শঙ্খ চিলের জুটি শেষ পর্ব 

শঙ্খ চিলের জুটি শেষ পর্ব 
ইফা আমহৃদ

মেলার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিতা ইফা।।ইভু রৌধিক নৌকায় উঠার জন্য টিকেট আনতে গেছে।। নাগরদোলায় প্রচুর ভীড়,, উঠতে চাইলে অনেক সময় লাগবে।। ততটুকু সময় অপেক্ষা করার মত সময় কারো নেই।। এই সময়ে ফোনটা বের করে পরপর কয়েকটা সেলফি তুলে নিলো দুজনে।।প্রতিটা সেলফি মধ্যে একটা অপরিচিত লোকের ফেইস ভেসে উঠছে।। অপরিচিত বললে ভুল হবে ।।খুব পরিচিত একটা মুখ কিন্তু স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।।একটা পিকের স্কিনে জুম করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ইফা।।দেখতে একদম আহিরের মতো ।।পেছনে দৃষ্টি ফেরাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের ।।আহির দাঁড়িয়ে আছে।। সেদিনের পর থেকে আর দেখা হয়নি তাদের।। অবশ্য একদিন ফোন করে মিট করতে চেয়েছিলো ।। কিন্তু মিট করে নি ইফা।।
আহির ভ্রু কুঁচকে সময় নিয়ে তিনবার চোখ মারলো ইফাকে।।ইফা দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ কমার চেষ্টা করলো ।।এটা পাবলিক প্লেস না হলে আজ খবর ছিল আহিরের।।

টিস্যুতে মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে এলো ইভু।।সাথে ইফা আর আদ্রিতাকে নিয়ে এসেছে।।রৌধিক নৌকার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। ওদের আসতে দেখে পা দিয়ে দুলন্ত নৌকাটা থামিয়ে দিল।।এক এক করে তিনজনকে নৌকায় উঠিয়ে দিল।।দিধা না করে চট করে ইফার পাশে বসে পড়লো।।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ধীরে ধীরে নৌকা চলতে শুরু করল।।কখনো এক কোণা অনেক উপরে উঠে যাচ্ছে।।কখন আবার মাটির ফাঁকে ঢুকে যাচ্ছে।।ভয়ে ভয়ে রৌধিকের কোমর আঁকড়ে ধরলো ইফা।।ক্ষনেক্ষনে চোখের পলক পড়ছে।
সামনের দিকে চোখ যেতেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো তার।।অপর পাশে আহির দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।। তার নিচে ইভু আদ্রিতা বসে আছে।।চট করে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটলো ইফার।।দুহাতে রৌধিকের কোমর পেঁচিয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো সে।। নেশাক্ত কন্ঠে বললো…

— একটু জড়িয়ে ধরো না বেবী ।। তোমার পাগল করা ছোঁয়ার জন্য আমি চাতক পাখির মতো হাহাকার করি
ইফার মুখে এমন কথা চোখ বড় বড় হয়ে গেল সবাই।। একটু আগে যে মেয়েটা কেবল ডিসটেন্ট মেইনটেইন করতো ।।সে এমন পাগলামী শুরু করে দিয়েছি।।আহিরের দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো ইফা।।

হঠাৎ ইফার এমন ভঙ্গিমায় জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো আহির।। অনায়াসে হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেল তার।। নিজেকে সামনে নেওয়ার আগেই উপর থেকে গড়িয়ে ধপাস করে ইফা পায়ের কাছে।।এই মুহূর্তটার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিল ইফা।।আহিরকে পায়ের কাছে অনুভব করে ক্রমাগত কয়েকটা লাথি ,, ঘুষি,, কিল দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল ইফা।।কি হচ্ছে ভালোভাবে বোঝার আগেই ইফার আক্রমন দেখে শান্ত হয়ে গেলো সবাই।।চলন্ত নৌকায় এসে ইফাকে থামানোর মত কেউ নেই।।
অনেক কষ্টে ইফার থেকে আহিরকে ছাড়িয়েছে শৃঙ্খলা বাহিনী।। অতঃপর হসপিটালে পাঠিয়ে দিয়েছে।।

ব্রীজের রেলিং এর উপর বসে আছে ইফা। স্থীর ভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।।একটা ছোট গোলাপ এগিয়ে দিয়ে রৌধিক হাঁটু ভেঙ্গে বসে আছে ।।এই মুহূর্তে কি করা উচিত বুঝতে পারছে না সে।।আশে পাশে কোথাও আদ্রিতা ইভুর ছায়াও দেখা যাচ্ছে না।। আসছি বলে কোথায় চলে গেছে ,, বুঝতে পারেনি সে।।
ইফার রেসপন্স না পেয়ে উঠে দাঁড়ালো সে।।পিছনে ফিরে চোখ বন্ধ করে বললো….

— জানি না কবে ,,কিভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ।।তবে এখন এইটুকু বুজতে পারছি ,, তুমি আমার সাথে একটু কথা না বললে নিজেকে বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগে।।মনে হয় আমি উম্মাদ হয়ে যাচ্ছি।। সেদিন বৃষ্টি ভেজা ইফাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আমি।। ভেজা নাক ,, মুখ ,, চোখ আমার নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল।। সেদিন অদ্ভুত ভাবে তোমাকে দেখেছিলাম।। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে পারতাম না ।।একটা অদৃশ্য তুমি এসে আমাকে জাগিয়ে দিতে।। রাত দিন নেই,, সারাক্ষন সেখানে গিয়ে বসে থাকতাম ।।কখন তুমি আসবে।। কিন্তু তুমি এলে না।। তারপর যখন তোমার গাড়িটা এপার্মেন্টের সামনে দেখেছিলাম।।তখন তুমি গাড়িতে ছিলে না।প্রচন্ড রাগ হয়েছিল আমার।।রাগের বশে তোমার গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে ফেলেছিলাম।। তোমার এক্সিডেন্ট করা,,তোমার অজান্তে ফোন নাম্বার ,,ছবি তুলে আনা,,একে একে তোমার সাথে পরিচয় ।। সবকিছু আমাকে আরো তোমার প্রতি আকৃষ্ট করে তুলছিলো।। তোমার ইগনোর আমার সহ্য হয়না।।আই রিয়েলি লাভ ইউ

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো রৌধিক।। এতোক্ষণ পলকহীন ভাবে রৌধিকের কথা শুনেছে ইফা।।একটা মানুষটা অজান্তেই এতোটা ভালোবাসতে পারে।। পরক্ষনেই মনে মাঝে জেগে উঠলো অভিমান।।যদি এতোটাই ভালোবাসে তাহলে সেদিন কেন ওভাবে অপমান করেছিলো।।
ইফার দৃষ্টি ভঙ্গি বুজতে সময় লাগলো না রৌধিকের।। একটু এগিয়ে ইফার হাতে হাত রেখে আবার বলতে শুরু করলো….

— সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখিত ইফা।।আদ্রিতা আমার কাছে কতোটা প্রিয় তুমি জানো না। পাঁচ বছর বয়সের সময় আমার হার্টে সমস্যা হয়েছিল।।ডাক্তার জানান ,, বনমেরু ট্রান্সফার করতে হবে।। কিন্তু আমার কোনো ভাই বোন নেই।।তখন আমাকে বাঁচাতে মা আবার কনসেভ করছিস।।আদ্রিতা এসেছিলো এই পৃথিবীতে আমাকে বাঁচাতে।।৩ বছর পর যখন আমার অপারেশন সাকসেসফুল হয় ।। তখন আদ্রুর লাইফ রিস্ক হয়।।টানা ছয় মাস হসপিটালে থাকার পর সুস্থ হয় ও।।যদি সেদিন আদ্রুর কিছু হয়ে যেত আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারতাম না।। আমিই একমাত্র ভাই যে বোনের দেওয়া জীবন নিয়ে বেঁচে আছে।।

শঙ্খ চিলের জুটি পর্ব ১০

কথাগুলো বলতে বলতে চোখ ভরে এলো রৌধিকের ।। নিজের মধ্যে এক ধরনের অপরাধ বোধ কাজ করছে ।।আলতো ভাবে রৌধিকের কাঁধে হাত রাখতেই ,, জরিয়ে ধরলো ইফাকে।। হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো সে।।মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে ইফা।।
অন্ধকার আকাশে চাঁদ আলোতে চারদিক জলজল করছে ।।
বহুদূর থেকে এক জোড়া অপরিচিত পাখি উড়ে এসে ভর করলো ব্রীজের রেলিং এ উপর ।। দুটো পাখি একসাথে উড়ে এসে।।কোনোটাই আগে কিংবা পরে নয়।।ডানা থেকে নিম্ন অংশ হালকা বাদামি রঙের।।মাথা অংশ ধূসর রঙের।।ইফা কিছুক্ষণ কৌতূহলী চোখে পাখি দুটোর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো…

— আচ্ছা এই পাখিগুলোকে কি পাখি বলা হয় ।।কখনো‌ তো এগুলো দেখি নি।।
— এগুলোকে শঙ্খচিল বলে।।এদেরকে দুর্ধর্ষ পাখিও বলা হয়।। সারারনতো চিল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।।বারো মাসেই তারা এই দেশে বসবাস করে ।।এরা সহজে জোড়া বাঁধে না ,, একবার বাঁধলে সারাজীবন একত্রে বসবাস করে।।আর সঙ্গি হারিয়ে ফেললে ,, সারাজীবন একা জীবন পাড়ি দেয়।। আর তুমি হচ্ছো আমার জুটি ।।”” শঙ্খচিলের জুটি ??।।তোমাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত আমার পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়।।ভালোবাসি তোমায়,, “”বড্ড বেশি ভালোবাসি””

— আমিও বাসি!!
— কি বাসো ??( ভ্রু কুঁচকে রৌধিক)
— ভালোবাসি!! আমার জুটি ??

( লেখাঃ ইফা আমহৃদ ) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন