রেড রোজ ২ পর্ব ৩২
ফারহানা নিঝুম
আজ পুরো তিনদিন ধরে উৎসা আর ঐশ্বর্যের দেখা নেই।তবে উৎসা সৌজন্য মূলক ভাবে ঐশ্বর্যের খবর নিয়েছে। কিন্তু তাতে জানতে পেরেছে ঐশ্বর্য দেশে নেই, সম্ভবত বিজনেসের জন্য বাইরে গিয়েছে।
কাল থেকে উৎসার সেমিষ্টার শুরু হচ্ছে, পড়াশোনায় ভীষণ মিস ব্যস্ত উৎসা।
এই যে ভোর তিনটে থেকে পড়তে বসেছে এখন বাজে সাড়ে সাতটা। গায়ে বড়সড় চাদর জড়িয়ে টেবিলের উপর বইয়ে মুখ গুঁজে বসে আছে সে।চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে!রাত বারোটা পর্যন্ত পড়েছে এরপর আর রেস্ট নেওয়ার সময়টুকু পায়নি, মাত্র দু ঘন্টা ঠিক মতো ঘুমিয়েছে।
সিরাত এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে, কী আশ্চর্য! উৎসা কাল এগারোটা পর্যন্ত জাগিয়ে রাখতে পেরেছে। পরীক্ষা শুরু হবে অথচ তার কোনো টান নেই।
উৎসা উঠে গিয়ে সিরাতের রুমের দিকে গেল।পুরো হোস্টেল যেনো ঘুমিয়ে আছে!
“সিরাত?সিরাত! আমি উৎসা,সিরাত?”
ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ আসছে না, কিন্তু উৎসা থেমে থাকেনি। আবারও কয়েকবার দরজায় কড়া নাড়ে।
“সিরাত? কোথায় তুমি? উঠো!”
ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল সিরাত,চোখে এখনো ঘুম ভর্তি।
“কী হইছে উৎসা?কেন ডাকছো?”
উৎসা তম্বা খেয়ে গেল।
“সিরাত তুমি এখনও ঘুমাচ্ছো? সিরিয়াসলি?”
“উফ্ উৎসা তো কী করব?”
“কাল থেকে সেমিষ্টার আর তুমি? উফ্ আই কান্ট বিলিভ ইট!”
সিরাত বিছানায় বসে বললো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ঘুম আর ঘুম।”
উৎসা হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“এভাবে চললে গুল্লা খাবে।”
“সে দেখা যাবে।”
সিরাত আকস্মিক বলে উঠে।
“বাই দ্যা ওয়ে উৎসা এবার তোমার ভিলেন এলো না তোমাকে নিতে!”
উৎসার হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীতে দেখা দিল ঘন কালো মেঘের আভাস।
“না তেমন কিছু না।সে নিতে আসবে এমন তো কথা নেই।”
সিরাত কোণাকুণি চোখে তাকায় উৎসার দিকে।
“রিয়েলি? কিন্তু তোর মুখ দেখে তো তা বোঝা যাচ্ছে না!”
উৎসা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।
“আচ্ছা আমি যাই পড়তে হবে,আর কলেজেও যেতে হবে।”
সিরাত অসহায় চোখে তাকায় উৎসার দিকে,উৎসা নাক মুখ কুঁচকে বেরিয়ে গেল। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘ শ্বাস, কেমন অদ্ভুত ফিল হচ্ছে। অবশ্যই সেটা চৌধুরী প্যালেস থেকে আসার পর থেকে। ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে বিয়ে করেছে তাহলে কেন এত নাটক? বিরক্তিকর!যাই হোক সে ভাববে না ওই অস’ভ্য রিক চৌধুরী কে নিয়ে!সে কী একবারের জন্যও তাকে নিয়ে ভেবেছে? নিশ্চয়ই ভাবেনি। উৎসা বড় বড় পা ফেলে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। কলেজের জন্য তৈরি হয়ে নিল সে, পিংক কালারের ওয়ের্স্টান ট্রি শার্ট আর সাথে লেংগিস পড়েছে।মাথায় একটা হোয়াইট স্কাফ,চুল গুলো উঁচু করে বাঁধা, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল উৎসা। হেঁটে যাবে সে, হাঁটতে ইচ্ছে করছে ভীষণ।
হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে উৎসা, সামনে যেতেই কারো কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
“কিউট গার্ল!”
উৎসা চমকিত হয়ে পিছন ফিরে তাকালো,কেয়া আর জিসান দাঁড়িয়ে আছে।
“হেই মিস বাংলাদেশী!”
উৎসা মৃদু হাসলো।
“আপু, ভাইয়া তোমরা?”
উৎসা এগিয়ে এলো, কেয়া এসে আলগোছে জড়িয়ে ধরে তাকে।
“মিস ইউ সো মাচ কিউট গার্ল।”
“মিস ইউ টু আপু।”
“মিস বাংলাদেশী লেটস্ গো।”
উৎসা ভ্রু কুঁচকে শুধোয়।
“কোথায়?”
কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো।
“চলো চলো,গেলেই দেখতে পাবে।”
উৎসা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে ভেতরে যেতে লাগলো, জিসান গাড়ির দরজা খুলে দিল।কেয়া আর উৎসা গিয়ে বসলো।
“ভাইয়া বলো না কোথায় যাচ্ছি?”
“ওটা সারপ্রাইজ!আগে যাই এরপর জানতে পারবে।”
উৎসা কিছুই বুঝতে পারছে না কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ঐশ্বর্য কে? উৎসা চুপচাপ বসে রইল পুরোটা সময়। কিছুক্ষণ পর একটা জায়গায় এসে থামলো ওদের গাড়ি।একটা বিল্ডিংয়ের সামনে, কিন্তু এই জায়গায় কেন এসেছে?
“ভাইয়া এটা কোন জায়গা?”
কেয়া মৃদু হাসলো।
“এত প্রশ্ন করো কেন?চলোই না এরপর জানতে পারবে।”
উৎসা কে জোরপূর্বক সেই বিল্ডিংয়ে নিয়ে গেল জিসান আর কেয়া। উৎসা আর কোনো প্রশ্ন করলো না, ওদের পিছু পিছু যেতে লাগল। মিনিটের মধ্যে লিফটে করে উপরে টপ ফ্লোরে চলে গেল। ওখানে যেতেই উৎসা একটা দরজা দেখতে পেলো, উৎসা ফিসফিসিয়ে বলল।
“ওখানে কী?”
জিসান চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে।
“নিজেই দেখো!”
উৎসা ভেতরে পা রাখতে যাবে তার পূর্বেই চোখ পড়ল সামনের ব্ল্যাক মার্সিডিজ কারের দিকে। উৎসা চমকে উঠে, হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গেল। তৎক্ষণাৎ আলো চলে যায় , উৎসা ভয় পেলো। কাঁপা গলায় বললো।
“আপু,কেয়া আপু? জিসান ভাইয়া তোমরা কোথায়?”
উৎসা জিসান আর কেয়া কে ডাকছে কিন্তু কারো সাড়া শব্দ নেই। উৎসার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে,ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। এভাবে তাকে ফেলে ওরা চলে গেল?
“প্লিজ তোমরা কোথায়? আমার ভীষণ ভয় কর….
উৎসা কিছু বলতে পারলো না,উদরে কারো বলিষ্ঠ হাতের শীতল স্পর্শ পেলো।সেই কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ,উৎসা আবেশে চোখ বুজে নেয়। উৎসার কাঁপুনি দ্বিগুণ হলো।
“আ.. আপনি?”
কাঙ্ক্ষিত মানুষটি কে কাছে পেয়ে হৃদ যন্ত্রটা লাফাতে শুরু করেছে এক প্রকার! ঐশ্বর্যের শীতল হাতের ছোঁয়ায় উৎসার জান যায় যায় অবস্থা!
ঐশ্বর্য কিছুটা কাছে এলো , পুরুষালী অধর দুটি উৎসার চুলে স্পর্শ করে।আলতো করে চুল গুলো সরিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল ঘাড়ে। উৎসা প্রচন্ড ভালো লাগায় নিজের জামা খাম’চে ধরে।
“ছুঁবেন না আমাকে!”
“ওকে।”
ঐশ্বর্য সরে যাওয়ার বদলে আরো উৎসার কাছাকাছি এলো। উৎসার উদরে চাপ দিল,উৎসা মৃদু আ’র্তনা’দ করে উঠে। ঐশ্বর্য সামনের দিকে ডান হাত এনে উৎসার মুখ চেপে ধরে। আকস্মিক এই কান্ডে হতভম্ব উৎসা, ঐশ্বর্য চুমু গুলো কেমন টুকরো টুকরো কা’ম’ড়ে পরিণত হচ্ছে।
“আই নিড ইউ ব্যাডলি রোজ। ট্রাস্ট মি আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।”
উৎসার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, ঐশ্বর্য বুঝতে পারছে। ছেড়ে দিল তাকে,তবে এখনো নিজের কাছাকাছি ধরে রেখেছে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে।
“হ্যাপি বার্থডে বেইবি, মেইনি মেইনি হ্যাপি রিটার্ন অফ দ্যা ডে। অ্যান্ড আই লাভ ইউ।”
উৎসা থমকালো,আজ তার জন্মদিন? হ্যা আজ তো তার জন্মদিন, কিন্তু কি আশ্চর্য!সে তো ভুলেই গেছিল!
লাইট জ্বলে উঠে, উৎসা চোখ বুজে নিল। আকস্মিক আলোতে কেমন চোখ ধাঁ’ধিয়ে আসছে তার! পিটপিট চোখ করে তাকালো সে, সাদা রঙের একটা শার্ট পরে আছে ঐশ্বর্য,সাথে কালো প্যান্ট, সিল্কি চুল গুলো কেমন এলোমেলো! ঐশ্বর্য উৎসা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরলো,তার ভীষণ অকোয়ার্ড ফিল হচ্ছে। মস্তিষ্ক বলছে উৎসা কে একটি টাইট হাগ করে ঝাপটে লিপ কিস করা উচিত। কিন্তু তার হার্ট বলছে কন্ট্রোল রিক চৌধুরী!
উৎসা তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ, ঐশ্বর্য সুদর্শন। সুন্দর হে কিন্তু ভাব বেশী! ঐশ্বর্য এক পা এগিয়ে এলো, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠে।
“কাম উইথ মি।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে ধরে, ওকে নিয়ে ভেতরের সেই বদ্ধ রুমের দিকে। পুরো রুম কেমন অন্ধকার হয়ে আছে।
ঐশ্বর্য ভেতরে গিয়ে লাইট অন করতেই উৎসা রিতিমত চমকে উঠে।
বার্থ ডে পার্টির জন্য রুম সাজানো ,ছোট ছোট বেলুন সাথে আশেপাশে ড্রিম লাইট লাগানো ,Fairy Lights ব্যবহার করে দেয়ালে আলোর সজ্জা করা হয়েছে।
সব দিকে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে। ঐশ্বর্য পকেটে হাত গুজে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সামলে বড় একটি “Welcome” বার্থ ডে বোর্ডে বড় করে লিখা আছে। মাঝখানে একটা ছোট্ট সাজানো টেবিলের উপর কেক রাখা আছে,যার মাঝখানে লিখা হ্যাপি বার্থডে মাই রেড রোজ।”
উৎসা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো বোধহয়, চুপচাপ আশেপাশে দেখে যাচ্ছে।পুরো রোম যেনো পার্পল রঙে ঢাকা,রুমের ডান দিকে পার্পল রঙের ছোট টেন্ট সাজানো আছে। দুজন শোয়ার মতো ব্যবস্থা করা।একটি Teepee স্টাইলের,সম্পূর্ণ টেন্টটি পার্পল শেডে।হালকা ল্যাভেন্ডার থেকে গাঢ় পার্পল পর্যন্ত রঙের ভিন্নতা রাখা যেতে পারে।
মেঝেতে হোয়াইট শেডের নরম কার্পেট ম্যাট।Fairy Lights ব্যবহার করে টেন্টের ভেতর আলোকিত করা হয়েছে।
“এত কিছু? আপনি কী করে?”
ঐশ্বর্য ত্বরিতে এগিয়ে এসে উৎসার কো’ম’ড় টেনে জড়িয়ে ধরে।
“ইউ আর মাই অবসেশন,মাই লাভ। আই নো এভরিথিং।”
উৎসা ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে আছে পালক দৃষ্টিতে। ঐশ্বর্য তাকে নিয়ে টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
“কেক কা’টো!”
ঐশ্বর্য কেকের পাশে থাকা ছু’ড়ি টা তুলে উৎসার হাতে দিল। কাঁপা হাতে তা নিল উৎসা, ক্যান্ডেলে ফু দিত নিভিয়ে নিল।কেক কে টে প্রথম পিস ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে দিল। ঐশ্বর্য অল্প একটু খেলো, এরপর উৎসা কে খাইয়ে দিতে গিয়েও থেমে গেল।আবারো থেমে গেল, কেকের পিস নিজের মুখে পু’রে এগিয়ে গেল। উৎসা চমকে গেল, ঐশ্বর্য একটু এগিয়ে যেতেই উৎসা বেঁকে যায়। কিন্তু ঐশ্বর্য কী সেগুলো দেখে? উঁহু দেখার প্রয়োজন নেই তার। ঐশ্বর্য ওর কলার টেনে কাছাকাছি টেনে ওর ওষ্ঠে ওষ্ঠা মিলিয়ে দিল। উৎসা ভারসাম্য বজায় রাখতে ঐশ্বর্যের গলা জড়িয়ে ধরে। মিনিট পাঁচেক পর নিজেই ছেড়ে দিল ঐশ্বর্য, তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাকের নিচ ঘষে ঠোঁট মুছে নিল। উৎসা লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস টানছে!
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী,, আমি নিঃশ্বাস..
“উফ্ রোজ ইটস্ হার্ট!”
উৎসা আড় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে।
“ওকে কাম উইথ মি।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে নিয়ে টেন্টের ভেতরে গেল, ভেতর গিয়ে বাইরের আলো সুইট টিপে নিভিয়ে দেয়। এবং আরো একটি বাটন টিপতেই স্নো হোয়াইট পড়তে লাগে।
“গিভ মি ইওর হ্যান্ড।”
উৎসা আঁ’তকে উঠে।
“কী?”
“হাত দাও।”
উৎসা হাত এগিয়ে দিতেই, ঐশ্বর্য বক্স থেকে একটা ডায়মন্ড রিং বের করে উৎসার রিং ফিঙ্গারে পড়িয়ে দিল। ঠোঁট নিচে করে সেখান টায় ছুঁয়ে দেয়। শব্দ করে চুমু খেল।
“এটা?”
“ইওর বার্থ ডে গিফট,টু নাইস নাইট স্পেশাল টু মি।”
“যেমন?”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো, উৎসার চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে অস্ফুট স্বরে বলল।
“তুমি আছো তাই।”
উৎসা ভ্রু কুঁচকে শুধোয়।
“আমি? আমি থাকলে কি?”
“ইউর আইস, ইউর লিপস,”ইউর চিক্স,ইওর নেক,ইওর চে…
“চুপ!”
ঐশ্বর্যের শেষের কথাটা শেষ করতে দিল না উৎসা,মুখ চেপে ধরে তার।কপাল ভাঁজ করে বলে উঠে।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী, সবসময় এগুলো নিয়ে ভাবেন?”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“উঁহু, ভাবিনি না দেখি।”
উৎসার চোখ দুটো বড় হয়ে গেল।
“কী?”
ঐশ্বর্য ওর গলা জড়িয়ে নিজের কাছাকাছি এনে কানে গাল ঘষে।
রেড রোজ ২ পর্ব ৩১
“এভরিথিং অ্যাবাউট ইউ ড্রাইভস মি ক্রেজি রোজ।”
উৎসা পাশের কুশান দিয়ে ঐশ্বর্যের বাহুতে মা রে।
“অস’ভ্য অস’ভ্য!”
“হ্যা অনেক, আজকে যদি আরো বেশি অস’ভ্য হই তাহলে?”