রেড রোজ ২ পর্ব ৪২

রেড রোজ ২ পর্ব ৪২
ফারহানা নিঝুম

কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে সমগ্র আকাশ,ঠিক তেমনই মন আঙিনায় মন খারাপের মেঘেরা ভিড় জমিয়েছে উৎসার।আজ ঠিক দু’দিন হয়ে গেল ঐশ্বর্য বাড়িতে ফিরে নি। উৎসা ভেবেছিল ঐশ্বর্যের রাগ কমলে সে ঠিক ফিরে আসবে, কিন্তু তা হলো না। মনটা কেমন অস্থির লাগছে উৎসার,মোটেও ঐশ্বর্যের সঙ্গে ওমন করে কথা বলা উচিত হয়নি। লোকটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে, সেখানে উৎসা কী না এমন আচরণ করছে?
অস্থির মন আরো অস্থির হচ্ছে উৎসার, একটা সময় সে চাইতো ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে বলুক। এখন যখন বলছে তাতে উৎসা এমন করছে?

চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণা, কান্নারা দলা পা’কিয়ে আসছে গলায় ।
ছাদের এক পাশে চুপচাপ বসে আছে, কেমন একটা হাপিত্যেশ করছে সে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ধীরে ধীরে,উৎসা উঠে ভেতরে গেল। প্রথমে মিহির ঘরে গেল, ঘুমাচ্ছে সে। মেয়েটা কে যেভাবে ছেড়ে গিয়েছিল সেভাবেই আছে! একটুও অসুস্থতা কমেনি।
উৎসা গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিল।
ড্রয়িং রুমে যেতেই কানে এলো জিসান আর কেয়ার কথোপকথন।
“আমি জানি না সত্যি, কিন্তু ব্রো ঠিক নেই!”
ঐশ্বর্য ঠিক নেই কথাটা শুনে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো উৎসার। কেয়া প্রত্যুত্তরে বলে উঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমিও যাব তোর সাথে।”
জিসান তৎক্ষণাৎ বলে উঠে।
“না তুই থাক আই হ্যাভ টু গো।”
জিসান এগিয়ে যেতেই উৎসা দৌড়ে ওর কাছে গেল।
“ভাইয়া! ঐশ্বর্যের কী হয়েছে?”
জিসান চুপ করে গেল,সে চাইছিল না যাতে উৎসা এসব জানুক।
“মিস বাংলাদেশী তুমি?”
“প্লিজ ভাইয়া বলুন না কী হয়েছে?”
জিসান বলতে চাইছে না, কিন্তু উৎসার‌‌ নিষ্পাপ মুখশ্রী দেখে তার মায়া হচ্ছে।
“মিস বাংলাদেশী আমি তোমাকে এখন কিচ্ছু বলতে পারব না। তুমি প্লিজ কিছু জিজ্ঞেস করো না।”
উৎসা আরো অস্থির হয়ে উঠেছে।
“প্লিজ প্লিজ ভাইয়া বলুন না কোথায় উনি? আমি যেতে চাই।”
এবার জিসান মুশ’কি’লে‌ পড়ে গেল!
“দেখো মিস…
“প্লিজ ভাইয়া আমি যাবো, আমাকে নিয়ে চলুন না। আপনি যদি আমাকে না নিয়ে যান তাহলে সত্যি আমি কিন্তু যা তা করে ফেলব!”

জিসান কিঞ্চিৎ ভয় পেলো,উৎসা সত্যি যা তা করে ফেলতে পারে।তাই বাধ্য হয়েই উৎসা কে নিয়ে বের হলো জিসান।
গাড়ি চলেছে আপন গতিতে,উৎসা অপেক্ষায় আছে কখন পৌঁছাবে? ঐশ্বর্য ঠিক কোথায় আছে তাও জানে না উৎসা!
কিছুক্ষণের মধেই ওরা পৌঁছে গেল সিলেটের সবচেয়ে নামি দামী হোটেল গ্রান্ড প্যালেসে। এটা মূলত সিলেটের সুন্দর একটি থাকার মতো হোটেল, যেখানে বেশিভাগ ফরেইনার দের আসা যাওয়া চলে। এবং যারা নিতান্তই বিলাস বহুল জীবন যাপন করে ঘুরতে এলে এখানেই উঠে।
উৎসা গাড়ি থেকে নামলো, জিসান কে অনুসরণ করে এগুতে থাকে। রিসেপশনিস্টের সাথে কিছু কথাবার্তা বলে এগুলো দুজনেই।যত এগিয়ে যাচ্ছে ততই গলা শুকিয়ে আসছে উৎসার। ঐশ্বর্য কে দু’দিন দেখেনি সে , রুমের কাছে গিয়ে নক করলো জিসান।
“কাম হেয়ার।”
ঐশ্বর্যের চাপা কন্ঠস্বর। উৎসা শুকনো ঢোক গিললো, জিসান আর ভেতরে গেল না। উৎসার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল।

“তুমি যাও মিস বাংলাদেশী ।”
উৎসা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো জিসানের দিকে, জিসান ইশারা করলো যেতে। উৎসা কাঁপা স্বরে ভেতরে প্রবেশ করে,পুরো রুম অন্ধকারে ডু’বে আছে। উৎসা ভেতরে গেল, আবারও কন্ঠস্বর ভেসে এলো ।
“জিসান প্লিজ ডেসিং কা করে দে ইয়ার,জাস্ট হাঁপিয়ে গেছি।বাট আগে লাইটা অন কর।”
উৎসা হাতড়ে লাইট অন করলো, সামনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে। ঐশ্বর্য শার্ট খুলেছে সবে,তার বুকে কিছুটা জায়গা ব্যান্ডেজ করা। কপালে এবং কী হাতের তালুতেও ব্যান্ডেজ করা,হাতে ক্যানেল লাগানো। উৎসার‌ চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল, ঐশ্বর্য তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে শার্ট গায়ে জড়ালো, তৎক্ষণাৎ ক্যানেলে টান পড়ে। খিঁচিয়ে চোখ বুঁজে নেয় ঐশ্বর্য,ফোন তুলে কল করে জিসান কে।কত বার বলেছিল কাউকে না বলতে এই কথা! ঐশ্বর্যের আসার পথে এক্সি’ডেন্ট হয়েছে, অনেক টা ব্যথা পেয়েছে সে। কিন্তু যেটার ভয় পাচ্ছিল তাই হলো, উৎসা তো ডিরেক্ট চলে এসেছে! ঐশ্বর্যের মেজাজ খারাপ হলো। জিসান ফোন ধরছে না!আর চেষ্টা না করে ফোন সাইডে রেখে দিল ঐশ্বর্য,এবারে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে উৎসার পানে।
পরণে ছাই রঙা সালোয়ার স্যুট,বেশ মানিয়েছে মেয়েটা কে। কিন্তু ঐশ্বর্যের দুষ্টু মন সবসময় লাল রঙে দেখতে চায় তার রেড রোজ কে।

“কাম হেয়ার।”
ঐশ্বর্য হাতের ইশারায় উৎসা কে কাছে ডাকলো,ধীর গতিতে এগিয়ে গেল উৎসা। বলতে হয়নি তাকে, আজ সে নিজেই ঐশ্বর্য কে স্পর্শ করছে। কপালে ব্যান্ডেজের উপর হাত ছোঁয়ায়,চোখেরও বাঁধ ভে’ঙেছে। ঐশ্বর্যের এমন অবস্থা দেখতে চাইনি উৎসা,হ্যা লোকটার উপর রাগ হয়েছিল তার। কারণ লোকটা খুব র’গ চটা, কিন্তু তাও উৎসা কখনো চায়না এমন হোক!
“হেই বেইবি ডোন্ট!”
ঐশ্বর্য আলগোছে কাছে ডাকলো উৎসা কে, হাত বাড়িয়ে নিজের মুখের কাছাকাছি টেনে নেয়।টপটপ চোখের পানি পড়ছে উৎসার চোখ থেকে।
“এসব কী করেছেন নিজের?”
“কেন তুমি হ্যাপি না?”
উৎসা চোখ রা’ঙিয়ে তাকালো।

“আমি কখনও এমন চাইনি!”
“তাহলে কী চেয়েছো?”
ঐশ্বর্যের সহজ প্রশ্ন, উৎসা উঠে দাঁড়ালো।প্যাকেটটা নিয়ে এগিয়ে এলো, ভেতর থেকে ড্রেসিংয়ের সব জিনিস বের করে।
“পারবে?”
উৎসা মাথা দোলায়, অর্থাৎ সে পারবে। ঐশ্বর্য আধখোলা শার্ট আরেকটু খুলে ভেতরে স্পর্শ করে উৎসা। ঐশ্বর্য চোখ দুটো বুজে নিঃশ্বাস টেনে নিল,উৎসা ধীরে ধীরে জায়গাটা পরিষ্কার করে ক্রিম লাগিয়ে আবার ব্যান্ডেজ করে দিল। ঐশ্বর্য সেই একই ভাবে শুয়ে আছে, উৎসা কপালে আর হাতের তালুতেও ব্যান্ডেজ খুলে ক্রিম লাগিয়ে নতুন করে ব্যান্ডেজ করে দিল।সব কিছু বেড সাইড টেবিলের উপর রাখলো, এবার দৃষ্টি ফেলে ঐশ্বর্যের বন্ধ চোখের পাতার দিকে। ঐশ্বর্যের বুকের মধ্যে খানে স্পর্শ করে,কিছুটা ঝুঁকে ঐশ্বর্যের মুখে টুকরো টুকরো চুমু আঁকতে লাগলো। উৎসার এটুকু স্পর্শে চকিতে চোখ মেলে তাকাল ঐশ্বর্য,উৎসা একটু একটু করে নিচ থেকে উপরের দিকে উঠে আসছে। ঐশ্বর্য জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল, অস্ফুট স্বরে বলে উঠে।
“কন্ট্রোললেস করছো সুইটহার্ট।”
উৎসা বুকে ঠোঁট ছুঁইয়ে রেখেই চোখ তুলে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে। তৎক্ষণাৎ আবারও নিজের কাছে ব্যস্ত হয়ে উঠে,চুমু গুলো ধীরে ধীরে টুকরো টুকরো কা’ম’ড়ে পরিণত হচ্ছে। ঐশ্বর্য উ’ত্তে’জনার ব’শে হাত টেনে পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে! ক্যানেল টান খেয়ে র’ক্ত বের হতে লাগলো।অথচ তাতে তার কোনো ভাবান্তর নেই! উৎসা অনেকটাই উপরের দিকে চলে এলো, ঐশ্বর্যের অ্যাডামস আপেলে ঠোঁট ছুঁয়ে রাখে। ঐশ্বর্য উৎসার চুলের ভাঁজে হাত ঢুকিয়ে চেপে ধরলো।
“রোজ!”

উৎসা মুখ তুলে তাকায়, ঐশ্বর্য চুলের ভাঁজে রাখা হাত দিয়ে মাথা টেনে নিজের মুখোমুখি নিয়ে এলো উৎসার মুখশ্রী।
“ধারণা আছে হোয়াট আর ইউ ডোয়িং?”
উৎসা তাকিয়ে আছে নিষ্পলক, হ্যাঁ অবশ্যই ধারণা আছে সে কী করছে! উৎসা ঝুঁ’কে ঐশ্বর্যের কপালে চুমু খেলো, এবারে ঐশ্বর্য বেসামাল হলো।হাত সামনের দিকে নিয়ে আসতেই উৎসা আঁ’ত’কে উঠে। ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠে ‌।
“র,, র’ক্ত পড়ছে!”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“পড়ুক একটু আধটু।”
“কী বলছেন এসব? অনেকটা…
“আপাতত এই টপিক বাদ ।আমরা কন্টিনিউ করি?”
উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে উৎসার কন্ঠনালিতে স্পর্শ করে। কিছুটা র’ক্ত তার কন্ঠনালিতে লেপ্টে যায়, ঐশ্বর্য আলতো হাসলো।তার হৃদয়ে যে র’ক্ত’ক্ষ’রণ হয়েছে এত দিন তাতে আজ এই উৎসা নামক মেয়েটিকে ভেজাবে। উৎসা আবেশে চোখ বুজে নেয়, আকস্মিক ঐশ্বর্য উৎসা কে বেডে ফেলে উপু’ড় হয়ে ঝুঁ’কে গেল তার দিকে।
“আ,, আপনি অসুস্থ!”

ঐশ্বর্য ততটা পাত্তা দিলো না। গলায় মুখ গুঁজে দিল উৎসার। ঠিক সে ভাবেই পড়ে রইলো কিছুক্ষণ, উৎসা ঠিক বুঝলো না ঐশ্বর্য কি করতে চাইছে? মিনিট দশেক পর ঐশ্বর্য সরে গেল, বেডে গা এলিয়ে দেয়। প্রচন্ড রকম ব্যথা অনুভব করছে বুকে!সে অসুস্থ সেটা সত্যি ফিল করতে পারছে। উৎসা উঠে বসলো, ঐশ্বর্য খিঁচিয়ে চোখ বুঁজে আছে। বুকের ক্ষ’ত স্থানে যেনো চিনচিনে ব্য’থা গুলো বাড়ছে আর কমছে।
“আপনি ঠিক আছেন?”
ঐশ্বর্য মাথা দোলায়, অথচ উৎসা দেখতে পাচ্ছে লোকটা অসুস্থ!
“আপনি কি কিছু খেয়েছেন?”
ঐশ্বর্য অস্ফুট স্বরে বলল।
“না তেমন খিদে পায়নি।”
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, ঐশ্বর্যের ফোন নিলো।তার থেকে নাম্বার নিয়ে হোটেল থেকে খাবার দিয়ে যেতে বললো।কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই খাবার চলে এল, উৎসা উঠতে নিলে ঐশ্বর্য হাত টেনে ধরে।
“ওড়না নাও।”

উৎসা পাশ থেকে ওড়না তুলে মাথায় দিয়ে দিল, গলায় কিছুটা র’ক্ত লেগে আছে তা হয়তো শুকিয়ে গিয়েছে।
বাইরে থেকে হোটেল স্টাফ খাবার দিয়ে গেল,উৎসা ভেতরে এসে ঐশ্বর্যের পাশে বসে।
“আপনার কী খুব কষ্ট হচ্ছে?ওঠে বসতে পারবেন?”
ঐশ্বর্য চেষ্টা করলো,উৎসা সাহায্য করলো। ঐশ্বর্য কে উঠে বসায় ধীরে সুস্থে খাইয়ে দিলো। ঐশ্বর্য তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ, উৎসা ঐশ্বর্যের মেডিসিন গুলো তাকে খাইয়ে দিলো।
“আপনি ঘুমান।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে নিজের বুকের কাছে নিলো ,তবে বুকে নিতে পারলো না।
“এখানে কেন আসলে?যা কিছু হতে পারে!আই মিন আমি যা কিছু করতে পারি।”
ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে।
“কিছু করেন নি তো!”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“তার মানে বলতে চাইছো কিছু করব?”
উৎসা বে’কুব ব’নে গেল,সে এটা বলবে তা মোটেও বুঝতে পারেনি।
“আপনি ভীষণ খারাপ মানুষ দেখা যায়, অসুস্থ তার পরেও বাজে কথা বলছেন!”
ঐশ্বর্য উৎসার হাতের ভাঁজে হাত গুঁজে বলে।
“ইয়েস অলওয়েজ ব্যাড বয়।”

“উৎসা সত্যি ভাইয়ের কাছে?”
নিকির বিস্মিত প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলল জিসান।
“আরে বাবা হ্যা আমি ওদের টাইম প্রয়োজন। সাথে স্পেস।”
নিকি উপর নিচে মাথা দোলায়।
“আচ্ছা।”
জিসান দুষ্টুমি করে বলে উঠে।
“তুমি চাইলে আমরাও আলাদা টাইম স্প্যান্ড করতে পারি!”

রেড রোজ ২ পর্ব ৪১

নিকি চোখ দুটো ছোট ছোট করে নিল, জিসান হেসে উঠে। আকস্মিক পিছনে তাকিয়ে আফসানা কে দেখে পেলো। জিসান তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে সরে গেল না হলে নিকির সমস্যা হবে!নিকি আফসানা কে দেখেও না দেখার ভান করে সিঁড়ির দিকে চলে গেল। আফসানা বেশ বুঝতে পারছে ব্যাপার টা, না তিনি এখন না কাল সকালে কথা বলবেন নিকির সাথে।

রেড রোজ ২ পর্ব ৪৩