রেড রোজ ২ পর্ব ৩৩

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৩
ফারহানা নিঝুম

“এগুলো?”
“সব তোমার বার্থ ডে গিফট।”
উৎসা আশ্চর্যের ন্যায় তাকিয়ে আছে সামনের বক্স গুলোর দিকে। কিছুক্ষণ আগেই ঐশ্বর্য তাকে এত গুলো গিফট বক্স দিয়েছে। সেগুলোর খোলা মাত্রই চমকে উঠে সে, ভেতরে প্রত্যেকটি জিনিস ডায়মন্ডের। ডায়মন্ডের ইয়ার রিং, নেকলেস ব্রেসলেট,ওয়াচ আরো অনেক কিছু। আরেকটা বক্স খুলে দেখলো ভেতরে একটা ছোট্ট কাঁচের তৈরি মুন যার ভেতরে একজোড়া প্রেমিক যুগল।একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে,এই জিনিসটা বেশ লেগেছে উৎসার কাছে।একে একে সব বক্স খুলে ফেলল উৎসা, ভেতরে অনেক গুলো ছবি আছে উৎসার,সাথে এলবাম।ডলস হাউস , ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে আরো একটি বক্স দিলো।এটা খুলতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল তার। বক্স খুলতেই বেরিয়ে এলো লাল গোলাপ।
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।

“উফ্ স্মাইল!”
উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
“আপনার মাথার সব গুলো তার ছিঁ’ড়ে গেছে এখন বুঝলাম ।”
ঐশ্বর্য তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ, দৃষ্টি তার উৎসার ঠোঁটের দিকে। উৎসার হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী থেমে গেল, ঐশ্বর্যের তাকানো দেখে ভ্রু উঁচিয়ে শুধোয়।
“কী?”
ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে উৎসা কে টেনে তার কোলে বসালো। উৎসার অস্বস্তি বাড়ে, এভাবে কোলে বসতে কেমন লজ্জা লাগে তার!
“নে’শা ধরে যাচ্ছে।ইফ আই কিস ইউ ওয়ান মোর টাইম?”
উৎসা নত মস্তকে বসে রইল, ঐশ্বর্য একটু কাছাকাছি টেনে উৎসার ঠোঁটে কা’ম’ড় বসায়,উৎসা সরতে নিলে ঐশ্বর্যের হাতের বাঁধনে আটকে পড়ে। ঐশ্বর্য কন্ট্রোললেস হলো, কিছুটা উ’ন্মা’দ তার দেখালো। ঐশ্বর্যের আচরণে উৎসা ভড়কে যায়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ঐ,, ঐশ্বর্য প্লিজ প্লিজ থামুন!”
ঐশ্বর্য ঘাড় থেকে মুখ তুলে তাকায় উৎসার স্নিগ্ধ মুখশ্রীর পানে।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
উৎসা ঐশ্বর্যের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। ঐশ্বর্য বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে তার গালে স্লাইড করে।
“বেইবি আই লাভ ইউ তো, তাহলে এখন প্রবলেম কোথায়?”
“দেখুন আমাদের বিয়ের কথা তো কেউ জানে না তাই না?”
“কে বললো?কেয়া, জিসান ওরা তো সবাই জানে।”
“উঁহু আপনার আমার ফ্যামিলি ওরা তো জানে না। দেখুন এভাবে লুকিয়ে সব কিছু আমি চাই না আপনি…
ঐশ্বর্য উঠে বসলো, উৎসা ঠিক বুঝলো না ঐশ্বর্য কী রেগে গিয়েছে?
“প্লিজ আপনি আমার কথাটা..
“জাস্ট অ্যা মিনিট।”
ঐশ্বর্য টেন্ট থেকে বের হলো, উৎসা নত মস্তকে বসে রইল সেইভাবে।কেন জানি তার মনে হচ্ছে ঐশ্বর্য তার উপর রে গে আছে।
মিনিট দশেক পর ভেতরে এলো ঐশ্বর্য। উৎসা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

“আপনি কি রেগে গেলেন?”
“নো ওয়ে।আই ক্যান আন্ডেস্ট্যান্ড।”
ঐশ্বর্য হাত টেনে তাকে বুকে নিল।
“আর ইউ ওকে?”
“হুঁ।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বুক লেপ্টে রইলো কিয়ৎক্ষণ।
“আচ্ছা এখন আমরা এখানে কেন? কলেজ যাওয়া হলো না!কাল এক্সাম।”
ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
“আমি ঘুমাবো তাই এখানে। আর কলেজে কাল থেকে যেও।”
উৎসা শুয়ে আছে আচমকা মনে পড়ে গেল জিসান আর কেয়ার কথা।

“এই শুনুন কেয়া আপু আর জিসান ভাইয়া কোথায়?”
“ওরা চলে গেছে।”
“ছিহ্ আপনি কেমন? ওদের ডাকলেন না?কেকও খেলো না।”
ঐশ্বর্য নিজ স্টাইলে সিল্কি চুল গুলো ডান হাত দিয়ে ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দিল।
“উফ্ বিকেলে সারপ্রাইজ আছে,তখন খাইয়ে দিও।”
“তাহলে এখন কলেজে যাই?”
ঐশ্বর্য গম্ভীর মুখে বলে।
“নো, আমি ঘুমাবো এন্ড ইউ উইল বি মাই পিচ।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে ঠেলে বেডে ফেলে দিল, নিজের সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে দিল তার উপর।স্কাফ টেনে খুলে বুকে মাথা রাখে। উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, অস’ভ্য রিক চৌধুরী কখনও ভালো হবে না।

ফ্লাইটে বসে আছে নিকি,মিহি আর রুদ্র, দু’জনে পাড়ি জমিয়েছে জার্মানির উদ্দেশ্য। তবে জার্নিটা সহজ ছিল না,তার জন্য আফসানার সঙ্গে কত রকম কথা কা’টাকা’টি হয়েছে শুধু তারাই জানে।
উৎসার বার্থ ডে সেই উপলক্ষে ওদের দেওয়া বেস্ট পার্টি হবে এটা।এই ব্যাপারে শুধু ঐশ্বর্য ছাড়া আর কেউই তেমন জানে না।
আফসানা কখনো চায়নি নিকি আর রুদ্র ঐশ্বর্যের কাছাকাছি যাক।সেই নিয়ে শহীদের সঙ্গে তাদের সং’ঘর্ষ হয়েছে রিতিমত। এবং কী আফসানা নিকি কে হুমকি দিয়েছে যদি ওরা জার্মানি যায় তাহলে তার ম’রা মুখ দেখবে!
নিকি তো পাত্তাই দিলো না,সে একটু জানে তার মায়ের সৎ সাহস নেই যে সুই’সাইড করে নেবে। আফসানা নিজেও এটা করবে না কখনো,এত তাড়াতাড়ি ম’রার শখ নেই ওনার।

জার্মানির সন্ধ্যা বেশ মনোমুগ্ধকর এবং বৈচিত্র্যময়। মানুষের ভিড় যেনো এই সন্ধ্যা কে আরো ভয়ং’কর করে তুলে।এখানে শহর এবং গ্রামের পরিবেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। শহরাঞ্চলে সন্ধ্যায় রাস্তাগুলি আলোয় ঝলমল করে। বার্লিন, মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো শহরগুলিতে ক্যাফে, বার, এবং রেস্তোরাঁগুলোতে মানুষের ভিড় থাকে। স্থানীয় এবং পর্যটকরা মিলে এক প্রাণবন্ত পরিবেশ তৈরি করে তুলে।সাথে পার্টি তো আছেই, ঠিক সন্ধ্যা থেকেই যুবক যুবতী সবাই মিলে আনন্দের সাথে বের হয় বাড়ি থেকে।কেউ বা ফ্যামিলির সঙ্গে।
বড়সড় ফাইভ স্টার ক্যাফেতে উৎসার বার্থ ডে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। উৎসার কাছে এগুলো অজানা,সে শুধু জানে ঐশ্বর্য বলেছে বিকেলে সারপ্রাইজ। অবশ্য তার মুখটা কেমন ভারী হয়ে আছে!তারও একটা কারণ আছে। ঐশ্বর্য তাকে নিজের সাথে করে নিয়ে গেল না।

দীর্ঘ দু ঘন্টা ঐশ্বর্য উৎসা কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছে। উৎসা একটু সময়ের জন্যেও নড়তে পারেনি, যখন তার ঘুম ভাঙল কেমন অদ্ভুত বিহেভ করতে শুরু করে।ড্রাইভ করে উৎসা কে হোস্টেলে ছেড়ে যায় তাতেই মন ভারী হয় উৎসার।
বিকেলে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঝিমুচ্ছে উৎসা আকস্মিক কেউ পিছন থেকে চিৎকার করে বলে উঠে।
“সারপ্রাইজ!”
উৎসা ত্বরিতে পিছন ফিরে তাকালো, রুদ্র, নিকি মিহি কে দেখে চমকে গেল।
“ভাইয়া? আপু তোমরা?”
নিকি এসে জাপটে ধরে উৎসা কে।
“ইয়েসসসস।”
মিহিও হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী নিয়ে এগিয়ে এলো।
“কেমন লাগল সারপ্রাইজ?”
রুদ্রর কথায় কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না উৎসা।
“আমি কী বলব?”
“হ্যাপি বার্থডে সিস্টার।”
মিহি আলতো করে উৎসার কপালে চুমু খেল।এই জন্মদিন তার জন্য খুব স্পেশাল হয়ে উঠেছে।এত বড় সারপ্রাইজ পাবে সত্যি ভাবেনি।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, আনন্দ উল্লাসে সবাই। আরো একবার কেক কে’টেছে উৎসা।সফট মিউজিক টুন বাজছে, সবাই কাপল ড্যান্স করছে। ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে উৎসার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।নিকি জোরপূর্বক উৎসার হাত টেনে ঐশ্বর্যের হাতে দিলো।গানের তালে তালে স্টেপ বাই স্টেপ মেলাচ্ছে দুজনেই।নিকি অনুভব করলো তার হাতের কারো স্পর্শ।
একে একে ড্যান্স ফ্লোর মে তে উঠেছে।কেয়াও কম যায় না,সব ভুলে গিয়ে একজনের সঙ্গে ড্যান্স ফ্লোরে এগিয়ে গেল। রুদ্র যেনো তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো, জোরপূর্বক এগিয়ে গিয়ে কেয়ার হাত টেনে ধরে। অতঃপর তিনটে জুড়ি একে অপরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেচে উঠে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার চোখের আড়ালে উৎসা কে টেনে নিয়ে গেল ঐশ্বর্য। উৎসা আশ্চর্য হলো।

“কী হয়েছে? আপনি…
উৎসা কে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে অনবরত ঠোঁটে একের পর এক চুমু খায় ঐশ্বর্য।
“ইস্ কী করছেন?ছাড়ুন প্লিজ?”
ঐশ্বর্য কবে শুনেছে কার কথা?
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি এগেইন!”
ঐশ্বর্য পাগলাটে হয়ে উঠেছে, উৎসা ঐশ্বর্য কে থামাতে পারছে না। ঐশ্বর্যের বেসামাল স্পর্শ গুলোতে কেমন বেঁকে যাচ্ছে উৎসা।

ভোর সাড়ে পাঁচটা ছুঁই ছুঁই, বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সবাই। চৌধুরী প্যালেসে নেমে এসেছে পিনপতন নীরবতা। পেটের কাছে কিছুটা শীতলতা অনুভব করে উৎসা, গভীর ঘুম ছুটে গেল মূহুর্তে।এক জোড়া চোখ দেখতে পেলো সে। মানুষটি তার বড্ড চেনা! উৎসা হাত বাড়িয়ে গাল ছুঁয়ে দিল।
“এতটা উ’ন্মা’দ কেন?”
ঐশ্বর্য পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে কন্ট্রোললেস হচ্ছে সে।এমনিতেই তার পুরো দেহে রিতিমত ঝ’ড় বয়ে যাচ্ছে।
“কাম।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে বেড থেকে নামিয়ে পাশ থেকে চাদর নিয়ে গায়ে জড়িয়ে পাঁজাকোলা করে ছাদের দিকে এগুতে লাগলো।

“আমি যেতে পারব।”
“টু ডে ইউ আর দ্যা প্রিন্সেস।”
“আর পরের দিন গুলো?”
উৎসা ভ্রু কুঁচকিয়ে শুধোয়।
ঐশ্বর্য দুষ্টু হাসে।
“পরের দিন গুলো রাণী।”
“ঢঙ বা’জ।”
“সিরিয়াসলি।”
“আই নো।”
উৎসার কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো ঐশ্বর্য।ছাদে নিয়ে গিয়ে রেলিংয়ের কাছে দাঁড় করালো তাকে।
“লুক দ্যা মুন লাইট নাইট।”
উৎসা আকাশের দিকে তাকায়, চাঁদ উঠেছে। অসম্ভব সুন্দর দেখতে।
ঐশ্বর্য এসে উৎসা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, ঘাড়ের চুল গুলো সরিয়ে সেখানটায় বাইট করলো।

“বেইবি ডু ইউ লাইক দ্যাট?”
“হুঁ, এরকম জোৎস্না রাত অসম্ভব ভালো লাগে আমার।”
“আই নো।”
“কী করে?”
ঐশ্বর্য আরো একবার বাইট করলো।
“আই নো ইওর এভরিথিং বেইবি।”
উৎসা সরে গেল।
“আমি বাচ্চা না।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে।
“বেবি মানে বাচ্চা বেইবি মানে বড় বাচ্চা।”
ঐশ্বর্য চোখ টিপে, উৎসার কান দুটো রিতিমত গরম হয়ে উঠে।

“আপনার কথাবার্তার লাগাম নেই। উফ্ অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
“আমি…
“কাছে আসবেন না।”
ঐশ্বর্য আরো দ্বিগুন গতিতে এগিয়ে এলো।
“ছুঁবেন না আমাকে। ডোন্ট টাচ।”
“টাচ, টাচ, টাচ।”
“উফ্।”
“যেটা করতে মানা করবে তা আমি পূর্ণ জোসের সঙ্গে করব।”ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড এক্সাক্টলি হোয়াট আই’ম সেইং?”
উৎসা ছিটকে সরে গেল।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩২

“অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্য এগিয়ে আসতে নিলে উৎসা দৌড় দিল।
“রেড রোজ স্টপ দেয়ার, আমি ধরলে কিন্তু খবর আছে?”
উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
“আগে ধরে তো দেখান!”
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এগুলো দেখে বেহুঁশ হওয়ার উপক্রম নিকির। ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার। এটা কী হচ্ছে?

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৪