রেড রোজ ২ পর্ব ৩৬

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৬
ফারহানা নিঝুম

ছাদের উপর টা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো আছে,নিকি সবে কফি কাপ নিয়ে ছাদে উঠে এসেছিল। রেলিং ধরে জিসান কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়লো নিকির।
“উহু উহু!”
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো জিসান।
নিকি দাঁড়িয়ে আছে, সাদা রঙের একটা টপস পড়েছে সে।চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া, ঠোঁটে লিপবাম।দারুণ দেখতে তাকে। জিসান তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি।
“কী ব্যাপার কখন এলেন?কেউ তো বলেনি!”
জিসান বেশ ভাব নিয়ে বললো।

“ওই আর কি, গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে যাব।তাই রিকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম।”
নিকি কফি কাপে চুমুক দিতেই চাচ্ছি, তৎক্ষণাৎ গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে কেশে উঠে।
“কী? গার্লফ্রেন্ড?”
“হ্যা ওই আর কি? আমার গার্লফ্রেন্ড কে আজ প্রপোজ করব তাই উৎসা আর রিকের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছি।”
নিকির মুখটা কেমন হা হয়ে গেল! তৎক্ষণাৎ দৌড়ে উপরে এলো উৎসা।
“আপু!”
নিকি পিছনে ঘুরতেই দেখে ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা।
“আপু তাড়াতাড়ি ভাইয়ার কিছু ভালো ফটো তুলে দাও তো।”
উৎসা তড়িঘড়ি করে স্ট্যান্ডে ক্যামেরা ফিট করে দিল।নিকির হাত থেকে কফি কাপ নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে দেয়। এদিকে নিকি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তারই সামনে তারই পুরুষ আরেকজন প্রপোজ করার কথা বলছে? উৎসা রাগে ফুঁসছে কিন্তু কী বলবে? তাকে তো কখনো ভালোবাসার কথাই বলেনি,আর না নিকি কিছু বলেছে! উৎসা ঠেলেঠুলে নিকি কে সামনে দাঁড় করায়, জিসানাও বেশ স্টাইল নিয়ে দাঁড়ালো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“অ্যাংরি বার্ড কাম অন।”
নিকির ইচ্ছে করছে ক্যামেরা স্ট্যান্ড তুলে জিসানের মাথায় ভা’রী দিক।নিকির পিছনে দাঁড়িয়ে হেসে কুটিকুটি অবস্থা উৎসা,বেশ ভালোই বুঝতে পারছে নিকির মনের অবস্থা।
নিকি ক্যামেরায় চোখ রাখে, অনেক গুলো সুন্দর ছবি তুলে দিল। জিসান এবারে রেলিংয়ের উপর উঠে বসে,নিকি আঁ’তকে উঠে!
“আরে পড়ে যাবেন তো!”
“নো নো তুমি ছবি তুলো।”
নিকি দাঁতে দাঁত পিষে ছবি তুলতে লাগলো, জিসান চুল ঠিক করে সোজা হতে গিয়ে ছাদ থেকে পিছলে পড়ে গেল।
“আহ্..
জিসানের আ’র্ত’নাদ শুনে বুক ধুক করে উঠলো নিকির।
“জিসান…

নিকি দৌড়ে রেলিংয়ের দিকে এগিয়ে গেল। নিচের দিকে তাকাতে আরেক দফা চমকে উঠে,হাতে বড়সড় ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।পাশে দুজন মহিলা ফুলের তোড়া নিয়ে আছেন। সামনে একটি লাল রঙের কার্পেট বিছানো, অসংখ্য গোলাপের পাপড়ি। পিছনের দিকে একটা বোর্ড লাগানো যেখানে স্পষ্ট লিখা আছে উইল ইউ ম্যারি মি?নিকি যেনো দেহে প্রান ফিরে পেলো,এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল হয়তো জিসান কে!
জিসান নিচ থেকে চিৎকার করে বলে উঠে।
“উইল ইউ ম্যারি মি অ্যাংরি বার্ড! প্লিজ ডোন্ট সে নো,আই কান্ট টেইক দিস।”
নিকি কান্নার মাঝেও হেসে ফেলল,পিছন ঘুরে দেখে উৎসা হাসছে। চোখের ইশারায় বলে তাড়াতাড়ি যেতে, নিকি এক মূহুর্তের জন্য অপেক্ষা করলো না।উৎসাও দৌড়ে রেলিংয়ের কাছে ক্যামেরা নিয়ে গেল,এই সুন্দর মূহুর্ত মিস করতে চাইছে না। ক্যামেরা ব’ন্দি করে নেব,নিকি দৌড়ে গিয়ে জিসান কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। সাথে তার কান্নারাও এসে ভিড় জমায়।

“পড়ে গেলে কী হতো? আমি…
“আই লাভ ইউ।”
“আই লাভ ইউ ইনফিনিটি।”
জিসান আঁক’ড়ে ধরে নিকি কে।সে সফল আজকে সে সবচেয়ে খুশি।তার মানুষ পেয়েছে,তার প্রিন্সেস।
নিকি বুক থেকে মুখ তুলে তাকায়, জিসান কপালে চুমু এঁকে দেয়।নিকি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল।
“আপনি কোথায় ব্যথা পাননি তো?”
জিসান ফিচলে হাসে।
“আরে পাগলী না।এই যে দেখো আমি একদম ফিট এন্ড ফাইন।”

কাল দেশে ফিরছে সবাই, উৎসার বার্থ ডে উপলক্ষে এসেছিল সবাই। যাওয়ার সময় এসে গিয়েছে, কিন্তু মজার ব্যাপার উৎসা ওদের সঙ্গে ফিরতে চাইছে। যেহেতু এক্সাম শেষ আপাতত হাতে এক মাস সময় আছে,ততটা সময় ফ্যামিলির সঙ্গে থাকতে চায়।
কথাটা বলা মাত্রই সবাই ঐশ্বর্যের দিকে তাকালো, ঐশ্বর্য ল্যাপটপ হাতে কাউচের উপর বসে আছে। উৎসার যাওয়ার কথা শুনে কপাল কিঞ্চিৎ কুঁচকে নিল। রুদ্র বলে উঠে।
“ভাইয়া তুমি কী বলো?”
ঐশ্বর্য গম্ভীর মুখ করে এক নজর দেখে উৎসার দিকে। অতঃপর বলে উঠে।
“ওকে বাট প্রাইভেট জেটে।”

সবাই হৈ হৈ করে উঠলো, ঐশ্বর্য সিঁড়ির দিকে এগুতে লাগলো। কিন্তু কী একটা ভেবে পিছন ফিরে বলে উঠে।
“আহ্ জিসান আর কেয়া রেডি হয়ে নে তোরাও যাচ্ছিস!”
উৎসা থতমত খেয়ে গেল, কেয়া আর জিসান একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। উৎসা ভয় পেলো,ওরা যাচ্ছে মানে ঐশ্বর্যও যাবে! উৎসা হাঁ’সফাঁ’স করছে, উৎসা সিঁড়ির দিকে তাকালো। ঐশ্বর্য তার দিকেই তাকিয়ে ছিল, চোখাচোখি হতেই ঐশ্বর্য ভ্রু উঁচিয়ে কিছু একটা বোঝায়। অতঃপর পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে, কিছুটা হিসহিসিয়ে বলে।
“গেট রেডি বেইবি।”
উৎসা দৃষ্টি নত করে নেয়, একবার বাংলাদেশ যাক এরপর ঐশ্বর্যের থেকে দূরে কী করে যাবে তা ঠিক করে দেবে। আপাতত তার দূরে থাকাই দরকার, ঐশ্বর্য যে ভাবে তর প্রতি অবসেস্ট তাতে কখন কী করে তা ভাবনার বাইরে।

স্নিগ্ধ সকাল মৃদু হাওয়া বইছে বাড়ি শুদ্ধ ঘুমাচ্ছে।
ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে উৎসা, সকাল সকাল রান্না ঘরে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করে নিল। টেবিলের উপর তা দিয়েও দিলো, ড্রয়িং রুম গুছিয়ে ছাদের দিকে গেল। চিলেকোঠার ঘরে রাখা ভেজা কাপড় গুলো বের করে দড়িতে মেলে দিলো।ছাদের কাজ শেষ করতে করতে সাড়ে আটটা বেজে উঠে,নিচে যেতেই নজরে এলো সদর দরজা খোলা আছে। উৎসা বুঝতে পারলো ঐশ্বর্য হয়তো জগিংয়ে বেরিয়ে গেছে। নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসে উৎসা।ধীরে ধীরে পুরো বাড়ি জেগে উঠে, কাজের বুয়াও চলে এলো।বাকি কাজ গুলো উনি করতে শুরু করেন।
পড়া শেষে আবার নিচে এলো উৎসা সোফায় বসে চা খাচ্ছেন শহীদ, ওনার পাশে বসে আছে রুদ্র। এদিকে টেবিলের চেয়ারে বসে আছে আফসানা। আফসানা কে দেখা মাত্র চোখ মুখ কেমন শক্ত হয়ে আসে তার! আজকে আফসানার সঙ্গে কথা বলতেই হবে, এত সাহস হলো কী করে তার বোন কে কষ্ট দেওয়ার!
সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ঐশ্বর্য আর জিসান। ঐশ্বর্য কে দেখে পিলে চমকে উঠে উৎসার, অনূভুতি হীন দৃষ্টিতে তাকালো। ঘেমে একাকার অবস্থা লোকটার, গায়ের জগিং স্যুট লেপ্টে আছে। বুকের উপরিভাগ ভিজে গিয়েছে ঘামে! উৎসা তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ, ঐশ্বর্য স্বভাব সুলভ ব্যাক ব্রাশ করে সিল্কি চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিল। এগিয়ে যেতে নিলে শহীদ বলে উঠে।

“ঐশ্বর্য।”
ঐশ্বর্য বাঁকা চোখে তাকায় শহীদের দিকে।
“আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”
ঐশ্বর্য লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল, সামনাসামনি সোফায় বসে। দৃষ্টি তার সেন্টার টেবিলের উপর।
“রাজেশ ফোন করেছিল বললো তুমি নাকি এখানে নতুন ব্রাঞ্চ খুলবে?”
রাজেশের নাম শুনতেই কান খা’ড়া করলো আফসানা। ঐশ্বর্য চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে।
“হ্যা নতুন ব্রাঞ্চ খুলছি আর সেটা সামলানোর দায়িত্ব রুদ্রর।”
“ঠিক আছে কিন্তু রাজেশ কেন সব দায়িত্ব নিচ্ছে? তুমিই বা কেন ওকে এতটা…
ঐশ্বর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, বিরক্তের রেশ টেনে বলে।
“প্লিজ আপনি অন্তত আঙ্কেল কে নিয়ে কিছু বলবেন না। উনাকে সব কিছুর দায়িত্ব আমিই দিয়েছি।”
শহীদ তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো।
“ঐশ্বর্য তুমি কেন বুঝতে পারছো না রাজেশ ততটা সুবিধার নয়!”
ঐশ্বর্য তাচ্ছিল্য করে বলে।
“সে তো আপনিও নন।”
“ঐশ্বর্য…
“চিৎকার করবেন না। আমার বিজনেস আমি বুঝে নেব। প্লিজ আমি আপনাদের কমপ্লিমেন্ট চাই না!”
ঐশ্বর্য বেজায় রেগে গিয়ে বড় বড় পা ফেলে দুতলায় চলে গেল। জিসান ওর পিছু পিছু যায়, রুদ্র নিশ্চুপ।কাকে কি বলবে? দু’জনেই একে অপরের সঙ্গে ঝামেলা করতে ব্যস্ত!

বাইরে বাগানে গেল উৎসা,হাতে তার কে’রো’সিনের বোতল।আজ সে আফসানা কে চরম শিক্ষা দেবে। কে’রোসিন ঢেলে রাউন্ড রাউন্ড ঘুরালো উৎসা,তার মাথায় আজ রাগ চেপে বসেছে!
অতঃপর বোতল রেখে বাড়ির ভেতরে গেল, আফসানা টিভির সামনে বসে আছে। উৎসা গিয়ে আফসানার হাত টেনে ধরে।
“চলো আমার তোমার সাথে কথা আছে!”
আফসানা কিড় মিড় করে বলে উঠে।
“তুই আমার হাত ধরেছিস কোন সাহসে? আমার তোর সাথে কোনো কথা নেই ছাড়।”
উৎসাও নাছোড়বান্দা,হাত চেপে ধরে টানতে টানতে বাইরে বাগানের দিকে নিয়ে গেল।
“উৎসা ছাড় বলছি আমি কিন্তু তোকে…
উৎসা ধাক্কা দিয়ে আফসানা কে সেই রাউন্ডের ভেতর ঢুকিয়ে দিল। চেঁচিয়ে বলে উঠে।
“তোমার সাহস হলো কী করে আমার আপু কে আ’ঘা’ত করার? হাউ ডেয়ার ইউ?”
আফসানা চোখ পাকিয়ে বলে উঠে।

“তুই আমাকে প্রশ্ন করছিস?বেশ করেছি,কি করবি তুই?”
উৎসা অদ্ভুত হাসলো।
“দেখো তবে কী করি।”
উৎসা ম্যাচ বের করে আগুন ধরিয়ে দিল। আফসানা কপাল কুঁচকে বলে উঠে।
“এই কী করতে চাইছিস তুই?”
আফসানা এগুতে যাবে সেই মূহূর্তে উৎসা আ’গু’নের কাঠিটা ছুড়ে ফেলল তার দিকে। তৎক্ষণাৎ রাউন্ড আকৃতির হয়ে আ’গু’ন জ্ব’লে উঠে। আফসানা চিৎকার করে উঠে।
“আ,,আ’গু’ন বাঁচাও।”
উৎসা দাঁতে দাঁত পিষে বলে।
“এটাই তোমার লাস্ট ওয়া’র্নিং আমার বোন কে আ’ঘা’ত করার আগে দশ বার ভাববে এই উৎসা ঠিক কী করতে পারে?”
“উৎসা আমি কিন্তু তোকে…

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৫

“আমি কিন্তু মিহি নই মামী! উৎসা আমি উৎসা পাটোয়ারী।যেমন শেষ করতে পারি ঠিক তেমনি বাঁচাতেও পারি।”
উৎসা আফসানার হাত টেনে বাইরে নিয়ে এলো, আফসানা ভয়ে শিউরে উঠছে। উৎসা ফের বলে উঠে।
“মনে থাকে যেন আমার বোনের থেকে দূরে থাকবে।”
আফসানা রিতিমত থম মে রে গেল,উৎসা বাগান থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল।
আফসানা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে, আজকে উৎসা যা করেছে তা আফসানা কখনো ভুলবে না।এটার শিক্ষা সে উৎসা কে দিবেই!আর ওর বোনকেও বুঝিয়ে দিবে আফসানা ঠিক কি জিনিস?

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৭