রেড রোজ ২ পর্ব ৩০
ফারহানা নিঝুম
তুষারের ঝড়, স্নোস্টর্ম , প্রকৃতির এক ভয়ংকর কিন্তু চমৎকার রূপ। এটি তখনই ঘটে যখন তুষারপাত প্রচণ্ড বাতাসের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়। চারদিকে সাদা কুয়াশার মতো তুষার ঘূর্ণি তৈরি করেছে।
কিছুই দেখা যাচ্ছে না,ব্ল্যাক মার্সিডিজ কার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গ্লাসের উপর কেমন ঝাঁপসা হয়ে আছে!
গাড়ির ভেতরে বসে আছে ঐশ্বর্য এবং উৎসা,এই সময় গাড়ি ড্রাইভ করা মোটেও সম্ভব নয় । যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হতে পারে!
তুষারের ঝড়ে সবকিছু ঢেকে যায় এক সাদা চাদরে। ঝড়ের সময় বাতাস এতটাই ঠাণ্ডা ও তীক্ষ্ণ হয় যে বাইরে থাকা বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাটে চলাফেরা কঠিন হয়ে যায়, আর প্রকৃতির এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে ঘরের ভিতরে আটকে রাখতে বাধ্য করে। উৎসা এই ভ’য়ংকর পরিস্থিতি দেখে মিনমিনে গলায় বলল।
“আমরা বাড়ি ফিরব কী করে?”
ঐশ্বর্য নিজেও চিন্তিত!কী করে যাবে ওরা?ঝড় ক্রমশ বাড়ছে।
তবে তুষারের ঝড়ের পরে প্রকৃতির সৌন্দর্য অসাধারণ হয়ে ওঠে। চারপাশে জমে থাকা তুষার, ঝলমলে সূর্যের আলোতে মেলে ধরে এক অপরূপ দৃশ্য। ঝড়ের ভয়াবহতা ভুলিয়ে দেয় সেই সৌন্দর্য। উৎসা জানালা দিয়ে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত,চোখ জুড়িয়ে যায় তার।
“কী সুন্দর তাই না?”
ঐশ্বর্য ঘাড় উঁচু করে বাইরে টা একবার দেখলো, উৎসব জানালা খুলে হাত দিয়ে বরফ কণা ছুঁয়ে দিল।
ঐশ্বর্য গাড়ি ড্রাইভ শুরু করে,উৎসা আঁ’তকে উঠে ।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“কী করছেন? এক্সিডেন্ট হবে তো!”
ঐশ্বর্য দ্রুত গাড়ি চালিয়ে সামনের বড় একটা রিসোর্টে গেল।
“কাম।”
উৎসা কে নিয়ে ভেতরে গেল ঐশ্বর্য,উৎসা রিতিমত কাঁপছে!
“আমরা এখানে কেন এলাম?”
“হানিমুন করতে।”
ঐশ্বর্য চোখ টিপে,উৎসা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে রইল। ঐশ্বর্য ফিচলে হাসলো। উৎসা কে নিয়ে ভেতরে গেল, ঐশ্বর্য রুম বুক করলো। উৎসা ভয়ে ভয়ে ভেতরে গেল, ঐশ্বর্য গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসে। জামাকাপড় কিছুই নেই, আপাতত রাতটা এভাবেই থাকতে হবে। উৎসা বেডের উপর থেকে কম্বল গায়ে জড়িয়ে নিল।
ফোন বেজে উঠল তার,উৎসা রিসিভ করতেই মিহির কান্নারত স্বর শুনতে পেলো।
“আপু তুমি কাঁদছো?”
“বোন তোকে মিস করছি।”
“না আপু তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো।”
মিহি মিথ্যে বলছে। আমতা আমতা করে বলল।
“না আমি..
“মামী কিছু বলেছে তাই না?”
“তুই ছাড় না উৎসা!”
উৎসা রাগে ফোন কে টে দিল, আফসানা নিশ্চয়ই কিছু বলেছে! ঐশ্বর্য ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো,উৎসা একই ভাবে বসে আছে।কিয়ৎক্ষণ পর উঠে দাঁড়ালো, অকস্মাৎ ঐশ্বর্য তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
“রোজ।”
ঐশ্বর্যের জড়ানো কন্ঠস্বর। উৎসা বিরক্ত হলো।
“ছাড়ুন আমাকে!”
“না ছাড়লে?”
“আমি কিন্তু…
“হুস ডোন্ট সাউন্ড।”
উৎসা মোচড় দিয়ে উঠে, ঐশ্বর্য চুল গুলো সরিয়ে ঘাড়ে মুখ গুজে। উৎসা কেঁপে উঠলো,পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে গড়িয়ে গেল শীতল র’ক্ত স্রোত।
“আই নিড ইউ,আই নিড ইউ ইমিডিয়েটলি বেইবি।”
উৎসার প্রচুর রাগ লাগছে! হঠাৎ ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
“ছুঁবেন না আপনি আমাকে।”
“বাট হোয়াই?”
“আপনি ক্যারেক্টারলেস শেইম লেস ওয়াট লেস একটা মানুষ! আপনাকে ঘৃ’ণা করি!”
ঐশ্বর্য চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল,উৎসা আবারও চেঁচিয়ে উঠলো।
“আপনি খুব খারাপ! অস’ভ্যতামোর লিমিট আছে! আমি….
গালে শক্ত হাতের থা’প্প’ড় পড়ল, উৎসা ছিটকে দূরে সরে গেল।
“আমি খুব খুব খারাপ।”
উৎসার নাক কেমন লাল হয়ে আছে।
“আপনি আমাকে যখন তখন মা’রতে পারেন না!”
“একশো বার পারি, হাজার বার পারি।’
উৎসা কে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে ঐশ্বর্য।
“লিভ মি!”
“হাউ ডেয়ার ইউ? আমি টাচ করব না তো কে করবে? ডোন্ট ফরগেট ইউ আর মাই লিগ্যাল ওয়াইফ।”
“আমি কেউ না আপনার,ছাড়ুন। আমি থাকতে চাই না আপনার সঙ্গে।”
ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাকের নিচ ঘষে আচমকা উৎসা কে রুম থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল।
“গেট লস্ট।”
মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল ঐশ্বর্য,উৎসা থম মে রে গেল।সে ছ্যাঁ’চ’ড়া না যে এখনও দাড়িয়ে থাকবে।
উৎসা গঢগঢ করে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে গেল।
বেডে হেলে পড়ে ঐশবূ,নে’শা ধরে যাচ্ছে তার। চোখের কার্নিশ কেমন লাল হয়ে আসছে!মাথাটা ঝিমঝিম করছে!
তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্ক জ্ব’লে উঠল ঐশ্বর্যের,বাইরে তো স্নোস্টার্ম হচ্ছে! তাহলে উৎসা?
ঐশ্বর্য দ্রুত উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেখলো উৎসা নেই।
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শিট!”
বাইরে ঠান্ডা ক্রমশ বাড়ছে, হাঁটতে পারছেন না উৎসা।পুরো শরীর তার জমে গিয়েছে রিতিমত,এক সময় চোখেও ঝাপসা দেখছে সে!আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না শরীরে আর শক্তি নেই। উৎসা মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যেতে নিলো অনুভব করে কেউ তাকে শক্ত করে ধরেছে। অজান্তেই হাত লোকটার কলার চেপে ধরে, উৎসা পিটপিট করে তাকালো। ঐশ্বর্যের গুরুগম্ভীর চাহনিতে মাদ’কতা অনুভব করে উৎসা। ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে উৎসা কে পাঁজাকোলে তুলে নিল।
রিসোর্টে নিয়ে এলো উৎসা কে,নিজ রুমে এসে বেডে শুয়ে দেয়। উৎসা তখনো কাঁপছে, ঐশ্বর্য ডোর লক করে কাবার্ড থেকে আরো একটি কম্বল বের করে উৎসার গায়ে দিল। সমস্ত ঠান্ডা যেনো তাকে জেঁ’কে ধরেছে, ঐশ্বর্য লাইট অফ করে কম্বলের ভেতর ঢুকে গেল। আলগোছে উৎসা কে টেনে নিজের নিচে নিয়ে এলো, নিজের শরীরের সমস্ত ভার উৎসার উপর দিয়ে দিল। উৎসা অস্ফুট স্বরে বলছে।
“আপনি..আপ আমার কাছে আসবেন না একটুও!”
ঐশ্বর্য শুনলো,তবে তার ভাবান্তর নেই। উল্টো সে নিজের উষ্ণ ছোঁয়ায় উৎসা কে উষ্ণ করে তুলে। উৎসা সরতে চাইছে, কিন্তু পারছেও না, ঐশ্বর্য উৎসার কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে।
“আই উইল কি’ল ইউ ড্যামেইড!জাস্ট কিপ ইওর মাউথ শাট!”
“আমি কিন্তু.. ছাড়ুন আমাকে।”
একদিকে ছাড়তে বলছে , অন্য দিকে নিজেই ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরে আছে। ঐশ্বর্য সরু চোখে তাকায় উৎসার দিকে,উৎসা তাকাতে পারছে না।
উৎসার অধর দুটি তীর তীর করে কাঁপছে! ঐশ্বর্যের উষ্ণ ছোঁয়ায় কিছুটা অস্থির হচ্ছে সে। কিছুটা আরামদায়ক অনুভব করে উৎসা ঘুমিয়ে পড়ে। ঐশ্বর্য বুঝতে পারে, এবারে সে কানের লতিতে আলতো করে কা মড় বসিয়ে দিল। ঘুমের মধ্যে মৃদু কেঁপে উঠলো উৎসা, ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো। অতঃপর দু’জনেই ঘুমের মধ্যে অচেতন হয়ে যায়। অদ্ভুত না? উৎসা কেমন ঐশ্বর্যের বুকের নিচে পিষ্ট হচ্ছে,অন্য দিকে ঐশ্বর্য উৎসার মাঝে কিছু খুঁজে পেয়েছে যা তাকে বারংবার বাধ্য করে এই মেয়ের কাছে আসতে।
মিষ্টি এক সকাল। ভোরের আলো কেবল উঁকি দিয়েছে, চারপাশ স্নিগ্ধ। ঘুম ভেঙে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখল নিকি, সূর্যের কোমল রশ্মি আকাশে আঁকিবুঁকি কাটছে। শিশির ভেজা ঘাসে আলো ঝিকিমিকি করে। দূরে পাখির কলরব যেন এক মনোমুগ্ধকর গান শোনাচ্ছে।চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে নিল নিকি। অতঃপর জামা নিয়ে ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।
এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা যেন প্রকৃতির সাথে একান্ত সময় কাটানোর মুহূর্ত। ঠান্ডা বাতাস গায়ে এসে লাগছে নিকির।চায়ের কাপে চুমুক দেয় মাত্র। মন ভরে যায় এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে। চারদিকে এমন শান্ত পরিবেশ যেন জীবন নতুন করে শুরু করার ডাক দিচ্ছে।
আজ সকালে নিজের প্রিয় বইয়ের পাতা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছে রুদ্র। ভীষণ ভাবে মন চাইছে প্রিয় মানুষটির সাথে কিছু সময় কাটানো মনে হয় দিনটাকে আরও সুন্দর করে তুলবে।
“আজকে তোমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে নিকি।”
মায়ের সেই এক কথা! বিরক্ত বোধ করছে নিকি।
“আশা করি তুমি তৈরি হয়ে থাকবে!”
নিকি চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে।
“তুমি কী চাইছো মা?”
আফসানা সোফায় বসে ছিলেন,বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
“আমি চাইছি তুমি বিয়ে করো, গতবার ঐশ্বর্য চলে এসেছিল তাই আর এটা নিয়ে কথা বলিনি। কিন্তু এখন…
নিকি তাচ্ছিল্য করে বলে।
“ঠিক আছে তুমি চাইছো আমি পাত্র পক্ষের সামনে যাইনি তাই হবে, কিন্তু পাত্র পছন্দ না হলে জোর করতে পারবে না।”
নিকি আফসানার উত্তরের অপেক্ষা করলো না,বড় বড় পা ফেলে বাইরের দিকে এগিয়ে গেল।
“তুমি আমার বাচ্চাদের উপর এভাবে নিজের সিদ্ধান্তকে ছাপিয়ে দিও না আফসানা।”
শহীদের সেই আগের কথা! আফসানা চোখ মুখ শক্ত করে নিল। ধমকের সুরে বলল।
“তুমি চুপ করো। আমি একদম তোমার কোনো মতামত জানতে চাই না।”
শহীদের বুক ছিঁ’ড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো।
“ঠিক আছে আমি কিছু বলব না, কিন্তু সময়?সে কিন্তু ঠিকই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে।”
আফসানা শহীদের কথায় গুরুত্ব প্রধান করে না।
এদিকে নিকি আর রুদ্র দুজনেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। ওদের সাথে আজকে যাচ্ছে মিহি, রুদ্র এক প্রকার জোর করেই নিয়ে এসেছে ওকে।
রেড রোজ ২ পর্ব ২৯
“ভাইয়া আমি কী পারবো?”
রুদ্র ড্রাইভ করতে করতে হাসলো।
“না পারলে নিকি আছে মিহি,ও তোকে শিখিয়ে দিবে।”
নিকি খিলখিলিয়ে হেসে বলল।
“হ্যা আমি আছি তো, আমি তোকে সব বলে দেব।তুই শুধু মন দিয়ে কাজ করবি।”
মিহি নিঃশ্বাস টেনে নিল, এবারে অন্তত সিরিয়াস হওয়া উচিত। অনেক তো হলো উদাসীনতা। এবারে সেও কাজ কর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখবে।