রেড রোজ ২ পর্ব ৪৯

রেড রোজ ২ পর্ব ৪৯
ফারহানা নিঝুম

ডিসেম্বরের শেষ দিন আজ, নতুন বছরের আগমন ঘটছে।শহর জুড়ে নিউ ইয়ারের পার্টি উদযাপন করবে বলে মে তে উঠেছে। ঐশ্বর্যের হাতে হাত রেখে হেঁটে যাচ্ছে সে।
“রোজ আই লাভ ইউ।”
ঐশ্বর্য ঝু কে কপালে চুমু খেলো উৎসার , উৎসা হেসে ফেলল।
“আপনি এমন করছেন কেন? ঠিকঠাক হাঁটুন।”
ঐশ্বর্য আকস্মিক উৎসা কে পাঁজা কোলে তুলে নিল,উৎসা ভীত কন্ঠে বলে উঠে।
“আমি ভয় পাই,পড়ে যাবো।”
“আমি আছি।”

সপ্তাহ কে টেছে উৎসা আর ঐশ্বর্যের সম্পর্কের।
আজ ওরা সবাই মিলে ঘুরতে বেরিয়েছে, সবাই বলতে নিকি, জিসান, রুদ্র, কেয়া আর তারা দু’জন।
পাহাড়ের দিকে হেঁটে যাচ্ছে সবাই ওদিকে অনেক ঘুরার জায়গা আছে।সেদিনে রিসোর্ট বুক করে রেখেছে ঐশ্বর্য, তিনটে রুম।
পাহাড়ের দিকে ছোট জলাশয় বয়ে গেছে,পাড়ের ধারে অনেকেই ঘুরতে এসেছে। উৎসা অনেক গুলো সেলফি নিল, ঐশ্বর্য নিজে কিছু সুন্দর মূহুর্ত ক্যামেরা বন্দি করলো। রুদ্র আর কেয়া আশেপাশে ঘুরছে, তাঁদের জন্যে যে আজ খুব বড় সারপ্রাইজ আছে তা যদি জানতো তাহলে কী হতো? এটা শুধু ঐশ্বর্য জানে,আর জিসান।
“জিসান আমার ছবি তুলে দিন।”
“হোয়াই নট মাই বিউটিফুল লেডি?”
নিকি দাঁড়ালো, জিসান পরপর কত গুলো ছবি তুলে দিল তাকে। সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে, রিসোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিল সবাই।
রুমে প্রবেশ করতেই ঐশ্বর্য উৎসা কে চেপে ধরল, ঠোঁটের ভাঁজে ম’ত্ত হয়ে উঠে সে,উৎসা মোচড়া যাচ্ছে রিতিমত। এরকম হুটহাট ঐশ্বর্যের আ’ক্রম’ণে উৎসার নাজেহাল অবস্থা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“উঁহু।”
“হুস।”
ঐশ্বর্য বেপরোয়া, কিন্তু উৎসা তো তা নয়। ঐশ্বর্যের বেসামাল স্পর্শে নেতিয়ে যাচ্ছে উৎসা কিন্তু আকস্মিক ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল সে।হাত চলে গেল ঠোঁটে, কেমন চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে!
“আপনি এমন করেন কেন সবসময়?”
ঐশ্বর্য হো হো করে হেসে ফেললো,তেতে উঠল উৎসা। ঐশ্বর্য আমলে নিল না,উঠে ব্যাগ থেকে সুন্দর একটা ড্রেস বের করে উৎসার দিকে এগিয়ে দিল।
“তাড়াতাড়ি রেডি হও, যেতে হবে।”
উৎসা ভ্রদয় কোঁচকাল।
“এখন তো বাইরে থেকে এলাম,আর এই ভারী ড্রেসটা পড়ে কোথায় যাবো?”
“সারপ্রাইজ।”
ঐশ্বর্যের এই বেখেয়ালি পনা একদম ভালো লাগলো না।

ঐশ্বর্য জোরপূর্বক উৎসা কে রেডি করিয়ে বাইরে নিয়ে এলো। রিসোর্টের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে, দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র।পরণে তার বিয়ের শেরোয়ানি। উৎসা চমকে গেল,কিয়ৎক্ষণ একজন মেয়ে কেয়া কে ধরে নিয়ে এলো। রুদ্র কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পা জোড়া থামলো কেয়ার,এতক্ষণে সে সবটা বুঝতে পেরেছে।রুমে প্রবেশ করতেই দুজন মেয়ে ধরে বেঁধে ওকে তৈরি করিয়েছে।সাদা রঙের গাউন পরেছে সে, রুদ্র কে দেখে শুকনো ঢোক গিললো কেয়া। এটা কী সত্যি? কেয়ার মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে আজ তার বিয়ে। কিন্তু এসব? দৃষ্টি গেল ঐশ্বর্যের দিকে, ঐশ্বর্য হাত গোল করে বুকে ঠেকায়।কেয়া ফিচলে হাসে, এগুলো এই ছেলে করেছে!অথচ একটি বারের জন্য বুঝতে দেয়নি।
এগিয়ে গেল সামনের দিকে,আজ তার চলার গতি খুব কম। ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে, আকস্মিক জনসম্মুখে সবার সামনে রুদ্র কে জড়িয়ে ধরে কেয়া।
“মিস্টার হ্যান্ডসাম ইউ আর বেস্ট,আই লাভ ইউ।”
রুদ্র হেসে ফেলল, দুহাতে আগলে নিল কেয়া কে।
“আই লাভ ইউ ইনফিনিটি সিনিয়র।”

তাদের ফার্স্ট নাইট,কেয়ার লজ্জা বলতে কিছুই নেই,সেই যে রুমে এসেছে এরপর থেকেই রুদ্র কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।
“ফ্রেশ হবে না?”
“উঁহু।”
কেয়া নাহুচ করলো,হাসলো রুদ্র। চুলের হাত বাড়িয়ে দিল, ক্রমশ নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে দুজনেরই। রুদ্র গভীর ভাবে স্পর্শ করলো কেয়া কে, নুইয়ে গেল মেয়েটা। আদুরে স্পর্শ পেয়ে আবেশে চোখ বুজে আসে তার, ভালোবাসা ময় একটি রাত।এত দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটলো।একে অপরের এতটা কাছে, ছোঁয়ে দিচ্ছে একে অপরকে কে।রাত যত গভীর হয় স্পর্শ গুলো গাঢ় হলো। অতঃপর ভালোবাসাময় একটি রাত পাড় করে স্বামী স্ত্রী।

রাত তিনটা ছুঁই ছুঁই, প্রিয় পুরুষের স্পর্শে মুচড়ে উঠলো উৎসা। ঐশ্বর্য কানে ফিসফিসিয়ে বললো।
“ইউ আর মাইন রেড রোজ।”
উৎসা হেসে ফেলল। ঐশ্বর্য ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট গুঁজে দিতেই আবেশে চোখ বুজে নেয় উৎসা।

বছরের মাঝামাঝি সময়, ঐশ্বর্য ব্যস্ত থাকে সেই আগের মতো বিজনেসে। মাঝে মাঝে রাজেশ চৌধুরী বাড়িতে এসে কথা বলে ওদের সঙ্গে। সারাটা দিন ব্যস্ত থাকলেও ঠিক রাতের দিকে যত্নে বুকে টেনে নিয় উৎসা কে।
উৎসার‌ কলেজে ফাইনাল সেমিস্টার চলছে, এরপর সে কলেজ থেকে বেরিয়ে যাবে।রাত দিন এক করে পড়তে হচ্ছে তার, সারাদিন মন দিতে পারলেও রাতের দিকে পারে না। ঐশ্বর্যের থেকে বাঁচতে স্টাডি রুমে বসে থাকে, কিন্তু ঐশ্বর্য?ঠিকই অফিস থেকে এসে কোলে তুলে রুমে নিয়ে যায় তাকে। জোরপূর্বক তাকে জড়িয়ে ধরে, প্রথম হাত পা ছোড়াছুড়ি করলেও পরে হার মেনে চুপটি করে বসে থাকে।
এই যে সেই কখন সে চুপচাপ বসে আছে উৎসা আর ওর ঠিক সামনে বসে আছে ঐশ্বর্য।
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? দেখুন কাছে আসবেন না আমার পরীক্ষা আছে কাল।”
ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে,উঠে দাঁড়ালো। উৎসা ঘাবড়ে গেল, ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে কোলে তুলে নিল তাকে।
“উফ্ সুইটহার্ট তোমাকে না দিয়ে তো ঘুমানো যায় না!”
“ছাড়ুন না আমাকে, আমার পরীক্ষা কাল পড়তে হবে।”

“নো ওয়ে।”
“প্লিজ প্লিজ ছাড়ুন!”
ঐশ্বর্য ছাড়লো তো নাই উল্টো ওকে রুমে নিয়ে গিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো। উৎসা ছটপট করলো কিন্তু ঐশ্বর্য ছাড়লো না,শেষে এবারের মতো হার মেনে নিল সে। ঐশ্বর্য নিজের আদুরে স্পর্শে বারংবার কাঁপিয়ে তুলছে উৎসার নারী সত্তা।ভরিয়ে দিচ্ছে ভালোবাসায়, মিনিটের কাঁ’টা ঘন্টা ছুঁলো। ক্লান্ত শরীরে উৎসা কে বুকে চেপে রেখেছে ঐশ্বর্য।
“হেই ইউ ওকে?”
উৎসা চোখের পাতা নেড়ে সম্মতি জানায়, ঐশ্বর্য সেই চোখের পাতায় চুমু এঁকে দিল। ঐশ্বর্য উঠে গেল, উৎসা সেই ভাবেই শোয়ে আছে, ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে পেইন কি’লার আর পি’ল নিয়ে এলো। উৎসার দিকে এগিয়ে দিতেই উৎসা পেইন কি’লার খেয়ে নিল কিন্তু পিল খেতে চাইলো না।
“এটা কেন?”
“কজ আমি চাই না কিছু হোক।”
“কিন্তু..
“নো কিন্তু টেইক ইট।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। উৎসা জেদ করে ওষুধ ছুঁড়ে ফেলে দিল।

বছরের মাঝামাঝি সময়,আজ ঐশ্বর্য আর উৎসার বিয়ের এক বছর পূরণ হলো।উহু যদি নতুন করে হিসেব করা হয় তবেই একবার।আর তা না হলে ঠিক গুনে গুনে দশ বছর পূর্ণ হলো বিয়ের,সেই ছোট বেলার বিবাহ আজও মনে রেখেছে উৎসা।
ঐশ্বর্যের জন্য রয়েছে বড়সড় সারপ্রাইজ।পুরো বাড়ি আবারো ফুলে সাজানো হয়েছে,গুটি কয়েক কাছের মানুষ ছাড়া তেমন কেউ নেই। শহীদ আর তাদের পুরো ফ্যামিলি এখন জার্মানিতে থাকে। ঐশ্বর্য ওদের নিয়ে এসেছে, আর দূরত্ব রাখতে চায় না। বাংলাদেশে একা থেকে কী হবে?তার চেয়ে বরং ওদের কাছাকাছি থাকুক। ঐশ্বর্য বিজনেস পর্যন্ত এখানে ট্রান্সফার করিয়ে নিয়েছে। ঐশ্বর্য নিজ দায়িত্বে আফসানা কে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে, অবশ্য সে জানে তাতে কোনো কাজ হবে না।আদেও কী আফসানা কখন সুস্থ হবে কী না তা নিয়ে সন্দিহান সে।
সবাই আজ আনন্দে আ’ত্মহা’রা। ছোটখাটো অনুষ্ঠান,রেড গাউন পড়েছে উৎসা সাথে ম্যাচিং করা জুয়েলারি। ঐশ্বর্য ব্ল্যাক স্যুট আর ভেতরে অফ হোয়াইট শার্ট।
নিকি কে একটা সোফায় বসালো জিসান, আজকাল তার টেইক কেয়ার করতে হয় একটু বেশিই।করতেই হবে কারণ নিকি যে চার মাসের প্রেগন্যান্ট!যেদিন জানতে পেরেছে সে প্রেগন্যান্ট সেদিন যে কী খুশি হয়েছিল তা বলার মতো না।
কিছুক্ষণ হৈ হৈ করে উঠলো সবাই, ছোট্ট করে কেক কে টে একে একে সবাই কে এক পিস করে খাওয়ানো হলো। ঐশ্বর্য গিফট হিসেবে উৎসা একটি পেপার ধরিয়ে দিল।

“দিস ইজ ইওরস সুইটহার্ট।”
উৎসা চোখ বুলিয়ে নিল, পেপার দেখে চমকে গেল। প্রায় পঞ্চাশ কোটি টাকার একটি বাড়ি উৎসার নামে করে দিয়েছে। হ্যা ওইটা ঐশ্বর্য চৌধুরীর নতুন প্যালেস এটা শুধু উৎসার। জিসান পেপার চেক করলো ওমনি হেসে ফেলল এই জন্য ঐশ্বর্য এই কয়েকদিন দিন রাত এইটা নিয়ে পড়েছিল। উৎসা খানিকটা লজ্জা পেলো তবে কিছু বললো না। এবার কেয়া বলে উঠে।
“কিউট গার্ল এবার তুমি কিছু দাও রিক কে,বিকজ ও তো তোমাকে কিছু দিল।”
উৎসা বলে উঠে।
“এক মিনিট।”
উৎসা ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে গেল টেবিলের দিকে। একটা ফাইল নিয়ে এগিয়ে এলো।
“এটা আপনার।”

রেড রোজ ২ পর্ব ৪৮

ঐশ্বর্যের ভ্রু জোড়া শিথিল হয়ে এলো,ফাইলটা নিল সে। সবাই উদগ্রীব হয়ে আছে কী আছে ফাইনালে দেখার জন্য। ঐশ্বর্য ধীরে সুস্থে ফাইল খুললো, অধর দু’টো তার ফাঁক হয়ে এলো।চোখ দুটো হলো বড় বড়, এটা কী দেখছে সে? এটা কী করে হতে পারে?
তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি ফিরিয়ে চাইলো উৎসার দিকে ,হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। ঐশ্বর্যের ইচ্ছে করলো দু’টো থাপ্পড় দিতে, ঐশ্বর্য কে চুপ থাকতে দেখে জিসান টুক করে ফাইলটা নিয়ে নিলো।কী এমন আছে পাইলে যে ঐশ্বর্য চুপ করে গেল?

রেড রোজ ২ শেষ পর্ব