রেড রোজ ২ পর্ব ৩

রেড রোজ ২ পর্ব ৩
ফারহানা নিঝুম

“হেই বেইবি কাম।”
ঐশ্বর্য বার্গহাইন নাইট ক্লাবে একটা মেয়ের সঙ্গে ডেস্পারেটলি ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছে। তৎক্ষণাৎ জিসান ওখানে পৌঁছে গেল।
“হেই শেইম লেস ম্যান চল এখান থেকে।”
ঐশ্বর্যের হু’শ নেই, মেয়ে টা কে ঠোঁট গোল করে চুমু ছুড়ে বায় বলে দিল, জিসান ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? সমস্যা কী তোর? নিয়ে এলি কেন?”
জিসান কপাল চাপড়াচ্ছে এই অসভ্য ছেলে কখনও ভালো হবে না!
“ভাই নিকি কল করেছে! তোকেও কত বার কল করেছে,পায়নি বলেই আমাকে ফোন করলো।”
ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়,ও গড নিকি তাকে নিয়ে একটু বেশি পজেসিভ। বোন বলে কথা!
“তুই এখন নিকির কল আসলে রিসিভ করবি না, আমি রাতে কথা বলে নেব।”
“ওকে।”
“কাম লেটস্ ফান।”

জিসান চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শেইম লেস ম্যান এখানে ফান করতে ব্যস্ত,অথচ বাংলাদেশে তার বউ আছে!
জার্মানির সবচেয়ে বড় বিজনেস ম্যান চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির এক মাত্র উনার ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।সে শৌখিন মানুষ,লাইফে চিল থাকতে পছন্দ করে। দেশে থেকে কিছু করবে তাতে মোটেও পছন্দ নয় ঐশ্বর্যের।সে নিজের আঙ্কেলের সাহায্য নিয়ে জার্মানিতে এত বড় কোম্পানি শুরু করতে পেরেছে।আজ সে সফল, পৃথিবী তার হাতের মুঠোয়।যা ইচ্ছে তাই-ই করতে পারবে,এই যে এখন যেমন বার্লিন শহরের বিশাল আলিশান বাড়ির সামনে গিয়ে গাড়ি থামলো ঐশ্বর্য। তাকে টা’লমা’টাল দেখাচ্ছে, ঢুলতে ঢুলতে ভেতরে গিয়েছে।
ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে, সোফায় বসলো সে। আপাতত খানিকটা ব্রেক প্রয়োজন তার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সোফায় বসে নিজের ফা লতু স্বপ্ন নিয়ে ভাবছে উৎসা।কী অদ্ভুত!শেষে কী না অস’ভ্য রিক চৌধুরী কে নিয়ে স্বপ্ন দেখলো?ছে।
উৎসার এখনো মনে আছে ঐশ্বর্য কী ভাবে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল!সব কিছু কল্পনা হলেও তাদের বিয়েটা ছিল সত্যি। ঐশ্বর্য তাকে ফেলে রেখেই চলে গিয়েছে, কয়দিন পর পর ফ্যামিলির সঙ্গে কথা বলে অথচ তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেনি!আর না কখনও কথা বলতে চেয়েছে!
শহীদের মুখ দেখে উৎসা এই বিয়েটা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু সেখানে বরই নেই সেই বিয়ের মূল্য কী?
চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উৎসা, আপাতত এসব কিছু বাদ দিয়ে পড়তে হবে তাকে। অনেক পড়তে হবে, না হলে পিছিয়ে পড়বে।
ব্যাগ নিয়ে প্রাইভেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিল উৎসা, তৎক্ষণাৎ সাবিনা পাটোয়ারী নিচে এলেন।

“তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস! আজকে তোর আপু আসবে।”
চোখ দুটো চকচক করে উঠলো উৎসার।
“আপু আসবে?”
“হুঁ।”
“ঠিক আছে তাহলে তাড়াতাড়ি ফিরবো।টাটা।”
উৎসা বেরিয়ে গেল।
রাস্তায় যেতে যেতে দেখা হলো মাহমুদের সঙ্গে , মাহমুদ কে দেখে চোয়াল শক্ত করে নেয় উৎসা ‌।এই লোকটা আফসানার মানে শহীদ মামার বউয়ের ভাইয়ের ছেলে।এক নাম্বার অস’ভ্য! উৎসা যথা সম্ভব পাশ কা’টিয়ে চলে যেতে নিল।

“আরে চলে যাচ্ছ যে?”
উৎসা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে।
“তবে কী থাকব?ঘর বানিয়ে দেবেন?”
মাহমুদ থতমত খেয়ে গেল।
“মানে?”
উৎসা ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে।
“এটা রাস্তা, মানুষ রাস্তায় কেন বের হয়? অবশ্যই যাওয়া আসার জন্য!এমন ভাবে জিজ্ঞাস করলেন চলে যাচ্ছ যে?তো কী আপনার কথার মাঝে আমি রাস্তায় থাকব?”
মাহমুদ নিশ্চুপ,মাথা মন্ডু কিছুই বুঝলো না। উৎসা এই সুযোগে ইং বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল।
মনে মনে দুষ্টু হাসি হাসলো।
“শ’য়তা’ন বেডা আমার সঙ্গে ঢঙ করতে উঠেছে!”

লং ড্রাইভে বেরিয়েছে ঐশ্বর্য,আপাতত কিছুটা শান্তি চাই। নিজেকে পা গ ল লাগছে তার কাছে,গাড়ির পিছন থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নিল অনেকটা।
“আই হেইট ইউ বেইবি।”
ঐশ্বর্য কথাটা ঠিক কাকে বললো জানা নেই।নিজ মনে বিড়বিড় করে আওড়াল কিয়ৎক্ষণ। ঐশ্বর্য গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির ডিস্কের উপর শুয়ে পড়ল।
“মিস ইউ, নিড ইউ। খুব বাজে ভাবে চাই।”
ঐশ্বর্য উ’ন্মা’দ, হয়তো এই মূহুর্তে অন্য কেউ তাকে দেখলে পা গ ল বলতো!

স্নিগ্ধ সকাল,নিকির পাশে বসে পাসপোর্টের কিছু কাজ করছে উৎসা। মূলতঃ নিকি কাজ করছে উৎসা পেপার গুলো দেখাচ্ছে।
“ডান এবার শুধু তোর ফ্লাইটের ডেট দেওয়ার কথা।”
উৎসার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো ,ফাইনালি সে জার্মানি যাচ্ছে।
“আচ্ছা আপু আমি যাব ঠিক আছে কিন্তু…
“কিন্তু কোথায় থাকবি সেটাই তো?”
উৎসা উপর নিচে মাথা দোলায় , নিকি ফিক করে হেসে উঠলো।
“কেন তোর না জামাই আছে, ঐশ্বর্য ভাইয়ের কাছে থাকবি।”
উৎসা চমকে উঠে , তৎক্ষণাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
“কী আমি তোমার ভাইয়ের কাছে থাকব? অসম্ভব!”
নিকি ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে।

“কেন?”
“দেখো আপু তোমার ভাই কে আমি চিনি না লোকটা আদেও আমাকে মনে রেখেছে কী না জানি না। হঠাৎ এভাবে গিয়ে আমি কেন কারো বাসায় থাকতে যাব? আমি বরং হোস্টেলে উঠব।”
নিকি ফের আগের ন্যায় শুধোয়।
“কিন্তু কেন? আচ্ছা তুই আমাকে বোঝা কোন পুরুষ মানুষ তার বউ কে ভুলে যায়?”
“উদাহরণ স্বরূপ তোমার ভাই।”
“মানে?”
“দেখো এত গুলো বছরের মধ্যে একবারও আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে?বা আমার সাথে কথা বলেছে? না তো! তাহলে বোঝে নাও লোকটা বিয়ে মানে না সে আমাকে কী মনে রাখবে?”
“আরে ধুর মনে আছে, আমি কথা বলে নেব ভাইয়ের সঙ্গে।তো ফাইনালি তুই যাচ্ছিস জার্মানি।”
“ইয়েস।”
ভাগ্য তাকছ ভবিষ্যতে সঙ্গে পরিচিত করতে ঠিক কোথায় নিয়ে যেতে পারে তা জানা নেই! হয়তো উৎসার ভাগ্যও তাকে ভবিষ্যতে সঙ্গে পরিচিত করতে জার্মানি নিয়ে যাচ্ছে।

“ব্রো আই লাভ ইউ।”
জিসানের মুখে আই লাভ ইউ শুনে কপাল কুঁচকে নেয় ঐশ্বর্য।
“তুই কি ইয়ে নাকি যে আমাকে আই লাভ ইউ বলছিস?”
জিসান নাক মুখ কুঁচকে নেয়!
“ভাই আমি তো প্র্যাকটিস করছিলাম।”
ঐশ্বর্য ডাইনিং থেকে আপেল তুলে নিয়ে ডিভানের উপর আরাম করে বসলো।
“কিসের প্র্যাকটিস করছিস তুই?”
জিসান লজ্জা পাওয়ার ভান করে বললো।
“তোর সিস্টারকে প্রপোজ করার।”
ঐশ্বর্য হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“সিরিয়াসলি? আচ্ছা তোর কী মনে হয় নিকি তোকে এক্সেপ্ট করবে?”
জিসানের এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে ঐশ্বর্য কে দু গা বসিয়ে দিতে।এই কথাটা বলতে পারল?
“ব্রো তুই এই কথাটা বলতে পারলি?”ছে!”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“তো কি বলব?”
জিসান বেশ ভাব নিয়ে বললো।
“তোর তো বউ আছে তবুও ইয়ে করিস , আমার তো তাও নেই।”
ঐশ্বর্যের টনক নড়ে উঠে ,বউ? ঐশ্বর্যের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।উৎসার কথা মনে পড়ছে , আচ্ছা পিচ্চি উৎসা নিশ্চুপই এত দিন বড় হয়ে গেছে!
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।

“ভাইয়া আমার একটা হেল্প চাই , একদম না করতে পারবে না তুমি!”
সকাল সকাল নিকির ফোন পেয়ে কিঞ্চিৎ চমকে উঠে ঐশ্বর্য।ফোন ধরতেই নিকি বললো তার হেল্প চাই , ঐশ্বর্য বুঝতে পারছে কী হেল্প?
“কী হেল্প?”
নিকি আমতা আমতা করে বললো।
“ভাইয়া আসলে আমার এক ফ্রেন্ড জার্মানি যাচ্ছে। পড়াশোনা করবে বলে , এখন তোমার বাড়িতে কিছু দিন থাকতে দেবে? প্লিজ!”
ঐশ্বর্য মহা বিরক্ত নিয়ে বললো।
“হোয়াট? আচ্ছা নিকি তুই জানিস না আমি এভাবে কাউকে অ্যালাও করি না?”
“প্লিজ প্লিজ ভাইয়া ।ও তো পড়াশোনা করতে যাচ্ছে ,খুব ভালো পড়াশোনায় তাই তো চান্স পেয়েছে।”
ঐশ্বর্য ফোঁস করে নিঃশ্বাস টেনে নেয়। বিরক্ত লাগছে এখন থেকেই ,কে না কে তার সাথে থাকবে!
“ওকে ফাইন বাট কিছু দিনের জন্য। এখানে এসে যাতে সব কিছু গুছিয়ে চলে যায়।”
নিকি মনে মনে দুষ্টু হাসলো ,বউ তার বউয়ের সাথে থাকবে না তো কার সাথে থাকবে?

“হ্যা ভাইয়া ও গিয়ে নিজের জন্য হোস্টেল খুঁজে নেবে। তুমি চিন্তা করো না।”
“ওকে ফাইন।”
ঐশ্বর্য ফোন রাখতেই নিকি দৌড়ে রুদ্রের কাছে গেল।
“ভাইয়া শুনো।”
রুদ্র সবে কফির কাপে চুমুক দিয়েছিল। হঠাৎ নিকির ডাক শুনে কফি কাপ রেখে এগিয়ে গেলেন।
“কী হয়েছে বোন?”
“ভাইয়া তুমি জানো ঐশ্বর্য ভাইয়া রাজী হয়ে গেছে!”
“সত্যি?”
“হ্যা।”
“কিন্তু উৎসা ভাইয়ের বউ জানা সত্ত্বেও রাজী হয়ে গেল?”
“আরে বাবা হ্যা।”
উৎসা বাকি কথাটা চেপে গেল।বললো না যে ঐশ্বর্য জানে না উৎসা তার বউ!

“মা আপু তো আসলো না!”
সকালে সাবিনা পাটোয়ারী বলেছিলেন মিহি আসবে আজ, কিন্তু আসেনি। ব্যাপারটা তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না!
“কী জানি ফোন করলাম তো বললো একটু সমস্যা আছে কিছু দিন পর আসবে।”
উৎসা ভাবনায় পড়ে গেল , ইদানিং মিহিটা যে কী করে না?
সন্ধ্যার দিকে রুমে গিয়ে বই নিয়ে বসলো উৎসা , আপাতত কিছু পড়তে হবে। তৎক্ষণাৎ মুঠোফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে নিকির নাম ভাসছে।
“হ্যা আপু বলো?”
“বনু তোর থাকার জায়গা ঠিক হয়ে গেছে!”
উৎসা ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“কোথায়?”
“ভাইয়ের কাছে।”
“এহহ?”
“এহহ না হ্যা। ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেছে তুই থাকতে পারবি।”
উৎসার মাথায় হাত।

“আপু উনি জানেন আমি থাকব? মানে তুমি বলেছো তো আমি উৎসা?”
নিকি চুপ করে গেল ,সে জানে উৎসা যদি জানতে পারে ঐশ্বর্য কিছুই জানে না তাহলে ব্যস হয়ে গেল!
“হ্যা সত্যি আমি বলেছি তুই থাকবি। ভাইয়া বললো তো তার কোনো সমস্যা নেই। আচ্ছা শুন এখন রাখছি ,কাল কথা হবে।”
নিকি ফোন রাখতেই বড়সড় ধাক্কা খেল উৎসা। ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী সত্যি সত্যি তাকে বাড়িতে থাকতে দেবে?
ভাবনার বিষয় লোকটা আদেও জানে তো আমি থাকব?
উৎসা আকাশ পাতাল ভাবছে , তাকে এখন সাবিনা পাটোয়ারী কে রাজী করাতে হবে।তিনি বাইরের দেশে যেতে দিচ্ছে তবে ঐশ্বর্যের ব্যাপারে আল্লাহ মালুম।

রেড রোজ ২ পর্ব ২

সাবিনা পাটোয়ারীর মনে মনে ক্ষোভ রয়েছে ঐশ্বর্যের প্রতি।তার ছোট্ট মেয়ে কে বিয়ে করে ওভাবে চলে গেল?তার উপর উৎসার বাবা নেই , সাবিনা পাটোয়ারী মোটেও মানতে পারেন নি।
উৎসা টেনশনে পড়ে গেল ,কী থেকে কী করবে?

রেড রোজ ২ পর্ব ৪