রেড রোজ ২ পর্ব ৩১

রেড রোজ ২ পর্ব ৩১
ফারহানা নিঝুম

অকস্মাৎ ঠাস শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় উৎসা। ঐশ্বর্য ফাইট করছে!এই প্রথম ঐশ্বর্য কে এতটা রাগতে দেখছে উৎসা, ঐশ্বর্য বেজায় ছেলেটা কে ইচ্ছে মতো মা’রছে। জিসান কোনো রকমে ঐশ্বর্য কে শান্ত করে ভেতরে নিয়ে এলো।ছোট খাট একটা ক্যাফেতে বসলো, জিসান ইশারায় বললো ঐশ্বর্য কে দেখতে। উৎসা আমতা আমতা করে গিয়ে ঐশ্বর্যের সামনের সিটে বসলো। উৎসা চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো, ঐশ্বর্য টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে। উৎসা লক্ষ্য করে দেখে তার হাত থেকে র’ক্ত পড়ছে, উৎসর বুক ছি ড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো।
উৎসা ব্যাগ থেকে ছোটখাটো ফাস্ট এইড বক্স বের করে, ভেতরে স্যাভলন আর কিছু ক্রিম এবং ছোট্ট ব্যান্ডেজ আছে। উৎসা ঐশ্বর্যের হাত টানতেই ঐশ্বর্য ঝা’ড়ি দিয়ে সরিয়ে নিল, উৎসা কপাল কুঁচকে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে । আবার হাত ধরতে নিলে এবারেও একই কাজ করে সে,উৎসা বিরক্ত হয়ে বলল।

“এমন করছেন কেন?”
ঐশ্বর্য নিশ্চুপ, কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না তার। উৎসা এবারে জোরপূর্বক ওর হাত টেনে ওয়াশ করে ব্যান্ডেজ বেধে দিল।
“আপনি এমন কেন?এত অস’ভ্যতামো করেন কেন?”
ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত পিষে বলে।
“আমি অস’ভ্য তাই এরকম করি।”
ঐশ্বর্য উঠে ক্যাফের বাইরে চলে গেল,কী আশ্চর্য লোক! সবসময় এমন করে!
ঐশ্বর্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল,উৎসাও পিছু ডাকলো না,সেও কলেজে চলে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাহিরে ঘন বর্ষণ হচ্ছে,সাথে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। উৎসা সবে বাড়িতে এসেছে, আজকে কেমন অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। সব কিছুতে ঘোমট ভাব! উৎসা লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো ঐশ্বর্য কাউচের উপর আধশোয়া হয়ে বসে আছে।এক পা তুলে রেখেছে টেবিলের উপর! উৎসা এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ টেবিলের উপর রাখলো। সামনের দিক তাকিয়ে দেখে টিভি চলছে, কিন্তু এদিকে ঐশ্বর্য চোখ বুজে আছে,উৎসা সেন্টার টেবিলের উপর থেকে রিমোট নিয়ে টিভি অফ করে দিল। ঐশ্বর্য চোখ মেলে তাকালো, টেবিলের উপর থেকে সিগা’রেট তুলে নিল। দু-তিন টান দিয়ে ধুঁয়া উড়িয়ে দিচ্ছে,উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়। কেমন বিশ্রী একটা গন্ধ!
উৎসা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লিখে গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে এলো।

“উৎসা এদিকে এসো!”
ঐশ্বর্য খুব কমই উৎসা কে নাম ধরে ডাকে, বরাবরই রেড রোজ, সুইটহার্ট, বেইবি বলেই ডাকে। কিন্তু আজ কী হলো? উৎসা উঠতে গিয়েও উঠলো না।ধীর গতিতে এগিয়ে গেল ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য আকস্মিক লাথি দিয়ে সামনের সেন্টার টেবিল সরিয়ে উৎসার বসার জায়গা করে দিল। উৎসা আঁ’তকে উঠে,ঠিক এই মুহূর্তে ঐশ্বর্য কে ভয়ং’কর ঠেকল উৎসার কাছে।
“আপনি…
“সিট।”
উৎসা একই ভাবে দাড়িয়ে রইল, ঐশ্বর্য চোখ তুলে তাকাতেই ভয়ে শিউরে উঠে উৎসা। কিছু না বলে চুপচাপ বসে পড়ল সে, ঐশ্বর্য সিগা’রেট পুরোটা শেষ করে বলে।
“আমি তোর হাসব্যান্ড,তুই আমার লিগ্যাল ওয়াইফ। আমার অবসেশন তুই,ইউ আর মাই এভরিথিং। কিন্তু তুই আমার কোনো কথাই শুনতে রাজী না, আমার কাছে আসতে প্রবলেম। আমি ছুঁলে প্রবলেম,কিস করলে প্রবলেম!সব কিছুতে প্রবলেম। বাট হোয়াই?”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথায় ভড়কে গেল।

“দেখুন ঐ…
“হুস ডোন্ট সাউন্ড। আজকে আমি বলব তুই শোনবি।”
উৎসা চুপ করে গেল, ঐশ্বর্য ফের বলতে শুরু করে।
“লাইফে আমি একটা জিনিস চেয়েছি,সেটা কী জানিস?তুই! তোকে চাই আমার।বাই হোক অর বাই ক্রুক!তোর বয়স বারো ছিল,তুই আমার জন্য কী ছিলি জানিস? উঁহু জানবি কী করে? আমি তো বলিনি!তুই আমার লাইফ লাইন ছিলি, আমার সব কিছু।তোর সাথে বিয়ে হয়েছে, আমি তো অস’ভ্য রিক চৌধুরী। নিজের অধিকার এক চুলও ছাড় দি না!তাই চলে এসেছি,মাম্মার পর তুই আমার জন্য খুব ইম্পোর্টেন্ট।বাট তুই তো তুই!দ্যা গ্রেট উৎসা পাটোয়ারী!”
ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো,সে ঢুলছে।উৎসা তাকে ধরতে চাইলো কিন্তু ঐশ্বর্য ধরতে দিলো না।
“উঁহু ডোন্ট টাচ, ছুঁবি না আমাকে।তুই ছুঁলে আমি কন্ট্রোল হারাই, এরপর আমি কিছু করতে গেলে তুই বাধা দিবি।তুই জানিস আমি হার্ট হই ইয়ার, আমি কন্ট্রোললেস হলে তোর কাছে আসবো না তো কোথায় যাবো?”
উৎসা মুখ ফসকে বলে উঠে।

“কেন আপনার ক্লাবে অন্য কারো অভাব পড়েছে নাকি?”
ঐশ্বর্য একপেশে হাসলো,ঘাড় দুলিয়ে বলে।
“কারেক্ট।তুই একটুও বুঝলি না! উফ্ বেইবি তুই আমাকে একটা কথা বল আমি তো ছেলে, অ্যাম অ্যা ম্যান। তাহলে আমার ফিজিক্যাল নিডস্ তো থাকবেই তাই না! তুইও কাছে আসবি না, কারো কাছে গেলে জে’লাস ফিল করবি হোয়াট ননসেন্স ইয়ার!”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথার চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে নিল, ঐশ্বর্য নিশ্চই ড্রিংক করেছে।
“আপনি রুমে চলুন, আপনার ঘুম প্রয়োজন।”
ঐশ্বর্য বেজায় ক্ষে’পে গেল।
“শাট আপ, আমি যাবো কী না তুই বলবি?”
উৎসার বাহু টেনে ধরে ঐশ্বর্য।
“হেই লিটল গার্ল আই লাভ ইউ ইডিয়ট।বুঝ না একটু,আই নিড ইউ ইমিডিয়েটলি বেইবি।বাট তুই আমাকে জাস্ট ইগনোর করিস?হাউ ডেয়ার ইউ? ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী কে ইগনোর!”
উৎসা থমকালো চমকালোও বটে,এই প্রথম ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসার কথা বলছে।

“আপনি আমাকে…
“ইয়েস আই লাভ ইউ,ইউ আর মাই অবসেশন ইয়ার। আমি চাইলেও তোকে ছাড়া থাকতে পারব না। আমার বিহেভিয়ার অন্যদের মতো নয়, আমার কাছে টানা এভরিথিং ইজ ডিফ্রেন্ট।”
উৎসার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, ঐশ্বর্যের শক্ত হাতের চাপে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো বোধহয়।
“আমার লাগছে? প্লিজ..
“আমারো লাগছে হার্টে,তুই বরাবরই একটাই কথা বলিস আমার সাথে থাকবি না।থাকবি না তো! আমিও আর রাখব না, গেট আউট।”
উৎসা কিছুই বুঝলো না, ঐশ্বর্য হঠাৎ এমন করছে কেন? ঐশ্বর্য আকস্মিক উৎসার‌ ওষ্ঠাদয় আঁ’ক’ড়ে ধরে, চুমু খায় আশ্লে’ষে চুষে নিচ্ছে। ছেড়ে দিল আবারও। হিসহিসিয়ে বলে উঠে।
“আমি তোকে আর কাছে টানব না।”
উৎসার উত্তরের অপেক্ষা করে না ঐশ্বর্য, আবারো উৎসার ঠোঁটের ভাঁজে ম’ত্ত হয়। উৎসা ব্যথা অনুভব করে, কিন্তু তাতে ঐশ্বর্যের কী?

ঐশ্বর্য ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়,এবারে হঠাৎ বের করে দিল উৎসা কে।
“প্লিজ দরজা খুলুন? আপনি কি করছেন?”
উৎসা বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলছে, কিন্তু ঐশ্বর্য!সে মোটেও খুলবে না।সেও বলে উঠে।
“উঁহু যা তুই,তুই অলওয়েজ এমন করিস।থাকতে হবে না আমার সাথে গেট লস্ট।”
উৎসা অপেক্ষা করলো না বেরিয়ে গেল।
সোজা সিরাতের কাছে,আপাতত ও ছাড়া আর কেউ নেই এখানে। জিসানের কাছে যেতে পারতো আর না হলে কেয়া। কিন্তু ঐশ্বর্য তখন ভাবতো উৎসা ছ্যাঁ’চ’ড়া, কিন্তু সে তো মোটেও তা নয়। কিন্তু উৎসা থেমেছে সেখানে, ঐশ্বর্যের বলা সেই ভালোবাসার‌ কথায়। ঐশ্বর্য তাকে সত্যি ভালোবাসে? বিশ্বাস হচ্ছে না উৎসার।

রোদ ঝলমলে দুপুর, বাড়িতে কিছু গেস্ট এসেছে। আফসানার সম্পর্কে ফ্রেন্ড হয় ওনারা,তাদের মধ্যে একজন পুরুষ বলে উঠেন।
“আচ্ছা আফসানা নিকি কোথায়?”
আফসানা কিছুটা বিব্রত বোধ করলো, কতবার বলেছে মেয়ে টাকে আজকে অফিসে যেতে হবে না, কিন্তু কে শোনে কার কথা? আফসানা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে।
“এখুনি চলে আসবে।”
আফসানা উঠে গেল, শহীদ সৌজন্য মূলক ওদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। এদিকে আফসানা গিয়ে নিকি কল করে।
অফিসের কাজ করতে করতে ক্লান্ত নিকি, তারপরও বাড়ি ফিরতে চাচ্ছে না সে। ফোনের কর্কশ শব্দে ধ্যান ভে ঙে গেল নিকির, আফসানার নাম্বার। উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রিসিভ করলো।

“হ্যালো।”
“নিকি কোথায় তুই?কখন বললাম আসতে!
“আসছি আমি।”
“দেখো নিকি একদম বিরক্ত করবে না,আর না কোনো উল্টো পাল্টা কাজ! চুপচাপ বাড়িতে এসো।”
নিকি আর কিছু বললো না, রুদ্র তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। সে বুঝতে পারছে নিকির ব্যাপার টা, কিন্তু কী করার?
রুদ্র গাড়ি চালাচ্ছে,নিকি চুপচাপ বসে আছে।
“তুই কী চাস নিকি?”
রুদ্রর প্রশ্নে নিকি তবুও চুপ,কিয়ৎক্ষণ নিজ থেকেই বলে উঠে।
“আপাতত শান্তি চাই,এসব অশান্তি আর নিতে পারছি না ভাইয়া!”
“তোকে জোর করলে আমি আছি,তুই এক বার দেখা কর। যদি পছন্দ না হয় তাহলে আমি নিজে তোকে সাপোর্ট করব।”
নিকি কিছুটা স্বস্তি পেলো।

দুপুর বেলা,খাবার দেওয়া হয়েছে টেবিলে।ঠিক সেই সময় নিকি এলো,পরণে তার কালো রঙের জিন্স আর ফ্রগ। আফসানা ভুবন ভোলানো হাসি টেনে এগিয়ে গেল।
“যা গিয়ে শাড়ি পড়ে আয়।”
নিকি নাহুচ করলো।
“প্লিজ মা এসবে জোর করলে আমি কিন্তু….
তৎক্ষণাৎ ছেলেটি বলে উঠে।
“নিকি এসো।”
নিকি অধরে মেকি হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল, টেবিলে চেয়ার টেনে বসে। আলতাফ নামে যে ছেলেটা এসেছিল নিকি কে দেখতে সে বলে উঠে।

“তারপর বলো নিকি কেমন চলছে দিন কাল?”
নিকি গ্লাস তুলে পানি খেলো।আলতাফ আর ওর ফ্যামিলি মডার্ন যুগের।
“আমার জীবন আমার মতই চলছে।”
নিকির সাফ কথা, আলতাফ আলতো হাসলো।
“বিয়ে এসব নিয়ে কোনো প্ল্যান নেই?”
“না।”
নিকির কথায় চমকে উঠে আলতাফ। আফসানা কড়া চোখে তাকাল নিকির দিকে।
“আরে আলতাফ নিকি তেমন ভাবে ভেবেনি!”
নিকি মাঝখান থেকে বলে উঠে।
“উঁহু, একদমই তা না মা। আমার যাকে পছন্দ হবে অবশ্যই তাকে বিয়ে করব।”
আলতাফ ভ্রু কুঁচকে নিল।
“তার মানে তুমি কী প্রথম থেকেই কাউকে পছন্দ করো?”
নিকি বলে উঠে।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩০

“হ্যা।এক্সকিউজ অ্যাজ!”
নিকি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, আফসানা ওর হাত টেনে ধরে।
“নিকি কী হচ্ছে এসব?কী বলছো?”
“যেটা সত্যি তাই বলছি।”
রুদ্র পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো। আফসানা খুব বি’শ্রী একটা পরিবেশে পড়ে গেল।নিকি গঢগঢ করে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল, ঠিক সেই মুহূর্তে রুদ্রও ওর পিছু পিছু ছুটে।
আফসানা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,মেয়ে তাকে এভাবে হে’নস্তা করলো?নিকি ডিরেক্ট রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। এদিকে পাত্র পক্ষ সবাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তৎকালীন সেই স্থান ত্যাগ করে। আফসানা দাঁতে দাঁত চেপে সেই অপমান স’হ্য করলো।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩২