুখটা ভেসে উঠলো।সে আর যাই হোক তার বোনের কোনো ক্ষ’তি চায় না!

উৎসা কী করবে সত্যি বুঝতে পারছে না,তার কী ঐশ্বর্য কে বলে দেওয়া উচিত এসব কথা? নাকি না!
কিছুই ভাবতে পারছে না,সে জানে আফসানা খুব নির্দয়,যা কিছু করতে পারে! উৎসা এর মধ্যে কিছু না পেয়ে উঠে বেড রুম গেল। নিজের ল্যাকেজ গুছিয়ে নিল,সে ভেবে ফেলেছে । ঐশ্বর্যের কাছাকাছি থাকবে না,সে জানে এ ব্যাপারে অবশ্যই ঐশ্বর্য রে গে যাবে। কিন্তু কিছু করার নেই তাকে যেতেই হবে।
উৎসা এখন ঐশ্বর্যের বাড়ির মেইন ডোরের পাসওয়ার্ড জানে। উৎসা ঝটপট পাসওয়ার্ড টা’ই’প করে,বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। এখন তার উদ্দেশ্য ডিরেক্ট সিরাতের কাছে যাওয়া।সময় এখন দুপুর লাঞ্চ ব্রেক, অবশ্যই সিরাতের সঙ্গে তার দেখা হবে।
কলেজে গিয়ে জানতে পারলো আজ সিরাত কলেজে যায়নি। তাহলে সে নিশ্চয়ই হোস্টেলে আছে,উৎসা দেরী করলো না। দ্রুত পায়ে হোস্টেলের পথে রওনা দিল।
গার্ডিয়ান এসে সিরাত কে ডেকে বললো তার সঙ্গে নাকি একটা মেয়ে দেখা করতে এসেছে।সিরাত দৌড়ে বাইরে এলোই,ল্যাকেজ আছে সিরাত কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকালো!

“সিরাত!”
“উৎসা তুমি ফিরে এসেছো?ও মাই গড! অ্যাম সো হ্যাপি।”
“আমি খুশি তোমাকে দেখে।”
“আচ্ছা তুমি এখানে কেন?রিক চৌধুরী কোথায়?”
উৎসা মলিন হাসলো।
“আমার একটা হেল্প চাই সিরাত!”
“কী হেল্প?আর তোকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?”
উৎসা মলিন মুখ করে একে একে সব কিছু খুলে বললো সিরাত ।সিরাত অবাক হয়ে গেল,সে যত দূর ঐশ্বর্য কে চিনেছে লোকটা বড্ড বদমেজাজি। এখন যদি জানতে পারে উৎসা তাকে ছেড়ে চলে এসেছে তাহলে কী হবে?
“কিন্তু উৎসা যদি জানতে পারে তাহলে কী হবে?”
সিরাত কে ভয় পেতে দেখে উৎসা বলে উঠে।

“চিন্তা করার কারণ নেই, কিছু হলেও আমার সাথে হবে,খুব একটা রাগ ছাড়া কিছুই করবে না।”
উৎসা কোনো রকমে সিরাত কে বুঝিয়ে থাকতে চাইলো।সিরাত একটা রুম নিয়ে দিল তাঁকে।
পড়ন্ত বিকেল এক অনন্য অভিজ্ঞতা , অদ্ভুত সুন্দর এই বার্লিন শহর যেনো আরো সুন্দর হয়ে উঠছে।এই সময় শহরটির পরিবেশে যেন এক সুরম্য শান্তি নেমে এসেছে। আকাশের নীল রঙ ধীরে ধীরে কমলা, গোলাপি, এবং সোনালি রঙে মিশে যায়। সূর্যের আলো যখন স্প্রী নদীর জলে প্রতিফলিত হচছে।
ব্রান্ডেনবার্গ গেটের মতো ঐতিহাসিক স্থানে পড়ন্ত সূর্যের আলোর ছটা এক ধরনের মাধুর্য এনে দিচ্ছে। ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে ড্রাইভ করে ফিরছে চৌধুরী প্যালেসে ।টিয়ারগার্টেন পার্কের দিকে চোখ পড়তেই আরো একটি দৃশ্য দেখতে পেলো।প্রকৃতির রঙের খেলা দেখতে দারুণ লাগে। সোনালি আলো গাছপালার পাতায় এসে পড়লে, পরিবেশটি যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক জীবন্ত চিত্রকর্ম হয়ে ওঠে।

শহরের বিখ্যাত ক্যাফেগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ে, কেউ হালকা গরম কফি হাতে নিয়ে বসে, আবার কেউ বন্ধুর সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠে। এসময় টিভি টাওয়ার বা রাইখস্টাগ ভবন থেকে শহরের দিগন্তজোড়া দৃশ্য দেখার জন্য পর্যটকেরাও ভিড় জমায়। ঐশ্বর্য উৎসার পছন্দের আইসক্রিম আরও কিছু জিনিস নিয়ে নিলো। অতঃপর রওনা দিলো বাড়ির পথে।
বাড়িতে এসেই টনক নড়ে ওঠে তার, মেইন ডোর খোলা আছে। ঐশ্বর্য দ্রুত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো, ভেতরে গিয়ে চমকে গেল।কেউ নেই,কি আশ্চর্য? ঐশ্বর্য পুরো বাড়ি খুঁজে নিলো, করিডোর পার করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। না নেই উৎসা, ব্যস্ত পায়ে ঐশ্বর্য উৎসার রুমে গেল, কাবার্ড চেক করে দেখে ভেতরে কিছু নেই। ঐশ্বর্যের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো, লাগে পাশে থাকা টেবিল টা লা’থি মে’রে দিল। গ’র্জে উঠে ঐশ্বর্য।
“উৎসা ট্রাস্ট মি আই উইল কি’ল ইউ ড্যামেইড,এটার ফল খুব খারাপ হবে।আসছি আমি,আই উইল কাম।জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।”

রেড রোজ ২ পর্ব ২৫

ঐশ্বর্যের হাতে থাকা সব কিছু ছু ড়ে ফেলে দিল,জে দের ব শে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে সিরিঞ্জ বের করে বলিষ্ঠ হাতের পেশিবহুল জায়গায় পুশ করলো। চোখ দুটো তার লাল হয়ে আছে, রাগের পুরো শরীর শিরশির করছে তার।
“এটা মোটেও ঠিক হয়নি সুইটহার্ট,শিট শিট শিট। তুমি নিজেই আমাকে ভালো হতে দিলে না! উফ্ এটার পরিবর্তে কী যে হবে তোমার?”

রেড রোজ ২ পর্ব ২৭