রেড রোজ ২ পর্ব ৪১

রেড রোজ ২ পর্ব ৪১
ফারহানা নিঝুম

সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো,ঘুম ভেঙ্গেছে একটু আগেই উৎসার তার পরেও চোখ দুটো খুলতেই চাইছে না তার! উৎসা উঠে ফ্রেশ হয়ে কফি খেলো, ঐশ্বর্য নেই। উৎসা মনে মনে ভাবলো হয়তো চলে গেছে!বাইরে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো সত্যি ঐশ্বর্যের গাড়ি নেই, কিছুটা কষ্ট হলো তবে যা হয়েছে তা ভালোই এটা ভেবে লাভ নেই। এরকম চিন্তা ধরেই ভেতরে চলে গেল উৎসা, মিনিট দশেক পর বাড়ির মালিকিন সেই ভদ্র মহিলা এলেন।
“আন্টি আপনি?”
ভদ্র মহিলা ভুবন ভোলানো হাসি টেনে বলে উঠেন।
“হ একবার দেইখা যাই ভাবলাম। শুনলাম তোমরা কালকে চইলা যাবা তো! তাই বড্ড খারাপ লাগল।”
উৎসা চমকে উঠে, চলে যাবে মানে?
“কী বলছেন আন্টি?চলে যাব মানে?”
ভদ্র মহিলা ফের বললো।

“তোমার জামাই সব ভাড়া মিটায় দিল তো,কইলো কাইল তোমরা যাবা গা!”
সেই মূহূর্তে উপস্থিত হয় ঐশ্বর্য। ঐশ্বর্য কে দেখে পিলে চমকে উঠে উৎসার,তার মানে লোকটা যায়নি! ভদ্র মহিলা মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো। উৎসা দরজা বন্ধ করে ঐশ্বর্যের সামনে দাঁড়ায়।
“আপনি কেন করছেন এসব? আমি যেতে চাই না তো! প্লিজ একটু বুঝুন!”
“রিজন?”
ঐশ্বর্যের সোজাসাপ্টা কথা,উৎসা বলতে পারবে না আফসানার কথা। কিন্তু কিছু না কিছু বাহানা তো দিতেই হবে।
“আপনার জন্য। আপনি যখন তখন আমাকে স্পর্শ করেন,যখন যা ইচ্ছে করেন! এখন পর্যন্ত আমার মা বাবা থাকাকালীন আমার গায়ে হাত দেয়নি, অথচ আপনি যখন তখন আমাকে মা’রেন।এই জন্য আমি থাকতে চাই না।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,তার হাসি যেনো থামছেনা।
“সিরিয়াসলি রোজ? এগুলো রিজন।ও মাই গড হা হা।”
ঐশ্বর্যের হাসিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“হাসছেন কেন?”
আকস্মিক ঐশ্বর্য উৎসার বাহু টেনে ধরে।
“এই যে মিথ্যে বলছো তা আর আমার সামনে বলার চেষ্টা করবে না বেইবি। ডোন্ট ডেয়ার!”
উৎসা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো বোধহয়, ঐশ্বর্য ধরে ফেলেছে।
“দদেখুন আমি সত্যি বলছি।”
ঐশ্বর্য পাত্তা দিল না, হেডফোন কানে গুঁজে আই প্যাড নিয়ে বসে পড়ল।
উৎসার‌ কথায় পাত্তাই দিল না সে, উৎসা বিছানার এক কোণে বসে রইল চুপচাপ।শীত করছে অল্প বিস্তর, কম্বল গায়ে জড়িয়ে বালিশে মাথা এলিয়ে দিল।কিয়ৎক্ষণ পর অনুভব করলো এক জোড়া শীতল হাত তাকে স্পর্শ করেছ। ঐশ্বর্য কাঁধে চিবুক ঠেকায় উৎসার।
“সুইটহার্ট টেল মি দ্যা ট্রুথ, রিজন কী এখানে আসার?”

উৎসা চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠে।
“আপনি সদা এমন করেন কেন?”
“আই ফিল অ্যাট পিস হোয়েন আই’ম উইথ ইউ। হোয়াই ডোন্ট ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?”
উৎসা সোজা হয়ে শোয়, ঐশ্বর্য উঠে পড়ে উৎসার উপর। চোখে চোখ রাখে ঐশ্বর্যের।
“বেশী বুঝলে সমস্যা!”
ঐশ্বর্য আলতো করে নাকে নাক ঘষে।
“তাহলে সব বুঝো।”
“সরেন ঘুমাই।”
“না।”
❝”আমি দূরে যেতে চাই।”
ঐশ্বর্য উৎসার অনামিকা আঙ্গুল আঙ্গুল ছুঁয়ে বলে উঠে।
“আমি কাছে রাখতে চাই।❞
উৎসা চোখ বুজে নিঃশ্বাস নেয়, ঐশ্বর্যের স্পর্শে নুইয়ে যায় মেয়েটা। হিমশিম খায় এই পুরুষ কে সামলাতে গিয়ে!
ঐশ্বর্য আলগোছে উৎসার দু’টো হাত মুঠোবন্দী করে নিল।মাথার উপরের দিকে চেপে ধরে, অন্য হাতে স্পর্শ করে উৎসার মেদহীন উদরে। উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, দাঁতে দাঁত চেপে ধরে। ঐশ্বর্য কানের কাছে ফিসফিসিয়ে শুধোয়।
“রিজন কী সুইটহার্ট? প্লিজ টেল মি দ্যা ট্রুথ হোয়াট দ্যা রিজন?”
উৎসার দম বন্ধ আসার উপক্রম, ঐশ্বর্য পাকা খেলো’য়াড়।সে তো অবশ্যই উৎসার মুখ থেকে বের করেই ছাড়বে কারণ টা কী এখানে আসার? ঐশ্বর্য উৎসার কানের লতিতে টুকরো টুকরো চুমু এঁকে দিচ্ছে।
“বলো বলো।”
“আমি… আমাকে উফ্ আপনি কেন…
“রিজন বললে ছেড়ে দেব।”
উৎসা হাতের মুঠোয় বন্দি করা,উৎসা অস্থির হয়ে উঠছে।কথা গুলো কন্ঠনালিতে আটকে আসছে।
“ঐ,, ঐশ্বর্য আমি,,আপনি প্লিজ ছাড়ো..
“রিজন টা বলো না বেইবি।”

উৎসা বলতে নিলে ফোনের নো’টিফিকেশনের শব্দ শুনে দুজনেই সেদিকে তাকালো। ঐশ্বর্য উৎসার ফোন ধরে, হোয়াটসঅ্যাপে আফসানার ম্যাসেজ!টনক নড়ে উঠে ঐশ্বর্যের।উঠে বসলো ঐশ্বর্য, নো’টিফিকেশন অন করতে চায়। উৎসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো,হাত বাড়িয়ে ফোন নিতে চায়।
“আমার ফোন দিন, অনুমতি ছাড়া কারো ফোন ধরতে নেই। প্লিজ দিন।”
ঐশ্বর্য কড়া দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উৎসার দিকে, একটু খানি ভয় পেলো উৎসা। কিন্তু তার পরেও থামছে না সে।
“প্লিজ আমার ফোন দিন।”
ঐশ্বর্য দিলো না, উল্টো ধমকের সুরে বলে উঠে।
“জাস্ট শাট আপ।”
ঐশ্বর্য হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করে দেখে আফসানার পাঠানো ভ’য়ে’স ম্যা’সেজ। যেখানে তিনি স্পষ্ট ভাবে বলছেন “ঐশ্বর্য গিয়েছে তোকে আনতে, কিন্তু খবরদার তুই যদি ফিরে আসিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।” ঐশ্বর্য একে একে প্রতিটি বার্তা পড়ে নিল।
“এটাই রিজন?”

উৎসা নিশ্চুপ, ঐশ্বর্য ছুটে ফোনটা ফেলে দিল।ভেঙে টুক’রো টুক’রো হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
“টেল মি ড্যামেইড এটাই কী কারণ?”
উৎসা কেঁপে উঠলো, অধর দুটি কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো, সব কিছু নিয়ে নিল।উৎসা কেও টেনে দাঁড় করায়,গায়ে শুধু একটা চাদর জড়িয়ে ছিল এরপর? ঐশ্বর্য অপেক্ষা করলো না, সেই মূহূর্তে উৎসা কে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।তারা আর এখানে থাকছে না,উৎসা ঠোঁট কা’ম’ড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। ঐশ্বর্য অত্যাধিক রেগে গিয়েছে তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে উৎসা।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে, ঐশ্বর্য চুপচাপ। দুজনের মধ্যে একটাও কথা হয়নি, উৎসা বার কয়েক ঐশ্বর্যের দিকে তাকাচ্ছে। ধুর তার ভুলের জন্যেই ঐশ্বর্য এখন সবটা জেনে গেল! উৎসা সত্যি জানে না বাড়িতে যাওয়ার পর ঠিক কী হতে পারে?
বুক ছিঁ’ড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘ শ্বাস।

ড্রয়িং রুমে বসেছে সমাবেশ তাদের মধ্যমণি হলো উৎসা। সবাই তাকিয়ে আছে উৎসার দিকে,আর উৎসা তাকিয়ে আছে সোফার উপর বসে থাকা ঐশ্বর্যের দিকে। এদিকে আবার ঐশ্বর্যের সম্পূর্ণ দৃষ্টি সেন্টার টেবিলের উপর।
শহীদ উৎসার উদ্দেশ্যে শুধোয়।
“উৎসা বল তো তুই কেন চলে গেলি?”
উৎসা নিশ্চুপ!কী বলবে? আকস্মিক আফসানা এসে ওর হাত টেনে ধরে।
“ও আর কী বলবে? নিশ্চয়ই কারো সাথে চলে গেছিল!এই ফিরেছিস কেন তুই?”
উৎসার ভীষণ রাগ হলো, জোরপূর্বক আফসানার হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল।
“তুমি আমার সম্পর্কে উল্টো পাল্টা কথা একদম বলবে না!কী জানো তুমি আমার সম্পর্কে?এত কথা যে বলছো?”
আফসানা দাঁত ক’টম’ট করে বলে।
“একদম চুপ, আমি কিন্তু…

“ও চুপ থাকলেও আমি কিন্তু সব জানি মিসেস মহিলা।”
সবার মাঝখান থেকে বলে উঠে ঐশ্বর্য, আফসানা চমকিত হয়ে উঠে। আশ্চর্য হয়ে তাকায় ঐশ্বর্যের পানে।
“মানে?কী বলতে চাইছো তুমি?”
ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো, সজোরে লা’থি মে’রে সামনের টেবিল ফেলে দেয়। আঁ’তকে উঠে সবাই, শহীদ তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন।
“কী হচ্ছে কী ঐশ্বর্য?কী করছো তুমি?”
ঐশ্বর্য গ’র্জে উঠে।
“এটা আমাকে না জিজ্ঞাস করে আপনার ওয়াইফ কে জিজ্ঞেস করুন।”
উপস্থিত সবাই কিছুই বুঝতে পারছে না,তবে জিসান কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে ব্যাপার টা।
“আপনার এত সাহস হলো কী করে মিসেস মহিলা,হাউ ডেয়ার ইউ?”
আফসানা ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠছেন, কিন্তু উপর দিয়ে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে চলেছেন।
“ঐশ্বর্য.. তুমি কিন্তু বেয়াদবি করছো!”
ঐশ্বর্য তাচ্ছিল্য করে বলে উঠে।

“কী দেখেছেন আপনি বেয়াদবির?অ্যানসার মি আপনি কেন এমন করেছেন?”
আফসানা কাঁপা স্বরে বলে।
“ক,,কী করেছি আমি?”
শহীদ একই টুনে বলে উঠে।
“হ্যা ঐশ্বর্য কী করেছে আফসানা?”
ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে উঠলো।
“কেন উনি আমার ওয়াইফ কে বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা বলবেন? ওনার সাহস হলো কী করে?”
ঐশ্বর্য পাশে থাকা ফুলদানি তুলে ছু ড়ে দিল আফসানার দিকে। আফসানা তৎক্ষণাৎ সরে গেল। শহীদ চমকালেন।
“আফসানা?কী বলছে এসব ঐশ্বর্য?”
আফসানা ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো।

“না না আমি কিছু করিনি।”
“আবার মিথ্যে কথা? আমি আপনাকে…
“ঐশ্বর্য উনি মা হয় তোমার।”
ঐশ্বর্য থামলো, দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“আমার মা একজন ছিলেন আর উনিই থাকবেন,এই যে এই মহিলা আমার মা নয়।উনি আপনার স্ত্রী।”
শহীদ এবারে বেজায় রেগে গেলেন।
“যাই হোক উনিই তোমার মা, উনার সাথে তুমি এমন করবে না।”
ঐশ্বর্যের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল,একে একে ড্রয়িং রুমের সব কিছু ভে ঙে ফেলছে সেই।সাথে বার বার বলছে।
“উনি আমার কেউ না, আমি ঘৃ’ণা করি ওনাকে। আপনি আমার জন্য নয় নিজের জন্য বিয়ে করেছেন,আই হেইট ইউ অল!”
ঐশ্বর্য কে থামানো দায় হয়ে পড়েছে,উৎসা তার বাহু টেনে ধরে।
“থামুন কী করছেন!”
ঐশ্বর্য গরম চোখ করে তাকালো।
“তুই কথাই বলবি না, আমার থেকে ওই মহিলার কথা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হলো তোর কাছে?”
উৎসা চেঁচিয়ে উঠলো।
“হ্যা হয়েছে শান্তি এবার?”

ঐশ্বর্যের রাগের আ’গু’নে ঘি ঢালার কাজটা করলো উৎসা।
“উৎসা আমি তোকে খু’ন করে গুম করে ফেলব,ইয়েস আই মিন ইট।”
“আপনি এটা ছাড়া আর কিছুই পারেন না,তাই আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না।”
ঐশ্বর্য আকস্মিক উৎসার বাহু চেপে ধরে।
“আমি বলেছিলাম না আমার সাথেই থাকতে হবে!”
“ছাড়ুন আমাকে, আমার এখানে আসাই ভুল হয়েছে।”
আফসানা মাঝখান থেকে বলে উঠে।
“তুই ফিরলি কেন?”
ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে উঠল।

রেড রোজ ২ পর্ব ৪০

“থাকতে হবে না তোকে,যা তুই যেখানে ইচ্ছে। না তোদের যেতে হবে না,আই হ্যাভ টু গো।”
ঐশ্বর্য হাতে থাকা কাঁচের গ্লাস ছুড়ে ফেলল, দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল সদর দরজা দিয়ে। জিসান থামানোর চেষ্টা করে।
“ব্রো প্লিজ তুই…
“ডোন্ট।”
ঐশ্বর্য কাউকে কিছু বলতেই দিল না, গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। উৎসা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, মূহুর্তের মধ্যে যেনো তাদের উপর দিয়ে ঝ’ড় বয়ে গিয়েছে!

রেড রোজ ২ পর্ব ৪২