রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৯
ফারহানা চৌধুরী
-“আমি যাই এখন হ্যাঁ?”
মিশমি তৎক্ষণাৎ কপাল কুঁচকে নিলো,
-“যাবে মানে? এখনই কেন? আজকে আমরা একসাথে থাকবো তো।”
-“অ্যাঁ?”
-“হ্যাঁ!”
অরু হেসে ফেলল,
-“অন্য কোনোদিন থাকবো। দেরি হলো বেশ, এখন যাওয়া উচিত।”
মিশমি জেদি গলায় বলল,
-“মোটেও না। তুমি থাকবে মানে থাকবেই। চলো, গাড়িতে ওঠো। চলোওওও।”
মেয়েটার এতো জেদে অরু হার মানলো। আড় চোখে শুভ্রর দিকে চেয়ে গাড়িতে উঠে বসল। শুভ্র তো আসবে না সাথে, তা-ই স্বস্তির। তবে… বেচারীর শত জল্পনা-কল্পনা আর স্বস্তিকে জঙ্গলে ছুঁড়ে শুভ্র তার পাশে এসে বসে পড়লো। অরু এতোটাই আশ্চর্য হলো, তার মুখভঙ্গি বোঝাই দুষ্কর হয়ে পড়লো৷ অদ্ভুত চোখে চেয়ে বলেই বসল,
-“আপনি এখানে কি করছেন?”
-“ক্রিকেট খেলছি। খেলবে?”
লোকটার বিরক্তিকর প্রত্যুত্তর। অরু নাক কুঁচকালো। মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল।
চার তলা বিল্ডিংয়ের সামনে গাড়ি থামায় সাদাফ। মিশমি ঝটপট নেমে সাদাফের পাশের দরজা খুলে দিলো। হাত বাড়িয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে হেসে বলল,
-“কাম মাই লিটল লিটল পাম্পকিন। কাম ফাস্ট।”
সাদাফ কপাল চাপড়ালো। মেয়েটার মাথা কি একেবারেই গিয়েছে? আজ কি কি অদ্ভুত কাজকর্ম যে করছে! গাড়ি থেকে নামতেই দেখলো শুভ্র অরু আরো আগেই নেমেছে। তবে শোনেনি বোধহয় কিছু। যাক! এবার শান্তি লাগছে কিছুটা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মিশমির পরনের শার্টের স্লিভ ফোল্ড করা ছিলো। সে সেটা টেনে নামালো। শীত পড়েছে বেশ!
সকলে মিলে ঢুকলো বিল্ডিংয়ের ভেতর। তিন তলায় লিফট পৌঁছুলে নির্দিষ্ট এপার্টমেন্টে গিয়ে দরজা খোলে সাদাফ। হেসে সকলকে ঘরে ঢোকালো।
শুভ্র গিয়েই হাত-পা ছঁড়িয়ে সোফায় বসে পড়ল। অরু তা দেখে কপাল কুঁচকায়। তার বুঝে আসে না, একটা লোক এতোটা অভদ্র কি করে হয়! একজনের বাড়িতে এসে এমন করে হাত-পা ছুঁড়ে কে বসে? তার ভাবনা চিন্তার মাঝেই সাদাফ তাকে বসতে বলল। অরু গুটিশুটি মেরে, অস্বস্তি নিয়ে সোফায় বসল। চোখ তুলতেই মিশমিকে তার পাশে বসতে দেখল। পা উঠিয়ে আসন করে বসে অরুকে বলল,
-“বলো, কি খাবে?”
অরু মাথা নাড়ে তাৎক্ষণিক,
-“কিছু না।”
-“আরে! কিছু না বললেই হলো? অ্যাই, অরু! তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? এই মেয়ে, লজ্জা-টজ্জা পেয়ো না একদম। আমরা-আমরাই আছি এখানে। চিল।”
অরু হেসে মাথা দোলায়। আশপাশে চোখ বুলিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে প্রশ্ন করল,
-“এটা কার ফ্ল্যাট?”
সাদাফ কফির চারটে কাপ ট্রেতে করে এনেছিল। সেগুলো টেবিলে রাখতে রাখতেই বলল,
-“আমার।”
মিশমি হেসে বলল,
-“ওয়েল, এখন থেকে আমারও।”
অরু হাসলো। মিষ্টি করে বলল,
-“অনেক সুন্দর এপার্টমেন্টটা। এমন এপার্টমেন্ট রেন্ট করার কথা আমিও ভাবছিলাম ক’দিন ধরে।”
শুভ্র সোফায় এলিয়ে রাখা মাথা তুলে ঠিক করে বসলো এবার। পরনে “Nike” খচিত কালো রঙের হুডি। মাথা থেকে হুডির আস্তিন সরাতেই হুডির ভেতরে এতক্ষণ লুকিয়ে থাকা তার লম্বা চুলগুলো হুড়মুড়িয়ে বাইরে উঁকি দিলো। কাঁধ ছুঁই ছুঁই চুলগুলোতে আলগোছে হাত বুলিয়ে অরুর কথার মাঝেই ফোড়ন কাটলো,
-“তা-ই তো ভাবা হবে। নিজের বাড়ি তো আর আপনার ভালো লাগবে না, তাই না মি-স অরুনিকা?”
অদ্ভুত! বড়ো অদ্ভুত! এই লোকের সমস্যা ঠিক কথায়, অরু এতো মাসেও তা বোঝেনি৷ সবসময় কোনো খোঁচা না মারলে তার কি ভাত হজম করতে কষ্ট হয়? অরু দাঁত কিড়মিড় করে চাইলো,
-“আমার কেমন বাড়ি পছন্দ তা তো আপনার ভাবার বিষয় নয় স্যার। আপনার এতো কষ্ট করে মাথা ঘামানোর দরকার পড়বে না।”
শুভ্র কপাল কুঁচকালো। তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থাকলো। সাদাফ আর মিশমি এতক্ষণ তাজ্জব বনে বসে থাকলেও, এখন যে একটা বড়সড় ঝগড়া হবে তা তারা আন্দাজ করে নিয়েছিলো। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে সাদাফ উঠে দাঁড়ালো। কফির একটা কাপ টেবিল থেকে তুলে শুভ্রকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
-“ভাই, কফি নিন। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
শুভ্র শীতল চোখে তাকালো তার দিকে। কফির কাপে একপল চোখ বুলিয়ে বলল,
-“সিরিয়াসলি সাদাফ?”
পরপর কুঁচকানো কপালেই কফির কাপটা হাতে নিলো। কাপে চুমুক বসাতে বসাতে বলল,
-“তুমি একটা উন্নত মানের বলদ সাদাফ, বুঝলে?”
সাদাফ হকচকিয়ে গেলো। মিশমি লাফিয়ে উঠলো,
-“আই এগ্রি উইদ ইয়্যু স্যার। হান্ড্রেড পার্সেন্ট!”
অরু বড়সড় চোখ করে চাইলো মিশমির দিকে। এ কেমন মেয়ে? স্বামীকে এমন কথা বলছে, তার তো উচিত লোকটার মাথা ফাটানো। উল্টো সে লাফিয়ে যাচ্ছে! শুভ্র ফিচলে হাসলো। সাদাফের দিকে চেয়ে বললো,
-“জানতে চাইবে না কেন বললাম এমন?”
সাদাফ ভোঁতা মুখে চাইলো,
-“বলেন।”
-“আরে বলছি, আগে বসো। আরাম করে কফি খাও। স্যরি, পান করো।”
সাদাফ শুভ্রর জোরাজুরিতে পাশে বসতে নিলেই শুভ্র ক্ষ্যাপাটে গলায় বলে উঠল,
-“আজব, আমার পাশে বসছো কেন? আমাকে তোমার বৌ লাগে? উঠো, উঠো! বৌয়ের পাশে গিয়ে বসো। যাও যাও।”
সাদাফ লাজুক মুখে পিলপিল করে গিয়ে মিশমির পাশে বসলো। সে বসতেই মিশমি অরুর হাতে চিমটি কাটলো। ইশারায় বললো শুভ্রর পাশে গিয়ে বসতে। অরু চমকালো। শুভ্রর দিকে তাকালো। পরমূহুর্তেই মিশমির খোঁচাখোঁচির শিকার হয়ে উঠতে হলো তাকে। বাধ্য হয়ে গিয়ে শুভ্রর পাশে বসলো। শুভ্র যেন এতক্ষণ তারই অপেক্ষায় ছিলো। এইজন্যই, অরু বসতেই সাদাফকে বলা শুরু করল,
-“শোনো, যখন দেখলে, আমরা ঝগড়া শুরুর পথে ছিলাম, তখন তোমার উচিত ছিলো যেকোনো একটা পক্ষ চুজ করে সেই পক্ষকে সাপোর্ট করা। আর আমাদের ঝগড়া করতে উৎসাহ দেওয়া। তবে তুমি, গাধার মতো ঝগড়া থামাতে আমাকে কফির অফার করলে। উদ্ভট!”
রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৮
সাদাফের মন চাইলো কপাল ঠুকে মরে যেতে। এই লোকের মাথায় কি সমস্যা রয়েছে কোনো? এমন গাঁজাখুরি কথা কেউ কি করে বলে? আল্লাহ! শুভ্র তখনই ভালো একটা কথাও বলল,
-“তবে হ্যাঁ, তোমাদের দুজনকে পাশাপাশি মানিয়েছে। দাঁড়াও, একটা ছবি তুলি।”
এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নয়, বরং বেশ ক’টা ছবি তুলল। তার এমন অদ্ভুত একটা রূপের সঙ্গে পরিচিত হয়ে অরু বড়ো আশ্চর্য হলো।