লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ১৯
Fatima Fariyal
রাত তখন প্রায় দশটার বেশি। অথচ রিদির মামা বাড়িটা তখনও হই হুল্লড়ে ভরে আছে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। গান বাজনা নাচে মাতামাতি করছে সবাই। ড্রইং রুম থেকে উঠোন, বারান্দা থেকে ছাদ সব জায়গায় হৈচৈ, হাসি, গল্প, গানের সুরে মুখরিত হয়ে আছে চারপাশ। রিদি এসবের ভিড়ে একেবারেই আগ্রহী না। সে একা বসে আছে ডাইনিং টেবিলের একপাশে, চিবুক ঠেকিয়ে বিরক্ত মুখে তাকিয়ে আছে তার মা আর খালাদের দিকে। ওরা গোল হয়ে বসে গল্প করছে। আর তাদের গল্পের ধারা এমন যে, একটু আগে রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছিল, মুহূর্তই সেটা ঘুরে চলে গেলো ঈশিতা আপুর স্বামীর বদলির পোস্টিং পর্যন্ত। রিদি এসব শুনে হাঁপ ছেড়ে মাথা নেড়ে ফেললো। এমন সময় তাদের কথার মোড় ঘুরে এসে থামলো রিদির বিয়েতে। এসব কথা শুনেই বিরক্তির চরম পর্যায় পৌঁছালো রিদি। কপাল কুচঁকে আর ভ্রু কুঁচকে, ঠোঁট বাঁকিয়ে মনে মনে বললো,
“আমার বিয়ে নিয়ে সবার এতো মাথাব্যথা কেনো আজব! আমি কি এতিম? আমার নিজের কোনো মতামত নেই নাকি!”
রিদির মা তখন গল্প শুরু করলো, রিদির এক চাচাতো ভাইয়ের কথা। যে প্রায় তিন চার বছর ধরে রিদির পিছনে ঘুরছে তাকে বিয়ে করবে বলে। অথচ রিদি এবং তার পরিবারের কেউই রাজি না। কারন তার সেই কাজিন মূসা আর তার মা দুজনেই একটু নিচু এবং বিকৃতি মন মানসিকতার। যার জন্য রিদি এবং তার পরিবার কেউই তেমন একটা পাওা দেয় না। এইসব শুনেই বিরক্তিতে মুখে গুছিয়ে নিলো রিদি। তখনই হঠাৎ তার খালামনি বললো,
“রিদি, তোর ফোনটা একটু দে তো! তোর আঙ্কেলকে একটা কল দিতে হবে। আমার মোবাইলটা হাসনা নিয়ে গেছে।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
রিদি বিরক্তিভাবে ফোনটা দিতে উদ্যত হয়। কিন্তু ফোন খুঁজে পেলো না। টেবিল, চেয়ারের চারপাশ সব জায়গা হাতড়ালো। কিছুতেই পাচ্ছে না। এক ঝটকায় তার মাথায় আসলো, সে তো রাগের মাথায় কিছুক্ষণ আগে ফোনটা ছাদে রেখেই চলে এসেছিলো। ভাবতেই আর দেরি করলো না। হুড়মুড় করে উঠে ছুটে গেলো সিঁড়ির দিকে। ছাদে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে চারপাশে খুঁজতে লাগলো। তন্নতন্ন করে সব জায়গায় খুঁজলো, কিন্তু তার কাংখিত ফোনটা নেই! কোথাও পেলো না। ঘাম জমে এলো কপালে। রাগে বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। ছাদ থেকে নিচে নেমে শেষমেশ বিরক্ত মুখে গিয়ে দাঁড়ালো ঈশানীর সামনে। ঈশানী তখন অন্যদের সাথে গল্প করছিলো। রিদি মুখ গোমরা করে বললো,
“তোমার ফোনটা দাও তো।”
“কেনো? কী করবে আমার ফোন দিয়ে?”
“আমার ফোনটা পাচ্ছি না। কিছুক্ষণ আগে ছাদে রেখেছিলাম। এখন খুঁজে পাচ্ছি না।”
“ঠিকই আছে। এমন বিয়ে বাড়িতে কে ফোন ফেলে রাখে? ভালো হইছে একদম।”
রিদি চোখ বড় বড় করে তাকালো তার দিকে। রাগে নাক ফুলে উঠেছে যেনো। কথা না বাড়িয়ে মাহির কাছ থেকে ফোনটা একরকম ছিনিয়েই নিলো। নিজের নাম্বারে কল দিলো কয়েকবার। কিন্তু প্রতিবার নিজের ফোন বন্ধ পেলো। কপাল গুছে গেলো রিদির। সে বুঝলো, ফোন যদি কেউ চু’রি করে থাকে তবে নিশ্চয়ই সাথে সাথেই বন্ধ করে দিয়েছে, কিংবা সিম খুলে ফেলেছে। হতাশায় ফোনটা জোরে বিছানার উপর ছুড়ে ফেললো। বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা লাগলো। অসহ্য রাগে মুখ গোমরা করে রুম থেকে ধপধপ করে বেরিয়ে গেলো রিদি। চারপাশের কোলাহল তার কানে ঢুকছিলো না, যেনো পুরো পৃথিবী এক মুহূর্তে তার শত্রু হয়ে গেছে।
আজকের সকালের শুরুটা যেন সবকিছুকে আলাদা মাত্রায় এনে দিয়েছে। জানালার পর্দার ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকে পড়া সূর্যের কোমল রোদ। বাইরে পাখির কিচিরমিচির, মৃদু বাতাসে দোল খাওয়া গাছের ডাল। সব মিলিয়ে প্রকৃতিই যেন দিনটা সুন্দর করে দিতে চায়। এমন সকালের মাঝেই আমজাদ মীর নাস্তা শেষ করে সংসদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সাদা শার্টের উপর ধূসর রঙের ব্লেজার গায়ে জড়িয়ে ফাইল হাতে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। সংসদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আজ সকাল দশটায়, তাই সময় নিয়ে তার ভীষণ মনোযোগ। কিন্তু দরজার কাছে পৌঁছাতেই ভেতর থেকে মৃদু অথচ দৃঢ় কণ্ঠস্বর শোনা গেলো,
“আপনার একটু সময় হবে? জরুরি কথা ছিলো।”
আফরোজা শেখ একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে চাপা উদ্বেগ আর গলায় দৃঢ়তা। আমজাদ মীর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন। সত্যিই তার সময় নেই, অথচ স্ত্রীর এমন ভঙ্গিমা উপেক্ষা করাও সহজ নয়। ঠোঁট কামড়ে দ্বিধায় পরে নিজের সহধর্মিণীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কথাটা কি খুব জরুরি? পরে শুনলে হবে না? আমার হাতে সত্যিই সময় নেই।”
আফরোজা শেখ এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে কিছুটা এগিয়ে এসে বললেন,
“আসলে আদনানের ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আমিও ব্যস্ত থাকি, আপনিও ব্যস্ত থাকেন।বলবো বলবো করে আর বলা হয়ে ওঠে না।”
“আদনানের বিয়ের ব্যাপারে বলতে চাচ্ছো।”
আফরোজা শেখ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বললেন, “হ্যাঁ। ওর বিয়ের ব্যাপারেই।”
আমজাদ মীর ভ্রু কুঁচকে হালকা সুরে বললেন,
“এই বিষয়ে আমার মতামতের কিছু নেই। ভাইজান আর ভাবিজানের সঙ্গে আলোচনা করো। তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো। এসব ব্যাপারে আমার এখন মাথা ঘামানোর সময় নেই।”
আফরোজা শেখের চোখে বিরক্তি ঝলসে উঠলো। গলায় নির্লিপ্ত অথচ তীক্ষ্ণ সুর,
“এভাবে বললে কি করে হবে। বাসায় দু ঘন্টাও থাকেন না, নিজের সন্তানদের ভালো মন্দের খোঁজ রাখতে হয়। সেটা কবে বুঝবেন। দায়িত্ব শুধু ভোট, দল আর সংসদের জন্য? সংসারও তো একটা সংসদ।”
কথাগুলো সরাসরি বুক ভেদ করলো আমজাদ মীরের। তিনি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন অর্ধাঙ্গিনীর চোখের গভীরে। তাতে অভিযোগ যেমন আছে, তেমনই আছে নিরাশা আর ভালোবাসার ছাঁয়া। নিজের সহধর্মিণী যে ইনিয়ে বিনিয়ে নিজের কথাও বলেছে সেটা বুঝতে তার বাকি নেই। তিনি এগিয়ে গিয়ে হালকা হাসি ফুটিয়ে দু’হাত রাখলেন আফরোজা শেখের বাহুতে। আফরোজা শেখ খানিকটা কেঁপে উঠলেন সেই স্পর্শে। আমজাদ মীর সেই চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললেন,
“শুধুু নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো। তারপর সব দায়িত্ব তোমার ছেলের কাঁধে দিয়ে সংসারে মন দেবো। আমারও তো ইচ্ছে টিচ্ছে করে নিজের বউয়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে।”
আফরোজা শেখ করা দৃষ্টিতে স্বামির দিকে এক ঝলক তাকান। এরপর নিজের বাহু থেকে হাত দুটো নামিয়ে নিচু গলায় বললেন,
“দিন দিন ছেলের মতো লাগামহীন হয়ে যাচ্ছেন দেখছি।”
আমজাদ মীর এবার ঠোঁট চেপে হালকা হেসে বললেন,
“কি করবো বলো, ছেলের বাবা তো! একটু আকটু ছেলের বাতাস লেগেছে আরকি।”
“হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না। কেবলই তো বললেন সময় নেই, তবে এখন যাচ্ছেন না কেনো?”
তার গলায় অভিমান, চোখে অনিচ্ছা। আমজাদ মীর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে মৃদু হেসে এগিয়ে এলেন। চারদিকে একবার কড়া নজড়ে তাকিয়ে হঠাৎই স্ত্রীর কপালে ঝট করে চুমু খেলেন। আফরোজা শেখ স্তব্ধ হয়ে রইলেন, তার ঠোঁটে অনুচ্চারিত অঝোর প্রশ্ন জমে গেলো। আমজাদ মীর গটগট করে পা ফেলে বাইরে চলে গেলো। আফরোজা শেখ কিছুক্ষণ নিরব দাঁড়িয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলেন সেদিকে। এরপর চারদিকে একবার তাকিয়ে গলা খাকরি দিলেন। নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যাস্ততায় পা ফেলে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন।
এই দৃশ্যটা চোখে পরলো আহিয়ার। আহিয়া সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামছিল। তার চোখে মুখে ঘুমের ক্লান্তি, আর হালকা উদাস ভাব। হঠাৎই অবচেতন ভাবে নিজের বাবা মায়ের ঘনিষ্ঠ মূহুর্ত চোখে পরলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও। চোখ সরিয়ে নিতে চাইলেও পারলো না। বুকের ভেতর অদ্ভুত কাঁপুনি, আর গালজুড়ে গরম হাওয়া বইতে লাগলো। লজ্জায় অস্থির হয়ে করিডোরের একপাশে গ্রিলের কাছে বসে পড়লো। দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রাখলো, কিন্তু কৌতূহল যেনো আঙুলের ফাঁক গলে পথ খুঁজে নিলো। আবারও উঁকি দিতে মন চাইল। ঠিক তখনই পিছন থেকে ভেসে এলো এক ভারী পুরুষালি গলা।
“এহ্যাঁম.!”
গলা খাকরির সেই শব্দে চমকে উঠলো আহিয়া। চট করে ঘুরে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো আদনানকে। সিঁড়ির ধাপে দাঁড়িয়ে দু’হাত বুকের ওপর জড়ো করে, সরু চোখে খেয়াল করে তাকিয়ে আছে সে। চোখের ভেতরে যেন একসাথে বিরক্তি আর কৌতূহল। আহিয়ার বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। গলা শুকিয়ে এলো। শুকনো একটা ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বললো,
“আ… আদনান ভাই…!”
“কি করছিস এখানে বসে?”
আহিয়া হকচকিয়ে গেলো। হাতের আঙুল ঘষতে ঘষতে আমতা আমতা করে উত্তর দিলো,
“ক.. কই কিছু না তো!”
আদনান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ঠান্ডা গলায় বললো,
“কি ভাবছিস আমি এতোটাই নির্বোধ, যে বুঝবো না?”
“ম.. মানে!”
আদনান আর কিছু না বলে হঠাৎ সামনের দিকে ঝুঁকে এলো। তার মুখের উষ্ণ নিশ্বাস এসে লাগলো আহিয়ার মুখের কাছে। আহিয়া তৎক্ষণাৎ সরে গেলো কয়েক ইঞ্চি পিছনে। তবুও চোখ নামাতে পারলো না। আদনান মুখটা কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“নিজের রোমান্স করার বয়সে, লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের বাবা মায়ের রোমান্স দেখছিস? লজ্জা হওয়া উচিত তোর।”
“কিহহ!”
কথাটা বজ্রাঘাতের মতো লাগলো আহিয়ার কানে। বুকের ভেতর একসাথে লজ্জা, অপমান আর অচেনা অস্থিরতা জমে উঠলো। মুখটা লালচে হয়ে গেলো। চোখ নিচু করে রাখে তার গালে গরম আভা ছড়িয়ে পড়লো। আদনান এবার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কড়া গলায় বললো,
“উঠ।”
আহিয়া একটু নাটুকে ভঙ্গিতে পা ধরে বললো,
“আহ! আমার পা মচকে গেছে… তাই বসেছিলাম। উঠতে পারবো না।”
আদনানের মুখের ভাব মুহূর্তেই পাল্টে গেলো। কঠোরতা মুছে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। দ্রুত নিচে বসে পড়লো আহিয়ার পায়ের কাছে। চোখে এক ধরনের আন্তরিকতা ফুটে উঠলো। নরম স্বরে বললো,
“দেখি… কি করে মচকে গেলো?”
সে হাত বাড়িয়ে আহিয়ার পা ধরতে চাইলো। আহিয়া শিউরে উঠলো। দ্রুত পা সরিয়ে নিয়ে একলাফে উঠে দাঁড়ালো। মুখে লজ্জা আর শরীরে কেমন যেনো ঠাণ্ডা শিহরণ ছড়িয়ে পড়লো। আদনান নিচেই বসে রইলো। দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে তাকিয়ে রইলো আহিয়ার দিকে। চোখে রাগের সঙ্গে অদ্ভুত এক আকর্ষণ লুকিয়ে আছে। মুহূর্তখানেক পর উঠে দাঁড়ালো, কিন্তু কিছু বললো না। আহিয়ার কাঁধ ছুঁয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। ঠিক সেই সময় আহিয়ার বুক ধড়ফড় করে উঠলো, নিশ্বাস যেন থেমে গেছে। কাঁধে ছোঁয়ার মুহূর্তটা অদ্ভুত এক ঝড় তুললো তার শরীরে। আহিয়া ঘাড় কাত করে নিচে তাকালো। দেখলো আদনান ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তার পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুকের ভেতর দম আটকে আসছিলো। হঠাৎ পিছন থেকে হালিমা বেগমের ডাক ভেসে এলো,
“আদনান! নাস্তা করবে না?”
আদনান থেমে গিয়ে মাথা উঁচু করে তাকালো। চোখ সোজা গিয়ে আটকালো আহিয়ার চোখে। ঠোঁটে রহস্যময় বাঁকা হাসি টেনে বললো,
“না চাচি আম্মা। একটা ইমারজেন্সি আছে… দেরি হয়ে যাবে।”
এই বলে মাথা নেড়ে বাইরে বেড়িয়ে চলে গেলো। আহিয়া দাঁড়িয়ে রইলো করিডোরে, বুকের ভেতর অস্থির কাঁপুনি নিয়ে। মনে হচ্ছিল, তার গাল যেন আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। মনটা এখনো এলোমেলো। আদনান যে দৃষ্টি আর রহস্যময় হাসি ফেলে গেছে, তা তার বুকের ভেতর কেমন ধুকপুকানি তুলছিলো। মাথা নীচু করে ভাবনার জগতে ডুবে ছিলো সে। হঠাৎই পিছন থেকে টোকা খেলো মাথায়। চমকে ঘুরে তাকাতেই চোখে পড়লো আদিলকে। চিরচেনা সেই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে, ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে। জ্বিভ বের করে এক ভংচি মেরে বললো,
“এমন শাঁকচুন্নির মতো তাকিয়ে আছিস কেনো? সকাল সকাল তোর এই পেঁচার মত মুখ দেখার ইচ্ছা নাই আমার।”
আহিয়ার চোখ কটমট করে উঠলো। দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
“আদিল্লার বাচ্চা..!”
“আমার বাচ্চা কাচ্চা নাই, মিথ্যা রটাবি না।”
রাগে টগবগ করে উঠলো আহিয়া। গলা চড়িয়ে ডাক দিলো,
“চাচি আম্মা..! তোমার ছেলেরে কিছু বলো।”
নিচ থেকে হালিমা বেগমের কড়া কণ্ঠ ভেসে এলো,
“আদি.. জ্বালাস না। মার খাবি কিন্তু।”
আদিলও চেঁচিয়ে উত্তর দিলো,
“আমি কিছু করি নাই আম্মু! এই শাঁকচুন্নি আমার উপর ভর করেছে।”
“আদিল্লাআআআ…!”
চিৎকার করে উঠে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তেড়ে গেলো আহিয়া। আদিল হা হা করে হেসে উল্টো দিকে দৌড় দিলো। দু’জনের ছোটাছুটি যেন পুরো করিডোরে হুলস্থূল ফেলে দিলো। আদিল হঠাৎ পিছনের একটা বড় ফুলদানির সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে নেয়। সামলে উঠতে না উঠতেই তার পকেট থেকে মেঝেতে ছিটকে পড়লো একটা সিগারেটের প্যাকেট। দুজনে একই সঙ্গে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখাচোখি হলো তাদের। এরপর মুহূর্তের মধ্যে আহিয়া ছুটে গিয়ে ছোঁ মেরে প্যাকেটটা কুড়িয়ে নিলো। ভ্রু উঁচু করে, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
“আদি..! তুই স্মোক করিস?”
আদিলের গলা শুকিয়ে এলো। এক আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে আমতা আমতা করে বললো,
“আরে না, মাথা খারাপ! এটা আমার এক ফ্রেন্ডের।”
“আমাকে বোকা বানানো এত সহজ না। আমি এখনই চাচি আম্মারে বলে দিবো।”
এই কথা শুনেই আদিল আঁতকে উঠলো। নিচে ডাইনিং টেবিলে ব্যস্ত হয়ে কিছু গুছাচ্ছিলো হালিমা বেগম। ওদিকে চোখ পড়ে যেতেই আদিল তড়িঘড়ি করে দৌড়ে এসে আহিয়ার হাত চেপে ধরে অসহায় গলায় বললো,
“না না, আম্মুকে কিছু বলিস না। আমি না তোর ভাই? তুই বোন হয়ে নিজের ভাইয়ের এত্ত বড় সর্বনাশ করতে পারিস না। বোন আমার, লক্ষি বোন তুই আমার। এখন থেকে আর তোকে জ্বালাবো না, প্রমিস।”
আহিয়া বিরক্ত মুখে আদিলের হাতটা ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“এই সর তো! একদম পাম দিবি না আমারে। আমি তোকে ভালো করে চিনি।”
আদিল কাকুতি মিনতি করে আবার বললো,
“না সত্যিই বলছি! তোর দিব্যি।”
এই বলে সে আহিয়ার মাথায় হাত রাখতে গেলো। আহিয়া দ্রুত মাথা সরিয়ে নিয়ে কড়া গলায় বললো,
“খবরদার আদি! আমার মাথায় হাত রেখে মিথ্যা দিব্যি খাবি না।”
“সত্যি! আচ্ছা ঠিক আছে… এখন থেকে তুই যা বলবি আমি তাই করবো। শুধু ওইটা দিয়ে দে।”
আহিয়া হাত বুকের কাছে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ সরু করে কিছুক্ষণ পরীক্ষা করলো আদিলকে। অতঃপর ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে বললো,
“ওকে, ফাইন। তাহলে যা, নিচ থেকে আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আয়।”
আদিল মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
“আচ্ছা আচ্ছা, তোর কফি লাগবে তাই তো! এখনই দিচ্ছি।”
এই বলে সে নিচের দিকে তাকিয়ে ডাক দিলো,
“রিতুউউ… আহিয়ার কফিটা দিয়ে যা।”
আহিয়া সাথে সাথে ঘুরে দাঁড়ালো। দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
“আমি রিতুকে না, তোকে বলেছিলাম। ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আমি এখনই চাচি আম্মাকে এটা দেখাবো।”
কথা শেষ না হতেই আদিল দৌড়ে গিয়ে তার পথ আটকালো। হাঁপাতে হাঁপাতে হাত জোড় করে বললো,
“ফাইন, ঠিক আছে! আমি নিজেই নিয়ে আসছি। প্লিজ, আম্মুকে কিছু বলিস না।”
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে কপাল চাপড় দিলো সে। তারপর অনিচ্ছায় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগলো। উপরে দাঁড়িয়ে আহিয়া ঠোঁট বাঁকিয়ে এক বাঁকা বিজয়ের হাসি দিলো। হাতে শক্ত করে চেপে রাখা সিগারেটের প্যাকেটটা ঘুরাতে ঘুরাতে ধীর পায়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
আজকে তানিশার বিয়ের দিন। রিদিতার মামার বাড়িতে সকাল থেকেই একরকম হুল্লোড় লেগে আছে। চারপাশে শুধু আত্নীয়-স্বজন, অতিথিদের গমগমে ভিড়। উঠোন জুড়ে চেয়ার-টেবিল সাজানো। এতসব আনন্দের মাঝেই যেন চাপা একটা উৎেজনা, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বরযাত্রী এসে পৌঁছাবে। প্রত্যেকেই ব্যস্ত নিজের মতো করে। কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার শাড়ির আঁচল সামলাতে সামলাতে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ছোটরা দৌড়ে হৈ-হুল্লোড় করছে, আর বড়রা সবাই আয়োজন গোছাতে ব্যস্ত।
তানিশাকে পার্লার থেকে নিয়ে এসেছে রিদিতা আর ত্বোহা। তারা দুজনেও একটা সিম্পিল লুকে সাজুগুজু করেছে পার্লার থেকে। কিন্তু তাদের চেহারায় রোদের আর গরমের কারণে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। এমনেইতেই গরম পরছে তার উপর বিয়ে বাড়ি মানুষের চাপে গরম আরো বেড়ে গেছে। রিদিতা তার বেগুনি আর কালো মিশ্রণের ভারি গাউন সামলাতে পারছে না। এই গরমে এখন তার শরীরে সেটা ফুটছে। ঘামে ভিজে একেবারে হাঁসফাঁস করছে সে। ত্বোহার রুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের অবস্থা দেখে সে বিরক্ত মুখে গাউনটা ঠিক করার চেষ্টা করছিলো। একটা ক্লিপ নিয়ে চুলগুলো ওপরে তুলে আটকে দিলো। সামান্য বাতাস গলায় লাগতেই যেন বাঁচার স্বস্তি পেলো। ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ঢুকলো ঈশানী। আয়নায় এক ঝলক নিজের মুখ দেখে নিলো। হঠাৎ রিদির দিকে চোখ পড়তেই ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি করেছিস চুলের? পাগল পাগল লাগছে তোকে।”
“পাগলই তো, এই গরমে পাগল হয়ে গেছি।”
“যা ইচ্ছা কর। আমি যাচ্ছি, বরযাত্রী এসে গেছে। আমি তানিশার কাছে যাচ্ছি। তুই দ্রুত আয়।”
“হুম, ওকে।”
বলেই ঈশানী দ্রুত চলে গেলো। রিদিতা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটা টিস্যু দিয়ে নিজের নাকের ঘাম মুছতে লাগলো। একটু তাড়াহুড়ো করছে কারন গেটে ফিতা ধরতে হবে আবার। সে চুলগুলো খুলে দিয়ে নিজেকে শেষবারের মত দেখে নিয়ে যেই ঘুরে যেতে নেয়, ঠিক তখনই দরজার সামনে ছাঁয়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে দেখে সে চমকে উঠলো। অবাক হয়ে বললো,
“মূসা ভাই! আপনি?”
মূসা ঠোঁটে হালকা হাসি টেনে ভেতরে এগিয়ে এসে বললো,
“কেনো? আমি আসতে পারি না বুঝি?”
“না, মানে… আপনি এখানে কিভাবে?”
“কিভাবে আবার? আমিও তো বিয়েতে আমন্ত্রিত। তুমি তো এসব খবর রাখোই না।”
রিদির কপালে হালকা বিরক্ত জমলো। ঠোঁট বাকিয়ে বললো,
“আমি কেনো এসব খবর রাখবো?”
“আমার খবর রাখবে না তো, কার খবর রাখবে। কিছুদিনের মধ্যেই আমি তোমাকে বউ বানিয়ে নিয়ে যাবো। দেখে নিও।”
“আপনার মত নির্লজ্জ আমি আর একটাও দেখিনি। দয়া করে আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করেন। আমি আপনাকে কোনোদিনও বিয়ে করবো না। সেটা আপনি ভালো করেই জানেন। তবুও কেনো এভাবে পেছনে ঘুরছেন?”
“কেনো করবা না? আমার মধ্যে কিসের কমতি আছে। একটা কথা মাথায় রাখো। এখন না করছো পরে কিন্তু পস্তাবে।আমার মতো ছেলে আর খুঁজে পাবে না তুমি।”
রিদির ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। সে গাউনটা দুহাতে একটু সামলে মূসার দিকে এগিয়ে এলো। চোখে আগুন ঝরা দৃষ্টি নিয়ে ঠোঁট চেপে বললো,
“শুনেছি পৃথীবিতে একই রকম দেখতে সাতজন মানুষ থাকে। আপনি সহ আপনার মতো দেখতে বাকি যে ছয়জন আছে! তাদের মুখেও আমি থু থু মারি!”
একথা বলে রিদি মাথা উঁচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তার ভারি গাউনের ঘের করিডোরে ঝাপট খেয়ে একটা কর্তৃত্বের ছাপ রেখে গেলো। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মূসার শরীর রাগে কিড়মিড় করে উঠলো। তার মুঠি শক্ত হয়ে গেলো, দাঁত কড়মড় করতে লাগলো। চোখে একরকম বিকৃত আগুন, অপমান আর হিংস্রতা মিশে ফেটে পড়ছিলো। বাইরে তখন হাসি ঠাট্টা, শোরগোল, বরযাত্রীর আগমনের উচ্ছাস শোনা গেলো।
রাত তখন প্রায় এগারোটা। ঢাকার রাস্তা যত দূরে দেখা যাচ্ছে তত রাত গাঢ় হচ্ছে। আহাদ রাজার গাড়িগুলো শা-শা করে ঢাকার আঁধারে ছুটে আসছে। সিলেটের সম্মেলন শেষ করে সে আর এক মুহূর্তও নষ্ট করতে চায়নি। আসফাক মীর বারবার বলেছিল আগামীকাল সকালে রওয়ানা দিতে। আহাদ সেই কথায় পাত্তাই দেয়নি। অবশেষে গাড়ি এসে থামলো মিরপুর এগারোতে, রিদিতার বাসার সামনে। সাদা শার্ট জড়ানো ক্লান্ত শরীরটাকে ঝট করে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিল। গাড়ি থেকে নেমে মাথা ঝাঁকিয়ে কপালে আটকে থাকা এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা করলো। অতঃপর গাড়ির বোনেটে হেলে মাথা উঁচু করে তাকালো ছয়’তলার দিকে।
বুকের ভেতরটা কেমন যোনো ধকধক করছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আহাদ এক ভারি নিশ্বাস ছাড়লো। সেই নিশ্বাসের গরম তাপ নিজের বুকেই এসে ঠেকলো। মনটা বড্ড ছটফট করছিলো নিজের প্রেয়সীকে এক ঝলক দেখার আশায়। তাই ভাবলো সরাসরি এসে রিদিকে একটু চমকে দেবে। রিদির সেই ঈর্ষা হওয়ার ব্যাপারটা তার কাছে দারুন লাগলো। মনে পড়তেই মুখ টিপে নিজের হাসি সংযত করলো। অতঃপর সে পকেটে থেকে ফোন বের করে কল করলো রিদিকে। কিন্তু ফোন বন্ধ পেলো। মূহুর্তেই চোখ জোড়া আগুন হয়ে জ্বলে উঠলো। সে আবারও কল করলো, নাহ.! এবারও বন্ধ পেলো প্রেয়সীর ফোন। দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো তার। এতো কষ্ট করে সে সাত সাগর পার হয়ে আসলো। এক ঝলক প্রেয়সীর মুখ দেখার জন্য। আর এখন তার প্রেয়সীরই দেখা নাই। মনে মনে বললো,
“নাহ, এর একটা বিহিত তো করতেই হবে।”
আহাদের শরীরে রাগের স্ফুলিঙ্গ ঝরতে লাগলো। পকেটে হাত গুঁজে একটা দীর্ঘনিশ্বাস গলায় আটকে, ঠোঁট কুণ্ডলী দিয়ে চেঁচিয়ে ডাকলো,
“শাহীন!”
সামনের গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো শাহীন। আহদের ডাকে ধড়ফড় করে তার সামনে এসে দাড়ালো। আহাদের আদেশের অপেক্ষা করছে মাথা নিচু করে। আহাদ কর্কশ কন্ঠে আদেশ ছুড়ে দিলো শাহীনকে,
“উপরে যা.! দুই মিনিটের মধ্যে ওই আল্লাহর বান্দির কান ধরে… না না, কান ধরা লাগবে না। এমনই আমার সামনে হাজির কর।”
“ঠিক আছে ভাই।”
শাহীন দ্রুত মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বাসার ভিতর চলে যায়। আহাদ গাড়িতে নিজের শরীরটা হেলিয়ে দিয়ে আবারও ছয়’তলার বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকে। শাহীন রিদিতার ফ্লাটের সামনে এসে কয়েকবার ডোর বেল চাপে। কিন্তু ভিতরে থেকে কোন সারা শব্দ পেলো না। শাহীন দাঁড়িয়ে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। আবার ডোর বেলে চাপতেই পাশের ফ্লাট থেকে এক ভদ্র মহিলা বেরিয়ে আসে। শাহীনকে দেখে বললো,
“ওদের বাসার সবাই গ্রামে গেছে। বাসায় এখন কেউ নাই।”
“গ্রামে.!”
কথাটা শুনেই শাহীনের কপাল ঘামতে শুরু করলো। এখন আহাদকে গিয়ে কি বলবে সে। না জানি কোন ঝড়ের আগমন ঘটে। হাতের তালু দিয়ে কপালের ঘা মুছে নিয়ে শার্টের কলার টেনে একটু ঠিক করে নেয়। এরপর অজানা এক ভয় নিয়ে বাসার নিচে চলে আসে। শাহীনকে একা আসতে দেখে আহাদ গাড়ি থেকে পিঠ সোজা করে দাঁড়ায়। শাহীন কাছে আসতেই আহাদ চোখ সরু করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“রিদি কই!”
শাহীন মাথা নিচু নরে চুপ করে আছে। তার মুখ থেকে ভয়ে কথা বের হতে চাইছে না। আহাদ তাকে চুপ করে থাকতে দেখে গর্জে উঠে,
“আই আসকিং ইউ হোয়ার ইজ রিদি?”
শাহীন কেঁপে উঠলো আহাদের গর্জনে। নিচু স্বরে বললো,
“ভাই, উনিদের বাসার সবাই গ্রামে গেছে। বাসায় কেউ নেই।”
“হোয়াট.! গ্রামে গেছে? আমাকে একবার বলার প্রয়োজনও মনে করলো না!”
মূহুর্তেই আহাদের শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটে উঠে।কপালের শিরা ধপধপ করে ফুলে উঠেছে রাগে। ক্রোধে শরীর ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা।
“আহহহ।”
এক চিৎকার করে সজোরে গাড়িতে এক লাথি মারে। রাগে তার বুক উঠা নামা করছে। দাঁতে দাঁত পিষে রুক্ষ স্বরে বললো,
“আই স্যুয়ার জানু.! আমি এবার সত্যি সত্যি তোকে বুকের সাথে পিষে মেরে ফেলবো।”
লাল শাড়িতে প্রেয়সী পর্ব ১৮
এরপর কটমট করে তাকালো শাহীনের দিকে। শাহীন তখনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে। আহাদ বা হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা নাকটা ঘষে নিয়ে ধপ করে গাড়িতে উঠে বসলো। কোন কিছু না বলে গাড়ি নিয়ে ছুটে মূহুর্তেই উধাও হয়ে গেলো সেখান থেকে। শহরের লম্বা রাস্তায় তার ছাঁয়া দ্রুত ঝাপটে নিলো অন্ধকারে। পেছনে ফেলে গেলো শাহীন আর গার্ডদের হতবুদ্ধি চেহারা। তারা শুধুু বোকার মত বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।