রেড রোজ ২ পর্ব ৪

রেড রোজ ২ পর্ব ৪
ফারহানা নিঝুম

ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছে উৎসা , মন কেমন করছে তার।সব কিছু ছেড়ে যেতে সত্যি কেমন লাগছে!
সাবিনা পাটোয়ারী গাল ফুলিয়ে বসে আছেন। একা মেয়ে কে ওতো দূর পাঠাতে ভয় লাগছে। মায়ের মন সন্তানের জন্য কাঁদে। এই তো গতকাল যেই শুনেছে জার্মানি ঐশ্বর্যের সাথে থাকবে তখন থেকে সাবিনা পাটোয়ারী পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছেন।

“অসম্ভব আমার মেয়ে ঐশ্বর্যের কাছে থাকবে মানে?”
সাবিনা পাটোয়ারীর চিৎকার শুনে চমকে উঠে নিকি ,যে করেই হোক ম্যানেজ দিতে হবে।নিকি রুদ্র কে ইশারা করলো।
“ফুপি প্লিজ আমরা ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। ভাইয়া উৎসার খেয়াল রাখবে তো!”
সাবিনা পাটোয়ারী যেনো তেতে উঠলেন।
“একদম বিশ্বাস নেই ওই ছেলের , বিয়ে করে চলে গিয়েছিল ভুলে গেছো?”
রুদ্র হা করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।কী বলবে বুঝতে পারছে না! তৎক্ষণাৎ নিকি উৎসার কাছে গেল।
“ওই কিছু বল না?”
উৎসা নাকচ করে বললো।
“আমি কিছুই বলব না বেশ হয়েছে।”
নিকি ধুম করে কি’ল বসিয়ে দিল উৎসার পিঠে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“উফ্?”
“বলবি কি না?”
উৎসা এগিয়ে গেল , সাবিনা পাটোয়ারী কে জড়িয়ে ধরে।
“মা যাই না প্লিজ?যদি দেখি উল্টা পাল্টা কিছু তাহলে সত্যি আমি ওখানে থাকব না। দরকার হলে আলাদা হোস্টেলে থাকব।”
মেয়ের কথায় তবুও মন মানে না সাবিনা পাটোয়ারীর। হাঁসফাঁস লাগছে ওনার , তবুও উৎসা কোনো রকমে বুঝিয়ে বলেছে।
*বর্তমান*
এয়ার পোর্টে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। এখানে কাউকেই তো চিনে না সে ,কী করে ঐশ্বর্যের কাছে যাবে? ঐশ্বর্যের বাড়ির ঠিকানা নিকি দিয়ে দিয়েছে।কী করে যাবে সে?কাকেই বা জিজ্ঞাস করবে?
কিছুটা দূরে যেতেই ক্যাব দেখতে পেলো উৎসা।
উৎসা চট করে উঠে পড়ল ,লোকটি কে বললো এই ঠিকানায় পৌঁছে দিতে।
কিছুটা দূরে যেতেই গাড়িটা থেমে গেল।
উৎসা আমতা আমতা করে ইংরেজিতে বললো।
“কী হয়েছে গাড়ি থামালেন?”
ড্রাইভার কিছু বললো না অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো উৎসার দিকে।

অ্যালার্ম বেজে উঠতেই বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে নেয় ঐশ্বর্য। ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত আড়াইটা বাজিয়েছে ,আসার পরেও স্বস্তি পেলো না।আই প্যাড নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে রইল। ঘুমোতে ঘুমোতে অনেকটাই লেইট হয়ে গেছে। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যেতেই রেগে গেল সে।উঠে বসতেই ফোন টুং করে বেজে উঠলো।
“হ্যালো?”
“ভাই তুমি ওকে করেছো?”

ঐশ্বর্যের টনক নড়ে উঠলো,নিকি তো বলেছিল ওর ফ্রেন্ড কিছুই চেনে না! ঐশ্বর্য দ্রুত পায়ে উঠে জিসান কে কল করে বললো আসতে। ঐশ্বর্য তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো । চৌধুরী প্যালেস থেকে বের হতেই জিসান কে দেখতে পেলো গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করেছে।
“ব্রো হোয়াট হ্যাপেন্ড এত কিসের তাড়া?”
“ইয়ার নিকি কল করেছে!”
নিকি কল করেছে শুনে জিসানের চোখ দুটো চকচক করে উঠল।
“রিয়েলি?কী বলেছে?”
“উফ্ ওর কে জেনো আসবে ওকে রিসিভ করতে হবে।”
“ওহ্।”
“টু মাচ ইয়ার , আমি এতটা বিরক্ত লাগছে কী বলব?”
জিসান ক্রূর হাসলো।
“বেশ হয়েছে।”

ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত নিয়ি গাড়ি ড্রাইভ করে এয়ার পোর্টের‌ দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্যের কান স্পর্শ করলো মেয়েলি কন্ঠস্বর।
“হেল্প হেল্প মি!”
ঐশ্বর্য গাড়ি থামিয়ে দিল ,সে ইচ্ছে করে দেয়নি।গাড়ি থামাতে হয়েছে সেই অপরিচিত কন্ঠস্বর শুনে। জিসান সতর্ক ভাবে কান খা’ড়া করে শোনার চেষ্টা করলো।
“ব্রো কিছু শুনতে পেলি?”
ঐশ্বর্য শুনলো , কেউ হেল্প চাইছে। এমনিতেও এই রাস্তাটা অতিরিক্ত নির্জন।
ঐশ্বর্য শব্দ অনুযায়ী সেদিকে এগিয়ে যেতে লাগল।
ঐশ্বর্য কিছু দূরে যেতেই একটা ক্যাব দেখতে পেলো , ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“লিভ মি , প্লীজ।”

ঐশ্বর্য বুঝতে পারলো গাড়ির ভেতরে কেউ আছে ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি গেল ভেতরের দিকে , ড্রাইভার একটি মেয়ের সঙ্গে জোর খা’টানোর চেষ্টা করছে!
“হেই বা’স্টা’র্ড!”
ঐশ্বর্য আচমকা লোকটার উপর ঝা’পিয়ে পড়ল। উৎসা তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে নেমে গেল , জিসান এগিয়ে গেল।
“আর ইউ ওকে?”

উৎসা উপর নিচে মাথা দোলায় , তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য ড্রাইভার কে দু গা বসিয়ে দিল!
আচমকা ড্রাইভার সজোরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল ঐশ্বর্য কে। ঐশ্বর্য বসা থেকেই সজোরে লা’থি বসালো । লোকটিও পড়ে গেল , তবুও ঐশ্বর্যের গলা চেপে ধরে। উৎসা চমকে উঠে ,কী করবে বুঝতে পারছে না।তবে সামনে বড়সড় রড পড়ে আছে ,উৎসা ত্বরিতে গিয়ে রড তুলে লোকটার মাথায় বারি দিল।লোকটা ছিটকে পড়ে গেল।
ঐশ্বর্য জিসান দু’জনেই আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে আছে উৎসার দিকে। উৎসা মিনিটের মতো তাকিয়ে থেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।সে জ্ঞান হারিয়েছে!
ঐশ্বর্য থমকালো চমকালোও,এই মেয়েটাকে খুব চেনা মনে হচ্ছে তার।

রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে উৎসা , তৎক্ষণাৎ মুখের উপর কারো নিঃশ্বাস পড়তেই চমকে উঠে উৎসা। তড়িঘড়ি করে কাউচের উপর উঠে বসল। নিজের সামনে জিসান আর ঐশ্বর্য কে দেখে আঁতকে উঠে।
“এই কারা আপনারা আমাদের বাড়িতে কী করছেন?”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো , অদ্ভুত সেই হাসি। ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে খেতে লাগল। উৎসা খেয়াল করে দেখলো এটা ওর বাড়ি নয় , জিসান ফিসফিসিয়ে বললো।
“শুনুন মিস?”
“উৎসা পাটোয়ারী।”
নামটা শোনা মাত্র মুখ থেকে পানি বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্যের।

“হোয়াট?কী নাম বললে?”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়,তার এত সুন্দর নাম শুনে এই লোকটা এমন করছে কেন?
“উৎসা পাটোয়ারী।”
এবার ঐশ্বর্য রিতিমত নির্বাক ,এটা তার পিচ্চি বউটা নয়তো?
“তুমি কী বাংলাদেশ থেকে এসেছো?নিকি কে চেনো?”
উৎসার টনক নড়ে ওঠে ,এই মূহুর্তের জন্য মনে হয় ঐশ্বর্য!
“হ্যা বাংলাদেশ থেকেই এসেছি।আর নিকি আমার আপু হয়।”
জিসান নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না এতক্ষণে সে বুঝে গেছে এই হলো ঐশ্বর্যের ওয়াইফ।
“ব্রো এ তো তোর ওয়াই… আউচ!”
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।
“জাস্ট শাট আপ।”

জিসান কে চুপ করে যেতে দেখে উৎসা আশ্চর্য চোখে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য নিজের ভাবান্তর বদলে নেয় , চোখ মুখ জুড়ে টেনে নিলো গাম্ভীর্য!
“এখানে কী করছো তুমি?নিকি তোমাকে পাঠিয়েছে?”শিট শিট!”
এতক্ষণে উৎসা বুঝতে পেরেছে এই হলো ঐশ্বর্য। উৎসা চমকে উঠে , ঐশ্বর্য কে আশ্চর্য চোখে দেখতে লাগল। সুদর্শন লম্বা চওড়া পেশীবহুল সুপুরুষ , ফর্সা শরীরে ব্ল্যাক ট্রি শার্ট বেশ মানিয়েছে।চুল গুলো সিল্কি তার , কপালে ছড়িয়ে আছে। অসম্ভব সুন্দর সে ,উৎসার বুক কেঁপে উঠলো। এটা তার স্বামী?
উৎসা কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে বলে।
“হোয়াট?”
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।

“ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী?”
“হ্যা। উৎসা পাটোয়ারী?”
“হ্যা। শহীদ মামার বড় ছেলে?”
“হ্যা। সাবিনা ফুপির ছোট মেয়ে?”
“হ্যা।”
কিয়ৎক্ষণ চলল নিরবতা। জিসান বেশ আগ্রহ নিয়ে শুধোয়।
“আমাকে চিলতে পেরেছো মিস বাংলাদেশী? আমি জিসান ঐশ্বর্যের বেস্ট ফ্রেন্ড!”
উৎসা জিসান কে ভালো করে দেখলো , হ্যাঁ ঐশ্বর্যের বেস্ট ফ্রেন্ড।ছোট বেলায় অনেকসময় বাড়িতে এসেছে।
“জ্বি ভাইয়া চিনতে পেরেছি।”
জিসান প্রাণবন্ত হাসলো। ঐশ্বর্য হম্বিতম্বি করে বললো।
“এখানে কেন এসেছো?বাই দ্যা ওয়ে নিকি তো একবারের জন্যও বলেনি তুমি আসছো?”
উৎসা রাগে গজগজ করে উঠলো।
“আমি এসেছি তো কী হয়েছে? আমি কী আসতে পারি না?”

“নো ওয়ে।”
ঐশ্বর্যের সোজাসাপ্টা কথায় তে’তে উঠল উৎসা।
“কেন জার্মানি কী আপনার কেনা?”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“ইয়েস এনি ডাউট?”
“লিগ্যাল পেপার দেখান!”
আচমকা ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে চেপে ধরে।
“ডোন্ট ইউ ডেয়ার! আমার সাথে এতটা সাহস দেখিও না সুইটহার্ট!স্টে ওয়ে ফ্রম মি!”
“আপনি কোন হরিদাস পাল শুনি?”
ঐশ্বর্য কন্ট্রোল হারাচ্ছে।কী একটা ভেবে উৎসা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নেয়। ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে , কন্ট্রোললেস হচ্ছে সে। সামথিং নিডস্!
ঐশ্বর্য কাউচের উপর থেকে ফোন তুলে নিকি কল লাগলো। প্রথম দিকে রিসিভ হয়েও কে’টে গেল, ঐশ্বর্য আবারও ফোন করে।নিকি ধরতেই কর্কশ গলায় বললো।

“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস নিকি?তুই এটা কী করে করতে পারলি হাউ?”
নিকি কিছুই বুঝলো না , হঠাৎ তার ভাই রেগে গেল কেন?”
“ভাইয়া কী হয়েছে হঠাৎ রেগে যাচ্ছ কেন?”
ঐশ্বর্য টগবগে মেজাজে বলল।
“উৎসা এই মেয়েটা আসবে আর আমি মিথ্যে বলেছিলি?হাউ ডেয়ার ইউ?”
“ভাইয়া আসলে উৎসা যাবে তোমাকে কী করে বলব?তাই আর কি…..
“জাস্ট শাট আপ।”
নিকি কিছুই বলতে পারলো না , ঐশ্বর্য ফোন কে’টে দিল। উৎসা পিছন থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো, ঐশ্বর্য কাঁচের স্বচ্ছ গ্লাসে সবটাই দেখতে পাচ্ছে! উৎসার গোল গোল চোখ গুলো অদ্ভুত ঠেকলো ঐশ্বর্যের কাছে।বুকটা কেঁপে উঠলো।

“হেই ইউ গেট আউট।”
উৎসা থতমত খেয়ে গেল, তাকে বের করে দিচ্ছে?
“কী?”
“আই সেইড গেট আউট।”
উৎসা কোথায় যাবে?সে তো কিছুই চিনে না! কোথায় যাবে কী করে যাবে?
“মানে আমি কোথায় যাব? আমি তো কিছুই চিনি না?”
“আই ডোন্ট কেয়ার , তুমি কোথায় যাবে এসব নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। প্লিজ গো!”
উৎসা লজ্জায় অপমানে রাগে ল্যাকেজ নিয়ে বেরিয়ে গেল।কী ভাবে এই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী নিজেকে? উৎসা কখনো থাকবে না,সে যদি আগে জানতো এরকম ভাবে তাকে অপমান করবে তাহলে উৎসা কখনো রাজী হতো না! বার বার নিকি কে বলেছিল ওনার বাড়িতে উঠবে না , তবুও নিকি জোর করলো। এখন দেখুক কী অবস্থা? রাস্তায় আসতে হয়েছে উৎসা কে!

রেড রোজ ২ পর্ব ৩

“ব্রো তুই ঠিক আছিস আদেও?মিস বাংলাদেশী বেরিয়ে গেছে!”
ঐশ্বর্য পাত্তা দিলো না ,আপাতত শান্তি চাই।পাগলাটে লাগছে তাকে। রুমের দিকে এগোতে এগোতে বললো।
“ডোন্ট ডিস্টার্ব মি এগেইন!”
জিসান দাঁত কটমট করলো ,শেইম লেস ম্যান! এখন মেয়েটা কোথায় গেল? কিছু তো মনে হয় না চিনে? জিসান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, এখন ঐশ্বর্য কে কী করে বলবে উৎসা কে খোঁজার কথা?

রেড রোজ ২ পর্ব ৫