লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ১৭

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ১৭
Fatima Fariyal

পাশের মসজিদে মাগরিবের নামাজ শেষ করে, মসজিদের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন তারেক রায়ান। হাওয়ায় আজ একধরনের শীতলতা, তবুও তার বুকের ভেতরে জমাট বাঁধা অস্বস্তি। ধীর পায়ে রাস্তা পেরিয়ে একটি রিকশায় উঠলেন তিনি। কিছু সময় পর রিকশা মীর হাউজের সামনে এসে থামলো। বিশাল লোহার গেট, ওপরে খোদাই করা অক্ষরে লেখা “Mir House”। রিকশা থেকে নামতেই গার্ডরা দ্রুত এগিয়ে এলো। নিজের পরিচয় দিতেই এক গার্ড ভেতরে ফোন করে খবর নিয়ে, মুহূর্তেই গেট খুলে দিলো। ভদ্রভাবে তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে বললেন একজন গার্ড। এক ভিন্ন পরিবেশে ঢুকে গেলেন তারেক রায়ান। হলঘরে দাঁড়িয়ে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন তিনি। মীর হাউজের প্রতিটা কোনা আভিজাত্যের মোড়কে ছাঁয়া। গার্ড তাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে ড্রইংরুমের একপাশের সোফায় বসতে ইঙ্গিত করে, বিনয়ের সঙ্গে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। ঘর প্রায় নির্জন, কেবল দু’জন পরিচারিকা নীরবে কাজ করছিল।

ঠিক সেই সময় পাশের ঘর থেকে পরিপাটি শাড়ি পরে বেরিয়ে এলেন আফরোজা শেখ। তার দৃষ্টি দৃঢ় অথচ ভদ্রতার আবরণে মোড়া। তাকে দেখেই তারেক রায়ান উঠে দাঁড়ালেন। মাথা নিচু করে সালাম দিলেন,
“আসসালামু আলাইকুম।”
আফরোজা শেখও সৌজন্য সহকারে উত্তর দিলেন,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আরে বসুন না! দাঁড়িয়ে পড়লেন কেনো?”
তারেক রায়ান পুনরায় নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়লেন। এমন সময় পরিচারিকা রিতু নাস্তার ট্রলি এনে রেখে গেলো। কিন্তু তারেক রায়ান কেবল বিনয়ের সঙ্গে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে রইলেন। চোখ প্রায় নিচের দিকেই নিবদ্ধ। সামনে বসা ভদ্র মহিলার প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা, তাই চোখ তুলতে সংকোচ হচ্ছিল। আফরোজা শেখ তা লক্ষ্য করলেন। তার দৃষ্টি একবারের জন্য গিয়েছিল তারেক রায়ানের মুখে। রিদিতার সঙ্গে তার বাবার চেহারার মিল খুঁজে পেলেন না, কেবল ঠোঁট ছাড়া। ভেতরে ভেতরে ভাবলেন, হয়তো রিদিতা তার মায়ের মতো দেখতে হয়েছে। নীরবতা ভাঙলেন তিনি নিজেই, স্বর ছিল নির্লিপ্ত অথচ স্থির,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি এতোদূর থেকে আমার ডাকে কষ্ট করে এসেছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। হয়তো বুঝতে পারছেন আমি কেনো আপনাকে ডেকেছি।”
তারেক রায়ান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন।
“জ্বি, কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি।”
আফরোজা শেখ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে, আবার বললেন,
“আমি চাইলেই আপনাকে ফোনে সব বলতে পারতাম! কিন্তু আমার মনে হয়েছে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলাই ভালো।”
“জ্বি, জ্বি বলুন।”

চশমাটা দু’আঙুল দিয়ে একটু ঠিক করে নিলেন তিনি। অতঃপর গম্ভীর কিন্তু প্রশান্ত কণ্ঠে বললেন,
“আপনার মেয়ে রিদিতা আর আমার মেয়ে আহিয়া খুব ভালো বন্ধু। রিদিতা কয়েকবার এসেছিলো এ বাড়িতে, তখনই আমি দেখেছিলাম তাকে। ওর কথা বার্তা, চাল চলন, বিনয়ী স্বভাব দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আজকালকার যুগে এমন মেয়ে পাওয়া দুষ্কর। আপনি আপনার মেয়েকে সত্যিকারের শিক্ষায় গড়ে তুলেছেন।”
“আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। বাকিটা তারা নিজেরা বুঝে চলতে শিখেছে।”
“তা ঠিক বলেছেন।”

মৃদু হেসে তার কথায় সায় দিলেন আফরোজা শেখ। অতঃপর যেন ভেতরের দ্বিধা সরিয়ে সাহস সঞ্চয় করে বললেন,
“আপনার কাছে আমার একটা আবদার আছে ভাই। ভাই ডাকলাম কিছু মনে করবেন না। আমার ভাইবোন নেই। তাই আপনাকে ভাই ডাকলাম।”
“না, না। কিছু মনে করবো কেনো?”
“আচ্ছা তাহলে বলেই ফেলি, আমার বড় ভাসুর সালমান মীর, তার স্ত্রীসহ জার্মানিতে থাকেন। ওখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। বছরে এক-দুইবার দেশে আসেন। তাদের একমাত্র ছেলে আদনান। ওর বিয়ের দায়িত্ব আমার উপর দিয়েছেন ভাইজান। এখন আমি আপনার কাছে আপনার মেয়েটাকে এ বাড়ির বড় ছেলের জন্য আনতে চাই! যদি আপনার সম্মতি থাকে।”

কথাগুলো তিনি এক নিঃশ্বাসে শেষ করলেন। তারেক রায়ান স্থির হয়ে শুনলেন কথাগুলো। একটু ভেবে নিয়ে কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিলেন। এমন সময় বাহিরে থেকে মৃদু পায়ের শব্দে ভিতরে ঢুকলো আদনান। সে সোজা সিঁড়ির দিকেই চলে যাচ্ছিল, তখনই পিছন থেকে আফরোজা শেখ ডাকলেন,
“আদনান!”
আদনানের পা থেমে গেলো, পিছনে ঘুড়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো। কাছে আসতেই আফরোজা শেখ পরিচয় করিয়ে দিলেন,
“এটা আদনান, আমার ভাসুরের ছেলে।”
তারেক রায়ান উঠে দাঁড়ালেন। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে আদনানের দিকে তাকালেন। আফরোজা শেখ তীক্ষ্ণ চোখে আদনানকে শাসন করলেন,
“আদনান… উনি রিদিতার বাবা।”

এক মুহূর্তে আদনানের মুখের রঙ পাল্টে গেলো। চোখে ভেসে উঠলো চাপা বিস্ময়, ঠোঁট শক্ত হয়ে গেলো। তবুও ভদ্রতা বজায় রেখে সালাম দিলো,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
শান্ত গলায় জবাব দিলেন তারেক রায়ান। তার দৃষ্টি এক ঝলক ঘুরে গেলো আদনানের দিকে। হালকা আকাশি রঙের শার্ট, ক্লিন-শেভ মুখ, ফর্সা ত্বক সব মিলিয়ে নিখুঁত ভদ্রতার ছাঁপ। এক কথায় সুদর্শন পুরুষ বলতে গেলে। আদনান বিনয়ের সঙ্গে বললো,

“আপনি বসুন না!”
এরপর আফরোজা শেখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ছোট আম্মা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
“ঠিক আছে যাও।”
আফরোজা শেখ মাথা নেড়ে অনুমতি দিলেন। এক মুহূর্ত দেরি না করে আদনান গটগট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। যেনো নিজেকে সেখান থেকে গুটিয়ে নিতে চাইছে।তারেক রায়ান স্থির হয়ে তার যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। যখন দেখলো আদনানের অবয়ব মিলিয়ে গেলো তখন তিনি আবার বসলেন সোফায়। আফরোজা শেখ এবার নীরবতা ভাঙলেন। স্বভাবসুলভ দৃঢ়তা আর খানিকটা তীক্ষ্ণ ভঙ্গিতে বললেন,
“আদনানকে তো দেখলেন। পেশায় ও একজন ডাক্তার, সেটা তো আপনি জানেন নিশ্চয়ই! আমি তো বলবো, রিদিতা আর আদনানকে একসাথে খুব মানাবে।”

তারেক রায়ান কথা শুনছিলেন গভীর মনোযোগ দিয়ে। তিনি মানুষটি সহজ সরল, কিন্তু চোখে-মুখে দৃঢ়তার রেখা। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর ধীরে ধীরে বললেন,
“আপনার কথায় আমি খুশি হয়েছি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি খোলাখুলি বলছি, আমার মেয়েকে এত সম্মান আর মূল্যবান ভেবে আপনি আপনার পরিবারে যোগ করতে চাইছেন। সেটা আমার জন্যও গর্বের। তবে আমি মিথ্যে আশ্বাস দিতে চাই না। আমার মেয়ে এই বিশাল বাড়িতে, এই অঢেল ঐশ্বর্যের মধ্যে এসে মানিয়ে নিতে পারবে বলে মনে হয় না। আমি চাই আমার মেয়ের বিয়ে হোক একেবারে সাধারণ, আমাদের মতই মধ্যবিত্ত পরিবেশের মধ্যে। ওর জীবনে আমি বিলাসিতার চাপ দিতে চাই না।”
আফরোজা শেখ সামান্য অপ্রস্তুত হলেও নিজের কণ্ঠে দৃঢ়তা ধরে রাখলেন। কিছু বলার আগেই তারেক রায়ান আবার যোগ করলেন,

“তবুও আমি একা সিদ্ধান্ত নেবো না। এ বিষয়ে আমার পরিবারের সাথে আলোচনা করে আপনাকে জানাবো।”
আফরোজা শেখ ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললেন,
“জ্বি অবশ্যই! আপনি ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেন, কোন তাড়া নেই! তবে একটা কথা বলতে চাই, আপনার মেয়ে আর মেয়ের মধ্য কোন পার্থক্য নেই। ওরা দুজনই আমার কাছে সমান! আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি!”
“জ্বি, বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমি ও আমার মতামত জানিয়েছি।”

আফরোজা শেখ আবার কিছু বলতে নেয়, ঠিক সেই মুহূর্তেই গটগট করে ভেতরে প্রবেশ করলো আহাদ। তার শরীর কালো প্যান্ট শার্টে আবৃত, চুলগুলো এলোমেলো, চোখেমুখে অদ্ভুত ক্লান্তি। ড্রইংরুমে ঢুকেই ধপাস করে ক্লান্ত দেহখানা অদ্ভুত ভঙ্গিতে ছুঁড়ে দিলো সোফায়। যেন সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষে শরীরটাকে ভেঙে ফেলেছে। আফরোজা শেখ সঙ্গে সঙ্গে বিরক্তিতে কপাল গুঁজে নিলেন। তার ছেলের এই বেহাল, লাগামছাড়া আচরণ মাঝে মাঝেই তার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে চায়। আহাদ চোখ বন্ধ করেই হাত-পা টানলো, ঘাড়টা ডানে-বামে ঘুরিয়ে একটু আরাম নেওয়ার চেষ্টা করলো। অতঃপর পর চোখ খুলে তাকালো মায়ের দিকে। নিজের মাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করে,

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি আবার কি করলাম!”
তার কণ্ঠে একরকম উদাসীনতা, আবার একটু বিদ্রূপও মিশে আছে। আফরোজা শেখ কিছু বলার আগেই আহাদের চোখ পড়ে পাশের সোফায় বসা মধ্যবয়সী লোকটির দিকে। সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা, গায়ের রং শ্যামলা, গাল ভর্তি আধাপাকা দাড়ি, চোখে এক ধরনের শান্ত অথচ কঠিন দৃষ্টি। আহাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। সে ভেবে নেয় তার মায়ের কোন ক্লায়েন্ট হবে হয়তো, তাই সাথে সাথে ঠোঁট বেঁকিয়ে মাকে প্রশ্ন করলো,
“মালটা কে? দেখে তো মনে হয় না কোনো ক্রাইম করছে।”
তার কথাটা শুনেই তারেক রায়ান গলা খাঁকারি দিলেন দুবার, সামান্য অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসলেন। অন্যদিকে আফরোজা শেখ দাঁতে দাঁত চেপে কাঠের মতো কঠিন কণ্ঠে বললেন,

“ভদ্রভাবে কথা বলো বেয়াদব ছেলে! উনি আমার কোনো ক্লায়েন্ট নন, আমার মেহমান।”
আহাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“মেহমান? আগে তো দেখি নাই কখনো।”
কথা শেষ করেই টেবিলে রাখা ঠান্ডা পানির গ্লাসটা টেনে নিয়ে, এক চুমুক দিয়ে গলা ভিজালো। আফরোজা শেখ এবার দৃঢ় স্বরে উত্তর দিলেন,
“উনি রিদিতার বাবা, তারেক রায়া….”

“রিদিতার বাবা!” কথাটা শোনামাত্রই আহাদ যেন বজ্রাঘাতে বিদ্ধ হলো। এক ঢোক পানি যেন গলায় আটকে গেল তার, বিষম খেয়ে কাঁশতে কাঁশতে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালো। কিছুটা পানি পরে তার শার্টও ভিজে গেলো। তাড়াহুড়ো করে শার্ট ঝাড়তে ঝাড়তে একবার তাকালো তারেক রায়ানের দিকে। কোন দিক থেকেই তো রিদির মত লাগছে না! সে কি করে বুঝবে যে এটা তার হবু শশুড় মশাই! তবে কিছুটা ঈশানীর সাথে মিল আছে তা পরে বুঝতে পারলো। মুহূর্তেই তার মাথা ঘুরে গেলো, মনে মনে বললো,

“গেলো! আরেক ধাপ পিছিয়ে গেলো আমার বিয়ে নামক যুদ্ধ। অন্ধের মতো না বুঝে শুনে শশুর মশাইকে দিলাম মাল টাল বলে। এখন না দাঁড়ালেই হয় আমার বিয়ের রাস্তায় ঢাল হয়ে!”
তারেক রায়ান এবার উঠে দাঁড়ালেন বিদায়ের উদ্দেশ্যে। বেরোনোর আগে এক ঝলক তাকালেন আহাদের দিকে। সংবাদে, পত্রিকায় আহাদের নামে অনেকবার বিতর্ক, অশান্তি আর লাগামহীনতার গল্প শুনেছেন তিনি। কিন্তু আজ প্রথমবার সরাসরি দেখে উপলব্ধি করলেন, গুজবের অনেকটাই সত্যি। আহাদ একবার মায়ের দিকে তাকালো, আবার তারেক রায়ানের দিকে। অপ্রস্তুত গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“রিদির সাথে তো আপনার কোনো চেহারার মিল নাই। রিদি কি সত্যিই আপনার মেয়ে?”
আফরোজা শেখ ধমক দিয়ে উঠলেন, “এসব কি আজে-বাজে প্রশ্ন করছো?”
তারেক রায়ান মৃদু হেসে গলা পরিষ্কার করলেন,
“রিদিতা আর ওর ভাই আসলে ওদের ফুপির মতো হয়েছে। এজন্য আমার সাথে চেহারার মিল কম।”
কথা শেষ করে আফরোজা শেখের দিকে তাকিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বললেন,
“আমি তাহলে উঠি। আপনাদের কষ্ট দিলাম, এজন্য দুঃখিত।”
আফরোজা শেখও ভদ্রতার সাথে দাঁড়িয়ে বললেন,
“না না, কষ্টের কি আছে ভাই! বরং আপনার আসায় আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি শেষ পর্যন্ত আমাকে নিরাশ করবেন না।”

তারেক রায়ান মাথা নেড়ে নীরব সম্মতি জানিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলেন। ঘরে কিছুক্ষণ নীরবতা নেমে এলো। শুধু আহাদের ভেতরে চলতে থাকলো অস্থিরতার ঝড়। এবার মুখ শক্ত করে ভ্রু উঁচিয়ে সোজা তাকালো মায়ের দিকে। গলায় রুক্ষ সুর এনে বললো,
“রিদিতার বাবা হঠাৎ কেনো এলো, বলো তো?”
আফরোজা শেখ কিছুক্ষণ ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। অতঃপর ধীরে ধীরে চেয়ারে বসে পড়লেন। তার চোখেমুখে ক্লান্তি থাকলেও গলার স্বর ছিল দৃঢ়,
“রিদিতাকে এই বাড়ির বউ করার প্রস্তাব দিয়েছি আমি। কিন্তু উনি রাজি হননি। বলেছেন ভেবে-চিন্তে পরে জানাবেন।”

এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলো আহাদ। বুকের ভেতরটা যেন হালকা কেঁপে উঠলো। সে কি ঠিক শুনছে? তার মা নিজ থেকে তার প্রেয়সীকে এ বাড়ির বউ করে আনতে চায়! তাহলে কি তার বাবা সব কিছু তার মাকে বলে দিয়েছে? আর তার জন্যই তার মা প্রেয়সীকে আনতে চায়! এই কথা যেনো তাকে অবিশ্বাস্য আনন্দে ভাসিয়ে দিলো। মুহূর্তের ভেতরেই তার ভেতরের শক্ত, রূঢ় মুখোশ ফেটে হালকা লাজুক হাসি ফুটে উঠলো ঠোঁটের কোনে। তাকে এভাবে অদ্ভুত ভাবে হাসতে দেখে আফরোজা শেখ সেদিকে কপাল কুঁচকে তাকালেন। কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাইরে থেকে হুড়মুড় শব্দে দরজা ঠেলে ঢুকলেন আসফাক মীর। আহাদকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“কিরে! তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস? বাহিরে শাহীনরা তোর জন্য কখন থেকে অপেক্ষা করছে। তোর গুছগাছ কতদূর?”

আহাদের ধ্যান ভগ্ন হয় চাচার ডাকে। কাজের কথা মনে হতেই মুখে আবার স্বাভাবিক ভাব ফুটে উঠলো। নির্লিপ্ত স্বরে উত্তর দিলো,
“সব রেডি। নাদিমকে বলো ব্যাগগুলো গাড়িতে তুলে দিতে।”
এবার আফরোজা শেখ আসফাকের দিকে তাকিয়ে, চোখ সরু করে প্রশ্ন করলেন,
“কোথায় যাচ্ছো তোমরা, আসফাক?”
“একটা সমাবেশ আছে। আগে চট্টগ্রাম যেতে হবে, এরপর সেখান থেকে সিলেট।”
“কতদিনের জন্য যাচ্ছো?”
“এইই… তিন-চারদিন তো লাগবেই।”
“তোমার ভাইজান ও কি যাচ্ছে? আমাকে তো কিছু জানালো না।”
“না ভাবি। ভাইজান যাবে না বলেই তো আমি আর আহাদ যাচ্ছি। ভাইজানের এখন এখানে থাকাটা জরুরি।”
আহাদ তখন শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
“চল চাচু। আসছি আম্মা।”

দু’জনেই দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু দরজার মুখে হঠাৎই আহাদের পা থেমে গেল। কিছু একটা ভেবে আবার পিছনে ঘুড়ে আসে। মায়ের কাছাকাছি গিয়ে নিচু গলায় বললো,
“রিদির বাবা যদি রাজি না হয়, তাহলে দ্রুত রাজি করানোর ব্যবস্থা করো। তা না হলে আবার আমি অ্যাকশন নিবো!”

কথাটা বলেই মায়ের দিকে তাকিয়ে, ঠোঁটে এক গাল দুষ্টুমি-মাখা হাসি ফুটিয়ে বেরিয়ে গেলো আসফাক মীরের সাথে। আফরোজা শেখ কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে ছেলের পিছন ফিরে যাওয়া দেখলেন। বুঝতে পারলেন না আদনানের বিয়ে নিয়ে তার এতো তাড়া কিসের। তিনি ভেতরে ভেতরে ভাবলেন, এতোটা দায়িত্ববান কবে হলো তার ছেলে! যে ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে ভাবছে! অথচ বিচক্ষণ আফরোজা শেখ এটা বুঝতে পারলো না, সে আসলে ভাইয়ের না নিজের ব্যাপারে কথা বলে গেছে। হিসাব মিলাতে না পেরে আফরোজা শেখ মাথা নেড়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো একরাশ প্রশ্ন আর সংশয় নিয়ে।

ড্রইংরুমের মৃদু আলোয় নিস্তব্ধতা ভাসছে। সোফায় গুটিসুটি হয়ে বসে আছে রিদিতা। দু’পা তুলে উরুর উপর চিবুক ঠেকিয়ে রেখেছে, ঠোঁট আর গাল দুটোও ফুলিয়ে রেখেছে। চোখদুটো আধো লাল, মুখে ভাঙা ঘুমের ক্লান্তি। সারাদিনটাই প্রায় কেটেছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। ঈশানী কয়েকবার ডাকছিলো, কিন্তু রিদিতা উঠেনি। দুপুরের খাবারও খায়নি। ঈশানী ভেবেছিলো হয়তো বোনের শরীর খারাপ, তাই আর বিরক্ত করেনি। তবে মাহির কান্নাকাটি আর উচ্ছৃঙ্খল চেঁচামেচিতে শেষ পর্যন্ত ঘুম ভেঙে যায় রিদিতার। সেই বিরক্তিই যেনো এখনো গা থেকে নামেনি। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখে লেপ্টে আছে। ঈশানী এসে তার সামনেই বসল। হাতের ফোনটা টেবিলে রেখে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে থেকে দৃঢ় স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

“তোর কি হইছে রিদি?”
“রোগ হইছে।”
“রোগ তো তোর লেগেই থাকে! এখন আবার কি রোগ হইছে?”
“মরন রোগ।”
“এই ত্যাড়া ত্যাড়া কথা শিখছিস কার থেকে?”
“আহাদ রাজার থেকে।”
শেষ কথাটা রিদিতা এতটাই অস্পষ্ট ভাবে ফিসফিস করে বললো যে ঈশানী শুনতেই পেল না। কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে, কি বললো বোঝার চেষ্টা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো বোনের দিকে। অতঃপর আবার বললো,
“কিছু একটা যে হইছে তোর, সেটা আমি স্পষ্ট বুঝতেছি। আর এটাও বুঝতেছি, তুই সেটা লুকাচ্ছিস।”
রিদি কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। শুধু চোখ জোড়া তুলে এক ঝলক তাকালো বোনের দিকে। ঈশানী সেটা খেয়াল করে আবার প্রশ্ন করে,

“কি হইছে তোর বল তো!”
রিদি ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেই নির্লিপ্ত স্বরে বললো,
“কেবলই তো বলছো আমি লুকাচ্ছি। যেটা লুকাইতেছি সেটা আবার বলবো কেনো?”
“একটা থাপ্পড় দেবো।”
“দেও। সবাই মিলে আমাকে থাপ্পড়াও।”
রাগে কণ্ঠ কেঁপে উঠলো রিদিতার। ঈশানী এবার ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট চেপে জিজ্ঞেস করে,
“আমি ছাড়া আর কে থাপ্পড়ায় তোকে?”
রিদিতা শুধুু কটমট করে তাকিয়ে রইলো কিছুই বললো না।পাশের টেবিল থেকে রিমোটটা তুলে টিভি অন করলো। একের পর এক চ্যানেল পাল্টাতে থাকলো। যেন তার সব রাগ ক্ষোভ ওই রিমোটের উপর ঝাড়ছে। ঠিক তখনই মাহি দৌড়ে এসে রিদিতার কোলে উঠে পড়লো। চোখ ভেজা, এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। রিদিতা সেটা খেয়াল করে তার গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,

“কাঁদছিস ক্যান? কি হইছে?”
মাহি ঈশানীর দিকে আঙুল তুলে দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
“মাম্মাম মারছে।”
রিদি বোনের দিকে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে কটাক্ষ করে বলে,
“তোর মায়ের তো কাজই খালি সবাইরে ধরে ধরে মা’রা। একটা কাজ করি, তোর মাকে বিদায় করে দেই। তোর পাপাকে বিয়ে দিয়ে আরেকটা নতুন মা নিয়া আসি। কি বলিস?”
মাহি চোখ মুছে ঝলমল করে উঠে বললো,
“তাহলে কি আমি পাপার বিয়ে খেতে পারবো?”
“হ্যাঁ পারবি। আর আমরা সেই বিয়েতে ঝিঙ্গা লা লা হু করে নাচতেও পারবো।”

শুনেই মাহি খিলখিল করে হেসে উঠলো। তার হাসি দেখে রিদিতার মুখেও চাপা হাসি ফুটলো। ঈশানী কপাল কুচঁকে বিরক্ত হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মুখে রাগ, ছোঁয়া যেন এই দুইজনের অকারণ খুনসুটি তার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই দরজার কিলং বেল বেজে উঠলো। ঈশানী উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো, সুমন আর তার বাবা তারেক রায়ান একসাথে দাঁড়িয়ে। দুজনকে পাশাপাশি দেখে বিস্মিত হয়ে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমরা একসাথে কি করে আসলা?”
সুমন হাতের ব্যাগটা ঈশানীর হাতে দিয়ে বললো,
“গাড়ি থেকে নামতেই দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছে। তারপর ভাবলাম একসাথে যাই।”
ভেতরে ঢুকে সুমনের চোখ পড়লো সোফায় গুটিশুটি হয়ে বসে থাকা রিদিতা আর মাহির দিকে। সুমন এক গাল হেসে বললো,

“কি ছোট গিন্নি, কি হচ্ছে এখানে?”
মাহি খিলখিল করে হেসে ফাঁস করে দিলো,
“পাপা! তোমার বিয়ের প্ল্যান করছি আমি আর খালামণি।”
সুমন কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো মেয়ের মুখের দিকে। তারপর হঠাৎ করেই ঘরটা ভরে গেলো হো হো করে হাসির শব্দে। তারেক রায়ান, সুমন, ঈশানী, এমনকি ছোট্ট মাহিও হেসে কুটিকুটি। কেবল রিদিতা মুখ গম্ভীর করে রইলো, তবে তার ঠোঁটের কোনে চাপা একটা টান থেকে গেলো যেনো হাসি লুকাতে চেয়েও ব্যর্থ হচ্ছে।

আহিয়া নিজের রুমে আধোশোয়া হয়ে ফোনে চোখ বুলাচ্ছিলো। একটু আগেই আনিকার সাথে তার দীর্ঘ কথা হয়েছে, তবে মনটা এখনো ভারি। রিদিকে কয়েকবার ফোন দিয়েও পেলো না, ফোন বন্ধ। এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে মোবাইলটা বুকের উপর রেখে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। সাদা সিলিংয়ের ফাঁকফোকর গুলো যেন আজ তাকে অস্থির করে তুলছে। আজকের ঘটনাগুলো মনে ঘুরেফিরে আসছে আনিকার কাছে সব শোনার পর থেকে তার মাথায় যেন হাজারো প্রশ্ন। সব কিছু মিলিয়ে বড্ড দ্বীধায় আছে।

সে কিছুতেই বুঝতে পারলো না। তার ভাই আহাদ যার মেজাজের ঝড় যেকোনো সময়ে উঠে যেতে পারে, যার চোখেমুখে শুধু রাগ আর কঠোরতা সে-ই কিনা রিদির প্রতি আসক্ত! তা-ও আবার গোপনে। এদিকে রিদিরও আবার ক্রাশ তার ভাই! তার ভাই রিদির প্রতি আসক্ত হয়েছে এটাও মানা যায়। কিন্তু রিদির ক্রাশ তার এই বদমেজাজি ভাইটা কি করে হতে পারে। এটা কেমন অবিশ্বাস্য ব্যাপার! তার ভাইয়ের তো আছেই শুধু লাগামহীন কথাবার্তা, আর তাছাড়া বদমেজাজি রক্তে রাগ মেশানো একদম আগুনের মত মানুষ সে। তাহলে রিদি তার ভাইয়ের কি এমন দেখলো? ভাবতে ভাবতে বুকের ভেতরটা কেমন টনটন করে উঠছিলো।

বিছানা থেকে একটু উঠে বসে অস্থিরতায়। আর তখনই তার নজড়ে পরে টেবিলে থাকা আদনানের দেয়া সেই বেলি ফুলের গাজরার দিকে। সে এক মূহুর্ত তাকিয়ে থেকে উঠে এসে হাত বাড়িয়ে সেটাকে তুলে নিলো। বেলি ফুলের তীব্র ঘ্রান পুরো রুমে ছড়িয়ে পরেছে। আহিয়া সেটা তুলে কিছুক্ষণ নাকের কাছে ধরে রাখে। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটের কোনে এক ফোঁটা হাসি জমে উঠলো। তার মনে হলো আজকের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তটা যেনো এই ফুলের গন্ধে মিশে আছে। তবে দ্রুত সেই ভাবনা ঝেড়ে ফেলে দিলো। সে পাশের ড্রায়ার থেকে একটা বক্স বের করে গাজরাটা বক্সে রেখে দিলো। এরপর ওড়না গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো, কয়েক ধাপ নামতেই দেখলো রিতু চায়ের কাপ নিয়ে উপরে যাচ্ছে। আহিয়া গলায় কৌতূহল মিশিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কোথায় যাচ্ছিস?”
রিতু সোজা গলায় জবাব দিলো,
“আদনান ভাই চা চাইছে। তার চা নিয়া যাইতেছি।”
আহিয়ার বুকের ভেতর হালকা ধাক্কা লাগলো। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে একটু ভেবে নিয়ে, সে কাপটা রিতুর হাত থেকে নিয়ে বললো,
“তুই নিচে যা, আদনান ভাইয়ের চা আমি দিয়ে আসছি।”
রিতু কিছুটা অবাক হয়ে তাকালেও কিছু বললো না, মাথা নেড়ে নিচে চলে গেলো। আহিয়া ধীরে ধীরে পা ফেলে আদনানের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতে গিয়ে হঠাৎ থমকে গেলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ব্রাশ করছে আদনান। কালো ট্রাউজার আর গাঢ় মেরুন টি-শার্টে অদ্ভুত পরিপাটি লাগছে তাকে। আয়নায় আহিয়াকে দেখেই হাত থেমে যায় মাঝপথে। আয়নাতেই দৃষ্টি রেখে নিচু স্বরে বললো,

“ভিতরে আয়।”
আহিয়া ছোট ছোট পা ফেলে ভেতরে ঢুকলো। তার হাতে কাপের হালকা কাঁপুনি এটা কি চায়ের জন্য, নাকি ভেতরের অস্থিরতার জন্য সে নিজেই বুঝতে পারছিলো না। আদনান আয়নাতেই আহিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,
“কি চাই?”
“আপনার চা।”
“রাখ।”
আহিয়া মৃদু শব্দ করে চায়ের কাপটা টেবিলে রাখে। অতঃপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আদনানের পিঠের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। আদনান সেটা লক্ষ করে প্রশ্ন করে,

“আর কিছু বলবি?”
“হুম।”
“কি বল?”
“বড় আব্বু আর বড় আম্মু কবে আসবে, আদনান ভাই?”
আদনান ঘুড়ে তাকায় সোজা আহিয়ার দিকে। আহিয়ার মুখে আদনান ভাই ডাকটা শুনলেই কেমন যেনো একটা অদ্ভুত মোচর দেয় বুকের ভেতর। কয়েক সেকেন্ড ধরে দুজনের দৃষ্টি আটকে রইলো। আদনান এবার দ্রুত নজর সড়িয়ে টি শার্ট ঠিক করার ব্যাস্ততা দেখিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

“দেরি আছে। এখন আসবে না। বলেছে আমি বিয়ে করলে তবেই আসবে।”
“ওহহহ!”
আহিয়ার ঠোঁট থেকে ভেসে আসা বিস্ময়ের শব্দটা আদনানকে অদ্ভুতভাবে ছুঁয়ে গেলো। আদনান ভ্রু কুচঁকে তাকায় আহিয়ার দিকে কেমন যেনো আনমনষ্ক হয়ে আছে আহিয়া। আদনান একটু উঁচু গলায় বললো,
“কি ওহহ! আর কিছু বলবি?”
আহিয়া হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে, আদনান কৌতূহল হয়ে বলে,
“কি বল!”
“থ্যাঙ্ক ইউ।
“কেনো?”

“আজকে আমাকে ফুলের গাজরা কিনে দিয়েছেন, তাই।”
এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর গভীর গলায় আদনান বললো,
“আমি তোর কি হই?”
আহিয়া মাথা উঁচু করে তাকালো আদনানের দিকে। আদনানের এই প্রশ্ন করার মানে বুঝলো না। তবুও জবাব দিলো,
“কা.. কাজিন।”
আদনানের ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি,
“হাহ.. কাজিন? কিন্তু আমার মনে হয় আমি তোর কাছে অপরিচিত একজন লোক। রাস্তার মানুষ আমি, যার কাছ থেকে তুই ফুল নিয়েছিস আর বারবার ধন্যবাদ দিচ্ছিস।”
“ম.. মানে?”
“মানে একবার ধন্যবাদ দিয়েছিস ঠিক আছে। তাই বলে এই সামান্য জিনিসের জন্য বার বার শুকরিয়া আদায় করার কি আছে?”

আহিয়া আর কিছু বললো না। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে নিলো। বুকের ভেতর কেমন যেনো হাহাকার জমে উঠলো। আদনান শেষবার তার দিকে তাকিয়ে ধীরে বললো,
“আর কিছু বলার না থাকলে এখন যা।”

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ১৬

আহিয়া তড়িঘড়ি পায়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। দরজার ফাঁক গলে তার ওড়নার প্রান্ত দুলতে দুলতে অদৃশ্য হয়ে গেলো। হঠাৎ ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি ফুটলো আদনানের। টেবিলে রাখা চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে এক চুমুক দিলো। যদিও চা এতক্ষণে ঠাণ্ডা শরবত হয়ে গেছে। তবুও যেন অদ্ভুত তৃপ্তি মিশে আছে একেকটা চুমুকে।

লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ১৮

1 COMMENT

Comments are closed.